#রাগে_অনুরাগে
#কলমে সৌমিতা
#পর্ব- ৬
-কর্তামা তুমি কেন এত চিন্তা করছো বলোতো??বৌদিভাই ঠিক পারবে,,আর তুমি তো জানো না এতদিন তো বৌদিভাই রান্না করেছে,,,(কথাটা বেশ জোড়েই বলল মুন্নী)
-ওওও তার মানে তুই আমার মেয়েটাকে দিয়ে রান্না করিয়েছিস,,আমি না তোকে যাওয়ার সময় বারবার করে বলে গিয়েছিলাম যে অনুকে রান্নাঘরে যেতে দিবি না,,,(আশা)
-আরে না না মা, মুন্নী তো তোমার সাথে আড্ডা মারছে,,,আমি তো মাঝে মাঝে রান্না করতাম তোমার ছেলেকে খাওয়ানোর জন্য,,(চোখ টিপে মুন্নী কে ইশারা করে অনু)
– ও তোদের প্রেম তাহলে ভালোই জমে উঠেছে বল?? তাহলে আমরা বাইরে গিয়ে বেশ ভালোই হয়েছে তোদের জন্যে,,, চিন্তা করিস না দু-মাস পরে আবার যেতে হবে,,, তখন যেন তোদের প্রেমটা আরও মাখোমাখো হয়,,,(কথা গুলো বলেই হেসে ফেললেন আশাদেবী)
– শাশুড়ির মুখে এমন কথা শুনে অনু লজ্জায় লাল হয়ে যায়,, কোনো মতে কথা ঘোরানোর জন্যে বলে,,, মা তুমি বসো আমি বাবার জন্যে ফলের জুসটা করে দিচ্ছি,,,(মিক্সি টা চালিয়ে দিলো)
– শুধু জুসটুকু করেই রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে আয়,,, তোকে আর রান্না করতে হবে না সর আমি করছি,,,মুন্নী এই জুসটা তোর কর্তাবাবাকে দিয়ে আয়,,,(আশা)
-মা আমি পারবো,,,আর তাছাড়া বাবা আর তোমার ছেলে তো কালো জিড়ে দিয়ে ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল পছন্দ করে,, আমি পারি ওটা রান্না করতে,,,আর তোমার জন্যে ইলিশ পোলাও রান্না করা হয়েগেছে অনেক আগে,,শুধু ঝোলটাই বাকি আছে,, রান্নাটা করি একটু প্লিজ মা,,,(অনু কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো আর তাই দেখে আশা দেবী হেসে বলেন)
-অনু আমি কিন্তু তোকে বারণ করেছি,,তবুও তুই এতো রান্না করতে গেলি কেন?? আর আবার বলছিস কালো জিড়ে দিয়ে ইলিশ মাছের পাতলা ঝোল করবি???
-মা করতে দাও না,,,তোমার বৌমা ওটা বেশ ভালোই রান্না করে,,,(বাড়িতে ফিরে মা আর অনুর কথা শুনে পিছন থেকে বলে উঠল অভ্র,,আর অভ্রের কথা শুনে আশা পিঞ্চ করে বলে,,,)
-আচ্ছা তা তোর বৌ আর কি কি ভালো পারে অভ্র,,,??আমাকে একটু বলতো বাবা,,,না মানে আমি তো এইকদিন ছিলাম না এখানে তাই,,,
-এবার মায়ের কথা শুনে একটু লজ্জা পেয়ে গেল অনু আর অভ্র দুজনেই,,,এই রকম পরিস্থিতি থেকে বেরোনোর জন্যে অভ্র আশার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,,,
-মা তুমি বসো,,আমি ফ্রেস হয়ে আসছি,,,তারপর কথা হবে,,,(এই বলেই আর এক মূহুর্ত না দাঁড়িয়ে উপরে চলে যায় অভ্র)
-এই ভাবেই আমার ছেলেটাকে ভালো বাসিস অনু,,আমি আর্শীবাদ করছি দেখিস তোরা অনেক সুখী হবি,,,(অনুর মাথায় হাত রেখে আশা কথা গুলো বলে আর অনু আশার বুকে মাথা রেখে বলে,,)
-রাখবো মা,,,এবার চলো খাবে,,,মুন্নী বাবাকে ডেকে আন,,,
_________________________________________
-রাতে খাওয়ার সময় টেবিলের উপর নিজের পছন্দের ইলিশের ঝোল আর পোলাও দেখে সুনীল বাবু আশাদেবীর উদ্দেশ্যে বলেন,,
– আশা আমি কি সত্যি দেখছি নাকি ভুল??
– কেন কি হয়েছে?? আর কি বলছো এসব??
– না মানে এই পোলাও আর ইলিশ,,,
– এইগুলোর একটাও আমি রান্না করিনি,,,এইগুলো সব করেছে তোমার বৌমা,,
– ও তাই তো বলি তুমি তো ভীষণ নিষ্টুর একজন মহিলা,,,হঠাৎ আমার প্রতি এত সদয় হওয়ার কথা না তো,,,,
– দেখ অভ্র তোর বাবা আমাকে কি বলছে,,,বলি এতদিন তো তোমাকে আমি সেবা করলাম এই প্রতিদান পাওয়ার জন্য????
– ও বাবা তুমি আর কিছু বলোনা তো ,,দেখছোতো মা রেগে যাচ্ছে,,,আর অনেক রাত হয়েছে তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও এরপর ওষুধ গুলো তো খেতে হবে,,,আর মা তুমিও খেয়ে নাও,,(অনু)
– দেখেছো তো আশা আমার এই মেয়ের কিন্তু সব দিকেই নজর আছে,,,অভ্রের জন্যে কিন্তু আমি যেই সেই মেয়ে বেছে আনিনি,,,,,কি অভ্র আমি ঠিক বলছি তো??(সুনীল)
-এতক্ষণ ওদের কথা চুপচাপ শুনছিলো অভ্র আর নিজের পছন্দের মাছ বেছে বেছে খাচ্ছিলো,, হঠাৎ বাবার এমন প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় অভ্র আর তখনই এক বিপত্তি ঘটলো,,,,,অভ্র আহঃ করে চিৎকার দিলো,,,যার দরুন ডাইনিং টেবিলে উপস্থিত সবাই ভড়কে গেল ,,,,,,
– কি হয়েছে খোকা??গলায় কাঁটা ফুটেছে?? আমি তোর বাবা কে বারবার বলি যে খাওয়ার সময় অত কথা বলো না,,কিন্তু না উনি শুনলে তো আমার কথা,,,,(আশা)
– দেখি দেখি বড়ো হা করুন,,,অনুপমার এমন কথায় অভ্র হা করে,, আর তখন অনু শুকনো ভাতের দলা অভ্রের মুখে পুরে দিয়ে বলে ,,”একদম চিবাবেন না,,ওটা গিলে ফেলুন,, দেখবেন কাঁটা ভাতের সাথে চলে যাবে,,,অনুর কথা মতো অভ্র সেটাই করলো আর তারপর জল খেলো,,, তাই দেখে অনু আবার জিজ্ঞাসা করলো,,,
– গিয়েছে কাঁটা???
– না,,মনে হচ্ছে এখনো ফুঁটে আছে,,(কথাটা বলেই আরও এক গ্লাস জল খেলো অভ্র)
– মুন্নী দেখ তো রান্না ঘরে ফলের ঝুড়িতে কলা আছে,,আমাকে একটা এনে দেতো,,,,(অনু)
– কলা কি হবে?? আমি ওসব খাবো না,,,আহঃ ,,লাগছে,,,(অভ্র)
– মি.চৌধুরী আপনি চুপ করে থাকুন,,, তারপর মুন্নীর কাছ থেকে কলা নিয়ে সেটার খোসা ছাড়িয়ে অর্ধেক টা অভ্রের মুখের মধ্যে দিয়ে বলে,,,এটা এক নিঃশ্বাসে গিলে নেবেন,,চিবাবেন না,, ,,নিন,,,অভ্র তবুও খায় না,,অনু আবার একটা মৃদু ধমক দেয় অভ্রকে,, আর অভ্র তখন মুখের মধ্যে থাকা কলার অংশটা গিলে নেয়,,,
– এখনো কি কাঁটা আছে মি.চৌধুরী??
– না চলে গেছে,,,
– ঠিক আছে এবার খান,,, আর শুনুন ভালো করে দেখে খাবেন,, আপনি কি এখনো বাচ্চা যে মাছটা ঠিক করে বেছে খেতে পারেন না,,, সরুন আমিই বেছে দিচ্ছি,,,
– তার দরকার নেই,,, আমি নিজেই পারবো,,,
– সে কত পারবেন আমার জানা আছে,,,এখন কথা কম বলে চুপচাপ খেয়ে নিন( কথা গুলো বলে অভ্রকে মাছ বেছে দিতে লাগলো,,,এতক্ষণ এদের কাহিনী সুনীল আর আশা দুজনেই অবাক হয়ে দেখছিলো,,তারপর একে অপরের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে চোখের ইশারায় বোঝালো যে দুজনের মধ্যে প্রেমটা বেশ ভালোই জমছে,,, তাদের সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল)
– তারপর খেয়ে যে যার ঘরে চলে গেল,,, অভ্র ওর বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলে উপরে চলে গেল,,, আর এই দিকে মুন্নী আর অনু রান্নাঘরের সব কিছু গুছিয়ে ঘরে চলে গেল,,,
_________________________________________
-অনু ঘরে এসেই একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেল,,সারা সন্ধ্যে মিলে রান্নাঘরে টুকিটাকি কাজ আর রান্না করে ও বেশ ক্লান্ত,, একটা শাওয়ার না নিলে রাতে ঘুম আসবে না,,
-কিছুক্ষণ পরে ওয়াশরুম থেকে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে অনু,,তারপর বিছানা থেকে একটা বালিশ আর চাদর নিয়ে সোফায় রাখে,,আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ছেড়ে রাখা চুলটা বাঁধার জন্যে ক্লীপ খুঁজতে থাকে,,কেননা ওর যতদূর মনে আছে ক্লীপ গুলো কাল সকালে এখানেই রেখেছিলো,,,
-অভ্র এতক্ষন ল্যাপটপে কাজ করছিল,,, হঠাৎ চোখ যায় অনুর দিকে,,,,অনু একটা পাতলা লাল রঙের শাড়ি পড়ে আছে,,, চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে,,সেটাকে সামলাতে ব্যস্ত অনু,,,মাঝে মাঝে অনুর মুখে বিরক্তি ভাব ফুটে উঠছে,,আর এই দিকে দুটো চোখ মুগ্ধ হয়ে দেখছে সব কিছু,,,
-চুল গুলোকে কোনো রকমে হাত খোঁপা করে অনু,,তারপর আবার ক্লীপ খোঁজায় মনোযোগ দেয়,,হঠাৎ অনুর চোখ যায় আয়নার দিকে আর দেখে আবির হা করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,,কিছু সময়ের জন্য আয়নায় দুজনের চোখাচোখি হলে অনু সাথে সাথেই চোখ নামিয়ে নিয়ে সোফার দিকে এগোতে থাকে,,,,মনে মনে বলে ক্লীপ পরে খুঁজবে,,,
– অভ্রের চোখ হঠাৎ সোফার উপরে পড়তেই অনুকে বলে “সোফার উপরে বালিশ চাদর কেন অনু”???
– অভ্রের মুখে এমন কথা শুনে অনু মুচকি হেসে বলে,,মি.চৌধুরী ভয় পাবেন না এইখানে আপনাকে শোয়ার জন্য বলবো না,,, আমি শোবো,,,তাই বালিশ আর চাদর এনে রেখেছি,,,
-তার কি কোনো দরকার আছে অনু??
-মানে?? মি.চৌধুরী আমি ঠিক বুঝলাম না,,,আপনি কি বলতে চাইছেন???
-মানে টা খুবই সহজ অনু এত বড়ো বিছানায় দুজনের ভালো ভাবেই হয়ে যাবে সেটা আমি মনে করি,,,,
-না না মি.চৌধুরী আমাকে নিয়ে অত ব্যস্ত হবেন না,, আমার এখানে শুতে কোনো অসুবিধা হবে না,,,,
-অনু আমি কিন্তু তর্ক পছন্দ করি না(বলেই অনুকে কোলে তুলে নেয় অভ্র)
-আচমকা এইভাবে কোলে নেওয়ায় দুজনেই যেন একটা ঘোরের মধ্যে চলে যায়,,,পাড়ি দেয় অন্য জগতে,,, অনুকে কোলে নেওয়ার ফলে পেটের কাপড় টা একটু সরে গিয়ে মেদহীন পেটের বৃত্তাকার নাভি বেড়িয়ে যায় যা অভ্রকে আরো আকৃষ্ট করে তোলে,,, আর অভ্রকে এইভাবে এতকাছে থেকে দেখে অনুর মনে হচ্ছে ওর শরীর হালকা হয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত,, হৃদস্পন্দন টা যেন ক্রমশই বেড়েই চলেছে,, একটা আলাদা শিহরণ কাজ করছে অনুর মধ্যে,,,হঠাৎ মনে হচ্ছে দমবন্ধ হয়ে যাবে,,,,
অনু-এই রকম ভাবে তাকিয়ে থাকবেন না মি.চৌধুরী,,আমার নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে,,,মনে হচ্ছে আমি মরে যাবো,,,আমার এই রকম কেন হচ্ছে,, মনে হচ্ছে হৃদপিণ্ডটা এক্ষুনি বেড়িয়ে আসবে,,,,(মনে মনে)
– উফফ এই মেয়েটা আমাকে আবার পাগল করে দেবে,,,কিছুতেই আজ আর নিজেকে কনট্রোল করতে পারছি না আমি,,,,(মনে মনে এই সব ভাবছে অভ্র)
-অনুকে বিছানায় শুইয়ে দেয় অভ্র,,আচমকা শোয়ার ফলে যেমন তেমন করে বেঁধে রাখা চুলের খোঁপাটা খুলে যায় অনুর যার দরুন বেবি চুল গুলো ওর মুখের উপর আছড়ে পড়ে,,,সাথে সাথেই বিরক্তিতে হাত দিয়ে চুল গুলো সরাতে উদ্দ্যত হয় অনু কিন্তু অনুকে বাঁধা দিয়ে অভ্র অনুর মুখের উপরে আসা চুল গুলো নিজের হাত দিয়ে সরিয়ে কানের লতিতে গুঁজে দেয়,,,
– আচমকা অভ্রের এইরকম স্পর্শ পেয়ে অনু মৃদু কেঁপে ওঠে,,,শরীরে বয়ে যায় উত্তেজনার ঢেউ,,, নিজেকে সামলে কোনোমতে সামনে তাকাতেই দেখে বিপরীতে একজোড়া চোখ অপলক দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে,,, ক্ষণেই দুজোড়া আঁখি যুগল মিলিত হয় এক সমান্তরাল ঘোর লাগানো দৃষ্টিতে,,,,, এইভাবে অনেকটা সময় পার হয়ে গেলেও কেউ তার দৃষ্টি সরিয়ে নিচ্ছে না,, দুজনেই আজ মেতে উঠেছে দৃষ্টি বিনিময়ের খেলায়,,হয়তো দুজনেই আজ একে অপরের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছে,,,
-আজ তো উনার ছোঁয়াতে আমার খারাপ লাগছে না,,, একবারের জন্যও তো হৃদয়ের কথা মনে পড়ছে না,,,ভেসে আসছে না এই চোখে হৃদয়ের মুখ,,,আজকে কেন উনার পরশ পেতে ইচ্ছা করছে,,কেন মনে হচ্ছে এই পুরুষের হাতে নিজেকে সপে দিলে ভুল কিছু করবো না,,,, তাহলে কি আমি উনাকে ভালো বেসে ফেলেছি??(মনে মনে এইকথা গুলো ভাবছে অনু)
– অভ্র কি করছিস তুই ,,,,কনট্রোল ইউর সেলফ,,অনু কি ভাবছে তোকে,,,,তুই এভাবে কারোর প্রতি দুর্বল হতে পারিস না এত সহজে,,,(মনে মনে কথা গুলো ভেবে অনুর কাছে থেকে সরে এসে লাইট অফ করে পাশ ফিরে শুয়ে পড়ে অভ্র,,,)
-অনু কিছুটা অবাক হয় অভ্রের এই রকম আচরণে,,,অজান্তেই ওর চোখে জল চলে আসে,,,নানা রকম চিন্তা মাথায় নিয়ে এক সময় ঘুমিয়ে পড়ে,,,,
___________________________________________
-সকালে ঘুম থেকে উঠে অনু দেখে অভ্র নেই ঘরে,,,তারপর ফ্রেশ হয়ে নীচে নেমে শোনে অভ্র আজ অনেক সকালেই বাড়ি থেকে বেরিয়েছে,,,,সেটা শুনেই ওর মন খারাপ হয়ে গেল,,,
(দুপুরের দিকে)
মুন্নী-বৌদিভাই মন খারাপ করছো কেন??
-না এমনি,,,তোর দাদাভাই কে অনেক বার কল করেছি কিন্তু উনি একবারও রিসিভ করেননি,,
– ওও তাহলে আর কল করোনা দাভাই কে,,মনে হয় মিটিংয়ে আছে??
– হমম না দুপুরে কিছু খেয়েছে কি না তাই,,,ঠিক আছে,,, উনি ফ্রি হলে নিশ্চয়ই কল করবেন,,,,
– হমম আচ্ছা এখন চলো খাবে,,,কর্তামার খাওয়া হয়ে গেছে,,,,
– আচ্ছা মুন্নী তুই আমাকে একটা প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবি??
– কি প্রশ্ন বৌদিভাই??
– আগের দিন ওঘরে কার ছবি ছিল?? মানে ওই মেয়েটা কে?? যার সাথে তোর দাদাভাই হেসে হেসে ছবি তুলেছিলো?? না মানে আমি তো এতদিনে উনাকে তেমন মনখুলে হাসতে দেখিনি তাই,,,,
-,,,(নিশ্চুপ)
– কি হল বল?? আর ওই ঘরে যাওয়ার জন্য কেন সেদিন রেগে গেলেন??? আমি জানি তুই এসবের কারণ জানিস,,,,তাহলে প্লিজ আমাকে বল,,,
-আসলে বৌদিভাই ওঘরে ঢোকা দাদাভাই পছন্দ করে না,,,তাই,, তাই রেগে গিয়েছিল সেদিন,,,
– হ্যাঁ মুন্নী আমি তো সেটাই জিজ্ঞাসা করছি,,, উনি সেদিন কেন এত রেগে গেলেন?? আর ওঘরে কাওকে ঢুকতে দেননা কেন,,,
– কারণ টা আমি বলতে পারবো না বৌদিভাই,, তুমি চলো খাবে,,,
– মুন্নী আমার দিব্বি,,, তুই আমাকে সত্যিটা বল,,,,
– ওটা ওটা নীলা দির ঘর,,,,
-নীলা,,কে এই নীলা?? আমি তো কোনোদিন নাম শুনিনি,,, তুই আমাকে সবটা বল,,,,
– ওইঘরে যার ছবি তুমি দেখেছো,,ওটা নীলাঞ্জনা দির ছবি,,,দাদাভাই এর কলেজ ফ্রেন্ড ছিল নীলাঞ্জনা দি। তাই আমরা সবাই নীলা দি বলে ডাকতাম,,,
– মানলাম নীলা বলে মেয়েটি তোর দাদাভাই এর বান্ধবী ছিলো,, তাই বলে এই বাড়িতে তার নামে একটা ঘর বরাদ্দ করা থাকবে??
-আসলে বৌদিভাই নীলাদিকে দাদাভাই খুবই ভালো বাসতো,,মানে ওরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসতো এমনটাই আমরা জানতাম,,,এমনকি বিয়েও ঠিক হয়েছিলো,,,কিন্তু,,
-কিন্তু কি??প্লিস মুন্নী বল আমার জানা খুব দরকার,,,
-আসলে নীলা দি দাভাই কে কোনো দিন ভালোই বাসেনি,,,দাভাই এর সাথে মিশতো দাদাভাই এর টাকার জন্য,,, এমনকি দাদাভাইকে লুকিয়ে দাদাভাই এর এক বন্ধুর সাথে সম্পর্ক ছিল তার,,, আর যখন কর্তাবাবার ব্যবসায় লস হয়,,,এইসব বাড়ি নিলামে উঠে যায়,, তখন দাদাভাই তার পাশে নীলাদিকে পাইনি,,, একদিন নাকি হুট করে দাদাভাই কে নীলা দি ফোন করে বলে সে আর এই সম্পর্ক রাখতে চাইনা,,,এমনকি দাদাভাই কে বিয়েও করতে পারবে না,,,
– তারপর,,,তারপর কি হলো মুন্নী?? তোর দাদাভাই কি করলো??
– দাদাভাই তো খুব ভেঙে পড়েছিল,,, একদিকে ব্যবসায় লস,,,তার উপরে কর্তাবাবা প্রচুর দেনায় জর্জরিত হয়ে গিয়েছিলেন,, আর একদিকে নীলাঞ্জনা দি মাঝপথে হাত ছেড়ে দিয়েছিল দাদাভাই এর,,,তখনকার কথা ভাবলেও ভীষণ কষ্ট হয়,,, না জানি তখন দাদাভাই কি করে নিজেকে সামলে নিয়ে ছিল,,, আর তো একদিন,,,
– কি একদিন???
– একদিন একটা পার্টিতে দাদাভাই যায় আর সেখানে গিয়ে দেখে নীলাঞ্জনা দি দাদাভাই এর সেই বন্ধুটার সাথে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় আছে,,আর ওদের বন্ধুদের কাছ থেকে জানতে পারে সামনের মাসে ওরা দুজন বিয়ে করছে,, সেটা জানতে পেরে দাদাভাই ভীষণ ঝ্যামেলা করে সেখানে তারপর নিজের গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে আসে,,
– তারপর কি হল মুন্নী??
– কি আর হবে,,,নীলাদির বিয়ে হয়ে যায় আর তার পরের মাসেই নাকি বিদেশে চলে যায়,,,,
– তারপর তোর দাদাভাই এর কি হলো মুন্নী??(চোখের জল মুছে)
– তারপর সেই হাসিখুশি মানুষ টা আর সেইরকম থাকলো না,,জানো বৌদিভাই আগে কিন্তু দাদাভাই একদম হাসিখুশি থাকতো সব সময়,,, কিন্তু ওই সময় এত বড়ো বড়ো আঘাত আর নিতে পারেনি দাভাই,,, আর সেইখান থেকেই দাদাভাই এই রকম হয়ে গেছে,, নিজেকে সব সময় কাজের মধ্যে রাখতো,,, কর্তাবাবার ব্যবসাটাকে আবার আগের জায়গায় ফিরিয়ে আনলো,,, একটার পর একটা কোম্পানি কিনতে লাগলো,,,দিনে দিনে মানুষটা পাথরে পরিণত হয়ে যাচ্ছিলো,,,আর আমরা সবাই সেটা চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছিলাম,,,কর্তামা তো খুব কাঁদতো,,,,তোমাকে বিয়েটাও করতে চাই নি কিন্তু বাবা আর মার কথা ফেলতে পারেনি দাদাভাই,,,(মুন্নীর কথা গুলো শুনে অনুর চোখ থেকে আবার দু ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ে)
-আচ্ছা মুন্নী ওই ঘরে যা যা জিনিস আছে সেটাকি সব নীলার???
-হ্যা বৌদিভাই,,,আচ্ছা আমি আসছি,,তুমি চিন্তা করো না,,, দাদাভাই চলে আসবে হয়তো একটু দেরি হবে,, তুমি এসো,,,খেয়ে নাও,,,,(বলেই মুন্নী চলে গেল)
-ওই জন্যে কাল কাছে এসেও আসতে পারেননি আপনি মি.চৌধুরী,, আমি বুঝি ভালো বাসার মানুষকে না পেলে কি হয় মনের মধ্যে,,, কালকের ব্যবহারে আর আজ সব সত্যিটা জানার পরে আমি বুঝতে পেরেছি যে আপনি এখনো নীলাঞ্জনাকে ভালোবাসেন,,ভুলতে পারেননি তাকে। আর তো বেশি দিন নেই ছয়মাস শেষ হলেই আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাবো,,,, তারপর আপনি মুক্ত হয়ে যাবেন,,,আমি হয়তো মিথ্যে মায়ায় জড়াচ্ছিলাম নিজেকে,,,,ভাগ্যিস মুন্নী বললো নাহলে তো আবার আমার মনটা ভেঙ্গে যেত তখন আর নিজেকে সামলে নিতে পারতাম না,,,, আমি কত বড়ো বোকা,,,কালকের পর থেকে আমি এটাই ভেবে যাচ্ছি যে আপনি হয়তো আমাকে ভালো বাসেন,,,ভগবান আমার সাথেই কেন এমনটা হয় বলতে পারো??দ্বিতীয় বারের মতো তো নিজের জীবনটাকে সুযোগ দিতে যাচ্ছিলাম আমি,,,কিন্তু তা হওয়ার আগেই সব শেষ হয়ে গেল,,,, আমার এত কেন কষ্ট হচ্ছে আজকে,,,,না আর নিজেকে দুর্বল করলে হবে না,,,,( কথা গুলো আপনমনে বলেই নিজের চোখের জল মোছে অনু)
চলবে….
(পেজের রিচ কমে যাওয়ার কারণে হয়তো সবার কাছে গল্প পৌছাবে না,,,যারা যারা পড়বেন তারা সবাই রিয়্যাক্ট ও কমেন্ট করবেন,,,, আপনাদের মন্তব্য আমাকে লেখার প্রতি আগ্ৰহ করে তোলে। কপি পেস্ট করবেন না,,,, আর এরপরের পর্ব গুলোতে কিন্তু দারুণ চমক আছে আপনাদের জন্যে,,, সুতরাং সবাই লাইক ,কমেন্ট ও সেয়ার করবেন,,,)