রাগে_অনুরাগে #কলমে সৌমিতা #পর্ব- ১৩

0
287

#রাগে_অনুরাগে
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ১৩

– রাতের শেষভাগে এসে যখন কুয়াশা ঘেরা অন্ধকার পৃথিবীতে শিশিরের বিন্দু বিন্দু দানা নিজের আধিপত্য বিস্তার করে ঠিক তখনই একদল পেঁচা এদিক থেকে সেদিকে ঘুরে ঘুরে বেরায়,,,,নক্ষত্ররা মিটমিট করতে করতে ক্লান্ত প্রায়,,,,, পাখিরাও প্রতীক্ষায় রত ভেসে আসা মেঘের ফাঁকে ওই রক্তিমময় সূর্যোদয়ের জন্যে,,,, যখন অল্প অল্প অন্ধকারাচ্ছন্ন পৃথিবীতে হালকা আলোর আভা পরিলক্ষিত হয়,,,,,

-আচমকা অভ্রের এইরকম ব‍্যবহার অনুকে কষ্ট দেয়,,,অনুপমা ভাবতেই পারে না কোনো কারণ ছাড়া কি করে কেউ কাউকে এতটা কষ্ট দিতে পারে,,, কি করে কেউ কাউকে এতটা অপমান করতে পারে?? কাঁদতে কাঁদতে অনু ঘুমিয়ে পড়ে একসময়,,

– আর এই দিকে ব‍্যালকনিতে থাকা চেয়ারে গা এলিয়ে দেয় অভ্র,নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে ওর,,,একসময় বুকের ভিতর তীব্র যন্ত্রণা অনুভব করে,,অনুর সাথে ওইরকম ব‍্যবহার করে একের পর এক সিগারেট শেষ করেই যাচ্ছে তখন থেকে,,,আজ সমস্ত কষ্ট ,রাগ অভিমান যেন ওই নিকোটিনের বিষাক্ত ধোঁয়ার মাধ‍্যমে উড়িয়ে দিয়ে নিজের মনটাকে শান্ত করার ব‍্যর্থ চেষ্টা করছে,,,,,হঠাৎ অনুভব করে মুখে তরল কিছু,, মুহূর্তেই পুনরায় চোখ ঝাপসা হয়ে আসে,,দ্রুতই মুছে নেয়,,,,না ও তো এত দুর্বল ছিল না,,,, এইবলে মনকে বুঝ দেয় তবুও সেই তরল গড়িয়ে পড়ছে,,, সিগারেট টা মুখে নিতে বারবার হাত কেঁপে যাচ্ছে,,সাথে সাথে চোখের সামনে ভেসে ওঠে পিছনে ফেলে আসা একটি দিনের কথা,,,,,,

– উফফফ মি.চৌধুরী প্লিজ এই সিগারেট আপনি আর খাবেন না,,,, আমার কষ্ট হয়,,,,আর সব থেকে বড়ো কথা হলো আপনার শরীর খারাপ করবে,,, আপনি কি জানেন না সিগারেট সাস্থ‍্যের পক্ষে ক্ষতিকারক,,,,(বিরক্তি সূচক মুখ করে নাকের উপর শাড়ির আঁচল দিয়ে কথা গুলো বলে অনুপমা)

– অনুপমার কথা শুনে বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে আসে অভ্রর,,,তারপর খুবই শান্ত স্বরে বলে ওঠে,,,” আমার শরীর যদি খারাপ হয় তাতে তোমার কি অনুপমা?? আর এতরাতে তুমি ছাদে কেন?? এখানে দাঁড়িয়ে না থেকে নিচে গেলে তো আর কষ্ট হয় না তোমার,,,,,

– আমার অনেক কিছু মি.চৌধুরী সেটা আপনি বুঝবেন না,,,, আর শুনুন আমি ছাদে শুধুমাত্র আপনাকে ডাকতে এসেছিলাম,,, মা ডাইনিং টেবিলে অপেক্ষা করছে,,, তাড়াতাড়ি আসুন,,, আর এইদিকে একটু ফিরুন তো..

– কেন??( কথাটা বলে যেই অনুপমার দিকে ফিরে তাকায় অভ্র আর তক্ষণাৎ অনুপমা অভ্রের মুখ থেকে সিগারেট টা নিয়ে নিচে ফেলে দিয়ে দৌড় দেয়,,,,,হঠাৎ এমন কিছু হবে আশা করিনি অভ্র তাই ঘটনাটা বুঝতে বেশ কিছুটা সময় লেগেছিল ওর,,আর যখন বুঝতে পারলো তখন আনমনেই হেসে উঠেছিল সেদিন পুরোনো কথা মনে পড়তেই সিগারেটের অংশটা মাটিতে ফেলে দেয় অভ্র,,তারপর নিজের মনেই বলে ওঠে,,,,

-আমি তো এমনটা চাইনি অনুপমা,,তবে এমনটা কেন হলো আমার সাথে?? সব কিছু ভুলে তোমার কাছে নিজেকে সোপে দিতেই তো চেয়েছিলাম আমি,,, কতটা ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে সেটা তুমি নিজেও কল্পনা করতে পারবে না,,, কিন্তু এটা আমার সাথে কি হল শেষ পর্যন্ত তুমিও আমাকে ঠকালে,,,কেন একবার বললে না যে তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যেতে চাও,,,কেন একটাবারের জন্য তুমি আমাকে বললে না যে তোমার মনে হৃদয় নামক এক পুরুষের বসবাস,,,, সেই মনে তুমি তাকে নিয়ে ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখো,,,তুমি যদি বলতে আমি তো নিজেকে তোমার প্রতি এতটা দুর্বল হতে দিতাম না,,, তোমাকে মুক্তি দিয়েই দিতাম,, কষ্ট হতো আমার তবুও আমি তোমার জন্য সব করতাম,, তার জন্য হৃদয়কে আমার কাছে পাঠানোর কোনো দরকার হতো না,,,
__________________________________________

– পরের দিন সকালে সূর্যের মিষ্টি আলোয় ঘর আলোকিত হওয়ার সাথে সাথেই ঘুম ভেঙ্গে যায় অনুপমার,, ঘুম থেকে উঠে সারা ঘর চোখ বুলিয়ে অভ্রকে দেখতে না পেয়ে আস্তে আস্তে ব‍্যালকনির দিকে হেঁটে যায় অনু,,,মিষ্টি রোদ ব‍্যালকনির কয়েকটা জায়গায় তীর্যক ভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে,,,তাদেরকে অনুসরণ করে চোখ গিয়ে আটকায় আরামকেদায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে থাকা পুরুষটির দিকে,,, অনুপমা একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে তারপর অভ্রের শরীরের উপর গুটিয়ে থাকা চাদরটা ঠিক করে ওই স্নিগ্ধ মুখটার দিকে তাকিয়ে থাকে দীর্ঘক্ষণ,,,,

– আমি কি এমন করেছি মি.চৌধুরী যার জন্য আপনাকে সারাটা রাত এই শীতের মধ‍্যেও ঘরের বাইরে থাকতে হলো??কেন আপনার আচরণ দ্বারা আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন?? কেন আমাকে একটু কাছে টেনে নিচ্ছেন না আপনি?? আমাকে কি একটুও ভালো বাসা যায় না মি.চৌধুরী??(মনে মনে কথা গুলো বলে একটা ম্লান হাসি দিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় অনুপমা)

-সকাল ১০ টা নাগাদ অভ্র একেবারে রেডি হয়ে অফিসের জন্য বেরিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই সময়,,

– মি.চৌধুরী আপনি কিছু খাবেন না,,??না খেয়ে চলে যাচ্ছেন যে,,,(অনু)

– আমার আজ একটু তাড়া আছে,, আমি অফিসে গিয়ে খেয়ে নেবো,,,অযথা আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না তোমার(বলেই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায় অভ্র)

– বৌদিভাই চলো আমরা খেয়ে নিই,,দাদাভাই তো খাবে না,,,(মুন্নী)

– হ‍্যাঁ চল,,,(কখন যে উনার কি হয়? কালকে থেকে দেখছি আমার সাথে কেমন ব‍্যবহার করছেন,,আমাকে কষ্ট দিয়ে আপনি কি সুখ পান মি.চৌধুরী??)
_________________________________________

-এই দিকে অভ্র অফিসে এসে কোনো কাজে মন দিতে পারছে না,,,বারবার অনুপমার কথা মনে পড়ছে,,,আর তারসাথে হৃদয়ের বলা কথা গুলো,,, টেবিলের উপরে থাকা পেপার ওয়েটটা যখন ঘোরাতে ব‍্যস্ত অভ্র ঠিক তখনই ওর ফোনে একটা কল আসে,,,নাম্বার টা দেখে অভ্র পেপার ওয়েটটা হাত দিয়ে থামিয়ে কলটা রিসিভ করে,,,

– হ‍্যালো,,,

-,,,,,,,,(ফোনের ওপাশের ব‍্যক্তি)

– আমি কোনো কথা শুনতে চাই না মি.বোস,,, যত তাড়াতাড়ি পারেন পিটিশনটা কমপ্লিট করে জমা দিন,,,

– ,,,,,,,,,

– আমি অনেক ভেবেছি,,, আর শেষ পর্যন্ত এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছি,,আশা করছি আপনি বুঝবেন বিষয়টা,,,,,রাখছি,,,( তুমি চিন্তা করো না অনুপমা তাড়াতাড়ি মুক্তি পাবে,,,চিরতরে মুক্তি,, আমার থেকে মুক্তি )
_________________________________________

– অনু তাড়াতাড়ি কর,,লিস্ট গুলো ভালো করে চেক করে নে,,,ব্রাহ্মণ কিন্তু আর আসবেন না,, একেবারে পূজোর সময় ছাড়া,, আর কি কি লাগবে তার একটা লিস্ট করে দে,,,আমি আনিয়ে নেবো,,,(আশা)

– ঠিক আছে মা,,,তুমি একটু শান্ত হয়ে বসো,,,,

– বুঝলি অনুমা তোর শাশুড়ি মা প্রথম থেকেই এমন,,, বাড়িতে কোনো অনুষ্টান বা পূজো হলে ভীষণ চিন্তা করে,,, আর এইদিকে বি.পি বেড়ে যায়,,, অভ্রতো খুব রাগারাগি করে,,,,, (অভ্রের বাবা)

– উফফফ তুমি চুপ করবে,,,,মুন্নী উনাকে একটু শরবতটা দিয়ে যা তো,,,,কাজের সময় তুমি বড্ড কথা বলো,,,এই অনু তোর বাবার কথায় কান না দিয়ে লিস্টটা দেখ আবার কেউ বাদ গেল কি না??

– ঠিক আছে মা,,দেখে নিচ্ছি,,,

– আচ্ছা বৌমা ছেলে তো এখনো বাড়ি এলো না,,, কত রাত হয়েছে,, আজ আসুক বাড়ি ওর হচ্ছে,,,,(অভ্রের বাবা)

– ওই যে গাড়ির আওয়াজ শুনতে পাচ্ছি,, মনে হয় দাদাভাই চলে এসেছে,,,(মুন্নী)

– অভ্র বাড়ি এসে সোজা নিজের ঘরে যাবে ঠিক সেই সময়,,

– অভ্র এই দিকে একবার আয় তো,,তোর সাথে আমার দরকার আছে,,,( মার ডাকে অভ্র সিড়িতে পা দিতে দিতেই থেমে যায়,,, তারপর পিছন ফিরে মাকে দেখে চোখ সরিয়ে নিয়ে আসতে গেলে চোখাচোখি হয়ে যায় অনুপমার সাথে,,,বেশ কিছুক্ষণ ওইভাবে তাকিয়ে থাকার পর দৃষ্টি নত করে অনুপমা,,, আর অভ্র ওর মায়ের কাছে ধিরে ধিরে এগিয়ে সোফায় বসে,,, তারপর বলে,,,)

– কি বলো মা ,,,আমার খুব গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে ল‍্যাপটপে বসতে হবে,,,

-সারা দিন শুধু কাজ কাজ আর কাজ,,বাড়িতে যে তোর একটা বৌ আছে সেটাও কি ভুলে গেছিস বাবা??

– আহঃ মা এই কথা বলবে বলে বসতে বললে,,,আমি উঠছি,,,

– উফফ চুপচাপ এখানে বস,,বলছিলাম কি কালকে বাড়িতে লক্ষী পূজো আছে,,অন্তত কালকের দিনটা বাড়িতে থাক,,অফিস যেতে হবে না,,

– ঠিক আছে,,,(আর লক্ষী পূজো মা ,,,কদিন পরেই তো এই বাড়ির লক্ষী চলে যাবে,,ও না না সে তো যাওয়ার জন্য একটা পা বারিয়েই আছে)আর কিছু বলবে ??

– না,,তোর যদি কাউকে বলার থাকে তো বলিস,,,,,

– মি.চৌধুরী আপনি চেঞ্জ করে আসুন,,আমি খেতে দিচ্ছি,,,(অনুপমা)

-হমম(বলেই অভ্র সোফা থেকে উঠে একবার অনুপমার দিকে দৃষ্টিপাত করে উপরে চলে যায়,,,)
__________________________________________

– রাতে অনু রান্নাঘরে সব কিছু গুছিয়ে উপরে নিজের ঘরে এসে দেখে কালকের মতো আজও অভ্র সোফায় শুয়ে আছে তার একটা হাত চোখের উপরে,,,তাই দেখে ওর একটু রাগ হয়,,,,

– দেখুন মি.চৌধুরী আপনি কিন্তু বিছানায় শুতে পারেন,,এই ভাবে কষ্ট করে সোফায় শোয়ার দরকার নেই আপনার,,(হঠাৎ করে অনুপমার কন্ঠস্বর শুনে অভ্র চোখের উপর থেকে হাত নামিয়ে ওর দিকে তাকায়,,, তারপর বেশ গম্ভীর হয়ে বলে,,,)

– না আমি এখানে ঠিক আছি,,আর একসাথে এক বিছানায় শুতে তোমার অসুবিধা হবে অনুপমা,,,আর আমি চাই না আমার জন্য তোমার কোনো রকম অসুবিধা হোক,,(অভ্রের এমন কথায় অনুপমার রাগটা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যায়,,, তবুও নিজেকে সামলে বলে,,,)

– কে বলেছে আপনাকে যে আমার অসুবিধা হবে??

– এতে আবার বলার কি আছে,,আমি তো বুঝতে পারি,,,,তুমি হয়তো মুখ ফুটে কিছু বলতে পারো না,,, কিন্তু আমি জানি,,,(এবার আর নিজের রাগকে ধরে রাখতে পারেনি অনুপমা,,,বেশ জোড়েই বলে ওঠে,,)

– কি জানেন আপনি মি.চৌধুরী?? আর কত টুকুই বা জানেন আপনি আমার সম্পর্কে??

– যে টুকু জানিয়ে ছিলে সেইটুকুই জানতাম আর এখন যেইটুকু জানতাম না সেইটুকুও জেনে গেছি অনুপমা,,,(বেশ গম্ভীর ও শান্তস্বরে কথাটা বলে অভ্র,,,যা অনুপমার হৃদয় কাঁপিয়ে দেওয়ার ক্ষমতা রাখে,,,)

-কি জেনেছেন আপনি মি.চৌধুরী??

– সময় হোক তখন বলবো,,এখন নাই বা বললাম,,,আর হ‍্যাঁ আমাকে নিয়ে অত চিন্তা করতে হবে না তোমাকে,,, ফালতু মায়া যেমন তুমিও বাড়াতে চাওনা,,তেমন আমিও চাইনা,,,,আর তাতেও যে কোনো লাভ নেই অনুপমা,,,,

– এ সব আপনি কি বলছেন??? মি.চৌধুরী আপনি আমার স্বামী,,, আপনার সব দিকেই তো আমাকে লক্ষ্য রাখতে হবে,,আর এটা একজন স্ত্রীর কর্তব্য,,,,(অনুপমার কথা শুনে অভ্র বেশ জোড়েই হাসে,,,অনুপমা দেখতে পাই সেই হাসিতে ঘৃণা আর কষ্ট ঝড়ে পড়ছে,,,, অনুপমাকে এইভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে অভ্র হাসি থামিয়ে অনুর দুই বাহু চেপে ধরে হঠাৎ রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে বলে ওঠে,,,)

– সত‍্যিই কি স্বামী মানো আমাকে??তবে এই স্বামীকে তার অধিকার থেকে দূরে সরিয়ে কেন রেখেছো??কেন এই স্বামী কে দিনের পর দিন ঠকিয়েছো?? সত‍্যিটা লুকিয়ে গেছো দিনের পর দিন কেন?? কেন অনুপমা???

-মি.চৌধুরী কি বললেন আপনি,,??দূরে সরিয়ে কে রেখেছে??আর কি বলছেন আপনি,,??? কি সত‍্যি লুকিয়েছি আমি আপনার কাছ থেকে??( অনুপমার কথা গুলো শুনে অভ্র তাচ্ছিল্যের একটা হাসি দিয়ে বলে,,,)

– প্লিজ অনুপমা আমি খুব ক্লান্ত,,, আর কথা বলতে ভালো লাগছে না,,, আমি এখন ঘুমাবো,,,(তারপর অনুপমার দুই বাহু ছেড়ে সোফার দিকে এগিয়ে যায়,,)

-আমার কথা গুলোর উত্তর দিন মি.চৌধুরী,,,আমার প্রশ্ন গুলোকে এইভাবে এড়িয়ে যাবেন না বলে দিলাম,,,(অভ্রকে সোফায় বসতে দেখে বেশ চেঁচিয়ে বলে ওঠে অনু,,,অনুপমার চিৎকার শুনে অভ্র আর নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি,,,)

-কি শুনতে চাও তুমি??কেন উত্তেজিত করছো আমাকে??(অনুর হাত দুটো শক্ত করে চেপে ধরে)

-(অভ্রের এমন রূপ দেখে কাঁদতে কাঁদতে অনুপমা বলে,,,)কি হয়েছে মি.চৌধুরী?? কেন আপনি এমন করছেন??নিজেকে কেন কষ্ট দিচ্ছেন আপনি???

– আমি যে আর পারছি না অনু,,,জীবনের প্রত‍্যেকটা পদক্ষেপে আমি ঠকেছি,,, আর তুমিও,,,(কথাটা সম্পূর্ণ না করে অন‍্যদিকে ফিরে দাঁড়ায় অভ্র,,,,অভ্র এইভাবে অন্য দিকে ফিরে থাকায় অনুপমা দুই হাত দিয়ে অভ্রের মুখটা ঘুরিয়ে নিজের দিকে ফেরায়,,,তারপর বলে ওঠে,,,)

– কি আমি মি.চৌধুরী বলুন,,, কি আমি?? বলুন,,,

– কিছুনা অনেক রাত হয়েছে শুয়ে পড়ো অনুপমা,,,(নিজের মুখ থেকে অনুপমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে বলে,,)

– মি.চৌধুরী আপনি কোনো কারণে কষ্ট পাচ্ছেন সেটা আমি বুঝতে পারছি,, কিন্তু এই কষ্টের কারণটা কি কোনোভাবে আমি,,,??কি করেছি আমি প্লিজ বলুন,, আজ আপনি যতক্ষণ না বলবেন আমি আপনাকে ছাড়বো না,,,(অভ্রের হাতটা ধরে)

– (নিজের হাত থেকে অনুপমার হাতটা সরিয়ে দিয়ে অভ্র বেশ জোড়েই বলে,,,)তোমার জন্য আমি কষ্ট পাচ্ছি এই ধারণা টা মাথা থেকে বের করে দাও অনুপমা,,,কে তুমি আমার??যে আমি তোমার জন্য কষ্ট পেতে যাবো,,,,আমি কিন্তু তোমাকে আমার বৌ বলে মেনে নিই নি এখনো,,,

-জানি আমি সেটা মি.চৌধুরী,,,আমাকে বারবার মনে করিয়ে দিতে হবে না,,,কিন্তু আমি আপনাকে কি করে ঠকালাম সেটা বলুন,,,(চোখের জল মুছে)

– ঠকিয়েছো তো,,দিনের পর দিন সত‍্যিটা আমার থেকে ইভেন এই পরিবারের থেকে লুকিয়ে তুমি আমার সাথে সাথে আমার মা বাবাকেও ঠকিয়েছো,,,,,যারা তোমাকে এত ভালোবাসে তাদেরকে এইভাবে ঠকাতে তোমার লজ্জা করলো না অনুপমা???

– মি.চৌধুরী এসব আপনি কি বলছেন?? কোন সত‍্যি লুকিয়েছি??? বলুন,,,,

– এইযে তোমার ওই মনে হৃদয় নামক একজন পরপুরুষের বসবাস,,,,হৃদয়ের কাছে যাওয়ার জন্য যখন অত তাড়া সেটা তো তুমি নিজের মুখে এসে আমাকে একটাবার বলতে পারতে অনুপমা,,, কষ্ট করে হৃদয়কে আমার কাছে পাঠানোর কি দরকার ছিল????

-(অভ্রের কথা শুনে অনু কিছুটা ভয় পাই,,,সবকিছু হারিয়ে ফেলার ভয় পাই,,,এইযে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষ মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার ভয় মুহূর্তেই মনে জেঁকে বসে,,,),,,,,,,,,,

– কি হল কিছু বলছো না কেন?? তুমি কি ভেবে ছিলে হৃদয়ের কথা আমি জানতে পারবো না,,, আমি এতটাই বোকা,,,, আরে একবার বলে দেখতে পারতে,,,এইভাবে আমার অফিসে এসে বলার কি দরকার ছিল,,,,ওটা আমার কাজের জায়গা,, তোমাদের প্রেমলীলা শোনার জায়গা না,,,,,(চেঁচিয়ে বলে অভ্র,,,অভ্রের এমন চিৎকার শুনে অনুপমা কেঁপে ওঠে,,, এবং কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,)

-বিশ্বাস করুন মি. চৌধুরী আমি এ সবের কিছুই জানি না,,, আর হৃদয় সে ছিলো আমার অতীত,,,,তাই আপনাকে,,,(অনুপমার কথা শেষ করতে না দিয়ে অভ্র বলে ওঠে)

– তাই আমাকে ঠকালে আর তার সাথে আমার মা বাবাকে,,, ভালো,,,মুক্তি চাই তো তোমার ঠিক আছে আর দুটো দিন একটু কষ্ট করে অপেক্ষা করো,,,ডির্ভোসের পিটিশনটা জমা দিয়ে দিয়েছি,,,ওটা একবার এসে যাক তারপর তুমি মুক্ত আর আমিও,,,,,(বলেই অভ্র ঘর থেকে বেরিয়ে যায়)

-আমি যে ভয়টা পেয়েছিলাম সেটাই হলো,,,কেন করলে হৃদয় এটা,,আমি তো তোমাকে বলেই দিয়ে ছিলাম যে আমি আমার স্বামীর সঙ্গে খুব ভালো আছি,,,আমি আমার স্বামীকে ভালোবাসি,,,তারপরেও কেন করলে তুমি এটা,,,ভুলটা আমার ,,,আমার আপনাকে অনেক আগেই বলা উচিত ছিল মি.চৌধুরী,,, তাহলে আপনি আমাকে ভুল বুঝতে পারতেন না,,, কি করে বোঝাবো আপনাকে যে আমার জীবনের কোনো অংশেই আজ আর হৃদয় নেই,,, কোনো এক সময় হয়তো ছিল সে,,, কিন্তু এখন আমার জীবন জুড়ে রয়েছেন আপনি,,শুধুমাত্র আপনি মি.চৌধুরী,,,,আমি যে আপনাকে খুব ভালো বেসে ফেলেছি,,,,(কাঁদতে কাঁদতে অনুপমা বলে)

– রাগ করে ঘর থেকে বেরিয়ে অভ্র ছাদে চলে আসে,,,তারপর আবার সেই বিষাক্ত নিকোটিনের ধোঁয়া চারপাশে ছড়াতে ব‍্যস্ত হয়ে পড়ে,, একসময় সিগারেটটা টুকটাক ছাড়া খেতোই না কিন্তু ইদানিং যাবদ নিজের কষ্ট থেকে ক্ষনিকের পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সিগারেটের নেশা টা বেশ জোড়ালো হয়ে উঠেছে,,,,,,

চলবে…

( পেজের রিচ কম,,,দয়া করে সবাই রিয়‍্যাক্ট ও গঠনমূলক মন্তব্য করবেন। কপি পেস্ট করা নিষিদ্ধ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here