#স্নিগ্ধ_প্রিয়া
#সাদিয়া_শওকত_বাবলি
#পর্ব_৩০
( অনুমতি ব্যতীত কপি করা কঠোরভাবে নিষিদ্ধ )
তৃষাম দাঁত কেলিয়ে একটা শয়তানী হাসি দিল। বেশ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল – আছে তো স্যার। কিন্তু আমাদের বন্ধু জায়ান, ঐ যে ক্লাস টপার সুদর্শন জায়ান ইবনে জাফর চৌধুরী নিজের ক্লাস ছেড়ে আপনার এই ক্লাসের মধ্যে ঘাপটি মেরে বসে রয়েছে। ওকে নিতেই এসেছি আমরা।
প্রফেসর নিজের হাত তুলে চশমাটা একটু ঠিক করলেন। পুরো ক্লাসে চোখ বুলিয়ে বললেন – জায়ান এখানে?
মাথা দুলালো তৃষাম। ক্লাসের মধ্য দিকে উঁকি মেরে খোঁজার চেষ্টা করলো জায়ানকে। অতঃপর বই দিয়ে মুখ ঢাকা ছেলেটাকে আঙ্গুল তুলে বলল – ঐ তো জায়ান।
প্রফেসর সরু দৃষ্টিতে তাকালো জায়ানের পানে। জায়ান অপ্রস্তুত হলো। ঠোঁট টেনে জোরপূর্বক একটু হাসার চেষ্টা করলো। প্রফেসরের মুখশ্রী থমথমে হলো। গম্ভীর কন্ঠে আদেশের সুরে বলল – স্টান্ড আপ জায়ান!
প্রফেসরের দেওয়া আদেশ কর্ণে পৌঁছানোর সাথে সাথে দাঁড়িয়ে পড়লো জায়ান। ভরা ক্লাসের দিকে দৃষ্টি বুলালো একবার। সব জুনিয়ররা কেমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। এই সব হয়েছে তৃষামটার জন্য। ইচ্ছে করে ওকে এমন একটা লজ্জাজনক পরিস্থিতিতে ফেলেছে। একবার এখান থেকে বের হোক তারপর দেখে নিবে সে ঐ তৃষাম আর চ্যাং কে।
– ক্লাস রেখে তুমি এখানে কি করছো জায়ান?
প্রফেসরের গম্ভীর কন্ঠের প্রশ্নে ধ্যান ভাঙলো জায়ানের। ফিরে তাকালো সে প্রফেসরের পানে। কয়েকটা নিঃশ্বাস ফেলে নিজেকে স্বাভাবিক করলো ছেলেটা। অতঃপর স্বাভাবিক কন্ঠেই বলল – আমি আসলে আপনাকে খুব মিস করছিলাম স্যার।
কথাটুকু বলে একটু থামলো জায়ান অতঃপর আবার বলল – আপনার ক্লাস করার সুযোগ পেয়েছিলাম আমি প্রথম বর্ষে। আমাদের সেমিস্টারে আপনার তো আর কোনো ক্লাস পাইনি স্যার। কিন্তু আমি আপনাকে ভুলতে পারছিলাম না। ইউ আর মাই ফেভারিট প্রফেসর স্যার। অন্যরাও ভালো তবে আপনার ক্লাসে যতটা শান্তি পেতাম অন্যদের ক্লাস করে তেমন শান্তিটা পাই না। তাই তো একটু শান্তির খোঁজে নিজের ক্লাস রেখে এই ক্লাসে এসে জড়ো হয়েছি। আপনার ক্লাসগুলো আমার মানসিক শান্তির কারন স্যার।
জায়ানের কথা শুনে হা হয়ে গেল পূর্বাশা, সেনজেই, জেফি, সুজা, চ্যাং এবং তৃষাম। এই ছেলে কি বলছে এসব? এই ছেলে বদরাগী, নাক উঁচু, কিছুদিন ধরে আবার বেহায়া ছ্যাচড়া হওয়ারও প্রমান দিয়েছে, আর চাপাবাজও? এ তো আবার যেই সেই চাপাবাজি না একদম নোবেল বিজয়ী হওয়ার মতো ক্ষমতারাধী চাপাবাজি। এই বদরাগী, নাঅ উঁচু ছেলের মধ্যে যে এমন একটা চাপাবাজির চড়ম বিভৎস গুন রয়েছে তা তো জানাই ছিল না কারো। আবেগে প্রফেসরের চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো। চশমাটা খুলে হাত দিয়ে একটু মুছেও নিল অতঃপর আবেগতাড়িত কন্ঠে বললেন – তোমার মতো এভাবে কখনও কেউ বলেনি জায়ান। আমি যে এতটা ভালো প্রফেসর হতে পেরেছি তুমি আজ না বললে আমি জানতেই পারতাম না জায়ান। ইউ আর মাই বেস্ট স্টুডেন্ট জায়ান। আ’ম প্রাউড অফ ইউ মাই সান।
জায়ান তৃষামের পানে তাকিয়ে বাঁকা হাসি দিল একটা অতঃপর আবার প্রফেসরের পানে তাকিয়ে বলল – তাহলে আমি এখন আসি স্যার। আপনার ক্লাসে অনেক বিরক্ত করে আপনার মূল্যবান সময় নষ্ট করার জন্য অত্যন্ত দুঃখিত মাই ফেভারিট প্রফেসর।
প্রফেসর আরও আবেগী হয়ে পড়লেন। জায়ানের পানে তাকিয়ে বললেন – তোমাকে কোথাও যেতে হবে না মাই সান। তুমি এখানেই আমার ক্লাস করবে আজ। তোমাকে কেউ কিছু বললে আমি তার সাথে কথা বলে নেব।
জায়ান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো আবার অতঃপর প্রফেসরের পানে তাকিয়ে বলল – থ্যাংক ইউ স্যার।
– সিট ডাউন।
প্রফেসরের আদেশ পেয়েই ধপ করে পূর্বাশার পাশে বসে পড়লো জায়ান। পূর্বাশার পানে না তাকিয়েই তার দিকে পাশে একটু এগিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল – প্রফেসরের ক্লাসে আমার মানসিক শান্তিটা কিন্তু আপনি কৃষ্ণময়ী।
পূর্বাশা অবাক হলো। তবে তার হৃদয়ে ঝংকার তুললো এই কৃষ্ণময়ী শব্দটা। সর্বাঙ্গ শীতলতায় ছেয়ে গেল যেন।হ্যা সে কৃষ্ণবর্না, কালো চামড়ার অধিকারী। আর এই নিয়ে সর্বদা তাকে সকলের তিরস্কার আর, তিক্ত বানীর পাত্রী হতে হয়েছে তাকে। কখনও তার এই ঘাটতি, তার এই কালো হওয়ার দোষকে গুনে রূপান্তরিত করে এত সুন্দর করে ডাকেনি। পূর্বাশা শীতল দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো জায়ানের পানে। জায়ান ভ্রু কুঁচকালো, মেয়েটার পাশে একটু ঘেঁষে ফিসফিসিয়ে বলল – ওভাবে তাকাবেন না কৃষ্ণময়ী প্রেমে পড়ে যাবেন। আর আমার প্রেমে একবার পড়লে আমি কিন্তু আর উঠতে দেব না আপনাকে।
থতমত খেল পূর্বাশা, দৃষ্টি সরিয়ে নিল দ্রুত। ইসসস সে ভ্যাবলার মতো পুরো ক্লাসের মধ্যে তাকিয়ে ছিল জায়ানের পানে? সবাই কি ভেবেছে? এমনিই তো তার দোষের অভাব নেই। আর এই ছেলেটাই বা কি ভেবেছে? পূর্বাশা দৃষ্টি নত করে বসে কাঁচুমাচু হয়ে বসে রইলো চুপচাপ। তখনই আবার শোনা গেল প্রফেসরের কন্ঠস্বর। ক্লাসের সকল শিক্ষার্থীদের পানে চেয়ে প্রফেসর বললেন – এই ছেলেটার কাছ থেকে তোমারা শেখো শেখো যে কিভাবে প্রফেসরের সম্মান করতে হয়, শ্রদ্ধা করতে হবে।
কথাটা বলেই প্রফেসর আবার ফিরে তাকালেন জায়ানের পানে। ধরা গলায় বললেন – তোমার মতো ছাত্র পেয়ে আমি সত্যিই গর্ববোধ করছি জায়ান।
আবেগী সময় কাটাতে কাটাতে প্রফেসরের হঠাৎ নজর গেল দরজার দিকে। চ্যাং আর তৃষামকে ভ্যাবলার মতো বড় বড় চোখ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে এখনও। তাদের ধমকে উঠলেন প্রফেসর। গম্ভীর কন্ঠে বললেন – তোমারা ক্লাস বাদ দিয়ে এখনও এখানে কি করছো? যাও ক্লাসে যাও।
প্রফেসরের ধমকে কেঁপে উঠলো চ্যাং আর তৃষাম। ধ্যান ভাঙলো তাদের। নয়তো জায়ানের কথা শুনে তারে অবাকের বশবর্তী হয়ে অবাক রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছিল। কি করতে তারা এসেছিল আর কি হলো? সম্পূর্ণ খেলাই পাল্টে দিল জায়ান। মহা বুদ্ধিমান আর ধরীবাজ এই ছেলে। কেমন গোল খাইয়ে দিল ওদের। আবার প্রফেসরের দৃষ্টিতেও সেরা হলো।
____________________________________
উজ্জ্বল আলোকিত সূর্যটা ডুবে গেছে। চারপাশটা গ্রাস করে নিয়েছে আঁধারের কালো চাদরে। কৃত্রিম আলোগুলোতে ঝলমলিয়ে উঠেছে শহরটা। তৃষাম আর চ্যাং কাঁচুমাচু ভঙ্গিতে জায়ানের সম্মুখে দাঁড়িয়ে রয়েছে। জায়ান ভাবলেশহীনভাবে পায়ের উপর পা তুলে মোবাইল টিপছে। তৃষাম কিঞ্চিৎ সময় নিয়ে অপেক্ষা করলো জায়ানের কিছু বলার আশায় কিন্তু জায়ান বলছে না কিছুই। শেষে উপায় না পেয়ে নিজের মৌনতা ভেঙে মুখ খুললো তৃষাম। ঢোক গিলে শুধালো – এভাবে আর কতক্ষন দাঁড়িয়ে থাকবো?
জায়ান মোবাইলের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিল – সারারাত।
কিছুটা ক্ষেপে গেল চ্যাং। জায়ানের পানে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে বলল – পারবো না।
জায়ান শীতল দৃষ্টিতে তাকালো চ্যাং এর পানে। বেশ শান্ত কন্ঠেই বলল – ভুলে যাস না, তোর ওয়াশ রুমের দরজা খুলে রেখে ভিতরে ঢুকে হিজড়া সম্প্রদায়ের মতো অভিনয় করার ভিডিও আছে আমার কাছে। চাইলে দেখিয়েও দিতে পারি তোকে।
চ্যাং চুপসে গেল মুহুর্তেই। সেদিন ঘুম থেকে উঠে ঢুলু ঢুলু ভঙ্গিতে সে ঢুকেছিল ওয়াশ রুমে। ঘুমের তাড়নায় ওয়াশ রুমের দরজাটা আটকাতে ভুলে বসেছিল, শুধুমাত্র দরজাটা চাপিয়েই ভিতরে ঢুকেছিল চ্যাং। আর সেই দরজা না আটকানোটাই তার জীবনের সবচেয়ে বড় কাল হয়ে দাঁড়ালো। আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে তো মানুষ কত কিই করে। সেদিন চোখের ঘুম ছুটে গেলে ওয়াশ রুমের আয়ানার সম্মুখে দাঁড়িয়ে একটু মেয়েদের মতো ঢং করছিলো। অবশ্য এইসব ঢং আয়নার সম্মুখে দাঁড়িয়ে সে প্রায়ই করে। শুধুমাত্র মেয়েদের ভঙ্গিমার ঢং নয় পালোয়ান, নায়ক, নায়িকা কত ধরনের ঢংই তো করে। কিন্তু কে জানতো ঐ দিন জায়ান দরজা খোলা পাওয়ার সুযোগ পেয়ে এভাবে তার ঢং গুলো ভিডিও করে রাখবে। আর পরবর্তীতে তার সেই ভিডিও ব্যবহার করে ব্ল্যা’ক’মে’ই’ল করবে। তৃষাম তাকালো চ্যাং এর চুপসানো মুখ পানে। তার অবস্থাও কিছুটা চ্যাং এর মতোই। তার না’ই’টি পড়া ভিডিও এর ব্ল্যা’ক’মে’ই’লে জর্জরিত সে। তৃষাম একটু এগিয়ে গেল জায়ানের পানে। কাঁচুমাচু মুখ করে বলল – ভাই দেখ কান ধরছি আর জীবনেও তোর পিছনে লাগবো না। এই বারের মতো মাফ করে দে ভাই। কত এক ঘন্টা ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে পা দুটো যেন অবশ হয়ে আসছে।
জায়ান একটু সময় নিল, ভবলো কিছু একটা। অতঃপর ঠান্ডা কন্ঠে বলল – মাফ করতে পারি তবে শর্ত আছে একটা।
তৃষাম আর চ্যাং এর চোখ মুখ চকচক করে উঠলো একটু। চ্যাং আশাপূর্ণ কন্ঠে শুধালো – কি শর্ত ভাই?
জায়ান তাকালো তৃষমের পানে অতঃপর বলল – ওর বোনকে যদি এই মুহূর্তে হোস্টেল থেকে বাইরে এনে আমার সাথে দেখা করাতে পারে তবেই তোদের মাফ করবো আজকের মতো।
চ্যাং আর তৃষাম রাজি হলো। রাজি না হয়ে লাভ আছে কি কোনো? পরে দেখা যাবে রাজি না হয়ে ঠিকই সারারাত এই রুমের মধ্যে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে পা দুটো কর্মহীন করতে হবে। আর তাছাড়া তৃষাম জানে, জায়ান যতোই পূর্বাশার পিছন পিছন ঘুরঘুর করুক পূর্বাশা এত সহজে ভাঙবে না, এত সহজে মানবে না জায়ানকে। মেয়েটা ঠিক যতটা নরম, ভীতু প্রকৃতির ততটাই শক্ত হৃদয়ের। ছোট বেলা থেকে তো কম সহ্য করেনি। মেয়েটা যেমন ছোটবেলা থেকে অন্যের তিরস্কার, তিক্ত কথার উত্তর দিতে পারেনি সহজে তেমনি তার হৃদয়ে কোনো মানুষকেও ঠাঁই দিতে পারেনি। যদিও নক্ষত্রের বিষয়টা এখনও অজানা তৃষামের। তপ্ত নিঃশ্বাস ফেললো তৃষাম। মোটা শীত পোশাক পড়ে বাইরে বেরিয়ে এলো তিনজনই, উদ্দেশ্য পূর্বাশার হোস্টেল।
ক্ষানিক বাদেই জায়ান, তৃষাম আর চ্যাং চলে এলো পূর্বাশার হোস্টেলর দিকে। কিছুটা দূর থেকেই তারা লক্ষ্য করলো ছাত্রী হোস্টেলের দিকে একটা জটলার মতো বেঁধেছে। ওখানে হচ্ছেটা কি? জায়ান, তৃষাম আর চ্যাং এগিয়ে গেল। জটলা ঠেলে ভিতরের দিকটায় যেতেই যেন চোখ কপালে উঠলো তিন জনেরই। জটলার ঠিক মধ্য বরাবর দাঁড়িয়ে রয়েছে পূর্বাশা আর তার সম্মুখে হাঁটু গেড়ে বসে রয়েছে ইয়ান। এ ব্যাটার আবার হঠাৎ আগমন ঘটলো কোথা থেকে? কয়দিন ধরে তো বেশ গা ঢাকা দিয়ে ছিল। হুট করে আবার জায়ানের শান্তির জীবনে অশান্তি হয়ে নেমে এলো কেন? ক্রমেই ক্রোধে দিশেহারা হয়ে পড়ছে যেন জায়ান। ফর্সা মুখশ্রীটা ধীরে ধীরে রক্তিম বর্ন ধারন করছে। আর মেয়েটাও কেমন কিছু না বলে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে রয়েছে ইয়ানের পানে। জায়ান যখন পূর্বাশার সম্মুখে ভালোবাসার দাবি নিয়ে যায় কই তখন তো এমন ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে থাকে না। উল্টো চোখ দুটো ভয়ংকর করে তুলে শক্ত কন্ঠে তার ভালোবাসাকে প্রত্যাখ্যান করে। নিজের ব্যক্তিত্ত্ব ভেঙে ছ্যাঁচড়া হয়েছে, বেহায়া হয়েছে আজকের এই দিনটা দেখার জন্য নাকি? ক্রোধে উন্মত্ত হলো জায়ান। রক্তচক্ষু নিয়ে এগিয়ে গিয়ে চেপে ধরলো পূর্বাশার হাতখানা। চমকে উঠলো মেয়েটা। পাশ ফিরে তাকাতেই দৃশ্যমান হলো জায়ানের টকটকে লাল মুখ খানা। আশেপাশে কোনো দিকে না তাকিয়ে পূর্বাশার হাত টেনেই হাঁটা ধরলো ভীর ঠেলে।
চলবে…….
ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডি লিংক –
https://www.facebook.com/profile.php?id=100090661336698&mibextid=rS40aB7S9Ucbxw6v
গ্রুপ লিংক –
https://www.facebook.com/groups/233071369558690/?ref=share_group_link
Nice golpo
Next part guli kobe deben pls tara tari din
Thank you for your comment,next porbo Gola add kora hoice🔰