অদৃষ্টে_তুমি_আমি #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_১৯

0
453

##অদৃষ্টে_তুমি_আমি
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১৯
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই স্বাধীন বারান্দা থেকে রোদের আলো দেখতে পেলো। আধো ঘুম চোখে নিজের পাশের জায়গাটুকুতে হাতরালো ও। খালি। চোখ খুলে গেল স্বাধীনের পুরোপুরি। নাহ্, পৃথা পাশে নেই। এতো সকালে গেল কই মেয়েটা? রাতের কথা মনে পরতেই স্বাধীনের মুখে হাসি ছেয়ে গেল। এলোমেলো বিছানায় মিশে রয়েছে ওদের ভালোবাসা। সেটা দেখতেই এখন যেনো মনটা ভরে যাচ্ছে। বালিশে আবার মাথা রাখলো স্বাধীন। ঘুমটা পুরোপুরি হয়নি এখনো। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
আবার স্বাধীন চোখ খুললো। পৃথাকে ছাড়া ভালো লাগছে না তাই বিছানা থেকে উঠে আসলো ও। পৃথাকে খুজলো রুমের সব দিকে কিন্তু পেল না। বুঝলো যে নিচে নেমে গেছে পৃথা। তখন নিজেও কাপড় পাল্টে নিচে নামার প্রস্তুতি নিল ও।
নিচে চলছে নানান ধরনের ব‍্যস্ততা। এক পাশে সকালের নাস্তার আয়োজন তো আরেক পাশে অতিথি বিদায়ের প্রস্তুতি। স্বাধীন নেমে পৃথাকেই এসবের মাঝে খুজতে লাগলো। প্রথমে দেখতে পেলো না নিজের বউকে ও, পরে খুজে পেল বড়দের মাঝে।
যেই অতিথিরা চলে যাচ্ছেন তাদেরকে বিদায় দিতেই পরিবারের বড়দের পাশে দাড়িয়ে আছে পৃথা। বয়ষ্করা যাওয়ার সময় ওকে আদর আর দোয়া দিয়ে যাচ্ছেন। হাসি মুখে তা গ্রহণ করছে পৃথা। স্বাধীন একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে সোজা ওর দিকে এগোলো।
স্বাধীন পাশে এসে দাড়াতেই কেমন যেন চমকে উঠলো পৃথা। সাথেসাথেই চোখ মুখ ভরে লজ্জা ছেয়ে গেল ওর। স্বাধীনও চুপচাপ দাড়িয়ে স্ত্রীর এই শুভ্র প্রতিক্রিয়া উপভোগ করতে লাগলো। ঘর ভর্তি মানুষজনের মাঝে দুজনের এই লুকোচুরি প্রেম চললো অনেক্ষণ।
এক সময় নাশিদ আর রুম্পাকেও আসতে দেখা গেল কটেজ থেকে। ওদের দেখেই হইহুল্লোড় পরে গেল চারিদিকে। বড়দের কাছে আসতে না আসতেই ছোটরা টেনে নিয়ে গেল ওদেরকে। নিয়ে বসালো খোলা বসার ঘরটাতে, আর তার পরপরই শুরু হলো ওদেরকে নিয়ে মজা করা। একেক জনের একেক ধরনের প্রশ্নে লজ্জায় ডুবে গেল নাশিদ রুম্পা দুজনেই। তবে ওদের ছাড়াও যে আরও এক দম্পতির মনে একই রকম অনুভূতির খেলা চলছিল তা অন‍্য কেউ বুঝলো না। রুম্পাকে যা বলে ক্ষেপাচ্ছিলো ভাবিরা সেটা শুনে, পৃথার চোখ মুখ লাল নীল হয়ে যাচ্ছিলো আর সেটা শুধুই ধরতে পারলো স্বাধীন। দৃষ্টির দুষ্টুমি খেলত লাগলো ও পৃথার সাথে তখন। এক সময় পৃথা আর ওখানে থাকতে পারলো না। দৌড়ে পালালো ও রুম থেকে।
…………………………………..
সকাল সকাল আজ ইয়াসমিনের মন ভালো হয়ে আছে। আজ পৃথা ফিরবে। পৃথার ফেরা নিয়ে মোটেও চিন্তা নেই তার। সে খুশি এই জন‍্য যে তার কাজের বোঝা কমে যাবে এখন। অথর্ব লোকটার পেছনে গত সাত দিন ধরে খাটতে খাটতে জান বের হয়ে গেছে ইয়াসমিনের। পৃথা থাকলে তো ওর বাবার সবকিছু ওই দেখা শোনা করে। ইয়াসমিনের কিচ্ছু করা লাগেনা। মনে মনে অনেক সময়ই ভাবে ইয়াসমিন, এই মেয়েটাকে রিতা আপা নিজের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাওয়ার পর আসলেই খুব কষ্ট হয়ে যাবে ওনার। পুরো ঘরের সাথে, রান্না বান্না আর এই রুগীর খেয়াল রাখার তাল সে সামলাতে পারবে না। এই অসুস্থ মানুষটার সাথে কখনোই থাকতো না ইয়াসমিন যদি রিতা ওনাকে সম্পত্তির লোভ না দিত। সেটার জোরেই টিকে আছেন উনি।
এসব চিন্তা করতে করতেই টেবিলে এসে বসলেন ইয়াসমিন। রিনিতা তার পাশেই বসা। নিজের জগতে এমনই মগ্ন ছিলেন তিনি যে মেয়ের দিকে প্রথমে খেয়ালই করেননি। তারপর যখন খেয়াল হলো, দেখলেন যে রিণিতার চেহারা গোমড়া হয়ে আছে।
– এই রিণি? কি হয়েছে মা তোর?
কোনো কথাই বললো না রিণিতা। এটা দেখে চিন্তিত হয়ে গেলেন ইয়াসমিন। মেয়ের গোমড়া মুখ তার একেবারেই ভালো লাগে না।
– মা কি হয়েছে? আমাকে বল?
এবার রিণিতা ঘুরে তাকালো। ওর কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে ইয়াসমিন আতকে উঠলে।
– আম্মু? এরকম চেহারা করে আছিস কেন?
– মা, আমার সব ইচ্ছা মাটি হয়ে গেছে।
বলেই বাচ্চাদের মতন ফোপাতে লাগলো রিণিতা। ইয়াসমিন তো কিছুই বুঝতে পারছেন না।
– মা, তোর কোন ইচ্ছা মাটি হলো? আমাকে খুলে বলবি তো একবার নাকি?
– মা, আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার পৃথার বসকে পছন্দ হয়েছে?
-হ‍্যা। তো সমস‍্যা কি?
– সমস‍্যা হলো আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না।
– মানে কি? কেন করতে পারবি না?
– কারণ সে অলরেডি ম‍্যারিড।
পিঠ সোজা করে বসলেন এবার ইয়াসমিন। ভালোই থমকে গেছেন তিনি।
– কিন্তু…. তুই কেমন করে জানলি যে সে বিবাহিত? তোর সাথে তার এ ব‍্যাপারে কথা হয়েছে?
– না! আমার কিভাবে কথা হবে তার সাথে। সে তো আমাকে চেনেনই না।
– তাহলে?
চোখ মুছলো রিণিতা,
– গতকাল আমি পৃথার অফিসে গিয়েছিলাম ওনার ব‍্যাপারে খোজ নিতে। জানতে পারলাম সে নেই। পৃথার সাথে সিলেট গিয়েছেন। এটা তো আগেই জানতাম আমি। রিসেপশন থেকে ওনার নাম জেনে এসেছিলাম। পরে বাসায় এসে ফেসবুকে খুজেছি ওনাকে। তখনই প্রোফাইলে দেখলাম লেখা ম‍্যারিটাল স্টেটাসে ম‍্যারিড দেওয়া। আম্মুউউউউউউ এখন আমার কি হবে?
আবার হাউমাউ করে কেঁদে দিল রিণিতা। ইয়াসমিন জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে।
-আম্মু, তুই ঠিক প্রোফাইল দেখেছিস তো? ওনার একাউন্ট ওটা নাও হতে পারে।
– না, ওটাই ওনার প্রোফাইল। ওনার ছবিই দেওয়া।
ইয়াসমিন আর কি বলবেন। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন শুধু নিজের মাঝে। মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই তার করার নেই এখন।
………………………………………….
পৃথা বসার ঘর থেকে দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো। পেছনে ফিরে বার বার দেখছিল স্বাধীন ওর পেছনে এসেছে নাকি, এই জন‍্য সামনের কে আছে দেখতে পেল না ও। একেবারে যেয়ে ধাক্কা খেল মিসেস রোজির সাথে। চমকে তাকালো পৃথা,
-চাচি রিয়েলি সরি।
হেসে দিলেন রোজি। পৃথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– কি হয়েছে মা? কার থেকে পালিয়ে যাচ্ছো?
পৃথা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো, মুখ দিয়ে কিছুই বললো না। হঠাৎ পৃথার পেছনে তাকিয়ে রোজি আরও বড় করে হেসে দিলেন,
– ওওও। এখন বুঝলাম কার থেকে পালাচ্ছিলো আমার বউমা। কি রে আব্বা? তুই আমাদের পৃথাকে বিরক্ত করছিস নাকি?
পৃথা ঝট করে মাথা উঁচু করে প্রথমে নিশাদের মায়ের দিকে তারপর নিজের পেছনে ফিরে তাকালো। স্বাধীনকে পেছনে দেখতে পেয়েই আবার চোখ নামিয়ে ফেললো ও। স্বাধীন পাশে এসে দাড়ালো পৃথার। মিসেস রোজির দিকে তাকিয়ে শুভ্র একটা হাসি দিল ও। রোজি পাশাপাশি দুজনকে পেয়ে আদর করে চলে গেলেন।
এবার স্বাধীনের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার কোন পথ পেল না পৃথা। ঘুরে চলে যেতে চাইলেও ওর হাত ধরে ফেললো স্বাধীন।
– কোথায় যাচ্ছো?
পৃথা লাজুক হাসি দিয়ে স্বাধীনের হাত ছাড়াতে চাইলো কিন্তু পারলো না। শেষে হাত নামিয়ে রাখলো ও যাতে ওদের বন্ধন কেউ দেখতে না পায়। পৃথাকে নিয়ে সবার থেকে সরে স্বাধীন ওপরে উঠে আসলো নিজেদের রুমে। ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। সাথেসাথেই চেচিয়ে উঠলো পৃথা,
-আরে কি করছো? আমাকে ছাড়ো, যেতে দাও নিচে।
স্বাধীন কোন কথাই বললো না। শুধু পৃথার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো ওর কাছে। পৃথা নার্ভাস হয়ে হেসে দিল,
-শোন, নিচে বড়রা আছে। আমাদের খুজতে পারে। এভাবে রুমে থাকলে ব‍্যাপারটা বাজে লাগে দেখতে।
স্বাধীন এবারও সেই একই হাসি দিয়ে চুপ করে রইলো। তবে পৃথাকে ওর দুহাত সহ নিজের আলিঙ্গনে বেধে নিল এবার। পৃথা তো লজ্জায় পারলে ডুবে যায়। অনেক জোড়াজোড়ি করেও বাধনটা শিথিল করতে পারলো না ও। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে তাকালো স্বাধীনের দিকে। এবার কথা বলে উঠলো স্বাধীন,
– আমাকে সকালে একা ফেলে গিয়েছিলে কেন? আমি উঠে দেখি আমার পাশে তুমি নেই। এটা কিছু হলো?
স্বামীর আদুরে অভিযোগের কি উত্তর দিবে তা জানা নেই পৃথার। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো ও ঠোটে একটা লাজুক হাসি নিয়ে। স্বাধীন আবার বললো,
– Last night was the best night of my life. And it was all beacause of you Preetha. Thanks for accepting me and for making me yours forever.
স্বাধীন এই কথাগুলো বলতে বলতেই পৃথা ওর চোখের দিকে তাকালো। এক আজব মায়ার সাথে মিশ্রিত কৃতজ্ঞতা খুজে পেল ওর দৃষ্টিতে। এতোটা ভালোবাসে ছেলেটা ওকে এটা কল্পনাতেই ছিল না পৃথার।
……………………………………….
মিস্টার আহমেদ সকালে বাজারে গিয়েছিলেন। বাসায় এসে বেডরুমে ঢুকতেই দেখলেন রিতা রেডি হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। স্ত্রীর হাতে মোটা অঙ্কের টাকা দেখেও কৌতুহল জাগলো তার।
– রিতা?
এমন ভাবে চমকে গেলেন রিতা যেন কোনো ভূত দেখেছেন নিজের সামনে। স্বামী এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবে এটা ভাবেননি তিনি। টাকাটা কোনো মতে ব‍্যাগে গুজে আমতা আমতা করতে লাগলেন,
– তুততুমি চলে এসেছো?
স্ত্রী কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন মিস্টার আহমেদ,
-এই সকাল বেলা কোথায় যাচ্ছো? টাকাও দেখছি ভালো এমাউন্টে তোমার হাতে।
চুপ মেরে গেলেন রিতা প্রথমে। কি কৈফিয়ত দিবেন স্বামীকে কিছুই বুজতে পারলেন না। সত‍্য তো বলা যাবেই না।
– এইইই একটু দোকানে যাচ্ছি, কিছু কেনাকাটা করতে।
– তা এতো টাকা নিয়ে যাচ্ছো? কি এমন কিনবা?
ঝামটা মেরে উঠলেন এবার রিতা,
-তুমি না বেশি বেশি ছোক ছোক করো। আমার কি কি কেনার আছে এটা তোমাকে বলে যেতে হবে নাকি? আমার ব‍্যক্তিগত কতো দরকার থাকতে পারে না? সবকিছুতেই খালি জেরা করার অভ‍্যাস হয়ে গেছে তোমার।
স্ত্রীর রাগে হেসে দিলেন মিস্টার আহমেদ।
– আচ্ছা, আচ্ছা এতো রাগা লাগবে না। বাইরে যাচ্ছো, ভালো মুড নিয়ে যাও নোয়তো মন মতো জিনিস কিনতে পারবে না।
-সরো দেখি। আমাকে যেতে দাও।
এই বলে গট গট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন রিতা। স্বামীর চোখের আড়াল হওয়ার পর হাপ ছাড়লেন। যাক বাবা! ভালো বাঁচা বেচেছেন। আরেকটু সময় ওখানে থাকলেই হয়তো….
আর চিন্তা করতে চাইলেন না রিতা। কেউ আর থামানোর আগেই বের হয়ে গেলেন বাসার থেকে।
আধাঘন্টা পর স্বর্ণের দোকানের সামনে এসে গাড়ি থামলো রিতার। ভেতরে ঢুকলেন তিনি তার মনমতো জিনিস কেনার জন‍্য।
চলবে।
সকালে ঘুম থেকে উঠতেই স্বাধীন বারান্দা থেকে রোদের আলো দেখতে পেলো। আধো ঘুম চোখে নিজের পাশের জায়গাটুকুতে হাতরালো ও। খালি। চোখ খুলে গেল স্বাধীনের পুরোপুরি। নাহ্, পৃথা পাশে নেই। এতো সকালে গেল কই মেয়েটা? রাতের কথা মনে পরতেই স্বাধীনের মুখে হাসি ছেয়ে গেল। এলোমেলো বিছানায় মিশে রয়েছে ওদের ভালোবাসা। সেটা দেখতেই এখন যেনো মনটা ভরে যাচ্ছে। বালিশে আবার মাথা রাখলো স্বাধীন। ঘুমটা পুরোপুরি হয়নি এখনো। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে।
আবার স্বাধীন চোখ খুললো। পৃথাকে ছাড়া ভালো লাগছে না তাই বিছানা থেকে উঠে আসলো ও। পৃথাকে খুজলো রুমের সব দিকে কিন্তু পেল না। বুঝলো যে নিচে নেমে গেছে পৃথা। তখন নিজেও কাপড় পাল্টে নিচে নামার প্রস্তুতি নিল ও।
নিচে চলছে নানান ধরনের ব‍্যস্ততা। এক পাশে সকালের নাস্তার আয়োজন তো আরেক পাশে অতিথি বিদায়ের প্রস্তুতি। স্বাধীন নেমে পৃথাকেই এসবের মাঝে খুজতে লাগলো। প্রথমে দেখতে পেলো না নিজের বউকে ও, পরে খুজে পেল বড়দের মাঝে।
যেই অতিথিরা চলে যাচ্ছেন তাদেরকে বিদায় দিতেই পরিবারের বড়দের পাশে দাড়িয়ে আছে পৃথা। বয়ষ্করা যাওয়ার সময় ওকে আদর আর দোয়া দিয়ে যাচ্ছেন। হাসি মুখে তা গ্রহণ করছে পৃথা। স্বাধীন একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে সোজা ওর দিকে এগোলো।
স্বাধীন পাশে এসে দাড়াতেই কেমন যেন চমকে উঠলো পৃথা। সাথেসাথেই চোখ মুখ ভরে লজ্জা ছেয়ে গেল ওর। স্বাধীনও চুপচাপ দাড়িয়ে স্ত্রীর এই শুভ্র প্রতিক্রিয়া উপভোগ করতে লাগলো। ঘর ভর্তি মানুষজনের মাঝে দুজনের এই লুকোচুরি প্রেম চললো অনেক্ষণ।
এক সময় নাশিদ আর রুম্পাকেও আসতে দেখা গেল কটেজ থেকে। ওদের দেখেই হইহুল্লোড় পরে গেল চারিদিকে। বড়দের কাছে আসতে না আসতেই ছোটরা টেনে নিয়ে গেল ওদেরকে। নিয়ে বসালো খোলা বসার ঘরটাতে, আর তার পরপরই শুরু হলো ওদেরকে নিয়ে মজা করা। একেক জনের একেক ধরনের প্রশ্নে লজ্জায় ডুবে গেল নাশিদ রুম্পা দুজনেই। তবে ওদের ছাড়াও যে আরও এক দম্পতির মনে একই রকম অনুভূতির খেলা চলছিল তা অন‍্য কেউ বুঝলো না। রুম্পাকে যা বলে ক্ষেপাচ্ছিলো ভাবিরা সেটা শুনে, পৃথার চোখ মুখ লাল নীল হয়ে যাচ্ছিলো আর সেটা শুধুই ধরতে পারলো স্বাধীন। দৃষ্টির দুষ্টুমি খেলত লাগলো ও পৃথার সাথে তখন। এক সময় পৃথা আর ওখানে থাকতে পারলো না। দৌড়ে পালালো ও রুম থেকে।
…………………………………..
সকাল সকাল আজ ইয়াসমিনের মন ভালো হয়ে আছে। আজ পৃথা ফিরবে। পৃথার ফেরা নিয়ে মোটেও চিন্তা নেই তার। সে খুশি এই জন‍্য যে তার কাজের বোঝা কমে যাবে এখন। অথর্ব লোকটার পেছনে গত সাত দিন ধরে খাটতে খাটতে জান বের হয়ে গেছে ইয়াসমিনের। পৃথা থাকলে তো ওর বাবার সবকিছু ওই দেখা শোনা করে। ইয়াসমিনের কিচ্ছু করা লাগেনা। মনে মনে অনেক সময়ই ভাবে ইয়াসমিন, এই মেয়েটাকে রিতা আপা নিজের বাড়ির বউ করে নিয়ে যাওয়ার পর আসলেই খুব কষ্ট হয়ে যাবে ওনার। পুরো ঘরের সাথে, রান্না বান্না আর এই রুগীর খেয়াল রাখার তাল সে সামলাতে পারবে না। এই অসুস্থ মানুষটার সাথে কখনোই থাকতো না ইয়াসমিন যদি রিতা ওনাকে সম্পত্তির লোভ না দিত। সেটার জোরেই টিকে আছেন উনি।
এসব চিন্তা করতে করতেই টেবিলে এসে বসলেন ইয়াসমিন। রিনিতা তার পাশেই বসা। নিজের জগতে এমনই মগ্ন ছিলেন তিনি যে মেয়ের দিকে প্রথমে খেয়ালই করেননি। তারপর যখন খেয়াল হলো, দেখলেন যে রিণিতার চেহারা গোমড়া হয়ে আছে।
– এই রিণি? কি হয়েছে মা তোর?
কোনো কথাই বললো না রিণিতা। এটা দেখে চিন্তিত হয়ে গেলেন ইয়াসমিন। মেয়ের গোমড়া মুখ তার একেবারেই ভালো লাগে না।
– মা কি হয়েছে? আমাকে বল?
এবার রিণিতা ঘুরে তাকালো। ওর কাঁদো কাঁদো চেহারা দেখে ইয়াসমিন আতকে উঠলে।
– আম্মু? এরকম চেহারা করে আছিস কেন?
– মা, আমার সব ইচ্ছা মাটি হয়ে গেছে।
বলেই বাচ্চাদের মতন ফোপাতে লাগলো রিণিতা। ইয়াসমিন তো কিছুই বুঝতে পারছেন না।
– মা, তোর কোন ইচ্ছা মাটি হলো? আমাকে খুলে বলবি তো একবার নাকি?
– মা, আমি তোমাকে বলেছিলাম না আমার পৃথার বসকে পছন্দ হয়েছে?
-হ‍্যা। তো সমস‍্যা কি?
– সমস‍্যা হলো আমি তাকে বিয়ে করতে পারবো না।
– মানে কি? কেন করতে পারবি না?
– কারণ সে অলরেডি ম‍্যারিড।
পিঠ সোজা করে বসলেন এবার ইয়াসমিন। ভালোই থমকে গেছেন তিনি।
– কিন্তু…. তুই কেমন করে জানলি যে সে বিবাহিত? তোর সাথে তার এ ব‍্যাপারে কথা হয়েছে?
– না! আমার কিভাবে কথা হবে তার সাথে। সে তো আমাকে চেনেনই না।
– তাহলে?
চোখ মুছলো রিণিতা,
– গতকাল আমি পৃথার অফিসে গিয়েছিলাম ওনার ব‍্যাপারে খোজ নিতে। জানতে পারলাম সে নেই। পৃথার সাথে সিলেট গিয়েছেন। এটা তো আগেই জানতাম আমি। রিসেপশন থেকে ওনার নাম জেনে এসেছিলাম। পরে বাসায় এসে ফেসবুকে খুজেছি ওনাকে। তখনই প্রোফাইলে দেখলাম লেখা ম‍্যারিটাল স্টেটাসে ম‍্যারিড দেওয়া। আম্মুউউউউউউ এখন আমার কি হবে?
আবার হাউমাউ করে কেঁদে দিল রিণিতা। ইয়াসমিন জড়িয়ে ধরলেন মেয়েকে।
-আম্মু, তুই ঠিক প্রোফাইল দেখেছিস তো? ওনার একাউন্ট ওটা নাও হতে পারে।
– না, ওটাই ওনার প্রোফাইল। ওনার ছবিই দেওয়া।
ইয়াসমিন আর কি বলবেন। দীর্ঘশ্বাস ছাড়লেন শুধু নিজের মাঝে। মেয়েকে সান্ত্বনা দেওয়া ছাড়া আর কোনো কিছুই তার করার নেই এখন।
………………………………………….
পৃথা বসার ঘর থেকে দৌড়ে ভেতরে ঢুকলো। পেছনে ফিরে বার বার দেখছিল স্বাধীন ওর পেছনে এসেছে নাকি, এই জন‍্য সামনের কে আছে দেখতে পেল না ও। একেবারে যেয়ে ধাক্কা খেল মিসেস রোজির সাথে। চমকে তাকালো পৃথা,
-চাচি রিয়েলি সরি।
হেসে দিলেন রোজি। পৃথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
– কি হয়েছে মা? কার থেকে পালিয়ে যাচ্ছো?
পৃথা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে ফেললো, মুখ দিয়ে কিছুই বললো না। হঠাৎ পৃথার পেছনে তাকিয়ে রোজি আরও বড় করে হেসে দিলেন,
– ওওও। এখন বুঝলাম কার থেকে পালাচ্ছিলো আমার বউমা। কি রে আব্বা? তুই আমাদের পৃথাকে বিরক্ত করছিস নাকি?
পৃথা ঝট করে মাথা উঁচু করে প্রথমে নিশাদের মায়ের দিকে তারপর নিজের পেছনে ফিরে তাকালো। স্বাধীনকে পেছনে দেখতে পেয়েই আবার চোখ নামিয়ে ফেললো ও। স্বাধীন পাশে এসে দাড়ালো পৃথার। মিসেস রোজির দিকে তাকিয়ে শুভ্র একটা হাসি দিল ও। রোজি পাশাপাশি দুজনকে পেয়ে আদর করে চলে গেলেন।
এবার স্বাধীনের কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার কোন পথ পেল না পৃথা। ঘুরে চলে যেতে চাইলেও ওর হাত ধরে ফেললো স্বাধীন।
– কোথায় যাচ্ছো?
পৃথা লাজুক হাসি দিয়ে স্বাধীনের হাত ছাড়াতে চাইলো কিন্তু পারলো না। শেষে হাত নামিয়ে রাখলো ও যাতে ওদের বন্ধন কেউ দেখতে না পায়। পৃথাকে নিয়ে সবার থেকে সরে স্বাধীন ওপরে উঠে আসলো নিজেদের রুমে। ভেতরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে দিল। সাথেসাথেই চেচিয়ে উঠলো পৃথা,
-আরে কি করছো? আমাকে ছাড়ো, যেতে দাও নিচে।
স্বাধীন কোন কথাই বললো না। শুধু পৃথার দিকে তাকিয়ে দুষ্টু হাসি দিয়ে এগিয়ে আসলো ওর কাছে। পৃথা নার্ভাস হয়ে হেসে দিল,
-শোন, নিচে বড়রা আছে। আমাদের খুজতে পারে। এভাবে রুমে থাকলে ব‍্যাপারটা বাজে লাগে দেখতে।
স্বাধীন এবারও সেই একই হাসি দিয়ে চুপ করে রইলো। তবে পৃথাকে ওর দুহাত সহ নিজের আলিঙ্গনে বেধে নিল এবার। পৃথা তো লজ্জায় পারলে ডুবে যায়। অনেক জোড়াজোড়ি করেও বাধনটা শিথিল করতে পারলো না ও। শেষে হাল ছেড়ে দিয়ে তাকালো স্বাধীনের দিকে। এবার কথা বলে উঠলো স্বাধীন,
– আমাকে সকালে একা ফেলে গিয়েছিলে কেন? আমি উঠে দেখি আমার পাশে তুমি নেই। এটা কিছু হলো?
স্বামীর আদুরে অভিযোগের কি উত্তর দিবে তা জানা নেই পৃথার। চুপচাপ দাড়িয়ে রইলো ও ঠোটে একটা লাজুক হাসি নিয়ে। স্বাধীন আবার বললো,
– Last night was the best night of my life. And it was all beacause of you Preetha. Thanks for accepting me and for making me yours forever.
স্বাধীন এই কথাগুলো বলতে বলতেই পৃথা ওর চোখের দিকে তাকালো। এক আজব মায়ার সাথে মিশ্রিত কৃতজ্ঞতা খুজে পেল ওর দৃষ্টিতে। এতোটা ভালোবাসে ছেলেটা ওকে এটা কল্পনাতেই ছিল না পৃথার।
……………………………………….
মিস্টার আহমেদ সকালে বাজারে গিয়েছিলেন। বাসায় এসে বেডরুমে ঢুকতেই দেখলেন রিতা রেডি হয়ে কোথায় যেন যাচ্ছে। স্ত্রীর হাতে মোটা অঙ্কের টাকা দেখেও কৌতুহল জাগলো তার।
– রিতা?
এমন ভাবে চমকে গেলেন রিতা যেন কোনো ভূত দেখেছেন নিজের সামনে। স্বামী এতো তাড়াতাড়ি চলে আসবে এটা ভাবেননি তিনি। টাকাটা কোনো মতে ব‍্যাগে গুজে আমতা আমতা করতে লাগলেন,
– তুততুমি চলে এসেছো?
স্ত্রী কথার উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলেন মিস্টার আহমেদ,
-এই সকাল বেলা কোথায় যাচ্ছো? টাকাও দেখছি ভালো এমাউন্টে তোমার হাতে।
চুপ মেরে গেলেন রিতা প্রথমে। কি কৈফিয়ত দিবেন স্বামীকে কিছুই বুজতে পারলেন না। সত‍্য তো বলা যাবেই না।
– এইইই একটু দোকানে যাচ্ছি, কিছু কেনাকাটা করতে।
– তা এতো টাকা নিয়ে যাচ্ছো? কি এমন কিনবা?
ঝামটা মেরে উঠলেন এবার রিতা,
-তুমি না বেশি বেশি ছোক ছোক করো। আমার কি কি কেনার আছে এটা তোমাকে বলে যেতে হবে নাকি? আমার ব‍্যক্তিগত কতো দরকার থাকতে পারে না? সবকিছুতেই খালি জেরা করার অভ‍্যাস হয়ে গেছে তোমার।
স্ত্রীর রাগে হেসে দিলেন মিস্টার আহমেদ।
– আচ্ছা, আচ্ছা এতো রাগা লাগবে না। বাইরে যাচ্ছো, ভালো মুড নিয়ে যাও নোয়তো মন মতো জিনিস কিনতে পারবে না।
-সরো দেখি। আমাকে যেতে দাও।
এই বলে গট গট করে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন রিতা। স্বামীর চোখের আড়াল হওয়ার পর হাপ ছাড়লেন। যাক বাবা! ভালো বাঁচা বেচেছেন। আরেকটু সময় ওখানে থাকলেই হয়তো….
আর চিন্তা করতে চাইলেন না রিতা। কেউ আর থামানোর আগেই বের হয়ে গেলেন বাসার থেকে।
আধাঘন্টা পর স্বর্ণের দোকানের সামনে এসে গাড়ি থামলো রিতার। ভেতরে ঢুকলেন তিনি তার মনমতো জিনিস কেনার জন‍্য।
চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here