#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৪|
#শার্লিন_হাসান
“আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা ও করবেনা তুমি । লিভ মি! জাস্ট লিভ মি! আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাও তুমি। নাহলে গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো আমি। ”
শুভ্রর কথায় সেরিন বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। উঠে দাঁড়াতে শুভ্র পুনরায় বলে,
“তোমার থেকে এমনটা আশা করিনি আমি।”
“গুড! আপনার সাথে আর আমার সাথে যা হয়েছে বেশ হয়েছে। আপনি আসলে আমায় বিশ্বাস করেন না। যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা থাকা আর সম্পর্ক টিকার প্রশ্নই উঠে না।”
“ডিভোর্স চাই তোর?”
“আপনি দিলে আমার তো কিছু করার নেই।”
“ডোন্ট ওয়ান্না টক! জাস্ট মোভ ওয়ে ফ্রম দ্যা ফ্রান্ট!!”
সেরিন কিছু বলেনা। পুরো ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করতে গেলে শুভ্র তাকে শিওর থাপ্রাবে। এমনিতে মাথা গরম হয়ে আছে। সেরিন কথা না বলে বেলকনিতে চলে যায়। শুভ্রর বেশ রাগ হয় সেরিনের মুখের উপর বলা কথায়। সেরিন বেলকনিতে গিয়ে বাইরে এক ধ্যাণে তাকিয়ে থাকে। শুভ্রর এমন আচরণের “আ” টাও সে বুঝেনি। শুধু মুখের উপর বলে দিয়েছে। আর পরপুরুষ কে? কার ছোঁয়া বা গায়ে মেখেছে সেরিন? চোখ বন্ধ করে ভাবার চেষ্টা করে। কনসার্ট,ঢাকায়, একাডেমিতে কোথাও ছেলেদের সাথে কথা বলেনি। শুভ্র তো ছিলোই!! তাহলে কী এমন?
শুভ্র পুনরায় ভিডিওটা দেখে। সেরিন জর্জেট ব্লাক কালার শাড়ী পড়া। শাড়ীটা পাতলা সেরিনের ফর্সা উদর বোঝা যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে! তারউপর ছেলেটাও তার কানের পিঠে ফুল গুঁজে দিচ্ছে। সেরিন একটা টু শব্দ ও উচ্চারণ করছে না। শুভ্র বেশ অবাক হয়। সেরিন এটা কীভাবে পারমিশন দিলো? মাথা কাজ করছে না শুভ্রর। বেশ কিছুক্ষণ চুপচাপ সোফায় বসে থাকে। একজন সার্ভেন্ট এসে ডাক দেয় খাবার খাওয়ার জন্য। শুভ্র না করে দিয়েছে। তারা কেউ ডিনার করবে না। উঠে দরজাটাও লক করে দেয় শুভ্র।
শুভ্র,সেরিন ডিনারে আসেনি সবাই অবাক। অনেক মাস পর চৌধুরী পরিবারের সবাই একসাথে। রাতের ডিনার টা করবে সবাই একসাথে সেখানে শুভ্র সেরিন মিস্টেক। সেরিন তো হাসিমুখে আড্ডা দিচ্ছিলো। শুভ্র তাকে ডেকে নেওয়ার পর কী হয়েছে কারোরই বোধগম্য নয়। তবে শুভ্র যেহেতু একবার বারণ করে দিয়েছে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না।
ঘড়ির কাটা বারোটা। সেরিন এখবো বেলকনির দোলনায় বসে আছে। এক ধ্যাণে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। রুমে যাবে না শুভ্র রেগে আছে। বাইরে যেতে পারবে না তাঁদের পার্সোনাল ম্যাটার বাকীরা জেনে যাবে।
খাটে শুয়ে আছে শুভ্র। সেরিন রুমে আসেনি তা নিয়ে তার একটুও মাথা ব্যাথা নেই। যা খুশি হোক সেরিনের শুভ্রর কিছু যায় আসেনা। যে মেয়ে কথার খেলাপ করে তার থেকে আর কিছু এক্সেপ্ট করার মতো নেই।
বাড়ীর পূর্ব দিকের কবর স্থানে চোখ যেতে সেরিনের গা হিম শীতল হয়ে যায়। তারউপর দূরে কোথাও কুকুর ডাকছে। গাছের পাতা নড়ছে। চারপাশে লাইট জ্বললেও সেরিনের ভয় কাজ করছে। নিজের রাগ জেদকে আর প্রশ্রয় দিতে পারেনি সেরিন। উঠে রুমে চলে যায়। কাবাড থেকে একটা কম্বল নামায়। খাটের উপর থেকে বালিশটা নিয়ে ডিভানের উপর চলে যায়। শুভ্র সেরিনের কান্ড দেখছে। তারা কেউই কারোর সাথে কথা বলছে না। শুভ্র নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“তুমি যেদিন ব্লাক শাড়ী পড়েছিলে সেদিনের ছেলেটা কে ছিলো? তোমার কানে ফুল গুঁজে দিয়েছিলো।”
“জেনে কী করবেন?”
“বেশী হয়ে যাচ্ছে না? আমি প্রশ্ন করেছি তুই উত্তর দিবি। জেনে কী করবো না করবো সেটা আমার ব্যপার। তোকে সে-সব জানতে হবে না।”
“ওর নাম তাতান….
” বাহ্ নামটাও জানো?”
“কথাটা তো শেষ করতে দিন।”
“আর কিছু বলতে হবে না তোর।”
সেরিনও আর কথা বাড়ায়নি। চুপচাপ লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে। শুভ্র সেভাবেই বসে রয়। সেরিন ছেলেটার নাম ও জানে! শুভ্রর রাগে শরীর জ্বলছে। তার বউ কেন অন্য ছেলের নাম মুখে নিবে? কেনো?
********
পরের দিন সকালে সেরিনের ঘুম ভাঙে শুভ্রর এলার্ম ঘড়ির শব্দে। উঠে ফ্রেশ হয়ে ব্যাগ গুছিয়ে নেয়। মাহীকে কল দিয়ে বলেছে সে কলেজ শেষে যাবে। যাতে এসে তাকে নিয়ে যায় মাহী। শুভ্রকে কিছুই জানায়নি সেরিন। শুভ্র ও ইন্টারেস্ট দেখায়নি। নিজের জিনিসপত্র গুছিয়ে তুলে রাখে সেরিন। পাটওয়ারী বাড়ীতে তার জামাকাপড় সবই আছে। ব্যাগে করে আর কিছুই নিতে হবেনা। সবার সাথে বসেই নাস্তা করে নেয় সেরিন। তবে কেউ কোন প্রশ্ন করেনি। শুভ্র সেরিন কেউ কারোর দিকে ফিরেও তাকায়নি। নাস্তা করে যে যার মতো বেড়িয়ে পড়ে।
অনেকদিন পর সেরিন কলেজ এসেছে। নিশাতের সাথে দেখা হতে কথা বলে সেরিন। সেরিনের মন খারাপ দেখে নিশাত জিজ্ঞেস করে, “তোদের আবার জামেলা হলো নাকী? আজকে মনটা আর মুখটা এতো শুকনো লাগছে কেনো?”
“না এমনিতে কিছু হয়নি!”
“আরে ইয়ার আমি তোর ফ্রেন্ড। আমার কাছে না বললে কার কাছে বলবি?”
“না আসলে একটা বিষয় নিয়ে ঝগড়া হয়েছে। এমনিতে মিটে যাবে। হয়না ছোটোখাটো বিষয় নিয়ে ঝগড়া।”
“ওকে!”
সেরিন পিটির সময় হতে নিশাত সহ পিটিতে দাঁড়িয়ে যায়। শুভ্রও আসে পিটিতে। তবে আজকে কোন ভাষণ দেয়নি সে। ব্যপারটা আজকাল আর শকিং না। শুভ্র অনেকটা চেন্জ হচ্ছে। স্টুডেন্ট রাও একটু শান্তি পাচ্ছে। পিটি শেষ করে ক্লাসে এটেন্ড করে সেরিন। আজকেও আকাশ,জুম্মানের মুখোমুখি হয়। সেরিনকে দেখে তারা ও তাকায়। সবাই জানে সেরিন চলে গেছে। আবার আসলো কেন? আকাশ, জুম্মান সেরিনকে দেখে বলে,
“এবার তো কিছু একটা করা যাবে। এই মেয়েটাকে এতো সুন্দর লাগে একটু আধটু ফ্লার্ট আর র্যাগিং না করলে নাই হয়।”
জুম্মানের কথায় আকাশ শুধায়,
“সেদিন তো শুধু বোতল মারলাম। আজকে দেওয়ালের সাথে দুই চারটা বা’রি ও মারা যাক।”
“আরে না! একে এমন অবস্থা করবো। একবারে সন্মান নিয়ে টানাটানি হওয়ার মতো অবস্থা।”
“ফাঁকা রুমে?”
“দেখা যাক!!”
কথাগুলো বলে তারাও ক্লাসে মনোযোগ দেয়। সেরিন মাঝের সারিতে বসেছে। এক টেবিলে একজন করেই বসে। তার ডান পাশে ছেলেদের সারির টেবিল। বাম পাশে মেয়েদের সারির টেবিল। সেরিনের টেবিলের সোজা আবার জুম্মান আর আকাশ বসেছে। সেরিন বিষয়টা খেয়ালে নেয়নি। সে ক্লাসে মনোযোগ দেয়। তার পেছনে নিশাত বসেছে। ছয় ছয়টা ঘন্টা শেষ করে ছুটি হয়। সেরিন উঠে দাঁড়ায়। তাঁদের আবার ল্যাব ক্লাস আছে একটা। বেশী ভীড় দরজায় তাই একটু লেট করে বের হয় সেরিন। তার বের হতে,হতে শেষের দিকে পড়ে যায়। তার পেছনে আবার জুম্মান,আকাশ। সেরিন তড়িঘড়ি ক্লাস রুম থেকে বের হয়। করিডোরে হালকা ভীড় সেরিন ভীড়ের মধ্যে ঢুকে যেতে নিবে। পেছন থেকে কেউ তার ওরনায় টান দেয়। সেরিন ফিরে তাকতে দেখে আকাশ তার দিকে তাকিয়ে আছে।
সেরিন ঠাস করে চ’ড় বসিয়ে দেয় আকাশের গালে।
তেজী স্বরে বলে,
“ঘরে তো মা বোন নেই! থাকলে নিশ্চয়ই বুঝতি নারীদের কীভাবে সন্মান করতে হয়।”
“এই সুন্দরী আমায় চ’ড় মেরেছে।”
কিছুটা উঁচু স্বরে কথাটা বলে আকাশ। তখন জুম্মান চুলগুলো পেছনে নিয়ে বলে,
“আজকের তোকে দেওয়ালের সাথে ঠুকিয়ে,ঠুকিয়ে মারবো।”
মূহুর্তে কিছুটা ভীড় জমে যায়। মূহুর্তে কথাটাও বাতাসের গতিবেগে শুভ্রর কানে পৌঁছায়। শুভ্র মিটিংয়ে ছিলো। তবে সেরিনের কথা শুনে মিটিং ছেড়েই বেড়িয়ে আসে। দোতালায় দ্রুত উঠে যায়। শুভ্রকে দেখে আকাশ,জুম্মান কিছুটা ভয় পায়। সেরিনকে দেখে শুভ্র জিজ্ঞেস করে,
“কী হয়েছে এখানে?”
“এই ছেলেটা আমার ওরনা ধরে টান দিয়েছে। তারপর আমি চ’ড় দিয়েছি। জুম্মান বলেছে, আমায় নাকী দেওয়ালে সাথে ঠুকিয়ে,ঠুকিয়ে মারবে।”
“কথাগুলো কী সত্যি আকাশ,জুম্মান?”
তখন জুম্মান বলে,
“স্যার সেরিন আমাদের কলেজ থেকে বের করার পরিকল্পনা করছে।”
“তোকে আমি সেটা জিজ্ঞেস করিনি। ও যা বলেছে তা সত্যি কী?”
“না স্যার!”
পাশ থেকে আকাশ বলে। সেরিন তখন শুধায়,
“মিথ্যে বলবি না একদম।”
“তুমি চুপ থাকো।”
শুভ্র ধমকে বলে সেরিনকে। সেরিনের কান্না পাচ্ছে। শুভ্র তাকে এভাবে কেনো অবিশ্বাস করছে?
“প্রথম দোষের পর সব ভালোই কী সন্দেহ জনক হয়?”
#চলবে
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/