স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ #সাদিয়া_জাহান_উম্মি #পর্বঃ৫১

2
1107

#স্নিগ্ধ_কাঠগোলাপ
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি
#পর্বঃ৫১
‘ আ..আসলে হয়েছে কি জায়ান বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।’ থেমে থেমে বলল সুহানা সাখাওয়াত। অবিরত ঘামছে সে।এই একটা লোককে সে খুবই ভয় পায়।ভীষণ ভয় পায়।
এদিকে সুহানার এই কথাটা শুনে যেন আগুনের ফুলকার ন্যায় জ্বলে উঠল ফোনের অপরপাশের ব্যাক্তি। হুংকার ছুড়ে বলল,
‘ হোয়াট?জায়ান কোথায় যাবে?তোরা আবার কি করেছিস?প্রথমে সাথীকে আমার কাছ থেকে লুকিয়ে রেখেছিস। শুধু ওর জন্যে আমি তোদের বাঁচিয়ে রেখেছি।এখন আবার জায়ানের সাথে কি করেছিস তোরা?’

লোকটার চিৎকারে সুহানা সাখাওয়াত থরথর করে কেঁপে উঠল।বহু বছর হলো এই লোকটার কথা ভুলেই বসেছিলো সুহানা।আজ এতো বছর পর তাকে কল করে কি বড্ড ভুল করে ফেলল।কিন্তু এ ছাড়া যে উপায় নেই।জায়ানকে এখন সে ছাড়া আর কেউ খুঁজে পাবে না। জায়ান যেকোনোভাবে ফিরে আসলেই ওকে আহানার সাথে জোড় করে বিয়ে দিবে। এই আহানা মেয়েটাও একটা ভেজাল।তবে ওকে নিয়ে সমস্যা নেই।রাশেদ শেখ কিছু একটা ব্যবস্থা করে আহানাকে মানিয়ে নিবে। প্লান অনুযায়ী আহানাকে দিয়ে প্রোপার্টির কাগজে সাইন করিয়ে নিবে সুহানা।
কিন্তু তার আগে ফোনকলে থাকা ব্যক্তির সাথে বোঝাপড়া করতে হবে।সুহানা শুকনো ঢোক গিলল।
নিজেকে শান্ত রাখার চেষ্টা করতে করতে বলে উঠল,
‘ জায়ানের বউ! আরাবী মা’রা গিয়েছে।স্ত্রী ম’রে যাওয়ার শোকে সে ঘর বাড়ি ছেড়ে চলে গিয়েছে।’

অপরপাশের ব্যক্তি এই কথা শুনে যেন আরও রেগে গেলো।হিংস্রাত্মক কণ্ঠে বলল,’ জায়ানের স্ত্রী কিভাবে মা’রা গেল?হোয়াট দ্যা হেল।এসব কথা আমার কাছে কেন পৌছায়নি।’

সুহানার এমন একটা মুহূর্তেও হাসল।মনে মনে বলল,
‘ তুমি যতোই পাওয়ারফুল হও না কেন?আমিও কোনো অংশে কম না।এই কয়েকটা বছরে আমিও অনেক কিছু হাসিল করেছি।আমার জন্যে কাজ করার মানুষের অভাব নেই।টাকা হলে সব পাওয়া যায়।এইযে তুমি এসব বিষয়ে কিছুই জানো নি।কারন আমি তোমায় জানতে দেয়নি।আজ তোমার সাহায্য শুধু এই জায়ানের কারনে নিচ্ছি।ইন্টারন্যাশনালভাবে তোমার যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো।আফটার ওল সিঙ্গাপুরের একজন নাম করা মা’ফিয়া তুমি।’

মনের কথা মনেই রাখল। কণ্ঠে খানিকটা দুঃখের আঁচ এনে বলে উঠল,
‘ প্লিজ তোমার তো অনেক ক্ষমতা।আমার ছেলেটাকে খুঁজে বের করে দেও।’

অজ্ঞাত লোকটি চিবিয়ে চিবিয়ে বলল,
‘ কুমিরের কান্না বন্ধ কর।আমি স্পষ্ট বুঝতে পেরেছি।জায়ানের স্ত্রীকে মা’রার পেছনে তোর হাত আছে। আমি ঘাসে মুখ দিয়ে চলি না সুহানা।’

সুহানা ন্যাকাসুরে বলে,’ বাহ! তোমার মুখে আমার নামটা শুনতে এখনও সেই আগের মতোই লাগে।’
‘ একদম ন্যাকা সাজবি না। আমি তোকে খু’ন করে ফেলব।অনেক ছাড় দিয়েছি তোকে আর রাশেদকে।তোদের কুকির্তী জেনেও আমি চুপ করে থেকেছি এতোগুলো বছর।’

সুহানা সাখাওয়াত বাকা হাসল।বলল,
‘ তোমার সাথী ডার্লিং যে আমার কাছে বন্দি। তুমি আমাকে কিছু করবে মানে তোমার সাথীও ওখানে শে’ষ।’
‘ বড্ড পস্তাবি সুহানা।অনেক বড়ো ভুল করছিস তুই।’
‘ আহা! তুমি আমায় কেন ভালোবাসলে না।সবাই কেন ওই সাথীকে নিয়ে এতো আহ্লাদ করে।আমি জাস্ট নিতে পারি না।বুড়ো হয়ে গিয়েছ।তাও কেন এখনও সাথীকে ভুলোনি তুমি।আমার মাঝে কিসের এতো কমতি ছিল বলতে পারো?আমায় কেন ভালোবাসলে না?’

সুহানার চোখে অশ্রু জমল।এই একটা লোককে ভালোবেসে সুহানা কতোটা নিচে নেমে এসেছে।হাহ্! তবে সুহানা চোখের অশ্রুকে পাত্তা দিলো না।দ্রুত তা মুছে ফেলল।এদিকে অজ্ঞাত লোকটি সুহানার কথাকে তাচ্ছিল্য করে বলে,
‘ ভালোবাসা কি তা তুই এখনও জানিসই না সুহানা।তাইতো দেখ আজ তোকে ভালোবাসে এমন একটা মানুষও নেই।তোকে কেউ ভালোবাসে না সুহানা।কারন ভালোবাসা পেতে হলে আগে অন্যকে ভালোবাসতে হয়।’

সুহানা তাচ্ছিল্য হেসে বলে,’ আমি নাহয় কাউকে ভালোবাসি নি।তাই কারো ভালোবাসা পাইনি।তুমি তো সবাইকে ভালোবেসেছ।তাহলে আজ তোমায় কেন কেউ ভালোবাসে না?’

সুহানার কথাটা শুনতেই ব্যাক্তিটি চুপ হয়ে গেলো।সুহানা হা হা হা করে হেসে বলে,
‘ কি? জায়গা মতো তীর ছুড়েছি তো?’
‘ জাস্ট স্যাট আপ।’

হুংকার শুনে সুহানার যেন কলিজার পানি শুকিয়ে গেলো।এতোক্ষণ অনেক সাহস নিয়ে এতোগুলো কথা বলেছে।কিন্তু এখন যেই ধমক ছুড়ল তাতে যেন সব সাহস আকাশে উড়ে গিয়েছে।তবে ভয়কে জয় করতে হবে।জায়ানকে খোঁজার জন্যে তাকে সাহসী হতে হবে।সুহানা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,
‘ এতো কথা বাড়িয়ে লাভ নেই।শুধু এটুকু বলব জায়ানকে খুঁজে বের করে দেও।সাথী কিন্তু এখনও আমার হাতে।’

এইটুকু বলেই কল কেটে দিলো সুহানা।জায়গামতো খবরটা তো পৌছে দিলো।এইবার যে করেই হোক।জায়ানকে ফিরিয়ে আনতেই হবে।
——
সুহানার সাথে কথা বলা শেষ হলেই মুঠোফোনটা সজোড়ে ছুড়ে মারল অজ্ঞাত ব্যাক্তিটি।ক্রোধে যেন তার সারা শরীর জ্বলে যাচ্ছে।এতোগুলো বছর হয়ে গিয়েছে। সাথীর যেন কোনো ক্ষতি না হয় এই কারনে এই জঘন্য মহিলাটাকে সহ্য কর‍তে হচ্ছে ওকে।ব্যাক্তিটি চিৎকার করে উঠল,
‘ স্টিভ! স্টিভ!’

স্টিভ নামের ছেলেটি চিৎকার শুনে দ্রুত চলে আসলো।
এসেই ভয়ে ভয়ে বলে উঠলো,
‘ ইয়েস বস। ‘
‘ কন্টাক্ট আদার ইন্টারন্যাশনাল মাফিয়াস।এন্ড ট্যেল দেম টু ফাইন্ড দ্যা বয় নেইমড সাফওয়ান জায়ান সাখাওয়াত বাই ওল মিনস।’

স্টিভ নামের ছেলেটি বসের কথা মতো চলে গেল। অজ্ঞাত ব্যক্তিটি এবার নিজেও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে পড়ল। সোজা চলে গেল নাইট ক্লাবে। সেখানে গিয়ে বিরতিহীন একের পর এক মদ পান করতে লাগলো। এতগুলো বছরের কষ্ট যে না আজ একসাথে জেগে উঠে বড্ড জখম করছে ওর হৃদয়। কি করেছিল ও? শুধু ভালোই তো বেসেছিল। ভালোবাস তো অপরাধ না। জোর করে কখনও তো ভালোবাসা আদায় করতে চাইনি ও?দূর থেকেই ভালোবাসার মানুষটিকে সুখে দেখে নিজেও সুখে ছিল।কিন্তু হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় সব এলোমেলো হয়ে যায়। এতো আদরের ছিলো ও।কিন্তু একনিমিষেই যেন সবার চোখের কাটা হয়ে যায় ও।কেউ বিশ্বাস করেনি ওর কথা।একমাত্র ওর মা ছাড়া।কিন্তু তিনিও পেরে উঠেননি।সবাই ওকে ময়লা আবর্জনার মতো ছুড়ে ফেলে দিয়েছিলো।কিন্তু আসল দোষী যারা তারা দিব্যি ভালো আছে।ব্যাক্তিটি সম্পূর্ণ দু বোতল মদ শেষ করেছে।আশ্চর্য? ওর নেশা কেন হচ্ছে না।আবারও আরেক বোতল মদ দিতে বলল ওয়েটারকে।ওয়েটার দিতেই সেটা খেয়ে নেয় ও।কিন্তু তার আগেই কেউ এসে ওর হাত ধরে ফেলে।ব্যাক্তিটি বিরক্ত হয়ে তাকায়।চেনা মুখটা দেখে অসহ্য কণ্ঠে বলল,’ নাজিম।ভালো লাগছে না।বোতলটা ছাড়।’

নাজিম এইবার ওর পাশে এসে বসল। বন্ধুর জন্যে বড্ড কষ্ট লাগছে।নাজিম বলল,’ আর কতো নিজেকে এভাবে কষ্ট দিবি দিহান?এতোগুলো বছর অতিবাহিত হয়েছে।তুই আজও মুভ অন করতে পারলি না।এভাবে নিজের জীবনটা শেষ করে দিলি।তোর হার্ট দূর্বল।ডক্টর তোকে এসব খেতে মানা করেছে।তাও কেন এসব খাচ্ছিস।একজনকে ভালোবেসে গোটা জীবনটা শেষ করে দিলি।এতো করে বললাম একটা বিয়ে কর সব ঠিক হয়ে যাবে।তুই তাও করলি না।জীবনসঙ্গী ছাড়া এভাবে এতোগুলো বছর কাটিয়ে দিলি।তিলে তিলে নিজেকে শেষ করলি।’

দিহান দুঃখভরা হাসি হাসল।নাজিমের কাধে মাথা রেখে মাতাল কণ্ঠে বলল,
‘ একটা কথা কি জানিস?পৃথিবীতে অনেকেই আছে যারা একতরফা ভালোবাসা নিজের বুকে লুকিয়ে হাজারো কষ্ট সহ্য করে বেঁচে থাকে। তার মধ্যে আমি একজন।’
‘ তাই বলে এইভাবে?একবার বিয়ে করেই নাহয় দেখতি।দ্বিতীয়বারও ভালোবাসা যায় দিহান।’

দিহান অদ্ভুতভাবে তাকালো।বলল,’ কিন্তু আমি তো দ্বিতীয়বার ভালোবাসতে চাই না নাজিম।এই একজনমে যাকে ভালোবেসেছি।যাকে হৃদয়ে ঠাই দিয়েছি। সেই একই হৃদয়ে আরেকজনে কিভাবে যায় তুই বলতে পারিস?আমি তো পারিনি।এই হৃদয়ে অন্য কাউকে জায়গা দেওয়া মানে।এই আমার আমিকে মে’রে ফেলা।এর থেকে বেশি ভালো হয়েছে। ওকে ভালোবেসে, ওর স্মৃতি আঁকড়ে ধরে আমি দিব্যি ভালো আছি।’

নাজিম মায়া নিয়ে তাকালো দিহানের দিকে। উদাস কণ্ঠে বলল,
‘ তা তো দেখতেই পারছি।কতোটা ভালো আছিস।’

দিহান গা কাঁপিয়ে হাসল।চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ওর।টেনে টেনে চোখের পাতা খোলার চেষ্টা করছে ও।দিহান কেমন জড়িয়ে আসা কণ্ঠে বলল,
‘ অনেকের জীবনে বারবার ভালোবাসা আসে হয়তো, কিন্তু আমার জীবনে ভালোবাসা একবারই এসেছে এবং এটাই আমার প্রথম ও শেষ ভালোবাসা। একতরফা হলেও তাকে ছাড়া আমি আর কাউকে মনে জায়গা দিতে পারিনি আর পারবও না।’

#চলবে___________
ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন। কেমন হয়েছে জানাবেন।

2 COMMENTS

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here