#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_২২
“বউ।”,ফোনের ঐপাশ থেকে বউ কথাটি ভেসে আসলেও মুগ্ধতার কোনো হেলদোল হলো না।মুগ্ধতা ঘুম জড়ানো কন্ঠে চোখ বন্ধ রেখেই বলে,”কে বউ কার বউ?কে ভাই তুই?”
আহির বড় এক নিশ্বাস ফেলে বলে,”আমি তোমার বিয়ে করা এক মাত্র জামাই বলছিলাম।”
মুগ্ধতা চোখ মুখ কুঁচকে কিছু একটা ভাবতে লাগলো।হুট করে ঘুম জড়ানো কণ্ঠেই বলে উঠলো,”আমি বিয়ে করলামই না আবার জামাই কোন জায়গা থেকে টপকাইলো।আমি এখনও খাটি সিঙ্গেল।এই সকাল বেলা কে আমার সাথে মজা করছিস ফোন দিয়ে বল তো?”
আহির অবাক স্বরে বলে,” গত পরশু-ই তো আমাদের আকদ হলো মুগ্ধ রানি তুমি কী ভুলে গেলে।আহা তোমার ঘুমের ঘোর কাটেনি উল্টো পাল্টা বলছো।”
মুগ্ধতা এক ধমক দিয়ে বলে,”একদম চুপ আমাকে বলছে আমি উল্টো পাল্টা বলি।তুই উল্টো পাল্টা বলিস ব’জ্জা’ত ব্যাটা।”
আহিরের হাত মাথায় চলে যায়। আহির বলে উঠে,” বউ তুমি ঘুমাও।আমি বরং পড়ে ফোন দিচ্ছি।”
আহির ফোন কেটে দেয়।মুগ্ধতা ফোন পাশে রেখে এক ভাবে বসে সামনে তাকিয়ে থাকে।হঠাৎ চেঁচিয়ে বলে উঠে,”কোন হারামী ছিল রে আমার শান্তির ঘুম বরবাদ করে দিলো।” বিছানা ছেড়ে উঠে মুগ্ধতা ওয়াশরুমে চলে যায়।চোখে মুখে পানি ছিটিয়ে ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আসে।
তাওয়াল দিয়ে মুখ মুছে,বিছনার দিকে এগিয়ে গিয়ে পা ঝুলিয়ে বিছানায় বসে পড়ে।পাশ থেকে ফোন হাতে নিয়ে কল লিস্ট চেক করে চোখ বড় বড় করে বলে উঠে,” উফ আহির সাহেব ছিল।” তৎক্ষণাৎ মৃদু রাগ দেখিয়ে বলে উঠে,”একদম ঠিক আছে যা বলেছি ভালো করেছি আমার ঘুম নষ্ট করলো কেনো?”
মুগ্ধতা ঘাড় ঘুড়িয়ে দেয়ালে টাঙ্গানো ঘড়ির দিকে তাকালো।ঘড়িতে ঘণ্টার কাটা আটটা ছুঁইছুঁই।মুগ্ধতার হঠাৎ কিছু মনে পড়তেই মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠে,” আহির সাহেব আপনি কোনো ভুল করেননি গো।আজ আমাদের রাঙামাটি যাওয়ার জন্য বেরোনোর কথা দশটায় আর আমি কিনা ঘুমাচ্ছিলাম।”
মুগ্ধতা দৌড়ে চলে গেলো রেডি হতে।
.
মুগ্ধতার আকদের পরের দিন,গত কাল সকলেই ব্যাস্ত ছিল যে যার কাজ সামলাতে।এক সপ্তাহর জন্য কাজ ছেড়ে যাবে রঙ্গামাটি এখন সব কাজ গুছিয়েই যেতে হবে সকলকে।লায়ানা ব্যাস্ত ছিল তার কাজে, আহনাভ ব্যাস্ত ছিল তার শুটিং নিয়ে আর আহির আহনাভের অনুপস্থিতিতে পুরো অফিসের কাজ একা গুছিয়ে নিয়েছিল গত কাল।
গত কাল কাজের ফাঁকে রাত বারোটায় আহনাভ ফোন করেছিল লায়ানা কে।লায়ানা তার সব কাজ শেষ করে তখন নিজের অফিসের ছাদে ক্লান্ত শরীরটি নিয়ে বসে চন্দ্র বিলাস করতে ব্যাস্ত ছিল।
ফোন রিসিভ করে ক্লান্ত কণ্ঠে লায়ানা বলেছিল,”জি জনাব বলুন।”
আহনাভ লায়ানার এমন ক্লান্তি মাখা কণ্ঠের আওয়াজ শুনে বলেছিল,”হায়া পাখি কী খুব ক্লান্ত আজ।”
“খুব ক্লান্ত আমি।অফিসের ছাদে বসে আছি,ক্লান্তি দূর হলে বাড়ি চলে যাবো ভাবছি।”
“তুমি বরং আধ ঘণ্টা অপেক্ষা কর।আমি এখনই বের হচ্ছি তোমাকে বাড়িতে দিয়ে আসবো।”
লায়ানা হেসে বলেছিল,”থাক আহনাভ বাড়ি যাও, তুমিও আজ খুব ব্যাস্ত ছিলে নিজের কাজে।বাড়ি গিয়ে বিশ্রাম করো।আমার সাথে রাফি আছে,আমাকে বাড়ি রাফি পৌঁছে দিবে।”
আহনাভ ইনিবিনিয়ে বলেছিল,”আমি আসি না হায়া পাখি।আমার কোনো সমস্যা নেই আসতে।আমার কেনো যেনো তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে খুব।”
লায়ানা ঠোঁট টিপে হেসে প্রতুত্তরে বলেছিল,”হায় আহনাভ মশাই এইভাবে বলো না যে।আমার তো সারাক্ষণই মন চায় তোমাকে দেখতে।আহনাভ একটা কথা বলি,আমাকে কখনোও কোনো কারণে ভুল বুঝনা।”
“এমন কেনো বলছো হায়া পাখি।”
লায়ানা কিছু বলে নি উত্তরে শুধু বলেছিল,”বাড়ি যাও আহনাভ।” বলেই ফোন কেটে দিয়েছিল।লায়ানার মনে আহনাভ কে হারানোর মত এক ভয় চেপে বসেছে।আর বসে থাকেনি রাফির সাথে বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে যায় লায়ানা,কিন্তু বিপত্তি ঘটে রাস্তায়।রাস্তায় লায়ানার গাড়ির পিছনে দুইটি ট্রাক ধাওয়া করে।হয়তো কাল রাফি সাবধানে গাড়ি চালিয়ে লায়ানাকে নিয়ে বাড়ি না ফিরতে পারতো কোনো অঘটন ঘটে যেত।
.
মুগ্ধতা তৈরি হয়ে বেরিয়ে আসে।মুগ্ধতার পরনে হালকা হলুদ রঙের আনারকালি।মুগ্ধতা বেরিয়ে এসে দেখে রুদ্র দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে।মুগ্ধতা রুদ্রকে দেখে বলে,”রুদ্র কিছু বলবে?”
“ম্যাম, আহির স্যাররা চলে এসেছে।ওনারা বাড়ির বাহিরে গাড়িতে অপেক্ষা করছে।”
মুগ্ধতা গুছিয়ে রাখা ব্যাগ গুলো বের করতে করতে বলে,”ঠিক আছে।আর লায়ানার কোনো শব্দ শুনতে পাচ্ছি না আজ।ও কোথায়?”
“ম্যাম উনি হয়তো নিজের রুমেই আছে।”
মুগ্ধতা ব্যাগ গুলো রুদ্রর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বিছানা থেকে ফোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে যায় ঘর থেকে।লায়ানার ঘরের সামনে এসে দরজার নব ঘুরিয়ে ভিতরে ঢুকে দেখে লায়ানা তৈরী হয়েই আছে কিন্তু বিছানার হেড বোর্ডে ঠেস দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসে আছে লায়ানা।
মুগ্ধতা এগিয়ে গিয়ে লায়ানার কাঁধে হাত রাখতেই লায়ানা চোখ খুলে ঠিক হয়ে বসে পরে।লায়ানা দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে আবার মুগ্ধতার পানে তাকিয়ে বলে,”বনু সরি আমি বুঝতে পারিনি বসে বসেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।”
মুগ্ধতা ভ্রু কুঁচকে বলে,” কী হয়েছে তোর?”
লায়ানা বসা থেকে দাড়িয়ে যায়,বিছানার বা পাশ থেকে ব্যাগ গুলো দুই হাতে নিয়ে বলে,”আসলে বনু আমার প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিল তাই একটু গা এলিয়ে বসতেই চোখ লেগে এসেছিল।”
“তোর মাথা ব্যাথা তুই আমাকে আগে বলবি না?”
“কিছু হবে না।”
“আচ্ছা চল এখন ওরা চলে এসেছে নিচেই আছে।”
.
মুগ্ধতার বাড়ির নিচে এক সারিতে পাঁচটি গাড়ি দাড়িয়ে আছে।একটি গাড়িতে আহির, আহনাভ এর বাবা মা।আরেক গাড়িতে আফ্রা,আলিযা।আরেক গাড়িতে সাহিরাহ সহ তার স্বামী।বাকি দুইটি গাড়িতে আহির আর আহনাভ।রুদ্র মুগ্ধতার ব্যাগ নিয়ে নিচে আসতেই আহির গাড়ির ভিতর থেকেই রুদ্রকে বলে,”রুদ্র আমার গাড়ির পিছনের সিটে রেখে দাও ব্যাগগুলো।”রুদ্র ব্যাগগুলো নিয়ে আহিরের গাড়ির পিছনের সিটে রেখে দেয়।
লায়ানা,মুগ্ধতা বাড়ি থেকে বেরিয়ে আহিরদের গাড়ির সামনে এসে দাঁড়ায়।আহির নিজের গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে,চোখ থেকে সানগ্লাস খুলে মুগ্ধতার পানে তাকাতেই যেনো নতুন এক অনুভূতির সাথে পরিচয় হয়ে উঠে আহিরের,আজ তার সামনে শুধু মুগ্ধতা নয় তার স্ত্রী আহির আবরাহার মুগ্ধতা দাড়িয়ে।
আহির মুগ্ধতার সামনে এসে নিজের গাড়ির দিকে ইশারা করে বলে,”মুগ্ধ রানি গাড়িতে গিয়ে বস।”
মুগ্ধতা লায়ানার হাত ধরে গাড়ির দিকে যেতে নিবেই পিছন থেকে আহনাভ বলে উঠে,” আপ্পি হায়া আমার সাথে আসুক তোমরা দুজন এক সাথে যাও।”মুগ্ধতা মাথা নাড়িয়ে আহনাভকে সম্মতি জানালো , আহিরের গাড়িতে গিয়ে বসে পড়লো মুগ্ধতা।
আহনাভ এগিয়ে এসে লায়ানার দুই হাত থেকে ব্যাগ গুলো নিজেই নিয়ে নিল।ব্যাগ গুলো গাড়ির পিছনের সিটে রেখে লায়ানার জন্য গাড়ির দরজা খুলে দেয় লায়ানাও চুপটি করে গিয়ে বসে পড়ে।
.
এক এক করে পাঁচটি গাড়ি ছেড়ে দিল। আহির সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে গাড়ি চালাতে চালাতে বলল,”মুগ্ধ রানি কী যেনো বলেছিলে সকালে?তুমি বিবাহিত নও?”
মুগ্ধতা চট করে বলে,”ঠিকই তো বলেছি।সকাল সকাল এমন করে ফোন করলে কী বলবো?”
“ভেবে বলছো যে ঠিক বলেছো তুমি?”
“অবশ্যই ঠিক বলছি।”
আহির গাড়ি রাস্তার এক পাশে থামিয়ে মুগ্ধতার দিকে তাকিয়ে বলে,”তাহলে প্রমাণ করে দেই মিসেস আহির আবরাহার মুগ্ধতা আমার কে হয়?”
মুগ্ধতা আহিরের এমন চাহনি দেখে বলে উঠে,”দেখুন।” মুগ্ধতা আর কিছু বলার আগেই আহির মুগ্ধতার একদম কাছে চলে আসে,মুগ্ধতার ললাটে অধর ছুঁয়ে দিয়ে চট করে আবার সরেও আসে।নিজের সিটে ঠিক হয়ে বসে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বলে,”মিসেস আহির আবরাহার মুগ্ধতা আর কখনো বলবে না যে তুমি কে হও আমার।আজ নাহয় তোমার ললাটে অধর ছুঁয়ে দিলাম পরের বার কিন্তু এমন হবে না।”
মুগ্ধতা স্তব্ধ হয়ে এক দৃষ্টিতে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।আহির মুগ্ধতার মুখ পানে তাকিয়ে ঠোঁট টিপে হাসে।
#copyrightalert
#চলবে।