#অদৃষ্টে_তুমি_আমি
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_১১
রিসেপশন থেকে চাবি নিয়ে সোজা লিফ্টের দিকে পা বাড়ালো স্বাধীন। পৃথা চাঁপা গলায় ওকে পেছন থেকে ডাকলো,
– এই দাড়াও। কোথায় যাচ্ছো?
পৃথার গলায় রাগ স্পষ্ট বুঝতে পারলো স্বাধীন। দুই পা পিছিয়ে পৃথার হাত ধরে ফেললো ও,
-যা বলার রুমে যেয়ে বলো। এখানে শুনবো না।
– কিন্তু….
আর কথা বাড়াতে পারলো না পৃথা। স্বাধীন ওকে ধরে হাটা শুরু করে দিয়েছে। অসহায়ের মতন পৃথাকেও তাই ওর পিছ নিতে হলো।
লিফ্টে ঢুকে বেল বয় চাপ দিল টপ ফ্লোরে। ওপরে এসে হলওয়ের এক প্রান্তে এগোতে লাগলো ওরা। পৃথা লক্ষ্য করলো হলওয়েটা বেশ বিলাশবহুল ভাবেই সাজানো। একটা দরজার সামনে এসে দাড়ালো ওরা। বেল বয় সেটা খুলে দিতেই সাজ সজ্জা বিশিষ্ট একটা রুমে প্রবেশ করলো দুজন। পৃথা রুমের ডেকোরেশন দেখতে দেখতেই বেল বয় ওদের লাগেজ গুছিয়ে দিয়ে চলে গেল। যখন স্বাধীন দরজা বন্ধ করলো তখন চমকে ফিরে তাকালো পৃথা। সাথেসাথেই রাগটা ফিরে আসলো ওর। কঠিন প্রতিবাদ জানালো,
– এসবের কি মানে হলো?
– কিসবের?
-দেখো, না বোঝার ভান করবা না, খবরদার। তুমি খুব ভালো ভাবেই জানো আমি তোমার সাথে….
মুহূর্তেই কাছে এসে দাড়ালো স্বাধীন। সেই দুষ্টু হাসি দিয়েই জিজ্ঞেস করলো,
– তুমি আমার সাথে……?
লজ্জায় আর রাগে কুকড়ে গেল পৃথা,
-আমি… তোমার সাথে… একসাথে মানে…এক রুমে থাকতে পারবো না।
– কেন? স্বামী স্ত্রী কি আলাদা আলাদা রুমে থাকে নাকি?
– দেখো…. আমি.. উফ প্লিস বোঝার চেষ্টা করো। আমি পারবো না। দেখি দাড়াও,রিসেপশনে আমি কথা বলছি। দেখি আরেকটা রুম পাওয়া যায় কি না।
এই বলে পৃথা স্বাধীনের পাশ কেটে টেবিলের কাছে যেতে গেল তখনি ঘুরে আল্তো করে জড়িয়ে ধরলো স্বাধীন।
-পৃথা, শোন আমার কথা। আগেই ফোন দিও না।
– কিন্তু এভাবে আমি…
স্বাধীন পৃথাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে ওর ঠোটে আঙ্গুল রেখে নরম করে হেসে দিল,
– চুপ। তোমার কি মনে হয়? আমি তোমাকে বুঝি না? আমি জানি তুমি আমাকে এখনো সম্পূর্ণ রুপে আপন করে নিতে পারোনি। তাই আমার সাথে তুমি থাকবে না। এই জন্যই তো আমি স্যুইট নিয়েছি। এদিকে আসো।
পৃথাকে নিয়ে সামনের দিকে এগোলো স্বাধীন। এতোক্ষণে পৃথা দেখলো যে রুমের সাথে আরেকটা দরজা আছে। এতক্ষণ সেটা দেখেইনি ও। সেই দরজাটা খুলে ভেতরে ঢুকতেই আরেকটা রুমে এসে পরলো দুজন।
– এটা তোমার রুম। আমি সামনেরটাতে শুবো। এবার ঠিক আছে তো?
এতোক্ষণে হাসি ফুটলো পৃথার ঠোটে। সেই সাথে চোখে স্বাধীনের প্রতি কৃতজ্ঞতাও, ওকে বোঝার জন্য। স্বাধীন বুঝলো পৃথার দৃষ্টি।
-শোনো এখন তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও। তারপর আমরা লাঞ্চ করতে যাব। এরপর বের হবো শহরটা ঘুরতে। সাথে শপিং টাও করে ফেলবো।
-আচ্ছা।
ঠিক দুইটা বাজার পাঁচ মিনিট আগে নিজের রুম থেকে বের হলো পৃথা। পরনে ঢোলা একটা লঙ ফতুয়া আর জিন্স। বেশ সুন্দর লাগছিল ওকে স্বাধীনের কাছে।
-তোমার বয়স দেখি পাঁচ বছর কমিয়ে দিলে।
পৃথা চোখ সরু করে তাকালো ওর দিকে,
– মানে কি? তুমি কি এটা বলতে চাচ্ছো যে অন্য সময় আমাকে বয়ষ্ক লাগে?
হাল ছেড়ে দেওয়ার ভাব করলো স্বাধীন,
– ভাই! তোমাদের মেয়ে মানুষকে আল্লাহ্ কি দিয়ে বানিয়েছেন কে জানে! কোনো কথা সোজা ভাবে নিতে পারো না। কমপ্লিমেন্ট দিলাম, সেটাতেও সমস্যা।
– বুঝছি বুঝছি। এবার চলো। খুব ক্ষিদা পেয়েছে।
হোটেলের রেস্টুরেন্টেই লাঞ্চ সেরে নিল দুজন। তারপর গাড়ি নিয়ে বের হলো ঘুরতে। যাওয়ার আগে স্বাধীন হোটেল থেকেই শহরের দর্শনীয় স্থান আর শপিংমল গুলোর ব্যাপারে একটা ধারণা নিয়ে নিল।
দুপুরের সময়, বাইরে রোদ যেহেতু প্রচুর তাই প্রথমে মলের ভেতর থেকে শপিংটাই সেরে ফেলা শ্রেয় মনে হলো ওদের। মলে এসে প্রথমেই স্বাধীন পৃথাকে নিয়ে গেল শাড়ির দোকানে। বিয়ের অনুষ্ঠানে পরার জন্য শাড়ি ও নিজেই খুজতে লাগলো। ওর আগ্রহ দেখে দোকানদাররা যখন ওদের ক্ষেপাচ্ছিল তখন সামনে লজ্জা আর বিব্রতবোধ করলেও মনে মনে বেশ ভালো লাগছিল পৃথার। শুধু ভালোই না, বলা যায় এক প্রকার গৌরববোধ হচ্ছিলো ওর। অধিকারের গৌরব। আজ প্রথম ওর জন্য কেউ আগ বারিয়ে, ওর প্রতি নিজের অধিকার খাটাচ্ছে। এই দিনটাও স্বাধীনের সাথে ও পাবে এটার আশা পৃথা কখনোই করেনি। ও তো মনে করেছিল সারাটা জীবন একাই ওকে সংগ্রাম করতে হবে। সেইখানে আজ…
– এই পৃথা, কি চিন্তা করো? এদিকে দেখ না!
ঘোর কেটে গেল পৃথার। হাসি দিয়ে তাকালো স্বাধীনের দিকে। স্বাধীন বলেই চলেছে,
– দেখ, এই কয়টা পছন্দ হয়েছে আমার। তোমার ভালো লাগলে প্যাকেট করতে বলে দেই।
চোখ কপালে উঠলো পৃথার।
– এত্তোগুলা কেন? আমার তো শুধু দুইটা শাড়ি লাগবে। একটা মেহেন্দির আর একটা বিয়ের জন্য।
-কেন, হলুদের জন্য লাগবে না?
– আঁচল ভাবী আমাকে সকালেই বলে দিয়েছেন যে হলুদে সবাই নাকি এক ধরনের শাড়ি পরবে। তিনি আমার জন্য একটা রেখে দিবেন। আমাকে শুধু ম্যাচিং ব্লাউজ পেটিকোট কিনে নিতে বলেছেন।
– ওওও। তাহলে তো হলোই। তবে আমার এই ছয়টা শাড়িই পছন্দ হয়েছে। নিয়ে নাও না, প্লিস।
পৃথা থামাতে যাচ্ছিলো স্বাধীনকে, মাঝখান থেকে দোকানদার হাসতে হাসতে বললো,
-ম্যাডাম, স্যার এতো সখ করে কিনে দিতে চাচ্ছে আপনাকে, না কইরেন না। নিয়ে নেন।
পৃথা দোকানদারকে কিছু না বলে স্বাধীনকে ইশারায় না করলো। কিন্তু স্বাধীন ততক্ষণে কার্ড দিয়ে দিয়েছে বিলের জন্য। শাড়িগুলো প্যাকেটেও হয়ে গেছে। অসহায় হয়ে শুধু দেখলো পৃথা, কিছু করতে পারলো না।
শাড়িগুলো থেকে দুটো শাড়ি চয়েস করে পৃথা বললো এগুলোর ব্লাউস পিস কেটে দিতে। সেই দোকানের সাহায্যেই দরজির ঠিকানাও পেয়ে গেল ওরা। বাকি শাড়িগুলো প্যাক করতে করতে দোকানদার জিজ্ঞেস করলো ওদের,
-কিছু মনে করবেন না, আপনাদের দেখে মনে হচ্ছে সদ্য বিয়ে হয়েছে আপনাদের। আমি কি সঠিক বললাম?
স্বাধীন সাথে সাথেই উত্তর দিয়ে বসলো,
– জ্বী না ভাই। বিয়ে করেছি আরও এক যুগ আগে। তোরো বছর পার হচ্ছে আমাদের।
এটা শুনে দোকানদার তো বটেই আশ পাশের সবাইও কেমন যেন থমকে গেল। ওদের বার বার খুটিয়ে দেখতে লাগলো চোখ দিয়ে কথাটা বিশ্বাস করার আশায়। ততক্ষণে সব শাড়ি প্যাক হয়ে ওদের হাতে চলে এসেছে বলে পৃথা জোর করে স্বাধীন কে দোকান থেকে বের করে আনলো। স্বাধীন তো হাসতে হাসতেই শেষ,
– দেখলা ওদের চেহারাটা কেমন হয়েছিল আমার কথা শুনে?
-তো হবে না? তুমি বলেছোই এমন কথা। আমাদের দেখে মনে হয় আমাদের তোরো বছর পার হয়েছে বিয়ের?
-যা সত্যি তাই তো বললাম।
পৃথা হাল ছেড়ে দিল। স্বাধীন কে নিয়ে প্রথমে দর্জির কাছে যেয়ে ব্লাউজ বানাতে দিয়ে বলে আসলো আর্জেন্ট করে দিতে। দর্জি কালকে করে দিতে পারবে জানিয়ে দিল।
এরপর স্বাধীনের মেহেদিতে পড়ার জন্য পাঞ্জাবি কিনতে ছেলেদের কাপড়ের শো রুমে ঢুকলো ওরা। নিজের পছন্দেই পৃথা কিনে দিল পাঞ্জাবি স্বাধীনকে। এতে ভীষণ খুশি হলো স্বাধীন। পৃথার এই স্বাভাবিক আচরণটাই ও দেখতে চাচ্ছিলো এতোদিন ধরে। আজ সেটা দেখে মনে বেশ শান্তি লাগলো ওর। পৃথা স্বাধীনের জন্য বিয়েতে পরারও কিছু দেখতে চাচ্ছিলো তবে তাতে বাধা দিল স্বাধীন। বললো, ও স্যুট নিয়ে এসেছে, সেটাই পরবে।
যেহেতু পৃথা কোনো ধরনেরই প্রিপারেশ ছাড়া এসেছে তাই শাড়ির সাথে আনুষঙ্গিক যা যা লাগে সবই কিনতে হলো ওকে। প্রায় সব জিনিশ পছন্দ করাতেই স্বাধীন ওকে সাহায্য করলো। শপিং শেষে গাড়িতে উঠে শাড়ির এতোগুলো প্যাকেট দেখে আবার দমে গেল পৃথা,
– আমার কিন্তু ব্যাপারটা একদম ভালো লাগেনি। তুমি এতোগুলো শাড়ি কিনতে গেলা কেন? Its a waste.
-Nothing is a waste.
-এতোগুলো শাড়ি বাসায় কিভাবে নিয়ে যাব সেটার চিন্তা করেছ? কেউ জিজ্ঞেস করলে বলবো কি? তোমার কথা বলতে তো নিষেধ করে দিয়েছ, তাহলে?
– আহহা! তোমাকে কে বলেছে বাসায় সব গুলো নিয়ে যেতে? এক, দুইটা নিয়ে যাবা, বাকি গুলো আমার বাসায় রেখে দিব। তুমি পরে নিয়ে নিও অথবা….. আমার বাসায় এসেও পরতে পারো।
শেষের কথাটা স্বাধীন পুরোই দুষ্টুমির সুরে বললো পৃথাকে যার অর্থ বুঝতে পৃথার কষ্ট হলো না। লজ্জা মাখা রাগ দেখিয়ে অন্যদিকে ফিরে তাকালো পৃথা।
মল থেকে বের হতে হতে বিকেল প্রায় শেষের পথে। যতগুলো জায়গায় ওরা ঘুরবে চিন্তা করেছিল তার সবকটায় যেতে পারলো না। তবে সিলেটের ঐতিহাসিক কিং ব্রীজটায় যেতে ভুললো না ওরা। ব্রীজের পাশে দাড়িয়ে গধূলীর মায়াবী আলোর খেলা দেখলো দুজন মন ভরে। তারপর রাত হলে একটা রেস্টুরেন্টে খেয়ে হোটেলে ফিরে এলো।
রাতে স্বাধীনের রুমে দুজন বসলো পরের দিনের অফিসের কাজ নিয়ে। পৃথা এর আগেও বিষয়টা খেয়াল করেছে যে এমনে সময় স্বাধীন যতই মজা অথবা ফাজলামো করুক না কেন, কাজের সময় সে বেশ সিরিয়াস থাকে। কাজ কে প্রাধান্য দেয়। স্বাধীনের এই ভারসম্য রক্ষা করাটা পৃথার খুব ভালো লেগেছে।
কাজ শেষ হতে হতে প্রায় এগারোটা বেজে গেল। ফাইল্স গুলো যখন পৃথা ঠিক করে রাখছিল তখন স্বাধীন বারান্দায় দাড়ানো। পৃথাকে ডাকলো ও নিজের কাছে।
– পৃথা, রাতের সিলেট টা দেখে যাও, কি সুন্দর।
পৃথা এসে দাড়ালো স্বাধীনের পাশে। আসলেই ভালো লাগছে দৃশ্যটা। টপ ফ্লোরে থাকায় শহরের অনেকটুকুই এখান থেকে দেখা যাচ্ছে। আর রাতের আন্ধকার ভেদ করে বিল্ডিং এবং রাস্তা থেকে আসা নানান ধরনের আলোগুলোকে দেখে মনে হচ্ছিলো যেন এখানে ডিস্কো পার্টি চলছে। পাশ দিয়ে স্বাধীনের আওয়াজ পেল পৃথা,
– এ্যামেরিকাতে আমি যেখানে থাকি সেটা সাবার্ব। ওখানে এরকম দৃশ্য দেখা যায় না। তবে ডাউনটাউনে গেলে অনেক সময়ে এরকম পরিবেশ চোখে পরে।
পৃথা তাকালো স্বাধীনের দিকে,
– তোমার এমেরিকার গল্প বলো। কেমন ছিলে ওখানে?
স্মিত হাসলো স্বাধীন,
– সে তো বিরাট ইতিহাস। এক রাতে শেষ হবে না। তবে সংক্ষেপে বলতে গেলে, খুব ভালো না থাকলেও খারাপ ছিলাম না। পড়াশোনার দিক থেকে বেশ আগাতে পেরেছি। অনেক জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি যেটা দেশে থাকলে কতোটুকু সম্ভব হতো সেটা জানি না। জীবনকে নিয়ে অনেক কিছু উপলব্ধি করতে পেরেছি।
পৃথা মুগ্ধ হয়ে শুনছিল সব। স্বাধীনের কথা শেষ হলে জিজ্ঞেস করলো,
– বাবা, মা কেমন আছেন?
পৃথার মুখে হুট করে এটা শুনে ওর দিকে তাকিয়ে হেসে দিল স্বাধীন,
– বাবা, মা?
লজ্জা পেল পৃথা,
– এরকম করে বলছো কেন? আমি তো আগের থেকেই তাদের বাবা, মা ডাকি। ভুলে গেছ নাকি?
– না ভুলিনি। তবে অনেক বছর পর শুনে খুব ভালো লাগলো। মমমম…. এমনিতে দুজন ভালোই আছেন, তবে বাবার মাঝে হার্টে ব্লক ধরা পরেছিল। কিন্তু সৌভাগ্য যে ওপেন হার্ট করা লাগেনি। ঔষধের ওপরেই চলছেন আর তার সাথে নিয়ম মানতে হচ্ছে অনেক।
– ওওও। আর মায়ের খবর কি? ওনার সাইনাসের সমস্যা কি এখনো আছে? ছোট বেলায় দেখতাম এই ব্যাথা উঠলে উনি খুব কষ্ট পেতেন।
– হমমম। ওনার সাইনাসের পেইন টা আছে এখনো। বিশেষ করে কোনো কিছু নিয়ে টেনশন করলে ওটা বেড়ে যায়। ঔষধ খাচ্ছেন অবশ্য।
– আচ্ছা, সায়রা কেমন আছে?
– তোমার ননদ ভালোই আছে, দিন দিন বড় হচ্ছে আর দুষ্টামি বাড়ছে ওর ব্যাস, হাহাহা। ও এবার কলেজে ভর্তি হলো। এখনো বাবা মায়ের সাথেই আছে তবে সামনে মনে হয় মুভ করবে।
-হমমম।
এবার পৃথার দিকে তাকালো স্বাধীন,
-বাবার অসুস্থতার ব্যাপারে জানতে পেরেছি আগেই। এখন কেমন আছেন তিনি?
– তুমি কার কাছ থেকে জেনেছো?
– ছোট চাচার কাছ থেকে।
– ওওও। আব্বা আছেন কোনোরকম। আলজাইমার্স হওয়াতে কোনো কিছুই মনে রাখতে পারেন না। দিন দিন রোগটা খারাপের দিকেই মোর নিচ্ছে। আর এই কারণে শারীরিক ভাবেও বেশ নরম হয়ে গেছেন তিনি।
– ডাক্তার কি বলছে?
– আর কি বলবে? ঔষুধ দিয়েছে। সেটাই চালাচ্ছি।
-দাড়াও, বাবাকে এমেরিকাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবো। ওখানে ডাক্তার দেখাবো আমি।
পৃথা চুপচাপ স্বাধীনের কথাটা শুনলো। নীরবে হাসি ছেয়ে গেল ওর মুখ জুড়ে। একটু পরে স্বাধীন জিজ্ঞেস করলো,
– পৃথা একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
– কি?
– চিন্তা করে উত্তর দিও।
-আচ্ছা, বলো।
– আমাদের বিয়ে নিয়ে তোমাদের পরিবারের কারো কি কনো দ্বিমত ছিল?
– মানে?
– মানে এমন কেউ কি আছে যে আমাদের বিয়েতে রাজি ছিলেন না?
– মমমম….না। যতদূর জানি, এমন কেউ নেই। আমাদের দাদারা নাকি দুই পরিবারের সব সদস্যের সম্মতি নিয়েই আমাদের বিয়ে ঠিক করেছিলেন। কেন? এই প্রশ্ন করছো কেন?
-হমমম? না এমনিতেই। আচ্ছা তোমার বড় ফুফু কোথায় থাকেন এখন?
– উত্তরাতেই।
-ওওও।
পৃথা কিছুক্ষণ চুপ থেকে দেখার চেষ্টার করলো,স্বাধীন আর কিছু এ নিয়ে বলে কি না। তবে ও কিছুই বললো না। তার মানে এখন পৃথাকে কোনো কিছু বলতে চাচ্ছেনা ও। তাই শেষে পৃথাও হাল ছেড়ে বলে উঠলো,
– আচ্ছা, অনেক রাত হয়ে গেছে। কাল অনেক কাজ। এখন রেস্ট নাও।
পৃথা এটা বলে চলে যেতে চাইলেও স্বাধীন দুষ্টুমি ভরা হাসি দিয়ে পৃথাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরলো,
– আরো কিছুক্ষণ থাকো না। প্লিস। গল্প তো মাত্র শুরু করলাম আমরা।…….আরও কত আলাপ বাকি আছে আমাদের।
স্বাধীন শেষ কথাটা বলার সময় স্বর পাল্টে ফেললো। কেমন যেন মায়াবী সুরে বললো কথাটা। সেই কথা বলার সময় ওর শ্বাস পৃথার খোলা কাধে পরছিল। প্রায় মধ্যরাতের এই সময়ে এরকম পরিস্থিতি ভেতর থেকে কাঁপিয়ে দিল পৃথাকে। অজান্তেই চোখ বন্ধ হয়ে আসতে লাগলো ওর, তবে যুদ্ধ করে সেটা খোলা রাখার চেষ্টা করলো পৃথা। এরকম অনুভূতির হাতে এখনই দারস্ত হতে চায় না ও। হেসে, ওর কোমরে জড়ানো স্বাধীনের হাতটা টেনে খুলে ফেললো ও। তারপর ফিরে তাকালো নিজের বরের দিকে,
– এক রাতে সব কথা শেষ হয়ে গেলে, পরের জন্য আর কিছু বাকি থাকবে না। এখন চুপচাপ যাও, ঘুমিয়ে পরো। সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হবে। Good Night.
এই বলে পৃথা আর এক মুহূর্তও দাড়ালো না। নিজের ভেতরে লজ্জায় শেষ ও, তারপরও যে সেটাকে স্বাধীনের সামনে আসতে দেয়নি, এটাই অনেক। যত জল্দি সম্ভব, স্বাধীনের রুম থেকে বের হয়ে গেল পৃথা।
চলবে।