#শিশির_ভেজা_শিউলি
#পর্ব_৩২
#ইবনাত_ইমরোজ_নোহা
(🚫দয়া করে কেউ কপি করবেন না।কপি করা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ🚫)
জ্যোৎস্না স্নিগ্ধ রজনী। ঘড়ির কাঁটা সাতটা ছুঁই ছুঁই। কাছে পিঠে বেওয়ারিশ কুকুরের কান্নার আওয়াজে কেঁপে উঠছে রমনী। চারপাশে চোখ বুলিয়ে অজানা ভয়ে গুটিয়ে যায় সে। পাশেই মিসবাহ্ বসে আছে। তার দৃষ্টি আপাতত নিকষকৃষ্ণ দিঘীর জলে। জ্যোৎস্নার আলোয় চিকচিক করছে সেই জল। মন মাতানো শিউলি ফুলের ঘ্রাণ নাসারন্ধ্রে প্রবেশ করতেই জোরে শ্বাস নেয় মিসবাহ্। উপভোগ করে প্রকৃতির মনোমুগ্ধকর রূপ। কিন্তু পাশে বসে থাকা রমনীও কি তার মতোই উপভোগ করছে? প্রকৃতির এই রূপ কি তার মন কারতে পারছে? বোধগম্য হয়না মিসবাহর। মিসবাহ পাশে তাকালো। সূরা গুটিসুটি মেরে বসে আছে। ভয় পাচ্ছে কি মেয়েটা? হ্যাঁ! ভয়ই তো পাচ্ছে। ভয় পাবারই তো কথা। প্রকৃতির এই রূপ তার কাছে মনোমুগ্ধকর হলেও পাশে বসে থাকা রমনীর কাছে আতংক ছাড়া কিছুই না। সূরা ভয়ে মিসবাহর আরো একটু কাছে ঘেঁষে বসে। মিসবাহ শান্ত দৃষ্টিতে দেখে সূরাকে। এখন তারা সূরার গ্ৰামে আছে। এই বিষাক্ত গ্ৰামই তো তার সুরজানকে অর্ধমৃতে পরিনত করেছে। কিন্তু এই বিষাক্ত গ্ৰামই তো মিসবাহকে তার সুরজান নামক এক চন্দ্রকান্তা কে দিয়েছিলো। সে দেখা পেয়েছিল এক চন্দ্রকান্তার। সূরাকে যখন এই বিষাক্ত গ্ৰামে নিয়ে আসা হয় তখন সে প্যানিক করে। মিসবাহ শক্ত করে সূরার হাত ধরলে সূরা মুহুর্তেই শান্ত হয়ে যায়। সে কি মিসবাহকে তাহলে ভরসা করতে শুরু করেছে? জানা নেই মিসবাহর। সন্ধ্যো হয়ে যাওয়ায় দিঘীর পাড়ে লোকসমাগম নেই এখন। মিসবাহ কি মনে করে উঠে দাঁড়ালো। উপরে উঠার জন্য সিঁড়িতে পা বাড়াতেই হকচকিয়ে গেল সূরা। দ্রুত মিসবাহর হাত পেছন থেকে টেনে ধরলে মিসবাহ ঘাড় ঘুরিয়ে তাকায় সূরার দিকে। সূরা ব্যস্ত কন্ঠে বলে উঠলো
“কোথায় যাচ্ছেন আমাকে ফেলে? প্লীজ যাবেন না।”
মিসবাহ চোখে হেসে বলে “ভয় নেই সুরজান। যে হাত একবার ধরেছি সেই হাত মাঝ পথে ছাড়ার মতো মানুষ মাকহুল সিকদার মিসবাহ্ না। একটু বসো আমি এখনই আসছি।”
সূরা হাত ছেড়ে দেয়। দিঘীর জলের দিকে তাকিয়ে থাকে। এই জায়গাটা একসময় তার মন ভালো করার জায়গা ছিল। কতো শত স্মৃতি এখনো জীবন্ত। কিন্তু এখন,,,, দীর্ঘশ্বাস ফেলে সূরা। লহমায় পায়ে ঠান্ডা কিছুর স্পর্শে কেঁপে উঠলো সূরা। হকচকিয়ে গেল সে। দ্রুত পা গুটিয়ে নিতে চাইলে মিসবাহ্ সূরার পায়ে হাত রাখে। চকিতে তাকায় সূরা। হন্তদন্ত হয়ে বলে
“কি করছেন? পায়ে হাত দিচ্ছেন কেন? দয়া করে পায়ে হাত দিবেন না। আমার যে পাপ হবে।”
মিসবাহ সূরার পা আলতো করে সিঁড়িতে রাখে। ঠান্ডা কিছুর উপস্থিতি পায়ের নিচে অনুভব করতেই সূরা পায়ের দিকে তাকায়। জ্যোৎস্নার আলোয় দিঘীর জল যেমন চিকচিক করছে তেমনি তার পায়ের নিচে একগুচ্ছ শিউলি ফুল যেনো খিলখিলিয়ে হাসছে। সূরার ঠোঁটের কোনে হাসির রেখা ফুটে ওঠে। সে তাকালো মিসবাহর দিকে। মিসবাহ তার দিকেই মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে। সূরা ক্ষীন স্বরে বলল
“এসব কি? আপনি শিউলি ফুল আনতে গিয়েছিলেন? আমার জন্য? কিন্তু সিঁড়িতে রাখলেন কেন?”
“যার পদচারণ আমার হৃদয়ে তার পদযুগল ফুলে ফুলে সজ্জিত হোক। সে হয়ে উঠুক ফুলের রানী। আমি হয়ে উঠি আমার একান্ত ব্যক্তিগত সেই ফুলের মালী।”
সূরা পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার প্রেমিক পুরুষের দিকে। জ্যোৎস্নার আলোয় শুভ্র মুখোস্রি স্নিগ্ধ লাগছে। সুগভীর চোখের ভাষা আজ অন্যরকম। আজ এই চোখে কি আছে? সে কি নেশাগ্রস্ত হয়ে পড়ছে ওই চোখের দিকে তাকিয়ে নাকি এই লোক কালো যাদু করছে তাকে? এক অদ্ভুত ঘোরের মধ্যে কেন যাচ্ছে সে? আজ কেন মনে হচ্ছে এই ভয়ংকর প্রেমিক পুরুষকে নিজের একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ হিসেবে আপন করে নিতে। কই আগে তো এমন হয়নি। তাহলে কি প্রনয় নামক বিষাক্ত বিষ ছড়িয়ে পড়লো তার শিরায় শিরায়? সূরা চোখ সরিয়ে নেয়। দিঘীর জলের দিকে তাকালো। মিসবাহ মুচকি হেসে হাতে রাখা কিছু শিউলি ফুল সূরার হাত খোঁপা করা চুলে একটা একটা করে গুজে দেয়। কিছু ফুল সূরার হাতে দিলে সূরা নাসারন্ধ্রের নিকটে নিয়ে লম্বা শ্বাস নেয়। এই ফুল তার বড্ড পছন্দের। মিসবাহ কন্ঠে খাদ নামিয়ে বলে
“একটা গল্প শুনবে সুরজান। অভাগা রাজকুমার আর রাজকুমারী চন্দ্রকান্তার গল্প।”
সূরা বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকালো।চন্দ্রকান্তা রাজকুমারী হলে রাজকুমার অভাগা কেন? সূরা কিছু বলেনা। শুধু উপর নিচে মাথা নাড়িয়ে বোঝায় সে শুনবে। মিসবাহ ক্ষীন হাসে। দূর দিঘীর চিকচিক করা পানির দিকে তাকিয়ে বলে
“অভাগা রাজকুমার ছিলো জমিদার পুত্র। ছোট থেকে বড্ড জেদি, একরোখা, গম্ভীর স্বভাবের। যখন যা চাইতো তাই পেতো। না পাওয়া বলতে কিছু ছিল না জীবনে। এইরকম একঘেয়েমি জীবন আর ভালো লাগছিল না তার। ঠিক করে অজানা কোথাও হারিয়ে যাবে। যেখানে প্রানভরে শ্বাস নিতে পারবে। কিন্তু সে কি জানতো তার শ্বাস রোধ করার জন্য চন্দকান্তার দেখা পাবে? জানলে কি অসহনীয় যন্ত্রণায় ছটফট করবে জেনেও প্রনয়ের বিষাক্ত বিষ পান করতো সে? নাকি অপেক্ষার দহনে দগ্ধ হতে হবে যেনেও অপেক্ষা নামক মরন যন্ত্রনা সাদরে গ্রহণ করতো সে?”
থেমে যায় মিসবাহ। সূরা তাকায় মিসবাহর দিকে। মিসবাহ দিঘীর পানির দিকে তাকিয়ে আবার বলল
“এক শিশির ভেজা শিউলি ফুলের রাজ্যে চন্দ্রকান্তার আগমনে থমকে যায় রাজকুমার। সবসময় বিজয়ী হওয়া রাজকুমার হেরে যায় এক কিশোরী চন্দ্রকান্তার মায়ায়। সেদিন হেরে যায় সে তার চোখের হাসিমাখা অশ্রুর মায়ায়। হেরে যায় কুয়াশার চাদরে ঢাকা স্নিগ্ধ ওই মুখোস্রীতে। প্রথম দেখায় শিশির ভেজা ঘাসে চন্দ্রকান্তার পদযুগল যখন পড়েছিল তখন রাজকুমারের হৃদয়ে তার সূচনা ঘটে। হৃদয়ে চন্দ্রকান্তার বিচরনে সুপ্ত অনুভূতির জোয়ারে ভেসে যায় অভাগা রাজকুমার। চন্দ্রকান্তা ভেবেছিল পদযুগল বুঝি শিশির ভেজা শিউলি ফুল ছুঁয়ে দিচ্ছে। খিলখিলিয়ে হেসে উঠেছিল সে। বোকা চন্দ্রকান্তা! চন্দ্রকান্তার ওই পদযুগল যে রাজকুমারের ঠোঁট ছুঁয়ে দিচ্ছিল বুঝলো না! তার ওই হাসিতে বীর রাজকুমার প্রথম দেখেছিল তার সর্বনাশ।হারিয়ে ফেলেছিল তার নিজের সত্তা, কঠোর ব্যক্তিত্ব, অস্তিত্ব।”
সূরা ডুকরে কেঁদে উঠলো। তার বুঝতে বাকি নেই চন্দ্রকান্তা আর কেউ না সে। কিন্তু তার প্রেমিক পুরুষ তার জন্যই আজ অভাগা রাজকুমার। এই মানুষটার আগমন তার জীবনে অনেক আগেই ঘটেছিল কিন্তু ভাগ্য তাদের এক করেনি। নিষ্ঠুর ভাগ্যের উপর রাগ হলো সূরার। সূরা ভেজা কন্ঠে বলল
“রাজকুমার কেন চন্দ্রকান্তাকে তখনই আপন করে নিল না ডাক্তার? তাহলে তো চন্দ্রকান্তা কলঙ্কিত হতো না।”
মিসবাহ সূরার চোখের দিকে তাকিয়ে কন্ঠে খাদ নামিয়ে বলে
“চন্দ্রকান্তার কলঙ্ক যেমন আছে তেমন তার জ্যোৎস্নাও আছে। জ্যোৎস্নায় ঢাকা পরে যায় তার শত কলঙ্ক। আমি আমার ব্যক্তিগত চন্দ্রের জ্যোৎস্না হয়ে তার সব কলঙ্ক ঢেকে দিব। সে শুধু নুর ছড়াবে আমার হৃদয়ে। চন্দ্র ছাড়া জ্যোৎস্নার যেমন অস্তিত্ব নেই তেমন কলঙ্ক ছাড়া চন্দ্রের।”
সূরা ছলছল চোখে তাকিয়ে থাকে। এই সুদর্শন পুরুষকে তার একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ হিসেবে আপন করে চাওয়া কি পাপ হবে তার। নাকি এই নিষ্ঠুর পৃথিবী উপহাস করে বলবে “মেয়ে তুমি ডিভোর্সি হয়ে এক সুদর্শন পুরুষকে চাও। লজ্জা করো। এ যে ঘোর পাপ। পাপি তুমি।” সূরা এই নিষ্ঠুর পৃথিবীকে তখন হয়তো বলে উঠবে “এই প্রেমিক পুরুষকে চাওয়া যদি পাপ হয় তাহলে পাপি আমি। আমি পাপের রাজ্যে ডুবেও একমাত্র তাকেই চাইবো।” সূরা ডুকরে কেঁদে উঠলো। মিসবাহ শান্ত চোখে দেখে তার প্রেয়সীকে। এই মেয়ের কান্না তাকে বড্ড পীড়া দেয়। মিসবাহ অনুভূতিহীন কন্ঠে বলে
“আমার সুরজান! সে আমার শখের নারী। কিন্তু আফসোস! আমি তার শখের পুরুষ হতে পারিনি।”
সূরা মিসবাহর চোখে চোখ রেখে বলল “কে বলেছে হতে পারেননি ডাক্তার?”
বিস্মিত দৃষ্টিতে তাকালো মিসবাহ। সূরা মিসবাহর গালে দুই হাত রেখে আদুরে গলায় বলল
“আমার শখের পুরুষ! একান্ত ব্যক্তিগত পুরুষ আমার ডাক্তার। কিশোরীর আবেগ তরুণীর অনুভূতির কাছে হেরে গেছে ডাক্তার।”
মিসবাহ ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে আছে সূরার দিকে। অতি শকে মস্তিষ্ক হয়তো কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে তার। সূরার মিসবাহর হতভম্ব মুখ দেখে হাসি পেল। সূরা চোখে হেসে বলে
“আমায় বিয়ে করবেন ডাক্তার?”
মিসবাহ কি ঠিক শুনলো নাকি স্বপ্ন দেখছে। মিসবাহ কি ভেবে কপালে ভাঁজ ফেলে বলল
“আমি হয়তো ভুল কিছু শুনলাম। কাল হসপিটালে গিয়ে একবার চেকআপ করাবো। এই বয়সে কানে কম শুনলে তো বউ জুটবে না কপালে।”
সূরা বিরক্ত হলো। এই লোক ভারি চালাক। এই লোক যে আবার শুনতে চাইছে খুব করে বুঝেছে সূরা। সূরা মিসবাহর গাল থেকে হাত সরিয়ে দুষ্টু হেসে বলল
“ঠিক বলেছেন ভাইয়া। আপনার চেকআপ করা দরকার। তবে কাজ হবে বলে মনে হয়না। বয়স তো আর কম হলো না আপনার। আর আমি কোথায় ভাবছিলাম আপনাকে বিয়ে করবো। কিন্তু এখন দেখছি আপনি কানে কম শোনেন। আমি বরং আব্বাজান কে বলি পাত্র খুঁজতে।”
মিসবাহ শুকনো কেশে উঠলো। এই মেয়ে ভারি বজ্জাত। মিসবাহ কটমট করে সূরার দিকে তাকালে সূরা ফিক করে হেসে দেয়। মিসবাহর ঠোঁটের কোনেও হাসির রেখা দেখা দিল। সূরা মিসবাহর চোখে চোখ রেখে শান্ত স্বরে বলে
“আমাকে আপনার হৃদয়ের রানি না করলেও চলবে শুধু আপনার পায়ে একটু নাহয় ঠাঁই দিবেন ডাক্তার।”
মিসবাহ কন্ঠে খাদ নামিয়ে বলে “ভুল বললে মেয়ে। যাকে হৃদয়ে ঠাঁই দেওয়া যায় তাকে কখনো পায়ে রাখতে নেই।আর যাকে পায়ে ঠাঁই দেওয়া হয় সে কখনো হৃদয়ের রানী হয়না। তুমি আমার হৃদয়ের রানী, হৃদয়হরনী, চক্ষুশীতল কারিনী। তোমাকে পায়ে কিভাবে ঠাঁই দিই বলো। তুমি তো বিচরণ করো আমার হৃদয়ে।”
সূরা চোখে হাসে। মিসবাহ উঠে দাঁড়ালো। সূরার দিকে হাত বাড়িয়ে দিতেই সূরা বিনাবাক্যব্যয়ে মিসবাহর বারিয়ে রাখা হাতটা শক্ত করে ধরে উঠে দাঁড়ালো। সূরা আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখে আজ চাঁদ হাসছে। হয়তো তার খুশিতে সামিল হচ্ছে সে।
★★★★★★
রাত্রির দ্বিতীয় প্রহর। তবুও এখনও ঘুম নেই সিকদার বাড়ির সকলের। সবাই একদৃষ্টে তাকিয়ে আছে সোফায় আয়েসি ভঙ্গিতে বসা মিসবাহর দিকে। সূরা এক কোনায় মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। আড়চোখে একবার সবাইকে দেখে নিল সূরা। সবার মুখ থমথমে। সূরা ঠোঁট উল্টায়। মিসবাহর দিকে আড়চোখে তাকিয়ে দেখে সে দিব্যি আয়েসি ভঙ্গিতে বসে আছে। তার মধ্যে কোনো হেলদোল নেই। একটু আগে যে এই নির্লজ্জ বেহায়া অসভ্য লোক বিনা মেঘে বজ্রপাত ঘটিয়েছে কে বলবে। তারা গ্ৰাম থেকে সিকদার বাড়িতে ফিরতে রাত হলেও কেউ ঘুমোয়নি তখনও। এতে যে মিসবাহর সুবিধা হয়েছে ঢের বুঝেছে সে। মিসবাহ এসেই সোফায় মোজাম্মেল সিকদারের পাশে বসে গম্ভীর পুরুষালী ভরাট কন্ঠে বলে
“আমার যে বিয়ে করার বয়স হয়েছে ভুলে গেছো নাকি বড় জমিদার সাহেব। নাতির বিয়ে না দিয়ে মরতে চাইলে সে গুড়ে বালি। একটা প্রাপ্ত বয়স্ক যুবক বাড়িতে ঘুরঘুর করছে অথচ তোমাদের তাকে বিয়ে দেওয়ার কোনো চিন্তা নেই দেখে আমি অবাক হচ্ছি। যেখানে তোমাদের রাতের ঘুম হারাম হওয়ার কথা সে চিন্তায়। নিজের বিয়ের কথা আমি তো আর নিজের মুখে বলতে পারিনা। লজ্জা বলে কিছু আছে তো নাকি।”
তখন থেকে সবাই হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে মিসবাহর দিকে। আর সূরা সেই যে মাথা নিচু করেছে আর তোলেনি। সূরা মনে মনে গালি দিল মিসবাহকে। এর নাকি বিয়ের কথা বলতে লজ্জা করে। লজ্জারা আজ নির্ঘাত এসব শুনে সুইসাইড করবে। মোজাম্মেল সিকদার নড়েচড়ে বসল। গম্ভীর স্বরে বলে
“তা বিয়ে করতে চাইছো যখন ভালো কথা। কাল থেকে মেয়ে দেখি তাহলে।”
সূরা চকিতে তাকায় মোজাম্মেল সিকদারের দিকে। সকলে হকচকিয়ে গেল। মিসবাহ ভ্রু কুঁচকায়। মোজাম্মেল সিকদারের দিকে তাকিয়ে বলে
“নিজের বাড়ির মেয়ে থাকতে পরের বাড়ির মেয়েকে টাকা খরচ করে পালতে যাবো কেন? টাকা খরচ করে খাওয়ালে নিজের বাড়ির মেয়েকে খাওয়াবো। পরের বাড়ির মেয়েকে খায়িয়ে লাভ নেই পরে নিন্দা করবে। আমি আবার সচেতন নাগরিক।”
মোজাম্মেল সিকদার ঠোঁট চেপে হাসেন। নড়েচড়ে গম্ভীর স্বরে বলেন
“বাড়ির বিবাহ যোগ্য মেয়ে দুইজন। আমার বড় গিন্নি আর দিয়া নাতবৌ। দিয়ার বিয়ে তো ঠিক হয়েই আছে সিহাব দাদুভাইয়ের সাথে। আর বড় গিন্নি তো আমার গিন্নি। আমি তো তোমার সাথে বিয়ে দেওয়ার মতো কাউকে দেখছি না ছোট জমিদার সাহেব।”
মিসবাহ বিরক্ত হলো। কপালে ভাঁজ ফেলে বলল “এতোদিন বউ ছিল আমার প্রনয়ের ভিলেন আর আজ যখন বউ আমার নায়িকা তখন তার পরিবার ভিলেন। মগের মুল্লুক পেয়েছো।”
সবাই ঠোঁট চেপে হাসে। সূরা ভ্রু কুঁচকায়। অসভ্য লোক তাকে শেষ মেষ ভিলেন উপাধি দিল। সূরা পঞ্চপাণ্ডবের দিকে তাকিয়ে দেখলো সবাই তার দিকে তাকিয়েই দাঁত কেলিয়ে হাসছে। সূরা কটমট করে তাকালো মিসবাহর দিকে। মিসবাহ ভ্রু কুটি করে তাকিয়ে আছে মোজাম্মেল সিকদারের দিকে। মোজাম্মেল সিকদার মিসবাহর কথা সম্পূর্ণ অগ্ৰাহ্য করে সূরার দিকে তাকিয়ে বলেন
“দেখ বড় গিন্নি তোমার সামনে কিন্তু দুটো উপায় আছে। এক তুমি যদি আমায় বিয়ে করো তাহলে এই জমিদার বাড়ির বড় গিন্নি হবে তুমি। ভাবা যায়! আর দুই তুমি যদি ছোট জমিদার সাহেবকে বিয়ে করো তাহলে বলবো সে কিন্তু শূন্য। আমি কিছু না দিলে সে কিছুই পাবেনা। শূন্যতা ছাড়া কিছুই পাবেনা কিন্তু।”
মিসবাহ বিরক্ত হলো বটে। এই বড় জমিদার তার পথের কাটা হবে আগে জানলে কাউকে না জানিয়েই সূরাকে বিয়ে করে হানিমুনে চলে যেতো সে। একেবারে বাচ্চা সমেত ফিরতো। তখন দেখতো মানে কিনা। সূরা মিসবাহর বিরক্তি মাখা মুখের দিকে তাকালো। মিসবাহ সূরার দিকে তাকালে দৃষ্টিতে দৃষ্টি পড়লো। সূরা মিসবাহর চোখে চোখ রেখেই বললো
“আমি তার শূন্যতার মাঝেই পরিপূর্ণতা খুঁজে নিব।”
মোজাম্মেল সিকদারের মুখে হাসি ফুটে উঠল। সিকদার বাড়ি যেন প্রানোচ্ছ্বল হয়ে উঠলো। তবে কি দুটি হৃদয়ের সন্ধি ঘটতে চললো।
#চলবে …….
( বাতাসে বিয়ে বিয়ে গন্ধ পাচ্ছি। তোমরাও কি পাচ্ছো? )