পদ্মমির #পর্ব_13 #ইলমা_বেহেরোজ

0
1337

#পদ্মমির
#পর্ব_13
#ইলমা_বেহেরোজ

বিকেল। আকাশের সাথে মিশে গেছে ঘন মেঘ, সেই মেঘের ফাঁক দিয়ে উকি মারছে দিনান্তের শেষ আলো। পদ্মজা ছাদে বসে নির্মল পরিবেশের সাথে মিশে থাকা ভেজা মাটির মন মাতানো গন্ধ উপভোগ করছে। এখনো আমির ফিরেনি। নিশ্চয়ই শহরের দিকে চলে গেছে।

পাশের ভবনে অনেকক্ষণ ধরে একজন লোক চেঁচামেচি করছে, কাউকে গালিগালাজ করছে।

মুজ্জা কলোনিতে প্রতিদিনই ঝগড়া হতে দেখা যায়। উনিশ বিশ হলেই ঝগড়া করে। হঠাৎ একটা নারী কণ্ঠ চিৎকার করে উঠে। পদ্মজা কেঁপে উঠে। নারী কণ্ঠটি চিৎকার করে কাঁদছে আর বার বার অনুরোধ করছে তাকে না মারার জন্য। দুটি শিশুর কান্নাও শোনা যাচ্ছে। এমন করুণ কান্না পদ্মজা বহুদিন শুনেনি। অশ্রাব্য গালিগালাজ আর কান্নায় চারপাশ ভারী হয়ে উঠছে! কে ওমন করে মারছে? পদ্মজা বেশিক্ষণ এই কান্না সহ্য করতে পারল না। হালকা কাপড়ের চাদর মাথায় টেনে শুকতারা থেকে বেরিয়ে পড়ে। ওর সাথে ভুবনও যায়। পদ্মজাকে বের হতে দেখে জাদত সক্রিয় হয়ে উঠে। পদ্মজা কান্না অনুসরণ করে পাশের ভবনে ঢুকে। ভবনটির ভেতর গোলাকৃতি। চারদিকে। ভবন, মাঝে গোল সিমেন্টের উঠান।
একজন মধ্যবয়স্ক লোক উঠানে এক অল্প বয়সী মেয়েকে চুলের মুঠি ধরে মোটা লাঠি দিয়ে পেটাচ্ছে। মেয়েটার বুকে শাড়ি নেই। শরীর থেকে রক্ত নির্গত হচ্ছে। তার ছোট ছোট ছেলেমেয়েগুলো চিৎকার করে কাঁদছে মা মা বলে। এ তো পাশবিক নির্যাতন! পদ্মজা চমকে যায়। মানুষ এতো বড় জালিম কী করে হতে পারে?

সে প্রতিবাদ করল, ‘কী করছেন আপনি? কেন মারছেন?’

ভবনটির প্রতিটি রুমের দরজা বন্ধ ছিল। প্রত্যেকে দরজা বন্ধ করে বসে ছিল রুমে। পদ্মজার কণ্ঠ শুনে প্রত্যেকে বেরিয়ে আসে। রেলিং ধরে দাঁড়ায়, সবার দৃষ্টি উঠোনে।

যে লোকটি প্রহার করছিল তার নাম তুলা মিয়া।

তিনি প্রহার থামিয়ে বললেন, ‘আপনি কে? আমার বাড়িতে ঢোকার সাহস হলো কী করে?’

পদ্মজা দুই কদম এগিয়ে যায়, ‘আমি যে ই হই, আপনি বলুন উনাকে কেন এভাবে পেটাচ্ছেন?’

প্রহার থেকে নিস্তার পেয়ে মেয়েটি দ্রুত শাড়ি ঠিক

করে পদ্মজার পিছনে গিয়ে দাঁড়ায়। তুলা মিয়া জহুরি

চোখে পদ্মজাকে দেখছে। এতো সুন্দর নারী তিনি
আগে দেখেননি! ইতিমধ্যে উপস্থিত প্রতিটি মানুষকে বিমোহিত করে ফেলেছে পদ্মজার সৌন্দর্য।

তুলা মিয়া ফ্যাসফ্যাসে গলায় বললেন, ‘আমি এই বাড়ির মালিক। এই মেয়ে পাঁচ মাস ধরে আমার ভাড়া দেয় না। রুম ছেড়েও বেরিয়ে যায় না তাই পেটাচ্ছি।’

সঙ্গে সঙ্গে পিছন থেকে মেয়েটি কেঁদে কেঁদে বলল, ‘আমার যাওয়ার কুনু জায়গা নাই আপা। বাচ্চাডি লইয়া কই যামু আমি। আমার জামাই মইরা গেছে ছয় মাস আগে। ছোট থাইকা উনার ঘরে আমার জামাই কাম করছে। কুনুদিন বেতন নেয় নাই। নাই আমার জামাই যখন মইরা গেল, যে জমিডা আছিল হেইডাও উনি নিয়া নিছেন। এরপর থাইকা উনি প্রতিদিন জোর করে আমার সঙ্গে

তুলা মিয়া ধমকে উঠলেন, ‘চুপ কর নটির বেঠি।’

পদ্মজা দাপটের সঙ্গে বলল, ‘মুখ সামলান। আপনার অধিকার নেই ঘর ভাড়ার জন্য একজনকে নারীকে এভাবে পেটানোর।’

তুলা মিয়া দূরে থুথু ছুঁড়ে ফেলে চোখমুখ বিকৃত করে বললেন, ‘অধিকার শেখাতে আসবেন না। আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান নয়তো খুব খারাপ হবে।’

এই প্রথম কেউ সাহস করে তুলা মিয়ার সামনে দাঁড়িয়েছে। যদি পদ্মজা চলে যায় এই আতঙ্কে

মেয়েটি কাঁদতে শুরু করল। সে পদ্মজার বাহু চেপে ধরে আকুতি করে বলল, ‘আপনি যাইয়েন না আপা। আমারে মাইরা ফেলব। আমারে সবসময় ভরসা দিছে, কুনুদিন আমারে বাইর কইরা দিব না। আমার ছেলেমেয়ে আর আমার খাওনের খরচ দিব। এখন তাও দিতে না করে। অমিডা ফিরায়া দিতেও না করে। কিছু কইলেই মারে। আমি তো কইছি জমিডা দিয়া দিক আমি ওইডা বেইচ্চা কিছু কইরা ছেলেমেয়ে নিয়া খামু।’ মেয়েটি ফোঁপাচ্ছে। পদ্মজার সহানুভূতি তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। কত অসহায় এই মেয়ে। তার কোনো গতি না করে

কিছুতেই পদ্মজা পিছপা হবে না। সে তুলা মিয়াকে

বলল, ‘আপনি প্রথমত উনার জমি কেড়ে নিয়েছেন,

তারপর আবার অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়েছেন। এখন

আর পোষাচ্ছে না বলে বের করে দিতে চাচ্ছেন তাও

উনার জমি আত্মসাৎ করে! তাহলে উনি কোথায়

যাবেন? কী করে চলবেন?”

লোকটি খ্যাক করে উঠল, ‘সেইটা আপনার দেখতে

হইব না। সরেন তো। আমার কাজ আমারে করতে দেন।’

মহিলাটিকে টেনে আনতে গেলে পদ্মজা বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। কাঠকাঠ গলায় বলে, ‘আপনি উনার জমি ফিরিয়ে দিন। এই বাড়ি ছেড়ে উনি অন্য কোথাও চলে যাবে।’

‘না দিলে কী করবেন?’

‘পুলিশের কাছে যাব।’

তুলা মিয়া শব্দ করে হাসলেন। এই এলাকার কোনো পুরুষেরই সাহস নেই তার সামনে এভাবে কথা বলার, আদেশ দেয়ার; সেখানে কোথাকার এক নারী এসে পুলিশের ভয় দেখাচ্ছে। তবে এমন সুন্দর নারী তিনি আগে দেখেননি। বড় লোভ হচ্ছে ছুঁয়ে দেখার।

তুলা মিয়ার লোলুপ দৃষ্টি পদ্মজার গায়ে আগুন ধরিয়ে দিচ্ছে তবুও সে চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

ততক্ষণে জাদত এসে দাঁড়িয়েছে একপাশে।
চলবে,,,,,,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here