#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৪
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
ধাক্কাটা খুব জোরে না তবুও বেশ জোরেই লেগেছিল যার কারণে রিক্সা কাত হয়ে যায় রিক্সাচালক সহ মেহবিন দু’জনেই পরে যায়। সবথেকে আঘাত মেহবিনই পায় স্টিলের হুডের সাথে লেগে হাতে প্রচন্ড ব্যাথা পায় রক্তও পরে হালকা সাথে কপালেও কিছুটা ছিলে যায় পায়। পায়েও হালকা ব্যাথা পায়। ও উঠতেই যাবে তখন যে গাড়িটা ওকে ধাক্কা মারে সেই গাড়ি থেকে মুখোশ পড়া পাঁচ ছয়জন নেমে ওর দিকে এগিয়ে আসে। সাথে রিক্সাওয়ালা কেও ভাগিয়ে দেয়। রিক্সাওয়ালা ভয় পেয়ে সেখান থেকে পালায়। তবে মেহবিন সব দেখে বুঝতে পেরেছে ইচ্ছে করেই ধাক্কা মেরেছে। দূর থেকে মেহবিনকে রিক্সা থেকে পরে যেতে মুখর আর তাজেল দুজনেই দেখতে পায় দু’জনেই ও দিকে দৌড় লাগায়। মেহবিন বহু কষ্টে উঠে দাঁড়ায় আর সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলে,,
“কারা আপনারা আর রিক্সাটাকে ইচ্ছে করে ধাক্কা মারলেন কেন?”
তখন ওখানের একজন বলল,,
“তোকে নিয়ে যেতে এসেছি। আর তুলে নিয়ে মেরে ফেলবো। বস তোকে মেরে ফেলতে বলেছে তাই একবার মনে হলো রিক্সাটাই উল্টে দিয়ে তোকে পিষে দিই। কিন্তু পরে মনে পরলো বস তোকে অনেক কষ্ট দিয়ে মারতে বলেছে আর সেটা নাকি বস লাইভ দেখবে।”
“এটা কি কোন শো নাকিরে যে জনসমক্ষে তুলে নিলেও সবাই মুখ বন্ধ করে সব দেখে যাবে। কেউ আটকাবে না আর কিছু বলবে না।
পেছনে পুরুষ কন্ঠের আওয়াজে সবাই তার দিকে তাকালো। আর তাকিয়ে কালো মাস্ক পরিহিত একজন কে দেখতে পেল তার পাশেই একটা বাচ্চা। মেহবিন মাথা কাত করে দেখলো তাজেল আর মুখর দাঁড়িয়ে আছে । মুখরকে দেখে ওর মুখে হাঁসি ফুটে উঠল। তখন একজন বলল,,
“এই কে রে তুই? আমাদের কাজে বাগড়া দিচ্ছিস। তোর প্রান যদি প্রিয় হয়ে থাকে তাহলে এখান থেকে চলে যা।”
“উঁহু প্রানের থেকে বেশি প্রিয় জিনিস যে এখানে রয়েছে। তাই যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।”
তখন আরেকজন বলল,,
“এই ওর কথা কি শুনছিস যা করতে এসেছিস তাই করনা মেয়েটাকে তোল এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে মারা যাবে নাহলে এখানে হুদাই একটা সিন হবে। আমরা ফেঁসে যাবো।
“ঠিক কথাই কইছোস।”
লোকটা মেহবিনের দিকে এগুতেই তখন মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
“আপনারা ফেঁসে গেছেন আবার ফেঁসে যাবেন কি?’
বলেই এগিয়ে এসে লোকটার নাক বরাবর একটা ঘুষি দিল। লোকটাকে ঘুষি মারতে দেখে ছেলেগুলো অবাক হলো। মেয়েটাকে তারা যতটা সহজ সরল ভেবেছিল তেমনটা নয়। মেহবিন যেখানে পরেছিল সেখানেই পঞ্চাশ মিটার পেছনে একটা মাঠ আছে সেখানে দশ বারোজন মিলে ক্রিকেট খেলছিল কয়েকটা ছোট বাচ্চাও ছিল। বিকেলে এরা এখানেই থাকে খেলাধুলা করে নয়তো খেলা দেখে। আরেকজন মেহবিনের দিকে এগুতে লাগলেই মুখর ওটাকে মারতে থাকে। দুই জন গিয়ে গাড়ি থেকে হকিস্টিক নিয়ে আসে। শুধু তুলতে হবে বলে ওরা অস্ত্র আনেনি। ওদের মধ্যে মারামারি শুরু হয়। তাজেল দৌড়ে সেই মাঠের ওখানে গিয়ে সবাইকে ডেকে আনে। ওরা খেলায় ব্যস্ত ছিল তাই এখানে কি হচ্ছিল বুঝতে পারেনি তাছাড়া একটা বাড়িও ছিল যার কারনে কেউ দেখতে পায়নি। তাজেলের কথা শুনে ওরাও ব্যাট স্ট্যাম্প যা আছে সব নিয়ে আসে। মেহবিন কে তারা সবাই চেনে তাই ওর নাম শুনেই চলে এসেছে। এতোগুলো মানুষ কে একসাথে দেখে কিডন্যাপাররা ভয় পেয়ে যায়। তবুও ওখান থেকে পালায় না। যে কাজে এসেছে সে কাজ শেষ করেই যেতে হবে নয়তো মরতে হবে। মেহবিন সবার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়। সবার থেকে বেশি অবাক হয় তাজেলের হাতে একটা স্ট্যাম্প দেখে সবার সামনে সে স্ট্যাম্প হাতে দৌড়ে আসছে আজকে মনে হচ্ছে তাকে কোন দলের নেত্রী। ওর অমনোযোগে একজন হকিস্টিক দিয়ে খুব জোরে ওর মাথায় মারে। এমনিতেও রিক্সা থেকে পরে মাথায় আঘাত পেয়েছিল সেখানেই লাগে বাড়িটা ও আওয়াজ করে উঠে। সবাই এটা দেখতে পায় সকলেই এটা দেখে আরো সবগুলো কে ধরে পেটাটে থাকে। মেহবিন মাটিতে বসে পরে মুখর গিয়ে ওকে ধরে। লোকগুলো এবার পালানোর চেষ্টা করে কিন্তু এবার পালাতে পারেনা। সব ক’টাকে মেরে সাইজ করেছে সবাই মিলে। এখন যারা মেহবিন কে মারতে এসেছিল একটার শরীরেও আর কোন শক্তি নেই। মেহবিন মুখরের হাত ধরে বসে রইলো মাথা দিয়ে রক্ত পরছে। মুখর রুমাল বের করে সেখানে চেপে ধরলো। মেহবিন সোজা হয়ে দাঁড়ালো কিন্তু থাকতে পারলো না। তাই দেখে মুখর ওকে ভালোভাবে ধরল আর সবার উদ্দেশ্যে বলল,,
“আমাদের কে সাহায্য করার জন্য ধন্যবাদ সবাইকে ।একটু পরে পুলিশ আসবে ওদের সেই জিপে তুলে দিয়েন। আমি ওনাকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি।”
তখন মেহবিন বলল,,
“আমি ঠিক আছি। হাসপাতালে যেতে হবে না বাড়ি গিয়ে ড্রেসিং করলেই হবে।”
‘একটাও কথা না যে নাকি সোজা হয়ে দাঁড়াতে পারছে না সে নাকি হাসপাতালে যাবে না।”
‘লাগবে না আমি ঠিক আছি।”
তখন তাজেল বলল,,
“হেয় ঠিক কইছে কতো রক্ত পরতেছে তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলো।”
“নেত্রী!”
“কোন কথা না তাড়াতাড়ি চলো!”
আর মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আর এই যে তুমি তাড়াতাড়ি কোলে তুইলা নাও। দেখতেছো না ডাক্তার খাড়াই থাকতে পারতেছে না। তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিয়া নও।”
মুখর তাজেলের কথা মেহবিন কে কোলে তুলে নিল। ওখান দিয়ে একটা অটো যাচ্ছিল সবাই মিলে ওটাকে থামিয়ে মুখরকে ওটায় উঠতে বলে। তাজেল খুব শক্ত করে মেহবিনের হাত ধরে রাখে। মুখর মেহবিন আর তাজেল কে নিয়ে হাসপাতালে যায়। মেহবিন কে হাসপাতালের স্টাফরা দেখেই দৌড়ে বড় ডাক্তারকে ডেকে আনে ওকে ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। মেহবিন অটো থেকে জ্ঞান থাকলেও একদম শক্তিহীন হয়ে পরে ও একদম মুখরের বুকে লেপ্টে ছিল। সে অবস্থা দেখে তাজেল খুব কান্না করতে থাকে। মুখরের মনে হচ্ছে কলিজাটা কেউ বের করে নিচ্ছে। তবুও নিজেকে শক্ত রাখছে যদিও জানে সে বেশি কিছু হবে না সেরে উঠবে তবুও ওর মন মানছে না। তাজেল আর ও রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। তাজেল কে এতো কান্না করতে দেখে মুখর ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলল,,
“তোমার ডাক্তারের কিছু হবে না নেত্রী। তুমি কান্না কোরো না।”
“ডাক্তারের মেলা রক্ত পরছে আমি দেখছি হেয় অনেক কষ্ট পাইতেছে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা।”
“হুম একটু কষ্ট তো পাচ্ছেই। কিন্তু যদি তোমার ডাক্তার শুনে তুমি তার জন্য কাদতেছো। তাহলে তো তোমার ডাক্তার আরো কষ্ট পাবে সেটা কি ভালো হবে।”
“কি ডাক্তার কষ্ট পাইবো?
“হ্যা পাবে তো! তোমার ডাক্তার তোমাকে এতো আদর করে তুমি কাদলে তো তার কষ্ট হবে।”
তাজেল চোখ মুছে বলল,,
“তাইলে আমি আর কান্দুম না। তুমি কিন্তু আবার ডাক্তাররে কইয়ো না আমি কানছি।”
“আচ্ছা ঠিক আছে।”
তখন তাজেল মুখরের হাত ধরে বলল,,
“তুমিও চিন্তা কইরো না পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা ডাক্তার ভালো হইয়া যাইবো।”
তাজেলের কথায় মুখর না চাইতেই হেঁসে দিল। এই মেয়েটাকেই সে এতোক্ষণ শান্তনা দিচ্ছিল আর এখন এই মেয়েটাই ওকে শান্তনা দিচ্ছে। তবে আজ সে নেত্রীর মতোই কাজ করেছে সেই ছেলেগুলোকে ডেকে এনেছে তার জন্য কাজটা সহজ হয়েছে। মুখর তাজেলের হাত শক্ত করে ধরে বলল,,
“তোমার ডাক্তার তোমাকে যোগ্য নামটাই দিয়েছে নেত্রী।”
“সেইসব ছাড়ো। এহন কও ওরা কি ডাক্তাররে তুইলা নিতে আইছিলো।”
‘হুম।”
“কিন্তু ক্যা?”
“কারন তোমার নেত্রী সবার ভালো করে সেটা একজনের পছন্দ না তাই।”
“ভালো কাজ করা তো ভালো কথা তাইলে একজনের পছন্দ হয় না ক্যা।”
“কারন লোকটা খারাপ তাই।”
তখন একজন নার্স বেরিয়ে এসে বলল,,
“ডক্টর মেহবিনের ব্যান্ডেজ করা শেষ আপনাদের দুজন কে ডাকছে।”
নার্সের কথা শুনে মুখর আর তাজেল রুমের ভেতরে ঢুকলো। আর ঢুকেই দেখতে পেল মেহবিন আধশোয়া হয়ে বসে আছে। মাথায় ব্যান্ডেজ হাতেও একটু ব্যান্ডেজ করা। ওদের দুজনকে দেখে মেহবিন হেঁসে বলল,,
‘দেখেছেন আমার তেমন কিছুই হয় নি। বাড়ি থেকেই ব্যান্ডেজ করা যেত।
মেহবিনের কথা শুনে মুখর বলল,,
‘হ্যা তাতো করা যেতোই। তুমি তো একদম ফিট এন্ড ফাইন ছিলে।”
“হুম ছিলামই তো। আর নেত্রী তোমাকে তো আমি স্ট্রং ভেবেছিলাম আর তুমি কিনা এইটুকুতেই কেঁদে উঠলে।”
তখন তাজেল বলল,,
‘তোমার কতো রক্ত পরতেছিল দেখছিলা একটুর জন্য অজ্ঞান হও নাই। তাছাড়া আমি মেলা ডরাই গেছিলাম। যদি তোমার কিছু হইয়া যায়। তোমারে হাসপাতালে আনার পর আমি একটুও কান্দি নাই জিগাও তোমার জামাইরে।”
‘তাকে জিজ্ঞেস করতে হবে না আমি তোমায় চিনি ভালোভাবে। আর সবথেকে বড় কথা তোমরা দুজন থাকতে আমার কি হবে। একজন তো পুলিশ আরেকজন নেত্রী। তুমি ঐ সময় কতোগুলো মানুষ কে ডেকে আনলে আমাদের সাহায্য করার জন্য।”
‘তারা তো পাঁচ ছয়জন আছিল। আর তোমরা মোটে দুইজন তাই তো হেতিগো ডাক দিয়া আনলাম।”
“হুম। তাহলে আজকে ঘুরতে যাওয়ার প্ল্যান ক্যানসেল নাকি।”
‘তুমি কি পাগল ডাক্তার এই অসুস্থ শরীর নিয়া কেউ ঘুরতে যায় নাকি। চুপ কইরা শুইয়া থাকো।”
‘আমি ঠিক আছি এখন বাড়ি যাবো। চলো বাড়ি যাই তাহলে।”
তখন মুখর বলল,,
“হুম চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি। আর হ্যা আমি কিন্তু আজ রাতে তোমার সাথেই থাকবো।”
‘কোন দরকার নেই। আমি ঠিক আছি এই মুহূর্তে আমাদের ব্যাপারে কাউকে কিছু জানাতে চাচ্ছি না। তাছাড়া এখানের কেউ জানেনা আমি বিবাহিত। আপনাকে আমার সাথে দেখলে মানুষজন নানা কথা রটনা করতে পারে।”
তখন তাজেল বলল,,
“কেন কাউরে কিছু জানাই বা কেন?”
‘এখনো সঠিক সময় আসে নি নেত্রী। তোমার এতো সব ভাবতে হবে না। তোমাকে বলেছি না তোমার পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালার ব্যাপারে কিন্তু কেউ কিছু না জানে। তেমনটাই রাখবে যেমন টা আজ রেখেছো সবার সামনে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা বলো নি।”
“আইচ্ছা। তাইলে পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা তুমি চিন্তা কইরো না আজ রাইতে আমি ডাক্তারের লগে থাকুম। এমনিতেও দাদি ফুফুগো বাড়ি গেছে আইজ। রাইতে আমার একাই থাহা লাগতো এর থেইকা আমি ডাক্তারের কাছে থাকুম নি।”
মুখর তাজেলের কথা শুনে হাসলো। ও যে মেহবিনকে অনেক ভালোবাসে তাতে কোন সন্দেহ নেই। মুখর একটা রিক্সা ডেকে দুজন কে উঠিয়ে দিল রিক্সায়। মেহবিন মুখরকে ওদের সাথে যেতে মানা করেছে তাই। আর এটাও বলেছে মেহবিনের এই অবস্থা যেন মুখরের পরিবার আর ওর মামার পরিবার না জানতে পারে। মুখর বলল সে কাউকে জানাবে না। মেহবিন ষরা অর্ধেক রাস্তায় আসতেই একটা গাড়ি থেকে কেউ হাত দিয়ে রিক্সা থামাতে বলল। রিক্সা থামতেই ওদের রিক্সার সামনে গাড়িটি সাইড করে থামলো মেহবিন সামনে তাকাতেই গাড়ি থেকে আরবাজ মিশু আর শেখ শাহনাওয়াজ নামলেন। তাদের দেখে মেহবিন আর তাজেল অবাক হলেও নামলো না। আরবাজ এসে ওদের নামতে বলল তখন তারা দু’জনেই নামলো। মিশু দৌড়ে এসে মেহবিনের হাত ধরে বলল,,
‘ফুল তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কিছু হয় নি তো?
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
“না তেমন কিছু হয় নি। দেখো আমি ঠিক আছি।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘আপনার খবর পেয়ে মিশু বায়না করলো। তাই আপনাকে দেখতে যাওয়ার জন্যেই হাসপাতালে যাচ্ছিলাম।”
মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলল,
‘শুধু ফুলের জন্যই আমাকে দেখতে গিয়েছিলেন আর কিছুর জন্য নয় ?”
‘আপনি আমাদের বাড়িতে থাকেন তাছাড়া মিশুর এতো ভালো বন্ধু তাই আপনাকে দেখতে যাওয়া আমাদের দায়িত্ব।”
‘আর কোন কারন নেই তো চেয়ারম্যান সাহেব?
মেহবিনের এহেন আচরনে শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের দিকে শান্ত চোখে তাকালেন। আর বললেন,,
“কেন আর কোন কারন থাকার কথা নাকি ডাক্তার?”
‘না এমনিই বাই দা ওয়ে আপনারা জানলেন কিভাবে আমি হাসপাতালে?”
তখন আরবাজ বলল,,
“শুধু আমরা নই পুরো গ্ৰাম জানে আপনি হাসপাতালে আর কেন সেটাও জানে। গ্ৰামের মানুষদের কোন সোর্চ লাগে না। একা একাই বাতাসের সাথে খবর প্রচার হয়।”
‘ওহ আচ্ছা । তাহলে আমরা এখন যেতে পারি। আসলে আমার ভালো লাগছে না বাড়ি গিয়ে রেস্ট নেব।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘আপনি তো অসুস্থ। মাথায় হাতে দুই জায়গাতেই ব্যান্ডেজ। আপনার তো এখানে কেউ নেই। আপনি বরং সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের বাড়িতে থাকুন। একা অসুস্থ অবস্থায় থাকাটা ঠিক হবে না।”
তখন মিশু বলল,,
‘হ্যা ফুল তুমি আমার সাথে আমাদের বাড়িতে থাকবে আমি তোমার খেয়াল রাখবো।”
তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
“এখন তো মিশুও বলছে চলুন না হয় আমাদের বাড়ি।”
তখন মুচকি হেসে মেহবিন বলল,,
‘আমি ঠিক আছি চেয়ারম্যান সাহেব। আমার আপাতত কারো প্রয়োজন নেই। আমি ম্যানেজ করে নেব আর হ্যা আমার নেত্রী মানে তাজেল আজ আমার সাথেই থাকবে।”
“ও ছোট মানুষ ও কি আপনার দেখভাল করতে পারবে? তাছাড়া রান্নার ও তো একটা ব্যাপার আছে।”
তখন পেছন থেকে একটা মেয়েলি আওয়াজ এলো ,,
‘সেটা না হয় আমার ওপরেই ছেড়ে দিন চেয়ারম্যান সাহেব। আমিও ডাক্তার আপার সাথেই থাকবো।”
সবাই পেছনে তাকালেই দেখতে পেল নওশি সহ আরো চার পাঁচ জন মহিলা। তখন একজন বলল,,
‘রান্নাবাড়ার চিন্তা করতে হইবো না । আমরা আছি সবাই ডাক্তাররে রাইন্দা খাওয়াইতে পারুম। ডাক্তার সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত।”
তাদের দিকে তাকিয়ে মেহবিনের মুখে তৃপ্তির হাসি ফুটে উঠলো। এই লোকগুলো ওকে আপন করে নিয়েছে এটা ভেবে ওর আনন্দ হচ্ছে। মেহবিন বলল,,
“নওশি তোমরা এখানে?”
‘আপনারেই দেখতে যাইতেছিলাম হাসপাতালে।”
‘ওহ আচ্ছা। এখন আর যাওয়ার দরকার নেই আমিই বাড়ি যাচ্ছি। আর চেয়ারম্যান সাহেব দেখলেন তো দরকার হবে না। আমার কথা ভাবার জন্য শুকরিয়া আপনাদের। তবে চেয়ারম্যান সাহেব শুনলাম আপনার স্ত্রীর বোনের জামাইকে পুলিশে ধরেছে। আপনার এখন তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত হাজার হোক আপনার আত্মীয়।”
মেহবিনের কথা শুনে চেয়ারম্যান সাহেব বললেন,,
‘সেসব কথা বাদ দিন। সে তার কৃতকর্মের জন্য সেখানে গিয়েছে। তাছাড়া যার যাওয়ার সে গিয়েছে মানে আরিফা সে গিয়েছে। আচ্ছা আপনাকে অ্যাটাক করলো কে আর তুলেই বা নিয়ে যেতে চেয়েছিল কে?”
‘আমার ভালো লাগছে না চেয়ারম্যান সাহেব। আমার এখন বাড়ি যাওয়া উচিত বাকি কথা না হয় পরে হবে।”
তখন আরবাজ বলল,,
‘হুম আমাদের সাথে আমাদের গাড়িতে উঠুন আপনাকে বাড়ি নামিয়ে দিই।”
মেহবিন না করতে চাইলেও সবার সামনে আর না করতে পারলো না। মেহবিন সবাইকে বাড়ি ফিরতে বলল আর রিক্সাওয়ালা কে টাকা দিয়ে তাজেলের হাত ধরে আরবাজ দের গাড়িতে উঠলো। পাঁচ মিনিট পরেই ওর বাড়ির পাকা রাস্তায় গাড়ি থামলো। মেহবিন সবার থেকে বিদায় নিয়ে গাড়ি থেকে বের হলো। ও একটু এগুতেই দেখলো বাড়ির সামনে কয়েকজন দাঁড়িয়ে আছে। মেহবিন এগিয়ে গিয়ে জানতে পারলো তাকেই দেখতে এসেছে। মেহবিন বাড়ির ভেতরে ঢুকে সবাইকে বসতে বললো। তারা বসলো না ওকে দেখেই চলে গেল। মেহবিন ওয়াশরুমে যাবে ফ্রেশ হবে তাজেল ও ওর সাথে ওর হাত ধরে গেল। আরেকটু পর নওশি এলো ওর সাথে থাকবে বলে। রাতে মুখর ফোন করে খবর নিল। মেহবিন জানালো সব ঠিক আছে। তাজেল আর নওশি মেহবিনের খুব খেয়াল রাখলো রাতে খাবার খায়িয়ে দিয়ে ওষুধ ও দিল তাজেল। তারপর শুয়ে পরলো।
পরেরদিন সকাল বেলা দুইজন মহিলা এসে খাবার দিয়ে গেল। একজন কবুতরের মাংস আর ভাত আরেকজন হাঁসের মাংস। এগুলো খেলে নাকি রক্ত বাড়বে। পরের দিন অনেকেই মেহবিন কে এটা ওটা নিয়ে দেখতে এলো। চেয়ারম্যান সাহেব আর মিশুও এলো। দুপুরের খাবার আর ফল নিয়ে।
দেখতে দেখতে তিনটা দিন পার হয়ে গেল মেহবিন এখন অনেকটাই সুস্থ। ও সকালবেলা রোদে বসে আছে বারান্দায় তখন ওর ফোনে একটা কল এলো ও রিসিভ করল ও কিছু বলবে তার আগে ওপাশ থেকেই আওয়াজ আসলো,,
‘তোমার লাক খুব ভালো বুঝলে ডাক্তার?”
মেহবিন বুঝতে পারলো এটা নিশাচর তাই ও বলল,,
“হুম বুঝলাম তো। আমি তো ভেবেছিলাম আপনি আরো আগেই আমাকে ফোন করবেন।
‘এমনিই করলাম একটু ঝামেলায় ছিলাম তাই আর কি? যাই হোক জীবন যেহেতু তোমায় একটা সুযোগ দিল তাই আমিও তোমায় একটা সুযোগ দিলাম। আমার পেছন ছেড়ে দাও আর ভালো থাকো।”
মেহবিন কিছুক্ষণ চুপ থেকে কি যেন ভাবলো আর বলল,
‘আচ্ছা।”
‘কি আচ্ছা?”
“কিছু না আপনি আর কিছু বলবেন?”
‘না এইটুকুই ছিল তবে ভবিষ্যতে যদি….. থাক আর না বললাম।”
বলেই ফোনটা কেটে দিল নিশাচর। মেহবিন এবার আর বের করলো না তাকে ট্রেস করা যাবে কিনা জানে যাবে না। তার কিছুক্ষণ পর মুখরের ফোন এলো ও ফোন ধরে সালাম দিল,,
‘আসসালামু আলাইকুম!”
‘ওয়ালাইকুমুস সালাম। কেমন আছো?”
‘জি আলহামদুলিল্লাহ ভালো আপনি?”
‘আমিও আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তা ওষুধ খেয়েছো?
“হুম খেয়েছি। আপনি খাবার খেয়েছেন?”
‘হুম খেয়েছি।”
‘কোন আপডেট?”
‘হুম সেদিন যারা তোমাকে নিতে এসেছিল তারা সকলেই আজকে রাতে মারা গেছে।”
মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
‘ওহ আচ্ছা। আর কিছু বলবেন?
“হুম তোমার মামার বাড়ি দাওয়াত দিয়েছে আমাদের কে। তোমার মিহির ভাইয়া আর মাইশা আপু একটা বড় ডিলে সাকসেস পেয়েছে তাই তাদের দুজনের ওনারে একটা সাকসেস পার্টি রেখেছে মন্ত্রী মেহরব চৌধুরী।সেখানে মাইশার উডবি হাজবেন্ড হিসেবে আলভিকে পরিচয় করিয়ে দেবে। তার সাথে পুরো পরিবারকেও। যেতেই হবে সবার।”
সব শুনে মেহবিন বলল,,
“হুম মামা আমাকে জানিয়েছে কাল। আজ থেকে ঠিক আটদিন পর শুক্রবার অনুষ্ঠান।”
“তুমি আসবে?”
‘না আসার কারন দেখছি না। তাছাড়া না গেলে আদর আমার সাথে কথাই বলবে না।
‘ওকে তাহলে দেখা হবে বিয়াইন সাহেবা।”
‘ইনশাআল্লাহ নিশ্চয়ই বিয়াইসাহেব।”
‘হুম বিয়াইসাহেব থেকে কিন্তু সাবধানে থাকবেন যা তা হয়ে যেতে পারে।”
‘হলেও সমস্যা নেই আমি সামলে নেব।”
‘ওকে আল্লাহ হাফেজ নিজের খেয়াল রেখো। আর হ্যা খাবার আর ওষুধ টাইমলি খেয়ে নেবে। আমি বিকেলে যাব দেখা করতে তুমি বারন করলেও শুনবো না।”
বলেই মুখর কেটে দিল। মেহবিন কিছু বলতেই পারলো না তবে ও হাসলো। তার কিছুক্ষণ পর শেখ শাহনাওয়াজ এলো। তা দেখে মেহবিন উঠে দাঁড়ালো আর আগাতে লাগলো তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,
‘উঠতে হবে না?”
‘সমস্যা নেই চেয়ারম্যান সাহেব । তা এই সময়ে আপনি?”
‘দাওয়াত দিতে আসলাম আপনাকে। সবাইকেই দিচ্ছি তাই আপনাকেও একেবারে দিতে এলাম।”
“ওহ আচ্ছা তা কি উপলক্ষে?”
‘জিনিয়ার এঙ্গেজমেন্ট।”
‘ওহ আচ্ছা। কবে?”
“ঠিক আটদিন পর শুক্রবার।”
ডেট টা শুনে মেহবিনের কেন যেন হাঁসি পেল। সে একটু হাসলোও মেহবিন হেঁসে বলল,,,
‘দুঃখিত আমি আপনার দাওয়াত গ্ৰহন করতে পারছি না।”
‘এবার তো কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।”
“আছে সমস্যা আমার ঢাকায় যেতে হবে একটা অনুষ্ঠানে। আর অনুষ্ঠানটা খুব গুরুত্বপূর্ণ আমার জন্য।”
‘তাহলে আর কি করার?”
‘হুম সেটাই তবে আপনি কেন বেছে বেছে ঐ দিনেই বাড়ির অনুষ্ঠান রাখলেন?”
তখন চেয়ারম্যান সাহেব অস্ফুট স্বরে বললেন,,
‘যাতে কারো মুখোমুখী না হতে হয়।”
~চলবে,,