#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মেহবিন হুট করেই সবার দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘আমি এই মহিলাটিকে গোসল করাতে চাই।”
সঙ্গে সঙ্গে সবাই মেহবিনের দিকে তাকালো। তখন ঐ চারজন মহিলাদের একজন বলল,,
“এই কাজডা আমাগো কাজ তুমি করবা কেন?”
“দেখুন এমন কোন কথা নেই আপনাদের কাজ করতে দেওয়া হয়েছে দেখে আপনাদেরকেই করতে হবে অন্যরা কেউ করতে পারবে না। সবথেকে বড় কথা আমাকে একটা কথা বলুন তো, আপনারা গোসল দিয়ে টাকা নেন এটা কি আপনাদের এলাকার সবাই এ সিদ্ধান্ত গ্ৰহন করেছে নাকি শুধু চেয়ারম্যান সাহেব।
তখন একজন মাতব্বর টাইপ বয়স্ক লোক এগিয়ে এসে বলল,,
“কোন মৃত লোককে গোসল করানো বা কবর দেওয়া এটা এলাকাবাসীর কাজ বা কর্তব্য। তাই প্রফেশন হিসেবে কিংবা মৃত ব্যক্তির ওয়ারিসদের থেকে টাকা নেওয়া এটার টাকা নেওয়া জায়েজ নেই। তবে যদি পুরো এলাকাবাসী একটি উদ্যোগ নেয় সবার পক্ষ থেকে টাকা দেবেন তাহলে টাকা নিয়ে তাদের গোসল বা কবর দেওয়ার এটা জায়েজ আছে। (শায়খ আহমাদুল্লাহ এর একটা ওয়াজের মাধ্যমে জেনেছি)
চেয়ারম্যান সাহেব কথা বললে আমরা সবাই কথা বলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি এদের কে আমরা সবাই মিলে টাকা উঠিয়ে তারপর টাকা দেব। মহিলাদের কম টাকা দেওয়া হয় কারন তারা শুধু গোসল করান।”
মেহবিন সব শুনে বলল,,
“ওহ আচ্ছা ওনারা যাই করুক না কেন আমার কোন আগ্রহ নেই। আমি ওনাকে গোসল করানোর ব্যাপারে সাহায্য করতে চাই।”
এ কথা শুনে ঐ চারজন মহিলা বাঁধ সাধলো কিন্তু পরে মেহবিনের যুক্তিসম্মত কিছু কথা শুনে এলাকার সবাই সম্মতি দিল। মেহবিন ঐ চারজন মহিলাকেও কি যেন বলল যার জন্য তারা আর মানা করেনি। মেহবিন বাড়ি এসে তাড়াতাড়ি জামাকাপড় বদলে ঐ বাড়িতে চলে গেল। তারপর মহিলাটিকে গোসল করানো শুরু হলো। মেহবিন দেখলো মহিলাটির কিডনির ওখানে কাটা এমন কি হার্টের ওখানেও গলার কাছে কাটা চোখ দুটোও নেই। ও বুঝতে পারলো সবকিছু নিয়ে নেওয়া হয়েছে। মেহবিন সব দেখেও কিছু বললো না শুধু শান্ত চোখে তাদের দুজনের দিকে তাকালো দুজন ভেতরে আর দুজন বাইরে মশারি ধরে রেখেছে। মেহবিনের শান্ত দৃষ্টি দেখে মহিলা দুজন অবাক হলো। মেহবিন একটা কাজের বাইরে টু শব্দ করেনি। গোসল করানো শেষ হলে মৃত ব্যক্তিটাকে খাটে শোয়ানো হলো। মেহবিন সেই চারজন মহিলাকে তার সাথে আসতে বলল মহিলা চারজন মেহবিন এর শান্ত রুপ দেখে এমনিতেই ভয়ে আছে। এমনিতেও তারা এই গ্ৰামেই থাকে মেহবিনের সম্পর্কে হালকা পাতলা ধারনা আছে তাই তারা মানা না করে মেহবিনের সাথে চলল। মেহবিন ওদের নিয়ে সোজা ওর বাড়িতে ঢুকলো। দুয়ারে দার করিয়ে শান্ত স্বরে বলল,,
“এসব কবে থেকে করেন আপনারা?”
মেহবিনের কথায় চারজনই একটা ঢোক গিললো। তখন মেহবিন আবার বলল,,
“আপনারা জানেন আমি সবার সামনে কেন বলিনি যে, ওনার সবকিছু নিয়ে নেওয়া হয়েছে। শুধু এই কারনে যদি কিছু বলি তাহলে হাঙ্গামা হয়ে যাবে আর মৃত ব্যক্তির জানাযা আর কবর দেওয়া বন্ধ হয়ে যাবে তার লাশটাকে টানা হ্যাছরা হবে। কারন তার মৃত্যুটা ব্রেন টিউমারের জন্য হয়েছে। মৃত ব্যাক্তিকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দাফন করা ভালো । তার দেহখানি যেন তাড়াতাড়ি মাটি পায় এই জন্য কিছু বলিনি। এখন ভনিতা না করে সব বলবেন আপনারা নাকি আমার অন্য কোন ব্যবস্থা নিতে হবে।
মেহবিনের কথায় ওনারা ভয় পেয়ে যায়। তখন একজন বলল,,
“আমাগো কাজ শুধু কোন কথা না কইয়া লাশের গোসল করানো কে কেমনে মারা গেল তাতে আমাগো কিছু না।”
‘তারমানে আপনারা আগে থেকেই সব জানতেন । এখন আমাকে বলুন এই কাজে আপনাদের মাথা কে? যে এইসব কিছুর পেছনে সে নিশ্চয়ই বড় কোন মাথা নাহলে এতো সবকিছু প্ল্যান মাফিক করা সম্ভব নয়।”
“আমরা কিছুই জানি না আমাগো খালি এই কামে রাখছে তাই আমরা এই কাম করি।”
“সেটাই তো আপনাদের কে রাখছে চেয়ারম্যান সাহেব নাকি অন্যকেউ?”
“আমাগো তো আগে চেয়ারম্যানসাবই রাখছিল।”
মহিলার কথা শুনে মেহবিন একপ্রকার থমকে গেল। চেয়ারম্যান সাহেব এর পেছনে আছে। তবুও ও ভালো করে কথাটা শোনার ফলে মনে পরলো আগে বলেছে তারমানে পরে কেউ এদেরকে হায়ার করেছে। ও তাড়াতাড়ি করে বলল,,
“আগে মানে পরে কে আপনাদের বলেছিল যে মৃত ব্যক্তি যেমনই হোক কোন কথা বলা যাবে না?”
“নামটা বলতে পারুম না নাইলে হেয় আমাগো ক্ষতি করবো।”
‘আর আপনারা যদি না বলেন তাহলে কালকেই আমি পুলিশ ডেকে আপনাদের সব কথা বলে দেব।”
পুলিশের কথা শুনে চারজনই ভয়ে কেঁদে উঠলো। তাদের মধ্যে একজন কাঁদতে কাঁদতে বলল,,
“না না বইলেন না আমরা সব কমু আপনারে।”
“হুম বলুন?”
‘এই সবকিছু নিশাচর নামের কেউ একজন ফোন কইরা করতে কইছিল। কইছিল যদি সব তার কথামতো করতে কোন মৃত ব্যক্তির কোন খানে কাটাছেঁড়া থাহে তাইলে জানি আমরা কাউরে কিছু না কই। এই জন্য আমাগো মেলা ট্যাহা দিত আমরাও ট্যাহার লোভে পইরা এই কাম করছি। আমাগো পুলিশে দিয়েন না আমরা গরিব মানুষ কয়ডা ট্যাহাই আমাগো সুখ।”
‘আচ্ছা আপনাদের কিছুই করবো না যদি পুলিশের সামনে আপনারা যা দেখেন এবং জানেন সব বলেন তাহলে। মৃত ব্যক্তির লাশের কাটাছেঁড়া সম্পর্কে সব বলবেন।”
‘না না যদি হেয় জাইনা যায় তাইলে আমাগো ক্ষতি করবো।”
‘কেউ কিচ্ছু জানতে পারবে না আমি সিভিল ড্রেসে তাদের আসতে বলবো। অথবা আপনাদের অন্য কোথাও নিয়ে যাবো। কাল বিকেলে সব বলবেন সবকিছুর ব্যবস্থা আমি করবো।
তারা কিছুক্ষণ ভেবে বলে তারা বলবে। কথাটা শুনে মেহবিন একটু স্বস্তি পায় কিন্তু ভেতরে ভেতরে নিশাচরের ওপর রাগতে থাকে।মেহবিন তাদের চারজন কে বলল সে তাদের আরো কিছু বলে চলে যেতে বলল। এতোক্ষণ কেউ আড়াল থেকে ওদের সব কথা শুনছিল। সে ওখান থেকে চলে গেল বাকি চারজন ও গেল । ওনারা চলে যেতেই মেহবিন নিজের রাগকে কন্ট্রোল করার জন্য দেয়ালে দুইটা ঘুষি মারলো। আর বলল,,
‘একটা মানুষ কতোটা নিকৃষ্ট হলে এরকম করতে পারে। নিশাচর তোমায় আমি ছাড়বো না তোমার জন্য আর কতো মানুষ কে এভাবে নিজের জীবন দিতে হবে।”
বলেই মেহবিন ওয়াশরুমে ঢুকে গেল ও এখন গোসল করবে। ও গোসল করে বের হলো খাওয়ার কোন ইচ্ছাই এখন নেই।
________________
পরের দিন প্রতিদিনের ন্যয় সকাল হলো। মেহবিনের নামাজ পরে বাইরে বেরুতেই দেখলো কালকের বাড়ি থেকে কান্নার আওয়াজ আসছে। হয়তো কারো সকাল বেলা উঠেই মনে পরেছে তার প্রিয়জন কালকেই এই দুনিয়া ছেড়ে চলে গেছে। মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। মেহবিন সে বাড়ির দিকে এগিয়ে গেল একটা মেয়ে তার বাড়ির মাটির বারান্দায় বসে কাঁদছে তারপাশে একজন মহিলা বসে আছে সে ওখানে গিয়ে জানতে পারলো মেয়েটার মা ছিল সে। মেহবিন মেয়েটাকে কিছু শান্তনা দিয়ে চলে এলো আর এটাও জেনে এল কোন হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিল। সে জানালো এ.এস হাসপাতাল। ও নামটা শুনে অবাক হয়েছিল এ.এস হাসপাতাল। তার সন্দেহ এতোদিন ছিল এস.এস. হাসপাতালের ওপর তার মধ্যে এই এ.এস হাসপাতাল কোথা থেকে আবার নতুন একটা হাঙ্গামা দাড় করিয়ে দিল। ও বাড়ি এসে মুখরকে ব্যাপারটা জানালো আর এটাও বলল সব সিক্রেট ভাবে করতে হবে। মুখর বলল সে খোঁজ নিয়ে ওকে জানাচ্ছে। আজ শনিবার তাই হাসপাতাল নেই।
বেলা এগারোটার দিকে মেহবিন চেয়ারম্যান বাড়িতে গেল। বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই ও দেখলো মিশু আর আরবাজ দুজনে একে অপরের সাথে খুনশুটি করছে আর হাসছে। মিশু তো চুল ও টেনে দিচ্ছে আরবাজ ও কম যায়না সেও দিচ্ছে দুজনের মুখেই তৃপ্তির হাসি। আরবাজের নজর গেল মেহবিনের দিকে মেহবিন কে দেখেই আরবাজ সোজা হয়ে দাঁড়ালো হাঁসি মুখটাও একটু মূর্ছা গেল। ও বলল,,
“মিশু তোর ফুল এসেছে?’
মেহবিন তখনও ওদের দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। মিশু দৌড়ে গিয়ে মেহবিনকে জরিয়ে ধরলো। তা দেখে মেহবিনের ধ্যান ভাঙলো। মেহবিন মুচকি হাসি ফুটিয়ে বলল,,
“বাহ আজ দেখছি ফুল খুব খুশি!”
মিশু আদুরে গলায় বলল,,
“তো খুশি হবো না বাড়িতে বিয়ে লেগেছে তো।’
“তাই বুঝি তা কার বিয়ে লাগলো?”
“কার আবার জিনিয়ার। তুমি জানো ওর বিয়ে না কাল ঠিক হয়ে গেছে দুই মাস পর ওদের বিয়ের ডেট ফিক্সড হয়েছে তার আগে কয়েকদিন পরেই নাকি এঙ্গেজমেন্ট।”
“ওহ আচ্ছা!”
তখন আরবাজ বলল,,
“কেমন আছেন ডক্টর?”
“জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”
“জি আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা অনেকদিন পর দেখা হলো আপনার সাথে।
“হুম আপনি বেশ ব্যস্ত মানুষ তাই দেখা হয় না। শুধু আপনি না এই বাড়ির সকল পুরুষ মানুষই ব্যস্ত শুধু শেখ শাহেনশাহ বাদে।”
“নামটাই যে শাহেনশাহ তাই শাহেনশাহ এর মতোই চলাফেরা।”
আরবাজের কথা শুনে মিশু হাসলো মেহবিন ও মুচকি হাসলো। ওখানে জিনিয়া মুনিয়া নুপুর আর রাইফা ছিল। এতোদিনে আসা যাওয়ায় জিনিয়া আর মুনিয়ার সাথে ভালো বন্ডিং হয়ে গেছে মেহবিনের। মেহবিন এগিয়ে গিয়ে জিনিয়াকে শুভেচ্ছা জানালো। জিনিয়াও মুচকি হেসে ধন্যবাদ জানালো। তখন রাইফা সবার জন্য কিছু খাবার নিয়ে এলো। মিশু বলল আজ সবার সাথে গল্প করবে মেহবিন কে নিয়ে তাই মেহবিন ও সবার সাথে বসলো। সবাই খাচ্ছে আর কথা বলছে মেহবিন ও বলছে তবে খাচ্ছে না। তা দেখে নুপুর বলল,,
“ডক্টর মেহবিন আপনাকে এই বাড়িতে অনেকবার আসা যাওয়া করতে দেখেছি কিন্তু কোনদিন কিছু খেতে দেখিনি।”
এ কথা শুনে মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“কারন এ বাড়িতে যখন আসি তখন সবসময় আমার পেট ভরা থাকে। আর আমি অতিরিক্ত খাবার খাইনা এই জন্যই খাওয়া হয় না। কারন অতিরিক্ত খাবার খাওয়াটা আমার পছন্দ নয়।”
“আসলেও কি তাই? অনেক সময় খাবারের সময় হয়েছে আপনি খান নি আপনাকে খালুজান খাওয়ার অফার করেছে তবুও আপনি এ বাড়িতে খান নি।”
“তখন খাইনি কারন আমার দেরি হয়ে যাচ্ছিল তাছাড়া আমার খাবার সবসময় রেডি করাই থাকে তাই। বাই দা ওয়ে খাওয়ার টপিক ছাড়ুন এবার বলুন তো আপনি কোন হাসপাতালে জব করেন?”
“কেন?”
“এমনি জানতে চাইলাম আর কি?”
“ওহ আমি এ.এস হাসপাতালে ডক্টর হিসেবে আছি। মজার ব্যাপার জানেন ওটা আমারই বাবার হাসপাতাল।”
এ.এস হাসপাতালের কথা শুনে মেহবিন একটু অবাক হলেও পরে হাসলো। আর বলল,,
“ওহ আচ্ছা সেই জন্যই তো এখানে থাকলেও চাপ নেই আপনার। যখন তখন যাওয়া আসা করতে পারেন।”
“তা তো অবশ্যই নিজেদের জিনিসের ভাবটাই আলাদা। অবশ্য এটা সরকারি ডক্টরেরা বুঝবে না।”
নূপুরের সুক্ষ কথার ভাঁজে অপমানটা শুনে মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“হ্যা হ্যা তা ঠিকই বলেছেন। সরকারি ডক্টরেরা বুঝবে কিভাবে? তারা তো নিজেদের যোগ্যতার দ্বারা ডক্টর হয়েছে। বাবার টাকায় বা নামে ফুটানি মেরে ডক্টর হয় নি তাই না।”
মেহবিনের কথায় নুপুরের হাঁসি মুখটা মূর্ছা গেল আর অপমানে মুখটা থমথমে হয়ে গেল। তখন মিশু বলল,,
“ঐ তোমরা দুজন ডক্টর ফক্টর ছাড়ো তো। এই রাইফা তুমি না ভালো কফি বানাও ওটা বানিয়ে নিয়ে আসো তো। আজ ফুল কফি খাবে তাই না ফুল।”
হুট করে মিশুর কথায় মেহবিন ওর দিকে তাকালো। তারপর রাইফার দিকে তাকালো। রাইফা বলল,,
“ঠিক আছে আপু আমি যাচ্ছি।”
তখন মেহবিন বলল,,
“না না আমি খাবো না। আপনার কষ্ট করতে হবে না।”
তখন ওপর থেকে আরবাজ এলো একটা কফির কৌটা নিয়ে এসে রাইফার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল,,
‘এই যে রাইফা শুনলাম কফি নাকি শেষ হয়ে গেছে। তাই আমি এটা এনেছি। এটা আমার ফ্রেবারিট কফি তুমি এটা নাও ডক্টর নিশ্চয়ই এখন খাবেন কারন কফি কখনো অতিরিক্ত খাবার হয় না। আর হ্যা রাইফা আমার জন্যও বানিও কেমন?”
মেহবিন কিছু বললো না রাইফা কফির কৌটা নিয়ে চলে গেল। আরবাজ হেঁসে সবথেকে দূরের সোফাটায় বসলো। আজ চেয়ারম্যান সাহেব বাড়িতে নেই কোথায় যেন গিয়েছেন আর মহিলারাও কোথায় যেন গিয়েছেন। কিছুক্ষণ পর রাইফা কফি নিয়ে এলো প্রথমে মেহবিন কে দিল মেহবিন কিছু না বলেই তার দিকে একবার তাকিয়ে কফিটা নিল। তারপর আরবাজ কে দিল বাকি সবাইকেও দিল। কফিতে চুমুক দিয়ে মেহবিন বলল,,
“কফিটা অনেক ভালো হয়েছে।”
রাইফা মুচকি হেসে বলল,,
‘ধন্যবাদ।”
‘মিস্টার বাজপাখি সরি মিস্টার আরবাজ। আসলে মিশুর কাছে থেকে বাজপাখি শুনতে শুনতে ভুলে বেরিয়ে গেছে। কিছু মনে করবেন না।
আরবাজ মুচকি হেসে বলল,,
“কোন সমস্যা নেই আমি কিছু মনে করিনি।”
“আচ্ছা আপনার বাবা কখন আসবেন আমার উনার সাথে কিছু কথা ছিল।”
‘এই তো আর কিছুক্ষণের মধ্যেই চলে আসবেন।”
“ওহ আচ্ছা।
এইটুকু বলে রাইফার দিকে তাকিয়ে বলল,,
“রাইফা আপনি এখন কি করেন?
রাইফা শান্ত চোখে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আপতত সংসার করছি।”
“আমি আপনার পেশার কথা বলেছি?”
“পড়াশোনা শেষ করে এখন পেশা বলতে গেলে আমি হাউজ ওয়াইফ।”
মেহবিন রাইফার দিকে তাকালো।ওর চোখের দিকে তাকিয়ে মনে হলো ঐ চোখে অনেক কথা আছে যা ও কারো সাথে কখনো শেয়ার করেনি। অদ্ভুত একটা যন্ত্রনা আছে ঐ চোখে। মেহবিন আর কিছুই বললো। কিছুক্ষণ পর শেখ শাহনাওয়াজ এলেন মেহবিন কে কফি খেতে দেখে একটু অবাকই হলেন। তিনি নিজের ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হলেন তারপর নিচে এলেন। মেহবিন এবার বাড়ি ফিরবে তাই ও শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,
“চেয়ারম্যান সাহেব আপনার সাথে কিছু কথা ছিল আপনার সাথে কেউ না থাকলে ভালো হয়।”
মেহবিনের এমন কথা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ উঠে বললেন,,
“তাহলে আমরা বাগানে গিয়ে কথা বলি।”
বলেই তিনি হাঁটা ধরলেন মেহবিন ও সবার থেকে বিদায় নিয়ে বের হলো। আর সে বাড়িতে ঢুকবে না। বাগানে যেতেই সেখানে বসার জায়গা আছে সেখানে শেখ শাহনাওয়াজ বসে আছেন। মেহবিন কে দেখে তিনি বললেন,,
“বলুন কি বলবেন?”
“আপনি যে গোসল ও কবর দেওয়ার জন্য লোক রেখেছেন তাদের বদলাতে হবে।”
“কেন? বদলানোর যথার্থ কারন দেখাতে হবে তো। সেই কারন কি?”
“আমি বলেছি এটা আপনার কাছে যথেষ্ট নয় কি?”
“না যথেষ্ট কারন নয় আপনি বলুন?”
মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে সব বললো সে শেখ শাহনাওয়াজ কে জানাতে চাইছিল না কিন্তু উনার কথার পরিপ্রেক্ষিতে জানাতেই হলো।সব বলার এটা বলল,,
“আর আপনি এটা জানেন কি ঐ হাসপাতালের নাম কি? সেই হাসপাতালের নাম এ.এস হাসপাতাল যা কিনা ডক্টর নুপুরের বাবার মানে আপনার আত্মীয় এর।”
এ কথা শুনে শেখ শাহনাওয়াজ বিস্ফোরিত চোখে মেহবিনের দিকে তাকালো। আর বলল,,
“আপনার কাছে কোন প্রমান আছে যে নুপুরের বাবাই এই কাজ করে। উনি তো হাসপাতালের ওনার কতো ডাক্তার আছে সেখানে সেখানের কেউ তো করাপ্টেড হতে পারে। হয়তো উনি এই বিষয়ে কিছু জানেন না।”
‘হ্যা হতেও পারে আপনার মতো!”
‘মানে?”
মেহবিন বুঝতে পারলো ও কি বলেছে। তাই কথা সামলাতে বলল,,
“কিছু না আর আমি তো বলিনি নুপুরের বাবাই এগুলোর মাথা।”
“তাহলে কে এগুলোর মাথা।”
“কখনো নিশাচর মানে অন্ধকারের রাজার নাম শুনেছেন?”
নিশাচর এর নামটা শুনেই শেখ শাহনাওয়াজ চমকে উঠলেন। তা দেখে মেহবিন বলল,,
“এই সবকিছুর একটাই মাথা নিশাচর। এবং সবকিছু তিনিই লোকদের দ্বারা প্ল্যানমাফিক করেন।”
“তাহলে তো আমাদের এই বিষয়ে কোন স্টেপ নেওয়া প্রয়োজন।”
“সেটাই তো প্রমান লাগবে এ.এস হাসপাতালের কে করছে এটা নিশাচর এর সাথে মিলে। আগেই আমি কোন স্টেপ নিচ্ছি না কারন আমি জানি না ঐ হাসপাতালের কে আছে যিনি এইসব কাজ করছে। তবে টেনশন নেই খুব তাড়াতাড়িই জানতে পারবো।”
‘আমার কোন সাহায্য লাগলে বলবেন।”
‘আপতত আপনি ঐ লোকগুলো কে বদলান। আর আমি দেখছি তাদের পুরুষদের মধ্যে কেউ কিছু জানে কি না। আপনি একটু তাদের নাম বলুন এবং বাড়িটা এই এলাকার কোথায় সেটাও বলুন আমি যাওয়ার পথে সবার সাথে দেখা করবো।”
শেখ শাহনাওয়াজ সবার বাড়ির ঠিকানা ও নাম বলে দিল। মেহবিন ওখান থেকে চলে গেল। আর শেখ শাহনাওয়াজ এর কথামতো বাড়ি বাড়ি গেল কিন্তু সেখানে গিয়ে জানতে পারলো তারা রাতেই হাওয়া হয়ে গেছে। ওর সন্দেহ গাঢ় হলো ও মহিলাদের ব্যাপারেও খোঁজ নিল তাদের বাড়িতেই গিয়ে দেখতে পেল তারাও নেই।সবাই নিখোঁজ এক রাতের ভেতরেই সবাই হাওয়া।মানে টা কি এসবের কালকেও মহিলারা সব বলার জন্য রেডি ছিল। না ওর আগে থেকেই অন্য একটা ব্যবস্থা করা উচিৎ ছিল। এখন ওর হাতে কোন প্রমান নেই যে কালকের মহিলার শরীরে কাটাছেঁড়া ছিল। নিজের ওপরেই খুব রাগ উঠলো ওর। তবুও ও হাল ছাড়লো না ও মুখরকে ফোন করে সেই আটজনের ব্যাপারে খোঁজ লাগাতে বলল। আর এটাও বলল সব তাড়াতাড়ি বের করতে। রাতে মেহবিনের ফোনে একটা আননোন নাম্বার থেকে ফোন এলো ও ফোন কানে নিতেই ওপাশ থেকে আওয়াজ আসলো,,
‘অতিরিক্ত কৌতুহল ভালো নয় ডাক্তার। কখনো কখনো এর কারনে মৃত্যু কে আলিঙ্গন করতে হয়।”
~ চলবে,,
বিঃদ্রঃ কালকে গল্প দেরিতে আসবে মানে রাতে