#নিবিদ্রিতা_কাহন—-১০
®মেহরুমা নূর
★আদ্রিতা সানভি আর তানহাদের কাছে পিঠে দুম করে কিল বসিয়ে দিয়ে বলল,
“মীরজাফেরের বংশধর, আমাকে দজ্জালের সামনে ফেলে রেখে এখানে এসে মজা করছিস তাইনা।”
হাসলো ওরা। নিবিড় ভাইয়ার সামনে ওদের কথা বলার সাহস থাকলে না কিছু বলবে। ওদের কথার মাঝে তাসান ওখানে এসে ধপ করে বসলো। আদ্রিতা তাকে পর্যবেক্ষণ করে বলল,
“কি হয়েছে তাসান ভাইয়া? মুখ এমন আরএফএল এর বদনার মতো বানিয়ে রেখেছ কেন?”
তাসান হতাশাজনক নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল,
“তো কী করুম? চারিদিকে এতো রমনীর মেলা অথচ একটাও এই পর্যন্ত পটাতে পারলাম না। এই দুঃখে আমার হাগু আঁটকে যাচ্ছে। তুইই ক বোইন, কী কমতি আছে আমার মাঝে?”
আদ্রিতা তটস্থ জবাবে বলল,
“কোন কমতি নেই ভাইয়া? তোমাকে বাম সাইড থেকে দেখলে সালামান খান মনে হয় , ডান সাইড থেকে টম ক্রুজ, পেছন থেকে রনবীর সিং আর সামনে থেকে…. ”
এই পর্যায়ে আদ্রিতার আগে সানভি বলে উঠলো,
“সামনে থেকে হিরো আলম।”
বলেই সানভি আর তানহা হাসা শুরু করে দিলো। তাসান সানভির মাথায় হালকা চাপড় মেরে বলল,
“ওই চুপ থাক। ওইডা তো আমার ভবিষ্যৎ দুলাভাই। তোর স্বপ্নের রাজকুমার। অরি, তুই আমার কলিজার বইন। তুই বলতে থাক।”
আদ্রিতা বলল,
“হ্যাঁ ভাইয়া, তুমি তো পুরো বলিউড,হলিউডের মিক্স জেলি।”
তাসান আপসোসের সুরে বলল,
“কিন্তু এই জেলি মাখানোর জন্য কোনো মিল্ক ব্রেড আসেনা ক্যা?”
তাসানের বলার ভঙ্গি দেখে আবারও হাসলো সানভি আর তানহা। আদ্রিতা হঠাৎ খেয়াল করলো ওদের থেকে কিছুটা দূরের টেবিলে বসা একটা মেয়ে বারবার এদিকেই তাকাচ্ছে। ভালো করে খেয়াল করে বুঝতে পারলো মেয়েটা তাসানকেই দেখছে। আদ্রিতা উৎসাহিত কন্ঠে তাসানকে জানাল,
“ভাইয়া, মনে হচ্ছে তোমার ব্রেড এসে গেছে। ওই দেখ, ওই সুন্দরী মেয়েটা কখন থেকে তোমাকেই দেখে যাচ্ছে।”
তাসান ধড়ফড়ানো ভঙ্গিতে বলল,
“কস কি বইনা! কই? কোনহানে?”
আদ্রিতা চোখের ইশারায় মেয়েটাকে দেখালো। তাসানের হার্টের সাথে সাথে কিডনি, লিভারও ফেল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। এতো সুশ্রী রমনী কিনা ওকে দেখছে! হায় খুশিতে প্যান্ট ফেটে যাওয়ার দশা তাসানের। এক্সাইটমেন্টে বেলুনের মতো ফুলতে ফুলতে বলল,
“তুই সত্যিই কইছস বইন, আমার মাঝে আসলেই অনেক চার্ম আছে। তাইতো এতো সুন্দর মাইয়া আমার উপর থাইকা নজরই ফেরাতে পারছেনা।আমি হুদাই নিজেরে আন্ডারেস্টিমেট করে ফেলছিলাম। অরি রে, তুই তো ভাবি পাইয়া গেলি। মা-রে যাইয়া বরণ ডালা সাজাইতে ক। তার বউমা আইসা পড়ছে।”
তাসানের খুশির বেলুন আরও হাওয়ায় উড়লো যখন তাকিয়ে থাকা মেয়েটা একসময় উঠে ওদের দিকেই এগিয়ে আসতে লাগলো। তাসান খুশিতে আগডুম বাগডুম করতে করতে বলল,
“অরি রে,দেখ এইদিকেই আসছে। মনে হচ্ছে প্রপোজ করবে। আমার হার্ট ডিসকো ডান্স করছে। ডিসিশন ফাইনাল, মাইয়া প্রপোজ করার সাথে সাথেই সবার সামনে আজই বিয়া কইরা ফালামু। আজই বাসর,আর কালই তোগো ফুপি বানাইয়া ফালামু।”
“ওকে ভাইয়া, অল দ্য বেস্ট।”
ওদের কথার মাঝে মেয়েটা ওদের সামনে চলে এলো।সবার কৌতূহলী দৃষ্টি মেয়েটার ওপর। মেয়েটা তাসানের সামনে এসে বলল,
“হাই,আমি তিয়ানা। আপনি কিছু মনে না করলে একটা কথা বলতাম।”
তাসানের গলা দিয়ে আওয়াজ বের হওয়া কষ্টদায়ক হয়ে গেছে। মেয়েটা তাকে প্রপোজ করবে ভেবেই তার চোখের সামনে তারা জ্বলছে। সে হ্যাবলার মতো হা করে মাথা ঝাকিয়ে বলল,
“হ্যাঁ হ্যাঁ বলুন না প্লিজ।”
মেয়েটা বলল,
“আপনি কি কাল একটু আমাদের বাসায় আসতে পারবেন?”
খুশিতে এবার অজ্ঞান খেয়ে ফেলবে তাসান। মেয়েটা ওকে সরাসরি বাসায় যেতে বলছে! এতো দেখি ওর থেকেও ফাস্ট সার্ভিস দেয়। নিজের এক্সাইমেন্টের বেলুন কোনরকমে চেপে ধরে বলল,
“কেন বলুনতো?”
“আমার মায়ের সাথে দেখা করানোর জন্য।”
মায়ের সাথে দেখা করার জন্য! তারমানে বিয়ের কথা বলার জন্য ডাকছে। হায়, আমার বাসর করার ছোটবেলার স্বপ্ন ফাইনালি পুরোন হতে চলেছে। মেয়েটা আবার বলে উঠলো,
“আসলে আপনাকে দেখতে না একদম আমার মরহুম বাবার মতো। তাইতো তখন থেকে অবাক হয়ে আপনাকে দেখছিলাম।আমার মা আপনাকে দেখলে অনেক খুশি হবেন।কাল আমার বাবার মৃ,ত্যুবার্ষিকী। কাল যদি আপনি এসে মায়ের হাতের রান্না করা খাবার খেয়ে যেতেন, তাহলে ভাবতাম আমার বাবাই খেয়েছে। এইযে এটা আমার কার্ড।এখানে আমার বাড়ির ঠিকানা আছে।প্লিজ আসবেন হ্যাঁ? আমরা আপনার অপেক্ষায় থাকবো, বাবা। সরি, আসলে আপনাকে দেখে আমার খুব বাবা ডাকতে ইচ্ছে করছিলো। কিছু মনে না করলে আপনি আপনাকে বাবা বলেই ডাকবো কেমন। এখন আসি বাবা। কাল আসবেন কিন্তু।”
বলেই চলে গেল রমনী। বেচারা তাসানের হাওয়ায় উড়তে থাকা বেলুন টা ফটাস করে ফুটে গেল। সাথে ঠাস করে ফেটে গেল তার কোমল হৃদয় টা। মনে হচ্ছে কেউ ওকে হাওয়া থেকে একেবারে গোবরের ভেতর ছুঁড়ে মারলো।ছাইয়া থেকে ভাইয়া তাও মানা যায়, তাই বলে বাবা! কোথায় সে ওই মেয়ের বাচ্চার বাবা হওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। আর সে কিনা তাসানকেই বাবা বানিয়ে দিলো! এমন কেউ করে! এত্তোবড় ধোঁকা! বেচারা তাসান শক খেয়ে পুরো স্ট্যাচু হয়ে বসে রইলো। তার এই বেহাল দশা দেখে তানহা,সানভি আর আদ্রিতা একজন আরেকজনের মুখ চাওয়াচাওয়ি করলো। তারপর হঠাৎ সবগুলো একসাথে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। পেট ধরে গড়াগড়ি খাচ্ছে হাসতে হাসতে।
রাত ভারী হতেই পার্টি আরও জমজমাট হলো। স্টেজের সামনে নাচগানের বহর ছুটলো। তাসান ওর ভাঙা মনের দুঃখ ভুলে উড়াধুড়া নাচায় মত্ত। সানভিও সুন্দর একটা ডান্স পারফরম্যান্স দিলো। আদ্রিতা কীভাবে বসে থাকবে! সেও সবার মাঝে গিয়ে সবার সাথে আউলা ঝাউলা নাচতে লাগলো। মিউজিক সিস্টেমে গান বাজছে, বাদশার ♬ ইয়ে ল্যারকি পাগাল হে পাগাল হে পাগাল হে পাগাল হে…..
গানটা যেন আদ্রিতার জন্যই তৈরি হয়েছে। সেও পাগলের মতোই মাথা দুলিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছে। কখনো তাসানের হাতের সাথে নিজের হাত পেঁচিয়ে ঘুরে ঘুরে নাচছে। তো কখনো সানভির সাথে নাচছে। দূরে দাঁড়িয়ে অপরাহ্নের সাথে কথা বলায় ব্যাস্ত নিবিড়ের নজর ক্ষণেক্ষণে তার পানেই ছুটছে অবিরাম। অপরাহ্ন তা বুঝতে পেরেও আজ আর মজা করে কিছু বলল না। সে যে নিজেই কথার আড়ালে নজর লুকিয়ে তাকাচ্ছে ওই দূরে দাঁড়ান শ্যামলময়ী কন্যার পানে।নাচ দেখছে আর হালকা করে মাথা দুলিয়ে হাতে তালি বাজাচ্ছে, তানহা। হয়তো নাচগানে স্বাচ্ছন্দ না সে। তাই পাশে দাঁড়িয়ে শুধু দেখেই উপভোগ করছে।স্বচ্ছ চশমার আড়ালে চোখদুটো ঝলমল করছে তার। শ্যামল বরণ মুখাবয়ব দেখাচ্ছে আনন্দঘন হাস্যজ্বল। তা দেখে অপরাহ্নের হৃদমাঝারও বুঝি অভিভূত হচ্ছে।
আদ্রিতার নাচ দেখে ওদের থেকে হাত দুই, দূরে দাঁড়িয়ে নাচ দেখছিলো আর তালি বাজাচ্ছিল তানহা। হঠাৎ ওর পাশের কিছু ছেলেরা সিগারেট খেয়ে ধোঁয়া ছুড়তে লাগলো। তানহার মুখের সামনে ধোঁয়ায় ভরে গেল। যার দরুন শ্বাসকষ্ট হতে লাগলো তানহার। ছোট থেকেই আস্থমার প্রবলেম আছে তার । তাইতো ধোঁয়া সইতে পারেনা সে। শ্বাস টেনে এলো তার। কাশতে কাশতে শুরু করলো। ধোঁয়া থেকে বাঁচতে কাশতে কাশতে ওখান থেকে সরে এলো সে। তবে শ্বাসকষ্ট কমলো না তার। আজতো ব্যাগে ইনহেলারও তুলতে ভুলে গেছে। তানহা লম্বা শ্বাস টানতে টানতে এদিক ওদিক এলোমেলো ভাবে তাকিয়ে তার মাকে খুঁজতে শুরু করলো। হয়তো তার কাছে ওর ইনহেলার থাকতে পারে সেই আশায়। কিন্তু এই ভিড়ে ওর, মাকে খুঁজে পাওয়া ঘাসের মাঝে সুই খোঁজার মতো। এতো লাউড মিউজিকে ওর ডাকও কেউ শুনতে পাচ্ছে না। খুব খারাপ লাগছে তানহার। কপাল ঘামে ভিজে গেছে। হঠাৎ তানহার সামনে হন্তদন্ত পায়ে কেউ এসে দাঁড়াল বুঝি। বিচলিত কন্ঠে সে শুধালো,
“তানহা? ইউ ওকে? কোনো সমস্যা হয়েছে?”
মাথা তুলে তাকিয়ে অপরাহ্নের উদ্বিগ্ন চেহারা দেখতে পেল তানহা। তানহা একটু ইতস্তত বোধ করলো। কি বলা উচিত বুঝতে পারলো না। তানহার মনোভাব হয়তো বুঝতে পারলো অপরাহ্ন। তখন তানহার ওভাবে চলে আসাটা তার চোখ এড়ায়নি। মেয়েটাকে দেখে বোঝা যাচ্ছিল তার নিশ্চয় কোনো সমস্যা হয়েছে। তাইতো না এসে থাকা যায়নি তার দ্বারা। অপরাহ্ন তানহাকে একটু আস্বস্ত করার উদ্দেশ্য বলল,
“রিল্যাক্স তানহা, আমাকে ভরসা করতে পারো। অন্য কিছু নাহোক, আমি একজন ডাক্তার। সেই হিসেবে তো আমাকে বিশ্বাস করতেই পারো। আমি তোমাদের ডক্টর আঙ্কেলের ছেলে। যে তোমাদের পরিবারের ফ্যামিলি ডক্টর। তো পৈতৃক দায়িত্ব হিসেবে হলেও তোমাদের হেল্থের খেয়াল রাখাও আমার কাজ।”
তানহা একটু আস্বস্ত হলো বোধহয়।মাথা নেড়ে অপরাহ্নকে সেটা জানালো। অপরাহ্ন তানহার হাত ধরে ওকে নিয়ে একটু পার্টির শোরগোল পূর্ণ বায়ুমন্ডল থেকে সরে এলো। একটু ফ্রেশ হাওয়ায় এসে বলল,
“রিল্যাক্স করো তানহা। ব্রিথ ইন।”
তানহা অপরাহ্নের কথামতো কাজ করলো। নিঃশ্বাস নেওয়ার চেষ্টা করলো। একটু কমলেও পুরোপুরি ঠিক হলোনা। অপরাহ্নের পকেটে একটা পলিথিন ছিলো। তার বাইকের জন্য কিছু এনেছিল এতে। অপরাহ্ন সেটা বের পলিথিনের মুখ খুলে হাওয়ায় ঘুরিয়ে তাতে হাওয়া ভরে নিয়ে তানহার হাতে দিয়ে বলল,
“আপাতত এটাকেই ইনহেলার হিসেবে ব্যবহার করো। তাহলে হয়তো বেটার লাগবে।”
তানহা তাই করলো। আর সত্যি সত্যিই শ্বাস প্রশ্বাস অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে এলো। অপরাহ্ন তানহাকে নিচে বসতে বলল যাতে পুরোপুরি আরাম পায়। তানহা নিচে ঘাসের উপর বসলো,তার আসলেও বসার দরকার ছিল। অপরাহ্নও বসলো তানহার পাশে। ঘেমে মেয়েটার মুখমণ্ডল ভিজে আছে। অপরাহ্ন পকেট থেকে টিস্যু বের করে তানহার দিকে এগিয়ে দিলো। তানহা তাকালো সেদিকে। ইতস্তত করতে করতে টিস্যুটা হাতে নিয়ে কপাল মুছলো। অপরাহ্ন জানতে চাইলো,
“এখন ঠিক লাগছে?”
তানহা চশমার কোন ঠেলে আলতো করে মাথা দোলালো। মানে সে ঠিক আছে। অপরাহ্ন জিজ্ঞেস করলো,
“তোমার কি এজমার সমস্যা আছে?”
তানহা আবার মাটির দিকে তাকিয়ে মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বুঝাল।
“কবে থেকে?”
তানহা ছোট্ট করে জবাব দিলো,
“ছোট থেকেই।”
“ও,তাহলে ইনহেলার সাথে রাখোনি কেন? এজমার রোগীদের কাপড়চোপড়ের মতো ইনহেলারও সর্বদা নিজের সাথে রাখা উচিত।”
“রাখি,কিন্তু আজ হঠাৎ তুলতে ভুলে গিয়েছিলাম।”
তানহার কন্ঠ মলিন শোনালো। মেয়েটার হয়তো মন খারাপ হয়ে গেছে। মেয়েটা খুবই অন্তর্মুখী। তানহার মলিন চেহারাটা অপরাহ্নের ভালো লাগলোনা। একটু আগেও মেয়েটা কি সুন্দর হাস্যজ্বল ছিলো। কিছু একটা ভেবে অপরাহ্ন বলল,
“জানো ক্লিনিকে মাঝে মধ্যে এমন এমন পেশেন্ট আসে যে মাঝে মধ্যে নিজেই মানসিক রুগী হয়ে যায়৷ কালকের একটা ঘটনা বলি। এক মধ্য বয়স্ক চাচা এসে বলল,
” ডাক্তার সাব, কি ওষুধ দিলেন? পেটের অসুখ সারাইতে গিয়াতো আমার দাঁত সবগুলা ভাইঙ্গা গেল।”
আমি বললাম,
“কেন? আপনাকে তো আমি ওষুধ দিয়েছি। দিনে দুই চামচ করে খেতে বলেছি। খাননি?”
সে কি বলল জানো? বলল,
“আপনার ওষুধ খাইতে গিয়াইতো আমার দাঁত ভাঙলো। দিনে দুইটা কইরা স্টিলের চামচ খাইতে গিয়া আমার দাঁত সবগুলা শেষ। তাও পেটের অসুখ তো সারলোই না।”
অপরাহ্নের রুগীর কাহিনি শুনে তানহার ঠোঁট দুটো প্রসারিত হলো। স্মিথ হাসলো তানহা। অপরাহ্নের প্রয়াস সার্থক।ঘাড় বাকিয়ে দেখলো তানহাকে। মেয়েটা হাসলে ওর চোখও হাসে। যা স্বচ্ছ চশমার ভেতরে থাকলেও স্পষ্ট দেখতে পায় অপরাহ্ন। শীতল আবহ সৃষ্টি হলো অপরাহ্নের বক্ষপটে।
__
উথাল-পাতাল নাচে মগ্ন আদ্রিতা। নাচের মধ্যে হঠাৎ তার নজর গেল দূরে দাঁড়ান নিবিড়ের পানে৷হঠাৎ নজর যাওয়ার কারণ, সানভির ফুপাতো বোন সাবিহাকে নিবিড়ের পাশে দেখা। সাবিহাকে নিবিড়ের পাশে দেখে হঠাৎ তার নৃত্যরত পদযুগল টালমাটাল হয়ে গেল। সাবিহা নিবিড়ের কাছে দাঁড়িয়ে কিছু বলছে। মুখে তার হাসি লেগে আছে। কেন হাসছে সে? নিবিড় ভাইয়া কি তাকে জোক্স শুনিয়েছে? নাকি কাতুকুতু দিয়েছে? আদ্রিতার কেমন যেন গ্যাস্টিক হচ্ছে। মানুষের হাসিতেও বুঝি গ্যাস্টিক হয়! সাবিহার হাসিতে আমার গলা জ্বলছে কেন! তার হাসি কি বাসি তেলে ভাজা নাকি! আদ্রিতার এখন আর নাচতে ইচ্ছে না। সে এগুতে চাইলো নিবিড়ের দিকে। কিন্তু হঠাৎ নিবিড় ওখান থেকে অন্যদিকে চলে গেল। আর সাথে গেল সাবিহাও। আদ্রিতার কদম থেমে গেল। গ্যাস্টিক যেন তার বুক জুড়িয়ে ছড়িয়ে পড়লো। খুসখুস করে জ্বলছে বুক। মিউজিকের ধ্বনিও যেন খুব তিক্ত লাগছে তার কাছে। হঠাৎ করেই যেন নিবিড়ের উপর খুব করে তার অভিমান হলো। তার অবচেতন মন যেন বারবার বলছে,সে কেন গেল সাবিহার সাথে? তারা কি আলাদা ভাবে কথা বলতে গেল? কি এতো কথা আছে তাদের? অভিমানটা হঠাৎ বৃষ্টির মতো ঝাঁপিয়ে পড়লো আদ্রিতার ওপর। ঠোঁট উল্টে চলে এলো সে ওখান থেকে। এসব গান বাজনা এখন তার কানে বিষের মতো লাগছে। সে পার্টি এরিয়া থেকে সরে এসে একটা কোণে দেয়ালের পাশে এসে দাঁড়াল। কেন যেন হঠাৎ ভীষণ কান্না পাচ্ছে তার। ঠোঁট উল্টে হাত দিয়ে নাক ডলতে লাগলো বারবার।
কিন্তু তার পেছনে যে কেউ এসে দাঁড়িয়েছে তার খেয়াল নেই আদ্রিতার। আদ্রিতাকে একা দেখে পার্টিতে থাকা কারোর কু,রু,চিপূর্ণ নজর পড়লো তার ওপর। ছেলেটা অনেকক্ষণ ধরেই কুনজর গেঁড়ে রেখেছিল আদ্রিতার ওপর। নাচানাচির সময় আদ্রিতার শরীরের উপর তার কা,মু,ক নজর পড়েছিল। এমন একটা সুযোগের আশায়ই যেন ছিলো সে। আদ্রিতাকে একা দেখে ছেলেটাও ওর পিছে পিছে এসেছে। ধীরে ধীরে আদ্রিতার পেছনে এসে দাঁড়াল। ঘুরে দাঁড়িয়ে থাকায় আদ্রিতা তা দেখতে পেল না। ছেলেটা তার কা,মু,ক নজরে আদ্রিতার পুরো শরীর স্ক্যান করে নিলো। দাঁত দিয়ে নিজের ঠোঁট কামড়ে ধরে কুশ্রী চাহুনি দিয়ে হাতটা ধীরে এগুতে লাগলো। আদ্রিতার কোমড়ে হাত দেওয়ার জন্য হাত এগুচ্ছে। কোমড় স্পর্শ করতেই যাবে ঠিক তার আগেই অন্য আরেকটি শক্ত বলিষ্ঠ হাত এসে খপ করে ছেলেটার হাত ধরলো। চমকে তাকালো ছেলেটি। র,ক্তচক্ষু চোখের ক্রুদ্ধ চাহনির অধিকারী নিবিড়কে দেখে আৎকে উঠলো সে। কোনকিছু বুঝে উঠার আগেই নিবিড় তার হাত মুচড়ে ভেঙে পেছনের উল্টো দেয়ালে মুখ সহ চেপে ধরলো এক হাতে । শব্দ পেয়ে পেছনে ফিরলো আদ্রিতা। নিবিড়কে দেখে একটু চমকে গেল সে। চোখমুখ প্রচন্ড কঠিন হয়ে আছে তার। উনি এখানে কি করছেন? উনি না সাবিহার সাথে উলা লা লা করতে গেছিল! তাহলে এখানে কেন এসেছে! আদ্রিতা মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তার আগেই নিবিড় শান্ত গমগমে স্বরে বলল,
“এখান থেকে যা এক্ষুনি।”
রাগ হলো আদ্রিতার। সে নাকচ করে বলল,
“কেন? কেন যাব আমি? আমি এখানেই থাকবো।”
আদ্রিতা যেন কথাটা বলে ভীষণ বড় ভুল করে ফেললো। নিবিড়ের চেহারার কঠিনতা তো সেটাই বলছে। যা আদ্রিতার জবাবে ভয়ংকর রুপ ধারণ করলো। দাবানল নির্গত চোখের চাহুনি নিক্ষেপ করে হুংকার দিয়ে বলল,
“আই সেড গো, অরি। গেট দ্য হেল আউট অফ হেয়ার।”
অন্তর আত্মা কেঁপে উঠল আদ্রিতার,নিবিড়ের এমন ভয়ংকর কন্ঠে। সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়লো অভিমানের পালা। নাক ফুলিয়ে কান্না গলায় জমিয়ে দৌড়ে চলে গেল সে। আদ্রিতা যেতেই উল্টো দেয়ালে চেপে ধরা ছেলেটার দিকে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো নিবিড়। এক হাতে এতক্ষণ চেপে ধরে রেখেছিল ছেলেটাকে। যাতে আদ্রিতা দেখতে না পায়। ছেলেটা ছাড়া পাওয়ার জন্য ছটফট করছে। আতঙ্কে চোখ দুটো ফাটফাট করছে। নিবিড়ের ওই ভয়ংকর মুখাবয়ব দেখে কলিজা কাঁপছে তার। এমন বীভৎস লেলিহান, দাবালনের ন্যায় অগ্নি চক্ষু সে এর আগে দেখেনি। কপাল আর গলার রগ ফুলে ফেঁপে উঠেছে। কী ক্রুর সেই চাহুনি! ঠোঁটের কোণে কিঞ্চিৎ ক্রুদ্ধ হাসির রেখা টেনে নিবিড় বলল,
“ব্যাথা লাগছে? আমারও লাগছে। আর তুই যদি তোর কাজে সফল হতি তাহলে, ও ব্যাথা পেতো। আর সেটা আমার সহনশীলতার বাইরে।নিবিড়ের ডিকশনারিতে হাজার অন্যায়ের মাফ আছে। শুধু এটা বাদে। ব্যাস, এটাই করা উচিত হয়নি তোর। একদমই না।”
ছেলেটার আতঙ্কিত চোখ দুটো হঠাৎ যেন আরও ব্যাথাময় র,ক্তিম হয়ে উঠলো। মুখের আওয়াজ আঁটকে রাখায় চোখ দুটোই আর্তনাদ করে তার যন্ত্রণার বহিঃপ্রকাশ করলো।গলা কা,টা মুরগির মতো ছটফট করতে করতে একসময় নিস্তেজ হয়ে ঢলে পড়লো সে মাটিতে।
চলবে…….
গল্পের লেটেস্ট আপডেট পেতে আর গল্প নিয়ে যেকোনো আলোচনা আড্ডা দিতে আমার গ্রুপে জয়েন হওয়ার আমন্ত্রণ রইল। নিচে গ্রুপ লিংক দেওয়া হলো। জয়েন হতে নিচের লিংকে ক্লিক করুন। 👇
গ্রুপ
https://facebook.com/groups/170529085281953/