#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৬|
#শার্লিন_হাসান
“মেয়ে ফুল শুনেছো? আমি ‘স্যরি’!”
সেরিন কোন কথা বলেনা। শুভ্র পুনরায় শুধায়,
“স্যরি পাখি। ক্ষমা করো আমায়।”
“ইট’স ওকে!”
“না ইট’স ওকে তে হবে না। এই ইট’স ওকে তে আমি অভিমান দেখতে পাচ্ছি।”
“তাহলে?”
“মন থেকে বলো।”
“আচ্ছা।”
“কী আচ্ছা?”
“কিছু না।”
“বলো না?”
তখন সেরিন শুধায়,
“কী বলবো?”
“বলো ক্ষমা করলাম।”
“ইট’স ওকে!”
“প্রব্লেম কী তোমার?”
“আপনার প্রব্লেম কী সেটা আগে বলুন তো? বললাম না ইট’স ওকে! ওতো লুতুফুতু আমার পছন্দ না। আমার ঘুম আসছে প্লিজ কল দিয়ে ডিস্টার্ব করবেন না।”
“এই তোমায় আমি এতো সুন্দর ভাবে স্যরি বলেছি।”
“একটা কথা মনে রাখবেন আঘাত দেওয়ার পর ক্ষমা চাইলে ক্ষমা করা যায়। তবে আঘাতের ক্ষতটা সহজে ভোলা যায় না। আমি আদুরে মেয়ে! কেউ আমায় চোখ রাঙিয়ে কথা বলেনি। অল্পতে আমি হার্ট হই! সেখানে আচ্ছা বাদ দেই।”
কথাটা বলে সেরিন কল কেটে ফোন সুইচড অফ করে নেয়। ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। কখনো তার বাবা তাকে চোখ রাঙায়নি। তার কথার উপর দিয়ে কেউ কিছু বলেনি। এই না যে সেরিন অধঃপতনে গেছে। সে যথেষ্ট ভালো মন্দ বুঝে। শুভ্র যাচাই বাচাই না করেই তাকে ভীষণ হার্ট করেছে। অন্ধকার রুমে উঠে বসে সেরিন। তার মনটা ভীষণ খারাপ। হুট হাট যেটাকে মুড সুয়িং ও বলা যায়। মূহুর্তে নিজেকে পাগ’ল মনে হচ্ছে। উঠে বেলকনিতে যায় সেরিন। রাত প্রায় বারোটার উর্ধ্বে। আকাশে উজ্জ্বল শশী আলো ছড়াচ্ছে। সেরিন সেদিকে তাকিয়ে জোরে কয়েকটা শ্বাস নেয়। কিছুক্ষণ দোলনায় বসে দোল খেয়ে রুমে আসে। কেনো জানি কিছু লেখার ইচ্ছে হলো! ডায়েরিটা বের করে তাতে লিখে,
❝বাবুর পাপা বাবুর আম্মুকে ভীষণ হার্ট করেছে। বাবুর আম্মু ভীষণ অভিমান করেছে। বাবুর পাপা এতো পঁচা কেনো? সে জানে না বাবুর আম্মু একটা ধমক দিলেই চোখে অশ্রু ঝড়ে। নিতে পারেনা বাবুর আম্মু। সে ভীষণ সফট হার্টের। বাবুর পাপার মতো নির্দয় নিষ্ঠুর না। বাবুর পাপা বাবুর আম্মুকে বুঝে না।❞
নিচে তারিখ আর সময়টা লিখে রাখে সেরিন। টেবিলের উপর মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে সেরিন। কিছুক্ষণ চোখ বুজে থেকে উঠে। সূরা আর-রাহমান তেলাওয়াত শুনে সেরিন। আজকে রাতে তার ঘুম হবে না ভালো করেই বুঝে গেছে।
ওইদিকে শুভ্র বেলকনিতে বসে তার আর সেরিনের পিকচার দেখছে। শুভ্র পারছে না এখনি গিয়ে সেরিনের মন টা ভালো করে দেয়। মনে,মনে শপথ নিয়েছে আর যাই হোক সেরিনের সাথে বাজে বিহেভ করবে না। আর না তাকে ধমকাধমকি করবে। সবকিছু ঠান্ডা মাথায় বুঝে শুনে তারপর যা বলার বলবে। তাও নরম স্বরে। মেয়েটা বেশ সফট হার্টের। অল্পতে কষ্ট পায়।
এভাবেই তাঁদের দু’জনের রাতটা কোন রকমের কাটে। শুভ্র তাহাজ্জুদ পড়ে, ফজরের নামাজ আদায় করে নেয়। সকাল,সকাল হাঁটতে বের হয় সে। তাঁদের কলেজের পেছনের বিশাল মাঠের শেষ প্রান্তের দীঘিতে। পাশে একটা হোস্টেল আছে সেটাও যারা অনাথ বা বাড়ী দূরে তাঁদের থাকার জন্য। শুধু ছেলেদের জন্য এই ব্যবস্থা। শুভ্র দীঘির পাড়ে গিয়ে হিমশীতল বাতাস উপভোগ করে। হাটাহাটি শেষে সে বাড়ীতে এসে কফি খায়। আগামী কালকে তারা বিয়ের শপিংয়ে যাবে। সুলতানা খানম শুভ্রকে বলছে সেরিনকে চৌধুরী বাড়ীতে নিয়ে আসতে। সে তো এখন বর পক্ষ যেহেতু বিয়ে হয়ে গেছে। শুভ্র কিছু বলেনা। চুপ চাপ সবার কথা শোনে! বাকীরাও একই কথা বলছে সেরিনকে নিয়ে আসতে। তবে একটা ব্যপার সুন্দর তাঁদের মধ্যে কী হয়েছে সেটা কেউই জিজ্ঞেস করেনি। ব্যপারটা তাঁদের পার্সোনাল।
শুভ্র রেডি হয়ে কলেজে আসে। আজকে তার মেজাজ ভালো না সাথে মুড অফ। কলেজে প্রবেশ করে প্রথমে পিটিতে যায় শুভ্র। স্টুডেন্টদের বসিয়ে সে সামনের এক্সাম নিয়ে কিছু কথা বলে। তবে বেশীরভাগ স্টুডেন্টের চোখে-মুখে বিরক্তির ছাপ। শুভ্র পিটি শেষে
ফাস্ট ইয়ারের ক্যামিস্ট্রি টিচারকে তার রুমে আসার জন্য বলে।
তার কিছুক্ষণের মধ্যে টিচার শুভ্রর রুমে উপস্থিত হয়। শুভ্র কিছুটা মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“কয়েকমাস আগে! সেরিন নামের মেয়েটির মাথায় কেউ বোতল ছুঁড়েছিলো। আমি যতটুকু জানি আপনার ক্লাস চলা কালীন। এবং মেয়েটাকে আমার কাছেও পাঠানো হয় বলা হয়েছে দেওয়ালের সাথে ধাক্কা খেয়েছে। রাইট?”
স্যার কিছুটা ইতস্ত বোধ করে বলে,
“আসলে শুভ্র স্যার….
” আমি শুধু ‘হ্যাঁ আর ‘না’ উত্তর জানতে চেয়েছি। কোন আসলে,শুভ্র বা স্যার টাইপের কোন কথা না।”
“হ্যাঁ! ওইদিন জুম্মান তাকে বোতল ছুঁড়ে মারে।”
“তাহলে মিথ্যেটা কেনো বলা হয়েছে?”
“আসলে স্যার!”
“এখন আমার কী করা উচিত বলুন তো? ওই জুম্মানকে টিসি দেওয়া বাকী আপনাকে কলেজ থেকে বিদায় করা? আমার দেওয়া রুলস আপনি ব্রেক করেছেন স্যার। আপনার তখন দায়িত্ব টা কী ছিলো বলুন তো? জুম্মানকে কয়েকটা থা’প্পড় দেওয়া। তা তো করেননি আমায় উল্টো মিথ্যে বলেছেন।”
“স্যরি স্যার!”
“লাস্ট ওয়ার্নিং। আজকের মিটিংয়ে আবারো বলে দেবো সবাইকে। এরপর আমার রুলসের ব্রেক হলে এর পদক্ষেপ আমি গ্রহন করতে বাধ্য। এখন আসতে পারেন।”
স্যার বেড়িয়ে যেতে শুভ্র এসির পয়েন্ট বাড়িয়ে দেয়। দপ্তরিকে বলে কফি আনায় শুভ্র। তার মিটিং শেষে কুমিল্লায় যেতে হবে।
পাটওয়ারী বাড়ীতে শশীর বিয়ের প্রিপারেশন চলছে। সেরিন বিল্ডিংয়ের প্রতিটি রুম সাজাচ্ছে। মাহী সহ ক্লিন ও করছে। শশীকে কোন কালে কোন কাজ করতে হয়না। কাজ দেখলে তার ঘুম পায়,মাথা ব্যথা করে। এক কথায় শশী কাজ চো”র। সেরিনকেই বেশীরভাগ সময় অতিথি বা ফ্যামিলি ইভেন্টে রুম সাজাতে হয়। নতুন চাদর,সোফার কভার ইত্যাদি দিয়ে। মাহী সহ বেচারী চুপচাপ কাজ করছে। এক পর্যায়ে সেরিন বলে,
“তুমি বিয়ে কবে করবা? তাড়াতাড়ি বিয়েটা করে নেও। আমি তোমার বিয়েতে নাচবো।”
“করবো,করবো আর ছয়মাস পড়েই।”
“নিশাতের এক্সামের পরই করো।”
“কিসের নিশাত?”
“কেনো তোমার গফ!”
“না আনাদের ব্রেক আপ হয়ে গেছে।”
“বাহ আমি জানি না তাহলে।”
“তুই তো বিজি! আর আমাদের তেমন কথাও হয়না।”
“তাহলে অন্য মেয়ে খুঁজবো? ”
“এমনিতে খালামনির দুই মেয়ে আছে আবার মেহের আছে। তোর যাকে ভাবী হিসাবে পছন্দ হয় তাকেই আমি বিয়ে করবো।”
“সাফা,রাফা,মেহের। কী জানি! তিনজন সুন্দরীর কাকে তোমার মনে ধরে কে জানে?”
“ধরেছিলো একজনকে। টিকলো না তো।”
“বাদ দাও! মেয়েটা বুঝেনি তোমায়। কী হারিয়েছে পরে বুঝবে।”
“ওর থেকে দূরে থাকবি সেরিন। ও ভীষণ বা’জে। তোর ক্ষতি করতে চায়।”
“মাথা খারাপ তোমায় ভাইয়া? ও তোমায় এক্স আইমিন প্রাক্তন তোমার রাগের থেকে হয়ত এসব বলছো। বাট ট্রাস্ট মি ও ভীষণ ভালো একজন ফ্রেন্ড। মানুষ হিসাবে বলবো না বাট বন্ধু হিসাবে সী ইজ….
” বাঁশ যখন খাবি তখন আমার কথার মানে বুঝবি সেরিন।”
“বাদ দাও তোমার রাগের থেকে এটা বলছো। ওকে আমি চিনি। ও খুব ভালো একটা মেয়ে।”
“ওকে। থাক তোর ভালো ফ্রেন্ড নিয়ে।”
কথাটা বলে মাহী চলে আসে। সেরিন মাহীর যাওয়ার পানে তাকিয়ে হাসে। নিশাতকে কল দেয় তখন। কল রিসিভ হতে হেঁসে বলে,
“কীরে তুই আমার ভাইকে কী বলেছিস হ্যাঁ? ও আমার মুখে তোর নাম সহ্য করতে পারছে না। আমি তো জানি তুই ভীষণ ভালো একটা মেয়ে।”
“হ্যাঁ! মেয়ে হিসাবে ভালো হতে পারি বাট তোর ভাইয়ের প্রাক্তন হিসাবে না।”
“মজা নিচ্ছিস?”
“আরে ইয়ার তোর ভাইটা এক নাম্বারের ত্যাড়া। দেখ তুই কত সুইট একটা মেয়ে তোর ভাই ও হওয়া চাই সুইট তা না এটা দেখি করলা পাতা।”
“তুই ও না!”
“বাদ দে। কী করছিস?”
“কাজ করি রে।”
“এমা শুভ্র স্যারদের এতো সার্ভেন্ট থাকতে তুই কেনো কাজ করছিস? দেখ তোকে কী ওরা কাজের বুয়া পেয়েছে? কী আজব মানুষরে বাবা!”
“আরে ইয়ার আমি পাটওয়ারী বাড়ীতে। আর শশীর বিয়ে তো তাই আরকী রুম গুছিয়ে নিচ্ছি। পরে চাপ পড়বে বেশী।”
“ওহ আগে বলবি তো?”
“বলার সুযোগ দিয়েছিস তুই?”
“আচ্ছা কাজ কর। সময় হলে কল দিস। কথা বলবোনি।”
“ওকে বায়!”
***********
শুভ্র মিটিংয়ে বসেছে। তার কথাবার্তা সব শেষ হতে বলে,
“ক্লাস চলা কালীন কোন ঘটনা আইমিন স্টুডেন্টদের মাঝে ঝগড়া মা’রামারি টাইপের কিছু হলে অবশ্য বিচার করবেন। আর আমার প্রতিষ্ঠানের কোন মেয়েকে যাতে অসন্মান করা না হয়। আর নির্দোষ হলেও যাতে সঠিক বিচার টা সে পায়। আমি জানি আমার প্রতিষ্ঠানের ভালো ছেলের সংখ্যা স্বল্প হলেও আমার সামনে আসলে সবই ভালো। যদি ক্লাসের বিষয়টা ক্লাসে মিটমাট না করতে পারেন সোজা আমার কাছে পাঠিয়ে দিবেন। অবশ্যই এই দায়িত্বটা ভালো ভাবে পালন করবেন। আর বিচার টাও সুষ্ঠু ভাবে। এটা ভাববেন না কেউ যে বিচার হেরফের করবেন। আমার লোক লাগাবো আছে ঠিক আছে? পরে স্টুডেন্টদের সাথে আপনাদের চাকরী নিয়েও টানাটানি হবে।”
শুভ্রর কথায় সবাই “ওকে স্যার” বলে। তাঁদের মিটিংয়ের পার্ট শেষ হতে শুভ্র বেড়িয়ে পরে কুমিল্লার উদ্দেশ্য। আজকে সে গাড়ী নিয়েই বের হয়েছে। লোকাল বাসে যাওয়ার মুড নেই।
কুমিল্লায় এসে প্রথমে সে এক তোড়া ফুল নেয়। শপিং মলে গিয়ে একটা ব্রেসলেট নেয় গোল্ডের। সেই সাথে চকলেট,টেডিবিয়ার। তার মধ্যে একটা টেডিবিয়ার লাভ শেপের মাঝে “Sorry Bow”।
সব কিছু গাড়ীতে রেখে লাস্ট একটা কেক নেয়। সেটার উপরে লেখা ” স্যরি মেয়েফুল”।
তাড়াহুড়োয় যা মাথায় এসেছে তাই নিয়েছে। দুই ঘন্টার মাঝে শপিং শেষ করে বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা দেয় শুভ্র।
#চলবে
(দুইদিন ধরে গল্প দিচ্ছিনা এটা নিয়ে মেসেজ,কমেন্ট। শুনুন আমি ভীষণ ব্যস্ত ছিলাম। একটা রাত পুরো না ঘুমিয়ে কাটিয়ে দিয়েছি। যেখানে একজন মানুষের ছয়-সাত ঘন্টা ঘুমানোর কথা সেখানে মাত্র আড়াই ঘন্টা ঘুমিয়ে পরের দিন ক্লাসে এটেন্ড করি। ঘুমঘুম চোখে আবার নিজের রান্না করতে হয়েছে। ব্যাচেলার টাইপের ফিল এসেছে জীবনে।😐 পরের দিন রাতে গল্প দেওয়ার কথা থাকলেও আগের দিন রাতে আবার দিনে না ঘুমানোর কারণে ক্লান্ত ছিলাম। সেই সাথে প্রচন্ড মাথা ব্যাথা তাই একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।🫠)
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/