হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩১| #শার্লিন_হাসান

0
393

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩১|
#শার্লিন_হাসান

সেরিন আজকাল একটু বেশী দুঃসাহস দেখাচ্ছে। শুভ্রর থেকে দূরে তাই এমন। সামনে গেলে একবারে ভদ্র মেয়ে হয়ে যাবে সে। তার মেঝো শাশুড়ী আম্মুর বাসায় থেকে বেড়ানো শেষ হতে চলে এসেছে তার আন্টির বাসায়। পড়াশোনা তার ভালো লাগে না এই কথাটাই শুভ্রর কাছে বলতে পারেনা সে। প্রাইভেট আর মিউজিক একাডেমি নিয়ে বেশ ব্যস্ত সময় কাটে তার। শশীর বোর্ড এক্সাম শেষ। সেরিন পারছে না এখনি বিয়েটা দিয়ে দেয়। কিন্তু চৌধুরী পরিবারের যা ব্যস্ততা। বিয়ে বলে কথা! অনেক লেট হবে। সেরিনের এতো লেট সহ্য হচ্ছে না। এখন আরকী! আর্থর বিয়ের ডেট ফিক্সড করার সিদ্ধান্ত আসলে চৌধুরী পরিবার সবাই কুমিল্লায় ব্যাক করবে। সেরিনের ও হয়ত তাদের সাথেই যাওয়া হবে। তার বরটা! মনে,মনে কত বকা দেয় সেরিন। তার লাইফ আর তার বরের দেওয়া রুলস। সত্যি এই রুলস তার জীবনের সব সুখ শান্তি শেষ করে দিয়েছে।
সময়টা গৌধূলি লগ্নে প্রায়। ছাঁদে মৃদু বাতাস বইছে। সেরিন দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। তার থেকে অনেকটা দূরত্বে তাতান দাঁড়িয়ে। যদিও সেরিন তাকে পাত্তা দেয়না। তাতান এদিকটায় এসে সেরিনকে দেখে হেঁসে বলে,
“হেই সেরিন! কেমন আছেন?”

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনি?”

সৌজন্যতার খাতিরে কথাটা বলে সেরিন। তখন তাতান বলে,
“আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আমি কিন্তু আপনার একজন ভক্ত। আপনার সব ভিডিও আমি দেখি। আমি মিউজিক একাডেমিতে আছি। আপনি হয়ত খেয়াল করেননি।”

“ধন্যবাদ! আসলে এদিকওদিক তাকানোর সময় নেই আমার। তাই খেয়াল করিনা।”

“আচ্ছা সমস্যা নেই। আজান হয়ে যাবে বাসায় চলে যান।”

সেরিন মাথা নাড়িয়ে ভেতরে চলে যায়। মাগরিবের নামাজ আদায় করে বই নিয়ে পড়তে বসে সে। কুমিল্লায় কবে ব্যাক করবে সেই চিন্তায় তার রাতের ঘুম হারাম। তারউপর শুভ্র তার কথাকে বেশী পাত্তা দেয়না। এই নিয়ে সেরিনের বেশ রাগ। ওভার থিংকিং সাইডে রেখেস সেরিন পড়ায় মনোযোগ দেয়।

***********
“তুমি ভীষণ বা’জে মেয়ে নিশাত। ভীষণ বেয়াদ’ব! তোমার মতো বা’জে মেয়ের সাথে রিলেশন কেনো পাত্তা দেওয়াটাই আমার ভুল। তবে নিজেকে ওতো কিছু ভাবার দরকার নেই। আমি থাকতে আমার বোনের সংসারে কোন থার্ড ক্লাস মানুষের নজরের প্রভাব ফেলতে দিবো না।”

কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে মাহি। মাহির কথায় নিশাত পাল্টা শুধায়,
“তুমি নিজেই একটা ফাল’তু মাহী। আর আমি না তোমার বাবার বন্ধুর মেয়ে আর না তোমার ছোট বেলার সঙ্গী যে লুতুফুতু করবো তোমার সাথে। আমি তোমাদের শত্রু পরিবারের মেয়ে। আসলেই আমি বা’জে মেয়ে অবশ্য শত্রুদের সাথে শত্রুদের মিষ্টি ভাব চলে না।”

“সেই তো নিজের খোলসা থেকে বের হওয়ার কথাই ছিলো। তাহ এতোদিন এতো হুজুর সাজলি কেনো? আজলেই যারা বেশী ভালো সাজে না তাঁদের মধ্যেই আসল ভেজালটা থাকে।”

“কাম অন মাহিরবাবু! আপাতত এক্স! আমার আসলে তোমাদের পরিবার নিয়ে তেমন মাথা ব্যথা নেই। আমার বাপ ভাইয়ের আগের জমের জমিজামা নিয়ে থাকলে থাকতে পারে। বাট আনার তো শুভ্রর পরিবারের উপর ক্ষো’ভ! হ্যাঁ শুভ্রকে আমার ভালো লাগে। ভীষণ ভালো লাগে বাট তোমার বোন মাঝখান দিয়ে বা হাত ঢুকালো। এই জন্যই অবশ্য আমায় নিজের আসল রুপে আসতেই হলো।”

“তোর যে গাজা খোর ভাই! সে করবে সমাজসেবা আর মানবসেবা। ওটা তো নিজেই চলতে আটজন লাগে। আর তোর বাপ! সে তে আরেক লোভী। আরেকজনের হক নষ্ট করে নিজে ভোগ করতে চায়।”

“খবরদার আমার পরিবারে নিয়ে কিছু বলবি না।”

“এই চুপ থাকবি তুই? লজ্জা করে না তোর। আমার বোন তোকে সত্যিকারের বন্ধু ভেবেছে। এটাই সবচেয়ে বড় ভুল।”

“হেই ইউ! এসব সত্যিকারের সম্পর্ক ধুয়ে ধুয়ে পানি খা যা। কাজে লাগবে! আসলেই তোর সাথে প্রেম করাটাই ভুল ছিলো আমার। যাই হোক তোর বোন আমায় তার ভাইয়ের বউ বানাতে চেয়েছে হইনি। আমি মিস করবো না। তোর বোন তারউপর সুন্দরী আমার ভাইয়ের বউ বানানোই যায়। এক বিয়েতে কিছু যায় আসেনা। এমনিতে শুভ্র স্যার আরো পাঁচটা বিয়ে করে এক বাচ্চার বাপ হলেও তাকে আমি বিয়ে করতে রাজী আছি।”

“বেয়াদ’ব মেয়ে। আমি থাকতে আমার বোনের কোন ক্ষতি হতে দেবো না।”

“তুই ঘুমা কাজে দিবে! সব ব্যবস্থা করা শেষ। এখন শুধু তোর বোন ডিভোর্স পেপারে সাইন করা বাকী। খুব শীঘ্রই সেটাও হবে। আল্লাহ হাফেজ মাহির’বাবু।”

নিশাত কল কেটে দেয়। মাহীর বেশ রাগ হয়। মনে,মনে বি’শ্রী কয়েকটা গা’লি নিশাতের নামে দান করে। তবে তার শুভ্রর উপর বিশ্বাস আছে। শুভ্র তার খুব ক্লোজ ফ্রেন্ড সেজন্য শুভ্রর সম্পর্কে বেশ ভালো ধারণা ও আছে। সে এক কথার মানুষ! আর শুভ্র যেহেতু কথা দিয়েছে সেরিনকে আগলে রাখার সে তো আগলে রাখবেই। যতই যাই হয়ে যাক না কেন! শুভ্রর এই ব্যপারটা বরাবরই মুগ্ধ করে মাহীকে। দেরী না করে শুভ্রকে কল দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বলে মাহী। তবে নিশাত নিয়ে একটা শব্দ ও উচ্চারণ করে না সে।

********

সারাদিনের ব্যস্ততাকে ছুটি দিয়ে সেরিনকে কল দেয় শুভ্র। কল রিসিভ হতে সেরিন সালাম দেয়। শুভ্র সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“পড়াশোনা কেমন চলছে?”

“সে তার মতো চলছে আমি আমার মতো। আর আমার খেয়েদেয় কাজ নেই কে কীভাবে চলছে সেটার খোঁজ নেওয়ার।”

“ফা’জিল তোমার পড়াশোনার কথা বলছি আমি।”

“কুমিল্লায় নিলে বলবো পড়াশোনার কথা।”

“এইজন্যই তোকে কুমিল্লায় আনতে চাই না আমি। ফা’জিল মেয়ে একটা। এই তোর কুমিল্লায় কী রে হ্যাঁ? এতো কিসের তাড়া আমার কাছে আসার জন্য? চুপচাপ মন দিয়ে পড়াশোনা কর।”

“এই আপনি তুই তোকারী করছেন?”

“তোর থেকে শিখা এটা। খারাপ লাগছে না? আমার ও লাগে যখন তুই আমায় তুই তোকারী বলে কথা বলিস।”

“আর বলবো না।”

“নেক্সট লাইন প্লিজ?”

“ভালোবাসি।”

“তোহ্!”

“ব আকার ল।”

“এই জন্যই তোমার সাথে কথা বলতে চাই না। দিনদিন নির্লজ্জ হয়ে যাচ্ছো তুমি। কথায়,কথায় গা’লি না দিলে হয়না তোমার? আর এতো ভালোবাসা কী হ্যাঁ? দিনদিন ফাজিল হয়ে যাচ্ছো। এখন এই মূহুর্তে গালি দেওয়ার কারণে তোমার ভালোবাসা গ্রহণ করলাম না।”

“এই আপনি আমায় ছোট করলেন?”

“একটা কথাই বলবো লজ্জা নারীর ভূষণ।”

“তোহ? আপনি তো লজ্জা পান। আমার ওতো লজ্জা পেতে হবে না। আর দু’জন লজ্জা পেতে হবে এমন কোন কথা নেই। আমি লজ্জা পেলে আর বাবুর আম্মু হওয়া লাগবে না। দেখবেন আমাদের পরে যারা বিয়ে করবে দু’মাস না যেতে তারাও ট্রিপল হয়ে যাচ্ছে। আমাদের দুই যুগ গেলেও কিছুই হবে না।…….
শুনুন না….”

সেরিন ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে কল অনেক আগে কেটে গেছে। শুধু, শুধু সে বাক্যব্যায় করলো। প্রচুর রাগ হয় শুভ্রর প্রতি। সাত পাঁচ না ভেবে সব জায়গা থেকে ব্লক করে দেয় শুভ্রকে। এমনকি তার আন্টির ফোন থেকেও ব্লক করে দেয়। রাতের ডিনার করে ঘুমানের জন্য রুমে আসে সেরিন। বিছানায় গা এলিয়ে দিতে তার শান্তি,শান্তি ফিল হচ্ছে। শুভ্র রাগ দেখিয়েছে এখন সে ব্লক করে দিয়েছে।
“ওয়াও কী জোশ ব্যপারটা! সেরিন এবার তোর বর তোর জন্য অস্থির হয়ে উঠবে। দেখবি কীভাবে মিউমিউ করে তোর কাছে আসে। এই মানবকে সোজা করার জন্য এর থেকে ভালো ঔষধ আর কিছুই নেই।”

**********

পরের দিন সকালে, সেরিন ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নেয়। আজকে দুটো প্রাইভেট আছে তার। প্রাইভেট শেষ করে বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। লান্স করে আবার একাডেমিতে চলে যায় । সেখানে আদ্রিতার সাথে ভালো সময় কাটে। তবে তাদের একটা কনসার্ট আছে। যেটায় মেইন লিডার থাকবে সেরিন। সে মাইক হাতে গান করবে। যদিও খুব তাড়াতাড়ি হয়ে যাচ্ছে তবে এটা একটা খুশির খবর সেরিনের জন্য। তার পথচলা মাত্র শুরু হতে চলেছে। খুশি হলেও কিছুটা নার্ভাস সেরিন।

ক্লাস শেষ করে আদ্রিতার থেকে বিদায় বিয়ে বাসায় আসে সেরিন। তার আন্টিকে কিচেনে রান্না করতে দেখে। কিন্তু ডিনার তো আছেই আবার রান্না কেন? সেরিন ভাবে না। নিজের রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে নেয়। প্রচুর ক্লান্ত লাগছে। ত্রস্ত পায়ে কিচেনে যায়। তার আন্টি তাকে কফিট মগ এগিয়ে দেয়। সেরিন সেটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে মৃদু চেঁচিয়ে বলে,
“আপনি?”

শুভ্র দ্রুত সেরিনের কাছে আসে। এক হাতে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। সেরিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ধমকে বলে,
“তোমার সাহস অতিরিক্ত বেড়ে গেছে সেরিন। মেয়ে তুমি আমায় ব্লক করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছ। আর কী,কী করতে পারো আমার ধারণা হয়ে গেছে।”

“আরে আপনি ভুল বুঝছেন।”

“ডোন্ট ওয়ান্না টক!”

#চলবে

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here