অদৃষ্টে_তুমি_আমি #লেখিকা_সিনথীয়া #পর্ব_২১

0
447

#অদৃষ্টে_তুমি_আমি
#লেখিকা_সিনথীয়া
#পর্ব_২১

পরের দিন সকাল। রোজ শনিবার। আহমেদ সাহেব রুম থেকে বের হয়ে নাস্তার টেবিলে আসতেই চমক পেলেন। দেখলেন তার স্ত্রী খুব ফুরফুরা মেজাজে টেবিল সেট করছে খাবারের জন‍্য। এটা দেখে হেসে দিলেন আহমেদ সাহেব,
– কি ব‍্যাপার রিতা? আজ কিছু হয়েছে নাকি?
– মানে?
– মানে, তুমি এতো ফুরফুরা মেজাজে কাজ করছো তাই জিজ্ঞজ্জ্বস করলাম আর কি।
– তুমি কি এটাই বলতে চাচ্ছো যে আমি অন‍্য দিন গোমড়া মুখ নিয়ে কাজ করি।
হো হো করে হেসে ফেললেন আহমেদ সাহেব,
-তা কেন হবে। আমি তো এমনিই বললাম।
– এই শোন, সকাল সকাল আমার মেজাজ গরম করবা না বলে দিলাম।
– আচ্ছা আচ্ছা বাবা, করবো না। এবার খাবার দাও।
তবে খাবার পাতে নিয়েও মুখে দিতে পারলেন না আহমেদ সাহেব। আরেকটা চমক অপেক্ষা করছিল তার জন‍্য। জর্জ তার পাশে এসে বসলো নাস্তা করতে।
-আজ সূর্য কি ওঠেইনি রিতা?
– কি যা তা বলছো? সকাল সাড়ে নয়টা পার হয়ে গেছে, সূর্য কেন উঠবে না?
-তাহলে আজ আমাদের পুত্রধন, এতো সকালে, তাও আবার ফিট বাবু সেজে এসে নাস্তা করতে বসেছেন আমার সাথে। এতো অলৌকিক ঘটনা!
বাবার টিটকারিতে আজ জর্জ কিছুই মনে করলো না কারণ ভেতর ভেতর সে মহা খুশি। এতো বছরের স্বপ্ন আজ পূরণ হতে যাচ্ছে ওর। পৃথাকে আজ বিয়ে করে ফেলবে, পৃথা ওর হয়ে যাবে। মা কে যেভাবেই হোক, মানিয়ে, পৃথার সাথে আজকে থাকবেই ও। এর জন‍্য নিজেস্ব ভাবে কতো প্রিপারেশন নিয়েছে ও যা বলার বাইরে। বাবার দিকে মুচকি হেসে বললো জর্জ,
– বাবা, আমার আসলে সকাল সকাল একটু কাজ আছে। সেটাই করতে যাব, তাই একবারেই রেডি হয়ে বের হয়েছি।
– ওওওও।
ইতিমধ‍্যে, সুযোগ বুঝে, রিতাও তাল ধরলেন ছেলের। স্বামীকে বললেন,
– এই শোন আমারও এক জায়গায় যাওয়ার আছে। আমি জর্জের সাথেই বের হয়ে যাব।
-তুমি আবার কই চললা?
– আমার এক বান্ধবী বাসায় যেতে হবে। ও ডাকসে। এক দেড় ঘন্টার মধ‍্যেই চলে আসবো। তুমি নাস্তা করে রেস্ট নাও কেমন?
তাড়াতাড়ি নাস্তা সেড়ে মা, ছেলে বের হলো। প্রথমে মিষ্টি কেনা হলো তারপর ফুল। রিতা নিজের থেকে একটা মোটামোটি গর্জিয়াস শাড়ি নিয়ে নিয়েছেন পৃথার জন‍‍্য, যেটা পরিয়ে জর্জের পাশে বিয়েতে ওকে বসাবেন তিনি।
পৃথাদের বাসায় পৌছতে পৌছতে এগারোটা বেজে গেল। দরজা খুলে দিল রহিমা বুয়া। ভেতরে ঢুকে হইচই ফেলে দিলেন রিতা,
– ইয়াসমিন, ইয়াসমিন? কই তুমি?
হন্তদন্ত হয়ে বের হলো ইয়াসমিন রুম থেকে,
– ওওও, আপা এসে গেছেন আপনি? আসেন আসেন।
– কি ব‍্যাপার? এখনো বাসা এরকম চুপচাপ কেন?
– আজ শনিবার তো আপা তাই….। রিণিতাও ঘুম…
– পৃথা কই।
– রান্নাঘরে, চা বানাচ্ছে সবার জন‍্য।
– ওওওও। আর সুজন উঠেছে ঘুম থেকে?
– জ্বী আপা।
আর কোনো কথা বললেন না রিতা। সোজা ভাইয়ের সাথে কথা বলতে রুমে ঢুকলেন,
-সুজন?
– কে?
– আমি, তোর রিতা আপা।
– ওও, আপা, আসো।
– কেমন আসিশ ভাই তুই?
-এইতো আপা, ভালো।
– তোর সাথে আজকে একটা জরুরী কথা বলতে এসেছি ভাই।
– বলো আপা।
রিতা একটু দম নিলেন,
– আমাদের ছেলেমেয়েরা তো এখন সব বড় হয়ে গিয়েছে তাই না। ওদের ভবিষ‍্যত নিয়ে তো আমাদের চিন্তা করা লাগবে, কি বলিস?
– ঠিক বলেছো আপা।
হাসলেন রিতা,
– এই তো আমার লক্ষি ভাইটা আমার কথা বুঝেছে। এখন শোন, আমি একটা প্রস্তাব নিয়ে এসেছি তোর কাছে।
– প্রস্তাব? সেটা কি?
– আমি তোর পৃথাকে, নিজের বাড়ির বউ বানাতে চাই। তুই কি বলিস?
একটু নড়ে চড়ে বসলেন সুজন সাহেব,
– পৃথাকে, তোমার বাড়ি বউ….
রিতা জোরে জোরে তার ছেলেকে ডাকলেন। জর্জ রুমের বাইরেই দাড়ানো ছিল, মায়ের আদেশ অনুযায়ী। মায়ের ডাক পেয়েই রুমে ঢুকে পরলো,
– মামা, আস্সালামুআলাইকুম।
রিতা ছেলেকে কাছে ডাকলেন,
– সুজন, এই যে জর্জ। তোর ভাগিনা। ভুলে গিয়েছিস ওকে?
– আপা আমার তো কিছুই মনে থাকে না, তুমি জানোই।
– হাহাহা। থাক বাদ দে ওসব। জর্জ আমার খুব ভালো ছেলে। পড়াশোনা শেষ করে এখন চাকরিতে ঢুকেছে। ওর সাথে পৃথা খুবই খুশি থাকবে, বুঝলি?
সুজন এদিক ওদিক তাকাচ্ছেন দেখে রিতা জিজ্ঞেস করলেন,
– কি খুজছিস তুই?
-আপা…. আমি ডায়েরি লিখি বুঝছো। সেটাই খুজছি। গতরাতে যেন কি লিখেছিলাম আমি। সেটা দেখতে চাই।
রিতা বিরক্ত হয়ে বললেন,
– উফ! তোর সাথে কি কথা বলি আর তুই কি নিয়ে পরে আছিস। আমি আমাদের ছেলেমেয়েদের বিয়ে নিয়ে কথা বলছি, মাথায় কিছু ঢুকছে তোর?
-ঢুকছে।
-তাহলে শোন, আমি প্রস্তুতি নিয়ে এসেছি। পৃথার সাথে জর্জের বিয়ে আজকেই দিয়ে দেব। মা মরা মেয়ে পৃথা, তোরও শরীরটা ভালো না। তোর কিছু হয়ে গেলে, ওর ভবিষ্যৎ তো অন্ধকার। তাই এখনই পার করে দে মেয়েকে। আমার ঘরের বউ হলে, ঘরের মেয়ে ঘরেই থাকলো, কোনো চিন্তাই নেই।
এই মুহূর্তে বাসার বেলটা বেজে উঠলো। রিতা খুশি হলেন ভেবে যে কাজি সাহেব বুঝি এসেছেন।
-সুজন, ভাই তুই এক মিনিট বোস। আমি কাজি সাহেবের সাথে কথা বলে আসি।
কিন্তু রুম থেকে বের হতেই হয়তো জীবনের সবচাইতে বড় ধাক্কাটা খেলেন তিনি।
পৃথা দরজা খুলে একপাশে দাড়ানো। ভেতরে ঢুকলো একটা ছেলে। বয়সে জর্জের কাছাকাছিই হবে। বেশ সুদর্শন, লম্বা। চেহারাটা খুব পরিচিত তবে চিনতে কষ্ট হচ্ছে রিতার।
– কে?….
শুধু এইটুকু প্রশ্নই করতে পারলেন রিতা। তারপর তার মুখ বন্ধ হয়ে গেল। না হয়েও উপায় নেই। ছেলেটার পেছনে যে ঢুকলো তাকে দেখে হতবাক হওয়ার চুড়ান্ত মাত্রায় পৌছলেন তিনি। মনসুর হাসান সাহেবের ছোট ছেলে, অর্থাৎ স্বাধীনের ছোট চাচা, বেলাল, তার সামনে দাড়ানো। মনে মনে ঝড়ের আভাস পেলেন রিতা,
– এই মানুষটা এখানে কি করে?
পৃথা, বেলাল কে দেখেই পা ধরে সালাম করলো। বেলাল পরম যত্নে পৃথা কে উঠতে বললেন,
– থাক্ মা। লাগবে না, লাগবে না।
এই দেখে জ্বলে উঠলেন রিতা,
– এই পৃথা? তুই এভাবে সালাম করছিস কেন ওকে? কে লাগে তোর ও যে এতো মর্জাদা দিচ্ছিস?
– কেন? নিজের চাচা শশুরকে মর্জাদা দেওয়াতে নিষেধ আছে কোথায়?
বেলাল কে দেখে সামনের ছেলেটার কথা খানিকক্ষণের জন‍্য ভুলেই গিয়েছিলেন রিতা। এখন ওর মুখে এই কথা শুনে ফিরে তাকালেন ওর দিকে, এবং সাথেসাথেই এবার চিনে ফেললেন স্বাধীনকে। মুখ থেকে অস্ফুট একটা চিৎকার বের হলো তার।
– স্বা…ধীন।
– জ্বী ফুফু, আমি স্বাধীন। কেমন আছেন?
রিতা মুখ দিয়ে কোনো কথা বের করতে পারছিলেন না। এর মধ‍্যেই ঘরের ভেতরে ঢুকলেন আরও একজন। নিজের স্বামীকে দেখে রিতার মনে হচ্ছিল এখনি জ্ঞান হারাবেন তিনি।
– তুমি? তুমি এখানে কি করছো?
– তোমার বান্ধবীর বাসা দেখতে এলাম রিতা। একা একাই শুধু ছেলেকে নিয়ে আসলা, এটা কেমন হলো। আমি বাসায় পরে আছি, ভাবলাম আমিও চলে আসি।
নিজের পেছনে তাকাতেই জর্জকে দেখতে পেলেন রিতা। ছেলের চেহারাও মায়ের মতন সাদা পৃষ্ঠায় পরিণত হয়েছে। এদের কাউকে এই সময় এখানে কল্পনাও করে নি তারা।
স্বাধীন, বেলাল সাহেব আর আহমেদ সাহেবের সাথে আরও একজন এসেছেন। তাকেও রিতা চেনেন। উনাদের পারিবারিক উকিল। তবে উনার এখানে কি কাজ সেটা রিতা ধরতে পারছেন না। সবাই ভেতরে ঢোকার পর দরজা বন্ধ করে দিল পৃথা। তারপর যেয়ে এক কোণায় দাড়ালো। ছেলেরা সবাই বসলো সোফাতে। রিতা যেখানে দাড়িয়ে ছিলেন সেখানেই থমকে গেছেন, এক পাও নড়ছেন না। ইয়াসমিন বুঝতে পেরেছে যে ভয়ংকর কিছু হতে যাচ্ছে এখানে, তাই সে রিতার পেছনে ঘাপটি মেরে দাড়িয়ে আছে। শুধু জর্জ নড়ে উঠলো। তেড়ে আসলো ও সবার সামনে।
– এসব কি হচ্ছে হ‍্যা? এখানে কে আসতে বলেছে আপনাদের? পরিবারের বাইরের মানুষরা এখানে এলাউড না। যান!যান সবাই!
ছেলের গর্জনে খুব শান্ত ভাবে উত্তর দিলেন আহমেদ সাহেব,
– তা বাবা, আমিও কি আউটসাইডার? এনাদেরকে তো আমিই ডেকে নিয়ে এসেছি। আমার শালার বাসায় আমি মেহমান নিয়ে আসতে পারি না?
রিতা আর জর্জের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পরলো,
– বাবা? তুমি এদের ডেকে এনেছো? কেন?
-যাতে তোদের মা ছেলের কু কির্তী রোধ করতে পারি, তাই।
– মানে?
– আজ, এতো সকালে তোরা এই বাসায় কি করছিস? তোর না কি কাজ আছে বললি জর্জ? সেটা কি এখানেই ছিল?
জর্জের মুখে তালা লেগে গেল। এদিক ওদিক তাকিয়ে অজুহাত খোজার চেষ্টা করতে লাগলো ও। এর মধ‍্যে ঘরে ঢুকলেন সুজন সাহেব। বাইরের হইচই শুনেই এসেছেন। ওনাকে দেখে সাথেসাথে স্বাধীন ধরে নিয়ে এসে সোফায় বসালো। স্বাধীনকে দেখে অবাক চোখে তাকালেন সুজন সাহেব,
– তুমি কে বাবা?
আহমেদ সাহেব হেসে বললেন তার শ‍্যালককে,
– সুজন, এটা আমাদের স্বাধীন। তোমার মেয়ে, পৃথার জামাই। চিনতে পারসো?
– পৃথার জামাই? ওওওওও….
সুজন আর কিছু বলার আগেই রিতা চড়ে উঠলেন,
– এই, তুমি কি সব লাগিয়েছ বলোতো? কিসের জামাই জামাই বলছো?
– কেন? এখানে ভুল কি বললাম? স্বাধীন পৃথার স্বামী, এতে ভুল কি হলো?
-কিসের স্বামী? এসব উল্টাপাল্টা কথা আমি মানি না।
– কেন মানো না, বলো তো রিতা?
এবার রিতা কিছু বলতে গিয়েও চুপ হয়ে গেলেন। উত্তেজিত হয়ে গেছেন সে। তবে নিজেকে শেষ মুহূর্তে থামাতে পারলেন তিনি। তবে মিস্টার আহমেদ থামলেন না। আজ তিনি সব কিছুর একটা বিহিত করবেন, সেই প্রস্তুতি আগেই নিয়ে রেখেছেন।
– এই দুই বাচ্চার বিয়ে আমাদের সামনে হয়েছিল রিতা। আমরা সবাই এর সাক্ষী ছিলাম। তাহলে এখন তুমি এটাকে মানতে পারো না কেন? বলো? কি মুখে তালা লেগে গেছে?
খুব উঠে পড়ে লেগেছিলা তুমি পৃথাকে নিজের ঘরের বউ বানিয়ে আনার জন‍্য। জর্জের সাথে বিয়ে দেওয়ার জন‍্য। আমিও চিন্তা করছিলাম, তোমার এতো উৎসাহ কেন এই বিষয়ে?
এই সময়ে আবার রেগে গেলেন রিতা। দিক নির্দেশনা ভুলে চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি,
– আমার উৎসাহ না থাকার কি হলো? আমার ভাইয়ের মেয়ের প্রতি আমার একটা টান থাকবে না? একে মা মরা মেয়ে। তার ওপর বাল‍্যবিবাহ করিয়ে রেখে বর পক্ষের আর কোনো খবর নাই, বিদেশ পালিয়েছে। এমন অবস্থায় মেয়েটাকে আর কে বিয়ে করতো? তাই ওকে বাচানোর জন‍্য….
-রিতা আপা, আপনি মনে হয় ভুলে গেছেন আমি এখানে বসা আছি। তাই কোনো লাগাম ছাড়া মিথ‍্যা বলে যাচ্ছেন।
বেলালের আওয়াজে যেন চুপসে গেলেন রিতা। সব দিক থেকে তিনি আজ ঘেরাও হয়ে আছেন তাই তাল সামলাতে পারছেন না। বেলাল সাহেব বলতে লাগলেন,
– আব্দুল্লাহ চাচার মৃত‍্যুর পরে আপনি কি করেছিলেন তাকি ভুলে গেছেন নাকি? ভুলে গেলে কোনো সমস‍্যা নেই, আমি মনে করিয়ে দিতে পারবো। আর আমার মনে হয় পৃথা, এই ব‍্যাপারে কিছুই জানে না, ওর এখন সব জানা দরকার। ওর পূর্ণ অধিকার আছে।
এবার বেলাল সাহেব পৃথার দিকে করুণ চোখে তাকালেন। এতোক্ষণ ধরে পৃথার পাশে স্বাধীন দাড়িয়ে ছিল। পৃথার মনোবল বাড়ানোর জন‍্য ওর ধরে রাখলো। বেলাল সাহেব শুরু করলেন,
– পৃথা মা, তোর এতো বছরের অপেক্ষা, কষ্ট, দুর্ভোগ সব কিছুর জন‍্য আমি ক্ষমা চাচ্ছিরে মা। তবে আমরা নিরুপায় ছিলাম। আমাদের বিভ্রান্ত করা হয়েছিল। আর যে এই কুকাজ করেছে সে আর কেউ না, তোর ফুফু, রিতা আপা।
পৃথা ভীষণ অবাক হলো।
– ফুফু?
-হ‍্যা, তোর ফুফু। ঘটনা শুরু হয়েছিল তোর দাদার মৃত‍্যুর পাঁচ দিন পর থেকে। ভাইয়া, ভাবী, স্বাধীনরা সব বিদেশে থাকায়, ও বাড়ি থেকে আমিই ছিলাম তোদের পরিবারের শোকে অংশ নিতে। যেহেতু ততদিনে তুইও আঠারো পার করে গিয়েছিস এবং সুজন ভাইয়ের শরীর খারাপ যাচ্ছিলো তখন, আবার এদিকে চাচাও মারা গেলেন। সব মিলিয়ে বিদেশ থেকে ভাবী ফোন দিয়ে আমাকে বললেন তোর ব‍্যাপারে যেন আমি সুযোগ বুঝে রিতা আপার সাথে কথা বলি। ভাবী চাচ্ছিলেন আর দেরী না করে তোকে তুলে নিতে এবং স্বাধীনের কাছে এমেরিকায় নিয়ে যেতে। এমনকি ওখানে তোর পড়াশোনার ব‍্যবস্থাও করে রেখেছিলেন তারা।
একটু দম নিলেন বেলাল। তারপর আবার বললেন,
– আমি রিতার আপার সাথে এই নিয়ে কথা বলতে আসলাম সেই রাতে। কিন্তু তারপরে যা ঘটলো তার জন‍্য আমি প্রস্তুত ছিলাম না। রিতা আপা আমাকে অকথ‍্য ভাষায় গালিগালাজ করে বাসা থেকে বের করে দিলেন। বলে দিলেন এই বিয়ে তারা আর মানেন না। আমরা যেন এটা নিয়ে আর না কথা বলি। বাসায় যেয়ে যখন ভাইয়াকে ফোন দিলাম, তখন ওনারা খুবই বিচলিত হয়ে গেলেন। আমরা মনে করলাম হয়তো রিতা আপা চাচার মৃত‍‍্যুতে শোকাহত তাই হয়তো এরকম করেছেন। এজন‍্য কয়েকদিন চুপ থাকলাম আমরা। এরপর বিদেশ থেকে ভাইয়া ফোন দিলেন রিতা আপাকে। সুন্দর ভাবে সব জিজ্ঞেস করলেন, তাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু নিজের সেই কথাতেই অনড় থাকলেন রিতা আপা। কোনোভাবেই সে তোদের বিয়ে মানতে রাজি না, এটা স্পষ্ট বলে দিলেন। চাচার পর তিনিই তোদের পরিবারের সবচেয়ে বড় সদস‍্য দেখে তাকেই এপ্রোচ করতে হচ্ছিলো আমাদের। কিন্তু কোনো লাভ হচ্ছিলো না।
রিতা এই সময় চিৎকার দিলেন বেলালের ওপর,
– কি সব আজে বাজে কথা বলে পৃথার ব্রেইনওয়াশ করছো বেলাল? এই সব মিথ‍্যা অপবাদ দিচ্ছো আমার ওপর তোমরা। এগুলা একটাও ঠিক না।
– তাই আপা? একটাও ঠিক না? তাহলে পরের মাসে স্বাধীনের বাবা মা যে দেশে ফিরে আপনার সাথে দেখা করে সব ঠিক ঠাক করতে চেয়েছিল, আর আপনি তাদেরকেও যে স্বশরীরে অপমান করেছিলেন সেটাও নিশ্চয়ই মিথ‍্যা তাই না?
এবার রিতার চোখে ভয় দেখা গেল। পৃথা এতোক্ষণ সব শুনছিল কিন্তু ও কিছুই মেলাতে পারছিল না,
– চাচা আপনি এগুলা কি বলছেন? আসলেই এসব হয়েছে? এতো কিছু হয়েছে তাহলে আমি কিভাবে জানি না?
– মা তোর থেকে তো ইচ্ছা করেই লুকানো হয়েছে এগুলা সব। যেইদিন প্রথম আমি আপার সাথে কথা বলতে যাই আর আপা আমাকে অপমান করেন তার এক সপ্তাহের মাথাতেই আমরা শুনতে পাই যে তোর দাদর বাড়িটা ডেভেলপারের হাতে দিয়ে দেওয়া হচ্ছে। আর তার পরপরই রিতা আপা তোদেরকে ওখান থেকে সরিয়ে ফেলেন। তোদের নতুন ঠিকানা আমরা কেউ জানতাম না। আমাদেরকে বলা হয়নি। তাই তোর সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি আমি। পরে যখন ভাইয়া, ভাবী দেশে আসলেন তখন তোর সাথে দেখা করতে চেয়েছিলেন। রিকোয়েস্টও করেছিলেন রিতা আপাকে, কিন্তু উনি বলেছিলেন যে তুই নিজেই নাকি আর এই বিয়েটা রাখতে চাচ্ছিস না। তোর সম্মতিতেই নাকি আপা এটা করছেন। এসব শুনে ভেঙে পরেছিলেন ভাই ভাবী। তোকে পাওয়ার কোনো দিক থেকে ত্রুটি রাখেন নাই তারা রে মা। এমনকি দেশেও দৌড়ে এসেছেন। কিন্তু এক জায়গায় যেয়ে তো আমাদেরও থামতে হয়েছিল। আর কতো অপমান সহ‍্য করতাম আমরা? আমাদের কাউকে তো আপা বাদ রাখেননি অপমান করতে। আমাদের ছেলেরও তো একটা সন্মান আছে। সেটা কিভাবে গুড়িয়ে দিতাম? তাই মনে গভীর কষ্ট নিয়ে ভাই ভাবী ফিরে গেলেন বিদেশ। আমাকেও বলে গেলেন আর কোনো চেষ্টা না করতে।
বেলাল এবার থামলেন। পৃথার ততক্ষণে অঝরে চোখ দিয়ে পানি ঝরছে। নিজের ফুফুর দিকে এগিয়ে গেল ও,
-এগুলা কি সত‍্যি ফুফু? আসলেই তুমি এসব করেছ?
রিতা কোনো উত্তর দিলেন না। থম মেরে দাড়িয়ে থাকলেন। চেহারায় তার কোনো ভাব দেখতে পেল না পৃথা। কোনো অপরাধবোধ চোখে পড়লো না ওর। আর নিজেকে সামলাতে না পেরে পৃথা কান্না জর্জরিত আওয়াজে চিৎকার দিয়ে উঠলো,
– কেন করেছ তুমি এসব? কেন আমাকে এতোটা দিন এভাবে কষ্ট দিয়েছো? কেন?
– এটার উত্তরও তোর ফুফুর বলার মতন উপায় নেই মা। এটার উত্তর আমি দিচ্ছি তোকে।
আহমেদ সাহেবের দিকে তাকালো পৃথা। আহমেদ সাহেব এর পাশে বসা যে উকিল সাহেব তার দিকে তাকালেন তিনি।
-উকিল সাহেব, আমার শশুরের উইলটা বের করেন তো দেখি। একটু পড়ে শুনান সবাইকে।
উইলটা পড়া হলো। সেখান থেকে জানা গেল, নিয়ম অনুযায়ী আবদুল্লাহ সাহেবের সম্পত্তির দুই ভাগ পেয়েছেন পৃথার বাবা আর এক ভাগ রিতা। কিন্তু সুজন সাহেবের অসুখের জন‍্য আব্দুল্লাহ সাহেব মৃত‍্যুর আগেই তার ছেলের ভাগ টুকু পৃথার নামে করে গেছেন কারণ পৃথাই সুজন সাহেবের একমাত্র সন্তান। সেই হিসেবে পৃথা রিতার থেকে দ্বিগুণ সম্পদের অংশীদার হয়েছে।
এটুকু বোঝার পর মুখ খুললেন আহমেদ সাহেব,
– এই সম্পত্তিই হয়েছে কাল, বুঝছিস মা? তোর ফুফু এই উইলটা মেনে নিতে পারছিলো না। ওর মনে হচ্ছিলো তোর দাদা তোকে তোর বাবার সব সম্পত্তি দিয়ে ঠিক করেনি। নিজের বাবার সম্পত্তি তুই নিয়ে অন‍্যের বাড়ি চলে যাবি, এটা তো আরো চক্ষুশূল ছিল ওর জন‍্য। তাই তোকে স্বাধীনের সাথে মিলতে দেয় নি তোর ফুফু। ভেবেছিল জর্জের সাথে তোর বিয়ে দিয়ে দিতে পারলে আর কোনো চিন্তা নেই। ঘরের সম্পত্তি ঘরেই থাকবে। সবই ঘুরে ফিরে ওর কাছেই আসবে।
শুনে মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো পৃথার। ফুফুর দিকে চাইলো ও,
– এই কয়টা সম্পত্তির জন‍্য তুমি এতো নিচে নেমেছো ফুফু? আমি….আমি ভাবতেও পারছি না।
রিতা রাগে দুঃখে ফেটে পড়লেন,
– তো কি দোষ করেছি আমি। আমার বাবার কতো কষ্টে গড়া সম্পদ, এভাবেই অন‍্যের হাতে যেতে দিতাম। অন‍্য বাড়ি সেটা নিয়ে মৌজ করতো আর আমি ফ‍্যালফ‍্যাল করে দেখতাম? কখনোই না। আমার বাড়িতে ছেলে আছে, সুজনের তো কোনো ছেলেও নেই। তাহলে কেন পৃথা জর্জের থেকে বেশী পাবে? কেন? আমি যা করেছি ঠিক করেছি। এই বাল‍্যকালের ছেলে খেলা আমি এখনো মানি না। প‍ৃথা অন‍্য কারোর ঘরের বউ হবে না। ওর বিয়ে জর্জের সাথেই হবে বাস্।
এই বলে আচমকা পৃথার হাত ধরলেন রিতা। জর্জও এগিয়ে আসলো মায়ের কাছে। মা ছেলে দুজনের চোখেই যেন আগুণ জ্বলছে।
স্বাধীন এটা দেখে এগিয়ে আসতে গেল পৃথাকে বাঁচাতে কিন্তু সেটার আর প্রয়োজন হলো না। ঝটকা দিয়ে ফুফুর হাত থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিল পৃথা। চোখে আজ ওরও আগুন,
-আমি স্বাধীনের বিবাহিতা স্ত্রী। আমাদের বিয়ে বাল‍্য কালে হলেও এখন আমি পূর্ণ বয়ষ্ক। আমার জীবনের ডিসিশন্স আমি নিজেই নিতে পারি এবং আমি স্বাধীনকে আমার স্বামী হিসেবে মেনে নিয়েছি। তোমার এখানে কিছুই বলার নেই ফুফু। কিচ্ছু না।
রিতা নিজের ভাস্তির হঠাৎ এতো চড়া গলায় ভীষণ অবাক হয়ে গেলেন। মুখ বন্ধ হয়ে চোখ বড় বড় হয়ে গেল তার। তখন সচল হলো জর্জ। পৃথার এক হাত ধরে ফেললো,
– তোমাকে আমি অন‍্য কারও হতেই দিব না পৃথা। তুমি আমার, বাস্ কথা শেষ।
এরপর যা হলো জর্জ বেচারা সেটার আশাও কখনো করেনি। আরেক হাত ঘুরিয়ে জর্জের গালে জোরে চড় বসিয়ে দিল পৃথা। এতোটাই চমকে উঠলো জর্জ যে নিজের ভারসম‍্য রক্ষা না করতে পেরে পরে যেতে নিয়েছিল। পেছনে দেওয়াল ছিল বলে ধাক্কা খেল তাতে। পৃথাও চড়টা দিয়ে হাপাচ্ছিল। সাথে সাথে পেছন থেকে এসে ওরে কাধে হাত রাখলো স্বাধীন। পৃথা বললো জর্জের দিকে চেয়ে,
– এই চড়টা সেই প্রত‍্যেকটা সময়ের জন‍্য যখন তুমি আমার দিকে কুনজর দিয়েছো। আরো অনেক আগেই তোমাকে এটা দেওয়া উচিত ছিল আমার, কিন্তু চলো এখনো ঠিকই আছে। সামনে থেকে আমি কেন, আর যে কোনো মেয়ের দিকে তাকানোর আগে এই চড়টার কথা খেয়াল রাখবা।
জর্জ রাগে পাগল হওয়া বাকি ছিল। নিজেকে উঠিয়ে তেড়ে আসলো ও পৃথার দিকে কিন্তু এসে উল্টো আরেকটা চড় খেল ও। এবার স্বাধীন মারলো ওকে,
– Don’t even dare to look at my wife. Do you understand?
রিতা কেঁদে নিজের ছেলেকে জড়িয়ে ধরলেন,
-এই তোমরা দুইজন কেন আমার ছেলেকে মারছো? তোমাদের বেশী সাহস বেড়ে গেছে? আর বাড়বেই না কেন? এখানে এতোজন বড়রা আছে, কেউ কিছুই বলছে না, তাহলে তো এরকম হবেই। জর্জের আব্বু, তোমার ছেলে মার খাচ্ছে আর তুমি কিছুই বলছো না?
-আমি কি বলবো এখানে রিতা। যে যেটার প্রাপ‍্য সেটা তো সে পাবেই। তোমার ছেলে এরকম কাজ গুলো করে বলেই আজ এই অপমানের অংশীদার হতে হয়েছে ওকে। আর ও এই কাজে একা দোষী না। ও আশ্কারা দিয়েছো তুমি। ওর ভুল গুলোকে খালি ঢেকে ওর প্রশংসাই করে গেছ। দেখ এখন কি হলো। তোমার সামনেই ফলাফল দেওয়া আছে। ও হ‍্যা আরেক ফলাফল অপেক্ষা করছে তোমার ছেলের জন‍্য। ওর অফিস থেকে আমার কাছে ফোন এসেছিল। বোর্ড ডিসাইড করেছে যে তোমার সুপুত্রকে এখানে ওরা চাকরি দিবে না কারণ সে ইন্টার্ণ করার সময় নিজের ডেডিকেশন দেখাতে পুরোপুরি ভাবে অসফল হয়েছে। খুব না সুপারভাইসারের সাথে খাতির ছিল তোমার ছেলের? এখন কি হলো দেখলা তো?
জর্জ এই খবর শুনে কেঁদেই দিল। রাগে, অপমানে আর বাসায় থাকলো না ও। গটগট করে মেইন গেট দিয়ে বের হয়ে চলে গেল। রিতা অনেক ডাকলেন ছেলেকে কিন্তু কিছুই হলো না। শেষে উনিও রেগে চিৎকার শুরু করলেন,
– আমি দেখে নেব সবাইকে এক এক করে। পৃথা, তুই কি মনে করছিস? আমার বাবার কষ্টের সম্পদ আমাকে ছাড়া তুই খেতে পারবি? কখনোই না। আমি, রিতা, জীবিত থাকতে তো কখনোই এটা হতে দিব না। দেখ নিস!
এই বলে রাগে ফুসতে ফুসতে বের হয়ে গেলেন রিতা বাসা থেকে। ওনার পেছনে দাড়ানো ইয়াসমিনের তো এর মাঝে কতোবার মাথায় বাজ পড়লো তার কোনো হিসেব নেই। চুপচাপ দাড়িয়ে সব দেখছিলেন আর কাঁপছিলেন তিনি। যখন দেখলেন যে রিতা হেরে যাচ্ছেন আর ওনার সব পরিকল্পনা একের পর এক ফাঁস হচ্ছে, তখন থেকেই আঁচ করতে পারছিলেন যে নিজের আর এখানে কোনো বেনিফিট রইলো না ইয়াসমিনের। পৃথার থেকে এই সম্পত্তি নিয়ে নেওয়ার পরই তো রিতা ইয়াসমিনকে সম্পত্তি দিবেন। এটাই কথা হয়েছিল তাদের মাঝে। কিন্তু এখন তো রিতাই সব হারালেন। নিজেই কিছু পেলেন না, তাহলে ইয়াসমিনকে দেবেন কোথা থেকে? মনের দুঃখে, কষ্টে কি করবেন কিছুই বুঝতে পারছিলেন না ইয়াসমিন। অঝোরে শুধু কাদঁছিলেন তিনি।
ইয়াসমিনের পাশে এসে দাড়ালো মেয়ে রিণিতা। অঝোরে ও নিজেও কাঁদছে। ওকে কাঁদতে দেখে জিজ্ঞেস করলেন ইয়াসমিন,
– মারে কি ভাগ‍্য হইলো আমাদের দেখলি। কিছুই পাইলাম না। কাঁদিস না মা, কাঁদিস না।
রিণিতা ঝামটা দিয়ে উঠলো,
– আমার আর তোমার কান্নার কারণ আলাদা মা। আমি কাঁদছি স্বাধীন কে দেখে। আরে এই তো আমার স্বপ্নের পুরুষ রিতভিক হাসান, পৃথার বস। এই যে পৃথার বর তা তো আগে জানতাম না। কেন মা? কেন পৃথা এতো হ‍্যান্ডসম একজনকে পেল? কেন আমি ওর জায়গায় হলাম না? কেন ও লাকি মা কেন?
ইয়াসমিনের মাথায় আবার বাজ পরলো। এবার মেয়ে জড়িয়ে বেশ জোরেই কেঁদে উঠলেন তিনি। আশপাশের কেউ এতোক্ষণ তাদের দিকে খেয়াল করেনি। এখন মা- মেয়ের বিলাপে সবাই ঘুরে তাকাতে বাধ‍্য হলো।
আহমেদ সাহেব রহিমা বুয়াকে দিয়ে ইয়াসমিন আর রিণিতাকে ভেতরে পাঠালেন। তারপর তিনি আসলেন স্বাধীন আর পৃথার কাছে। ওদের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন তিনি,
-তোমাদের দুজনের কাছে আমরা বড়রা অপরাধী। আমাদের অনেক ভুল ছিল যার মাশুল এতোটা বছর তোমাদের চুকাতে হয়েছে। যেই সময় আমার শশুর ইন্তেকাল করেন সেই সময় আমি দেশে ছিলাম না। ছয় মাসের জন‍্য অফিসের কাজে দেশের বাইরে ছিলাম। আমার অবর্তমানে এতো কিছু যে হয়ে গেছে তা আমি কিছুই জানতে পারিনি। না হলে আমি সব আগেই সামলে নেওয়ার চেষ্টা করতাম।
পৃথা ওর ফুফার হাতটা ধরে ফেললো,
– ফুফা আপনি আজ যা করেছেন তার জন‍্য আমি আজীবন কৃতজ্ঞ থাকবো।
স্বাধীনও বউয়ের কথার খেই ধরলো,
-হ‍্যা পৃথা। ফুফা না থাকলে আজ আসলেই অনেক সমস‍্যা হতো। উনিই তো আমাদের ডেকে নিয়ে এসেছেন।
পৃথার অবাক চোখ দেখে হাসলেন আহমেদ সাহেব,
– আজও হয়তো অনেক বড় ভুল হয়ে যেত রে মা। তবে মহান আল্লাহই বাঁচিয়ে দিয়েছেন। গতকাল সকালে যখন রিতা আর জর্জ, রুমে বসে আংটি হাতে তোকে বিয়ে করার পরিকল্পনা করছিল তখন কিভাবে যেন আমি রুমের পাশ দিয়ে হেটে যাচ্ছিলাম। তখনই সব শুনলাম আমি। শুনেই মাথা গরম হয়ে গেল আমার। বেলালদের বাসায় ছুটে গেলাম। সব জানালাম ওদের। এতোদিন ওরা রাগ করে আমার সাথেও কোনো কন্ট‍্যাক্ট করেনি। ওদের রাগের আসল কারণ, তোর ফুফুর কান্ড, কীর্তি সব জান্তে পারলাম গতকালই। এবং সাথে এটাও জানলাম যে আমাদের স্বাধীন এখন ঢাকায়। তখনই বসে বেলাল আর আমি চিন্তা করে নিলাম কি করতে হবে। স্বাধীন সন্ধ‍্যায় সিলেট থেকে ফেরার পর ওর সাথে বসলাম আমরা। সব কথা আলোচনার পর আমাদের সামনে ক্লিয়ার হলো। তারপর আরজ এখান আসা।
স্বাধীন তখন ফিরলো পৃথার দিকে,
– গতকাল ফুফা আর চাচ্চুর সাথে কথায় এতোই ব‍্যস্ত ছিলাম যে মোবাইলে চার্জ দিতে ভুলে গিয়েছিলাম। তাই মোবাইল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। পরে তো তোমাকে ফোন দিয়ে বললামই যে আমি সকালে আসবো কিন্তু এটা তুমি কাউকে বলো না।
পৃথা ছোট্ট একটা মলিন হাসি দিল,
-তা তো বলেছোই। কিনতু বুঝিনি যে আজ এতো বড় বড় কিছু শক্ খাব। এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।
আহমেদ সাহেব আবার পৃথার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলেন।
– থাক্ মা। এসব ভুলে যা তুই। অনেক কষ্ট করেছিস জীবনে। এখন নিজের স্বামীর সাথে সুখে বসবাস করার সময় তোর। স্বাধীনও তোকে ছাড়া অনেক কষ্ট থেকেছে। আর কষ্ট দিশ না বেচারাকে।
পৃথা লজ্জায় মাথা নিচু করে হেসে দিল। অবশেষে সুখ ওর সামনে দরজা খুলে দাড়িয়ে আছে। শুধু ওর প্রবেশ করার দেরী।

চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here