খুব করে চাই তোকে পর্বঃ ৪র্থ লেখিকাঃ লিজা

0
609

গল্পঃ খুব করে চাই তোকে
পর্বঃ ৪র্থ
লেখিকাঃ লিজা

হৃদ ভাইয়ার বুকের পাজরে আষ্টেপৃষ্টে নিজেকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছি আমি।সকাল হতেই আমাকে সরিয়ে দিয়ে উঠে বসলো সে।আমার চোখে মুখে পাশের গ্লাসে রাখা পানির ছিটা দিয়ে মুখে হাত রেখে ডাকলো আমাকে।আমি ঘুম ঘুম চোখ হালকা মেলতেই আমার মাথায় হাত রেখে বলল,

—“সকাল হয়েছে ফুল।কাপড় পরে নে।কাকিমা যে কোনো সময় তোকে ডাকতে চলে আসবে। এভাবে আমাদের একসাথে দেখে ফেললে বাড়িতে সমস্যা হবে।কিছুদিন যাক আমি নিজে সবাইকে সবটা বুঝিয়ে বলবো।”

কথাটা বলে উঠে বিছানা থেকে নেমে দাড়ালো।আমি কিছু বললাম না।ভাবলাম হৃদ ভাইয়া যা করছে সব আমাকে ভালোবেসে করছে।আর আমিও তো ভালোবাসি।

হৃদ ভাইয়া রুম থেকে বেড়িয়ে যাওয়ার সাথে আমি উঠে ওয়াশরুমে চলে এলাম।সাওয়ার নিয়ে রুমে আসতেই দেখি মা বসে আছে।আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে মা।আজ এতো দ্রুত ঘুম কিভাবে ভাঙলো জানতে চাচ্ছে। সাথে জানতে চাচ্ছে এই শীতে এতো সকালে সাওয়ার কেন নিয়েছি।আমি যতটুকু পেরেছি কৌশলে মাকে কিছু একটা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে এসেছি।

ব্রেকফাস্ট শেষে ক্লাস টাইম এগিয়ে দিয়েছে বলে অনেক আগে বাড়ি থেকে বের হয়েছি আজ।এখন বসে আছি হৃদ ভাইয়ার গাড়িতে।সারপ্রাইজ দেবো বলে।হৃদ ভাইয়া এসে সামনের সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট করতেই পেছনের থেকে ঝাঁপিয়ে আমি গলা জড়িয়ে ধরলাম।আমাকে দেখে হৃদ ভাইয়ার মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেলো মনে হলো।মুখে একটুও হাসি নেই।গাড়ি থেকে নেমে ঘুরে এসে আমাকে টেনে নামিয়ে বলল,

—“আমরা একসাথে হসপিটালে যেতে পারবো না। সবাই কি ভাববে?”

আমি বললাম,

—“কিছুই ভাববে না।আমি তো তোমার ফ্যামেলি মেম্বার। স্ত্রীর পরিচয় না দাও কাজিন হিসেবে নিয়ে চলো।একই বাড়িতে থাকি একই জায়গাতে যাবো। একসাথে গেলে প্রবলেম নেই।”

আমার কোনো কথায় বুঝলো না হৃদ ভাইয়া।যদিও আগের মতোন রেগে বলে নি।তবে ভালোবেসে বুঝিয়ে বলেছে আমাদের আলাদা যেতে হবে হসপিটালে।আর আমিও হৃদ ভাইয়ার মুখের উপরে কখনো কথা বলতে পারি না।এতো সুন্দর করে বললে না শুনে কি পারা যায়? আমাকে একটা ইজিবাইক ডেকে উঠিয়ে দিয়ে হৃদ ভাইয়া চলে গেলো।

আমি হসপিটালে পৌঁছালাম।হৃদ ভাইয়াকে খুঁজলাম।কিন্তু পেলাম না।এখনো হসপিটালে আসেনি মানুষটা।আমার খুব টেনশন হচ্ছে। আমার আগে চলে আসার কথা ছিলো তার।রাস্থায় কোনো বিপদ আপদ হয় নি তো তার?

হাজার প্রশ্ন মাথায় নিয়ে ক্লাস রুমে ঢুকলাম।দেখতে পেলাম ডা. মেঘ স্যারের ছোট বোন প্রিয়া এসেছে আজকে অনেক দিন পর।মেয়েটার আলাদা গ্যাং।মিনি, নিশি কাজিন হলেও ওদের সাথে তেমন একটা মেশে না সে।ওদের বাবা একটু গরিব বলে অনেক খোটা দেয়, কথা শোনায়।কখনো কখনো বলে এই হসপিটালটা আমার বাবার। আমার বাবা দয়া করেছিলো বলেই তোমরা ভিক্ষায় ডাক্তারি পরার সুযোগ পেয়েছো।আজও ওদের পিছনে লাগার সুযোগ ছাড়েনি। গ্যাং নিয়ে লেগে আছে ওদের ইনসার্ট করতে।প্রতিবারের মতো এবারও খুব ইচ্ছে করছিলো প্রতিবাদ করি কিন্তু আমার মনটা আজ খুব খারাপ।আনমনা হয়ে একটা ফাঁকা বেঞ্চে এসে বসে রইলাম।প্রথম ক্লাস হৃদ ভাইয়ার।ক্লাস টাইম শেষ হৃদ ভাইয়া আসলো না।পাশ থেকে একজন বলে উঠলো হোস্টেলের পাশের রেস্টুরেন্টে হৃদ ভাইয়াকে ঢুকতে দেখেছিলো।আমার মনে সন্দেহ আসলো।এইজন্য কি আমার সাথে হসপিটালে আসতে চাচ্ছিলো না সে? আমাকে জানতে হবে রেস্টুরেন্টে কার সাথে দেখা করতে গিয়েছে যা আমাকে জানাতে চাই না।এটা জানার অধিকার তো আমার আছে।এখন আমি তার স্ত্রী।

আমি আর দেরি করলাম না।ছুটে সেই মুহূর্তে রেস্টুরেন্টে চলে আসলাম। দেখতে পেলাম একটা টেবিলে নূর আপু আর হৃদ ভাইয়া মুখোমুখি বসে আছে।নূর আপুর চোখে পানি। হাত জোড় করে কিছু একটা বলছে হৃদ ভাইয়াকে।আমি শোনার জন্য সামনে আগালাম।তারপর যা শুনলাম সেটা শুনে আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যেতে লাগলো।নূর আপু বলছে,

—“ফুলকে তুই ভুলে যা হৃদ।একটা সময় তো আমাকে তুই ভালোবেসেছিলি।নিজের মনকে শক্ত করে আমাকে ভুলে ফুলকে ভালোবাসতে পেরেছিলি।এবারও পারবি।একবার যখন পেরেছিস।তাছাড়া তোদের বিয়েটার কথা তো আমি ছাড়া কেউ জানে না।আমি তোকে কথা দিচ্ছি কাউকে বলবো না।তুইও আমাকে কথা দে ফুলকে ভুলে যাবি।ফুল বাচ্চা মেয়ে।আমার মনে হয় না ও তোকে ভালোবাসে।”

হৃদ ভাইয়া রাগি দৃস্টিতে তাকিয়ে বলছে,

—“তুই আমাকে অনেক কাঁদিয়েছিস।এখন এসব বলতে ডেকেছিস আমায়? মেঘ তো তোকে ভালোবাসে।তাহলে ওকে বোঝাতে পারছিস না কেন ব্যাপারটা?”

আপু বলল,

—“তোকে তো বললাম মেঘ কি বলেছে।”

হৃদ ভাইয়া অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ভেবে বলল,

—“ঠিক আছে এখন যা।আমি ভেবে দেখবো।কথা দিতে পারছি না তবে চেস্টা করবো।”

এটুকু শুনে আমার চোখে পানি চলে আসলো।আর এক মুহূর্ত এখানে আমি দাড়াতে পারছি না।এসব পারবো না দেখতে আমি।এতো বড় ধোঁকা।আমি চলে আসলাম রেস্টুরেন্ট থেকে।

সারাদিন হৃদ ভাইয়া আমার সামনে আসে নি।খুব কস্ট হচ্ছে আমার।আমার মনকে ভাবাচ্ছেও।হৃদ ভাইয়া আপুকে ভালোবাসতো।আর এখন ছিঃ আমি ভাবতে পারছি না। এতোদিন ভেবে এসেছি মেঘ স্যার আর আপু দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে।কিন্তু আজ এটা আমি কি শুনলাম? খুব কান্না পাচ্ছে আমার।কাঁদতে কাঁদতে বালিশে মুখ গুজে ঘুমিয়ে পরেছিলাম রাতে।ঘুমের ঘোরে কারও শরীরের গরম স্পর্শ অনুভব করলাম। চোখ মেলে মাথাটা উঁচু করে দেখলাম হৃদ ভাইয়া। আমাকে বুকে জড়িয়ে শুয়ে আছে।চোখদুটো খোলা।আমি জেগে আছি বুঝতে পেরে উল্টো ঘুরিয়ে আমার বুকে নিজের মুখ গুজলো।মাথাটা উঁচু করে আমার মুখের কাছে এনে নাকে নাক ঘেঁষে বলল,

—“ছরি ফুল।আজ একটা ঝামেলার মধ্যে ছিলাম তাই তোর কাছে আসতে পারি নি।তবে আর কখনো তোর চোখের আড়াল হবো না দেখিস।”

আমি আর কিছু বলতে না দিয়ে এক ধাক্কায় আমার উপর থেকে হৃদ ভাইয়াকে সরিয়ে দিলাম।কস্টে, রাগে, ঘৃণায় দাঁত শক্ত করে বললাম,

—“রাতের ভালোবাসা আমাকে দেখাতে আসবে না।চলে যাও এখান থেকে।”

হৃদ ভাইয়া বুঝলো আমি হয়তো রেগে আছি।সারাদিনে একটা কল দিয়ে খোঁজ নিলে হয়তো এই রাগটা দেখাতাম না।তাই এগিয়ে এসে আমার পাশে বসে হাতটা শক্ত করে ধরে বলল,

—“আমার ভুল হয়েছে।প্লিজ ক্ষমা করে দে।এই কান ধরছি আমি নিজের।”

আমি রাগি দৃস্টিতে তাকালাম।বিছানা থেকে নেমে দাড়িয়ে চিৎকার করে বললাম,

—“বেড়িয়ে যাও আমার রুম থেকে। একটা ধোঁকাবাজ, মিথ্যাবাদী আর দুশ্চরিত্রও।আমার ভাবতেও অবাক লাগছে।নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না আমার।আপু আর তুমি ছিঃ আজ রেস্টুরেন্টে কি কথা হচ্ছিলো আপুর সাথে তোমার সব শুনেছি আমি।”

হৃদ ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে পরলো।দাড়িয়ে আমার দু’কাঁধে হাত রেখে বলল,

—“তুই সব শুনেছিস ফুল? ভালো হয়েছে শুনেছিস।আমি বুঝতে পারছিলাম না সবকিছু কিভাবে বললো।”

আমি ঠেলে সরিয়ে দিয়ে বললাম,

—“এসব নতুন নাটক অন্য কারও সাথে করও।আমি আর তোমাকে বিশ্বাস করবো না।”

কথাগুলো আমি চিৎকার করে বলছিলাম দেখে বাড়ির কেউ ঘুম থেকে উঠে যাবে বুঝতে পেরে আর কোনো কথা না বলেই হৃদ ভাইয়া চলে গেলো।আমি আমার রুমের দরজাটা ভেতর থেকে বন্ধ করে দিলাম। দরজার ওপাশ থেকে হৃদ ভাইয়া বললো শুনলাম,

—“আমি বুঝতে পারছি না তুই এমন কেন করছিস।তুই কি সব শুনেছিলি? সব কথা শুনলে এমন বিহেভ কেন করছিস?”

আমি বললাম,

—“আর কিছু শোনার দরকার নেই আমার।তুমি যা বলবে সবই নাটক।আমার বুঝে নেওয়া হয়ে গেছে তোমাকে।”

হৃদ ভাইয়া সারা রাত আমার রুমের সামনে বসে রয়েছে। দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে ওপাশ থেকে আমার নাম ধরে ডেকেছে। আমাকে অনেকবার বলেছে একবার তাকে শুনতে।আমি শুনি নি।এপাশ থেকে কোনো শব্দ না করে আমিও দরজায় পিঠ ঠেকিয়ে বসে আছি।মুখ টিপে কাঁদছি।খুব কাস্ট হচ্ছে আমার।এতোটা নিখুঁতভাবে অভিনয় করতে পারলো আমার সাথে? আপুকে ভালোবাসতো।আপুর জন্য অনেক কেঁদেছে।এই কথাগুলো যেন মনে পরলে আমার বুকের ভেতরটা ব্যাথায় চিনচিন করছে।আপুকে বলেছে আমাকে ভুলে যাওয়ার চেস্টা করবে।এতো ভালোবাসে আপুকে যে আপুর কথায় আমাকে ভুলে যাবে?

সকাল হয়েছে। মায়ের কন্ঠ শুনতে পেলাম। আমার রুমের সামনে বসে আমাকে ডাকতে ডাকতে হৃদ ভাইয়া ওখানেই ঘুমিয়ে পরেছে।মা জানতে চাচ্ছে হৃদ ভাইয়ার কাছে এখানে বসে কি করছে।চোখমুখ ফুলে আছে এটাও বলছে মা।আমি উঠে দরজাটা খুলে দিলাম। হৃদ ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেলাম চোখদুটো ফুলে লাল বর্ণ হয়ে আছে।আমি মাকে বললাম,

—“ঘুম থেকে মাত্র উঠেছে তাই হয়তো চোখমুখের ওই অবস্থা। ওদিকে খেয়াল দিও না। যেই ছেলেটা আমাকে পছন্দ করে বাবা-মাকে পাঠিয়েছিলো তার কি খবর? তাকে বলো যতদ্রুত সম্ভব আমাকে বিয়ে করে নিয়ে যেতে।এবাড়িতে আমার আর এক মুহূর্তও ভালো লাগছে না।আমি কলেজের হোস্টেল চলে যাচ্ছি।যখন বিয়ের দিনক্ষণ ঠিক হবে আমাকে জানিয়ে দিও চলে আসবো।”

কথাগুলো বলে দরজাটা আমি ভেতর থেকে আবার বন্ধ করে দিলাম।মায়ের মনে সন্দেহ জাগলো।হৃদ ভাইয়াকে কিছু জিজ্ঞাসা করতে যাবে তার আগেই হৃদ ভাইয়া নিজের রুমে চলে গেলো।নিজের সব জিনিসপত্র গুছিয়ে নিলাম আমি। মিনি, নিশিকে সব বলে রাখলাম। ওদের সাথে আজ থেকে হোস্টেলে থাকবো আমি।

_____________
_______

হৃদ ভাইয়ার ক্লাস চলছে।প্রিয়া ঠিক সামনের বেঞ্চটাতে বসেছে।পাশ থেকে প্রিয়ার গ্যাং এর মধ্যে একজন বলে উঠল আজ প্রিয়ার জন্মদিন। যদি হৃদ ভাইয়া অনুমতি দেয় তাহলে আজ ক্লাসটা না করে ওরা সেলিব্রেট করবে।হৃদ ভাইয়া মাথা নাড়িয়ে ওদের সেলিব্রিট করতে বলে ক্লাস রুম থেকে বেড়িয়ে যেতে লাগলো।প্রিয়া হৃদ ভাইয়ার হাতটা ধরে বসলো।মুহূর্তের মধ্যে পুরো ক্লাসে হৈ-হুল্লোর শুরু হয়ে গেলো।মিউজিক বাজলে প্রত্যেকে কাউকে নিয়ে ড্যান্স করতে লাগলো।মিনি, নিশিও জয়িন করলো এই সেলিব্রেটে।আমি লাস্ট বেঞ্চে বসে খেয়াল করলাম প্রিয়া হৃদ ভাইয়াকে টেনে টেনে ড্যান্স করার চেষ্টা করছে।নিজের কোমরে হৃদ ভাইয়ার হাত গুজে দিচ্ছে।হৃদ ভাইয়া ছেড়ে দেওয়ার পরও জোর করে হৃদ ভাইয়াকে জড়িয়ে কাছে ঘেঁষতে চাইছে।আমার প্রচন্ড রাগ হচ্ছে। একমাত্র আমি এইখানে বসে সবটা দেখছি।নিজের চোখের সামনে দেখতে পারছি না এসব।উঠে এসে মিউজিক অফ করে দিলাম। সকলে ড্যান্স করতে করতে থেমে গেলো।প্রিয়া এখনো হৃদ ভাইয়াকে শক্ত করে ধরে আছে।এগিয়ে এসে প্রিয়াকে আমি এক ধাক্কায় নিচে ফেলে দিলাম। আঙুল উঁচিয়ে চিৎকার করে বললাম প্রিয়াকে,

—“স্যারকে স্যারের চোখে দেখও।ভদ্রতা সাপেক্ষে দুরত্ব বজায় রাখও।তোমার জন্মদিন।বন্ধুদের নিয়ে ইনজয় করও। উনাকে কেন টানছো? উনি কি তোমার ফ্রেন্ড না বফ হয় যে উনাকে নিয়ে তোমার ড্যান্স করতে হবে?”

আমি চুপ হলে প্রিয়া উঠে এসে খুব জোরে আমাকে একটা চড় মারলো।আমি গালে হাত রাখলাম।প্রিয়া বলল,

—“তোর সাহস হয় কি করে আমাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেওয়ার? এই হসপিটালটা আমার বাবার।এখানে আমি যা ইচ্ছা তাই করবো।দরকার পরলে হৃদ স্যারকে বিয়ে করবো।আজ আমার জন্মদিন আর তুই আমাকে ধাক্কা দিলি? তুই জানিস? আজ পর্যন্ত কেউ আমাকে একটা টোকাও দেয় নি।নূর ভাবির বোন বলে এতোদিন দয়া করেছে মেঘ ভাইয়া তোকে।তবে আর না।আমাকে ধাক্কা দেওয়া? প্রিয়া চৌধুরীকে? এবার আমি শিওর মেঘ ভাইয়া আর তোকে ক্ষমা করবে না।আজই হবে এই হসপিটালে তোর শেষ দিন।তুই অপেক্ষা কর শুধু।”

আমি আমার গাল থেকে হাত নামালাম। হৃদ ভাইয়া আমার গালে প্রিয়ার হাতের ছাপ দেখতে পেলো।আর রেগে গিয়ে ঘুরে প্রিয়ার গালে একটা কষিয়ে চড় মারলো।চিৎকার করে বলল,

—“তোমার সাহস তো কম না।আমার সামনে তুমি ফুলের গালে হাত তুলেছো? তোমাকে ছোটবেলা থেকে শাসন করা হয় নি।যার জন্য এসব করছো।অহংকারী হয়েছো।তুমি কি বলবে? আমি নিজে তোমাকে মেঘের কাছে নিয়ে যাচ্ছি চলো।”

হৃদ ভাইয়া এক হাতে শক্ত করে প্রিয়ার হাতটা ধরলো।আর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,

—“প্লিজ এখন একটাবারের জন্য আমার সঙ্গে আয়।”

বলে প্রিয়াকে নিয়ে মেঘ স্যারের চেম্বারের দিকে আগালো।আমিও আসলাম পেছনে।প্রিয়াকে যেভাবে টেনে নিয়ে যাচ্ছে হসপিটালের সকলে হৃদ ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। হৃদ ভাইয়া আর প্রিয়া অনেকক্ষন হয়েছে মেঘ স্যারের চেম্বারে ঢুকেছে। কিন্তু কি কথা হচ্ছে বাইরে থেকে জানা যাচ্ছে না।হসপিটালের সকল স্টাফ আর ডাক্তার নার্স মেঘ স্যারের চেম্বারের সামনে ভীর করে দাড়িয়ে আছে।আপু খবর পেয়ে নিজের চেম্বার থেকে ছুটে আসলো।আর ভীর ঠেলে মেঘ স্যারের চেম্বারের ভেতরে গেলো।ভেতরে কি হচ্ছে দেখার জন্য আমি একটু এগিয়ে আসলাম।আমাকে দেখে আপু দরজাটা বন্ধ করতে আসলো।হৃদ ভাইয়া আমি এসেছি বুঝতে পেরে আপুকে আটকালো আর আমাকে ভেতরে আসতে বললো।আমি ভেতরে আসলে আমার হাতটা ধরে আপু আর মেঘ স্যারকে উদ্দেশ্য করে বলল,

—“ফুলকে আমি বিয়ে করেছি ছাড়ার জন্য না।হারিয়ে ফেলার ভয়ে।আমি একবার নিজের ভালোবাসাকে হারিয়েছি। সে যাকে ভালোবাসে তার হতে তুলে দিয়েছে।এখন আমার মনে শুধুই ফুল।ফুলের ক্যারিয়ারের কথা ভেবে বলেছিলাম ভেবে দেখবো।কিন্তু আমি একটা দিনও ওর থেকে দূরে থাকতে পারি নি।ওকে ছাড়া থাকা আমার জন্য খুব কস্টের।ফ্রেন্ড হিসেবে একবার আমি নিজের দায়িত্ব পালন করেছি।তোদের হাসিমুখে বিয়ে দিয়েছি। কিন্তু মেঘ তোর এই বদমেজাজি আর অহংকারী বোনের সক পালন করতে নূরকে দিয়ে আমার কাছে এমন কোনো আবদার পাঠাস না যেটা আমি করতে পারবো না।কারণ আমার দূর্বলতা এখন শুধুই আমার স্ত্রী ফুলের প্রতি।নূরের আবদারের চেয়ে ফুলের একটুখানি হাসির মূল্য আমার কাছে অনেক বেশি। তোদের যা করার করতে পারিস।ফুলকে আমি ছাড়বো না।সবাইকে জানিয়ে আবার ওকে আমি বিয়ে করবো।”

কথাটা বলে হৃদ ভাইয়া আমার হাত ছেড়ে দিয়ে বেড়িয়ে গেলো।এতোক্ষণে আমি সবটা বুঝতে পারলাম। এতো ভালোবাসে এই মানুষটা আমাকে।এতো চাই আমায়।আর আমি কিনা কত কস্ট দিলাম।কাল রাতে একটু ছুঁতেও দিলাম না।সারা রাত আমার রুমের বাইরে বসে ছিলো।কেন করলাম এমনটা আমি? কেন একবার শুনলাম না কি বলতে চাচ্ছিলো? আমাকে কথা বলতে হবে।ক্ষমা চাইতে হবে।বলতে হবে আমিও কস্ট পেয়েছি।আমিও তোমাকে ভালোবাসি হৃদ ভাইয়া।

এক মুহূর্তও দাড়িয়ে না থেকে ছুটে হৃদ ভাইয়ার চেম্বারে আসলাম। ভেতর থেকে দরজাটা বন্ধ করে দিলাম। শব্দ পেয়ে মাথাটা তুললো হৃদ ভাইয়া।আমাকে দেখতে পেয়ে দাড়িয়ে পরল।আমি ছুটে গিয়ে জড়িয়ে ধরলাম।হৃদ ভাইয়া কেঁদে উঠে বলল,

—“আমাকে তুই ক্ষমা করে দে।আমার জন্য তোকে প্রিয়ার চড় খেতে হলো।”

আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললাম,

—“তুমি কেন ক্ষমা চাইছো? সব দোষ আমার।আমি তোমার কোন কথা শুনি নি।আমি ভুল করেছি হৃদ ভাইয়া।খুব কস্ট হচ্ছে আমার।প্লিজ আমায় জড়িয়ে ধরো।”

হৃদ ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে ধরলে বাইরে থেকে চিৎকারের আওয়াজ আসলো।নূর আপু আর মেঘ স্যারের কন্ঠস্বর।হৃদ ভাইয়া আর আমি দুজন দুজনের মুখের দিকে তাকালাম।ভাবলাম কি হলো বাইরে?

চেম্বারের দরজা খুলতেই দেখতে পেলাম সবাই ছুটে বাইরের দিকে যাচ্ছে।হৃদ ভাইয়া আর আমি ব্যাপারটা বুঝে বাইরে আসলাম। হসপিটালের সাদের উপরে এক কর্ণিশে দাড়িয়ে চিৎকার করে বলছে প্রিয়া আমি মরবো আমি মরবো।হৃদ স্যারকে যদি না পাই আমি মরবো। এটা শুনে উপরে তাকিয়ে দেখতে পেলাম প্রিয়া এমনটা করছে।আমাদের দেখে প্রিয়া আমায় উদ্দেশ্য করে বলল,

—“কি ভেবেছিস ফুল? আমি হেরে যাবো? হৃদ স্যার শুধু আমার।ছোটবেলা থেকে আমি যা চেয়েছি তাই পেয়েছি।এখন আমার হৃদ স্যারকে চাই।যদি না পাই এইখান থেকে এক ঝাঁপে নিচে এসে পরবো।”

মেঘ স্যার আপুকে ধরে বলছে,

—“প্লিজ হৃদ আর ফুলকে বোঝাও নূর।আমার বোনটার কিছু হলে তোমায় আমি ক্ষমা করবো না।আমি ভাবতে বাধ্য হবো তোমার সাথে সংসার করার কথা।”

হৃদ ভাইয়া ভীরের মাঝ থেকে প্রিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।আর চিৎকার করে বলছে,

—“এসব নাটক বন্ধ করও তুমি।এতোই যদি সাহস থাকে দাও ঝাঁপ। মুখে কেন বলছো?”

আপু হৃদ ভাইয়াকে টেনে ধরে বলল,

—“এভাবে বলিস না তুই হৃদ।প্রিয়া অনেক জেদি মেয়ে।জেদের বশে যা ইচ্ছা করে ফেলতে পারে।”

আপু হৃদ ভাইয়াকে কথাটা বলে আমার হাত ধরে এক সাইটে নিয়ে আসলো।আমার কাছে হাত জোর করে বলল,

—“ফুল আমি বোন হয়ে তোর কাছে ভিক্ষা চাচ্ছি আমাকে একটু সাহায্য কর।খুব ভালোবাসি মেঘকে আমি।প্রিয়ার কিছু হয়ে গেলে মেঘ আমার সাথে সংসার করবে না।তখন আমি মরে যাবো।”

আমি আপুকে বললাম,

—“এভাবে কেন বলছো আপু? এতে আমি কি করতে পারি?”

আপু বলল,

—“হৃদ তোকে ভালোবাসে।তুই তো বাসিস না।তোর জায়গায় যদি আমি হতাম তাহলে আমার বোনের জন্য, একটা মেয়ের জীবন বাঁচানোর জন্য, এইটুকু আমি করতাম।হৃদ একসময় আমাকে ভালোবেসেছিলো। কিন্তু ভুলতে পেরেছে।যখন ওর মনে তুই এসেছিস।ও আবার পারবে তোকে ভুলতে।একবার যখন পেরেছে দ্বিতীয়বার নিশ্চয় পারবে।তুই হৃদকে বল প্রিয়াকে ভালোবাসতে, বিয়ে করতে।হৃদকে বল তুই অন্য কাউকে ভালোবাসিস।প্লিজ ফুল এমন কিছু কর যেন হৃদ রেগে গিয়ে এই মুহূর্তে প্রিয়াকে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে।”

আমি নিশ্চুপ হয়ে রইলাম। আমাকে আপু ঝাঁকিয়ে বলল,

—“একটা মেয়ের জীবনের প্রশ্ন ফুল।আমার বোন হয়ে তুই কারও আত্মহত্যার কারণ হতে পারিস না।”

আমি ভেবে দেখলাম আপুকে তো হৃদ ভাইয়া একটা সময় ভালোবেসেছিলো।আপুর সুখের জন্য মেঘ স্যারের মতো এতো ধনী একজনের সাথে বিয়ে দেওয়ার অনেক চেস্টা করেছে।অনেক অপমানিত হয়েছে।আপুর সুখের জন্য। আর আজ আপুর সংসার বাঁচাতে হৃদ ভাইয়ার এতো পরিশ্রম আমি বৃথা হতে দেবো? আপুকে আমি বললাম,

—“বেশ তোমার খুশির জন্য প্রিয়াকে হৃদ ভাইয়া বিয়ে করবে।আমার কোনো দাবি নেই হৃদ ভাইয়ার প্রতি।হৃদ ভাইয়া আজ থেকে শুধু প্রিয়ার।”

আপু আমার কাছে জানতে চাইলো,

—“তুই হৃদকে ভালোবাসিস নাতো? যদি ভালোবেসে থাকিস তাহলে আমি তোকে জোর করবো না।”

আমি মাথা নাড়িয়ে আপুর কাঁধে হাত রেখে বললাম,

—“না আপু আমি হৃদ ভাইয়াকে কখনো ভালোবাসি নি।তুমি আমার কথা ভেবো না।প্রিয়াকে সামলাও।আমি একটু আসছি।”

আমি বাড়িতে ফোন করে কাকি মণির কাছ থেকে সেই ছেলেটার ফোন নম্বর নিলাম যার সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে।আমার একটা ফোনে ছেলেটা ছুটে এলো হসপিটালের সামনে।তার নাম সায়ান।আমি সায়ানকে বললাম সবটা।সায়ান প্রিয়া আর মেঘ স্যারের কাজিন।সে জানে প্রিয়া কেমন। তাই আমার সাথে অভিনয়ের জন্য হ্যাঁ বলে দিলো।আমরা দু’জন হাত ধরে ভীরের মধ্যে আসলাম। হৃদ ভাইয়াকে দেখিয়ে হেসে উঠে সবাইকে উদ্দেশ্য করে বললাম,

—“প্রিয়াকে হৃদ ভাইয়া বিয়ে করবে কিনা জানি না।তবে তোমরা সবাই আমার বিয়েতে এসো।এর সাথে আমার বিয়ে হবে।”

হৃদ ভাইয়া আমাকে টেনে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিলো।আমাকে বলল,

—“এসব কি করছিস তুই?”

আমি বললাম,

—“সায়ানকে আমি আপুর বিয়েতে দেখেই পছন্দ করে নিয়েছিলাম।আর ওকেই আমি বিয়ে করবো।ভালোবাসি ওকে।”

কথাটা শুনে হৃদ ভাইয়া নিশ্চুপ হয়ে রইলো। মনে হচ্ছিল জীবনে আরও একবার ভালোবাসায় এমন ঠকবে কখনো ভাবেনি।কোনো কিছু না বলে ওখান থেকে চলে গেলো হৃদ ভাইয়া।আমি উপরে তাকিয়ে বললাম,

—“হৃদ ভাইয়া তোমার প্রিয়া।তোমাকেই বিয়ে করবে।নিচে নেমে এসো।”

প্রিয়া বলল,

—“ঠিক আছে। তুমি যখন বলছো তখন নামছি।আজই বিয়ের দিন ঠিক করতে ভাইয়া যাবে তোমাদের বাড়িতে।”

মেঘ স্যার বলল,

—“হ্যাঁ হ্যাঁ যাবো নেমে আই বোন।”

প্রিয়া নিচে নেমে আসলে মেঘ স্যার আপুকে ধন্যবাদ জানালো।আপু আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,

—“আমার বোন হিসেবে তোর প্রতি গর্ববোধ হচ্ছে আজ।”

আমি সায়ানকে ধন্যবাদ জানালাম অভিনয় করার জন্য। প্রিয়া যে নাটক করছিলো তা আমি বুঝি। তবুও জেদের বশে যদি কিছু করে বসতো তাহলে মেঘ স্যার আর আপুর সম্পর্কটা নস্ট হতো।যা আমি চাই না।এবার আমি পুরো হসপিটালে খুঁজে চলেছি হৃদ ভাইয়াকে।কিন্তু পাচ্ছি না কোথাও।আমাকে যে হৃদ ভাইয়াকে বলতে হবে আমি তাকে ঠকাচ্ছি না।

চলবে,,,,,

পরবর্তী পর্বের জন্য সবাই লাইক/কমেন্ট আর ফলো দিয়ে একটিভ থাকুন 🔥❤️
পেইজ – নিবেদিতা ❤️

পর্ব – ৫
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=999254621482703&id=100041945238687&mibextid=Nif5oz

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here