#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩২|
#শার্লিন_হাসান
(প্রাপ্তবয়স্ক মনস্কদের জন্য উন্মুক্ত)
শুভ্র দ্রুত সেরিনের কাছে আসে। এক হাতে দরজাটা লাগিয়ে দেয়। সেরিনের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে ধমকে বলে,
“তোমার সাহস অতিরিক্ত বেড়ে গেছে সেরিন। মেয়ে তুমি আমায় ব্লক করার মতো দুঃসাহস দেখিয়েছ। আর কী,কী করতে পারো আমার ধারণা হয়ে গেছে।”
“আরে আপনি ভুল বুঝছেন।”
“ডোন্ট ওয়ান্না টক!”
“আর করবো না ব্লক।”
“ডোন্ট ওয়ান্না টক সেরিন।”
কথাটা বলে শুভ্র খাটের উপর বসে। আঙুল দিয়ে কপাল স্লাইড করতে থাকে। সেরিন ভয়ে কিছু বলছে না। এমনিতে শুভ্র রেগে আছে। সেরিন কফির মগ নিয়ে সেভাবে দাঁড়িয়ে রয়। রুম জুড়ে নিস্তব্ধতা বিরাজমান। সেরিন চুপচাপ দরজা খুলে রুম থেকে বেড়িয়ে যায়। লিভিং রুমে বসেই কফিটা শেষ করে কিচেনে যায়। তার আন্টির রান্না প্রায় শেষ। সেরিন প্রশ্ন করে,
“শুভ্র কখন আসলো আন্টি?”
“তুমি আসার কিছুক্ষণ আগেই।”
“তোমায় কল দিয়েছে?”
“হ্যাঁ!”
সেরিন কিছু বলেনা। আয়াশ,সিদরাত তারা শুভ্রর সাথে কথা বলছে। এটা,ওটা মজা করছে। শুভ্রও তাঁদের সময় দিচ্ছে। সেরিন সেদিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। তারা দু’জন দু’জনের সাথে রাগ করে আছে। রাতে ডিনার করতে একসাথে বসলেও সেরিন খেতে পারেনি। কয়েক লোকমা খেয়ে উঠে পড়ে। সেরিনের খাবার না খেয়ে উঠে পড়াটা শুভ্রর পছন্দ হয়নি। সে চুপচাপ নিজের খাওয়াটা শেষ করে। সেরিন সোফার উপর বসে ফোন স্ক্রোল করছে। সানজিদা শারমিন শুভ্রর কফি দেন। শুভ্র কফির মগ নিয়ে রুমে চলে যায়। সেরিন সোফায় বসে রয়। ঘড়ির কাটা এগারোটা। তখন সানজিদা শারমিন বলেন,
“এখানে বসে আছো কেন? যাও রুমে যাও। সারাদিন বাইরে দৌড়াদৌড়ি গিয়ে রেস্ট করো।”
“যাবো একটু পর। তুমি গিয়ে শুয়ে পড়ো।”
সানজিদা শারমিন গুড নাইট বলে চলে যান রুমে। সেরিন শুভ্রর ব্লক খোলে দেয়। ফেসবুক স্ক্রোল করছে সে। মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে গেছে তার। মূলত শুভ্রর ধমকটা পছন্দ হয়নি। সাড়ে এগারোটা বেজে গেছে শুভ্র তাকে ডাক ও দিচ্ছে না। সেরিন উঠে লিভিং রুমের লাইট অফ করে নিজের রুমের দিকে যায়। দরজা লক করে ফোনটা টেবিলের উপর রেখে ফ্রেশ হতে চলে যায়। শুভ্র খাটের উপর আধশোয়া হয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। সেরিন ফ্রেশ হয়ে চুলে বেনুনি করে। শুভ্রর সাথে একটা কথাও বলেনি সে আর না আজকে বলবে। লাইট অফ করে ড্রিম লাইট অন করে, চুপচাপ নিজের বরাদ্দকৃত জায়গায় শুয়ে পড়ে সেরিন। সেরিনকে এমন চুপচাপ দেখে শুভ্র কিছু বলেনা। খাটের পাশের টেবিলের উপর থেকে ছোট্ট ফুলের তোড়াটা হাতে নেয়। ছোট্ট করে শুধায়,
“সেরিন! ”
সেরিন কোন সায় দেয়না। শুভ্র তাকে পুনরায় ডাকে। সেরিন উঠে বসে। শুভ্রর দিকে দৃষ্টি স্থির করে বলে,
“কী হয়েছে? এতে ডাকাডাকি করছেন কেন? দেখুন আপনার মতো ওতো ধমকা-ধমকি করার বা ঢং করার মুড আমার নেই। আমি প্রচুর টায়ার্ড! ”
“আমি মনে হয় খুব সুখে আছি। তুমি মেয়ে আমাকে কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এনেছো আবার এখন ইগো দেখাচ্ছো?”
“এক্সকিউজ মি!! আমি আপনাকে বলিনি ঢাকায় আসতে। থাকুন না কুমিল্লায়। বউ দিয়ে কী হবে? হুদাই আমি বিয়েটা করে নিজের স্বাধীনতা ন’ষ্ট করলাম।”
“আমি তোমায় স্বাধীনতা দেইনা?”
সেরিন চুপসে যায়। এই লাইনটা অগ্রিম বলে ফেলেছে সে। সেরিনকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্র শুধায়,
“এইবারের মতো ক্ষমা করলাম। নেক্সট টাইম এই লাইন মুখে আনলে খবর আছে।”
“আর বলবো না।”
“তুমি সবসময় বলবো না,করবো না বলো। তারপর ঠিকই একই কাজই করো সেরিন।”
“আরে বা’ল একবার বললাম তো।”
“আবার গা’লি দিচ্ছো?”
“আর দিবো না।”
“এর আগে কয়বার এই কথাটা বলেছো?”
“হ্যাঁ বলেছি। বলতেই পারি। আমি এক কথা একশ বার বলবো এটা অন্য হিসাব বাট আপনি এক কথা এক বারের বেশী আমার কানের সামনে বলবেন না।”
“ফাজি’ল হয়ে গেছো তুমি। মাই-র দিবো যেদিন সেদিন বুঝবা।”
“আচ্ছা আসুন আপনায় আমি আদর করি। আপনি যেহেতু মাই-র দিবেন।”
“একটু তো লজ্জা রাখো সেরিন। লজ্জা নারীর ভূষণ।”
“যাহ্ গোলা***পুত! তোর আর বাবা হতে হবে না।”
“আসতাগফিরুল্লাহ! সেরিন তুমি এতো বা’জে গালি দেও?”
“আসলে লোক লজ্জার ভয়ে বলতে পারিনা। এই গালিটা আমার ভীষণ পছন্দের।”
(দ্রঃ ইট’স মি🥲 ইন ফিউচারে নিজের জামাইকে বলবো)
কথাটা বলে সেরিন মুখে হাত দিয়ে ফেলে। এই গালিটা এভাবে দিয়ে ফেলবে ভাবতে পারেনি। এই বুঝি শুভ্র তাকে চ’ড় দিলো।
“আচ্ছা যাও তোমার কথাটা রাখবো। এতেদিন ধরে পাগলামি করছো।”
কথাটা বলে শুভ্র সেরিনের অধরে নিজের অধর ছোঁয়ায়। শুভ্র নিজে থেকে তাকে ছুঁয়ে দিচ্ছে। সেরিন তার প্রেমিক-পুরুষের ছোঁয়া নিজের সর্বাঙ্গে মাখছে। মূহুর্তে দু’জন অন্তর্নিহিত হলো ভালোবাসার উম্মাদনা থামাতে।
************
পরের দিন সকালে সেরিন শাওয়ার নিয়ে আসতে শুভ্র তাকে গতকাল সন্ধ্যায় আনা ফুলের তোড়াটা দেয়। রাতে তো দেওয়া হয়নি। সেরিন নেতিয়ে পড়া ফুলগুলোতে হাত ভোলায়। সাদা এবং কালো গোলাপ। শুধু ফুল না, সেরিনের জন্য এক কার্টুন চকলেট ও এনেছে শুভ্র। সাথে দুটো টেডিবিয়ার। একটা লাভ শেপের তাতে “Love you Bow” লেখা আরেকটায় “SorrY Mrs Chowdhury”
সেরিন গিফ্ট গুলো দেখে হাসে। শুভ্র সহ সকালের নাস্তা করে নেয়। সিরাত,আয়াশ নাস্তা করে স্কুলে চলে যায়। সানজিদা শারমিন রান্নায় ব্যস্ত। সেরিন তাকে হেল্প করে রুমে চলে আসে। শুভ্র খাটে শুয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। সেরিন ও চুপচাপ তার বুকে মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। শুভ্র ফোন রেখে তার বউয়ের চুলে বিলি কেটে দেয়। সেরিনের কপালে অধর ছুঁইয়ে বলে,
“এখন আমার সাথে কুমিল্লায় যাবা নাকী পরে?”
“এখন তো আমার একটা কনসার্ট আছে সেটার প্রি-পারেশন নিতে হবে। এটা আমার প্রথম কনসার্ট এন্ড স্বপ্নপূরণের পথে মাত্র পা রাখবো।”
“আই হোপ তোমার এই জার্নিটা ভালো কাটবে। দেখো হয়ত এই একটা কনসার্ট দিয়ে তুমি অনেকটা জনপ্রিয় হতে পারো।”
“কী জানি!”
“এই সেরিন তুমি কখনো পরিচিত মুখ হলে বা অনেকটা এগিয়ে গেলে আমায় ভুলে যাবে? বা ধরো তোমার কাছে অনেক টাকা পয়সা হলো, আমার থেকে বেটার কেউ আসলো তাহলে কী আমার হাত ছেড়ে দিবা?”
“এই আপনি পাগ’ল হয়ে গেছেন? আমি একটা পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ আছি। আর শুনুন আমি বাবুর পাপাকে ভীষণ ভালোবাসি। আমার জীবনের প্রথম প্রেমটা তার প্রতি এসেছিলো। এবং আমার প্রেমিক পুরুষ থেকে সে আমার অর্ধাঙ্গ। আমি কখনো হাত ছাড়বো না।”
“দেখা যাবে।”
“এ্যাই অ্যাম সিরিয়াস। আচ্ছা আপনি আমায় হারানোর ভয় করেন?”
“তুমি অবুঝ নও সেরিন। আর আমি অনুভূতি প্রকাশ করতে পছন্দ করি না।”
“আচ্ছা সেসব বুঝলাম। এবার বলুন ” বউ ভালোবাসি।” আপনি এখন অব্দি আমায় ভালোবাসি বললেন না।”
“বলবো না।”
“আপনি আমায় ভালোবাসেন না।”
“তুমি ভালোবাসা প্রকাশ করছো আমি শুনছি। একদিন আমি প্রকাশ করবো সেদিন নাহয় তুমি শুনে যেও। আর তৃতীয় দিন দু’জনেই ‘ভালোবাসি’ বলার উত্তরে ‘আমিও ভালোবাসি’ বলবো।”
“ঠিক আছে।”
শুভ্র কিছু বলেনা। সেরিনও চুপচাপ। মনে,মনে ভাবছে,
” সব কিছুতেই কী রুলস দেওয়া লাগে ভাই? না শুভ্র স্যার তো জানেনা তাকে আমি ভয় পাই সেখানে হাত ছাড়ার কথা ভাবা বিলাসিতা। আর উনি এটা আমায় জিজ্ঞেস ও করলো। জানি করলার জুশ আমায় ভালোবাসে কিন্তু প্রকাশ করেনা। আমার মতো মিষ্টি একটা মেয়ের কপালে এমন করলার জুশ জুটলো। অবশ্য জুটেনি নিজেই কান্না রান্না করে জুটিয়েছি। সবই কপাল! যাই হোক মানুষটা সঠিক হলে ভালোবাসা মন্দ না! আমার মানুষটা সবসময় আমার থাকুক এবং আমার শুধুই আমার থাকুক।”
মুচকি হাসে সেরিন। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,
“শুনছেন? আপনি আমার থাকবেন এবং আমার শুধুই আমার থাকবেন। আমি আমার ভালোবাসার মানুষটাকে কারোর সাথে কম্পেয়ার করতে পারবো না। আর না কারোর সাথে তার ভালোবাসার কম্পেয়ার করতে চাই।”
#চলবে
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/