#রাগে_অনুরাগে
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ৪
-দেখতে দেখতে মাস দুই হয়ে গেল অভ্র আর অনুপমার বিয়ে,,,,সময়ের কাঁটাও ঘুড়ছে,,সে জানান দিচ্ছে যে কারোর জন্য সে থেমে থাকে না, ঠিক যেমন নদীর স্রোত কারোর জন্যে থেমে থাকে না,,,এই দুই মাসে বাড়ির সবার সাথেই বেশ ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছে অনুপমার,,, এখন আর হৃদয়কে নিয়ে অত মন খারাপ করে না অনু,,,নিজের অবচেতন মনের মধ্যে রয়ে গেছে সেই মানুষটি,, যাকে নিয়ে একদিন ঘর বাঁধার স্বপ্ন দেখেছিলো ও,,শুধু হৃদয়ের স্মৃতি গুলো যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে তখন সব কিছু একপাশে রেখে ক্ষনিকের জন্য ছাদের এক পাশে গিয়ে চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে আর পুরোনো কথা গুলো স্মরণ করে,,,,
– আর এইদিকে আমাদের ব্যস্ত বদমেজাজি অভ্র সে যেন আরো বেশি করে কাজের মধ্যে নিজেকে ডুবিয়ে রাখতে ব্যস্ত থাকে সর্বক্ষণ,,,ইদানিং বাড়িতে তার আসা যাওয়া প্রায় কমে গেছে,,,আর যখন বাড়িতে আসে সেটা অনেক রাত করেই,,সময়ের সাথে সাথেই সবার সাথে অনুপমার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ হলেও অভ্রের সাথে অনুর সম্পর্ক সেই আগের মতোই আছে,তাদের জন্য যেন সময়টা দু মাস আগেই থমকে গেছে,,দুজন দুজনের সামনে আসে না,,, বাই চান্স এসে গেলেও একে অপরকে পাশ কাটিয়ে চলে যায়,এমন ভাবে যেন কেউ কাওকে চেনেই না,,,এই ভাবেই দিন গুলো যাচ্ছিলো কেটে,,,কিন্তু একদিন,,
-আমাদের তো বিদেশ যাওয়ার জন্য পাসপোর্ট চলে এসেছে,,,তোর বাবা বলছে যে বিদেশে যাবে না,,, সে এইখানেই থাকবে,,,দরকার পড়লে বিদেশ থেকে ডাক্তার এখানে নিয়ে আসবে,,,(আশা)
-কি যে বলো না মা ,,,বাবার সাথে আমি কথা বলে নেবো,,,বিদেশে গিয়ে থাকতে হবে না কিন্তু যতদিন না বাবা পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে ততদিন তো থাকতে হবে,,,(অভ্র)
– হ্যাঁ মা উনি কিন্তু ঠিক কথায় বলেছেন,,আগে শরীরের দিকটা দেখতে হবে,,আর যেখানে মাসিমনিরা আছেন সেখানে ওখানে থাকার তো কোনো সমস্যা নেই,,,(অভ্রের দিকে একবার তাকিয়ে কথা গুলো আশাকে বলে অনুপমা)
-মা আমি এখন উঠছি,এমনিতেই লেট হয়ে গেছে ,,,তোমরা তাহলে কাল কিন্তু যাচ্ছো এই টাই ফাইনাল,,,আমি বাবার সাথে কথা বলে নিচ্ছি,,আর হ্যাঁ পিসি ঠাম্মামকে বলে দিও যে আমি দুপুরের দিকে গাড়ি পাঠিয়ে দেবো,, সে যেন রেডি থাকে,,,( কথা গুলো বলে টিসু পেপারে অভ্র মুখ মুছতে লাগল)
– ঠিক আছে আমি পিসিমা কে বলছি,,আচ্ছা অভ্র বলছিলাম যে আসলে বিদেশ যাওয়ার কথা তো এখনো চার মাস পরে হঠাৎ এত তাড়াতাড়ি পাঠাচ্ছিস কেন?(আশা)
– কেন মা তুমি বুঝতে পারছো না,,তোমার এই ছেলে ভীষণ বিচ্ছু,,খারুশ,,,বদরাগী ।পৃথিবীর যত খারাপ কিছু আছে সব তোমার ছেলে,,আমাকে এই বাড়ি থেকে তাড়াতাড়ি তাড়ানোর জন্য তোমাদের বিদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছে,, আমি যেন কিছু বুঝি না,, এই লোকের পেটে পেটে এত শয়তানি বুদ্ধি,,(মনে মনে কথা গুলো বলছে আর আড়চোখে অভ্রের দিকে তাকাচ্ছে)
-ডাক্তারের অ্যাপয়েন্ট লেটার টা তাড়াতাড়ি পেয়ে গেছি তাই,,,আর বাবার তো এখন অপারেশন করবে না শুধু কিছু টেস্ট করিয়ে ওখানে রেখে দেখবেন,, তারপর উনারা ডেট দেবেন কবে পেসমেকার বসাবে,,,বুঝেছো,,,আসছি,,,(বলেই অভ্র বেরিয়ে যায়)
– ও মা তোমরা চলে যাচ্ছো কালকে,,এদিকে পিসি ঠাম্মাম আজকে চলে যাচ্ছে ,,আমি একা একা এই বাড়িতে কি করবো???(অনু)
– কি কথা হচ্ছে আমাকে নিয়ে??(পিসি ঠাম্মাম)
– কি আবার বলবো পিসি ঠাম্মাম,,, তুমি আজকে চলে যাচ্ছো,,মা বাবা কালকে চলে যাচ্ছে,,,আর এই এত বড় বাড়িতে আমি একা থেকে দম আটকে মরে যাবো,,(অনু)
– চুপ যত উল্টো পাল্টা কথা তোর মুখে,,,আশা এই মেয়েকে শাসন কর,,মুখে যা আসছে তাই বলছে,,,(পিসি ঠাম্মাম)
– তুমি থেকে যাও না প্লিজ,,, আমার কিন্তু খুব কান্না পাচ্ছে বলেদিলাম,,,তোমরা কেউ আমাকে ভালোবাসো না,,,
– শোনো মেয়ের কথা,,,আরে তুই তো জানিস আমার এই শহরে থাকতে ভালো লাগে না,,, আমি তো তোকে আমার সাথে করে নিয়েই যেতাম গ্ৰামে,,,কিন্তু আমার নাতিটাতো একা থাকবে ওই জন্য তোকে নিয়ে যাচ্ছি না,,,আর সব থেকে বড়ো কথা বাড়িতে কেউ থাকবে না এই সুযোগে বরের সাথে একটু বেশি বেশি করে সোহাগ করবি,,ভালোবাসবি,,,বলেই হাসলেন,,(পিসিমার কথা শুনে আশা হেসে চলে গেল কেননা ছেলে বৌয়ের এইরকম কথা শুনতে তার লজ্জা লাগছে,,সে জানে পিসিমা লাগাম ছাড়া তাই বলে শাশুড়ির সামনে বৌমাকে এই রকম বলবে,,,আর এইদিকে পিসি ঠাম্মামের কথা শুনে অনুপমা লজ্জায় পিসি ঠাম্মামকে জড়িয়ে ধরে বলে,,,)
– তোমার যত সব উল্টো পাল্টা কথা,,,এখন চলো তোমার ব্যাগ গুছিয়ে দি,,,আর শোনো পরের বার যখন আসবে আমার জন্য নাড়ু আর আচাড় করে নিয়ে আসবে,,,
– কেন রে তাড়াতাড়ি সু খবর দিবি নাকি??
– আবার শুরু করলে,,কথায় বলবো না তোমার সাথে,,,
__________________________________________
– বাইরে শুধু গাড়িঘোড়া আর মানুষের কোলাহল এই ব্যস্ত শহরের রাস্তায় রাস্তায়,,মুক্ত বাতাসে যেন ছড়িয়ে পড়েছে যানবাহনের ঐ বিষাক্ত কালো ধোঁয়া,,,অনুপমার এক মুহূর্তে মনে হল যেন এখানে শ্বাস নিলে ও মরে যাবে,,,
– এইভাবে বাইরে মাথা বার করে রেখেছো কেন?? এত তাড়াতাড়ি কি উপরে যাওয়ার ইচ্ছা হয়েছে???
– হঠাৎ এক ভরাট পুরুষালী কন্ঠস্বর কানে আসতেই অনুপমা চমকে ওঠে ও নিজের ভাবনা জগত থেকে বেরিয়ে আসে,,, তারপর সেই পুরুষালী কন্ঠস্বরের মালিকের দিকে তাকায়,,,
– অনুপমাকে এইভাবে তাকাতে দেখে অভ্র ড্রাইভ করতে করতেই বললো এমন ভাবে কেউ মাথা বার করে রাখে?? চোখে দেখতে পারছো না কত গাড়ি পাশ দিয়ে চলে যাচ্ছে,,,এক্ষুনি তো কোনো অঘটন ঘটে যেতে পারে,,,
– অভ্রের কথায় অনুপমা মাথা নিচু করে সরি বললো,,আসলে ও নিজের ভাবনায় এতটাই বিভোর ছিল যে কখন গাড়ির জানালার বাইরে মাথা চলে গেছে বুঝতেই পারিনি,,,,
– অনুপমা আর অভ্র ওদের মা বাবাকে এয়ারপোর্টে দিতে যাচ্ছিলো,,,কিছু সময় বাদে এয়ারপোর্টে এসে ওরা অপেক্ষা করে বোডিং পাসের জন্যে,,,
আশা-অনু আমার ছেলেটাকে দেখে রাখিস,,ও একটু বদমেজাজি কিন্তু ওর মনটা কিন্তু খুব ভালো মা,,ওর মনে অনেক ক্ষত আছে সেই গুলো কিন্তু তোকেই সারাতে হবে,,,,আমি জানি না কবে আসবো,,ওখানে না যাওয়া পযর্ন্ত কিছুই বলতে পারবো না,,,
-আশা অনুকে ডেকে এই কথা গুলো বলে বিদায় নিলো আর তখন থেকেই অনুর মনের মধ্যে একটাই প্রশ্ন ঘুরতে লাগলো যে মা যাওয়ার সময় কি বলতে চাইলেন,,আর এখনই বা কেন বললেন,,,
-চলো নাকি এইখানেই থাকার ইচ্ছা??(গম্ভীর হয়ে কথাটা বলে পার্কিং এরিয়ার দিকে যেতে লাগলো অভ্র)
অনু-ওও হ্যাঁ চলুন,,,(বলে সামনে তাকিয়ে দেখে অভ্র অনেকটা এগিয়ে গেছে,,তাই দেখে ও বলে ওঠে)
– ও ভগবান এবার আমার কি হবে?? এই খারুশ আমাকে একা পেয়ে যে কি করবে,,,,
__________________________________________
-এই বাড়ির সব দায়িত্ব এখন অনুর উপর গিয়ে পড়েছে,,এই দিকে সকাল থেকেই আশা অনেক বার ফোন করেছে অনু কি করছে?? খেয়েছে কিনা?? একা একা রান্নাঘরে যেন না যায় ইত্যাদি,,,আর অনুও অনেক বার ফোন করেছে বাবা কেমন আছে,,তারা ঠিক আছে কিনা?? ,,,,আর মুন্নী সে অনুর অবস্থা দেখে হাসছে,,,
অনু-এই মেয়ে হাসছো কেন??
-আচ্ছা বৌদিভাই তুমি এত তাড়াতাড়ি করছো কেন কাজ??আমি যতদূর জানি তোমার কলেজ আজকে নেই,,,আর দাদাভাই সেতো অনেক রাত করেই বাড়ি ফেরে,,,আর এখন তো দুপুর,,, রান্না তো প্রায় হয়েই এসছে,,,
-হ্যাঁ সেতো ঠিক বলেছিস,,,,আমার যে কি হয় মাঝে মাঝে,,,,আচ্ছা তুই টিভি দেখ,,আর যদি কিছু খেতে ইচ্ছে করে তো ফ্রিজে মিষ্টি, কেক আছে খেয়েনিস,,এখন তো বারোটা বাজে,,দুপুর ২টোর আগে আমার খিদে পাবে না,,তার থেকে বরং আমি ঘর বাড়ি গুলো পরিস্কার করি,,,
-আচ্ছা বৌদিভাই কোনো দিন শুনেছো বাড়ির কাজের মেয়ে বসে টিভি দেখছে আর বাড়ির বৌ কাজ করছে,,,তোমাকে একা একা করতে হবে না আমিও যাচ্ছি,,,
-উফফ তোর এই পাকা পাকা কথা এখন রেখে চল আমার সাথে,,,,,
-অনু আর মুন্নী নাওয়া খাওয়া ভুলে সারা দুপুর দুজনে মিলে গল্প করতে করতে ঘর পরিস্কার করে সব জিনিস পত্র গোছাতে লাগলো কিন্তু হঠাৎ,,
-মুন্নী ওই ঘরটার দরজা বন্ধ কেন রে??
-ওও ওই ঘরটা তো বন্ধ করাই থাকে,,
-ঠিক আছে তুই চাবি টা দে আমাকে,,, আমি একটু পরিস্কার করে দি,,,
-না বৌদিভাই ওইই ঘরে আমাদের কারোর যাওয়া অনুমতি নেই,,,ওই ঘরে শুধুমাত্র দাদাভাই যায়,,তা কখন যায় কেউ জানে না,,,ওই ঘর তোমার পরিস্কার করতে হবে না বৌদিভাই,,,ওই ঘরে যাওয়া সবার বারণ আছে,,,,
-(কি এমন আছে ওই ঘরে যে ভদ্রলোক কাউকে ঢুকতে পর্যন্ত দেয় না,,,ডালমে জুরুর কুছ কালা হে)তুই চুপ করে থাক,,,আর চাবিটা আমাকে দে,,,তোর দাদাভাই জানতেও পারবে না,,আর উনি তো আসবেন সেই রাতে,,,তুই দে,,,
-কিন্তু,,,
-কোনো কিন্তু না,,,আমি তোর দাদাভাই আসার আগেই চলে আসবো,,তুই ততক্ষণে এই দিকটা গোছাতে থাক,,,(এই বলেই অনু মুন্নীর কাছে থেকে চাবিটা নিয়ে সেই ঘরের দরজাটা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে)
-বাবা ঘরটাতে কি ধুলো,,,আর ঝুল,,মনে হয়না কয়েক বছরের মধ্যে এই ঘরে কেউ এসেছে,,,(কাশতে কাশতে কথা গুলো বলে শাড়ির আঁচল দিয়ে ভালো করে নাক মুখ ঢেকে নেয়,,)
-এটা কার ছবি,,,কি সুন্দর মেয়েটা,,,বাব্বা ভদ্রলোকের মুখে হাসি তাও আবার এই মেয়ের সাথে,,,কে এই মেয়েটি,,,এত দিনে তো একে আমি দেখিনি এই বাড়িতে বা মাও তো কিছু বলেনি,,থাক সে যেই হোক,, আমি এইঘরটা ভালো করে পরিষ্কার করে দি,,,ও বাবা এইদিকে কত ছবি,,,সব ওদের দুজনের,,, কি সুন্দর ঝাড়বাতি,,, কিন্তু এই গুলো এইভাবে কেন রাখা হয়েছে?? এত সুন্দর জিনিস গুলোই ধুলো পড়ে গেছে,,,,( কথা গুলো আপন মনে বলতে বলতে ঘরটা পরিষ্কার করতে লাগলো অনুপমা)
– আর এমন সময় এইদিকে অভ্র ফোনে কথা বলতে বলতে বাড়িতে ঢোকে,,,
-হঠাৎ অনু কিছুর শব্দে পুরো ব্ল্যাক হয়ে যায়,,(, হ্যাঁ আচমকা যদি কেউ সর্ব শক্তি দিয়ে ঝাড়বাতিটা উচুঁ করে ফেলে দেয়,,আর সেটা প্রকট শব্দ তুলে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে সারা ঘরময় তখন এই রকম পরিস্থিতির স্বীকার হতে হয় অপর পাশের মানবীটির)অনু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,কোথা থেকে কি হল সবকিছু বোধগম্য হওয়ার আগেই অভ্র ওর দুই বাহু শক্ত করে ধরে ঝাকিয়ে নিজের সামনে আনে,,,
– একটু আগে যখন অভ্র কথা বলতে বলতে উপরে উঠছিলো,,ঠিক তখন ওর পরিচিত ঘরটি খোলা থাকার দরুন বিষ্ময়ে সেইদিকে হেঁটে যায়,, আর গিয়ে দেখে অনুপমা সেই ঘরের মধ্যে আছে,,আর ঘরের সব জিনিসপত্র সবকিছু পরিষ্কার করছে,,সেটা দেখে রাগে নিজের হাত দুটো মুঠ করে নেয়,,হঠাৎ চোখ যায় দরজার দিকে,, আর সেখানে ঝাড়বাতি দেখে ওর এতক্ষণ কন্ট্রোল করা রাগটা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই দরজার সামনে থাকা ঝাড়বাতি টা নিয়ে ছুড়ে মারে অনুপমার সামনে,,,,
-তোমার সাহস কি করে হলো এই ঘরে আসার??এই ঘরে প্রবেশ করার permission তোমাকে কে দিলো?? tell me,,( অনুর হাত মুড়িয়ে চিৎকার করে বলে)
-,( অভ্র এমন ভাবে হাত দুটো ধরেছে সেই ব্যাথা ও অভ্রের রক্ত লাল চোখ দেখে ভয়ে নিশ্চুপ ভাবে শুধু চোখের জল ফেলছে অনু)
-কি হলো আমার কথার উত্তর কেন দিচ্ছো না??আমি যতদূর জানি তুমি বোবা নই,,,(অভ্রের চোখ গুলো লাল জবা ফুলের মতো হয়ে আছে যা যে কেউ দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে,,আর অনু নিজেকে যতই সাহসী ভাবুক না কেন অভ্রের এই স্বরূপ দেখে ও ভীষণ ভয় পেয়ে আছে)
-আসলে দাদাভাই ঘর পরিস্কার করছিলাম আমরা,,(উপরে হঠাৎ চিৎকার চেঁচামেচি শুনে নীচে থেকে দৌড়ে ছুটে আসে মুন্নী তারপর অভ্রের উদ্দেশ্যে বলে,,)
-তোকে আমি ডেকেছি,,??(ধমক দিয়ে)
– অভ্রের ধমক খেয়ে মুন্নী ও অনুপমা উভয়ই কেঁপে ওঠে,,, মুন্নী নিজেকে সামলে বলে,,,
– না দাদাভাই,,,
– তাহলে এখানে এসেছিস কেন??যা এখান থেকে,,
-কিন্তু দাদাভাই,,,(মুন্নী কে কথা শেষ না করতে দিয়ে অভ্র বলে)
-আমি কিন্তু তোকে যেতে বলেছি ,,(আবার ধমক দিয়ে)
-মুন্নী বাধ্য হয়ে নীচে চলে যায়,,,,,(মুন্নী চলে যেতেই অভ্র অনুপমার দিকে তাকিয়ে আবার বলে ওঠে,,)
-আপনি নিজেকে কি সত্যি সত্যিই এই বাড়ির বৌ মানে আমার wife ভাবছেন??যদি ভেবে থাকেন তো সেটা কিন্তু ভুল করছেন,,আমি সেদিনই বলেছি আজও আবার বলছি আমার বৌ হওয়ার যোগ্যতা আপনি রাখেন না,,,(চেঁচিয়ে কথা গুলো বলে হাতের পাশে থাকা ফুলদানি টা ছুড়ে মারে দেওয়ালে,,আর সেটাও বিকট শব্দে চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে ঝাড়বাতির অংশবিশেষের সাথে মিশিয়ে যায়,,, অনুপমা সেই শব্দে আর অভ্রের এইরকম আচরণে দ্বিতীয় বারের মতো আবারও ভয় পেয়ে যায়,, তার পর নিজেকে কোনোমতে সামলে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,,,)
-আ আ সলে আমি,,, (পুরো কথা শেষ করতে পারে না কারণ সব কথা গুলো গলায় দলা পাকিয়ে যাচ্ছে,,স্বরনালী দিয়ে বের হচ্ছে না)
-আমি আপনাকে কি বলেছিলাম সেটা নিশ্চই ভুলে যান নি,, তবুও আপনাকে মনে করিয়ে দেয়,,,আপনি কিন্তু এই বাড়িতে ছয় মাসের জন্য আছেন,,সুতরাং কখনোই আমার বৌ হওয়ার চেষ্টা করবেন না,,,আসলে ছোটলোক তো আর গায়ে লেখা থাকে না তার ব্যবহারে বোঝা যায়,,,(কথাগুলো বলেই অনুর হাতজোড়া ঝাড়া দিয়ে ছেড়ে দেয়)
– অভ্রের কথা গুলো শুনে নিঃশব্দে অনুর চোখ দিয়ে অনবরত জল গড়িয়ে পড়ছে,,,বুকের ভিতরে উঁকি দিচ্ছে একরাশ কষ্ট,,,,
-এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছেন কেন??যান এখান থেকে,,,আপনার ঐ মুখটাও দেখতে ইচ্ছা করছে না,,, আপনার উপস্থিতি আমার বিরক্তির কারণ হচ্ছে এই মুহূর্তে,,,,
– অভ্রের এমন কথা শুনে অনু আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে চলে যাওয়ার জন্যে দরজার দিকে পা বাড়ায় আর ঠিক সেই সময় অভ্র আবার ডাক দেয়,, ও চোখের জল টা মুছে সামনে ফিরে তাকায়,,
-শুনুন এই বাড়িতে যে কটা দিন আছেন চেষ্টা করবেন আমার সামনে না আসার,,, আর নিজের সীমানার মধ্যে থাকবেন,,,এখন যেতে পারেন,,,,
-অনু কিছু না বলে সেখান থেকে দৌড়ে গেস্টরুমে চলে যায়,,,
_________________________________________
-গেস্টরুমে এসে দরজা ভিতর থেকে লক করে বিছানায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ে অনু,,,তারপর গলা ছেড়ে কান্না করে আর নিজের মনে বকতে থাকে,,,
-আমি তো শুধু মাত্র ওই ঘরটা পরিস্কার করতে গিয়েছিলাম তার জন্য উনি আমাকে এই ভাবে অপমান করলেন,,,প্রতিটা পদে পদে উনি আমাকে অপমান করেন,,,আমি যেন উনার দু চোখের বিষ,,,না আমি আর এই বাড়িতে থাকবোনা,,কিন্তু যাবো টা কোথায়??এ ভগবান কোন পরিস্থিতির মধ্যে ফেললে আমাকে,,,আমারি ভুল এক মূহুর্ত্তের জন্য নিজেকে এই বাড়ির বৌ ভাবতে শুরু করেছিলাম,, ভালোই হলো উনি আমাকে মনে করিয়ে দিয়েছেন,,, এইসব কথা গুলো বলছে আর চোখের জল মুছছে,,এরই মধ্যে নিসার ফোন আসে,,অনু ঝাপসা চোখে একবার ফোনের দিকে তাকিয়ে জল মুছে,নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে ফোন রিসিভ করে,,,
-হ্যালো অনু
-হ্যাঁ বল,,
-কেমন আছিস??আর অভ্র দা কেমন আছেন?
-সবাই ভালো আছি তুই বল কেমন আছিস?
-ভালো,, কি রে তুই কাঁদছিস??
-কই না তো,,কেন??
– না গলাটা কেমন শোনালো,,,আমি একটা কথা বলবো অনু,,আমি কিন্তু তোর খারাপ চাইনা,,,
– হঠাৎ এইভাবে বলছিস কেন?? তুই বিনা সংকোচে বল,,,
– শোন অতীতকে মনে করে প্রতিনিয়ত কস্ট পাওয়ার চেয়ে বরং বর্তমান কে নিয়ে সুখী হওয়ার চেষ্টা করাটা কি খুব অন্যায়ের অনু??
-কি বলছিস তুই আমি কিছু বুঝতে পারছি না,,
-সত্যিই কি তুই বুঝতে পারছিস না??আসলে তুই বুঝতে চাইছিস না অনু,,,হৃদয়ের কথা ভেবে নিজেকে আর কত কষ্ট দিবি তুই?? ওর যদি ফেরার হতো এত গুলো বছরের মধ্যে কি ফিরতো না?? কেন নতুন সম্পর্কটা থেকে পালাতে চাইছিস?? কেন গুটিয়ে রাখছিস নিজের সব ভালোবাসা???
-কি বলছিস তুই??(কাঁদতে কাঁদতে)
-আমি ঠিকই বলছি,,,আমি যত দূর জানি অভ্র দা খুব ভালো একজন মানুষ,,,বর্তমান টাকে ভালোবেসে নিজের করে নে অনু,,,অতীতের জন্য বর্তমান টাকে খারাপ করিস না,,, শোন যা হয় ভালোর জন্যই হয়,,,হৃদয়কে তুই ভুলে যা অনু,,,অভ্রদার হাত ধরে সামনে এগিয়ে যা,,,পুরোনো স্মৃতি গুলোকে মুছে ফেল মন থেকে, জানি কাজটা সহজ হবে না,, কিন্তু পারতে তোকে হবেই,,, মনে নতুন অনুভূতি গুলোকে প্রবেশ করতে বাঁধা দিস না,,,ভালোবাস নতুন করে,, প্রেমে পড় নিজের স্বামীর তাহলে দেখবি হৃদয়কে মনে পড়লেও তোর কষ্ট হবে না,,,,
-নিশা,,
-আমি ঠিকই বলছি,,,জীবনে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হয় অনু,,,আর সেটা সময় থাকতে,,
-নিশা তুই কিছুই জানিস না,,,
-কি জানি না আমি,,,বল,,
-আমার এখন কোনো কথা বলতে ভালো লাগছে না ,,আমি রাখছি(বলেই নিশাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোনটা কেটে দেয় অনু)
_________________________________________
– নদীর স্রোতের মাধ্যমে যেমন এককূল ভাঙে ও এককূল গড়ে ঠিক তেমনই আজ এতগুলো বছরের নিজের মধ্যে চেপে রাখা কষ্টটা দমিয়ে রাখলেও দুপুরের ঐ ক্ষণিকের ঘটনার জন্য তা একেবারে লাভার মতো বেরিয়ে এসেছে,,, অভ্র হাতে থাকা বিয়ারের বতলে এক চুমুক দিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,,,,
– তুমি ভুল,,,, তুমি সত্যিই ভুল,,,তুমি কি ভেবেছো আমি র্দুবল হয়ে গেছি,you are wrong nila,, দেখো আমি শক্ত হয়ে গেছি,,,আগের থেকে অনেক শক্ত হয়ে গেছি,,,আগের সেই অভ্র চৌধুরী তোমাকে ভালোবেসে ছিলো তার সরল মন দিয়ে,,,আর এখনকার অভ্র চৌধুরী তোমাকে তার থেকে দ্বিগুণ ঘৃনা করে,,,,হ্যাঁ হ্যাঁ আমি ঘৃণা করি তোমাকে ঘৃণা,,,শুধু তোমাকে নয় তোমার মতো মেয়েদেরকে আমি ঘৃণা করি,,,, যারা টাকা ছাড়া কিছু বোঝে না,,,,যারা নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্যে সব কিছু করতে পারে,,,
– বিয়ারের বতলে শেষ চুমুক দিয়ে সেটা নদীর জলে ফেলে দিয়ে হাসতে হাসতে বলে,,,আমার এই হৃদয়কে এতটাই শক্ত করেছি যে এই হৃদয় তার কোমলতা হারিয়ে বহুদিন আগে পাথরে পরিণত হয়েছে,,, আর এর গভীরে পৌঁছনোর ক্ষমতা এখন আর কেউ রাখে না,,, এমনকি তুমিও রাখো না,,,,কিছুতেই না,,,,
__________________________________________
-বৌদিভাই চলো খাবে চলো,,,(মুন্নী)
-না রে ভালো লাগছে না,,,তুই খেয়ে নে,,, আচ্ছা তোর দাদাভাই খেয়েছে??
-না,,সে তো এখনো বাড়িতেই ফেরেনি,,,
-কি বলছিস এত রাত হয়েছে এখনো উনার বাড়ি ফেরার সময় হয়নি,,,
-বৌদিভাই একটা কথা বলবো??
-হ্যাঁ বল,,
– তুমি কি তখন কষ্ট পেয়েছো দাদাভাই এর ব্যবহারে??
– না তো,,আমি জানি উনি মন থেকে কিছু বলেননি,,
– একদম ঠিক ধরেছো বৌদিভাই,,,দাদাভাই খুব ভালো,, শুধু রেগে গেলে মাথার ঠিক থাকে না,,আর আমরা তো তার বিনা অনুমতিতে ঐ ঘরটা খুলেছিলাম বলো,,
– ঠিক আছে ঠিক আছে অত দাদাভাই এর হয়ে সাফাই দিতে হবে না,,,
– একটা কথা বলবো,,
-বল,,
-না তুমি এই ভাবে চিন্তা করছো কেন??দাদাভাই তো এখন প্রায় রাত করেই ফেরে ,,,আর এখন তো মাত্র দশটা বাজে দেখো কখন আসে,,
-(হ্যাঁ সত্যিই তো আমি কেন উনার জন্য চিন্তা করছি?আমি তো উনার উপর রেগে ছিলাম,, তাহলে কেন উনি এখনো বাড়ি ফেরেননি বলে চিন্তা হচ্ছে)
-বৌদিভাই কি হলো,,,
-ওও কিছু না,,চল দেখি তোর দাদাভাই কখন আসে,,,তুই খেয়ে নে,,অনেক রাত হয়ে গেছে,,,
____________________________________________
-রাত ১২টার সময় অভ্র বাড়ি ফিরে,,,ড্রয়িংরুমে আসতেই দেখে রান্নাঘরে আলো জ্বলছে,,,
অভ্র-(কি ব্যাপার রান্নাঘরে এখনো আলো জ্বলছে,,,)মুন্নী মুন্নী,,,
-হ্যাঁ দাদাভাই বলো,,
-খেয়েছিস তুই?
-হ্যাঁ অনেক আগে,,,,,
-ওও,,তাহলে জেগে কেন আছিস??
-আসলে বৌদিভাই রান্নাঘরে,,, তুমি ফ্রেশ হয়ে খেতে এসো
-ঠিক আছে আসছি আমি,,,বলে নিজের ঘরে চলে যায় অভ্র,, তারপর ফ্রেস হয়ে ডাইনিং রুমে গিয়ে দেখে টেবিলে খাবার সাজানো আছে,,,
অভ্র -(এইভাবে তো মুন্নী সাজাতে পারে না,, তাহলে কি,,একটু রান্নাঘরে উঁকি মেরে দেখে অনু পিছন ফিরে কিসব কাজ করছে,,)মুন্নী মুন্নী,,
-হ্যাঁ দাভাই বলো,,,
-তোর বৌদিভাই খেয়েছে??
-না,,আমি অনেক বার বলেছিলাম খেতে,,কিন্তু ধমক দিয়ে আমাকে বারণ করলো,,
-ঠিক আছে তুই যা,,(বলেই খাওয়া শেষ করে অভ্র উপরে চলে যায়)
___________________________________________
,,, প্রায় আধা ঘন্টা পর অভ্র অফিসের কিছু ফাইল পত্র স্ট্যাডিরুমে রাখতে গিয়ে দেখে যে অনু খাচ্ছে,,আর ওর পাশে বসে মুন্নী নিজের মতো বকবক করেই যাচ্ছে,,,অভ্র সেটা দেখে ফাইল পত্র গুলো নিয়ে স্ট্যাডিরুমে না গিয়ে,নিজের ঘরের দিকে চলে যায়,,,
চলবে…..
(অবশ্যই রিয়্যাক্ট ও গঠনমূলক মন্তব্য করবেন,,, কপি পেস্ট করবেন না।)