#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৫|
#শার্লিন_হাসান
পাশ থেকে আকাশ বলে। সেরিন তখন শুধায়,
“মিথ্যে বলবি না একদম।”
“তুমি চুপ থাকো।”
শুভ্র ধমকে বলে সেরিনকে। সেরিনের কান্না পাচ্ছে। শুভ্র তাকে এভাবে কেনো অবিশ্বাস করছে?
“প্রথম দোষের পর সব ভালোই কী সন্দেহ জনক হয়?”
শুভ্র জুম্মানের দিকে তাকিয়ে বলে,
“একদম আমার সাথে মিথ্যে বলার চেষ্টা ও করবি না। এখানে একটা কথাও যদি মিথ্যে হয় তো তোর হাত ভে’ঙে আমি হসপিটালে বসিয়ে রাখবো।”
আকাশ,জুম্মান কিছুটা থতমত খেয়ে যায়। সেরিন চুপচাপ। ওদের সবাইকে চুপ থাকতে দেখে শুভ্র আকাশের কলার চেপে ধরে জুম্মানের দিকে তাকায়। রাগী কন্ঠে বলে,
“ওইখান থেকে এক পা ও নড়বি না।”
কথাটা শেষ হতে আকাশকে নন স্টপ থাপড়াতে থাকে। সেরিন কিছটা ভয় পেয়ে যায় শুভ্র মা-র দেখে। কম করে বিশটার বেশী থাপ্পড় দিয়েছে আকাশকে। ছেলেটা কালা হয়ে গেছে বোধহয়। শেষে একটা ধাক্কা দিতে করিডোরের গ্রিলের সাথে বা’রি খায় ছেলেটা। নিজের কান,মাথা চেপে ধরে ব্যথায়। অনেকটা ভীড় জমেছে করিডোরে। তবে কেউ কিছু বলার সাহস পাচ্ছে না। অনেকে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। শুভ্র পুনরায় জুম্মানের কলার চেপে ধরে। চিৎকার করে বলে,
“তোর সাহস বড্ড বেড়ে গেছে জুম্মান। তোকে এর আগে কতবার ওয়ার্নিং দেওয়া হয়েছে? আমি বলেছি কোন মেয়েকে র্যাগিং করা যাবে না। আমার কথার দাম রইলো কোথায়? কত বড় কলিজা তোর মেয়ের ওরনা ধরে টান দিয়েছিস। আজকে তোর সেই বড় কলিজা আমি টেনে এনে ছোট করবো।”
তখন জুম্মান কাঁপা কাঁপা স্বরে বলে,
“আর করবো না স্যার। ওকে স্যরি বলে দিচ্ছি।”
“ও যা বলেছে তা সত্যি তো?”
“হ্যাঁ!”
ভয়ের চোটে জুম্মান সবটা স্বীকার করে নেয়। সেরিন একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়ে। কেউ কিছু দেখলো না। শুভ্র জুম্মানকে একটা লা’থি মারে। জুম্মান নিচে পড়তে শুভ্র পুনরায় টেনে তুলে। থাপ্পড় দুতে,দিতে নিচের দিকে বেয় জুম্মানকে। সবাই তাকিয়ে আছে। শুভ্রর পেছন দিয়ে বাকীরাও আসছে। দোতালা থেকে থাপ্পড় দিতে,দিতে নিচে নিয়ে যায়। সামনের মাঠে এনে চু’ল গুলো টেনে ধরে বলে,
” চুল এতো বড় কেন? মেয়ে সাজতে মন চায়? দপ্তরি…”
বলার সাথে,সাথে একজন হাজির। শুভ্র তার দিকে তাকিয়ে বলে,
“আমার রুম থেকে কে’চিটা নিয়ে আসো তো!”
ওইদিকে আকাশ ছেলেটার মাথায় পানি ঢালা হচ্ছে। জুম্মান দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাথায় তার শরীর ও অসাড় হয়ে আছে। শুভ্র এখনো তার কলার চেপে ধরে আছে। কিছুক্ষণের মধ্যে কে’চি আনতে শুভ্র জুম্মানের বড়, বড় চুলগুলো কেটে দেয়। বাকীরা শুধু দেখছে। অনেক দিন পরেই শুভ্র কাউকে ধরেছে। আর ধরলেও ধরার মতো ধরে। কেউ,কেউ সেরিনের দিকে তাকাচ্ছে কেউ আকাশ,জুম্মানকে দেখছে। তখন শুভ্র চেঁচিয়ে বলে,
“আজকের ঘটনার সবার ব্রেইনে গেঁথে রাখবি। এরপর আমার কানে কোন মেয়েকে টিজ করার কথা আসলে এর থেকেও ভয়ংকর পরিনতি হবে।”
কথাটা বলে জুম্মানকে ছেড়ে দেয়। বাকীরা আস্তে,আস্তে চলে যায়। নাহলে আবার তাঁদের উপর কখন ঝড় আসে বলা যায় না। সব বিশ্বাস করা গেলেও শুভ্রর মুডকে বিশ্বাস করা বড্ড দায়। ভীড় কমতে যে যার মতো চলে যায়। সেরিন ও ল্যাব ক্লাসের দিকে যায়। শুভ্র কিছুটা সামনে সেরিন পেছন দিয়ে। দ্বিতীয় ভবনে প্রবেশ করতে শুভ্র সেরিকে তার রুমে আসার জন্য বলে। সেরিন চুপচাপ রুমে যায়। শুভ্র নিজের চেয়ারে বসে। সামনে সেরিন দাঁড়িয়ে আছে। রুমে এসি চলছে তাও সেরিন বরাবর ঘামাচ্ছে। এই বুঝি শুভ্র তাকে ধমক দিলো। কিন্তু শুভ্র সেসবের কিছুই করেনি। বরং নরম স্ব-রে বলে,
“ওরা আর কিছু বলেছে তোমায়?”
“না।”
“সত্যি করে বলো?”
“না কিছু বলেনি।”
“এর আগে বোতল টা জুম্মান ছুঁড়ে-ছিলো তাইনা?”
সেরিন হ্যাঁ বোধকে মাথা নাড়ায়। শুভ্র কিছু বলেনা। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর শুভ্র বলে,
“ভালো হয়ে যাও সেরিন। তোমায় হয়ত তেমন মা-রতে পারবো না তবে আমি ভালো অবহেলা করতে জানি। তুমি আমার মানে একান্ত আমার।”
“ওই ভিডিওটা কেউ ইচ্ছে করে করেছে। ওই তাতান হুট করে এসেই আমার কানের পিঠ থেকে ফুল নিয়ে পুনরায় পড়িয়ে দিয়েছিলো। এই নিয়ে তাকে আমি বকা-ঝকা গালাগালি করেছিলাম। আপনার বিশ্বাস না হলে সিদরাত আর আয়াশকে জিজ্ঞেস করতে পারেন। আমি নহায় মিথ্যে বলছি ওরা তো ছোট ওরা মিথ্যে বলবে না।”
“ওদের জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন নেই। যাও আজকে আর ক্লাস করতে হবে না। বাড়ী চলে যাও।”
“আচ্ছা পাটওয়ারী বাড়ীতে যাবো। মাহী আসবে নিতে! আপনার সাথে হয়ত আর দেখা হবে না। আল্লাহ হাফেজ।”
সেরিন কথাটা বলে চলে আসে। শুভ্র সেরিনের যাওয়ার দিকে তাকায়। কিছু বলেনা। মেয়েটা অভিমান করেছে তার কথায় বুঝা যায়। শুভ্রর নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে। সেদিন রাতে হয়ত ওইরকম বিহেভ করা উচিত হয়নি তার। যাই হোক সে জানে সেরিন রাগ, অভিমান করলেও তার কাছেই আসবে।
গেটের সামনে এসে মাহীকে মেসেজ দেয় সেরিন। পাঁচ মিনিটের মাথায় মাহী গাড়ী নিয়ে আসে। সেরিন গাড়ীতে বসতে পুনরায় গাড়ী স্টার্ট দেয়। সেরিন বেশ আনমনা ব্যপারটা মাহী খেয়াল করে।
পাওয়ারী বাড়ীতে আসতে সেরিনকে পেয়ে সবাই খুশি। সেরিন শাওয়ার নিয়ে লান্স করে নেয়। সবার সাথে কিছুক্ষণ আড্ডা দিয়ে ঘুমাতে চলে যায় সে।
সন্ধ্যায় আর্থর সাথে কথা বলছে শশী। একপর্যায়ে আর্থ বলে উঠে,
“ভাইয়ার সাথে কী সেরিনের কোন জামেলা হয়েছে? তুমি কিছু জানো?”
“আরে না! সেরিন বোর ওই বাড়ীতে আমাদের মিস করে তাই চলে এসেছে।”
“তোমার বোন জামাই পাগ’ল। জামাই হলে কিছু লাগেনা। তুনি বলছো সে জামাই ছেড়ে আসতে পারে?”
“সেটা একান্ত তাঁদের ব্যক্তিগত ব্যপার। তোমাকে ওতো মাথা ঘামাতে বলিনি। অন্য কথা বলো।”
“ঠিক আছে!”
“কী ঠিক আছে?”
“কিছু না।”
“অন্য কথা বলো?”
“ওকে।”
“কী ওকে,ওকে করছো?”
“তো কী বলবো?”
“অন্য কথা বলো।”
“আচ্ছা।”
“বলো না?”
“কী বলবো?”
“আমার মাথা বলবি মাথা। কিছু বলতে হবে না। কল রাখ!”
কথাটা বলে শশী কল কেটে দেয়। আর্থ ফোন হাতে নিয়েই হাসে। তার ভাইকে জ্বালানো যায় ভেবে শুভ্রর রুমে যায় আর্থ। শুভ্র সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। আর্থ ধপাস করে খাটে বসতে সেটা একপাশে ভে’ঙে যায়। আর্থ নিজেও বোকা বনে যায়। শুভ্র আর্থর দিকে তাকিয়ে বলে,
“দিলি তো খাটটা ভে’ঙে।”
“তোমরা বাস করে খাট ভাঙতে পারোনি তাই আমি বসেই ভেঙে দিলাম।”
“চুপ থাকবি তুই?”
“আরে ভাই ভাগ্য ভালো তোমাদের ফুলসজ্জার রাতে এটা ভাঙেনি। আজকে ভেঙেছে তাও ভাবী বাড়ীতে নেই।”
“এটা আগে থেকেই কেমন জেনো করছিলো। চেন্জ করতে মনে থাকে না।”
“আচ্ছা সার্ভেন্ট দের বলছি এটা সরিয়ে অন্য রুমেরটা এখানে নিয়ে আসতে।”
“যা! সাথে নিজেও কাজ করবি। খাটটা তুই ভেঙেছিস।”..
আর্থ উঠে বাইরে যায়। তাঁদের পড়ে থাকা রুম গুলো তে যায়। যেগুলোতে কেউই থাকেনা। ফার্নিচার ওইভাবেই পড়ে আছে। কয়েকজন সার্ভেন্টকে দিয়ে শুভ্রর রুমের খাটটা বাইরে বের করে। অন্য রুমের আরেকটা খাট শুভ্রর রুমে ঢুকায়। আদ্রিতা রুমে প্রবেশ করেই জিজ্ঞেস করে,
” খাট ভাঙলো কে?”
তখন আর্থ বলে,
“কে আবার? ভাইয়া আর…..”
শুভ্র চোখ গরম করে তাকাতে আর্থ কথার স্বর চেন্জ করে বলে,
“আমি, আমি ভেঙেছি।”
“তুমি এটা ভাঙলে কীভাবে?”
“ওই খাটটা এখানে এনে দে। তারপর দেখাচ্ছি ভেঙেছি কীভাবে।”
“আরে রেগে যাচ্ছো কেন?”
“তোরা ভাই বোন দু’টো ই রা’জাকার। একজন নিজের পুরোনো জিনিস ভাঙচুরা জিনিস রুমে রাখাে আর ভেঙে গেলে দোষ পড়ে আমার। ভাই আমি দুইদিন পর বিয়ে করবো। শেষ বারের মতো হলুদ মাখবো বিয়ের পর নিজের জীবনকে ভাজার জন্য। একটু সাহস,শক্তি দরকার। এই শুভ্র আমায় কাজ করিয়ে আমার রুপ,গুন সব শেষ করে দিচ্ছে।”
“তাহলে বিয়েটা আরো ছয়মাস পড়ে কর?”
শুভ্র জবাব দেয়। তখন আর্থ বলে,
“না,না! এখনি সঠিক সময় বিয়ের।”
“দেখবি তোর খাটটাই ভেঙেছি৷ এমন দিনে ভাঙবে যে লজ্জায় মুখ ও দেখাতে পারবি না।”
“এই তুমি বুঝাতে চাচ্ছো আমার ফুলসজ্জার দিন খাট ভাঙবে?”
“গুড! বুঝে গিয়েছিস।”
“আমি কিছু করবো নাকী যে খাট ভাঙবে? ওই খাট চেঞ্জ করে নতুন খাট যেদিন আনবো সেদিনই যা করার করবো।”
“আহারে! খাটের জন্য ভাই আমার ফুলসজ্জা করতে পারবে না। বিষয়টা খুবই সিরিয়াস! আচ্ছা যা তোর বিয়েতে আমি নতুন খাট গিফ্ট করবো।”
“না তুমি হানিমুনের টিকেট দিবা। মালদ্বীপ যাবো!”
“টাকা নাই।”
“বিয়ের গিফ্ট এটা।”
“না খাট দিবো। মালদ্বীপ গিয়েও সেই খাটের উপরেই হানিমুন করবি। তারচেয়ে নতুন খাট দিবো বাড়ীতেই হানিমুন করতে পারবি। তোরই লাভ ভেবে দেখ!”
“আজকাল শুভ্র স্যারের মুখে লাঘাম কমে যাচ্ছে।”
“তুই কী মেয়ে মানুষ নাকী যে তোর সাথে লাঘাম টেনে কথা বলতে হবে?”
“না তাও!”
“মজা করছিলাম।”
দু’জনে কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে, সবার সাথে ডিনার করে নেয়। শুভ্র রুমে আসতে কেমন ফাঁকা ফাঁকা লাগছে। সেরিনের সাথেও কথা হয়নি। কিন্তু কোন মুখে কল দিবে সে? গতকাল ভীষণ বা’জে বিহেভ করেছে শুভ্র অনুভব করছে। রাগের মাথায় যা-তা বললেও তার ভীষণ খারাপ লেগেছে। ভিডিওটা দেখেই তো সব উলোটপালোট করতে মন চেয়েছে। সেই হিসাবে নিজের রাগ কন্ট্রোল করে সেরিনের সাথে যথেষ্ট ভালো বিহেভ করেছে। তবুও মেয়েটা কষ্ট পেয়েছে। তার সতেজ,সুন্দর মেয়েফুলটার মনে কষ্ট লেগেছে। ভাবতে শুভ্রর খারাপ লাগছে ভীষণ। সাত পাঁচ না ভেবে কল দেয় সেরিনকে। কয়েকবার রিং হতে রিসিভ হয়। সেরিন সালাম দিতে শুভ্র সালামের জবাব দেয়। দু’জনের মাঝে পূর্ণ নিরবতা বিরাজমান। কেউই কথা বলছে না। শুভ্র তখন বলে,
“মেয়ে ফুল শুনেছো? আমি ‘স্যরি’!”
#চলবে
গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/