#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪৩
______________
মিরাজ রুম থেকে বের হয়েছে বেশ অনেক ক্ষন কিন্তু আরুহী ঠিক একই জায়গায় বসে আছে সেই একই ভঙ্গিতে। মনের মধ্যে প্রবল ঝড় উঠার তীব্র আশঙ্কা। আরুহীর মন টা অজান্তেই ভীষণ খারাপ হলো। শরীর টাও ভালো না, মন টাও ঠিক নেই। আরুহী যা সন্দেহ করছে তা যেন ঠিক না হয়, সম্পুর্ন ভুল হয়ে যাক তার ধারণা। কিন্তু আরুহী জানে তার ধারণা ভুল হয় না, তার আশঙ্কা ই শেষ মেষ ঠিক হয়ে ধরা দেয়। কিন্তু আজ খুব করে চাইছে সে তার ধারণা ভুল হোক, ভীষণ ভাবে ভুল হোক। এই প্রথম আরুহী নিজের ধারণা কে ভুল প্রমান করতে চাইছে কিন্তু মনের জোরে তো আর সব হয় না।
আরুহীর মন হু হু করে উঠলো, মিরাজকে সে নিজের আপন ভাইয়ের থেকে ও বেশি ভালোবাসে, ছোট বেলা থেকে ভাই বলতে সে মিরাজকেই চেনে, কত আবদার, কত খুনশুটির স্মৃতি জমে আছে বুকের মনিকোঠায়। উপর মহল থেকে কড়া আদেশ জারি আছে ওই ক্রিমিনাল কে দেখা মাত্র ই যেন ক্রস ফায়ার করা হয় আর সম্পুর্ন দায়িত্ব আরুহী চৌধুরীর। টিম লিডার বলে কথা। দায়িত্বের ক্ষেত্রে বাপ ভাই কাউকে ই ছাড় দেয়া যায় না তা আরুহী ভালো করে ই জানে। আরুহী চৌধুরী কখনো নিজের দায়িত্বে পিছ পা হয় না তাহলে আজ কেন মন এতো উতলা হচ্ছে? নিজের ভাই বলে! তবুও তো আরুহী নিশ্চিত নয় তাহলে! মিরাজ ভাই কেন ওকে মারার চেষ্টা করবে! সে তো আরুহী কে নিজের বোনের থেকে ও বেশি আদর করে ভালোবাসে। আরুহী কি পারবে নিজের ভাইয়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে। নাহ আর ভাবতে পারছে না, মাথায় যন্ত্রণা হচ্ছে আরুহী মাথার চুল টেনে ধরলো। পারছে না সে আর মাত্রাতিরিক্ত ব্যাথা করছে আরুহী চুপচাপ বসে আছে, দেখে বোঝার উপায় নেই তার শরীর মন দুটোই ভীষণ বাজে ভাবে আহত।
” বউ ”
দরজায় পরিচিত কন্ঠ শুনতে পেয়ে চকিত নজরে তাকালো সে, আরুহীর চোখ রক্তের মতো লাল হয়ে আছে, আরুশ চমকে উঠলো, হাতের এপ্রোন টা নিচে ফেলে দৌড়ে আরুহীর সামনে এসে হাটু গেড়ে বসলো, আরুহীর মুখ টা আজলে তুলে কাঁপা কন্ঠে বলল ,..
” বউ কি হয়েছে তোমার? কোথায় কষ্ট হচ্ছে? কোথায় ব্যাথা করছে বলো আমাকে! চোখ লাল হয়ে আছে কেন? খারাপ লাগছে বেশি? চোখ মুখ এমন ফ্যাকাসে বর্ন হয়ে আছে কেন? কি হয়েছে বলো বউ! ”
আরুহী পিটপিট করে আরুশের চিন্তিত মুখের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট কামড়ে ব্যথা নিবারনের ব্যর্থ চেষ্টা করে হাসবার চেষ্টা করলো,
” এই সামান্য ব্যাথা আর কি! তেমন জটিল কিছু না, এতো চিন্তা করতে হবে না আরুশ ভাই ”
আরুশ আরুহীর মুখ ধরে আরেক কাছে গিয়ে চোখে চোখ রেখে বলল,
” মিথ্যা বলছিস তুই আরুহী! আমি তোকে চিনি, সামান্য ব্যাথায় কখনো তোর নাক মুখ ফ্যাকসে হবে না, তোর চোখ বলছে তুই ভালো নেই! ”
আরুহী দুর্বোধ্য হাসলো,
” তুমি অযথায় বেশি চিন্তা করছো আরুশ ভাই, আমি ঠিক আছি, ব্যাথা ভালো হয়ে যাবে, তুমি ফ্রেস হয়ে আসো আমি ব্যাথার মেডিসিন নেই ”
“খেয়েছিস কিছু? ”
” হুমম, কিছু ক্ষন আগেই রুশা পাটিসাপটা পিঠা খাইয়ে গেলো ”
আরুশ উঠে দাঁড়ালো, সে জানে আপাতত আরুহীকে কিছু জিজ্ঞেস করলে কখনোই কিছু বলবে না, তাই নিজেই একটা ব্যাথার টেবলেট এনে আরুহীর হাতে দিলো সাথে এক গ্লাস পানি।
” নে এটা খেয়ে নে আর সুন্দর ভাবে শুয়ে পড় আমি ফ্রেস হয়ে আসছি ”
বলেই আরুশ টাওজার আর একটা নেভি ব্লু টি শার্ট নিয়ে ওয়াসরুমে চলে গেলো,
আরুহী সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলল, রুমের লাইট অফ করে ধীরে ধীরে উঠে জানালার কাছে গিয়ে দাড়ালো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সব রহস্য উদঘাটন করতে হবে শরীর টাও ভালো যাচ্ছে না। কি থেকে কি হয়ে যায় বলা যায় না, খুব দ্রুই কাজটা সম্পন্ন করতে হবে নিজের কাজ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর মতো মেয়ে আরুহী চৌধুরী নয়!
ওয়াসরুমের দরজা খুলার শব্দে পিছনে ঘুরে তাকালো আরুহী, আরুশ চুল মুছতে মুছতে ভ্রু কুঁচকে তার দিকে এগিয়ে আসছে,
” তোকে না বলেছি শুয়ে পড়তে, একটা কথাও শুনিস না তুই আরু। নে এবার মাথাটা ভালো করে মুছে দে, বউ হয়েছিস বউয়ের দায়িত্ব পালন কর ”
বলেই তোয়ালে টা আরুহীর হাতে গুঁজে দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসলো, আরুহী কিছু ক্ষন থম মেরে দাঁড়িয়ে থেকে মুচকি হেসে এগিয়ে গিয়ে মাথা মুছতে মুছতে বলল,
” ঘুমাবে? ”
” হুম, ক্লান্ত ”
আরুহী অবাক চোখে জিজ্ঞেস করল,
” খাবে না? ”
” আপাতত ঘুমাবো”
বলেই বিছানায় শুয়ে পড়লো আরুহী সেদিকে তাকিয়ে দীর্ঘ শ্বাস ফেলে তোয়ালে টা বারান্দায় নেড়ে দিয়ে ভেতরে ঢুকলো।
এক পলক বিছানার দিকে তাকিয়ে পুনরায় জানালার দিকে এগিয়ে পর্দা টা ভালো ভাবে টেনে দিতেই পিছনে থেকে আরুশ বলে উঠলো,
” বউ আছো?”
আরুহী পিছনে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো, আরুশ পিটপিট করে তার দিকেই তাকিয়ে আছে,
” না ”
” কাছে আসো বউ ”
আরুহী বিছানায় বসে আরুশের দিকে তাকালো, বেটার মতিগতি সুবিধা জনক না!
” কি সমস্যা আপনার না ঘুম পেয়েছে! ”
আরুশ শোয়া থেকে উঠে আধশোয়া হয়ে পিছনে বালিশ দিয়ে হেলান দিয়ে আরুহীর বাহু ধরে হেঁচকা টান দিতে আরুহী সোজা আরুশের উপর পড়লো, বিষয় টা বুঝতে ই আরুহীর সেকেন্ড দশেক লেগে গেলো, ঘটনাটা এতো দ্রুত ঘটলো যেন আরুহী কিছু বুঝে উঠার আগেই সে আরুশের বাহুতে বন্দি হয়ে গেলো।
আরুহী ভ্রু কুঁচকে উপরে তাকাতেই আরুশ চোখ বন্ধ করে ই বলে উঠলো,
” এভাবে তাকাস না বউ, বুক টা চিনচিন করে উঠে ”
আরুহী হাত উঠিয়ে আরুশের কপালে হাত দিলো,
” নাহ জ্বর টর তো নাই, আপনি কি হালকা লাল পানি সেবন করেছেন ডক্টর? এমন অদ্ভুত বিহেভ করছেন কেন? ”
আরুশ তৎক্ষনাৎ চোখ মেলে তাকালো,
” দেখ বউ অনেক জ্বালিয়েছিস! আর আজাইরা কথা বলে মুড টা নষ্ট করিস না, আরেকটা কথা বললে কানের নিচে ঠাস ঠাস করে..
ফট করে আরুহী আরুশের দিকে তাকাতেই আরুশ নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে একটু ঝুঁকে এসে ফিসফিস করে বলল,
” বেশি না কয়েকটা চুমু খাবো, এই ধর ত্রিশটার মতো ”
আরুহীর বোকা বোকা চাহনীতে আরুশ মিটমিট করে হাসতে লাগলো,
” এই ছাড়ো তো আরুশ ভাই, দিন দিন অসভ্য হচ্ছো মুখে যা আসে তাই বলে দিচ্ছো ”
বলেই আরুহী উঠতে নেবে আরুশ হাতের বাঁধন আরো ও শক্ত করে বলল,
” আমার সোনা বউ, লক্ষি বউ আর কথা বলিস না, ঘুমা শরীর খারাপ তোর, কাল ডক্টরের কাছে নিয়ে যাবো এখন ঘুমা ”
আরুহী আর কথা বাড়ালো না, চুপ চাপ আরুশের বুকের মধ্যে ঘাপটি মেরে শুয়ে রইলো, সে জানে শত ছুটাছুটি করলেও আরুশ এই মূহুর্তে তাকে ছাড়বে না, তাই ব্যর্থ চেষ্টা করলো না সে।
আরুশ আরুহীর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো, চুলের উপর ঠোঁট ছুঁইয়ে নিজেও চোখ বন্ধ করলো, আরুশের মনে ভীষণ খচখচ করছে, নরমাল কোন কিছু তে তো আরুহীকে এতোটা কাবু করার কথা না, তবে কি হয়েছে!
আরুহীর ঘন নিঃশ্বাসের শব্দে বুঝতে পারলো সে ঘুমিয়ে গেছে, কিন্তু আরুশের চোখে ঘুমের র্যাস মাত্র ও নেই, শরীর ক্লান্ত কিন্তু ঘুম পাচ্ছে না! আরুশ এক দৃষ্টিতে আরুহীর দিকে তাকালো, কয়েকদিনের ধকলে মেয়েটা কেমন যেন থমকে গেছে, চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পড়তে শুরু করেছে, কি নিয়ে চিন্তিত মেয়েটা!
চলবে..
[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ আর গঠন গত মন্তব্য করবেন আশা করি ]