টক_ঝাল_মিষ্টি #তামান্না_আঁখি #পর্ব-৫

0
517

#টক_ঝাল_মিষ্টি
#তামান্না_আঁখি
#পর্ব-৫

শাহাদ সন্ধ্যার পর বাড়ি ফিরলো। কুহুদের বাসায় যেহেতু যেতে পারে নি তাই আরো কিছু কাজ এগিয়ে রেখে এসেছে যাতে বিয়ের সময় কাজের চাপ না থাকে। তার বাবা নামেই এমপি, বেশির ভাগ কাজ তাকেই কর‍তে হয়। বিশাল বড় খান বাড়িটা অনেকটা জায়গা জুড়ে অবস্থিত। বাড়ির চারপাশ জুড়ে বাগান,এক পাশে গ্যারেজ, বাড়ি থেকে দূরে বাগানের এক পাশে একটা আউটহাউজ আছে। বাড়ির চারপাশে উঁচু দেয়াল দিয়ে ঘেরাও করা।

শাহাদ সদর দরজা দিয়ে রওনাককে সাথে নিয়ে ঢুকলো।রওনাকের হাতে এক গাদা ফাইল,আশফাক খানের সাইন নিতে হবে এগুলোতে।সদর দরজা পেরিয়ে ড্রয়িং রুমে এসে আব্দুল গাফফার খানের সাথে সাক্ষাৎ হলো।উনি সোফায় বসে পায়ের উপর পা তুলে চা পান করছে। শাহাদকে দেখে বড় করে একটা হাসি দিলেন। চায়ের কাপ টেবিলে রেখে বললেন-

“এসেছিস? আয় আয়, এদিকে এসে বোস।”

শাহাদ রওনাককে আশফাক খানের স্টাডি রুমে যাওয়ার জন্য বলে তার দাদার পাশে এসে বসলো। হাসিমুখে বললো-
“এতো খুশি কেন দাদাজান?”

” দুদিন পর নাত বউ আসছে বাড়িতে খু্শি হওয়ারই তো সময় এখন।”

শাহাদ নিচের দিকে তাকিয়ে হালকা হাসলো।আব্দুল গাফফার খানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

“পছন্দ হয়েছে নাতবউ?”

“অবশ্যই হয়েছে। আমার সোনার টুকরা নাতির জন্য চাঁদের টুকরা নাতবউ।”

রাফা কিচেন থেকে এক বাটি নুডুলস নিয়ে নিজের ঘরে যাচ্ছিল শাহাদকে বসে থাকতে দেখে এগিয়ে এসে বললো-
“ভাইয়া তুমি কিন্তু আজ অনেক বড় মিস করেছো। ভাবি আজ শাড়ি পড়ে এসেছিলো।কি সুন্দর যে লাগছিলো।”

শাহাদের চোখে মুখে মুগ্ধতা ছুয়ে গেলো।হয়ত কল্পনাতেই কুহুকে শাড়ি পড়া অবস্থায় দেখে নিয়েছে। রাফার দিকে তাকিয়ে বলল-

“তাই?”

“হুম।। আমি ছবি তুলে এনেছি। আমি স্টাডি শেষ করে তোমাকে ছবি দিয়ে আসব।”

শাহাদ মৃদু হেসে মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো। রাফা নুডুলসের বাটি হাতে নিজের ঘরের দিকে চলে গেলো। তারপর দাদাজানের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো-

“প্রেশার টা মেপেছেন দাদাজান?”

আব্দুল গাফফার চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে উপর নীচ মাথা নাড়লেন,তিনি মেপেছেন।শাহাদ আবার প্রশ্ন করলো-
“ডায়বেটিস? ”

“হুম।এটা নিয়ে তোর দাদীর সাথে ঝগড়া হয়ে গেছে।তার ধারনা আমি লুকিয়ে মিষ্টি খাই। তাই ডায়বেটিস কমছে না।অথচ যেখানে আমি চিনি ছাড়া চা খাওয়ার অভ্যাস করলাম সেখানে মিষ্টি কেন খাব?”

দাদার এমন অসহায় অবস্থার কথা শুনে শাহাদ চায়ের কাপের দিকে তাকালো। চায়ের কাপের কিনারের এক পাশে কিছু চিনির দানা নজরে পড়লো।শাহাদ তর্জনী দিয়ে কাপের দানাগুলো মুছে দিয়ে বললো-
“চুরি বিদ্যা মহা বিদ্যা যদি না পড়ো ধরা।”

বলেই একটা মুচকি হাসি দিয়ে উঠে চলে গেলো। আব্দুল গাফফার নাতির যাওয়ার দিকে হকচকিয়ে তাকালেন। এহহে রে!ধরা পড়ে গেলেন। তার স্ত্রী তাকে কড়া নজরে রাখে, কিছুতেই মিষ্টি খেতে দেয় না।তিনি আবার চিনি ছাড়া চা খেতে পারেন না।তাই লুকিয়ে চুরিয়ে প্রায়ই এক চামচ চিনি চায়ে মিশান। কিন্তু আজ নাতির কাছে ঠিক ই ধরা পড়ে গেলেন।

———

রাতে ঘুমানোর আগে কুহু মোবাইল নিয়ে বসলো। অনেক্ষন তনয়ার সাথে ভিডিও কলে বিভিন্ন আলাপ আলোচনা করলো। তনয়ার সাথে কথা শেষ করে সে ফেসবুকে শাহাদের আইডি খোজাখুজি করতে লাগলো।শাহাদ খান লিখে সার্চ দিলে। শাহাদের ছবি প্রোফাইলে দেয়া অনেকগুলো ফেক আইডি আসলো। কুহু প্রত্যেকটা আইডিতে ঢুকলো। ঢুকেই বুঝলো এইগুলো সব ফেক আইডি।তবে আইডি গুলোয় ঢুকে তার লাভ ই হলো। প্রত্যেকটা আইডির টাইমলাইনেই শাহাদের অনেক ছবি দেয়া। কুহু প্রতিটা ছবি ভালো করে দেখতে লাগলো।একটা গ্রুপ ছবি পেলো। শাহাদ আর তার বাবা সামনের সারিতে আর পিছনে অনেক মানুষ।ক্যাপশন পড়ে বুঝলো এটা নির্বাচনের সময় তোলা। ছবিতে শাহাদের পড়নে সাদা পাঞ্জাবি পায়জামা, তার উপর মুজিব কোট। কুহু জুম করলো শাহাদকে। ভালোই তো লাগছে নেতার গেটাপে। রাজনীতি পছন্দ না করলেও এই রাজনৈতিক নেতাকে তার বেশ লেগেছে। এর আগেও সে আশফাক খানের বিভিন্ন নির্বাচনী প্রচারনা অনলাইনে দেখেছে। তখন এত মন দিয়ে দেখেনি বারবারই এড়িয়ে গেছে।এই জন্য হয়ত শাহাদকে চোখ পড়ে নি।

কুহু আরো অনেক আইডি ঘাটলো। শাহাদের অনেকগুলো সিংগেল পিক সেভ করে রাখলো। একটা আইডিতে শাহাদকে নেতার গেটাপে ভাষন দেয়া অবস্থার ছবি পেলো। এটাও সেভ করে রাখলো। শাহাদের ছবির দিকে তাকিয়ে কুহুর আচমকাই কিছুটা অভিমান হলো।কি এমন হতো আজকে এলে? এত সুন্দর করে কয়েক ঘন্টা ধরে সেজেছে সে।অথচ যার জন্য সাজলো সে-ই দেখলো না।

কুহুর ভাবনার মাঝেই মোবাইলটা ভাইব্রেট করে উঠলো। স্ক্রিনে ভাসলো একটা অপরিচিত নাম্বার। কিন্তু নাম্বারটা দেখে কুহুর বুকের ভেতর হাতুড়ির বারি পড়লো। নাম্বারটা শাহাদের, গতকাল এই নাম্বার থেকেই কল করেছিলো শাহাদ। কুহু লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসলো। গলা দিয়ে “আ আ” শব্দ করে গলার স্বর পরিক্ষা করলো। তারপর হালকা গলা ঝেড়ে কল ধরে মিষ্টি করে বলল-
“হ্যালো”

অপাশ থেকে ভেসে আসলো পুরুষালি ভারি আওয়াজ-
” কেমন আছেন কুহু?”

শাহাদের কন্ঠ শুনে কুহুর বুকের ভেতর আরো জোরে হাতুড়ি পেটাতে লাগলো।সে নিজেকে স্থির রেখে বলল-
“জী ভালো।”

” আজ আসতে পারি নি আপনাদের বাসায়৷ আমার কিছু কাজ ছিলো। রাফার কাছে শুনলাম আপনি আমায় খুঁজেছেন, আমি না যাওয়ায় নাকি অভিমান করেছেন?”

কুহু চমকে গেলো। সে রাফাকে কয়েকবার শাহাদের কথা জিজ্ঞেস করেছিলো। শাহাদ না আসায় কিছুটা মন খারাপও হয়ত প্রকাশ করে ফেলেছিলো। ইশশ!! এই মেয়েটা সব বলে দিয়েছে। কুহু ভাবলো অভিমান করেছে এটা বললে হয়ত শাহাদ ভাববে কুহু খুব নির্লজ্জ। তাই সে জোর দিয়ে বলল-

“কই না তো!! অভিমান কেন করব? হোয়াই?আমি তো এমনিই জিজ্ঞেস করছিলাম।”

শাহাদ কফিতে চুমুক দিচ্ছিলো কুহু অভিমান করেনি শুনে কফিটা হঠাৎ তেতো মনে হলো তার কাছে। মুখের কফিটা গিলে নিয়ে কফির কাপটা নামিয়ে রাখলো সামনের টেবিলে। টেবিলে তার ল্যাপটপ টা অন করা। সেখানে ভাসছে কুহুর শাড়ি পড়া ছবি যেটা একটু আগে রাফা দিয়ে গেছে আর কুহু কি কি করেছে তা নিজ থেকেই বর্ণনা করে গেছে।শাহাদ কুহুর ছবিটা জুম করতে করতে বললো-

“হুম,বুঝলাম।”

কুহু মিনমিন করে প্রশ্ন করলো-
“আজ আসেননি কেন?”

“কাজ ছিলো। রাজনৈতিক কাজ।”

কুহু মুখ ভেঙালো। এই পছন্দের ছেলেটা এই অপছন্দের কাজটা না করলে কি হত? থাক,মানুষটা যেহেতু ভালো বাকিটা সহ্য করে নেয়া যাবে। কুহু মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দিলো। ছোট্ট করে বলল-

“ওওও।”

“আজ তাহলে রাখি।রাত হয়েছে, ঘুমিয়ে পড়ুন।গুড নাইট।”

“গুড নাইট।”

অপাশ থেকে কলটা কেটে গেলো। কুহুর মনটা একটু খারাপ লাগলো। কি নিরামিষ মানুষ!! আরেকটু কথা বললে কি হত? কুহু মেয়ে হয়ে কি করে নিজে থেকে কথা বলবে ছেলে হয়ে শাহাদেরই তো স্বেচ্ছায় কথা বলা উচিত।

শাহাদ কান থেকে ফোন নামিয়ে টেবিলে রাখলো। সোফায় হেলান দিয়ে ল্যাপটপটা কোলের উপর নিলো। কুহুর বেশ কয়েকটা ছবি দিয়ে গেছে রাফা।ম্যাক্সিমাম ই ক্যান্ডিড। প্রতিটা ছবিতেই কুহুর চোখেমুখে লজ্জামিশ্রিত হাসি। দুটো ছবিতে হবু শ্বাশুড়ি আর মায়ের মাঝখানে বসে আছে সে। কুহুর একটা সিংগেল ছবি বের করে জুম করলো শাহাদ।বেশ সুন্দর করে সেজেছে কুহু, এখনকার মেয়েরা এইভাবে সাজে না। কুহুকে দেখতে শাবানার আমলের নায়িকাদের মতো লাগছে। শাহাদ মুগ্ধ চোখে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকলো।যদিও বিয়েটা প্রথমে বাবার পছন্দে করতে চেয়েছিলো কিন্ত তার হবু বউকে তার বেশ পছন্দ হয়েছে৷
রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে হওয়ায় শিক্ষাজীবন রাজনীতি করেই পার করেছে। মেয়েদের সাথে তেমন মিশে নি। প্রেম করার তো প্রশ্নই আসে না। অনেক মেয়ের কাছ থেকে প্রেম নিবেদন পেয়েও প্রত্যাখ্যান করেছে।শত্রুরা মেয়েঘটিত কোনো ব্যাপার রটিয়ে পরিবারের সম্মান নষ্ট করতে পারে এই জন্য মেয়ে বন্ধুও তেমন বানায় নি। ধরতে গেলে কুহুই তার জীবনের প্রথম অনুভূতি। আর প্রথম অনুভূতির মেয়েটিকেই সে বউ হিসেবে পেতে চলেছে।

————

রাহাত বেড রুমে ঢুকে বিছানার দিকে তাকিয়ে দরজার কাছেই দাঁড়িয়ে গেলো। আনিশা অন্যদিকে মুখ করে পাশ ফিরে শুয়ে আছে। আনিশার এভাবে শুয়ে থাকার একটাই অর্থ, সে রাগ করে আছে। রাহাত আস্তে করে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। বিছানায় নিজের শোয়ার জায়গায় এসে বসলো। আলতো করে আনিশার কাঁধে হাত রেখে ডাকলো-

“অনি?… অনি?”

আনিশা সাড়া দিলো না।আগের মতোই নিশ্চল শুয়ে থাকলো। রাহাত উঁকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো আনিশা ঘুমাচ্ছে কিনা।আনিশা চোখ বন্ধ করে আছে কিন্তু ঘুমাচ্ছে কিনা বুঝা যাচ্ছে না।রাহাত ঢের বুঝতে পারছে আনিশা ঘুমায় নি।আনিশার শোয়ার ধরন বলে দিচ্ছে আনিশা অভিমান করে আছে। রাহাত এই শোয়ার নাম দিয়েছে “রেড সিগনাল” অর্থাৎ আনিশা এভাবে শুয়েছে মানেই আজ তার খবর আছে।রাহাত আনিশার গা ঘেষে শুয়ে পড়লো, কন্ঠে মধু ঢেলে বললো-

“গা টা এমন ম্যাজ ম্যাজ করছে কেন? কাল কি কাজকর্ম বন্ধ রাখব নাকি? ভাবছি কোথাও ঘুর‍তে গেলে কেমন হয়? বিয়ে যেহেতু করেছি একা তো যেতে পারব না বউকে নিয়ে যেতে হবে।তা বউ বলো তো কোথায় যাব।”

আনিশা গুলির বেগে শোয়া থেকে উঠে বসলো। রাহাতের দিকে অগ্নিদৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল-

“হ্যা এখন তো বিয়ে করে গলার কাটা হয়ে গেছি,অথচ ভার্সিটিতে থাকতে বিনা নিমন্ত্রনে পিছে পিছে ঘুরতে।”

“এসব কি বলছো? আমি কখন বললাম গলার কাটা হয়ে গেছো।”

“হয়েছিই তো। আমার এখন কি আর দাম আছে? কোনো দাম নেই।”

“কে বলেছে দাম নেই।কোটি টাকা কাবিন দিয়ে বিয়ে করেছি। কত দাম ভাবো একবার!”

আনিশা অবিশ্বাস্য দৃষ্টিতে তাকালো। কিড়মিড় করে বলল-
“মিথ্যা বলার জায়গা পাও না৷ কোটি টাকা কখন কাবিন দিলে তুমি?”

রাহাত উঠে বসলো। টুপ করে আনিশার গালে একটা চুমু দিয়ে বলল-
“এই যে এখন দিলাম। আমার একেকটা চুমু কোটি টাকার চেয়েও বেশি।”

আনিশা রেগে বিছানা ছেড়ে উঠে যেতে চাইলো কিন্ত রাহাত এক টানে আবারো বসিয়ে দিলো।আনিশার হাত আকড়ে ধরে বলল-

“রাগ করছো কেন? বলেছি তো নিয়ে যাব। একটু কাজ গুলো গুছিয়ে নিই।”

“তোমার কাজ কোনোদিনই শেষ হবে না। সেই কবে বাপের বাড়ি গিয়েছি। আমার একমাত্র ভাইয়ের বউ দেখাদেখিতে পর্যন্ত যেতে পারলাম না তোমার জন্য। বিয়েতেও হয়ত যেতে পারব না।”

“কে বলেছে পারবে না।বিয়ের এক সপ্তাহ আগে গিয়ে বসে থাকব আমরা। ”

“তাই না?? তাহলে কাল ই রওয়ানা দিতে হবে।শাহাদের বিয়ের ডেট এক সপ্তাহ পরে। ”

শাহাদের বিয়ের ডেট না জেনেই বউকে মিথ্যা আশ্বাস দিতে গিয়ে রাহাত চিপায় পড়ে গেলো। আমতা আমতা করে বলল-

“আসলে হয়েছে কি……..”

“থাক আর মিথ্যা অযুহাত দিতে হবে না। তুমি তোমার কাজের সাথেই সংসার করো।”

বলেই আনিশা আবারো মুখ ঘুরিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো। রাহাত বউ এর রাগ ভাংগানোর কোনো উপায় পেলোনা শেষমেশ পরাজিত হয়ে আনিশার বালিশে নিজেও মাথা রেখে শুয়ে বললো-

“ঠিক আছে কালই যাব শ্বশুরবাড়ি। কোনো কাজের দোহাই দিব না, প্রমিস।”

আনিশা রাহাতের দিকে ঘুরলো। সন্দীহান কন্ঠে বললো-
“আবারো মিথ্যা বলছো।”

“না বউ,সত্যি কাল যাব৷ বিশ্বাস করো।এবার মাথাটা টিপে দাও তো। এখন না ঘুমালে কাল উঠে রওয়ানা দিতে পারব না।”

রাহাত আনিশার দিকে আরেকটু এগিয়ে আসলো তারপর চোখ বন্ধ করে ফেললো।আনিশা আর রাগ করে থাকতে পারলো না। সে আস্তে আস্তে রাহাতের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।

________

সকালে ঘুম থেকে উঠে কুহু প্রতিদিনের মতো রেডি হয়ে ভার্সিটি গেলো। ভার্সিটি গিয়ে তনয়ার সাথে মিলে সে শাহাদের ফেসবুক আইডি খুজতে লেগে গেলো। অনেক খুঁজে বিভিন্ন আইডিতে ঢুঁ মেরে শেষমেশ শাহাদের আইডি পাওয়া গেলো। আইডির নাম শাহরিয়ার খান শাহাদ।তনয়া শ্বাস ছেড়ে বললো-

“নিজের হবু বরের পুরো নামটাও জানিস না।পুরো নামটা জানলে এত কষ্ট করতে হতো না অনেক আগেই আইডি পেয়ে যেতাম।”

কুহু মাথা চুলকে বললো-
“আমি কি করে জানব পুরো নাম, আমি কি জিজ্ঞেস করেছি নাকি?”

তনয়া শাহাদের প্রোফাইল পিকে ক্লিক করলো। কুহুকে কমেন্টগুলো দেখিয়ে বলল-

“দেখ দেখ, মেয়েরা কিসব কমেন্ট করেছে।”

কুহু কমেন্টগুলো দেখলো। সবাই ক্রাশ, ফিউচার হাব্বি এসব লিখে কমেন্ট করেছে,কেউ কেউ ফ্রেন্ডদেরকে ম্যানশন করে এনে শাহাদকে কে বিয়ে করবে সেটা নিয়ে ছোটখাটো তর্কও জুড়ে দিয়েছে। কুহুর খুব রাগ পেলো। মন চাইলো প্রত্যেকের কমেন্টে গিয়ে রিপ্লাই দিতে “শাকচুন্নিরা নজর দিবিনা, এটা আমার বর,নজর দিলে চোখে গেলে দিব।”

রাফা আর রিদি রেজিয়া সুলতানার পিছু ঘুরছে আর ঘ্যানঘ্যান করছে। রেজিয়া কিচেন থেকে ডালের বাটি নিয়ে ডায়নিং টেবিলের দিকে যাচ্ছেন। রাফা আগের মতোই নাকি সুরে বললো-

“ও বড় মা, ব্যবস্থা করে দাও না।”

রেজিয়া বেগম সাবধানি কন্ঠে বললেন-

“দূরে সরে দাড়া, গরম ডাল গায়ে পড়বে।”

রাফা রিদি দুজনেই একটা দূরত্ব নিয়ে রেজিয়া সুলতানার পিছু পিছু ডায়নিং এ গেলো। জয়া বেগম টেবিলে খাবার দিচ্ছেলেন রাফা আর রিদিকে দেখে বললেন-
“আর কত ঘ্যানঘ্যান করবি তোরা? এবার চুপ কর।”

রিদি আবদারের সুরে বললো-
“তুমি বড়মাকে বলো না মা ভাবিকে কল দিয়ে আনতে।”

“আর কদিন পর মেয়েটার বিয়ে এখন তার বাড়ির লোকজন তাকে এইভাবে তোদের সাথে ঘোরার পারমিশন দিবে না। এই বিষয়ে আর কোনো কথা না। খেতে বস।”

রাফা কাঁদো কাঁদো মুখ করে রেজিয়া সুলতানার দিকে তাকিয়ে বলল-
“ও বড়মা!!!”

রেজিয়া সুলতানা একটা ছোট্ট শ্বাস ফেললেন। মেয়ে দুটো কুহুকে নিয়ে আগামীকাল পার্কে যাওয়ার আবদার করেছে। এই আবদার কি আর বললেই মেটানো যায়? বাড়ির কর্তাদের অবগত কর‍তে হবে, কুহুর বাবা মায়ের অনুমতি লাগবে তবেই না সম্ভব৷ সন্ধ্যার পর আশফাক খান বাড়ি ফিরলে রেজিয়া সুলতানা রাফা রিদির আবদারের কথা জানালেন। আশফাক খান প্রথমে কিছু একটা ভাবলেন তারপর জানালেন-

“আগে জেনে আসো তোমার ছেলে ওদেরকে সময় দিতে পারবে কিনা। ওদেরকে তো আর ড্রাইভার দিয়ে ছেড়ে দেয়া যাবে না।”

স্বামীর কথায় রেজিয়া সুলতানা শাহাদের ঘরে গেলেন। শাহাদ তার ঘরের সোফায় বসে ফাইল ঘাটছিল। রেজিয়া সুলতানা ঢুকতেই মুখ তুলে তাকালো। রেজিয়া সুলতানা কোনো ভূমিকা ছাড়াই বললেন-

“রাফা রিদি জেদ ধরেছে কাল কুহুকে নিয়ে পার্কে যাবে। তুই তাদেরকে সময় দিতে পারবি?”

শাহাদ সোজা হয়ে বসলো।জিজ্ঞেস করলো-

“দাদাজান আর বাবার অনুমতি আছে?”

“তোর বাবা অনুমতি দিয়েছে। আর তোর দাদাজানকে মা জানিয়েছেন।”

“কুহুর বাবা মায়ের অনুমতি?”

“সেটা তোর বাবা কল দিয়ে বলে নিবেন,তুই যেতে পারবি কিনা সেটা বল।”

“ঠিক আছে যাব, কাল বিকালে বের হব তাহলে।”

রেজিয়া বেগম ছেলের মত পেয়ে ঘর ছেড়ে বেরিয়ে গেলেন। শাহাদ হাতের ফাইলটা বন্ধ করে ফেললো। টেবিলের উপর থাকা কফির কাপটা নিয়ে বারান্দায় চলে এলো। রেলিঙে দুহাতের কনুই রেখে ভর দিয়ে দাঁড়ালো।ছোট্ট করে কফির কাপে চুমুক দিলো।বিয়ে ঠিক হওয়ার পর আগামীকাল প্রথম কুহুর সাথে দেখা হবে। এর আগে দুবার দেখা হয়েছে আর দুবার ই কুহু কিছুনা কিছু করেছে। আগামীকাল নতুন কি করবে সেটা দেখার বেশ আগ্রহ হচ্ছে শাহাদের।

কুহু বইয়ের ভিতরে মোবাইল রেখে ফেসবুক চালাচ্ছিলো। আকস্মিক তার ঘরে আগমন ঘটলো শিরিনা বেগমের। মায়ের আগমনে সে জলদি ফোনটা লুকিয়ে ফেলে পড়ার ভান ধরলো। শিরিনা বেগম কুহুর টেবিলের কাছে দাঁড়িয়ে মেয়ের চুলে বিলি কেটে বললেন-
“কাল ভার্সিটি যাস না।সুন্দর করে সেজেগুজে বিকালে তৈরি হয়ে থাকবি।”

“কেন মা?”

“কাল শাহাদ আসবে তার সাথে ঘুরতে যাবি। সাথে তার দুজন কাজিনও থাকবে।রাফা রিদি।”

কুহু অবাক হলো। প্রশ্ন করলো-
“কেন মা?”

“কেন আবার কি বোকা মেয়ে!! ঘুরতে যাবি। একটু আগেই শাহাদের বাবা তোর বাবার সাথে কথা বলেছে এই বিষয়ে। কাল বিকালে সুন্দর করে রেডি হয়ে থাকবি।বুঝেছিস?”

কুহু মাথা হেলিয়ে সম্মতি জানালো। মেয়ের সম্মতি পেয়ে শিরিনা বেগম চলে গেলেন।শিরিনা বেগম চলে যেতেই কুহু এক লাফে টেবিল ছেড়ে উঠে পড়লো। এক প্রকার উড়ে এসে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে বসে পড়লো। ডানে বামে মুখ ঘুরিয়ে নিজেকে দেখলো। তারপর এক গাদা রূপচর্চার জিনিস বের করে সামনে রাখলে। এখন তার প্রধান কাজ হচ্ছে এগুলো একটার পর একটা মুখে দিয়ে বসে থাকা।

চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here