শিশির_ভেজা_শিউলি #পর্ব_১১ #ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

0
724

#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_১১
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা

(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)

তপ্ত দুপুর। গরমে একেক জনের নাজেহাল অবস্থা। ক্লাস শেষে ক্যান্টিনে আড্ডায় মশগুল পঞ্চপাণ্ডব। জিহাদ কোকাকোলায় এক চুমুক দিয়ে বলে উঠলো

“নাহ্ এই গরমে আমি আলু ভর্তা হয়ে যাচ্ছি দোস্ত। জীবন যৌবন সব বৃথা যাবে মনে হচ্ছে।”

সিহাব ভ্রু কুঁচকে বলে “তোর আবার কি হলো?”

দিয়া চোখ মুখ কুঁচকে বলল “জিহাদ তুই আবালমার্কা কথাবার্তা ছাড়া কিছু বলতে জানিস না।যৌবন কিভাবে বৃথা যাবে তোর শুনি?”

জিহাদ মুখে বিরক্তি নিয়ে বললো “শুঁটকি মাছ, চুপ করে বসে থাক। গরমে মাথা গরম হয়ে আছে আমার। সিহাব আর তুই তো বিয়ে করে জীবন যৌবন স্বার্থক করবি‌। ব্যাটা রাফি কে দেখ, ঠিকই ফার্স্ট ইয়ারের এক সুন্দরী মেয়েকে পটিয়ে চুটিয়ে প্রেম করছে কিন্তু আমাকে দেখ, না আছে গফ আর না বাবা কখনো বিয়ে দিতে চাই। আফসোস এই জীবন লবন ছাড়া তরকারি হয়ে গেল।”

আফসোসের সুরে জিহাদ তার লম্বা ভাষন শেষ করে ঠান্ডা খাওয়ায় মনোনিবেশ করল। দিয়া কড়া কথা শুনিয়ে দেওয়ার জন্য উদ্যত হতেই সিহাব হাত ধরে বাধা দিয়ে কোনায় বসা সূরার দিকে ইশারা করে। ওদের দেখে জিহাদও এবার সূরার দিকে তাকিয়ে দেখে এই বিদ্যার রানী তাদের মধ্যে নেই। মঙ্গলগ্রহে সবজি চাষ করতে গেছে। সূরার হাত ধরে ঝাকালো দিয়া। হঠাৎ এমন হওয়ায় হকচকিয়ে গেল সে । অপ্রস্তুত হলো বটে। সবাইকে তাকিয়ে থাকতে দেখে নড়েচড়ে বসে বলল

“কিরে শয়তানের নানা নানীরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

দিয়া বলল “কোথায় হারিয়ে গিয়েছিলি?কি এতো ভাবিস সারাক্ষণ তুই?”

সিহাব বলল “বিদ্যার রানী কি কোনো সূত্র আবিষ্কার করছিলি এতোক্ষণ? কিন্তু তোর মাথায় তো আপেল পড়ল না। আইডিয়া! আমরা তোর মাথায় ঠান্ডা কোকাকোলা ঢেলে দিই। দেখবি নতুন কিছু আবিষ্কার করতে সাকসেসফুল হবি।”

সিহাব জিহাদকে কিছু একটা ইশারা করতেই হঠাৎ দুজনেই চেঁচিয়ে বলল “এ আমাদের বিশ্বাস বিদ্যার রানী। আমাদের বিশ্বাস আপনি পারবেন।”

দিয়া সহ ওরা দুজনে জোরে হেসে উঠে। সূরা কটমট করে তাকালো ওদের দিকে। কিন্তু কাজ হলো বলে মনে হলো না ।ওরা আরো জোরে হাসতে লাগলো। সূরা হতাশার শ্বাস ফেলে কোল্ড ড্রিংসে চুমুক দিতে যাবে ওমনি এক শক্ত হাতের থাপ্পর এসে পরল ওর গালে। ছিটকে দিয়ার ওপর পরলো সূরা। ফিনকি দিয়ে রক্ত পরছে ঠোঁট থেকে। মুহুর্তেই গালে পাঁচ আঙুলের দাগ পড়ে গেছে।সূরার মুখ শক্ত হয়ে উঠে। নিজেকে স্বাভাবিক করে কিছু বলার জন্য উদ্যত হতেই একটা হাত ওকে টেনে দাঁড় করিয়ে দেয়। শক্ত করে চেপে ধরে আছে সূরার নরম হাত।ব্যাথা পেলেও মুখে ফুটিয়ে তুলতে নারাজ সূরা।সে কখনোই অসহায় মেয়ে না।সব পরিস্থিতিতেই সে শক্ত হয়ে থাকতে চায় যেনো কেউ আর ভেঙ্গে গুড়িয়ে না দিতে পারে। জিহাদ, সিহাব আর দিয়া চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। ওদের মনে হচ্ছে কোনো শক এর মধ্যে আছে।কি থেকে কি হয়ে গেল বুঝতে কিছু সময় লাগলো। জিহাদ শক্ত কন্ঠে বলল

“আপনি আমার বন্ধুর গায়ে হাত তোলার সাহস কোথায় পান আপু? ভাববেন না সিনিয়র আর বড়লোকের মেয়ে বলে ছেড়ে কথা বলব। আমাদের কলিজায় হাত দিলে সেই হাত ভেঙ্গে দিতে দুবার ভাববোনা।”

সিহাব ধমক দিয়ে বলল “এই আপনি এখনি সূরার হাত ছাড়ুন।আর এই মুহূর্তেই ক্ষমা চাইবেন ওর কাছে।নয়তো আপনার কপালে আজ দুঃখ আছে। ছাড়ুন ওকে।”

শেষের কথাটা চিৎকার করে বলল সিহাব। দিয়া গিয়ে সূরা কে ছাড়িয়ে আনলো টিনার কাছে থেকে। সূরা এখনো চোখের পলক না ফেলে রাগান্বিত চোখে তাকিয়ে আছে। মুখোস্রি লাল হয়ে উঠেছে রাগের চোটে। দিয়ার থেকে হাত ছাড়িয়ে টিনার মুখোমুখি দাঁড়ালো সূরা ।টিনা তাচ্ছিল্য হাসলো।বাঁকা হেসে বলল

“কিরে আজকাল বড়লোক ছেলেদের ফাঁসিয়ে শরীরের জ্বা*লা মিটাতে চাইছিস নাকি‌?এতোই যখন জ্বা*লা…

আর বলতে পারলো না টিনা পরপর দুইটা চড় খেয়ে মেঝেতে পরে গেল।সূরা চোয়াল শক্ত করে এখনো রাগি চোখে তাকিয়ে আছে।এই চোখে নেই কোনো মায়া শুধু আছে হিংস্রতা।সূরা দাঁতে দাঁত চেপে বলল

“ভুলেও এই ভুল করবিনা।আমার শরীরে মিথ্যে কলঙ্ক লেপ্টে দেওয়ার আগে ভেবে নিবি তোর ওই মুখ পরবর্তীতে কথা বলার অবস্থায় থাকবে কিনা।”

টিনার মাথা এখনো ঘুরাচ্ছে।কানে ঝি ঝি শব্দ হচ্ছে।নিজে একটু ধাতস্থ হয়ে সূরার দিকে আঙুল তুলে দাঁত কিরমির করে বলল

“তোর সাহস কি করে হলো আমাকে থাপ্পর মারার।জানিস আমি কে?”

সূরা ক্ষীন হেসে বলল “জানবো না কেন? তুই হলি বড়লোক বাপের বকে যাওয়া অসভ্য, অভদ্র একটা মেয়ে।বাপের টাকায় যে পাওয়ার দেখাই তার নিজস্ব অস্তিত্ব আছে বলে আমার মনে হয় না।আর আমি মনে করি না যে অস্তিত্বহীন তার কোনো সেল্ফরেসপেক্ট বলে কিছু আছে।থাকলে অন্তত আমাকে মিথ্যে অপবাদ দেওয়ার সাহস পেতিনা।”

সূরার কথায় টিনা হিংস্র বাঘিনীর মতো রাগে ফুঁসছে। সামান্য একটা মেয়ের এতো সাহস সে মেনে নিতে পারছে না।পরে কিছু একটা ভেবে কুটিল হাসি মুখে ফুটিয়ে তুলে বলল

“তাই নাকি।যা মেনে নিলাম আমি মিথ্যে অপবাদ দিচ্ছি তোকে। কিন্তু কলেজের বাকি স্টুডেন্টরাও কি মিথ্যা বলছে?”

দিয়া বলে উঠলো “কি যাতা বলছেন । স্পষ্টভাবে বলুন। এতো ভনিতা করছেন কেন?”

টিনার ফ্রেন্ডস দের মধ্যে একটা মেয়ে বলল “টিনা দেখেছিস এদের। মুখ দেখে মনে হচ্ছে ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানে না। কিন্তু দেখ পুরো বোয়াল মাছ খাওয়ার প্ল্যান করে বসে আছে। নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে। একে তো কলেজ থেকে বের করে দেওয়া উচিৎ।”

সূরা চোয়াল শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করছে। সেও দেখতে চাই এরা কতো দূর যেতে পারে আর কিসের ভিত্তিতে এসব বলছে সেটা জানা দরকার। টিনা তাচ্ছিল্য হেসে বলল

“তুই কি ভেবেছিস তোর নোংরামি আমরা সহ্য করব। দিনের পর দিন মিসবাহ স্যারের সাথে ঢলাঢলি করছিস অথচ কেউ টের পাবেনা। শরীরের এতো জ্বা**লা হলে অন্য জায়গায় যা। এটা কলেজ। এখানে তোর মতো নোংরা মেয়েকে আমরা মেনে নিবোনা। আর কাউকে পেলিনা সোজা বড়লোক বাবার ছেলেকে ফাঁসিয়ে নিজের কার্যসিদ্ধি করছিস। আজ সকালে তুই যে মিসবাহ স্যারের গায়ে ঢলে পড়েছিলি সবই দেখেছি আমরা।”

সূরা কি বলবে কিছু বুঝতে পারছেনা।ওর মাথা কাজ করছে না। কি হলো এতোগুলো দিন মিসবাহর থেকে দুরে সরে গিয়ে। হঠাৎ শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আসছে তার। নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আবার,,, আবার সবাই ওর গায়ে কালি লেপ্টে দিল। সূরার চিৎকার করে বলতে ইচ্ছা করছে পৃথিবী তুমি স্বার্থপর। কিন্তু হায়!মনে হচ্ছে কেউ গলা টিপে ধরেছে ওর। একটা শব্দও বের হলো না কন্ঠনালী ভেদ করে। পাশ থেকে টিনার একটা ছেলে বন্ধু বলে উঠলো

“এতো কথার কি আছে টিনা। এসব নোংরা মেয়ের এই কলেজে থাকার কোনো অধিকার নেই। প্রোস্টিটিউট কোথাকার।”

জিহাদ ছেলেটার মুখে ঘুসি মেরে দিল। আর সহ্য করা সম্ভব না প্রিয় বান্ধবীর সম্পর্কে বাজে কথা শোনার। মুহুর্তেই হাতাহাতি শুরু হলো জিহাদ, সিহাব আর টিনার বন্ধুদের মধ্যে। দিয়া জিহাদ আর সিহাব কে থামতে বলছে। কি থেকে কি হয়ে গেল দিয়ার বোধগম্য হচ্ছে না। দিয়া দৌড়ে গেল মিসবাহর কেবিনের দিকে। একমাত্র মিসবাহ পারবে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে।

★★★★★★

কলেজের দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়ে গেছে। জিহাদ আর সিহাব কে মার খেতে দেখে রাফি বন্ধুদের বাঁচাতে অন্যদের মারছে। সবাই প্রায় আহত হয়েছে। হঠাৎ একটা গম্ভীর স্বরে সবাই থেমে গেল

“স্টপ দিস ননসেন্স। সাহস কি করে হলো কলেজের ভেতরে মারামারির মতো জঘন্য কাজ করার। এর জন্য সবাইকে রেস্টিকটেড করা হতে পারে সবাই কি ভুলে গেছো?”

মিসবাহর উচ্চ স্বরে বলা প্রত্যেকটা কথায় সবাই কেঁপে উঠলো যেন। কলেজের অন্য প্রফেসর সবার কাছে কারন জানতে চাইলে দিয়া স্যার দের প্রথম থেকে শুরু করে সব খুলে বলল। সব শুনে মিসবাহর চোয়াল শক্ত হয়ে উঠে। রাগে ক্ষোভে মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। কিন্তু এটা কলেজ তাই নিজেকে সংযত করে গম্ভীর পুরুষালী ভরাট কন্ঠে বলে উঠলো

” এই কলেজের প্রত্যেকটা স্টুডেন্ট কখন কি করে সব ইনফরমেশন এই মাকহুল সিকদার মিসবাহ্ রাখে। একজন প্রফেসর হিসেবে স্টুডেন্টদের পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করার আমার যেমন অধিকার বা ইচ্ছে নেই তেমনি আমার পার্সোনাল লাইফে ইন্টারফেয়ার করার অধিকার আমি কাউকে দিইনি। আর কান খুলে শুনে রাখো সবাই, মাকহুল সিকদার মিসবাহর জীবনে কেউ যদি তার অনুমতি ছাড়াই অনাধিকার চর্চা করে, নিজের মাথা ঘামানোর চেষ্টা করে তাহলে এই মাকহুল সিকদার মিসবাহ তাদের এই অপরাধের দায়ে মাথা ঘামানোর জন্য মাথাটাই রাখবেনা। আর হ্যাঁ, তোমাদের সবাই কে বলছি আজ ক্ষমা করলেও পরবর্তীতে ক্ষমা করবোনা। আর সূরা আমার পার্সোনাল লাইফের মোস্ট ইম্পরটেন্ট পার্ট‌। সো বি কেয়ারফুল। মাইন্ড ইট এন্ড জাস্ট লিভ।”

শান্ত হুমকিতে লহমায় সবাই কেঁপে উঠলো।সবাই খুব ভালো ভাবে চেনে মিসবাহকে। কলেজে বরাবরই গম্ভীর, রগচটা প্রকৃতির সে। পার্সোনাল আর প্রফেশনাল লাইফ আলাদা রাখতেই পছন্দ করে মিসবাহ। কেউ আর কথা বাড়ানোর সাহস পেল না। সবাই সরি বলে চলে গেল। মিসবাহ এবার জিহাদ, রাফি আর সিহাবের দিকে তাকালো। তিনজনেই আঘাত পেয়েছে।দিয়া কাঁদছে ওদের দেখে। মিসবাহ কঠোর স্বরে বলল

“মারামারি করার কি দরকার ছিল? মাথা গরম না করে কি সিচুয়েশন হ্যান্ডেল করা যায় না?”

জিহাদ শক্ত কন্ঠে বলল “ওরা সূরা কে যা ইচ্ছা তাই বলবে আর আমরা মেনে নিব স্যার? ওই সা*লা সূরা কে প্রোস্টিটিউট বলল। ওর মুখ ভেঙ্গে দিব আমি।”

চোয়াল শক্ত করে দাঁড়িয়ে আছে মিসবাহ।মেনে তো সেও নিবেনা।মিসবাহর পবিত্র ফুলকে ওরা কলঙ্ক দিয়েছে। একজনকেও ছাড়বে না। হঠাৎ কিছু মনে পরতেই চমকে উঠলো মিসবাহ। আশেপাশে পূর্ণ দৃষ্টি বুলিয়ে দিয়া কে প্রশ্ন করল

“সুর কোথায়?”

#চলবে…..

(নতুন পেজের নতুন লেখিকা আমি। পরবর্তী পর্ব পেতে ফলো দিয়ে পাশে থাকুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here