অদৃষ্টে_তুমি_আমি #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_৮

0
375

#অদৃষ্টে_তুমি_আমি
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_৮

মিসেস রিতা খাটে বসে টিভি দেখছিলেন যখন জর্জ এসে তার পাশে হেলান দিয়ে বসলো। মিসেস রিতা হেসে ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে জিজ্ঞেস করলেন,
-কি রে আব্বু? কিছু বলবি?
জর্জ মায়ের দিকে তাকায়,
– আম্মা তুমি কবে আমার আর পৃথার বিয়ে নিয়ে কথা পাকাপাকি করবা?
রিতা ছেলের প্রশ্নে বড় করে হেসে দিলেন।
– এতো ভালো লাগে তোর পৃথাকে আব্বু?
একটা বিচ্ছিড়ি দৃষ্টি খেলে গেল জর্জের চোখে। পৃথাকে পাওয়ার লোভ ওর বেশ কিছু দিনের। মেয়েটার সুন্দরতার শেষ নেই। যেমন লম্বা তেমন ফিগার। গায়ের রং দুধে আল্তা। এরকম মেয়েকে হাতছাড়া করার প্রশ্নই আসে না। লজ্জা পাওয়ার ভান করে জর্জ মায়ের কাছে হাসে,
– বলো না কবে কথা বলবা মামার সাথে?
– সেটাইতো ভাবছি রে আব্বা। তোর মামার অবস্থা খুব একটা ভালো না। কিছুই মনে রাখতে পারে না। এমন সময় কি কথা বলবো আর ও কি বুঝবে তাই চিন্তা করছি।
– এতো বুঝাবুঝির কি আছে আম্মা। মামা পাগল হয়ে গেছেন প্রায়। ওনার কথা ধরার দরকারই নাই। এমনেই চলো যেয়ে বিয়ে করে নিয়ে আসি পৃথাকে।
এই সময় রিতা মুখে ছেয়ে গেল চিন্তা,
– আরে সেটা যদি করতে পারতাম তাহলে তো হতোই। কিন্তু তোর বাবা তো আরেক সমস‍্যা। কোনোভাবেই তোর আর পৃথার বিয়ের জন‍্য রাজি হচ্ছে না। ওই ফাল্তু হাসান পরিবারের আশাতেই বসে আছে সে। পৃথা নাকি তাদের ঘরের বউ তাই এই ঘরে সে তোর বউ করে আনবে না।
চোয়াল শক্ত হয়ে গেল জর্জে,
-আব্বা বেশী বেশী করে। আমার একদম সহ‍্য হয় না এসব। এতো নীতিবান তারে কে হইতে বলসে? ওই স্বাধীনের তো কোনো পাত্তাই নাই, ওর জন‍্য বইসে থাইকে কি লাভ? ওইদিকে তোমার ভাতিজিও বিবাহিত হওয়ার ট‍্যাগ গায়ের সাথে লাগায়ে ঘুরে বেড়ায়। উফফফ!
রিতা আহমেদ কিছু বললেন না আর ছেলেকে। স্বাধীনের পাত্তা কেন নাই এটা তিনি জানেন। তিনিই তো এসবের মূল। স্বাধীন যেন না ফিরে আসে পৃথার কাছে সেটার জন‍্য যা করা দরকার সব করেছেন তিনি। সফলও হয়েছেন তাতে। কিন্তু তিনি কাউকে কিছু বলেননি এই বেপারে। বিষয়টা এতোদিন লুকাতে পেরেছেন। সামনেও এভাবেই লুকানো থাক বেপারটা এটাই চান।
………………………….
লাঞ্চের পরে যখন সবাই নিজ নিজ কাজে ফেরত চলে গেল তখন পৃথা হন্তদন্ত হয়ে ঢুকলো স্বাধীনের রুমে। একটা কাজে ব‍্যস্ত ছিল স্বাধীন, পৃথাকে দেখে বাঁকা হাসি হেসে ফাইলটা বন্ধ করলো ও।
– আকাশে সূর্য উঠলো কোন দিক থেকে আজকে যে ম‍্যাডাম আমার না ডাকাতেও নিজেই চলে এসেছেন?
স্বাধীনের দুষ্টুমিতে মোটেও সাথ দিল না পৃথা। বরং মুখ চোখ শক্ত রেখে বকা দেওয়ার সুরে প্রশ্ন করলো ওকে,
– তুমি এটা কেন করলা?
-কি করলাম?
– এভাবে সবাইকে জানাইলা কেন যে তুমি ম‍্যারিড?
-তো সমস‍্যা কোথায় জানালে?
-সমস‍্যা নেই? ওরা যদি কিছু বুঝে ফেলে?
এবার স্বাধীন উঠে পৃথার সামনে এসে দাড়ালো। বুকের ওপর দুই হাত বেধে মুখটা নিচু করে আল্তো স্বরে জিজ্ঞেস করলো,
– কি বুঝে ফেলবে ওরা?
হুট করে স্বাধীনের এই কাছে আসাগুলো পৃথাকে একদম অপ্রস্তুত করে ফেলে। আমতা আমতা করে বললো ও,
– আআআমাদের?
– আমাদের কি?
স্বাধীন আল্তো করে পৃথার হাত ধরলো। পৃথা এক মুহূর্ত কিছুই করলো না তবে তার পরপরই নিজের হাত ছাড়িয়ে অভিমানি দৃষ্টি দিয়ে স্বাধীনের সামনে থেকে সরে যেতে চাইলো তবে পেছন থেকে ওকে জড়িয়ে ধরলো স্বাধীন। আচমকা এভাবে স্বাধীনের আলিঙ্গনে জড়িয়ে গিয়ে পৃথার চোখ বড় হয়ে গেল।
– কি করছো? ছাড়, ছাড় আমাকে?
স্বাধীন পৃথার নড়ানড়ির দিকে তোয়াক্কাই দিল না। ওর কাধে নিজের মুখটা রেখে ওর কানে ফিসফিসিয়ে বললো,
– তুমি জানো তোমার অবস্থা এখন কেমন পৃথা? একদম সেই প্রবাদটার মতন, “চোরের মন পুলিশ পুলিশ”।

স্বাধীন ওকে খেপাচ্ছে এটা বুঝতে পেরে পৃথা নড়া বন্ধ করে দিল হঠাৎ।
– মোটেও আমার এরকম কোনো অবস্থা না। এরকম কেন হবে?
– তা না হলে তুমি এই ব‍্যাপারটা নিয়ে এতো বিচলিত কেন বলোতো? আমি তো শুধু আমার বিয়ের কথা বলেছি, এটা তো বলিনি যে আমার যার সাথে বিয়ে হয়েছে সেটা তুমি।

হঠাৎ ব‍্যাপারটা মাথায় ঢুকলো পৃথার আর সাথে সাথেই লজ্জায়, অস্বস্তিতে ভরে গেল ওর মুখ। আসলেই তো! আগে মাথায় কেন ঢোকেনি এটা? ইশ! খামখা স্বাধীনের সামনে ওকে বোকা সাজতে হলো। ছিঃ ছিঃ পৃথা, মাথার বুদ্ধি ইদানিং মনে হয় পায়ে যেয়ে আটকিয়েছে তোর।

ততক্ষণে স্বাধীন পৃথাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিয়েছে। পৃথার চিবুক তখন গলায় যেয়ে ঠেকানো। এবার সামনে থেকে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে পৃথার মুখটা উচালো স্বাধীন,
-আর যদি কেউ বুঝেও যায় যে তুমিই আমার স্ত্রী তাহলে আমি খুবই খুশি হবো তাতে। এমনিতেও এক না একদিন তো সবাই জানবেই যে তুমিই সেই, যার জন‍্য আমার দেশে ফেরা, এখানে কাজ করা আর…।
স্বাধীনের বলা কথাগুলো যেন পৃথার কানে বেজে বেজে লুটিয়ে পরছিলো। কেমন একটা মোহে জড়িয়ে পরেছিল ও। স্বাধীনের চোখ থেকে নিজের চোখ কোনোভাবেই সরাতে পারছিল না। স্বাধীনও হঠাৎ চুপ হয়ে চেয়ে রইলো পৃথার দিকে। তারপর এক হাত উঠিয়ে আল্তো হাতে পৃথার গালটা ছুয়ে দিল।
– পৃথা, অনেক বছর অপেক্ষা করেছি তোমার জন‍্য। এখন দূরে সরে থেক না, প্লিজ।
কিছুক্ষণ একভাবেই দাড়িয়ে রইলো পৃথা। স্বাধীনের বলা কথাগুলো যেন ভেতরে বসে যাওয়ার অপেক্ষা করছে। স্বাধীনের চোখেও উত্তরের আশা। এরপরেই পৃথা আস্তে করে নিজের কোমর থেকে স্বাধীনের হাতটা সরিয়ে দিল। তারপর কোনো কিছু না বলে ওর চোখের দিকে নিজের চোখ রেখেই আস্তে আস্তে পিছিয়ে রুম থেকে বের হয়ে গেল।
বের হয়ে যাওয়ার বেলায় স্বাধীনের কেন যেন মনে হলো যে ও পৃথার ঠোটে একটা আল্তো হাসি দেখতে পেয়েছে। ও কি ভুল দেখলো, নাকি পৃথা আসলেই হেসেছে? একটা ব‍্যাপার চিন্তা করে ভালো লাগছিল স্বাধীনের আর তা হলো আজ পৃথা ওর সাথে খারাপ ব‍্যবহার করেনি তেমন একটা। বরঞ্চ ওর মাঝে ইচ্ছার চাহনী বোধহয় দেখেছে স্বাধীন। এতেই স্বাধীন খুশি। আস্তে আস্তে পৃথার মনের বরফ গলিয়ে আবার ওকে নিজের করে নিবেই। এবং মনে হচ্ছে তা শিঘ্রই সম্ভব হবে।

এই আশাই বুকের মাঝে নিয়ে স্বাধীন সামনে এগোতে থাকলো। প্রতিদিনই প্রায় কোনো না কোনো ভাবে পৃথাকে সে তার ভালোবাসা বোঝানোর চেষ্টা করতো। বিভিন্ন অঙ্গিভঙ্গি দিয়ে পৃথাকে মনে করিয়ে দিত তাদের মাঝের সেই সুন্দর অতীত। খুব কম হলেও কাজ বোধহয় হচ্ছিল এতে কারণ পৃথাও আগের থেকে একটু স্বাভাবিক আচরণ শুরু করেছে স্বাধীনের সামনে। আগের মতন ওর চোখের রাগ এখন আর স্বাধীনকে দেখতে হয় না। বরঞ্চ সেই জায়গায় স্থান পায় লজ্জার হাল্কা এক ছটাক হাসি।

একদিন অফিস প্রায় শেষের দিকে। এমন সময় পৃথার কাছে স্বাধীনের ম‍্যাসেজ আসলো। তাতে লেখা,
-আজ অফিসের পরে একটু থেক প্লিস। কথা আছে তোমার সাথে।
একবার পৃথার ইচ্ছা হচ্ছিলো না করে দিতে। কিন্তু আবার স্বাধীনের সাথে কিছুটা সময় থাকার লোভটা কেন যেন সামলাতে পারলো না ও। নিজেই ইদানিং বুঝতে পারছে যে স্বাধীনের প্রতি ওর মনের ভেতরে যে অভিমানের বরফ তা একটু একটু করে গলতে শুরু করেছে। রয়ে গেল পৃথা অফিসেই। স্বাধীনের নির্দেশ অনুযায়ী সবার বের হয়ে যাওয়ার পর নিচে নামলো।
রাস্তার মোড়ে এসে দাড়াতেই দেখলো স্বাধীনের গাড়িটা। ওর সামনে থামলে পৃথা উঠে পরলো তাতে। দেখলো স্বাধীন হাল্কা বিরক্তি নিয়ে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,
– অফিসের সামনে থেকে গাড়িতে উঠলে কি সমস‍্যা হতো বলো তো?
পৃথা স্বাধীনের বিরক্তি বুঝে স্মিত হাসলো,
– সমস‍্যা হতো। যে কেউ দেখে ফেলতে পারতো আর তারপর সেই নিউজ সার্কিউলেট হতো পুরো অফিসে।
-হলে সমস‍্যা কি? আজ বা কাল তো সবাইকে জানতেই হবে আমাদের ব‍্যাপারে। The sooner the better.
এবার কপট রাগ দেখালো পৃথা,
– উফ! তোমার এই এক টেপ রেকর্ডার কি বন্ধ হওয়ার নাই? যখন দেখ তখনই দুনিয়াকে বলে বেড়ানোর ইচ্ছা জাগে তোমার।
পৃথার কথা বলার ভঙ্গিতে হো হো করে হাসতে লাগলো স্বাধীন, পৃথাও হেসে দিল ওর সাথে তবে এতো জোরে না। মেইন রোডে গাড়ি পার্ক করে রাখা বেশিক্ষণ ঠিক না দেখে স্বাধীন গাড়ি স্টার্ট দিল।
বনানী থেকে গুলশানের পথে যাওয়ার সময় পৃথা জিজ্ঞেস করলো স্বাধীনকে,
– আমরা যাচ্ছি কোথায়?
সাবলীল উত্তর আসলো পাশের সিট থেকে,
– আমার বাসায়।
চমকে ফিরে তাকালো পৃথা,
– মানে? তোমার বাসায় কেন?
স্বাধীন অবাক হওয়ার ভঙ্গি করলো,
– কেন? কি সমস‍্যা? আমার…. ওহ্ সরি, ভুল হয়ে গেছে। আমার বলা উচিত ছিল আমরা ‘আমাদের’ বাসায় যাচ্ছি।
পৃথার গলার তেজ বেড়ে গেল আরও।
– ফাজলামো করো না। কথা নেই বার্তা নেই, আমি কেন তোমার বাসায় যাব এই সময়?
-মানে কি? তুমি আমার বিবাহিতা স্ত্রী। তোমার নিজের বাসায় যেতে আবার কথা বার্তা লাগে নাকি? চলো।
পৃথা আর কিছুই বলতে পারলো না। নার্ভাসনেসে মুখ একদম বন্ধ হয়ে গেছে। মনের ভেতরে যে চিন্তার ঝড় চলছে সেটা তো আলাদা। কি ইচ্ছা স্বাধীনের মাঝে চলছে কে যানে? একা দুজন এই সন্ধ্যায় খালি বাসার ভেতর…..ইইইই। পৃথা কেঁপে উঠলো।
স্বাধীন পাশ দিয়ে আড়চোখে শুধু দেখছিল পৃথার প্রতিক্রিয়া। মেয়েটার চেহারায় স্পষ্ট আতঙ্কের ছাপ দেখে মনে মনে বেশ মজা লাগছিল ওর।
নিজের এপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ড্রাইভওয়েতে গাড়ি ঢোকালো স্বাধীন। পৃথার তখন প্রমাদ গোনার অবস্থা। কি করবে, কি বলবে স্বাধীনকে কিছুই মাথায় আনতে পারছিল না ও। স্বাধীন যখন বেসমেন্টের গ‍্যারেজের দিকে গাড়ি চালাতে লাগলো তখন অজান্তেই পৃথার চোখ ভয়ে বন্ধ হয়ে গেল। মনে মনে একবার চিন্তাও এসেছিল স্বাধীন গাড়ি থামালেই ও নেমে দৌড় লাগাবে। কিন্তু এটা আবার বেশী বেশী হয়ে যায়। দ‍ৌড় দেওয়াটা কেমন দেখায় না? ও কি বাচ্চা নাকি?
হঠাৎ পৃথার খেয়াল হলো গাড়ির স্পিড থামছে না বরং মনে হচ্ছে বেড়ে গেছে। গ‍্যারেজে ঢুকলে তো গাড়ি এতক্ষণে স্লো হয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে….?
চোখ খুললো পৃথা। চমকে গেল দেখে যে তারা এখন মেইন রোডে। স্বাধীনের দিকে ফিরে তাকাতেই দেখলো পুরো মুখ জুড়ে ছেলেটার দুষ্টু হাসি ঝুলছে। একটু পর হো হো করে হেসে ফেললো স্বাধীন। বুঝতে বাকি রইলো না পৃথার যে স্বাধীন এতোক্ষণ ওর সাথে মজা করছিল। বাসায় নিয়ে যাওয়ার কোনো প্ল‍্যানই ছিল না ওর। আবার বোকা বনে গেল পৃথা, এইটা ভেবে নিজের ওপর ভিষণ রাগ উঠলো ওর। তবে চেহারায় ফুটে উঠলো স্পষ্ট লজ্জা। না জানি কি সব চিন্তা করছিল ও স্বাধীনের সাথে। ইশশশশ! এসব চিন্তা ইদানিং পৃথার মনে কেন যেন চলে আসছে, বিশেষ করে স্বাধীন সামনে থাকলেই আসে। নিজের চিন্তাকে লাগাম দিতে পারে না।
হঠাৎ স্বাধীনের হাসিতে নিজের ভেতর থেকে বের হয়ে আসলো পৃথা।
– অবশেষে ম‍্যাডাম চোখ খুলেছেন? যেই ভয়টা পেয়েছো না পৃথা তুমি, হাহাহাহা!
-তুমি এরকম করলা কেন? বাসায় নিয়ে যাওয়ার প্ল‍্যান ছিলই না যখন তো বললা কেন?
– ওওওও। তোমার যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছে আমার বাসায়? চলো তাহলে যাই, আমি তো অনেক খুশি হবো। দাড়াও সামনে থেকে গাড়ি ঘুরিয়ে নিচ্ছি।
তাড়াতাড়ি নড়েচড়ে বসলো পৃথা,
– মোটেও আমার যাওয়ার ইচ্ছে নেই। খবরদার গাড়ি ঘুরাবা না।
হো হো করে হাসতেই লাগলো স্বাধীন। পৃথাকে পাশে পেয়ে আজ যেন ওর খুশি সাত আসমান ছুয়ে যাচ্ছে। মনের ভেতরে এতটা শান্তি হচ্ছে যা ও বলে বোঝাতে পারবে না।
গাড়ি যখন এসে একটা রেস্টুরেন্টের সামনে থামলো তখন সন্ধ‍্যা সাড়ে ছয়টা। ভেতরে বসে নিজেদের পছন্দ সই খাবার অর্ডার করলো দুজন। তারপর বসলো গল্প করতে।
পৃথা এখন স্বাধীনের সাথে আগের থেকে অনেকটাই স্বাভাবিক। তবে এখনো, স্বাধীনকেই ওর কাছে এগিয়ে আসতে হয় প্রথমে। এই মুহূর্তেও তাই হলো। স্বাধীনই আগ বাড়িয়ে টেবিলের ওপর রাখা পৃথার হাতটা নিজের হাতে নিয়ে বললো,
– পৃথা, সরি তোমার সাথে এরকম মজা করার জন‍্য। তুমি মাইন্ড করোনি তো?
উত্তরে হাল্কা একটা মিষ্টি হাসি হাসলো পৃথা,
– না, মাইন্ড করি নি। তবে এরকম মজা করলা কেন তুমি বলো তো?
– তোমার রিয়‍্যাকশন দেখার জন‍্য।
-মানে?
হাসলো স্বাধীন। পৃথার হাতটা আরও জোড়ালো করে ধরলো,
– সত‍্যি বলতে আমাদের বাসাটা তোমাকে দেখানোর প্রবল ইচ্ছা থাকলেও আমি এখন তোমাকে ওখানে নিতে চাই না।
পৃথা চুপচাপ শুনছিল স্বাধীনের কথা। আস্তে আস্তে স্বাধীনের আওয়াজের গম্ভীরতা টের পাচ্ছিলো ও। স্বাধীন একটা দম নিয়ে আবার কথা শুরু করলো।
– পৃথা, আমি জানি গত সাতটা বছর তুমি কত কষ্ট করেছো। আমার অপেক্ষা তোমাকে নিশ্চয়ই ভীষণ রুপে আহত করেছে। সেই কষ্টের প্রতিটা মুহূর্তের জন‍্য যদি আমি তোমার কাছে জীবনভর ক্ষমা চাই তাহলেও তা কম হবে। তারপরেও বলতে চাই পৃথা যে আমি সরি।
পৃথার চোখে অজান্তেই পানি টলটল করতে লাগলো। স্বাধীনকে কাঁপা গলায় জিজ্ঞেস করলো ও,
-তুমি কেন এতটা বছর আসনি? আমাকে কি একদম ভুলে গিয়েছিলে?
স্বাধীন বুঝলো পৃথা যে কোনো সময় অভিমানে কেঁদে দিতে পারে। ভীষণ খারাপ লাগলো ওর। সাথে অপরাধবোধ ঘিরে ধরলো। তাড়াতাড়ি নিজের আসন থেকে উঠে পৃথার পাশে এসে বসে ওকে একপাশ দিয়ে নিজের মাঝে আগলে নিল স্বাধীন।
– আমার পৃথাকে আমি কখনোই ভুলে যাইনি। এটা কখনোই সম্ভব না।
-তাহলে কেন আসনি এতোদিন?
স্বাধীন দেখলো পৃথা ভেঙে পরেছে কান্নায়। আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে নিজের মাঝে নিয়ে আসলো ও।
– পৃথা কিছু জোরালো কারণ ছিল যা আমাদেরকে একে অপরের থেকে দূরে রেখেছিল এতোদিন। এরজন‍্য চাইলেও তোমাকে নিজের করে নিয়ে যেতে পারিনি অামি। বিশ্বাস করো, এমন কোনো দিন যায়নি তোমার কথা ভাবিনি আমি। তবে আমি বাধ‍্য ছিলাম পৃথা।
পৃথা এতোক্ষণ স্বাধীনের বুক আর কাধের মাঝখানে নিজের মাথা দিয়ে কাঁদছিল। স্বাধীনের কথায় মাথা উঠিয়ে জিজ্ঞেস করলো ও,
– কি কারণ ছিল এমন? কিসের বাধ‍্যতা?
স্বাধীন পৃথার চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
– জানাবো। তোমাকে সব জানাবো আমি। তবে এখন না। আরও কিছু জিনিস ক্লিয়ার করতে হবে তারপর বলবো। আমার ওপর ট্রাস্ট রাখো পৃথা।
পৃথা কান্না থামিয়ে দিল। স্বাধীনের চোখের গম্ভীরতা দেখে বুঝলো ও সত‍্য বলছে। আল্তো একটা হাসি দিয়ে পরিবেশটা স্বাভাবিক করে ফেললো ও। স্বাধীনও হেসে দিল ওর সাথে। তারপর উঠে যেয়ে নিজের সিটে বসে পরলো।
রেস্টুরেন্ট থেকে বের হতে আটটার মতন বেজে গেল ওদের। স্বাধীন কোনোভাবেই আজ পৃথাকে একা বাসায় যেতে দিতে রাজি হলো না। নিজেই ড্রাইভ করে ওকে বাসার সামনে নামিয়ে দিল।
পৃথা চলে যেতে যাবে এসময় পেছন থেকে ওকে ডাকলো স্বাধীন,
-পৃথা শোন।
– হমমম?
– আমার একটা কথা রাখতে পারবা?
– কি?
– আমি যে দেশে ফিরে এসেছি আর তোমার সাথে যোগাযোগ করছি, এ ব‍্যাপারে তোমার পরিবারের কাউকে এখন বলো না।
অবাক হলো পৃথা,
– কেন?
– আছে কারণ। পরে বলবো তোমাকে। কিন্তু মনে থাকে যেন। তোমার বাবা, মা আর ফুফু এসব যেন না জানে। ঠিকাছে?
মাথা নেড়ে ওকে সমর্থন জানালো পৃথা। তারপর গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতর ঢুকে গেল।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here