টক_ঝাল_মিষ্টি #তামান্না_আঁখি #পর্ব-৩

0
509

#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৩

শাহাদ চোখ খুলে কুহুর দিকে তাকালো। কুহু বড় বড় চোখে অপরাধী মুখ করে তার দিকে তাকিয়ে আছে। শাহাদ হাত দিয়ে তার মুখে ছিটকে আসা খাবারের অংশগুলো ঝেড়ে ফেলতে লাগলো। শাহাদের সাথে থাকা ছেলেগুলো এই ঘটনায় হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো। এমনকি ভাজা পোড়ার দোকানিও এই ঘটনায় অবাক হয়ে গেলো। একটা ছেলে এগিয়ে এসে পকেট থেকে রুমাল বের করে শাহাদের হাতে দিয়ে কুহুকে বললো-

“আপা,এইটা কি করলেন? মানুষ টানুষ খেয়াল করবেন না?”

কুহু কাচুমাচু মুখ করে বলো-
“আই এম সরি। আমি খুব ই দুঃখিত। আই ডিডন্ট মীন ইট।ইচ্ছা করে করি নি।ট্রাস্ট মি।”

তনয়া এই ঘটনায় আক্কেল গুড়ুম হয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো কুহুর এমন বাংলা ইংরেজি ট্রান্সলেশন মার্কা কথা শুনে তার কপাল চাপড়াতে ইচ্ছে হলো। সে কুহুর কানের কাছে মুখ নিয়ে চিবিয়ে চিবিয়ে বললো-

“ইংরেজী মারা বন্ধ কর, গিদর কোথাকার।”

তনয়ার ঝাড়িতে কুহু আরো চুপসে গেলো। ইচ্ছে হলো মাটি ফুঁড়ে পাতালে চলে যেতে। শাহাদ রুমাল দিয়ে ভালো করে মুখ টা মুছে নিলো। শার্টের উপরেও কিছু পড়েছে কিন্তু সে আপাতত সেদিকে মনোযোগ দিলো না।রুমালটা ছেলেটাকে ফিরিয়ে দিয়ে ইশারা করে দূরে গিয়ে দাঁড়াতে বললো। তারপর কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল-

“আপনি কি খাবার টা গিলেছেন?”

কুহু প্রবল বেগে উপর নীচ মাথা নাড়িয়ে বুঝালো সে খাবার গিলেছে। শাহাদ আশ্বস্ত হয়ে বললো-

“এখানে কি করছেন?”

“একটু খাওয়া দাওয়া করতে এসেছিলাম।”

শাহাদ কুহুর হাতে থাকা আধ খাওয়া ভাজা চিংড়িটার দিকে একবার তাকিয়ে প্রশ্ন করলো-
“খাওয়া হয়েছে?”

“জী হয়েছে।”

পাশ থেকে তনয়া ব্যস্ত হয়ে বললো-
“না ভাইয়া হয় নি। ও বলেছিলো ও পিৎজা বার্গারও খাবে।”

কুহু তনয়ার দিকে তাকিয়ে চোখ রাঙালো।বিনিময়ে তনয়া মিষ্টি করে হাসলো। শাহাদ একটা ছেলেকে ডাক দিলো। ছেলেটা কাছে এলে বললো-

“উনাদের দুজনের সাথে যা। যা যা কিনতে চাইবে কিনে পার্সেল করে দিবি। ”

ছেলেটা “জী ভাই” বলে মাথা নাড়ালো। শাহাদ কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল-
“ওর সাথে যান। আর এখানে বেশিক্ষন না থাকাই ভালো। দলবল নিয়ে এসেছি তো যেকোনো সময় ছেলেরা ঝামেলায় জড়িয়ে যেতে পারে।”

“আমাদের কিছু লাগবে না। আমাদের খাওয়া হয়ে গেছে। আমি এখন যাই।বাই।”

বলেই কুহু তনয়ার হাত ধরে চলে যেতে চাইলো। শাহাদ কুহুর সামনে তার এক হাত মেলে দিয়ে আটকে দিলো কুহুকে। বললো-

” খেতে ইচ্ছে হয়েছে যেহেতু এখানে খেতে না পারলেও পার্সেল নিয়ে যান।”

তারপর ডেকে আনা ছেলেটাকে হাত উঁচু করে তুড়ি বাজিয়ে ইশারা দিয়ে কুহুর সাথে যেতে বললো।শেষবার কুহুর দিকে তাকিয়ে বলল-

” আমি নিজে নিয়ে যেতে পারলাম না বলে দুঃখিত কুহু।”

একটা সৌজন্যমূলক হাসি দিয়ে শাহাদ তার জন্য দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেদের ভীড়টায় গিয়ে শরীক হলো। ছেলেগুলোকে সাথে নিয়ে অন্য একটা দোকানে গেলো। কুহু সেদিকে তাকিয়ে রইলো অনেক্ষন। পাশ থেকে তনয়া দুষ্টু কন্ঠে বললো-
“ওয়ে হয়ে!!দুলাভাই তো একদম কড়া জিনিস। হাতছাড়া করিস না। বিয়েটা করে ফেল। ”

কুহু কিছু বলবে তার আগেই ছেলেটা এসে বললো-
“আপু কোথায় যাবেন চলুন।”

কুহু একবার ঘাড় ঘুরিয়ে শাহাদের দিকে তাকালো। শাহাদ ছেলেপেলে নিয়ে একটা রিক্সাওয়ালার সামনে দাঁড়ানো। শান্তমুখে রিক্সাওয়ালার অভিযোগ শুনছে। কুহু চোখ সরিয়ে তনয়াকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে ঢুকলো। তনয়া নিজেই এইটা ওইটা অর্ডার করে ফেললো। ছেলেটা কাউন্টারে বলে দিলো প্রতিটা জিনিস কুহু তনয়ার জন্য আলাদা ব্যাগে করে পার্সেল করতে। পার্সেল চলে এলে কুহু দাম দিতে গেলে ছেলেটা বাধা দিয়ে বলল-

“পে করতে হবে না আপু।”
“কেন?”
“উনি বিলটা ভাই কে পাঠিয়ে দিবে। ভাই-ই পেমেন্ট করে দিবে। আপনি আসুন, আপনাদেরকে রিক্সায় তুলে দেই।”

কুহু আর কথা বাড়ালো না। সে ছেলেটির সাথে বাইরে বেরিয়ে এলো। একবার এদিক ওদিক দেখলো শাহাদকে দেখার আশায় কিন্তু শাহাদ কোথাও নেই।দূরে শাহাদের গাড়ি আর সাথে আসা বাইক গুলো পার্ক করা। সাথের ছেলেটি রিক্সা ঠিক করে ভাড়া দিয়ে দিলো। কুহুকে বললো-

“উঠুন আপু।”

তনয়া আগে উঠে বসলো রিক্সায়। কুহু উঠতে গিয়ে থেমে গেলো ছেলেটিকে প্রশ্ন করলো-
” আপনার ভাই মানে উনি এখন কোথায়?”
“ভাই আজ বাজারে এসেছেন লোকজনের সুবিধা অসুবিধা দেখতে।এখন হয়ত বাজারের অন্যদিকে গেছেন।”

কুহু রিক্সায় উঠে বসলো। যেতে যেতে প্রতিটা রাস্তায় সে শাহাদকে দেখার আশায় তাকালো,কিন্তু পেলো না। তনয়া এতগুলো পার্সেল পেয়ে বেশ খুশি। কুহুকে উদ্দেশ্য করে বলল-
“তোর রসগোল্লা কত ভালো রে! কি কেয়ারিং! উনাকে বিয়ে করে ফেল। ”

“তোর মন চাইলে তুই বিয়ে করে ফেল।”

“সত্যি বলছিস? তাহলে বাসায় গিয়ে মা কে বলব।”

“বেহায়া মেয়ে,বান্ধবির হবু বরের দিকে নজর দিস। লজ্জা করে না।”

“তুই না বললি বিয়ে করবি না।”

কুহু ইতস্তত করে বলল-
“তাতে কি!! বাবা তো আমাকে জোর করে বিয়ে দিবে বলেছে।তাই আমাকে না পেরেই বিয়ে করতে হবে রে।আমার কিছু করার নেই। আই হ্যাভ নাথিং টু ডু।”

শেষের কথাটা কুহু অসহায়ের মতো ভান করে বললো।তনয়া মুখে “হুউউউউ” জাতীয় শব্দ করে বললো-

” বাবা জোর করে বিয়ে দিবে না? নিজের মনে যে বিয়ের জন্য লাড্ডু ফুটছে তা স্বীকার করছিস না কেন?”

কুহু কপট রাগ দেখিয়ে বলল-
“কে বলেছে আমি বিয়ে করতে চাই। জানিস ই তো আমার রাজনীতি পছন্দ না।নেহাত বাবা-মায়ের মনে দুঃখ দিতে পারব না তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি যে বিয়েটা করেই ফেলি।”

“সিদ্ধান্তও নিয়ে ফেলেছিস?তা সিদ্ধান্তটা কখন নিলি?”

“এখন নিলাম।তোর সমস্যা?”

“আমার কি সমস্যা হবে, হবে তো ওই ভদ্রলোকের। আহারে! বেচারা তোর মতো মেয়ের সাথে এক ছাদের নিচে থাকবে কি করে!”

“তুই একটা ডাইনী। ইউ আর এ উইচ। বান্ধবীর সাথে এমন করিস। হুহ।”

তনয়াও একটা মুখ ভেংচি দিলো। সারা রাস্তা দুজনে এইভাবে তর্কাতর্কি করতে করতে গেলো। বাড়িতে এসে কুহু খাবারের প্যাকেট গুলো ডায়নিং টেবিলের উপর রেখে দিলো। গলা ছেড়ে ডাকলো-

“মা,ও মা।”

শিরিনা বেগম নিজের ঘরে ছিলেন মেয়ের চিৎকারে বের হয়ে এলেন।কুহুকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
“চেচাচ্ছিস কেন?”

কুহু টেবিলের উপর থাকা খাবারের প্যাকেট গুলোর দিকে আঙুল উচিয়ে বলল-
“ওই রাজনীতিওয়ালা দিয়েছে এসব।”

“কি ওয়ালা?”

কুহু তাড়াতাড়ি সংশোধন করে বলল-
“মানে শাহাদ খান দিয়েছে এসব।”

শিরিনা বেগম বিস্মিত হলেন।প্যাকেট গুলো থেকে খাবারগুলো বের করে আরো বিস্মিত হলেন।কুহুর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বললেন-

“ওকে কোথায় পেলি?”

“বাজারে গিয়েছিলাম খেতে সেখানে পেয়েছি।দলবল নিয়ে দোকানে দোকানে গিয়ে কিসব করছে।”

” ও দিলো আর তুই নিয়ে নিলি?”

“এমনভাবে বললো না নিয়ে উপায় ছিলো না মা।”

শিরিনা বেগম বিস্ময় ভাব কাটাতে পারলেন না। নষ্ট হয়ে যাওয়ার ভয়ে তিনি আপাতত খাবার গুলো খুলে রাখলেন।কুহু এক স্লাইস পিৎজা তুলে কামড় দিয়ে বলল-
“ইনি মনে হয় ছোটখাট নেতা তাই না মা।”

“ওর পরিবারের সবাই নেতা। ওর বাবা এমপি।”

কুহুর খাওয়া বন্ধ হয়ে গেলো। অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো-
“এমপি?”

শিরিনা বেগম টেবিলে খাবার গুলো গুছিয়ে রাখতে রাখতে বললেন-
“হুমম। তোর বাবার এমপি বন্ধুর কথা শুনিস নি?তার ছেলে।”

কুহু হা হয়ে গেলো। সে জানতো না এই কথা, রাজনীতি পছন্দ করে না বলে মায়ের কাছ থেকে শাহাদ সম্পর্কে জানার আগ্রহও দেখায় নি। কুহু আস্তে করে সিড়ি বেয়ে উঠে ঘরে চলে এলো।। একটু আগেই সে এমপির ছেলের মুখে খাবার ছুড়ে ফেলেছে।এই অভদ্রতার কথা বাবার কানে গেলে তার খবর আছে। দাত দিয়ে ওড়নার কোণা কামড়ালো কুহু। ইশশ!! যত অঘটন সব তার জীবনেই।

__________

শাহাদ বাজারের কাজ শেষ করে গাড়িতে উঠে বসলো। গাড়ি ছাড়ার পর তার নজর পড়লো শার্টে লেগে থাকা খাবারের কিছু অংশের দিকে। ড্রাইভারকে বলে টিস্যু বক্সটা নিলো।তারপর টিস্যু দিয়ে ঝেড়ে ফেললো সব। আনমনে একটু হাসলো কুহুর কথা মনে করে। দুইদিন আগেও সে মেয়েটাকে ভালো করে চিনতো না আর এখন কত কিছু হয়ে গেলো। এক সপ্তাহ আগে তার বাবা একটা মেয়ের ছবি দেখিয়ে বলল “এই মেয়েকে আমার পছন্দ হয়েছে ছেলের বউ হিসেবে, এখন তুই গিয়ে দেখে করে আয়”। ব্যস,বাবার কথা মতো সেও চলে গিয়েছিলো দেখা করতে৷ তার বাবা তাকে কুহুর কয়েকডজন ছবি পাঠিয়েছিলো এর আগে। সবগুলো ছবিই দেখেছে শাহাদ। ছবি দেখে কুহুকে পছন্দ হয়েছে তার। এর আগে একটা অনুষ্ঠানে কুহুকে দেখেছিলো শাহাদ।বাবা-মায়ের সাথে এসেছিলো।তখন কুহু বোধ হয় হাই স্কুলে পড়তো। তবে এখন বড় হওয়ার পর দেখা করে মেয়েটার উলটা পালটা কাজে তার বেশ মজাই লেগেছে।

শাহাদ পকেট থেকে ফোন বের করে কুহুর ছবি বের করলো। প্রত্যেকটা ছবিতেই কুহু অদ্ভুত সব পোজ দিয়েছে,অন্তত শাহাদের কাছে পোজগুলো অদ্ভুতই মনে হচ্ছে। একটা ছবিতে আইস্ক্রিম নিয়ে খাওয়ার ভান করে হা করে আছে। অন্য আরেকটায় বাচ্চাদের দোলনায় গিয়ে দোলনার দুদিকের শিকল ধরে দোলনায় উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছে। শাহাদের বড্ড জানতে ইচ্ছে হলো এই ছবি তোলার বুদ্ধি কুহুকে কে দিলো? আর এমন ছবি পাত্রী দেখার জন্যই বা কেন পাঠালো। অন্য ছবি গুলো মোটামুটি ভালোই। কোনোটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে নয়তো দাঁত বের করে হাসি। ছবিতে কুহুর হাসি দেখে শাহাদের হাসি আরো বিস্তৃত হলো।খুব ই হাসে মেয়েটা। চঞ্চলও বটে। শাহাদ কুহুর ছবিটা জুম করে কিছুক্ষন দেখলো তারপর প্রসন্নচিত্তে হাসি হাসি মুখে চলন্ত গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকালো। মনে হচ্ছে তার স্থির, নিশ্চল জীবনে দখিনা হাওয়ার আগমন ঘটতে চলেছে।

___________

সন্ধ্যার দিকে কুহুর ডাক পড়লো মোয়াজ্জেম সাহেবের ঘরে। কুহু কিছুক্ষন ঘর জুড়ে পায়চারি করলো। বাবাকে সে বেশ ভয় পায়। কি বলতে কি বলে ফেলবে তাই নিজেকে একটু গুছিয়ে নিচ্ছে। সে এদিক ওদিক চার হাত পা ছুড়ে একটু ওয়ার্ম আপ করলো নিজেকে। তারপর রওয়ানা করলো মোয়াজ্জেম সাহেবের ঘরের দিকে। মোয়াজ্জেম সাহেবের ঘর নিচে। সিড়ি বেয়ে নামতে হবে। যাওয়ার সময় যিয়াদের ঘরের দিকে চোখ পড়লো। দরজা খোলা রেখে টেবিলে বসে পড়ছে। কুহু দরজায় দাঁড়িয়ে মৃদু স্বরে ডাকলো-
“এই,পড়ছিস?”

যিয়াদ একবার ঘাড় ঘুরিয়ে কুহুকে দেখে আবার পড়ায় মনোযোগ দিয়ে বলল-
“না, মাটি কাটছি।”

কুহুর দাঁত কিড়মিড় করে উঠলো রাগে। ভাইয়ের কাছে এসেছিলো একটু কথা বলে সহজ হতে।তা তো হলোই না উলটো মেজাজটা বিগড়ে দিলো। কুহু আর সময় নষ্ট না করে সিড়ি বেয়ে মোয়াজ্জেম সাহেবের ঘরের সামনে এসে দাঁড়ালো। দরজায় টোকা দিয়ে বলল-
“বাবা আসব?”

ক্ষনকাল পর আওয়াজ আসলো-“এসো।”

কুহু দরজা ঠেলে ভিতরে ঢুকে দেখলো মোয়াজ্জেম সাহেব চা খাচ্ছেন। তার সামনের টেবিলে অনেক গুলো বই পাতা উলটে রাখা। মোয়াজ্জেম সাহেবের ঘরে অনেক গুলো বইয়ের আলমারি। সব গুলো বই দিয়ে ভর্তি। কুহু যতটা পারলো শব্দহীন হেটে মোয়াজ্জেম সাহেবের সামনে এসে দাঁড়ালো। মোয়াজ্জেম সাহেব মেয়ের দিকে তাকিয়ে সরাসরি জিজ্ঞেস করলেন –

“ছেলেটিকে কেমন লেগেছে?”

কুহু বুঝতে পারলো শাহাদের কথা জিজ্ঞেস করছে।সে একদিকে মাথা হেলিয়ে উত্তর দিলো-
“ভালো।”

“তুমি আমার একমাত্র মেয়ে। যেখানে সেখানে আমি তোমাকে বিয়ে দিতে পারি না। সে জন্য বিশ্বস্ত একটা জায়গার দরকার।আমার বন্ধুর বাড়িতে তোমাকে রেখে আমি নিশ্চিন্তে থাকব। অনেক ভেবে আমি এই প্রস্তাবে রাজী হয়েছি। এখন তুমি রাজি হলেই পাকা কথা হবে।”

কুহুর খুব লজ্জা লাগলো। এইভাবে সরাসরি কেউ একটা মেয়েকে বিয়ের কথা জিজ্ঞেস করে নাকি? অন্য কেউ হলে নিশ্চয় মা-চাচী কাউকে দিয়ে মেয়ের মতামত জানতে চাইতো। কিন্তু তার স্ট্রেট ফরোয়ার্ড বাবা সেসবের ধার ধারেন নি। সোজা নিজেই সরাসরি জানতে চাচ্ছেন।
মোয়াজ্জেম সাহেব প্রশ্ন করলেন-
“তোমার কি ছেলেটিকে পছন্দ হয় নি? পছন্দ না হলে বলতে পারো। তোমার অমতে কিছুই হবে না।”

কুহু শোনা যায় না এমন করে বলল-
“পছন্দ হয়েছে বাবা।”

মোয়াজ্জেম সাহেব এমন মিনমিন উত্তর পছন্দ করলেন না। তিনি মেয়েকে বললেন-
“জোরে বল।”

কুহুর অবস্থা হলো দেখার মতো। বাবার সামনে তীব্র লজ্জা আর অস্বস্তিতে তার বারটা বেজে তেরটা হওয়ার জোগাড়। সে তারপরও কষ্ট করে গলার স্বর কিছুটা বাড়িয়ে বললো-
“পছন্দ হয়েছে বাবা।”

মোয়াজ্জেম সাহেব সন্তষ্ট হলেন মেয়ের উত্তরে। চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে মেয়েকে বললেন-
“যাও।”

তারপর আয়েশ করে চুমুক দিলেন। ছাড়া পাওয়া মাত্র কুহুর ইচ্ছা হলো ছুটে বেরিয়ে যেতে কিন্তু সেরকম কিছু সে করলো না। সে শব্দহীন পায়ে হেটে হেটে ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। ঘরের বাইরে এসে ওড়নার কোনা দিয়ে মুখ ঢেকে ফেললো।তারপর সিনেমার নায়িকারা লজ্জা পেলে যেভাবে দৌড় দেয় ঠিক সেভাবে দৌড় দিলো সে।

শিরিনা বেগম হালকা নাস্তা বানিয়ে ট্রে তে করে যিয়াদের জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন। আচমকা কুহু দৌড়ে এসে তার সামনে পড়লো। উনি “এই,এই” বলে মৃদু চিৎকার করে দূরে সরলেন। কুহু কিছুক্ষন থেমে মায়ের দিকে তাকিয়ে একটা লাজুক হাসি দিলো তারপর মুখে ওড়না চেপে ধরে সিনেমার স্টাইলে সিড়ি বেয়ে দৌড়ে উপরে উঠে গেলো। শিরিনা বেগম কিছুক্ষন বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলেন কুহুর দিকে। তারপর হতাশ হয়ে মাথা নাড়লেন। এই ড্রামাবাজ মেয়েকে কে বিয়ে করবে?

কুহু ঘরে এসে বিছানায় বসে পড়লো। পাশ থেকে বালিশ নিয়ে বুকে চেপে ধরলো। সত্যি সত্যি এই রসগোল্লা টাইপ ছেলেটার সাথে তার বিয়ে হয়ে যাবে? ইশশ কি লজ্জা!! হোক না রাজনীতিবিদ তাতে কি। তার সাথে তো আর নেতাগিরি দেখাবে না, যা দেখাবে সব বাইরে। তার সাথে তো অনেক রোমান্টিক হয়ে থাকবে।তবে কুহুও কম যাবে না সেও অনেক রোমান্টিকতা করবে। সেজেগুজে থাকবে,নিজে হাতে রান্না করে খাওয়াবে…….. রান্না-বান্না সহ সংসারের কাজকর্মের কথা মনে হতেই কুহুর মুখ থেকে হাসি সরে গেলো। বির বির করে বলল-
“এই যা!!বিয়ে করলে তো কাজকর্ম করতে হবে। ওহ মাই গড।”

________

রাতের খাওয়া শেষ করে ঘুমানোর আগে কুহু স্কিন কেয়ার করতে বসলো। একটা প্লাস্টিকের ছোট বাটিতে ফেস প্যাক বানালো। আচ্ছামত নেড়েছেড়ে সব মিক্সড করলো। এরপর একটা ফেসিয়াল হেয়ার ব্যান্ড দিয়ে চুলগুলো আটকে নিলো। এবার মুখে ফেসপ্যাক দেয়ার পালা। মোবাইলের কর্কশ রিংটোনে কুহুর ফেসপ্যাক দেয়া ব্যহত হলো। সে বিরক্তি নিয়ে উঠে এসে কল রিসিভ করে কানে ধরে কর্কশ কন্ঠে বললো-
“হ্যালো,কে?”

“কুহু বলছেন?”

“হ্যা বলছি।”

“আমি শাহাদ।”

কুহুর ঠোঁট দুটি হা হয়ে গেলো। শাহাদ তাকে কল দিবে সে ভাবে নি। সে কন্ঠ কোকিলের মতো চিকন করে বলল-
“জী বলুন।”

“বাবার কাছ থেকে আপনার নাম্বারটা নিয়েছি। শুনলাম আপনি বিয়েতে রাজি। ”

“জী।”

“আমাকে আপনার পছন্দ না হলে আমার কাছে স্বীকার করতে পারেন।”

কুহু কিছু বললো না।সে চুপ করে রইলো। শাহাদ কুহুর উত্তরের জন্য কিছুক্ষন অপেক্ষা করে বলল-
“আমি আসলে এই ব্যাপারে শিউর হয়ে আগাতে চাই।কোনো দ্বিধা থাকুক তা চাই না। কুহু?আপনি আমার কথা বুঝতে পারছেন?”

কুহু উত্তর দিলো-
“জী বুঝতে পারছি।”

“তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।”

কুহুর হাসফাস লাগলো। বুক ফাটে তো মুখ ফুটে না অবস্থা হলো তার। সে চোখ খিচে বন্ধ করে বলে দিলো-
“আপনাকে আমার পছন্দ। আই লাইক ইউ।”

কুহুর উত্তর শুনে শাহাদের হাসি পেলো। হালকা হাসলো সে। কুহুকে বললো-
“ধন্যবাদ। আমার বাড়ি থেকে কাল আপনাকে পাকা দেখা দেখতে যাবে। আপনার অসুবিধা নেই ত?”

“না নেই।”

“উমমম…আরেকটা কথা।ওদের সামনে নিজেকে “হুকু” বলবেন না। রিলাক্স থাকবেন, ঠিক আছে?”

কুহু হতভম্ব হয়ে গেলো এমন কথা শুনে। সে স্পষ্ট শুনতে পেলো শাহাদ অল্প হাসছে। শাহাদ একটু থেমে বললো-
“গুড নাইট কুহু। সি ইউ সূন।”

কলটা কেটে গেলো। কুহু মোবাইল নামিয়ে হাতে নিয়ে থম মেরে বসে থাকলো। তার বানানো ফেসপ্যাক মুখে আর দেওয়া হলো না।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here