রাগে_অনুরাগে #কলমে সৌমিতা #পর্ব- ১২

0
312

#রাগে_অনুরাগে
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ১২

– কুয়াশা ঘেরা ভোরের মাঝে যখনই একঝাঁক ঝকঝকে রোদ শরীরের উপর পড়ে,,,তখন আরাম বোধ হয়,,সূর্য সবেমাত্র উঠেছে,,আর তার তপ্ত রোদ অনুপমার শরীরে স্পর্শ হতেই মুখে ফুটে ওঠে মিষ্টি হাসি,,,, এই গত সপ্তাহ ধরে অসুস্থ ছিল সে,,, অভ্র ও তার পরিবার সব সময় ওর খেয়াল রেখেছে,,, বাবা ও পিসিও একবার এসে দেখে গেছে,,,,দিনে কতবার ফোন করে খোঁজ নেয় তারা,,,এইসব ভাবতেই নিজেরকে কেমন অপরাধী লাগে অনুর,,,,ভাবতেই মনে হয় কেন সে ইচ্ছা করে এই শরীর খারাপ টা বাঁধালো??মাঝখান থেকে এতগুলো লোক হয়রানি হলো,,,

– কফির মগে শেষ চুমুক টা দিয়ে ঘরের দিকে তাকাতেই দেখে মুন্নী ঘর পরিষ্কার করছে,,,

– মুন্নী তোর দাদাভাই কোথায় গিয়েছে?? বা কবে আসবে সেদিন কিছু কি বলে গিয়েছিলেন তিনি???

– বৌদিভাই সেদিন তো দাদাভাই বলে গেল এইকদিনে নাকি তার অনেক কাজ পেন্ডিং হয়ে পড়ে আছে,, তাই সে অফিসে যাচ্ছে আর বলে গেল যে হয়তো দিল্লিতেও যেতে হতে পারে,,,হিসাব মতো এখনো দুদিন লাগবে দাদাভাই এর ফিরতে,, কি একটা দরকারি কাজ আছে যেন,,, সময় পেলে ফোন করে নেবে তোমাকে,,, আর তোমাকে কিন্তু ওষুধ গুলো খেতে বলে গেছে,,

– হ‍্যাঁ জানি কারণ এই নিয়ে তুই আমাকে কুড়ি বার বলেছিস,,,আর সময় গত পাঁচদিনে যখন তার হয়ে ওঠেনি তাহলে আশা করছি এই দুদিনের মধ‍্যেও হয়ে উঠবে না তার,,,

– তুমি শুধু শুধু রাগ করছো দাদাভাই এর উপর,,,,,

– রাগ করতে যাবো কেন পাগল,,, আর তার প্রতি রাগ করার সেই অধিকার কি আমার আছে???তুই এক কাজ কর,,,আজ কলেজ থেকে সোজা শপিংমলে যাবো,,তুই তিনটের দিকে সিটি সেন্টার টু- এ চলে আসিস,,,

– আমি কেন বৌদিভাই??

– কারণ তোমার জন্যেও অনেক জিনিস কিনতে হবে,,, হ‍্যাঁ রে তোকে তো আমি বলেই ছিলাম যেই জিনিসটা লাগবে আমাকে বলবি,,,ভাগ‍্যিস মা আমাকে বললো যে তোর কটা জামা-কাপড় কিনতে হবে,,,

– ও আমার লাগবে না,,,

– চুপ,,, এখন যা নিচে,,,, আমি রেডি হয়ে আসছি,,,

– ঠিক আছে তাড়াতাড়ি এসো,,,তোমার ওষুধ কিন্তু নিচে আছে,,,( মুন্নী চলে যাওয়ার পর অনুপমা অভ্রের ছবির দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,,)

– কি হল শরীর খারাপ বাঁধিয়ে সেই তো আপনাকে ধরে রাখতে পারলাম না,,, আচ্ছা আমার থেকেও কি কাজ গুরুত্বপূর্ণ আপনার কাছে?? নাকি আমার থেকে দূরে দূরে থাকতে চাইছেন মি.চৌধুরী??? যাওয়ার দিন একটাবারের জন‍্যেও বলে গেলেন না আবার,,,যেই আমি একটু সুস্থবোধ করলাম ওমনি আপনি চলে গেলেন,,, কি ভাববো আমি আপনার ব‍্যবহারে,,,, দেখুন আজ আপনার খবরাখবর নিতে হয় মা বাবার কাছ থেকে,, এমনকি মুন্নীর কাছ থেকেও,, যেইসব কথা আমার জানার কথা সবার আগে হওয়া উচিত ছিলো আজ সেইসব কথা অন‍্যের কাছ থেকে আমাকে জানতে হয়,,কেন মি.চৌধুরী?? কেন??আপনি কি সত‍্যিই চাইছেন না আমাদের মাঝে সে সুপ্ত দূরত্ব আছে তা মিটিয়ে দিতে?? আর চার পাঁচটা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কের মতো একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক সৃষ্টি করতে??? নাকি এখনো আপনি নীলাঞ্জনাকে ভালোবাসেন???
___________________________________________

– ক্লান্ত দুপুরে সবাই যখন মধ‍্যাহ্ন ভোজের পর ভাতঘুম দিতে ব‍্যস্ত ঠিক তখনই অভ্র মিটিংরুমে নিজের মিটিং শেষ করে কেবিনে এসে বসে,,,,থাইগ্লাসের পাশে একজোড়া চড়ুই সেই কখন থেকে ঠোকাঠুকি করতে ব‍্যস্ত,, আর তাদের কারবার দেখে আপন মনেই হেসে ফেলে অভ্র,,,,ভেজিটেবল স‍্যুপ টা শেষ করে চেয়ারে নিজের শরীরটাকে এলিয়ে দেয়,,,মুহূর্তে ক্লান্ত চোখজোড়াই নেমে আসে রাজ‍্যের ঘুম,,,,( দিল্লিতে এইকদিন অভ্রকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়েছে,,,যার ফলস্বরূপ এই ডিলটা ও পেয়ে যায়,, আজ সকালে কলকাতায় এসে সোজা অফিসে চলে আসে,,যার দরুন বাড়িতে এখনো কেউ জানে না যে ও কলকাতায় ব‍্যাক করেছে,,,,) ফোনের তীক্ষ্ণ রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙ্গে যায় অভ্রের,,, চোখ মেলে টেবিলের উপর থেকে ফোনটা নিয়ে স্ক্রিনের ভেসে ওঠা নামটা দেখে সাথে সাথেই রিসিভ করে অভ্র,,,

– হ‍্যালো

– স‍্যার সব ডেকোরেশন কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে,,,( রিসোর্ট ম‍্যানেজার)

– হ‍্যাঁ যেইভাবে করতে বলেছিলাম সেইভাবেই করেছেন তো??

– হ‍্যাঁ স‍্যার আপনার কথা মতোই করা হয়েছে,,, পুরো রুম আর গার্ডেন এরিয়া অর্কিড, বেলফুল,,আর গোলাপ দিয়ে সাজানো হয়েছে,,, আর তার উপরে মরিচ বাতি ও ক‍্যান্ডেল দিয়ে ডেকোরেশন করা হয়েছে,,,আর ডিনারে যে যে আইটেম গুলো রাখতে বলেছিলেন সেইগুলো রাখা হবে আর এক্সট্রা কিছু কি রাখবো স‍্যার???

– হমমম একটা কাজ করুন গার্ডেন এরিয়ায় একটা জায়গায় ফুচকা আর আইসক্রিম রাখবেন,,,

– আচ্ছা ঠিক আছে স‍্যার,,, ম‍্যাম পছন্দ করেন এইগুলো??

– হম,,,আচ্ছা কেকের উপরে লেখা থাকবে my lovely wife আর তার পাশে বড়ো একটা কার্ডে লেখা থাকবে welcome to my life Mrs. Avra choudhury

– ওকে স‍্যার সব হয়ে যাবে,, আপনারা যখন আসবেন তার আধাঘণ্টা আগে আমাকে একটা ফোন করে দেবেন,,,

– ঠিক আছে,,,,(ফোনটা রেখে টেবিলের উপর থেকে অনুপমার ফটোফ্রেমটা হাতে নিয়ে একপলক দেখে বলে,,,)

– আজকে রাতে যাচ্ছি তোমার কাছে অনুপমা,,বড়ো একটা সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে তোমার জন্য,,,আর তোমাকে কষ্টে রাখবো না,,,ভালোবাসার চাদরে মুড়িয়ে রাখবো তোমায় কথা দিচ্ছি,,,, কাল থেকে একটা নতুন সকাল অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য,, আমি যে তোমাকে খুব ভালো বেসে ফেলেছি অনু,,,এই কদিন তোমাকে না দেখতে পেয়ে আমি সেটা ভালোকরেই অনুভব করেছি,,,,

– অভ্র যখন অনুপমার ছবির সাথে কথা বলতে ব‍্যস্ত ঠিক তখনই অফিসের এক স্টাফ কেবিনে নক করে,,,অনুপমার ছবিটা জায়গা মতো রেখে,অভ্র তাকে ভিতরে আসতে বলে,,এবং সে এসে বলে,,,

-স‍্যার আপনার সাথে একজন দেখা করতে এসেছেন,,,

– কে?? নাম কি??

– স‍্যার তাতো বলেননি,,,ভদ্রলোক শুধু বললেন আপনার সাথে খুব দরকার,,,, দেখা করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ,,,

– আচ্ছা উনাকে পাঠিয়ে দিন,,,

-(কিছুক্ষণ পরে লোকটি অভ্রের কেবিনের সামনে এসে নক করে বলে) আসতে পারি?

-হ‍্যাঁ আসুন,,, আপনাকে তো ঠিক চিনতে পারলাম না,, দাঁড়িয়ে থাকবেন না,,,বসুন,,,

-আমাকে আপনার চেনার কথাও নয় মি.চৌধুরী,, আমি আপনার কাছে খুব দরকারে এসেছিলাম,,

-হ‍্যাঁ বলুন,,, তার আগে আপনার পরিচয় টা বলুন,,,

– আমি হৃদয়,,হৃদয় মুখার্জি,,,

– তা মি.মুখার্জি আমি আপনাকে কি ভাবে সাহায্য করতে পারি??? আমি তো আপনাকে চিনিও না ইভেন আমার মনে হচ্ছে আজই প্রথম দেখা হচ্ছে আপনার সাথে,,,,

– হ‍্যাঁ মি.চৌধুরী আমাকে আপনার চেনার কথাও না,,,কিন্তু বিশ্বাস করুন খুব দরকারে পড়েই আপনার কাছে আমাকে আসতে হয়েছে,,,,আপনি দয়া করে আমার ভালোবাসা কে ফিরিয়ে দিন আমার কাছে,,,আমার অনুপমাকে ফিরিয়ে দিন,,,

– what do you mean?? আপনি কি বলতে চাইছেন মি.মুখার্জি?? আপনার মাথা ঠিক আছে???

-দয়া করে উত্তেজিত হবেন না মি.চৌধুরী,,,(তারপর হৃদয় একে একে অনু আর ওর সম্পর্কে বলে) বিশ্বাস করুন মি.চৌধুরী আমি পারিনি সেইদিন বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে অনুপমাকে বিয়ে করতে,, বাধ‍্য হয়ে চলে যেতে হয়ে ছিল ওর জীবন থেকে অনেক দূরে,,,

– হৃদয়ের কথা গুলো শুনে হতভম্ব হয়ে যায় অভ্র,,,,,

-বিশ্বাস করুন মি.চৌধুরী সেইদিনের পর থেকে একটা রাতের জন‍্যেও আমি আমার দু-চোখের পাতা এক করতে পারিনি,,,তাই এক প্রকার বাধ‍্য হয়েই আমি দেশে ফিরে এসেছি,,আর দেশে ফিরেই আমি জানতে পারলাম যে অনুর বিয়ে হয়ে গেছে,,,এই খবরটা শুনে আমি ভেঙে পড়েছিলাম,,, আমি ভেবেছিলাম আমার অনু হয়তো আজও আমার জন্যে অপেক্ষা করছে কিন্তু আমি ভুল ছিলাম,,,, আমি বিদেশেই ব‍্যাক করছিলাম যদি না সেদিন,,,,

– যদি না সেদিন কি মি.মুখার্জি???( নিজেকে অনেক কষ্টে সামলে প্রশ্ন করে অভ্র)

– যদি না সেদিন রাস্তায় সুনন্দার সাথে দেখা হত,,,আর না আমি জানতে পারতাম,,,,

– কি জেনেছেন আপনি সুনন্দার কাছ থেকে???

– জেনেছি যে আমার অনুপমা ভালো নেই আপনার কাছে???সরি কিন্তু বলতে বাধ‍্য হচ্ছি যে আজও অনুপমা আমাকেই ভালো বাসে ,, ওর জীবনে প্রথম ভালোবাসা আমি,,, প্রথম পুরুষ আমি,,,, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করতাম যে আমার অনুপমা আমাকে কখনোই ভুলে যাবে না,,, আর দেখুন সেটাই সত‍্যি হয়ে দাঁড়ালো,,,,আজ যদি সত‍্যিই অনুপমা আপনার সাথে সুখে থাকতো তাহলে আমি কখনোই আপনাদের মাঝে আসতাম না,,,,,,

-( হাত দুটো মুঠ করে এতক্ষণ ধরে চুপচাপ হৃদয়ের কথা গুলো শুনছিল অভ্র,,,,আর বারবার কানে একটা কথায় বাজছিল হৃদয়ের বলা “আমার অনুপমা”)আপনি যেটা বলছেন তার প্রমাণ কি মি.মুখার্জি??আর আপনি জানলেন কি করে যে অনুপমা এখনো আপনাকে ভালোবাসে??আমার কাছে সুখী নেই সে??(গম্ভীর হয়ে)

– মি.চৌধুরী প্রমাণ আমার কাছে আছে,,,আমি জানতাম হয়তো আপনি বিশ্বাস করবেন না আমাকে,,, তাই প্রমাণ আমি সাথে করেই নিয়ে এসেছি,,,এই গুলো তাহলে দেখুন( একটা প‍্যাকেট থেকে কিছু ছবি বের করে অভ্রের দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল)

– হৃদয়ের দেওয়া ছবি গুলো দেখে অভ্র চুপ হয়ে যায়,,ফুলে ওঠে কপালের রগ,,,রক্তবর্ণ হয় ওই চোখজোড়া,,,, অভ্রকে নির্বাক থাকতে দেখে হৃদয় বলে ওঠে,,,

– দেখুন মি.চৌধুরী আমি সুনন্দার কাছে থেকে সব জেনেছি যে আপনাদের মধ্যে এখনো স্বামী স্ত্রী সম্পর্ক গড়ে উঠেনি,,, আর অনু আজও আমাকে ভুলতে পারেনি,,ও এখনো আমাকেই ভালো বাসে,,,দয়া করে আপনি আমাদের জীবন থেকে চলে যান এতে আমাদের তিন জনের পক্ষেই ভালো হবে,, আসছি আমি ,,,আমি আশা করছি আপনি আমার কথাটা রাখবেন,,,আর আমি অনুর সাথে খুব শীঘ্রই দেখা করবো,,, আর আমি জানি আমাকে দেখলে ও আমার সাথেই চলে আসবে,,তাই আপনি যদি ডিভোর্সের কাজ গুলো একটু মিটিয়ে নিতেন,,, মি.চৌধুরী,,, মি.চৌধুরী,,শুনতে পারছেন আমি কি বলছি??? মি.চৌধুরী??

-(হৃদয়ের কথা গুলো শুনে আর ছবি গুলো দেখে অভ্র স্তব্ধ হয়ে যায়,,,চলে যায় ভাবনার ঘোরে,,,কিন্তু তক্ষণাৎ হৃদয়ের ডাকে ওর সম্বিত ফিরে আসে,, এবং নিজেকে সামলে বলে,,)হ‍্যাঁ আমিও এটা চাই,,,আপনি এখন আসতে পারেনি,,, আমার একটা মিটিং আছে,,,আর এই ছবি গুলো আমার কাছেই থাক মি.মুখার্জি,,,

-ঠিক আছে মি.চৌধুরী,,, আমি আসছি,,,(বলেই হৃদয় চলে যায় আর অভ্র থাইগ্লাসের দিকে তাকিয়ে আপনমনে বলে,,,)

-সত্যিই কি তুমি আমার সাথে সুখী না অনুপমা??আমাদের ব‍্যক্তিগত জীবনের কথাও আজকাল বাইরের লোকজন জানে,,,আমার ধারণা টা তাহলে কি ভুল ছিল অনু?? হৃদয়ের কথা তো তুমি একবারের জন্যেও বলোনি,,,তোমার জীবনের এই চরম সত‍্যিটা আমার কাছ থেকে দিনের পর দিন লুকিয়ে গিয়েছো,,কেন আমি জানতে পারলে কি তোমাকে আটকিয়ে রাখতাম অনু??বলো,,এই জন্যে কি তুমি আমার থেকে দূরে দূরে থাকো??কখনো কাছে আসোনি,,, আমি যতবার যেতে চেয়েছি ততবার তুমি দূরে সরিয়ে দিয়েছো আমাকে,,,মুক্তি চাও তো তুমি,,,আমার কাছ থেকে চলে যেতে চাও তো ঠিক আছে তবে তাই হোক,,, আর তোমাকে বেশি দিন অপেক্ষা করতে হবে না,,,হঠাৎ পকেট থেকে ফোনটা বার করে রিসোর্ট ম‍্যানেজারের কাছে ফোন করে অভ্র,,,

– হ‍্যালো আজকের প্ল্যান সব ক‍্যানসেল,,, আমরা যেতে পারবো না,,,, আর আপনি আপনার পেমেন্ট পেয়ে যাবেন ওটা নিয়ে চিন্তা করতে হবে না,,,, কথা গুলো বলেই অভ্র ফোন রেখে দেয়,,,তারপর অফিস থেকে বেরিয়ে যায়,,,,
___________________________________________

-এই দিকে অনু আর নিশা শপিং মলে গিয়ে দেখে মুন্নী ওদের জন্যে অপেক্ষা করছে,,,তারপর ওরা একসাথে হয়ে কেনাকাটা করতে থাকে,,, নিশা মুন্নীর ড্রেস পছন্দ করে দিচ্ছে আর অনু গিয়েছে কিছু খাবার আনতে খিদে পেয়েছে তাই ,ঠিক সেই সময় ওর কাছে সুনন্দার ফোন আসে,,,ও রিসিভ করে বলে,,,

-হ‍্যাঁ বল সুনন্দা,,,,

– একবার সামনের দিকে তাকিয়ে দেখ অনু,,,

– কেন?? তুই এসেছিস?? এই যে বললি আসবি না,,,

– উফফ অত কথা না বলে দেখ না,,

-সুনন্দার কথায় অনু সামনের দিকে তাকিয়ে দেখে ওর ঠিক সামনে সুনন্দা আর হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে,,, সুনন্দার সাথে হৃদয়কে দেখে কিছুক্ষণের জন্য অবাক হয়ে যায় অনু,,,তারপর দ্রুতই নিজেকে সামলিয়ে নেয়,,,ঠিক তখনই হৃদয় ওর কাছে এসে বলে,,,

– অনুপমা,,,( হৃদয়কে কথা বলতে না দিয়ে ও বলে)

– কেন এসেছো এখানে? আর তুই তো সব জানিস সুনন্দা তারপরে ওকে কেন এনেছিস এখানে???(সুনন্দার সামনে গিয়ে)

– সুনন্দাকে কিছু বলো না তুমি, আমি জোড় করে ছিলাম বলেই ও এনেছে,,, অনু আমাকে প্লিজ ক্ষমা করে দাও,,, আমি অনেক বড়ো ভুল করে ফেলেছিলাম সেইদিন,,,(অনুর সামনে গিয়ে ওর হাত ধরে কথাটা বলে হৃদয়)

– ক্ষমা কেন চাইছো হৃদয়??সত‍্যি বলতে কি আমার তোমার উপরে কোনো রাগ নেই,,( নিজের হাত থেকে হৃদয়ের হাতটা ছাড়িয়ে)

– অনু প্লিজ আমার কথাটা বোঝার চেষ্টা করো,,,আমি জানি তুমি ভালো নেই অভ্র বাবুর সাথে,,আর এটাও জানি তুমি নিজের ইচ্ছেতে এই বিয়েটা করোনি,,,,তুমি আমাকে এখনো ভালো বাসো অনু,,,এই দেখো আমি তোমার কাছে চলে এসেছি অনু একবারের জন্য,,,,আর কোনোদিন তোমাকে ছেড়ে যাবো না,,, কথা দিচ্ছি আমি,, এই দেখো তোমাকে ছুঁয়ে,,,(হৃদয় অনুকে ছুঁতে আসলে অনুপমা সরে যায়,,, আর তারপর হৃদয়ের উদ্দেশ্যে বলে,,,)

– তুমি ভুল জানো হৃদয় আমি আমার স্বামীর সঙ্গে খুব ভালো আছি,,এবং আমি তাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি,,,তুমি প্লিজ এখান থেকে চলে যাও,,আমি তোমাকে সহ‍্য করতে পারছি না,,,,,, আমাদের স্বামী স্ত্রীর মধ্যে তৃতীয় ব‍্যক্তি হয়ে ঢোকার চেষ্টা করবে না তুমি,,, দয়া করে এখন চলে যাও,,,আর আমার কাছে হৃদয় তো সেইদিন মৃত হয়ে গেছে যেইদিন সে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিল,,, দয়া করে আমার আর আমার স্বামীর মধ্যে আসার চেষ্টা করো না(বলেই অনু ওখান থেকে চলে যায়,,হৃদয় পিছন থেকে অনেক ডাকলেও অনু সাড়া দেয় নি,,,,আর এইদিকে নিশা আর মুন্নীর কেনাকাটাও প্রায় শেষের দিকে,, ওরা হঠাৎ অনুপমাকে দৌড়ে আসতে দেখে মুন্নী জিজ্ঞাসা করে,,,

– কি হয়েছে বৌদিভাই তুমি এইভাবে দৌড়ে কেন এলে???

– এমনি,,,কিছু হয়নি,,,( মুন্নীর প্রশ্নে নিজেকে সামলে নিয়ে বলে)

– এই তুই হাফাচ্ছিস কেন?? আর চোখ দুটো ছলছল করছে কেন ?? কি হয়েছে???(নিশা)

– ক কক ই,,,কিছু কিছু না তো,,,আমার শরীর টা খারাপ লাগছে নিশা,,,মুন্নী বাড়ি চল,,,আর এই খাবার গুলো তোরা খেয়ে নে আমার ভালো লাগছে না,,, তোরা আয় আমি বাইরে অপেক্ষা করছি,,,( বলেই একদন্ড না দাঁড়িয়ে সোজা বেরিয়ে যায় শপিংমল থেকে অনুপমা)
__________________________________________

-রাতে বাড়ি ফিরে অনু তেমন কারোর সাথে কোনো কথা না বলে চুপচাপ ডিনার করে উপরে চলে যায়,,, সত‍্যি বলতে ওর মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে আছে,,,এতদিন বাদে হৃদয়কে দেখে ও খুশি হয়েছে ঠিকই কিন্তু পরমুহূর্তেই ওর কথা গুলো শুনে মানুষটির প্রতি তীব্র ঘৃণাও জন্ম নিচ্ছিলো তখন,,,তাই দ্রুতই সেখান থেকে বেরিয়ে এসেছিলো ও। ওই মানুষটাকে আর যাইহোক ঘৃণা করতে চাইনা অনুপমা,,, একসময় ভালোবাসতো তো,,,,,হঠাৎ অনুভব করলো গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছে,,, তবে কি এটা হৃদয়ের ফিরে আসার জন্য,,,,,

-কেন এসেছো হৃদয়,,আমাকে আবার কষ্ট দিতে??আর কত কস্ট দেবে??এখন যেই আমি আমার স্বামীর সঙ্গে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখছি অমনি তুমি সেটা শেষ করে দিতে এসেছো,,, ফিরবেই যদি তাহলে আর কদিন আগে কেন ফিরলেনা তুমি?? এখন যে আমার পক্ষে তোমার কাছে ফিরে যাওয়া সম্ভব নয় হৃদয়,,আমার এই মনে যে এখন মি.চৌধুরী বসবাস করে,,সেইখানে তুমি কোথাও নেই,,তোমার ছিটেফোঁটা স্মৃতিও আজ বিলুপ্ত,,,,ফিরেই যদি আসবে তাহলে সেইদিন কেন আমাকে একা ফেলে চলে গিয়েছিলে??(এইসব ভাবতে ভাবতে অনু ঘুমিয়ে পড়ে,, প্রায় রাতের শেষভাগে অভ্র বাড়ি ফেরে,,, ঘরে এসে দেখে অনু ঘুমাচ্ছে। ও অনুকে না ডেকে চেঞ্জ করে সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়ে,,,)

-হঠাৎ কিছুর শব্দে অনুর ঘুম ভেঙ্গে যায়,, আর চোখ খুলে দেখে অভ্র সোফায় শুয়ে ফোন নিয়ে কিসব করছে,,,অভ্র সত্যি এখানে আছে কিনা সেটা পরোখ করার জন্য নিজের চোখজোড়াকে ভালো করে কচলায় অনুপমা,,,তারপরেও অভ্রকে এক জায়গায় দেখতে পেয়ে ও বলে ওঠে,,,,

– আরে আপনি কখন এলেন???(বিছানা থেকে উঠে ঘুমঘুম কন্ঠে)

– হঠাৎ অনুপমার এই ঘুম জড়ানো কন্ঠস্বর শুনে অভ্র চমকে যায়,,, আর নিজের মনে বলে” মেয়েটা কি জানে তার এই ঘুম জড়ানো কন্ঠস্বরে আমি বারবার প্রেমে পড়েছি,,,জানলে হয়তো লজ্জায় লাল হয়ে যেত” তারপর হঠাৎ হৃদয়ের কথাগুলো মনে পড়তেই মুহূর্তেই রাগ যেন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে,,,অতিকষ্টে নিজেকে সামলে বলে ,,,

– এই তো কিছুক্ষণ আগে,,,,(গম্ভীর হয়ে)

– ওওও ,,,ডাকবেন তো আমাকে,,,আর সোফায় কেন শুয়েছেন??বিছানায় চলুন,,

– আমি এখানে computable অনুপমা,,তুমি যাও গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো(গম্ভীর ও শান্ত হয়ে)

– আচ্ছা আপনি বসুন আমি খাবার আনছি,,, মুন্নী যে বললো আপনি নাকি দুদিন পর আসবেন,,তা আজকে,,( অনুর ব‍্যবহারে অভ্রের হঠাৎ হৃদয়ের বলা কথা গুলো মনে পড়ে গেল,,,যে অনু ওর কাছে ভালো নেই,,,ভালো থাকার শুধু অভিনয় করছে,,,,মুহূর্তেই কপালের রগ ফুলে ওঠে,,,অনুকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে অভ্র বলে ওঠে,,)

– কেন এখন এসেছি বলে তোমার কি খুব সমস্যা হচ্ছে অনুপমা???তাহলে বলো আমি চিরকালের জন্য চলে যায় এখান থেকে,,তাতেই তোমার সুবিধা হয় নাকি???(কথাগুলো বলেই টেবিলে থাকা ফুলদানি টা ছুড়ে ফেলে দেয় ফ্লোরে,,, আর সেই ফুলদানির ভাঙ্গা অংশবিশেষ গুলো চারপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে যায় ক্ষণেই,,, অভ্র একবার অনুপমার দিকে তাকিয়ে ব‍্যালকনিতে চলে যায়,,,, ক্ষণিকের মধ্যে কি থেকে কি হয়ে গেল সেটা বোঝার চেষ্টা করছে অনুপমা কারণ অভ্রের এইরূপ আচরণ ও ব‍্যবহার দুটোই ওর কাছে নতুন,,,, ও হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে দেখতে থাকলো ব‍্যালকনিতে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষটিকে,,,,)

চলবে…..

বিঃদ্রঃ- আমি সত‍্যিই খুব দুঃখিত আপনাদের কে রেগুলার গল্প দিতে না পারাই,,, কিন্তু আমি চেষ্টা করবো এবার থেকে রেগুলার গল্প দেওয়ার,,,,

– আমি আবারও বলছি যারা যারা গল্পটি পড়বেন অবশ্যই যেন রিয়‍্যাক্ট ও মন্তব্য করবেন,,,, রেগুলার গল্প না দেওয়ার জন্য পেজের রিচ কমে যাচ্ছে,, সুতরাং গল্প অনেকের কাছেই যাবে না,,,,

– সবাই সেয়ার করবেন ও নিজেদের বন্ধুদের আমার গ্ৰুপ ও পেজে ইনভাইট করবেন,,,সামনের পর্ব গুলোতে রয়েছে চমক,,, আর আমি আগেই বলেছি এটা প্রাপ্তবয়স্ক(১৮+) দের মতো কিছু গল্পের পর্বে থাকবে,,,সেই পর্ব গুলো আমি আমার গ্ৰুপে দেব,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here