হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৩| #শার্লিন_হাসান

0
325

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৩|
#শার্লিন_হাসান

শুভ্র কুমিল্লায় চলে গেছে দুইদিন আগে। আজকে শুক্রবার। সেরিন ভাবলো শাড়ী পড়া যাক। যেহেতু এই বিল্ডিংয়ে তেমন মানুষজন থাকেনা। দুই তিনজন ভাড়াটিয়া। তারাও তাঁদের মতো ব্যস্ত। ছাদে তেমন কেউই যায় না। সেরিন নামাজ পড়ে লান্স করে নেয়। শুভ্রকে বলেছে সে শাড়ী পড়বে আজকে। শাড়ী পড়ে পিকচার তুলে দিবে। শুভ্র কিছু বলেনি। কল রেখে সেরিন ব্লাক কালার জর্জেট শাড়ী পড়ে নেয়। সিদরাত,আয়াশ সহ তারা ছাদে যায়। সেরিনের কোমড় অব্দি চুল ছাড়া। কানের পিঠে একটা সাদা কাঠগোলপ গুঁজানো। সিদরাতকে দিয়েই পিকচার,কয়েকটা ভিডিও করিয়ে নেয় সেরিন। এরই মাঝে কোথা থেকে তাতান এসে হাজির হয়। সেরিনের মোটেও পছন্দ হয়নি বিষয়টা। তাতান সেরিনকে দেখে হা করে তাকিয়ে রয়। সেরিন চলে যেতে নিবে তাতান এসে পথ আটকায়। সেরিন দাঁড়িয়ে রয়। তখন তাতান বলে,
“আপনি? কেমন আছেন?”

“ভালো। আপনি?”

“ভালো। আপনাকে কালো শাড়ীতে দারুণ মানায়।”

” ধন্যবাদ।”

“আরে,আরে আপনার ফুলটা পড়ে যাচ্ছে তো!!”
সেরিন হা করে তাকিয়ে রয়। তাতান তার অনুমতি না নিয়েই কাঠগোলাপটা তার কানের পিঠ থেকে নিজের হাতে নিয়ে পুনরায় সেরিনকে পড়িয়ে দেয়।

“আপনার সাহস তো কম না আমার অনুমতি না নিয়েই টাচ করেছেন।”

” ভুল হয়ে গেছে আপু। অনুমতি নিলেই ভালো হতো শুধু টাচ না অন্য কিছুও করা যেতো।”

“এক থাপ্পড় দিয়ে গালের দাত সব পেলে দেবো গো***পুত! তুই চিনিস আমায়? আমার নাম সেরিন পাটওয়ারী মিশাত। তোর মতো লুজার কে কীভাবে ঠিক করতে হয় সবই আমার জানা আছে। শা’লা ক্যারেক্টর হলো ভা’ঙা ব্রিজের মতো নড়েচড়ে। শক্ত না! ভাঙা ব্রিজে ইট সিমেন্ট দিয়ে শক্ত করে নিস তাহলে আমার টাইপের মেয়েদের টাচ না তাঁদের থেকে চু’মু ও খেতে পারবি। এনি ওয়ে ধন্যবাদ দিতে হবে না আমি আবার একটু পরোপকারী। নেক্সট টাইম হাই হ্যালো করতে আসলে তোর জায়গা মতো এমন একটা কিক মারবো, ফিউচার সাথে চোখ টাও অন্ধ হয়ে যাবে। এমনিতেই চার চোখ লাগানো লাগে। তখন সুন্দরী রমনী খুঁজতেই কষ্ট হয়ে যাবে ফিউচারে মাঠে/খাটে খেলাধূলা করা তো পরের হিসাব। সো বি কেয়ারফুল!!”

কথাটা বলে সেরিন তেজ দেখিয়ে চলে আসে। দু’চারটা চ-ড় মারতে পারলে ভাল্লাগতো তবে যা বলেছে মনের সাধ মিটেছে। আরো বাজে দুটো গা’লি দিতে পারলে বোধহয় আরো ভালো হতো।

বাসায় ঢুকেই শাড়ী চেন্জ করে নেয়। মেজাজ তার তুঙ্গে উঠে আছে। কিছুই ভালো লাগছে না। তাতানের কত বড় আস্পর্ধা তাকে টাচ করলো।

“আচ্ছা কেউ ইচ্ছে করে এমনটা করছে না তো? এই তাতান কা’নাকে দেখে গাধা টাইপ লাগে। কিন্তু এটা সম্পূর্ণ নাটকীয়। কে আবার আমার পেছনে পড়লো?

ধূর! কে আবার পড়বে? এই ছেলের ক্যারেক্টারে সমস্যা।”

সেরিন নিজেকে স্বান্তনা দিয়ে এই কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছে।

সন্ধ্যায় আবার শুভ্র কল দেয়। সেরিনের মনটা খারাপ তবে শুভ্রকে বুঝতে দেয়না। শুভ্র সুন্দর ভাবেই বলে,
“পিকচার দাওনা?”

“আরে ভালো লাগছে না। পরে দিবো।”

“আগে আমি দেখবো তারপর তোমার অডিয়েন্স!”

“ঠিক আছে।”

“মুড অফ কেনো সেরিন?”

“এই কী সেরিন,সেরিন করছেন? ভালোবেসে একটা সুন্দর ডাকনাম ও তো দিতে পারেন। আসলেই আপনি সবার মতোই!”

“ওতো লুতুফুতু করার সময় নেই।”

“আজব! এখানে লুতুফুতুর কী হলো? আমি আপনার বউ আপনার অর্ধাঙ্গিনী। আর এটা একটা ভালোবাসা প্রকাশ বুঝলেন? কী আর বুঝবেন মাথায় তো সমস্যা আপনার।”

“এই তুমি আমায় আর কত খোঁটা দিবা?”

“যতদিন পর্যন্ত না আপনার রুলস যায়।”

“সেটা আমৃত্যু পর্যন্ত থেকে যাবে।”

“বা’ল! ”

“আবার গা’লি দিচ্ছো?”

“ভাল্লাগেনা!”

“দেখো সেরিন সব বলো,করো ঠিক আছে কিন্তু এই গা’লি? তুমি জানো তোমার কত গুনাহ হয়?”

“আর বলবো না।”

“তোমার গা’লি না দেওয়ার প্রমিসটা লোকাল বাসের মতো হয়ে গেছে আজকাল।”

“চুপ যাবেন?”

“আচ্ছা যাও পড়তে বসো।”

“এমনিতে মুড অফ পড়ার কথা না বললেও পারতেন।”

“তাহলে ঘুমাও যাও! আমার অফিসের কাজ আছে।”

“আচ্ছা যাচ্ছি! আগে বলুন ‘ভালোবাসি বউ’।”

“তুমি বলো।”

“আমি আপনায় আগে বলেছি আপনি আগে বলবেন।”

“ঠিক আছে।”

“বলুন?”

“তুমি ফাজিল হয়ে গেছো সেরিন।”

“সেম টু ইউ। আপনিও ফাজিল হয়ে গেছেন।”

“আসলেই ফাজি তুমি।”

“এবার বলুন তো?”

” আই লাভ ইউ!”

“আই লাভ মি টু! থ্যাংকিউ স্যার।”

“এটা কী হলো?”

“ত্যাড়ামী।”

“আর বলবো না।”

“আচ্ছা থাক।ভালোবাসি!”

“ধন্যবাদ আপু।”

“এই আমি তোর কোন জন্মের আপু?”

“আবার তুই তোকারী করছো?”

“ওহ্! আমি আপনার কোন জন্মের আপু? আর কখনো আপু বললে ব্লক মে’রে দিবো মনে রাখবেন।”

“আচ্ছা বায়!”

“কী এক করলার জুশ কপালে জুটলো রে ভাই। এতো তেজ কেন আপনার?”

” তেজী মানুষের থেকে দূরে থাকুন প্লিজ ম্যাম!”

“বায়!”

সেরিন কল কেটে দেয়। শুভ্র ও আর কল ব্যাক করে না। সেরিন মনে,মনে শুভ্রর চৌদ্দ গুষ্টি উদ্ধার করে।
” মানে মানুষ এতো ত্যাড়া কেমনে হয় ভাই? এতো করলার জুশ কেনো? আমার মতো মিষ্টি মেয়ের জামাই হওয়া চাই আমার থেকেও মধুর। তা না কী কোথাকার তেজী,করলার জুশ কপালে জুটলো।”

**********

দেখতে,দেখতে প্রায় পনেরোদিন কেটে যায়। শুভ্র পুনরায় ঢাকা আসে। সেরিনের কনসার্ট আগামীকাল সন্ধ্যায়। শুভ্র সহ যাবে। ঢাকা থেকে সিলেট যাবে কনসার্টে। সেরিন অনেক বেশী নার্ভাস তবুও নিজেকে স্ট্রং রাখছে। সকালের নাস্তা করে তারা বেড়িয়ে পড়ে। মিউজিক একাডেমির কিছু টিচার সাথে সেরিনের টিম,শুভ্র সহ তারা যাবে। সেরিন শুভ্রর পার্সোনাল কারে করেই রওনা হয়। পুরোটা পথ শুভ্রকে এটা,ওটা খোঁচাখুঁচি, বকাঝকা ইত্যাদি,ইত্যাদির মাধ্যমে কাটিয়েছে সেরিন। শুভ্র ও সব কথা শোনেছে ধৈর্য সহকারে। ধমক দিলেও আবার সমস্যা। মেয়েটা কান্না করতে,করতে যাবে।
জ্যাম ঠেলে প্রায় বিকেলের দিকে তারা সিলেট পৌঁছায়। সেখানেরই বুকিং দেওয়া একটা হোটেলে উঠে তারা। সেরিন শাওয়ার নিয়ে হাল্কা নাস্তা করে নেয়। সন্ধ্যা আটটায় তাঁদের কনসার্ট শুরু। এর ফাঁকে তার টিমের সাথে বসে কিছুক্ষণ রিহার্সেল করে।

সময় মতো নিজেকে রেডি করে নেয় সেরিন। আজকে সে বাঙালি মেয়ে সেজেছে। শালীন পোষাকে। থ্রিপিসের, কপালে একটা কালো টিপ। মুখে নেই তেমন সাজ। এই সিম্পল লুকেই সেরিনকে ভীষণ সুন্দর লাগছে। আটটা বাজতে বেশী দেরী নেই। নিজেকে ঠান্ডা রাখে সেরিন। শুভ্র যাওয়ার সময় তাকে আলতো করে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খায়। গালে হাত স্পর্শ করে বলে,
“এই যে আমি আছি তোমার পাশেই। একদম ভয় পাবা না।”

সেরিন মাথা নাড়ায়। একসাথে তারা বেড়িয়ে পড়ে।
ফাইনালী সেই মূহুর্তটা এসেই পড়েছে। সেরিন মাইক হাতে স্টেজে যায়। সাথে তার টিম আছে। একেকজন একেক টিউন বাজাচ্ছে। সেরিন আজকে দু’টো গান গাইবে। “অনিকেত প্রান্তর” এবং “নিঠুর মনোহর”।
শুভ্র ফোন হাতে ভিডিও করছে। সেরিন বরাবরই ভালো গায়। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
অনুষ্ঠান শেষ হতে অনেকেই অটোগ্রাফ নিতে এসেছে।পিক তুলেছে। কেউ,কেউ ফুলও দিয়ে গেছে। সেরিন হাসিমুখে সব গ্রহণ করেছে। পাশে শুভ্র ও দাঁড়ানো আছে। সেরিনকে কেউ,কেউ জিজ্ঞেস ও করেছে, ” আপু কী সিঙ্গেল”? সেরিন শুভ্রর দিকে একনজর তাকায়। তার দৃষ্টি সেরিনের দিকে তাও কঠোর দৃষ্টি। সেরিন মুচকি হেঁসে বলে,
“না আমি ম্যারিড।”
তখন একটা মেয়ে শুভ্রকে দেখিয়ে বলে,
“এই ভাইয়া আপনি কী সিঙ্গেল?”
সেরিন নিজেকে শান্ত রেখে বলে,
“উনি আমার হাজব্যান্ড!”

সেরিন শুভ্রকে দেখে অনেকে, “মাশাল্লাহ” বলেছে। তাঁদের মিটআপ অনুষ্ঠান শেষ হতে সেরিন শুভ্রর সাথে পিকচার তোলে। হোটেলে যেতে যেতে প্রায় বারোটার উপর বেজে যায়। সেরিন আজকের দিনেও অনেক প্রশংসা পেয়েছে। যেটার জন্য সে আলহামদুলিল্লাহ।
রাতের ডিনার আসতে শুভ্রই খাইয়ে দেয় সেরিনকে। দু’জন মিলে কিছক্ষণ গল্প করে শুয়ে পড়ে। সেরিনের পরম শান্তি এবং সুরক্ষিত জায়গা সেই শুভ্রর বক্ষ:স্থল!

পরের দিন সিলেট থেকে সোজা কুমিল্লায় আসে সেরিন। দীর্ঘ পথ জার্নি করে চৌধুরী বাড়ীতে আসে। এদিকে আর্থ শশীর বিয়ের তোরজোর চলছে। সেরিনের কনসার্টের জন্য লেট করা হয়েছে। আগামী কাল থেকে শপিং শুরু হবে। চৌধুরী পরিবারের সবাই কুমিল্লায় এসেছে গতকাল। আজকে শুভ্র এবং সেরিন। সবার সাথে দেখা করে সেরিন রুমে চলে যায়। বাকীরা সেরিনের কনসার্ট ভিডিও দেখছে। আদ্রিতা,অধরা,আর্থ থেকে শুরু করে বাড়ীর সবাই। বেশ প্রশংসাও করে সেরিনের ভয়েসের। আরফিন চৌধুরী বিডি এসেছেন কয়েকদিন।

সন্ধ্যায় সবাই খোশগল্প করতে বসে। তাঁদের সাথে সেরিন ও আছে। বিশেষত বিয়ে নিয়ে প্লানিং।
সবার মাঝ থেকে শুভ্র সেরিনকে রুমে ডাকে। বিষয়টায় সেরিন বেশ লজ্জা পায়। তবে একটু চিন্তা হয়। এর আগে কখনো এভাবে ডাকেনি। হয়ত সিরিয়াস কোন বিষয়। সেরিন ও তড়িঘড়ি রুমে যায়। শুভ্র সোফায় বসে আছে। কপালে তার হাত ঠেকানো। সেরিনের অস্তিত্ব টের পেতে শুভ্র উঠে দাঁড়ায়।
তখন সেরিব শুধায়,
“কী হয়েছে?”

“ঢাকায় তোমায় কেনো পাঠিয়েছিলাম?”

” গানের প্রিপারেশন নেওয়ার জন্য।”

“আর তুমি কী করেছো?”

” আপনার রুলস মেনে চলেছি।”

“ওটা তো জাস্ট শো অফ! ছিঃ সেরিন ছিঃ তুমি এমনটা করতে পারলে? এখনি আমি থাকা সত্ত্বেও তুমি মেয়ে পরপুরুষের ছোঁয়া গায়ে মাখতে পেরেছো সেই তুমি একটু উপরে উঠলে কী করবে আমার জানা আছে। তুমি আমার হাত ছেড়ে দিতে দু’বার ও ভাববে না। লিসেন! তুমি চলে গেলে আমার কিছু যায় আসেনা। আমি তেমাকে হারানোর ভয় করিনা। আমি ভয় করি আমার ভালোবাসা হারানোর। পবিত্র ভালোবাসা যেটা প্রথম এবং একবার একজনের প্রতি তৈরী হয়েছে। দ্বিতীয় কারোর ভাগ হবে বা সেটায়। আমি শুভ্র তোমায় হারানোর ভয় করছি না। আমি শুভ্র আমার চঞ্চলপরীর ভালোবাসা হারানোর ভয় করছি।”

“আমি কী করেছি?”

” তোমার কী কমন সেন্স টুকুও নেই? সব কিছুতে এমন বাচ্চামো পছন্দ না আমার।”

“ক্লিয়ার করে বলবেন তো?”

“এই তুমি নাটক করছো?”

“কিসের নাটক? নাটক করছেন আপনি!”

“সেরিনননননন!”

চিৎকার করে উঠে শুভ্র। সেরিন ভয়ে কেঁপে উঠে। ধমকটা ভীষণ জোরেই ছিলো। শুভ্র তার ডান বাহু চেপে ধরে। সেরিন ব্যাথায় শুভ্রর থেকে নিজের বাহু ছাড়ানোর চেষ্টা করে। কোন লাভ হয়নি! শুভ্র আজকে ভীষণ ক্ষেপেছে। সেরিনের কর্ণিশ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়ে। শুভ্র তাকে ছেড়ে জোরে ধাক্কা দেয়। যার ফলে সেরিন মেঝেতে পড়ে যায়। চিল্লিয়ে বলে,

” আমার সাথে কথা বলার চেষ্টা ও করবেনা তুমি । লিভ মি! জাস্ট লিভ মি! আমার চোখের সামনে থেকে সরে যাও তুমি। নাহলে গাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দিবো আমি। ”

#চলবে

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here