#অদৃষ্টে_তুমি_আমি
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১২
রিতা আজ খুব বেশামাল ভাবে পৃথাদের বাসার দিকে যাচ্ছেন। মনের ভেতর উথাল পাথাল করছে তার, কি করবেন কিছুই বুঝে উঠতে পারছেন না। সকাল সকাল একি শুনলেন তিনি?
এক ঘন্টা আগের কথা। পৃথার দাদার যে আগের বাড়িটা যেটাতে পৃথা বড় হয়েছে, সেটা এখন ডেভেলাপারের হাতে। পৃথার দাদার মৃত্যুর পরই সেই বাসা কে ডেভেলপারের হাতে দিয়ে দেন রিতা। পৃথার বাবার অসুস্থতার কারণে তার মতমতও নেওয়া হয়নি। আজ সেই বাসা এক বহুতলা এপার্টমেন্ট হওয়ার পরও রিতা কিউকে ওখানে উঠতে দেননি। নিজেদের পাওয়া ফ্ল্যাটগুলো ভাড়া দিয়ে দিয়েছেন। এর পেছনে তার খুব জোড়ালো একটা কারণ আছে। আর তা হচ্ছে পাশে থাকা স্বাধীনদের বাসা। রিতা কোনোভাবেই চাননা স্বাধীনদের পরিবারের সাথে ওনাদের কোনো সম্পর্ক থাকুক। দুই পরিবারের সদস্যদের এই কারণেই দূরে দূরে রেখেছেন তিনি। ওনার একটাই ভয়: কাছে থাকলে, পৃথা আর স্বাধীন যদি আবার এক হয়ে যায়? অনেক কাঠকর পুড়িয়ে ওদেরকে আলাদা করতে পেরেছেন কি না।
কিন্তু আজ এক ঘন্টা আগে যা শুনে আসলেন রিতা, তারপর থেকে তার মনে হচ্ছে পা থেকে মাটি সরে গিয়েছে। নিজেদের এপার্টমেন্টে একটা কাজে গিয়েছিলেন তিনি। সেখানেই স্থানীওদের কাছ থেকে একটা ভয়ংকর খবর জানতে পারলেন।
স্বাধীন নাকি দেশে ফিরেছে।
আতঙ্কে কিছুক্ষণ কিছু বলতে পারেননি রিতা। পরে আরেকটু খোজ নিয়ে জানলেন যে আসলেই এসেছে স্বাধীন। ওর দাদার বাসায় এখন মনসুর সাহেবের ছোট ছেলে অর্থাৎ স্বাধীনের ছোট চাচা থাকে। তার সাথে নাকি দেখা করে চলে গেছে। কোথায় গেছে কেউ জানে না। মাথায় তখন থেকেই যেন বাঁজ পরছে রিতার,
– হায়! হায়! কোন দুঃখে এই ছেলে এখন দেশে ফিরলো? কি করতে ফিরেছে ও? পৃথাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য না তো আবার? এটা হলে আমি শেষ! আমার এতো দিনের চেষ্টা সব শেষ।
নিজের মাঝেই বিড়বিড় করতে করতে কখন যে পৃথাদের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে তার গাড়ি থেমেছে তা রিতা বলতে পারবে না। ড্রাইভারের ডাকে হুশ্ ফিরলো তার। তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নেমে পৃথাদের বাসায় উঠলেন তিনি।
ইয়াসমিন দরজা খুলতেই হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলেন রিতা। তার অস্থির আচরণ দেখে ইয়াসমিন বেশ অবাক হলো,
– আপা, কি হয়েছে আপনার? শরীর ভাল আছে তো?
-ইয়াসমিন, আমাকে একটু পানি দাও।
পানির গ্লাস সামনে আসতেই গটগট করে পুরো গ্লাসের পানি সাবার করে ফেললেন রিতা। তারপর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সোফাতে বসে পরলেন। ইয়াসমিন এসে বসলো তার পাশে।
– আপা সব ঠিক আছে তো?
-কিচ্ছু ঠিক নাই ইয়াসমিন। সব গন্ডগোল হয়ে গেছে।
-মানে? এমন কি হলো?
-স্বাধীন দেশে ফিরেছে।
-কি?
ইয়াসমিন এতো জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো যে রিতা পর্যন্ত আওয়াজে চমকে গেলেন। ইয়াসমিনের তাতে কিছুই যায় আসলো না,
– আপা, এটা কেমনে হলো? আপনি না বলেছিলেন যে সব ঠিক করে রেখেছেন?
– করেছিলামই তো?
– তাহলে ওই ছোকরা দেশে আসলো কেন? কি কারণে?
– সেটাইতো জানতে হবে আমাকে ইয়াসমিন। কেন স্বাধীনের এতো বছর পর দেশের কথা মনে পড়লো। কারণ আমি তো সব দিক থেকে ওর আসার পথ রোধ করেছিলাম, তাহলে কিভাবে কি হলো?
সে যাই হোক, সত্য তো আমি বের করে ছাড়বোই। এতো সহজে আমি এটা ছেড়ে দেব না।
…………………………………
দুদিন টানা কাজ করে স্বাধীন পৃথাকে নিয়ে রওনা হলো শ্রীমঙ্গলের উদ্দেশ্যে। পথে যেতে যেতে অনেকবার পৃথা স্বাধীনকে লক্ষ্য করেছে। সত্যি বলতে গত দুদিনে, চেনা পরিচিত সব কিছু থেকে দূরে, এক নতুন শহরে, স্বাধীনকে একান্তে নিজের কাছে পেয়ে পৃথার অনুভূতি অনেকটা বদলে গেছে। মান অভিমানের দেয়াল ভেঙে ও এখন স্বাধীনের দিকে হাত বাড়াতে ইচ্ছুক। এমনকি যদি বলা যায় যে এই মুহূর্তে স্বাধীনের পাশে থেকে ওর খুবই ভালো লাগছে, তাহলে কথাটা একেবারেই ভুল হবে না।
– এই পৃথা, কি দেখ এভাবে?
চমকে তাকায় পৃথা। স্বাধীনের দিকে অবচেতন মনে তাকিয়েই হাজারো চিন্তা চলছিল ওর। স্বাধীনের হাতে এভাবে ধরা খেয়ে এখন ভীষণ লজ্জা লাগছে। তাড়াতাড়ি সামনে তাকায় ও,
– না কিছু না।
স্বাধীন কিছু বললো না। শুধু মুচকি হেসে দিয়ে গাড়ি চালানোতে মন দিল।
শ্রীমঙ্গলে নাশিদদের ফার্মহাউসে পৌছতে ওদের প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেল। অনেক দূর থেকেই সাজসজ্জায় ভরপুর দালানটা দেখা যাচ্ছিলো। ভেতরে ঢুকে ওরা দেখলো আরেক এলাহি কান্ড। পৃথা অবাক হয়ে স্বাধীনকে বললো,
– আমার তো মনে হচ্ছে, বলিউডের কোন ফিল্ম সেটে চলে এসেছি। এতো ডেকোরেশন!
পৃথার প্রতিক্রীয়ায় হেসে দিল স্বাধীন,
– সিলেটিরা এরকমই হয়। অনেক বড় পরিসরে সব কিছু করতে পছন্দ করে এরা। তার ওপর নাশিদ এক মাত্র ছেলে আঙ্কেল আন্টির। তাই এই বিয়েটা তাদের সবার জন্য অনেক ইম্পর্টেন্ট।
গাড়ি পার্ক করে নামতেই ওদের অভ্যর্থনা জানাতে অনেকেই এগিয়ে আসলো। এর মাঝে জাহিদ আর আঁচলও ছিল। এতোজনের মাঝে চেনা মুখ দুটো দেখে ভালো লাগলো পৃথার। ও খেয়াল করলো, এই পরিবারের মোটামোটি সবাইকেই স্বাধীন চেনে কারণ দেখা হতেই সবাই একপ্রকার ঝাপিয়ে পরলো ওর ওপর।
– স্বাধীন ভাই! তুমি চলে এসেছ, এবার মজা জমবে।
– নাশিদ, তোমার বিয়ে মিস করার কোনো চান্সই ছিল না আমার। যেভাবেই হোক আসতামই আমি।
পাশ থেকে জাহিদ টিপ্পনি কেটে বললো,
-নাশিদ, স্বাধীন কিন্তু একা আসেনি। দেখ কে এসেছে সাথে।
সবার চোখ পড়লো তখন পৃথার ওপর। হেসে সবার সাথেই কথা বললো পৃথা। সেই মুহূর্তেই যেন সবাই ওকে আপন করে নিল।
বড়দের সামনে নিয়ে গিয়ে, পৃথাকে নিজের স্ত্রী সন্মোধন করে পরিচয় করিয়ে দিল স্বাধীন। পৃথাকে দেখে ওকে অনেকেই বেশ আদর করলেন। এমনকি ‘বউমা’ শব্দটাও শুনতে হলো ওকে কয়েকবার। এবার আর অবাক না হলেও, লজ্জায় মুখ ভরে গেল পৃথার। সুন্দর ভাবে সালাম করলো ও সবাইকে। নাশিদের মা, মিসেস রোজি, পৃথাকে জড়িয়ে ধরলেন,
– আমাদের এই বউমা টাকে দেখার জন্য আমরা কতো অপেক্ষা করেছি। অবশেষে দেখতে পেয়ে আমার মন ভরে গেল। তোমরা দুজন আসলেই একে অপরকে কমপ্লিমেন্ট করছো। এভাবেই থেক সারা জীবন মা।
পৃথাও এতো আদর পেয়ে জড়িয়ে ধরলো মিসেস রোজিকে। তখন ক্ষনিকের জন্য স্বাধীনের সাথে চোখাচোখি হয়েছিল ওর। তখনই দেখেছিল স্বাধীনের চেহারায় প্রশান্তির লজ্জা মিশ্রিত হাসি।
নাশিদদের ফার্মহাউসটা এক কথায় বিশাল। তিন দিকে বিস্তৃত জমি রেখে একদিকে ট্রিপ্লক্স স্টাইলে বাংলো বাড়ি বানানো হয়েছে। বাইরে থেকেই দেখে বোঝা যাচ্ছে বাংলোটা ভেতর থেকে অনেক বড়। ওদের লাগেজ আগেই ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, এখন ওদেরকে ভেতরে নিয়ে আসা হলো।
জাহিদ আর আঁচলের সাথে তিনতলার একটা রুমে ঢুকলো পৃথা আর স্বাধীন। রুমটা বেশ সুন্দর একটা বিশেষ কারণে। আর তা হলো এই রুমের সাথে লাগোয়া একটা খোলা চওড়া ছাদ-বারান্দা আছে। বারান্দায় যেতেই বিল্ডিংয়ের পেছন দিকটা দেখতে পেল ওরা। ওপরে কোনো ছাউনি না থাকায় বারান্দাটা বেশ খোলামেলা আর বাতাসে ভরপুর। জাহিদ খুব ভারিক্কি নিয়ে বললো,
-ভাবী, এটা আপনাদের রুম। চাচি এস্পেশালি আপনাদের দুজনের জন্য এই রুমটা দিতে বলেছে। এই ছাদ বারান্দাটাই এই রুমের বিশেষ আকর্ষণ। আশা করি আপনাদের একান্ত সময় এখানে খুব ভালো কাটবে।
জাহিদের কথার ইঙ্গিত বুঝে হেসে দিল চারজনই। আঁচল তখন বললো,
– ভাইয়া, ভাবী, আপনারা দুজন ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি নিচে নেমে আসেন। একসাথে লাঞ্চ করবো।
এই বলে জাহিদরা বের হওয়ার সময়ে স্বাধীনকে ফিসফিস করে বললো জাহিদ,
– বন্ধু, দরজা বন্ধ করেই আবার রোমান্স করতে বসে যেও না ভাবীর সাথে। আমাদের কথাও একটু খেয়াল রাইখো। খুব খিদা লেগেছে আমাদের। তাড়াতাড়ি নাইমো।
কথাটা আস্তে বললেও পৃথা পাশে থাকায় সবটুকুই শুনেছে। মাথাটা নিচু করে অন্যদকে ফিরে তাকালো ও। স্বাধীনও লজ্জায় হেসে দিয়েছে। জাহিদের ঘাড়ে হাসতে হাসতে চড় মেরে বের করলো ওদেরকে আগে রুম থেকে। তারপর দরজা বন্ধ করে আস্তে এসে পৃথার পাশে দাড়ালো। পৃথা অন্যদিকে তাকিয়ে হাসছিল এতোক্ষণ। স্বাধীনকে ওর পাশে দাড়াতে দেখে সাথে সাথেই মুখের হাসি মুছে ফেলে নিজের ব্যাগের দিকে এগোলো ও। টাওয়েল আর কাপড় বের করতে করতে জিজ্ঞেস করলো স্বাধীনকে,
– তুমি কি আগে ফ্রেশ হবা?
– না, তুমি আগে যাও।
আর কিছু না বলে সোজা ওয়াশরুমে চলে গেল পৃথা। ভেতরে ঢুকে বড় একটা দম নিল আর হাসলো। আসতে আসতে স্বাধীনের দিকে একটুখানিক তাকিয়েছিল ও। জাহিদ ভাইয়ের কথায় মনে হয় ছেলেটা নিজেও বেশ লজ্জা পেয়েছে। অন্তত তাই মনে হলো পৃথার।
ফ্রেশ হয়ে নিচে নামতেই ওরা দেখলো খাবার লাগানো হয়ে গিয়েছে। অনেক মানুষ থাকায় একেবারে বুফে স্টাইলে খাবার পরিবেশন করা হয়েছে। আঁচল এসে পৃথাকে নিজের সাথে নিয়ে গেল। মেয়েরা সব এক জায়গায় বসে খাচ্ছে। পৃথাকেও প্লেটে খাবার নিয়ে ওখানেই বসতে দেওয়া হলো। পৃথা খেয়াল করলো, অনেকেই ওকে চিনে। অন্তত নামে চেনে।ও বসতেই একটা মেয়ে এগিয়ে আসলো,
– পৃথা ভাবী, আপনার কথা আমরা সবাই জানি। কতো বছর ধরে আপনার কথা শুনেই আসছি! স্বাধীন ভাইয়ার ছোট বোন শায়রা আমার বান্ধবী। আমাদের গ্রুপে আপনাকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়। আমরা শুনেছি, সেই ছোট্ট বেলায় আপনার আর ভাইয়ার বিয়ে হয়ে গেছে। আমাদের যে ব্যাপারটা কি রোমান্টিক লেগেছে তা বলার বাইরে।
আরেকটা মেয়ে পাশ থেকে হেসে বললো,
– আচ্ছা ভাবী, এটা কি সত্যি যে স্বাধীন ভাইয়া আপনাকে ছোট বেলায় পুতুল বলে ডাকতো?
এই কথায় চোখ বড় বড় হয়ে গেল পৃথার। প্রশ্ন ভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকালো মেয়েটার দিকে। মেয়েটাসহ বাকিরাও হেসে দিল,
– এটাই চিন্তা করছেন তো যে আমরা কিভাবে জানলাম? হাহাহা। আমাদের বড় ভাইয়ারা স্বাধীন ভাইয়ার বন্ধু হয় আর বিদেশে একই কমিউনিটির মানুষেরা একে অপরের খুব কাছের হয়ে যায়। তাই আমরা একই গ্রুপে চলি সবসময়। স্বাধীন ভাইয়া তার বন্ধুদের সাথে আপনার ব্যাপারে সবসময় কথা বলতো। আর ওনাদের থেকে আমরা জানতাম। আরও অনেক কিছু জানি আমরা।
লজ্জায় লাল হয়ে যাওয়া পৃথার চেহারাটা উঠিয়ে নিল আঁচল। দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো,
– ভাবী, সেদিন হাইওয়ের রেস্টুরেন্টে জাহিদ কিন্তু একদম ঠিক কথা বলেছিল আপনাকে। স্বাধীন ভাই আসলেই আপনার জন্য একদম পাগল। জানেন? ভাইয়া, বিদেশে কখনোই কোনো মেয়ের সাথে ডেট করেনি। আপনার প্রতি পুরোপুরি লয়াল ছিলেন। তাই না মেয়েরা?
আঁচলের সাথে বাকিরাও সমর্থন করলো এক যোগে। দেখে হেসে দিল পৃথা বড় করে। মনে মনে অনেক বেশী ভালো লাগছিল ওর। এখানে না এলে এতোকিছু ও জানতেই পারতো না। স্বাধীনকে আরও ভালো করে জানার সুযোগটাই পেত না।
এরই মাঝে হঠাৎ ছেলেদের এদিকে আসতে দেখে আস্তে করে আঁচল পৃথাকে খোঁচা দিল,
– ওই যে দেখেন আপনার আশিক, আপনাকে খুজতে খুজতে চলে এসেছে।
বাকিরা হো হো করে হাসলেও পৃথা ঠোট টিপে মাথা নিচু করে ফেললো। হয়তো টকটকে লাল হয়ে যাওয়া গালগুলো কাউকে দেখাতে চাচ্ছিলো না ও। তবে স্বাধীন এসে যখন মেয়েদের পাশেই দাড়ালো তখন আর পৃথা মাথা নিচু করে থাকতে পারলো না। ওপরে তাকাতেই হলো ওকে। দেখলো স্বাধীন ওর দিকে তাকিয়েই হাসছে। জাহিদ তখন সব মেয়েদের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,
-কি ব্যাপার? এই খাওয়া দিয়ে কি রাতের ডিনারও সারবা নাকি তোমরা? এতো দেরী লাগছে কেন? চলো চলো ওঠো। কতো কাজ পরে আছে এখনো।
জাহিদের তাগিদে তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে উঠতে হলো সবাইকে। তারপর সবাই মিলে বাইরে গেল সাজসজ্জার কাজ কতদূর আগিয়েছে তা দেখতে এবং সাহায্য করতে। স্বাধীন আর পৃথাও হাত লাগালো সাজানোতে।
এরই মাঝে এসে পৌছালো নাশিদের বউ। ওকে নিয়ে শুরু হলো আরেক রকম মজা। নাশিদের কাবিন আগেই হয়ে গিয়েছে। তাই প্রোগ্রামের জন্য দুই পরিবার একসাথে ফার্মহাউসে থাকছে। এতে উৎসবের মজা হয়ে গেছে দ্বিগুণ। দু পক্ষের আত্মীয়স্বজনই উপস্থিত আছেন এখানে। যারা বিদেশ থেকে এসেছে তারা বাংলো তেই থাকছে, আর স্থানীয় আত্মীয়রা নিজ নিজ বাসা থেকেই আসা যাওয়া করছেন।
আজ রাতে মেহেদির অনুষ্ঠান আর সেই উৎসবের আয়োজন বাইরের আঙ্গিনায় করা হয়েছে। স্বাধীন লক্ষ্য করলো একের ওপর আরেক আস্তরে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। এটার ব্যাপারে জিজ্ঞেস করতেই নাশিদ জানালো,
– ভাইয়া, শ্রীমঙ্গলে দেশের সবচাইতে বেশী বৃষ্টি হয়। যে কোনো সময় বৃষ্টি পরতে পারে দেখে এই ব্যবস্থা নিয়েছি, যাতে অনুষ্ঠানে ব্যাঘাত না ঘটে।
দিনের বাকি অংশটা কাটলো বেশ আনন্দে। ঘরের অনুষ্ঠানের সাজ সজ্জা নিজ হাতে করার মজাই আলাদা। গান বাজনা, আড্ডা, খুনশুটি সবই চললো এর মাঝে। পৃথা খুব তাড়াতাড়ি মিশে গেল সবার সাথে, এই কারণে প্রায় পুরোটা দিনই স্বাধীন নিজের কাছে পৃথাকে পেল না। সন্ধ্যায় যখন যে যার মতন তৈরী হতে চলে গেল, সেই সময় রুমে এসে পৃথাকে একা পেল স্বাধীন। পৃথা শাড়ি আর গয়না বের করছিল যখন স্বাধীন এসে বসলো খাটের এক পাশে,
– দুপুরে দেখি মেয়েদের মাঝে তোমার সাথে ভালোই গল্প চলছিল। তা কি নিয়ে কথা হচ্ছিলো?
স্বাধীনের প্রশ্নে জবাব না দিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মুচকি হাসলো পৃথা। স্বাধীন তখন হেলান দিয়ে বসলো,
– রোজি আন্টি আম্মুর খুবই ক্লোজ ফ্রেন্ড। আম্মুর সাথে তোমাকে নিয়ে অনেক কথা হয়েছে ওনার। তাই আজ তোমাকে দেখে খুব এক্সাইটেড ছিলেন তিনি।
-আমি বুঝতে পেরেছি সেটা।আমারও আন্টিকে খুব ভালো লেগেছে।
– জানো পৃথা, তোমাকে আন্টি ‘বৌ মা’ বলে যখন ডাকলেন তখন আমার খুব ভাল লাগছিল।
পৃথা লজ্জায় চুপ মেরে গেল। তবে ওর হাসি যথেষ্ট ছিল স্বাধীনকে বোঝানোর জন্য যে পৃথাও এই ডাকটা শুনে খুশি হয়েছে। তারপরেও কেন যেন আজ স্বাধীনের ইচ্ছে হলো পৃথার মুখে উত্তরটা শোনার। খাট থেকে উঠে পৃথার কাছে এসে দাড়ালো স্বাধীন,
– তোমার কেমন লেগেছে পৃথা?
আবার সেই শ্বাসরুদ্ধ অনুভূতি ঘিরে ধরলো পৃথাকে। স্বাধীনের মায়াবী কন্ঠের এই প্রশ্নের উত্তর ও দিতে পারবে না কারণ ভীষণ লজ্জা লাগবে তাতে। কিন্তু স্বাধীন যেভাবে ওকে না ধরেই ঘিরে রেখেছে তাতে ছাড়া পাওয়ারও রাস্তা খুজে পেল না ও। আবার জিজ্ঞেস করলো স্বাধীন,
– বলো না পৃথা।
– জানিনা।
পৃথার লজ্জা স্পষ্ট ঝরে পরলো ওর আওয়াজ দিয়ে। আর ঠিক এই জিনিসটাই স্বাধীনকে ওর প্রতি ভীষণ আকৃষ্ট করে। হঠাৎ স্বাধীনের আল্তো হাতের ছোয়া পেল ও নিজের কোমরে। সেখানটা দেখতে দেখতেই ও বুঝতে পারলো স্বাধীনের ঠোট আস্তে করে এগিয়ে আসছে ওর কাছে। হাল্কা হাসি দিয়ে পৃথা চুপ করে চেয়ে রইলো স্বাধীনের দিকে যেন ও নিজেও এই ক্ষণটার জন্য প্রস্তুত। তবে স্বাধীন একদম কাছে আসতেই হঠাৎ দুজনের মাঝে নিজের একটি আঙ্গুল উঠিয়ে দিল পৃথা। সাথে চোখ দুটোর মাঝে নিয়ে এলো দুষ্টুমি,
– সুযোগ পেলেই শুধু কাছে আসতে ইচ্ছা হয় তাই না? তোমার দুষ্টুমি এখন বুঝে গিয়েছি আমি। এখন থেকে এতো সহজে ধরা দিব না।
এই বলে অবাক হয়ে হাসতে থাকা স্বাধীনকে হাল্কা ধাক্কা দিয়ে নিজের জন্য পথ বানিয়ে দৌড়ে পালালো পৃথা। হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লো।
চলবে