ডুবেছি_আমি_তোমাতে #Aiza_islam_Hayati #পর্ব_১৩

0
297

#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_১৩
গল্পের আসর থেকে আহনাভ, আহির ও তাদের দুজনের মা বাবা উঠে দাড়ায়। আহনাভের মা জেরিন বলে উঠে,”মুগ্ধতা, লায়ানা মা আর আহান এখন আসি তাহলে।”

মুগ্ধতা ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা টেনে বলে,”ঠিক আছে আন্টি।”
.
লায়ানার মনোযোগ শুধু তার ফোনের দিকে।ভ্রু কুঁচকে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে লায়ানা।
.
সবাই চলে যাওয়ার জন্য অগ্রসর হতেই লায়ানা দাড়িয়ে বলে উঠে,”আমাকে আর রাফিকে আপনাদের সাথে নিয়ে যাবেন?”

.
আহিরের বাবা পিছনে ফিরে লায়ানার দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বলে,”জিজ্ঞেস করতে হয় নাকি?”

লায়ানা হেঁসে বলে,”আসলে আমার এক ইম্পর্টেন্ট কাজ পড়ে গিয়েছে।আর মুগ্ধতা,আহান সন্ধ্যা অব্দি এইখানেই থাকবে।আমরা তো একটা গাড়িতে এসেছি আমি ওই গাড়ি নিয়ে গেলে ওদের যেতে অসুবিধে হবে।আর আপনাদের গাড়ি তো আমার অফিস ‘নেক্সট ইন ‘ এর সামনে দিয়েই যাবে তাই আরকি বললাম।”

আহনাভের মা লায়ানার কাছে এগিয়ে এসে লায়ানার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,”এত এক্সপ্লেইন করতে কে বলেছে তোমাকে। চলো তো।”

.
আহনাভ ও আহিরের বাবা মা এক গাড়িতে বসেছে।আরেক গাড়িতে বসেছে রাফি,আহির। আহনাভের গাড়িতে বসেছে লায়ানা,রাফি লায়ানার জন্য আহনাভের গাড়িতে বসতে চাইলে আহির টেনে রাফিকে নিজের গাড়িতে নিয়ে চলে যায়।

.
আহনাভ সামনে দৃষ্টি স্থির রেখে গাড়ি চালাচ্ছে।লায়ানা ফোনের দিকে একবার ভ্রু কুচকে তাকাচ্ছে তো আহনাভের দিকে।

লায়ানা ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আহনাভের দিকে তাকায়।সিটে গা এলিয়ে দিয়ে একই ভেবে তাকিয়ে থাকে।আহনাভ বুঝতে পারে লায়ানা তার দিকেই তাকিয়ে আছে,আহনাভের অস্বস্তি বোধ হতে লাগে।আহনাভ মৃদু কেশে স্টেয়ারিং ঘুরাতে ঘুরাতে বলে,”এইভাবে বেশরমের মত তাকিয়ে আছো কেন? আসলে তোমার মত বেশরম মেয়েরা আবার সব পারে,যেই ছেলে পায় তার দিকেই তাকিয়ে থাকতে।যে কাউকে ভালোবাসার কথা বলে দিতে।”

লায়ানা ঠিক হয়ে বসে গাড়ির সামনের দিকে হাত দিয়ে জোরে বারি দিয়ে ঝাঁঝে ভরা কণ্ঠে বলে উঠে,”স্টপ দা কার।”

আহনাভ চমকে যায়।গাড়ি না থামালে লায়ানা চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আহনাভ আই সেইড স্টপ দা কার।”

আহনাভ জোরে ব্রেক কষে।লায়ানা সাথে সাথে আহনাভের পাঞ্জাবির করলার টেনে ধরে দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”অনেক বেশি বলে ফেলেছো আহনাভ।এই লায়ানা অনে মেয়েদের মত একদম নয় যে যেই ছেলে পাবে তার সাথেই ঘেঁষা ঘেষি করে বেড়াবে।আমি তোমার জন্য বেশরম হয়েছি মানে এই পৃথিবীর সব ছেলেদের কাছে বেশরম তো নই।ভালোবাসি তোমাকে তাই আবার ছেড়ে দিলাম।নাহলে এই লায়ানাকে এইভাবে কথা শোনানোর ফল কেমন হয়ে থাকে তুমি জানোনা।আমি তোমাকেই ভালোবাসি কেনো বুঝনা তুমি।” লায়ানা আহনাভের করলার ছেড়ে দিল,গাড়ির দরজা খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে এসে বলল,”তুমি যেতে পারো আমি এইখান থেকে সিএনজি করে চলে যাবো।”

আহনাভ থমকে বসে আছে এই মেয়ের একেক রূপ তার কাছে খুব গোঁজামিলের মত লাগে, সে মিথ্যে কী বলেছে সে তো নিজের চোখে দেখেছে আহানকে ভালোবাসার কথা বলতে।আহনাভ চোখ বন্ধ করে বিড়বিড় করে বলে,”এখানে কী আমার কোনো ভুল হচ্ছে?”
.
লায়ানা রাফিকে ফোন করতে করতে হাঁটা ধরে।
.
আহনাভ গাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে,জোরে বলে উঠে,” এক পা এগোবে না হায়া।”

লায়ানা থেমে যায় চোখ বন্ধ করে শ্বাস নেয়।মনে মনে বলে উঠে,”এইভাবে ‘হায়া’ বলে ডেকে আমার মন গলিয়ে ফেলছে ব’জ্জা’ত একটা।”
.
আহনাভ লায়ানার সামনে এসে দাড়িয়ে যায়।লায়ানা চোখ খুলতেই দেখে আহনাভ তার সামনে দাড়িয়ে।আহনাভ বলে উঠে,”তুমি এতই যখন চরিত্র বান তখন কেনো ওই ছেলেকে ভালোবাসো কথাটি বলেছিলে?”

লায়ানা কিছুই বুঝতে পারলো না,ভ্রু কুঁচকে বলল,”কোন ছেলে?আমি কখন কাকে ভালোবাসার কথা বললাম?”

.
আহনাভ কিছু বলবে তার আগেই তার চোখে এক অনাকাঙ্ক্ষিত জিনিস পড়তেই থেমে যায়,সামনেই কয়েকটা ছেলে লায়ানার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।আহনাভ লায়ানার হাত টেনে ধরে গাড়ির কাছে নিয়ে এসে বলে উঠে,” হায়া গাড়িতে উঠে বসো।”

“আমি বলেছি আমি সিএনজি করে চলে যাবো।আমি যাবো না তোমার সাথে তোমার গাড়িতে।”

আহনাভ রেগে গিয়ে ধমকে বলে উঠে,”একদম কথা বলবে না।আর একটা ওয়ার্ড মুখ থেকে বেরিয়ে আসলে তুলে আছার মারবো।চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো।”
.
ছেলে গুলোর মধ্যে একজন সিটি বাজানো শুরু করেছে।লায়ানা ফিরে তাকালো ছেলেগুলোর দিকে আবার আহনাভের দিকে তাকালো।লায়ানা কিছু একটা ভেবে শাড়ির আচল টেনে কোমড়ে গুঁজে নেয়,উন্মুক্ত চুল হাত খোঁপা করে নিয়ে বলে,”আহনাভ তোমার ডিকিতে লাঠি জাতীয় কিছু হবে?”

“কেনো?”

“বলো না হবে?”

“আমার গলফ স্টিক আছে গাড়ির ডিকিতে,এছাড়া কোনো লাঠি জাতীয় কিছু নেই।কেনো তুমি কি করবা?”

লায়ানা গিয়ে গাড়ির ডিকি খুলে গলফ স্টিক নিয়ে আহনাভ কে চোখ মেরে বলে,”দেখো না কী করি।”

লায়ানা ছেলেদের দিকে হাঁটা ধরে হাতে গলফ স্টিক নিয়ে।
.
লায়ানাকে আসতে দেখে ছেলেগুলো ঠিক হয়ে দাড়িয়ে পড়ে।লায়ানা ছেলে গুলোর সামনে গিয়ে দাড়িয়ে হেঁসে বলে,”মেয়ে দেখলেই বুঝি সিটি বাজাতে ইচ্ছে হয়?”

একটি ছেলে বলে উঠে,”তোমার মত মেয়ে দেখলে সিটি কেনো অনেক কিছু করতে ইচ্ছে হয়।”

লায়ানা দাঁতে দাঁত পিষে বলে,”তোদের দেখলে আমারও অনেক কিছু করতে ইচ্ছে হয়।”বলেই সামনের ছেলেটিকে কষিয়ে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। ছেলেটি লায়ানার দিকে তে’ড়ে আসলে,লায়ানা ছেলেটির হাত মু’চ’ড়ে ধরে ধা’ক্কা দিয়ে ফে’লে দেয় মাটিতে।তারপর গলফ স্টিক দিয়ে এ’লো’পা’থা’ড়ি ছেলেগুলোকে মা’রা শুরু করে।
.
এইদিকে আহনাভ চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে লায়ানার দিকে।নিজেই নিজেকে বলল,”এ কোন হায়া?”আহনাভ আর দাড়িয়ে না থেকে ছুটে গিয়ে লায়ানার হাত টেনে বলে,”এই হায়া কী করছো?আরেহ ছাড়ো সরে আসো তোমার গায়ে লাগবে।”
.
লায়ানাকে আটকাতে না পেরে,আহনাভ লায়ানার কোমড় জড়িয়ে এক প্রকার টেনে গাড়ির সামনে নিয়ে আসে।লায়ানাকে নিয়ে আসলে ছেলে গুলো ছুটে পালায়।
.
লায়ানা আহনাভের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে রেগে বলে উঠে,” কেনো আনলে?এমন ছেলেদের মেরে ঝুলিয়ে রাখা উচিত।রাস্তা ঘাটে ওদের জন্য মেয়েরা চলা ফেরা করতে পারে না।একেকটা জংলী কোথাকার! কথেকা আসে এরা?মেয়েদের সম্মান করতে জানেনা, লা’ফা’ঙ্গা’র।উফ এইটুকু মে’রে’ও মন টা শান্তি পেলো না কেন আনলে আমাকে?”

আহনাভ গাড়ির দরজা খুলে ভিতর থেকে পানি এনে লায়ানার মুখের সামনে ধরে ব্যাস্ত ভঙ্গিতে বলে,”আগে পানি খাও।”

লায়ানা পানির বোতল নিয়ে পানি খাওয়া শুরু করে।আহনাভ অবাক স্বরে বলে উঠে,”এমন রূপ কীভাবে ধারণ করলে হায়া?পাঁচটা ছেলের সাথে একা কিভাবে?আমি তো ভাবতেই পারিনি।”

লায়ানা পানি খাওয়া শেষ করে,শাড়ির আঁচল কোমড় থেকে সরিয়ে ঠিক করে নিয়ে বলে,”আমি ক্যারাটে পারি বুঝলেন।ক্যারাটে তে চ্যাম্পিয়ান ছিলাম।ওই পাঁচটা ছেলেকে সামলানো আমার বায় হাতের খেল।বেশি না গলফ স্টিক দিয়ে মে’রে’ছি,মন টা শান্ত হয়নি এইটুকু মেরে।”

আহনাভ জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে নিল,মনে মনে শুধালো,”এ কোন সর্বনাশনি নারী।এলোমেলো রূপের শ্যামবতী।”(লায়ানার চুল খুলে পুরোই এলোমেলো হয়ে আছে।)

“এই সমাজে প্রত্যেকটা নারীকে লড়াই করতে জানতে হবে নাহলে এইসব কু’লা’ঙ্গা’র’দের সাথে পেরে উঠবে না।”

“তা ঠিক বলেছো।প্রত্যেকটা নারীর উচিত লড়াই করতে জানা ঠিক তোমার মত,নাহলে এই সমাজের যা বেহাল দশা।যাইহোক গাড়িতে উঠে বসে পড়ো।”

লায়ানা উত্তরে কিছু বলল না,মাথা ঝিম ধরে আসছে তার,হঠাৎ চিনচিন করে ব্যাথা করছে।তর্ক করতে ইছে হলো না চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসে পড়লো,সিটে গা এলিয়ে দিল।আহনাভ ড্রাইভিং সিটে বসে গাড়ি স্টার্ট দিল।

.
আরো আধ ঘণ্টার পথ বাকি,গাড়ি এখন জ্যামে থেমে আছে।লায়ানা চোখ বন্ধ করে সিটে গা এলিয়ে দিয়ে আছে।আহনাভ স্টেয়ারিং শক্ত করে ধরে লায়ানার দিকে তাকালো,এই মেয়ে এইভাবে শান্ত কেনো তার যে ভালো লাগছে না।আহনাভ মৃদু কন্ঠে বলল,” হায়া কী হয়েছে?শরীর খারাপ করছে?”

লায়ানা চোখ বন্ধ রেখেই কপাল হাত দিয়ে ডলে বলে,”তেমন কিছু না মাথা ব্যাথা করছে।”

আহনাভ জিজ্ঞাসু কণ্ঠে বলে,”খুব বেশি ব্যাথা করছে?তোমার কী এখন অফিসে যাওয়া খুব প্রয়োজন?আমি নাহয় তোমায় তোমার বাড়িতে ড্রপ করে দিয়ে আসি,বাড়ি গিয়ে রেস্ট করো?”

“বেশি ব্যাথা করছে না।আর তুমি এত্ত প্যানিক করছো কেনো?আমি কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করেই থাকি ‘নেক্সট ইন’ আসা অব্দি।’নেক্সট ইন’ এসে পড়লে আমাকে ডেকে দিও কেমন।”

আহনাভ কিছু বলল না।জ্যাম ছাড়তেই গাড়ি জোরে চালানো শুরু করলো।

.
‘নেক্সট ইন ‘ এর সামনে এসে গাড়ি থামতেই আহনাভ মলিন কণ্ঠে বলে উঠে,” হায়া আমরা এসে পড়েছি।”

লায়ানা চোখ খুলে তাকালো আহনাভের দিকে,মিষ্টি হেঁসে বলল,”হম, থ্যাঙ্ক ইউ আমাকে ড্রপ করে দেয়ার জন্য।আর আহনাভ শুনে রাখো এই লায়ানা শুধু তোমাকেই ভালোবাসে।” বলেই গাড়ির দরজা খুলে বেরিয়ে আসে,নেক্সট ইন এর সদর দরজা দিয়ে বড় বড় পা ফেলে ভিতরের দিকে চলে যায়।

.
আহনাভ স্টেয়ারিং এর থেকে হাত সরিয়ে নেয়,চোখ দুটো বন্ধ করে বলে,”আমার সব কেমন ওলোট পালট লাগছে হায়া।আমি তো চাইছিলাম তোমাকে সুযোগ দিতে কিন্তু।আজ ওই আহান ছেলেটার সাথে যা দেখলাম তা সত্যি হলে তোমাকে আমার জীবনে এনে আমি কোনো ভুল করতে চাই না।আর আজ আমার চোখে দেখা ওই দৃশ্য,আমার কানে শোনা ওই কথা গুলো মিথ্যে হয়ে থাকে যদি ওই কথা গুলো ওই ছেলের জন্য না হয়ে থাকে আমি সত্যি তোমাকে সুযোগ দিতে চাই।তোমার এই পাগলামো ভালোবাসা গুলোকে আমার জীবনের সাথে জড়িয়ে নিতে চাই।”

#copyrightalert
#চলবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here