হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৭| #শার্লিন_হাসান

0
256

#হৃদয়_সায়রে_প্রণয়ের_ছন্দ|৩৭|
#শার্লিন_হাসান

সন্ধ্যায় শুভ্র পাটওয়ারী বাড়ীতে যায়। শশীকে দিয়ে সেরিনের রুমে জিনিসগুলো পাঠিয়ে দেয়। সেরিন তাকে দেখেও না দেখার ভান করেছে তাও সবার সামনে। শুভ্র সেসবে কিছু বলেনি। শুধু জানিয়েছে আগামী কালকে সকালে চৌধুরী বাড়ীর বউ চৌধুরী বাড়ীতে চলে যাবে। সেরিন শুনেছে কথাটা তবে কিছুই বলেনি সে। শুভ্র বাকীদের সাথে গল্প করে। একবারে রাতের ডিনার করেই সে রুমে যায়। সেরিন কিচেনে কফি বানাচ্ছে।
শুভ্র রুমে এসে খাটে আধশোয়া হয়ে ফোন স্ক্রোল করছে। কিছুক্ষণের মধ্যে সেরিন আসে কফির মগ হাতে। শুভ্রর কফির মগটা চুপচাপ তাকে দিয়ে দেয়। মগ হাতে সেরিনের দিকে তাকায় শুভ্র। কন্ঠ স্বর খাদে নামিয়ে বলে,
“মুখটা ওমন করে রেখেছ কেনো?”

“এমনিতে!”

“কিছু এনেছিলাম আমি। তুমি সেগুলো দেখোনি।”

“ইচ্ছে করছে না।”

“দেখো সেরিন মানুষ মাত্রই ভুল। কেউই ভুলের উর্ধ্বে না।”

“শুনেছি।”

“আচ্ছা স্যরি।”

“ইট’স ওকে!”

“এরপর তোমার মুখটা ওমন গোমড়া দেখলে খবর আছে।”

সেরিন মাথা নাড়ায়। শুভ্র তখন শুধায়,
“যাও গিফ্ট গুলো খুলে দেখো।”

সেরিন গিফ্ট গুলো খাটের উপর আনে। শুভ্রর সামনেই খুলে দেখে। আর কিছু বলেনি সেরিন। শুভ্র সহ কেক কাটে তারা। ব্রেসলেট টা শুভ্র সেরিনের হাতে পড়িয়ে দেয়। বাকীগুলো রেখে দিয়ে লাইট অফ করে শুয়ে পড়ে সেরিন। শুভ্রর বুকে মাথা লুকিয়ে নেয়। শুভ্র সেরিনের কপালে চুমু একে বলে,
“দেখো রাগ টা একটু কমাও!”

“সবই বুঝলাম। এতো কিছু করলেন তো একবার “ভালোবাসী বউ” বলে দিলেই তো হতো। ওটায় আমি গলে যাই।”

“ওতো গলার দরকার নেই।”

“ঠিক আছে।”

*********

পরের দিন দুপুরের শেষ বিকেলের দিকেই চৌধুরী পরিবারের সবাই কুমিল্লায় যায়। সেরিন শুভ্রর সাথে সেদিন সকালেই চলে আসে চৌধুরী বাড়ীতে। পরিবারের বড়রা মাইক্রো দিয়ে। সেরিন,শুভ্র,আর্থ,আদ্রিতা,অধরা, তারা এক গাড়ীতে করে যাচ্ছে। পুরো বিকেল আর সন্ধ্যায় তারা শপিং করেই কাটিয়ে দেয়। দশটার দিকে রেস্টুরেন্টে ঢুকে ডিনার করে আবার দাউদকান্দির উদ্দেশ্য রওনা দেয়। সেরিন মেঘনা ব্রিজের উপর আসতে বাইরের দিকে মুখ নিয়ে ঠান্ডা হিমশীতল বাতাস উপভোগ করে। এই নদীর ঠান্ডা বাতাসটা সেরিনের অনেক পছন্দের।

বাড়ীতে এসে যে যার মতো ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। পরের দিন সকালে বাড়ী ডেকোরেশনের কাজ শুরু হয়ে যায়। সেরিন,আদ্রিতা,অধরা তারা সবাই ঢালা সাজানোর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। সুলতানা খানম সহ তারা ঢালা রেডি করে নেয়। সন্ধ্যারর দিকে পাটওয়ারী বাড়ীতে যাবে ঢালা দিতে। সময়টা ব্যস্ততার মাঝেই কাটছে সবার। বিকেলে পাটওয়ারী বাড়ী থেকে ঢালা আসবে। জোর দমে রান্নাবান্না চলছে। এছাড়া চৌধুরী বাড়ীর অন্যান্য পরিবার ও আসা যাওয়া হচ্ছে এমপির বাড়ীতে। যেহেতু রাস্তা থেকে পুরো বাড়ীটাই ডেকোরেশন করা হয়েছে।

শুভ্র কলেজে এসেছে। লাস্ট পিরিয়ডের সময় ল্যাব ক্লাস ছিলো ফাস্ট ইয়ারের। কয়েকদিন পর ইয়ার চেন্জ ফাইনাল এক্সাম। তখন আবার নিশাত বিনা অনুমতিতে শুভ্রর রুমে প্রবেশ করে। শুভ্র ল্যাপটপে ব্যস্ত থাকায় নজর রাখেনি সেদিকে। নিশাত শুভ্রর সামনের চেয়ার টেনে বসতে শুভ্র সেদিকে দৃষ্টি স্থির করে। মেজাজ দেখিয়ে বলে,
“অনুমতি দিয়েছি আমি? আমার রুমে এসেছো অনুমতি ছাড়া আবার বসেছো। প্রব্লেম কী তোমার?”

“আরে শুভ্র স্যার! আমার বান্ধবী আপনার বউ না হলে আমিই হতাম। সে যাই হোক শালির অধিকার নিয়ে এসেছি। এমনিতে বউ হলেও খারাপ হয়না।”

কথাটা শেষ হতে নিশাত চেয়ার ছেড়ে দাড়াতে শুভ্র ও পুনরায় দাঁড়িয়ে পড়ে। ঠাস করে দু’টো চ’ড় বসিয়ে দেয় নিশাতের গালে। রেগে বলে,
“এরপর আমার রুমের আশেপাশে আসলে তোর পা আমি ভে’ঙে দেবো।”

নিশাত গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। এই মূহুর্তে তার মাথা ঘুরছে, পুরো দুনিয়া অন্ধকার হয়ে আসছে। শুভ্রর দিকে একনজর তাকিয়ে কোনরকম বেড়িয়ে আসে সে। সামনের সবই ঘুরছে তার সামনে। মনে,মনে স্থির করে নিয়েছে আর আসবে বা শুভ্রর আসেপাশে। এই চড় জীবনে যে একবার না খেয়েছে তাহলে তার সাত কপালের ভাগ্য। আজীবন মনে রাখার মতো চ’ড়।
“না এর বউ সেরিনই ঠিক আছে। আমি শালি হিসাবেই ঠিক আছি। দেখতে যতটা সুন্দর ব্যবহার আর মা-ইর তার চেয়ে জঘন্য। সেরিন এটা তোর জন্যই ফিক্সড করা বইন। আর ভুলেও তাকাবো না।”

নিশাত কোনরকম গাড়ীতে উঠে নিজের বাড়ীর উদ্দেশ্য রওনা হয়।
নিশাত যেতে শুভ্র বেড়িয়ে আসে রুম থেকে। তার কাজ আছে সেজন্য বাড়ী চলে এসেছে।
এসে রুমে প্রবেশ করে হাত ঘড়িটা খোলে সোফায় বসে পড়ে। সেরিন সবে শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়েছে। শুভ্রকে দেখে সোজা নিচে আসে। কোল্ড ড্রিং নিয়ে পুনরায় রুমে যায়। শুভ্র চোখ বন্ধ করে আছে। সেরিন তার সামনে কোল্ড ড্রিং ধরে বলে,
“এটা খেয়ে নিন।”

সেরিনের থেকে কোল্ড ড্রিং নিয়ে শুভ্র মাথা নাড়ায়। সেরিন আজকে শাড়ী পড়েছে। দেখতে অনেকটা বউ,বউ লাগছে। শুভ্র ড্রিং টা শেষ করে শাওয়ারের জন্য ওয়াশরুমে ঢুকে যায়। সেরিন রেডি হয়ে শুভ্রর জন্য ওয়েট করে। শুভ্র এসে রেডি হতে সেরিন বলে,

“আপনি আমায় জন্য একটা শাড়ী ও আনলেন না। আর্থ ভাইয়ার বিয়ে আপনি তো পারলে আমায় শপিং করিয়ে দিতে পারতেন।”

“সময় নেই। পরে করে দেবো।”

“এই আপনার কিসের এতো ব্যস্ততা? বউয়ের থেকে কী ব্যস্ততা বেশী?”

“দুটোই ইমফরটেন্ট। দেখো কাজ না করলে তোমার শখ পূরণ করবো কীভাবে?”

“ঠিক আছে। আমিও যখন কোন জব পাবো,ইনকাম করবো তখন আমি আপনার মতো কিপ্টামি করবো না। আমি আমার বরের জন্য শপিং করবো আমার টাকা দিয়ে।”

“এই তুমি খোঁটা দিচ্ছো? আচ্ছা আমি কুমিল্লায় গেলে আনবো শাড়ী। বাট আমার এসবে আইডিয়া নেই।”

“আপনার পছন্দে একটা আনলেই হবে। সেখুন আপনি আমায় পছন্দ করেছেন তাহলে পছন্দ খারাপ হবে না আশা করি।”

সেরিনের কথায় শুভ্র হাসে। সেরিন নিজেও হেঁসে দেয়। সেরিন উঠে আয়নার সামনে গিয়ে বলে,
“আজকে আমি শাড়ী পড়েছি। আপনি দেখেছেন?”

“হ্যাঁ দেখলাম তো।”

“বলুন তো কেমন লাগছে?”

“শুভ্রর মেয়েফুল!”

“না! শুভ্রর বউ ফুল সেরিন।”

“আচ্ছা শুভ্রর বউফুল সেরিন।”

*******

বিকেলের দিকে সাফা,রাফা,মেহের,সিদরাত, মাহী সহ তারা আসে। সেরিনের খালামনি ঢাকা থেকে এসেছে। সিদরাতকে দেখে সেরিন, শুভ্র বেশ খুশি হয়। হাল্কা নাস্তা করে ঢালা গুলো দিয়ে তারা বেড়িয়ে পড়ে। সবাই ব্রিক রেড কালারের শাড়ী পড়েছে। সবাইকেই সুন্দর লাগছে। ঢালা দেওয়ার সময় রাস্তায় পিকচার ভিডিও নিয়ে নেয় তারা। সবাই মিলে সুন্দর একটা মূহুর্তে পার করে।

সেরিন ব্লাস পিংক কালারের শাড়ী পড়েছে। অধরা,আদ্রিতা তারা পার্পল কালারের শাড়ী পড়েছে। সন্ধ্যায় নাস্তা করে গাড়ী রেডি হতে তারা তিনজন রওনা হয়। তাঁদের গাড়ীতে কিছু ঢালা বাকী গুলো পেছনের গাড়ীতে করে আসছে। পাটওয়ারী বাড়ীর গেট থেকে শুরু করে গার্ডেনের রাস্তা, পুরো বাড়ী লাইটিং করা হয়েছে। যেহেতু তারা সন্ধ্যা পেড়িয়ে গিয়েছে ভিউটা সুন্দর এসেছে। একে,একে সব গুলো ঢালা ভেতরে নেওয়া হয়। রাস্তার সাইডেই তাঁদের গাড়ী দাঁড় করানো। সেরিন,আদ্রিতা,অধরা তারা ভেতরে যায়। সাফা,রাফা,মেহের আফসোস করছে এবার আর সেরিন সহ মেহেন্দী পড়া হবে না। কত মজা হতো! এখন তো সেরিন তার ননদিনীদের সাথেই মেহেন্দী পড়বে। অনেকটা সময় তারা শশী,সাফা,রাফা,মেহেরের সাথে কথাবার্তা,আড্ডা দেয়। শুভ্র সেরিনকে কল দিয়ে জ্বালাচ্ছে। আজকে কী পাটওয়ারী বাড়ীতেই তারা থেকে যাবে নাকী? সেরিন বলেছে ডিনার করে তারা রওনা হবে। শুভ্র আর কিছু বলেনি। প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে তারা ডিনার করে কফি নেয়। বিদায় জানিয়ে তড়িঘড়ি রওনা হয়ে নেয়। যদিও ওতো দূরে না। ত্রিশ মিনিট সময় এনাফ। যেহেতু ড্রাইভার নিয়ে এসেছে ওতো প্যারা নেই তাঁদের।

#চলবে

( দ্রঃ গল্পটা বড়জোর ৫০ পার্ট পর্যন্ত যাবে হয়ত বা। নয়ত ৫০+ এর বেশী আগাবে না। সবকিছুরই শুরু হয় এবং শেষ ও আছে। তেমনি এই সেরিন শুভ্রর ক্যামিস্ট্রি শুরু হয়েছে শেষ ও হবে। ❤️)

গল্পটি সম্পর্কে রিভিউ, আলোচনা, সমালোচনা করুন আমাদের গ্রুপে। গ্রুপ লিংক নিচে দেওয়া হলোঃ
https://facebook.com/groups/holde.khamer.valobasa/

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here