#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_১৪
.
কুলায় ফেরা পাখির মতো সন্ধ্যা মানুষকে ফিরিয়ে আনে ঘরে।চতুর্দিক শান্ত, ধীর-স্থির; কেমন যেন একটা মৌন-বৈরাগ্য ভাব নিয়ে সন্ধ্যা পৃথিবীর দিগ্বলয় দ্বারে এসে দাঁড়ায়।
.
লায়ানা পরনের শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে রেখেছে,ছাড়া চুলগুলো হাত খোঁপা করে নিয়েছে।শেষ ফাইলের ডিজাইন চেক করে সাইন করে দেয় অতঃপর ফাইল টা বন্ধ করে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”রাফফু রে বাড়ির থেকে গাড়ি আসছে নাকি? এইভাবে বইসা থাইক্কা এই বয়সে আমার কোমড় গেলো বাঁকা হইয়া!রাফি রে কই তুই ভাই?”
রাফি হুড়মুড়িয়ে কেবিনে ঢুকে বলে,”জি ম্যাম কী হয়েছে আপনি ঠিক আছেন?”
লায়ানা বোকা মুখ বানিয়ে বলে,”গাড়ি এসেছে ভাই?”
“জি ম্যাম।”
.
গাড়ি এসে বাড়ির সামনে থামতেই লায়ানা গাড়ি থেকে নেমে,বাড়ির সদর দরজা দিয়ে ভিতরের দিকে হাঁটা ধরে।
বাড়ির ভিতরে ঢুকেই যেনো লায়ানার চোখ চড়ক গাছ।বাড়িতে এত মানুষ!লায়ানা বসার ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দেখে ইয়াশা,মুগ্ধতার বড় আম্মু ,ছোট আম্মু,বড় মামা,ছোট মামা,ছোট নানু,বড় নানু,মেঝ নানু,ইজাজ সবাই সোফায় বসে কিছু একটা আলোচনা করছে।
লায়ানা ভাবনায় পড়ে গেলো সন্ধ্যা বেলায় সবাই এইভাবে বসে কী মিটিং করছে?লায়ানা বসার ঘরের ভিতরে ঢুকলো না সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলো।লায়ানা নিজের রুমে ঢুকতেই অবাক হলো।কারণ বিছনায় গোল হয়ে মুগ্ধতা,আহান,বড় আম্মুর দুই ছেলে,ছোট আম্মুর ছেলে আর মেয়ে,বড় ও ছোট মামার ছেলে,মেয়ে বসে আছে।বলতে গেলে মুগ্ধতা সহ সব কচিকাঁচারা বসে আছে।
লায়ানা এগিয়ে এসে বলে,”বনু,আহান তোরা এত তাড়াতাড়ি কিভাবে চলে এলি?তোদের তো ঐখান থেকে সন্ধ্যায় রওনা দেয়ার কথা।সন্ধ্যায় রওনা দিলে তো আসতে আসতে রাত হয়ে যেত।”
মুগ্ধতা বলে,”এই এক ঘন্টা আগেই বাড়ি ফিরেছি আমরা।আম্মু ফোন করে আমাদের বলল যদি ব্যাস্ত না থাকি তাহলে তাড়াতাড়ি বাড়ি চলে আসতে কী গুরুত্বপূর্ণ কথা আছে আমাদের সাথে।আর এসে দেখি ওনারাই মিটিং বসিয়েছে,আমাদের ঢোকা নিষেধ।”
লায়ানা মুগ্ধতার এক পাশে গিয়ে বসে বলে,”আমিও বাড়ির ভিতরে ঢুকেই বসার ঘরে তাদের আলাপ আলোচনা সভা দেখে এসেছি।মামলা টা অনেক গভীর,ভাবার বিষয়।”
মুগ্ধতার বড় আম্মুর ছেলে আইমান বলে উঠে,”মনে হয় তোমাদের বিয়ে দিয়ে বিদায় করবে তার প্ল্যান করছে।”
মুগ্ধতা বলে,”কানাডা থেকে আসলাম এক মাস হলো মাত্র এখন বিয়ে করে শ্বশুর বাড়ি যেতে চাই না।”
“মুগ্ধতা ম্যাম আপনাকে নিচে যেতে বলেছে।”,দরজার সামনে থেকে মেয়েলি কণ্ঠে কথাটি ভেসে আসতেই সবাই দরজার পানে তাকায়।মুগ্ধতা বলে,”ঠিক আছে যাও আসছি।”
.
মুগ্ধতা নিচে বসার ঘরে চলে আসে তার পিছন পিছন সব কচিকাঁচারা।পিছনেই লায়ানা আর আহান দাড়িয়ে আছে।
মুগ্ধতাকে দেখে বড় আম্মু চোখের ইশারায় ছোট আম্মুর পাশে খালি জায়গাটা দেখিয়ে বলে,”বসো এইখানে।”
মুগ্ধতা বসে পড়লে বড় আম্মু বলে উঠে,”বয়স তো কম হলো না এখন তো তোমার বিয়ে করা উচিৎ।তাই আমরা তোমাকে নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
মুগ্ধতা বড় আম্মুর মুখে এহেন কথা শুনে আইমান এর দিকে তাকায়।আইমান মুগ্ধতাকে তার দিকে তাকাতে দেখে দাঁত কেলায়।
“তাহলে তোমরা কী ভাবলে আমাকে নিয়ে?” মুগ্ধতা থামতেই বড় মামা বলেন,”আসলে,আমার যেই ক্লায়েন্টের ফ্যামিলির সাথে আমরা ডিনার করলাম তার ছেলে আহির কে তোমার জন্য আমাদের পছন্দ হয়েছে।”
বড় মামার কথা শুনে মুগ্ধতা পারছে না এক ভুবন কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়ে।
ছোট মামা বলে উঠে,”শুনলাম তার পরেও আহিরের সাথে তোমার দেখা হয়েছে তিন বা চারবারের মত।”
বড় আম্মু বলেন,”তো তাহলে কেমন লাগলো আহিরকে?”
“হ্যা।হয়েছিল দেখা প্রথম,লায়ানা আমার রেস্টুরেন্টে আহির আর আহনাভ তাদের সাথে মিটিং ফিক্স করেছিল তখন একবার দেখা হয়।তারপর আহান কে হসপিটাল দেখতে যাই তখন দেখা হয়।আর আজকে আশ্রমে গিয়েছিলাম ঐখনেও দেখা হয়েছিল সাথে তার বাবা মাও ছিল।লোকটা মানুষ হিসেবে ভালোই মনে হয়েছে।ভদ্র,মেয়েদের সম্মান করতে জানে।”
নানু বলে,”তোহ তোর ছেলে পছন্দ হলে আমরা কিছু দিন এর মধ্যেই বিয়ের ব্যাবস্থা করবো।”
ছোট আম্মু নানুকে থামিয়ে দিয়ে বলে,”আহ ওকে বলতে দাও।আর শুন তোর ভালো না লাগলে বা ছেলে খারাপ হলে বলে দে।”
ইজাজ বলে উঠে,”বাকি হাত পা ভাঙ্গা আমাদের দায়িত্ব।”
আইমান বলে,”কী দিয়ে ভাঙতে হবে তাও আমরা জানি।”
ইয়াশা ধমকে বলে উঠে,”কীরে এইখানে মামারা বসে আছে তোরা ছোট হয়ে হাত পা ভাঙ্গার কথা বলছিস!চুপ থাক তোরা।” ইয়াশা থেমে আবার বলে,”মুগ্ধ তোর পছন্দ হলে তুই বল।আমরা সব কিছু করবো ওদের কথায় কান দিস না।”
মুগ্ধতা মাথা নিচু করে বলে,”তোমরা যা ভালো মনে কর।”
নানু বলেন,”আমরা কিন্তু মনে করি ফাহির না আহির হ্যা আহির আহির ও তোর জন্য ভালোই হবে।তো পরে আবার বলিস না আমরা জোর করে সব করিয়েছি।”
মুগ্ধতা মৃদু মাথা নাড়িয়ে বলে,”নাহ এমন বলবো না।তোমরা তো সব ভালোই বুঝে সিদ্ধান্ত নিবে।”
নানু তাসবি পড়তে পড়তে বলেন,” তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ।আমরা পরশু ওদের বাড়ি গিয়ে বিয়ে পাকা করে আসবো।”
ইয়াশা বলে উঠেন,”আরেহ ওদের ও তো মুগ্ধতাকে পছন্দ করতে হবে নাকি!”
বড় মামা বলেন,”আরেহ মেঝো আপা কিভাবে না হয়?মুগ্ধতা মেয়ে সকলের কাছে পছন্দ হওয়ার মতই।যেমন দেখতে সুন্দর তেমন কাজে হান্ড্রেড পারসেন্ট।”
বড় আম্মু বলে,”ঠিক বলেছো।”
বড় মামা আবার বলে উঠেন,” তাহলে আমি আহিরে বাবা সাদেক আবরাহার এর সাথে কথা বলছি। উনি দ্বিমত পোষন করবেন না কারণ উনি নিজেই ওনার ছেলের জন্য মেয়ে খোঁজার দায়িত্ব আমাকে দিয়েছিলেন।”
বড় মামা থামতেই সব কচিকাঁচারা সহ লায়ানা আর আহান দে লাফ।লায়ানা লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে যেতে যেতে বলে,” বনু উপরে আয় তাড়াতাড়ি তোর সাথে একটা জম্পেশ ড্যান্স দেয়া বাকি এখন।”
লায়ানার এহেন কাণ্ড দেখে বসার ঘরের সবাই হো হো করে হেঁসে দেয়।
.
লায়ানা নিজের ঘরে গিয়ে শাড়ি পাল্টে টি শার্ট টাইজার পড়ে সাউন্ড বক্সে মিউজিক বাজিয়ে উড়াম ধুরাম নাচছে সঙ্গী হিসেবে আহান ও আছে।
মুগ্ধতা দরজার সামনে এসেই হা হয়ে যায় ওদের পা’গ’লা ডান্স দেখে।
লায়ানা মুগ্ধতা কে দেখে নাচা থামিয়ে মুগ্ধতার হাত টেনে ভিতরে নিয়ে যায় অতঃপর দুই হাত ধরে ঘুরতে শুরু করে।একসময় হাঁপিয়ে গিয়ে দুইজন বিছানায় বসে পড়ে।লায়ানা এক লাফ দিয়ে দাড়িয়ে বলে,” ইয়া হু কী মজা বনুর বিয়ে তাও আহিরের সাথে।”
লায়ানা থেমে আহান এর সাথে আবার নাচা শুরু করে আর বলে,”লে পাগলু ড্যান্স ড্যান্স ড্যান্স বনুর বিয়ে ঠিক হয়েছে এইবার শুধু হবে ড্যান্স।”
মুগ্ধতা বলে উঠে,” আরেহ এখনও পুরো ঠিক হয়নি।”
লায়ানা নাচতে নাচতে বলে,” ওই বাড়িরতে কে দ্বিমত করবে?তুই সিওর থাক তোর আহিরের সাথেই বিয়ে হবে।” লায়ানা আহান দুজন দুজনের হাত ধরে শুধু লাফাচ্ছে।
…
“হায়া এত দিন অসুস্থ থাকায় মেইন মিটিং টা পিছিয়ে আজ আনলাম।কিন্তু সে মিটিং টা ক্যান্সেল কিভাবে করলো?তাও করলো তো করলো সেই সো কোল্ড ছেলেটার সাথে ঘুরতে যাবে বলে মিটিং ক্যান্সেল করলো।” আহনাভ রাগে গজ গজ করে কথা গুলো বলে হাতের ফাইলটি টেবিলে ছুড়ে মারে।
কিছুক্ষন আগেই আহিরের থেকে জানতে পারে লায়ানার পিএ রাফি ফোন করেছিল।রাফি বলেছে,”আহির স্যার হায়াতি ম্যাম আজ মিটিং অ্যাটেন্ড করতে পারবে না কারণ আজ ম্যাম তার ভাই আহানের সাথে ঘুরতে বের হবে।আর এই মেইন মিটিং টা পড়ে করলেও কোনো ক্ষতি হবে না তাই পরশু মিটিং টা করতে চাইছে।”
আহিরও দ্বিমত পোষন করলো না রাজি হয়ে গেলো কিন্তু আহনাভকে বলার পর থেকেই আহনাভ এমন রেগে কেনো গিয়েছে তার কোনো কারণই খুঁজে পাচ্ছে না আহির আর তমাল।
.
মুগ্ধতা কাল রাতে লায়ানা আর আহানের পাগলামো দেখে নিজেও ওদের সাথে রাত জাগে।সকাল হতেই মুগ্ধতা চলে যায় হসপিটাল আর লায়ানা অফিসে চলে গেলে আহান লায়ানার অফিসে গিয়ে লায়ানাকে টেনে টুনে ঘুরতে নিয়ে যায়।
আজ সারাটা দিনই লায়ানা আর আহান ঘুরে বেড়ায়।দুজন রাতে বাড়ি ফিরে আসলে সবাই জানতে পারে আজ দুটোয় ঘুরে বেরিয়েছে।
.
আহনাভের দিনটি আজ কেমন যেনো গিয়েছে,আহির খুব ভালো করে খেয়াল করেছে আজ কেমন করে মুখ ফুলিয়ে রেখেছিল আহনাভ তা দেখে হুট হাট আহির ভুবন কাঁপানো হাসিতে ফেটে পড়েছিল।আর আহনাভ ভ্রু কুঁচকে আহিরের দিকে তাকিয়ে ছিল।
#copyrightalert
#চলবে।