#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪৬
___________________
রাত তখন প্রায় বারোটার কাছাকাছি, আরুশ মাত্র ই হসপিটাল থেকে ফিরেছে, দু দুটো ক্রিটিক্যাল অপারেশন শেষ করে করে ফিরেছে সে, বাড়ির সদর দরজায় হাত রাখতেই আচমকা দরজা কিছু টা খুলে গেলো।
দরজা খোলা! আশ্চর্য! আরুশ ভ্রু জোড়া কুঁচকে ভিতরে প্রবেশ করলো, পুরো বাড়ি অন্ধকারাচ্ছন্ন। আরুশের ভ্রু জোড়া আরোও কুঁচকে গেলো। ব্যাপার কি! সদর দরজা তো সচরাচর খোলা থাকে না তাও এতো রাত পর্যন্ত তো কখনো ই না।
সদর দরজা বন্ধ করে মোবাইলের ফ্লাস লাইট অন করলো, কোথাও কোন মানুষ নেই! গেলো কই সব! বাহিরে তো ঠিক ই বাতি জ্বলছে তাহলে ভিতরে কি হলো!
আরুশ বার দুয়েক মা কে ডাকলো! নাহ্ কেউ নেই। আর কিছু চিন্তা না করেই সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো ।
রুমের দরজার হাত নিতেই বুঝলো লক করা। দরজার নাব ঘুরাতেই দরজা টা খুলে গেলো। আরুশ ভেতরে প্রবেশ করে চমকে এদিক ওদিক তাকালো, ঘরটাও ভীষণ অন্ধকার। আরুশের ভেতর টা মোচর দিয়ে উঠলো, আরুহীর কিছু হলো না তো! আরুহী কোথায়! আরুহী থাকলে রুম টা এমন অন্ধকার কেন! হাজারো প্রশ্নের আনাগোনা শুরু হলো তার মনে।
” আরুহী, কোথায় বউ তুমি! আরু ”
নাহ কোথাও কারে সাড়া শব্দ নেই! কোথায় গেলো। মোবাইল টারও চার্য শেষ হতে হলে এখনই! অদ্ভুত!
আরুশ হাতরে হাতরে লাইট অন করতে যাবে অমনি পিছনে থেকে কেউ মিষ্টি কন্ঠে বলে উঠলো,
” লাইট অন করো না ডিয়ার জামাই! ”
আরুশ চমকে পিছনে তাকালো, কাউকেই দেখা যাচ্ছে না তবে আরুহীর কন্ঠ চিনতে আরুশের বিন্দু মাত্র সমস্যা হলো না।
” কোথায় তুই আরু! আর এমন অন্ধকার করে রেখেছিস কেন রুম টা! ”
হুট করে চারপাশে লাল, নীল, সাদা বিভিন্ন ধরনের ফেইরি লাইট জ্বলে উঠলো, আরুশ চমকে চারপাশে তাকালো, সারা ঘর ফুল দিয়ে সাজানো, রজনীগন্ধা, গোলাপ আর বেলি ফুল দিয়ে ভরপুর রুম যেন কোন ফুলের রাজ্য।
আরুশ চারপাশে তাকিয়ে আরুহীকে খোঁজার চেষ্টা করলো আর পেয়েও গেলো কিন্তু হুট করে কেন যেন তার গলা শুকিয়ে আসছে। বার কয়েক ঢুক গিলে এগিয়ে গেলো জানালার দিকে। আরুহী বিপরীত দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে, পড়নে তার সিল্ভ লেস হাতার ব্লাউজ যার পিছনে দিকে উন্মুক্ত পিঠ, ফর্সা ত্বকে কালো রঙ টা যেন চাঁদের মতো চিকচিক করছে।
আরুশ নিজেকে সামলে ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সেদিকে।
” তুই এখানে! এভাবে ঘর অন্ধকার করে রেখেছিস কেন? ”
আরুহী আরুশের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো,
” কেন ভালো লাগছে না বুঝি! ”
” না সেটা বলি নি তবে আজ..”
” আজ! আজ আমাদের বাসর রাত, জানি ভীষণ দেরি হয়ে গেছে তবুও তুমি তো জানো আরুশ ভাই তোমার বউ ভীষণ ব্যস্ত মানুষ, তাই অনেক গুলা সরি। আর দেরি করার দরকার নেই আর না তোমাকে দেরি করাবো! কি বলো ”
বলেই আরুহী আরুশ কে চোখ মেরে ঠোঁট এলিয়ে হাসলো।
আরুশ পুরাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে আরুহীর দিকে তাকালো।
আরুহী তার হাত দুটো উপরে তুলে আরুশের কাঁধে রাখলো, কাঁচের চুরির রিনিঝিনি শব্দে মুখরিত হলো চারপাশ।
আরুহী ফিসফিস করে বলল,
” কেমন লাগছে আমাকে? ”
আরুশ এক পলক আরুহীর দিকে তাকালো কালো রঙের শাড়ি তে নিজেকে আবৃত করেছে এই রমনী, ঠোঁটে হালকা লিপস্টিক আর চুল গুলো মাঝে সিঁথি করে এক পাশে ফেলে রাখা। এতেই যেন চন্দ্রকন্যা।
” কি ব্যাপার আজ হঠাৎ! ”
আরুহী মুচকি হেসে আরুশের বুকে মাথা রেখে ধীর কন্ঠে বলল,
” আই নিড ইউ আরুশ ভাই! আমি তোমাকে চাই, তোমার অস্তিত্বের মাঝে নিজের অস্তিত্ব বিলীন করতে চাই! আমার সমস্ত সত্যা তোমাকে দিতে চাই, এমন ভাবে তোমার মাঝে হারিয়ে যেতে চাই যেন পৃথিবীর কোন শক্তি আমাকে তোমার কাছ থেকে আলাদা করতে না পারে! মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমি তোমার হয়ে বাঁচতে চাই আরুশ ভাই ! শুধু ই তোমার, একান্তই তোমার! ”
আরুহী বেশ স্বাভাবিক ভাবে ই কথা গুলো বললেও আরুশের ভেতর টা মোচর দিয়ে উঠলো, আরুহী কে শক্ত হাতে জরিয়ে ধরে মাথার চুলের উপর ঠোঁট ছুঁইয়ে বলল,
” তুই শুধুই আমার আরু, একান্তই আমার ভালোবাসার বউ! আমার অস্তিত্ব! তোকে হারালে যে আমি নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলব আরু, তোকে ছাড়া বাঁচা অসম্ভব যে! আমার নিঃশ্বাসে মিশে আছিস তুই! ”
আরুহী মাথা তুলে এক পলক আরুশের দিকে তাকিয়ে দেখলো,
” আই নিড ইউ আরুশ ভাই! ”
বলেই আরুশের শুভ্র রঙের শার্টের বোতামে হাত নিয়ে খুলতে লাগলো,
আরুশ চমকে আরুহীর হাত আকড়ে ধরে বলল,
” এমন অদ্ভুত কথা বার্তা বলছিস কেন তুই? ”
আরুহী চোখ দুটো ছোট ছোট করে বলল,
” ঠিক কোনটা অদ্ভুত বিহেভ? বউ হই আমি তোমার! তোমার উপর হান্ডেট পার্সেন্ট অধিকার আছে আমার। আমার মতো সুন্দরী একটা বউয়ের সামনে নিজেকে সবসময় ভার্জিন বলে দাবি করবা আর আমি দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখব! ভাবলে কিভাবে! তোমার সব ভার্জিনিটি আমি আজকে ধুলিস্বাত করবো! দাড়াও ”
পুনরায় শার্টে হাত দিতেই আরুশ ছিটকে গিয়ে দুরে সরে দাঁড়ালো, হাত এগিয়ে আরুহীর মাথায় হাত দিয়ে বলল,
” নাহ জ্বর টর তো নাই! এই সত্যি করে বলতো মদ টদ খাস নি তো? তুই যদিও ওসব ছাইপাঁশ খাস না তবুও বললাম, কি হয়েছে তোর? ”
আরুহী চোখ ছোট করে ভ্রু বাকিয়ে বলল,
” তার আগে তুমি বলো তো তুমি আমার কাছে আসছো না কেন? এই সত্যি করে বলো তো তোমার আবার সমস্যা টমস্যা নাই তো? থাকলে বলতে পারো! আমার পরিচিত অনেক ভালো ডাক্তার আছে! ”
আরুশ চোখ বড়ো বড়ো করে আরুহীর দিকে তাকালো, মানে কি হে? এই মেয়ে বলে কি! যার জন্য করলাম চুরি সেই বলে চুর প্রবাদ টা মনে হয় এসব মানুষের জন্য ই দেওয়া হয়েছে! কত কষ্ট করে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে রাখছে সেটা তো শুধু মাত্র আরুশ ই জানে! আর এই দিকে এই মেয়ে তার ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছে! দাঁতে দাঁত চাপলো আরুশ।
” ভালো কথা বললে কানে যায় না তাই না? এসব পাগলামি রেখে ঘুমা, এমন কিছু করিস না যাতে পরবর্তী তে পস্তাতে হয়! ঘুমা, বেটার হবে! ”
আরুহী মুচকি হেসে এগিয়ে গেলো আরুশের দিকে,
পা দুটো উঁচু করে আরুশের ঠোঁটে নিজের ঠোঁট বসিয়ে লম্বা একটা চুমু একে ঘাড়ের পিছনে হাত রেখে খানিকটা চেপে নিজের মুখের কাছে এনে হালকা ফুঁক দিয়ে ফিসফিস করে বলল,
” আই ওয়ান্ট ইউ আরুশ ভাই ”
আরুশ আরুহীর থেকে নিজেকে ছাড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টা করে বলল,
” ঘুমন্ত সিংহ কে জাগাস না বউ সহ্য করতে পারবি না! অনেক দিনের ক্ষুধার্থ! আমি নিজের নিয়ন্ত্রণে রাখছি তুই ঘুমা, আমাকে উন্মাদ করিস না, পারবি না সামলাতে ”
আরুহী পুনরায় আরুশের কাঁধ চেপে নাকের ডগায় আলতো চুমু খেয়ে বলল,
” আমি তোমার উন্মাদনায় মত্ত হতে চাই আরুশ ভাই! কে বলেছে তোমাকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে! আমি আজ নিজেকে তোমার নিকট সঁপে নিতে চাই! তোমার প্রতিটি ভালোবাসার সাক্ষী হতে চাই! ”
আরুশ আড় চোখে তাকিয়ে বলল,
” এই লজ্জা লাগে না তোর! ”
” আফসোস সেটা লাগে না! ”
” কেন লাগে না! জোর করে লাগা! ”
আরুহী করুন চোখে তাকালো আরুশের দিকে,
” লজ্জা না লাগলে কিভাবে লাগাবো, এটা কি কিনার জিনিস নাকি! যে জোর করে কিনে এনে লাগাবো! আজিব তো ”
” আমার শখ তোর লাজে রাঙা মুখ টা দেখবো! সেটা তো আর হতে দিলি না! ”
” লজ্জা পাওয়া লাগবে না, এমন বউ কোথায় পাবে বলে যে কিনা বাসরের জন্য জামাইকে তেল মারছে! ”
” বাসর করবি? ”
” হুম, অভিয়াসলি ”
” আর ইউ সিউর? ”
” হুমম ”
” আবার ও বলছি, ভেবে বল পরে আফসোস করিস না যেন ”
” না বললাম তো ”
আরুশ আরুহীর আপাদমস্তক স্ক্যান করে বার কয়েক বাকা হাসলো,
পরনের শাড়ি টা অত্যাধিক পাতলা, শরীরের প্রতিটি খাঁজ স্পষ্ট! আরুশের নজর গেলো আরুহীর বক্ষ বিভাজনের ঠিক উপরে একটা কুচকুচে কালো তিলের উপর। ফর্সা ত্বকে কালো তিল টা জ্বলজ্বল করছে। আরুশের গলা শুকিয়ে আসছে, চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করার চেষ্টায় আছে।
হঠাৎ আরুহী আরুশের মাথার পিছনে হাত দিয়ে নিজের দিকে এনে নিজের ঠোঁটের ভাজে আরুশের ঠোঁট বসিয়ে দিলো। হঠাৎ এমন হওয়াতে আরুশ খানিকটা হকচকিয়ে উঠলো, পুরো ব্যাপার টা বোঝার পর আরুশ নিজের শক্ত পোক্ত হাত আরুহীর শাড়ি ভেদ করে কোঁমড়ে চেপে ধরলো, ধীরে ধীরে অবাধ্য হাত দুটো উপরে উঠতে উঠতে উম্মুক্ত উদরে আর পিঠে আগাধ বিচরণ শুরু করলো, আরুহী কেঁপে উঠতে লাগলো ক্ষনে ক্ষনে !
খানিক্ষন পর আরুহী আরুশ কে ছেড়ে জোরে জোরে শ্বাস ফেলতে লাগলো, দুজন ই হাঁপাতে লাগলো। আরুশের নজর তখন ও আরুহীর বক্ষ বিভাজনের সেই তিলের উপর। আরুশ আরুহীর কোমর চেপে নিজের সাথে মনে মিশিয়ে নিচু হয়ে ঝুকে সেই তিলটাতো আলতো ভাবে ঠোঁট ছোয়াতে লাগলো, হুট করেই সোজা হয়ে দাড়িয়ে আরুহীকে কোলে তুলে নিলো,
হঠাৎ এমন হওয়াতে আরুহী বেশ চমকে উঠলো। আরুশ আরুহীকে বিছানায় শুইয়ে কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলল,
“তুই জানিস না হাজার মানুষের ভিড়েও চোখটা আমার তোর দিকেই আটকে যায়, তুই জানিস না, কতটা ভালোবাসি তোকে!’ ”
“গেট রেডি মাই লাভ ফোর মাই লাভ টর্চার ”
চলবে…
[ যারা বলেন ওদের রোমান্টিক মূহুর্ত দেওয়ার জন্য তাদের জন্য ই আজকের পর্ব, এর চেয়ে রোমান্টিক আমি আর লিখতে পারব না, আমার লজ্জা লাগে! আজকের পর্বটা কেমন লাগলো জানাবেন প্লিজ ]