মায়াবিনী_(২) #Ayrah_Rahman #পর্ব_৪৪

0
370

#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪৪

______________

শীতের মাঝামাঝি সময় টা বেশ ভালো লাগার মতো। তবে ব্যাপারটা শুধু মাত্র ই টাকাওয়ালা মানুষ দের জন্য ই, যারা খেটে খাওয়া মানুষ তাদের জন্য শীতটা মোটেও সুখকর নয়।

আরুহীর কাছে শীত কাল টা অন্য রকম লাগে, শীতের ঝরে যাওয়া পাতার দিকে তাকিয়ে বারংবার দীর্ঘ শ্বাস ফেলে, ইসস এই ঝরে যাওয়া পাতার মতো করে ই যদি জীবনের সকল সমস্যা, বিষাদ গুলো ঝরে ফেলা যেতো, কতই না সুন্দর হতো জীবন টা। না থাকতো এত জটিলতা আর না থাকতো কোন চিন্তা। কিন্তু এসব তো শুধু কল্পনা তেই ভাবা যায় বাস্তবে কখনোই সম্ভব না।

” বসতে পারি মিসেস আরুহী চৌধুরী? ”

নিজের হাতের থেকে নজর সরিয়ে চকিত নজরে সামনে তাকালো আরুহী, মূহুর্তেই তার ঠোঁটে মুচকি হাসির রেখা দেখা দিলো। আপাতত সে বসে আছে শহরের সবচেয়ে বড় পাঁচ তারকা হোটেলের টপ ফ্লোরে, এক ঘন্টার জন্য পুরো ফ্লোর বুক করা হয়েছে, এতো আয়োজন নিশ্চয়ই কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য ই। নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে ই এতোক্ষণ নিজেকে নিয়ে গবেষণা করছিলো সে!

” ওয়েলকাম মিস্টার সরকার, প্লিজ সিট ”

কালো শার্ট আর কালো থ্রি কোয়ার্টার প্যান্টে আবৃত মেয়েটাকে দেখে মুখের হাসি বিস্তর হলো লোকটার। যদিও কালো মাস্ক আর কালো ক্যাপের আড়ালে তার রহস্যময় মুখ খানী ঢাকা আরুহী চৌধুরীর।

” কেমন আছেন আরুহী চৌধুরী, আজকাল বেশ ব্যস্ত মনে হচ্ছে আপনাকে! পাওয়াই যায় না! ”

আরুহী হাসলো,

” কি আর বলব বলেন, নতুন দায়িত্ব তার উপর নতুন অপারেশন! কাজ তো থাকবে ই”

লোকটা হেসে মাথা নাড়িয়ে সায় জানালো।

” তা আপনাকে যেই কাজটা দিয়েছিলাম সেটা ফুলফিল হয়েছে তো?”

” আমি মানুষ টা খারাপ হতে পারি তবে অকৃতজ্ঞ নই আরুহী চৌধুরী! সবকিছুর ঋণ পরিশোধ সম্ভব না হলেও আংশিক পূরনের চেষ্টা করি ”

কথা গুলো বলেই লোকটা আরুহীর দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো। আরুহী স্বাভাবিক দৃষ্টিতে ই সামনে থাকা লোক টার দিকে তাকালো,

আরুহীর দৃষ্টি লক্ষ্য করে লোকটা হেসে বলল,

” আপনার সকল কাজ কমপ্লিট, বেশ কয়েক দিন যাবত আমি আপনার কথা মতো ব্যাপারটা নিয়ে গভীরে তদন্ত করেছি, তবে কি জানেন তো আরুহী এমন অনেক তথ্য সামনে এসেছে যা অনেক টা কেচু খুঁড়তে কেউটে বেরিয়ে আসার মতো, এমন অনেক তথ্য আছে যা পুলিশ দের বের করতে মাস পেরিয়ে যায় তবুও কোন ক্লু পায় না অথচ আমাদের মতো কিছু অকর্মন্য মানুষ আছে যারা সেকেন্ডের মধ্যে সেসব তথ্য অনায়াসে গভীর থেকে টেনে হিঁচড়ে বাইরে বের করে আনতে পারে!”

লোকটা থামলো, সামনে তাকাতেই আরুহীর তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে অনেক টা থতমত খেয়ে গেলো, মেয়েটার দৃষ্টি এতো তীক্ষ্ণ আর ধারালো কেন! বুঝতে পারে না লোকটা।

” আজ বড়ই ভনিতা করছেন মিস্টার সরকার! আমার হাতে সময় বেশি নেই তাই কথা যা বলার সরাসরি ই বলেন, অপ্রয়োজনীয় কথা আরুহী চৌধুরী পছন্দ করে না ”

লোকটা হাসলো, সামনে থাকা কফির কাপে দু বার চুমুক দিয়ে রেখে গলা পরিষ্কার করে বলল,

” তা যা বলছিলাম, তথ্য পেয়েছি অনেক কিছু ই তবে এর বেশির ভাগ তথ্যই আপনার বোধ হয় ভালো লাগবে না আরুহী চৌধুরী। বর্তমান এমপি রুকুজ্জামান এর প্রতিদ্বন্দি কে জানেন? ”

আরুহী খানিকটা চিন্তিত কন্ঠে বলল,

” মে বি সরোয়ার মোর্শেদ , এম আই রাইট? ”

লোকটা হাসলো,

” হুম, আই থিংক আপনার সরোয়ার মোর্শেদ এর সম্পর্কে আপনার বেশ ভালো ধারণা আছে”

” ঘুরিয়ে প্যাচিয়ে কথা বলছেন মিস্টার! সরোয়ার মোর্শেদ যে অসৎ ব্যবসার সাথে যুক্ত তা অজানা নয় আমার তবে তথ্য প্রমানের বড্ড অভাব তাই হাত গুটিয়ে বসে থাকা ছাড়া উপায় নেই, তবে একেবারেই যে হাত গুটিয়ে আছি তাও কিন্তু না, আপনি কি তাকে সন্দেহ করছেন? ”

লোকটা শব্দ করে হেঁসে বললেন,

” আমি সন্দেহের বশবর্তী হয়ে কোন কথা বলি না আরুহী চৌধুরী, আমি ততক্ষণই কোন কথা বলি না যতক্ষণ না সে বিষয়ে আমি সিউর হই! আপনি কি জানেন সরোয়ার মোর্শেদ লোকটা মাথা মোটা! বুদ্ধি তার বলতে নেই তবে বেশ সেয়ানা ”

আরুহী ভ্রু কুঁচকালো,

” তাহলে কি বলছেন লোকটার অন্য কারো বুদ্ধি তে চলে! উনাকে সামনে রেখেই কোন মাস্টার মাইন্ড পিছনে আছে!”

আরুহীর কথা শুনে লোকটা কুটিল হাসলো!

” এজন্য ই আপনাকে আমার বেশ ভালো লাগে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষ আপনি! আই লাইক ইট ”

আরুহী বিরক্তি তে ভ্রু কুঁচকে বলল,

” কাজের কথা বলুন! ”

” তার পিছনের মাস্টার মাইন্ড কে জানতে চান! ”

আরুহী কিছু ক্ষন থম মেরে বসে রইলো, মিনমিন করে বলল,

” মিরাজ খান! ”

লোকটা একটু নয় অনেক খানি চমকে উঠলো, চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে অনিমেষ তাকিয়ে রইলো আরুহীর দিকে! মেয়েটা এতো অদ্ভুত কেন? এমন জঘন্য সময়ে জঘন্য অপরাধে নিজের ভাইয়ের নাম নিতে গলাটাও কাঁপলো না!

লোকটা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল,

” আপনি জানতেন! ”

আরুহী দুর্বোধ্য হাসলো, সামনে থাকা লোকটা হয়তো জানে না এই সামান্য হাসিতে ঠিক কতখানি তিক্ততা আর যন্ত্রণা মিশ্রিত আছে!

” আন্দাজ করে ছিলাম, ভাবিনি আন্দাজ টা ঠিক ই হবে! ”

লোকটা দীর্ঘ শ্বাস ছেড়ে বলল,

” আপনি বড্ড শক্ত ধাঁচের মেয়ে! আপনাকে যতবার এ্যাটাক করা হয় তা সরোয়ারের লোকেরাই করিয়েছে কিন্তু আপনার ভাই এ বিষয়ের কিছুই জানতো না। যত খারাপ ই হোক না কেন, আপনার ভাই আপনাকে ভীষন ভালেবাসে তা মানতেই হবে।”

আরুহীর নজর টেবিলে সীমাবদ্ধ।

“আপনাকে ইমার্জেন্সি তলব করার আরেকটা কারণ আছে! ”

” কি? ”

” আপনার ভাই মাস্টার মাইন্ড হলেও ওই বললাম না সরোয়ার লোকটা বেশ সেয়ানা, সে মনে হয় না আপনার ভাই কে বাচিয়ে রাখবে! ”

আরুহী চমকে উঠলো,

” মানেহ ”

” তারা জানে আপনি তাদের বিষয় নিয়ে বেশি ঘাটাঘাটি করছেন! তাই তারা আপনাকে সরিয়ে দিতে চাচ্ছে আর আপনাকে সরাতে হলে সবার আগে আপনার ভাইকে সরাতে হবে কারণ আপনাকে সরানোর পথে প্রথম বাধায় দেবে মিরাজ খান! তাই বি কেয়ারফুল! যদিও পাপের পথ থেকে ফিরে আসা কিছু টা অসম্ভব কিন্তু পুরোটা না! তবে ইচ্ছে শক্তি থাকতে হবে, মনোবল থাকতে হবে নিজের ”

কিছু টা থেমে,
“চারদিন পর উনাদের সবচেয়ে বড় ডিল টা সাপ্লাই হবে, দুইশত এর মতো মেয়ের বিনিময়ে প্রায় এগারো কোটি টাকার মা*দক দেশে প্রবেশ করবে! এটা দেশের জন্য হুমকি আই থিংক আমি যা বোঝাতে চেয়েছি আপনি তা বুঝেছেন! আজ তাহলে উঠি মিসেস আরুহী চৌধুরী! ”

বলেই লোকটা চেয়ার ছেড়ে উঠে হনহন করে রেস্তোরাঁ ছেড়ে বেরিয়ে গেলো।

আরুহী থম মেরে বসে রইলো, মাথা কাজ করছে না, মাঝে মাঝে জীবনটা এমন তিক্ততায় ভরে উঠে চারপাশে সবকিছু ই তখন বিষাদ লাগে! তার ভাই কেন গেলো এসবে? কি নেই তাদের অথচ কেন এমন নিকৃষ্ট পন্থা অবলম্বন করলো তার ভাই! উত্তর মেলে না! আরুহী শূন্যে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো, মনটা আজ বড়ই বিষাদ!

কিছু ক্ষন থম মেরে বসে থেকে উঠে দাঁড়ালো সে, ডক্টরের এপোয়েন্টম্যান্ট আজকে, আরুশ করেছে ব্যবস্থা নয়তো হেলায় ফেলায় আরোও মাস দুয়েক যেতো এভাবে ই, আসার সময় আরুশ পইপই করে বলে দিয়েছে যেন ঘন্টা দুয়েকের মধ্যে ই হসপিটালে দেখতে পায় আরুহী কে। আরুহী এক পলক হাত ঘড়ির দিকে তাকালো,

এখন সন্ধ্যা ছ’টা বাজতে চলল, অথচ সে বেরিয়েছে তিনটায়! বেশ দেরি করে ফেলেছে সে বুঝতে ই দ্রুত পা চালালো।

নিচে যেতেই দেখে সুলতান গাড়িতে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ফোন ঘাটছে, আরুহী সুলতানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই সুলতান সামনে তাকালো,

” কি ব্যাপার আরুহী! মিটিং শেষ? ”

আরুহী ছোট করে বলল,

” হুম ”

বলেই গাড়ির দরজা খুলে বসলো, সুলতান ভ্রু কুঁচকে আরুহীর দিকে এক পলক তাকিয়ে নিজেও গাড়ি তে গিয়ে বসলো,

” আরুহী আমি বুঝতে পারছি না তুমি ওসব খারাপ মানুষ দের সান্নিধ্যে কেন যাও! তুমি তো জানো সরকার লোকটা কতটা ডেঞ্জারাস! সাইলেন্ট কিলার বলা হয় তাকে! ”

আরুহী মুচকি হাসলো,

” কাটা দিয়েই যে কাটা তুলতে হয় সুলতান ভাই! টেনশন নিও না! সিটি হসপিটালের দিকে রওনা হও আর শোনো কিছু কিছু সময় খারাপ সঙ্গ থাকা ভালো তাহলে ভালো টা আমাদের চোখে পড়বে নয়তো ভালো খারাপের পার্থক্য নির্ণয়ে যে একেবারে ই অজ্ঞ থাকব আমরা!

চলবে..

[ আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ আর গঠন গত মন্তব্য করবেন কিন্তু, দেরি হবার জন্য দুঃখীত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here