#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৮
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি
মিশুর মুখে অনু শুনে মেহবিন মিহিরের দিকে তাকায়। ও কিছু বলবে তার আগেই মিহির মিশু কে বলল,,
“আমি অনু নই মিস ওর মিসেস? আমি হচ্ছি মিহির, মিহির চৌধুরী আপনার ফুলের মামাতো ভাই।”
এ কথা শুনে মিশু তাড়াতাড়ি করে বলল,,
“না তুমি অনুই?”
‘আমাকে কি আপনার অনুর মতো দেখতে?”
মিশু ভালো করে কিছুক্ষণ মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘না কিন্তু তোমার চোখ দু’টো তো অনুর মতো।”
‘একইরকম চোখ তো অনেকের হয়।”
কথাটা শুনে মিশুর হাসিমুখটা মিইয়ে গেল। ও অন্যদিকে তাকালো মেহবিন এসে মিশুর হাত ধরলো। তখন মিহির একটা চকলেট মিশুর দিকে এগিয়ে দিল আর বলল,,
‘আপনার নাকি চকলেট অনেক পছন্দ। নিন আপনি চকলেট খান।”
চকলেট পেয়ে মিশুর মুখে হাসি ফুটে উঠল। চকলেটেই মেয়েটা গলে যায়। ও চকলেট নিয়ে বলল,,,
‘ধন্যবাদ।”
তখন মেহবিন বলল,,
“ফুল এবার যাওয়া যাক। গাড়িতে উঠে বসো এখন। আমাদের জন্য সবাই অপেক্ষা করছে।”
মিশু গাড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,,
“আমি কিন্তু সামনে বসবো।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে বলল,,
‘ঠিক আছে।”
তখন মিহির বলল,,
‘এবার কিন্তু আমি গাড়ি চালাবো মেহু । এইবার আর কোন বারন শুনবো না।”
“আচ্ছা ঠিক আছে ভাইয়া।”
মিহির উঠে বসলো সাথে মিশুও আর পেছনে মেহবিন উঠে বসলো। দরজার সামনে থেকে কয়েকজোরা চোখ ওদের দেখলো। যদিও দূরে হওয়ার জন্য ছেলেটার চেহারা কেউ দেখতে পারে নি। এটা দেখার জন্য শিলাও বাদ যায় নি।
_________________
ঘন্টা দুয়েক পর মেহবিন রা মেহরব চৌধুরীর বাড়িতে পৌঁছে গেল। গাড়ি থেকে নেমে মিশু মিহিরকে বলল,,
“তোমার বাড়ি তো দেখি আমাদের বাড়ির থেকেও বড় আর সুন্দর করে সাজানোও হয়েছে।”
মিহির হেঁসে বলল,,
“আপনার পছন্দ হয়েছে?”
‘হুম খুব খুব।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে মিশুর হাত ধরলো আর বলল,,
“ওয়েলকাম টু মামার বাড়ি মিশুমনি।”
মেহবিনের কথা বলার ধরন দেখে মিশু হাসলো। মেহবিন হেঁসে ওকে নিয়ে ভেতরে ঢুকলো। অনুষ্ঠান শেষ শুধু শাহরিয়ার পরিবার রয়েছে আর বাকি সবাই চলে গেছে। মেহবিন বুঝতে পারলো কিসের জন্য শেষ হয়ে গেছে অবশ্য অনেকটা দেরিও হয়ে গেছে। মিশু মুখরকে দেখে ওর দিকে দৌড়ে গেল আর বলল,,
‘পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি তুমিও এখানে আছো?”
মিশুকে দেখে মুখর হাসলো বাকি সবাই অবাক হয়ে মিশুকে দেখতে লাগলো। মুখরের পরিবারের সবাই ওকে চেনে তাই অবাক হয়েছে আর মেহবিনের সাথে দেখে আরো বেশি। মুখর হেঁসে বলল,,
“হুম আমিও আছি দাওয়াত ছিল যে এখানে।”
‘তুমি তো আমাকে ভুলেই গেছো পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি। আমাদের বাড়িতে তো যাওই না এখন।”
“কি বলো তো মিশুমনি তোমার পুরোনো বন্ধু নতুন অথিতি এখন অনেক ব্যস্ত হয়ে পরেছে। তাই যেতে পারি না। কেমন আছো তুমি?
“অনেক ভালো আছি তুমি কেমন আছো?’
“আমিও ভালো আছি।”
তখন মেহবিন বলল,,
“ফুল এদিকে এসো ?”
মিশু মেহবিনের দিকে এগিয়ে গেল। মেহবিন ওর মামার কাছে দাঁড়িয়ে ছিল। মিশু কেমন করে যেন মেহরব চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে রইল। মেহরব চৌধুরী মিশুর মাথায় হাত দিয়ে বলল,,
“কেমন আছো মিশু?”
মিশু হেঁসে বলল,,
“ভালো আছি আর তুমি আমায় চেনো? আচ্ছা তুমি কে বলো তো? আর আমাকে চেনো কিভাবে?”
“তোমার কথা তোমার ফুল আমাকে বলেছে । আর আমি তোমার ফুলের মামা সেই হিসেবে তুমি আমায় মামা ডাকতে পারো।”
” মামা !”
“হ্যা মামা।”
“তুমি কতো সুন্দর মামা একদম আমার ফুলের মতো।”
মেহরব চৌধুরী হাসলেন আর বললেন,,
“তুমিও অনেক সুন্দর একদম ফুলের মতো।”
মিশুও এবার হাসলো। তখন মেহবিন বলল,,
“তোমরা সবাই খেয়েছো মামা?”
“না সবাই তোদের জন্য অপেক্ষা করছিল। আমি তো আলভির দাদিকে বললাম ওনারা যাতে খেয়ে নেয় কিন্তু ওনারা বলল তুই আসলে তারপর খাবে।”
মেহবিন একবার আছিয়া খাতুনের দিকে তাকালো উনি এতোক্ষণ ওর দিকেই তাকিয়ে ছিল। ও তাকাতেই তিনি অন্য দিকে ঘুরে গেলেন। তা দেখে মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“ওনারা আজ থাকবেন মামা?”
“না চলে যাবেন তোর জন্যই অপেক্ষা করছিল।”
মেহবিন মাহফুজ শাহরিয়ার এর দিকে এগিয়ে গেল আর বলল,,
“সরি বাবা আজ আপনাদের সাথে তেমন কথা হলো না। আসলে ওদিকে বেশ একটা ঝামেলা হয়েছিল তাই যেতে হলো।”
তখন নাফিয়া বলল,,
“তুমি থাকলেও যে আমাদের সাথে অনেক সময় কাটাতে তেমনটাও কিন্তু হতো না মেহু। কারন বাধ্যবাধকতা রয়েছে একজনের। যাই হোক গিল্ট ফিল করার তেমন কারন নেই।সবাই চলে গেল তাই আমরা ভাবলাম তোমার সাথে আবার একটু দেখা করেই যাই। আবার কবে না কবে দেখা হবে। তবে তুমি মিশু আপুকে কোথায় পেলে তাকে আনার জন্যই কি গিয়েছিলে আচ্ছা তোমাদের পরিচয় হলো কিভাবে?
“সে অনেক কথা আপু। এখন বলার সময় নেই। তোমরা খেতে বসো আমি একটু ওপর থেকে আসছি।’
মিশুর কাছে গিয়ে বলল,,
“তুমি কি ফ্রেশ হবে এখন ফুল?”
“না এখন হবো না একদম শোয়ার আগে হবো। এখন হলে আমার সাজ নষ্ট হয়ে যাবে।”
মিশুর কথায় মেহবিন হাসলো আর বলল,,
“ঠিক আছে। তুমি তাহলে সবার সাথে পরিচয় হয়ে নাও ঠিক আছে।”
“হুম হুম!”
মেহবিন ওপরে চলে গেল। তখন আদর মিশুর সামনে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বলল,,
“আমি আদর। তুমি যার সাথে এসেছো তার ছেলে আমি।”
মিশু অবাক চোখে আদরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তুমি ফুলের ছেলে তাও আবার এতো বড়?
তখন মিহির বলল,,
“না ও মেহবিনের ছেলে নয় আদর আমার ছেলে।”
মিশু মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তোমার ছেলেও আছে। তোমাকে তো দেখে বুড়ো মনে হয় না। তোমার এতো বড় ছেলে কোথা থেকে এলো?”
মিশুর কথায় সকলেই হেঁসে ফেললো শুধু আদর আর মিহির ড্যাব ড্যাব করে মিশুর দিকে তাকিয়ে রইল।
তখন মেহরব চৌধুরী হেঁসে বলল,,
“মিশুমনি এসব বাদ দাও। এখন চলো তোমার মামীর সাথে আর বোনের সাথে পরিচিত হও।”
তখন মিশু বলল,,
‘আরে দাঁড়াও আদরের সাথে তো আগে হাত মিলাই।”
মিশু আদরের সাথে হাত মিলিয়ে জোরে জোরে নাড়াতে লাগলো। আর বলল,,
‘এটা হচ্ছে মিশুর স্পেশাল হাত মেলানো।”
তখন আদর হেসে বলল,,
‘আমার তোমার হাত মেলানো পছন্দ হয়েছে। এবার আমার পালা।
বলে এবার আদর জোরে জোরে হাত নাড়াতে লাগলো। তা দেখে মিশু আর আদর দু’জনেই খিলখিল করে হেঁসে উঠলো। দুজনে হাত ছেড়ে দিতেই মেহরব চৌধুরী মাইশা আর উনার মিসেস এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন। আর মুখর ও সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিল নতুন ভাবে। ততক্ষণে মেহবিন নিচে আসলো সকলে ড্রাইনিং টেবিলে বসলো। মেহবিন মিশুকে ওর বাম পাশের চেয়ারে বসিয়ে দিল। আর আদর ওর ডানদিকে বসলো। মেহবিন মিশুর জন্য খাবার বাড়তেই মিশু বলল,,
“তুমি না আমার জন্য চকলেট কেক , হাওয়ার মিঠাই, আইসক্রিম আর ফুচকা রাখতে বলেছো আমি সেগুলো খাবো এগুলো খাবো না।”
“হ্যা খাবে তো। আগে এখন খাবার খাও তারপর রাতে শোয়ার আগে আমরা সব খাবো।”
“সত্যি তো?”
“হুম একদম সত্যি।”
মেহবিন মুচকি হেসে মিশুকে খায়িয়ে দিতে লাগল। কারন ও নিজের হাতে খাবার খেতে পারে না। আদর কে মিহির খায়িয়ে দিচ্ছে তা দেখে মিশু মিহিরের দিকে তাকিয়ে বলল,,
“তুমিও আমার বাবার মতো তোমার ছেলেকে খায়িয়ে দিচ্ছো। তুমি জানো আমার বাবাও আমাকে সবসময় খায়িয়ে দেয়।”
মিশুর কথা শুনে মিহির হাসলো কিছু বললো না। অতঃপর সবার খাওয়া শেষ হলে। মেহবিন আদরকে বলল মিশুকে পুরো বাড়ি ঘুরিয়ে দেখাতে সাথে মিহিরকে ও পাঠালো। ওরা চলে গেলে মেহবিন আছিয়া খাতুনের কাছে গেল আর বলল,,
“যে মানুষটাকে নিজের নাতবউ হিসেবে মেনে নিতে পারেন নি। তার জন্য এতোক্ষণ অপেক্ষা করলেন?”
আছিয়া খাতুন বললেন,,
“খোঁচা দিতাছো?”
“না তো সত্যি কথা বলছি।”
“বেয়াদব একটা।”
“শুধু আপনার কাছে।”
মেহবিনের কথায় আছিয়া খাতুন মেহবিনের দিকে তাকালেন। মেহবিন মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। আছিয়া খাতুন চোখ নামিয়ে বললেন,,
“তা আজকাল থাকো কোথায়? এ বাড়িতে এসে জানলাম তুমি নাকি কোন সরকারি হাসপাতালে ডাক্তারি করো?
“এতদিন খোঁজ না দিয়ে হঠাৎ আমার খোঁজ করছেন কেন?”
“তুমি বাড়ির বউ খোঁজ নেওয়া লাগবো না।”
“বাড়ির বউ তো তখন হবো। যখন আমি আপনার নাতির বউ হয়ে ঐ বাড়িতে যেতে পারবো।”
আছিয়া খাতুন আর কিছু বললেন না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। তা দেখে মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“তা কেমন আছেন আপনি?”
“ভালো!”
“শুধু ভালো নাকি অনেক ভালো?”
“এই তুমি কি আমার সাথে মশকরা করতেছো?”
“দাদি শাশুড়ি আপনি আমার করতেই পারি।”
“তোমারে আমি ভালো মনে করছিলাম কিন্তু দিনকে দিন তুমি বেয়াদব হয়তেছো।”
“হ খালি আপনার জন্য।”
“তুমি আমারে ভেঙাইতেছো?”
“হ !”
তখন আছিয়া খাতুন জোরে বললেন,,
“ঐ মুখর তোর বউরে সামলা। নাইলে কিন্তু তোর বউয়ের খবর আছে কইয়া দিলাম আমারে তোর বউ ভেঙায়।”
হুট করে আছিয়া খাতুনের এমন কথায় সবাই অবাক হয়ে তার দিকে তাকায়। এতোক্ষণ মেহবিন আর আছিয়া খাতুন সবার দূরে সোফায় বসে কথা বলছিল। ওদের কে কেউ ডিস্টার্ব করে নি। মেহবিন আছিয়া খাতুনের কথায় জোরে হেঁসে উঠলো তা দেখে সবাই আরেকদফা অবাক। মেহবিনের হাঁসি দেখে আছিয়া খাতুন রেগে বলল,,
“ঐ মেহু হাসতেছিস কেন? তুই খালি একবার বাড়ি আয় তোর হাঁসি কেমনে বাইর হয় আমিও দেখুম।”
তখন মেহবিন হেঁসে বলল,,
“হ আমিও দেখুম।”
আছিয়া খাতুন মিছে রাগ দেখিয়ে ওখান থেকে চলে গেলেন। আর ছেলের কাছে গিয়ে বললেন এখনই সে চলে যেতে চাচ্ছে। তা দেখে সবাই মুখ টিপে হাসলো। তখন মুখর আর নাফিয়া মেহবিনের কাছে এলো। নাফিয়া বলল,,
“এখানে কি হয়েছিল?”
মেহবিন হেঁসে বলল,,
“তেমন কিছু না তোমার দাদিজানকে একটু জ্বালাচ্ছিলাম।”
মুখর বলল,,
“বেশ হয়েছে বুড়ি খালি আমাদের জ্বালাবে নাকি আমরাও একটু জ্বালাই।”
“এটা কি রকম কথা পাঞ্জাবিওয়ালা।”
নাফিয়া ওদের রেখে চলে গেল। এখন বাড়ি যাবে সবাই তাই ওদেরকে একটুর জন্য হলেও একা ছেড়ে দিল। নাফিয়া যেতেই মুখর বলল,,
‘তা দাদি শাশুড়ি কে কি বলে জ্বালানো হচ্ছিল শুনি।”
মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,
‘সেটা আমার আর তার ব্যাপার আপনাকে কেন বলবো?”
‘বলবে না কেন?”
“আমার ইচ্ছে তাই ।”
‘তুমি এমন কেন?”
‘কেমন?”
‘একটা জালিম!”
‘ভালো!”
মুখর বুঝতে পারলো এখানে বলে লাভ নেই তাই ও প্রসঙ্গ বদলে বলল,,
“বিহঙ্গিনী তোমায় আজকে অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।”
“আপনাকেও অনেক সুন্দর লাগছে মাশাআল্লাহ।”
“আজ আমি মামাশ্বশুর বাবা থেকে যাই আমার বউয়ের কাছে।”
“আপনার দাদিজান যদি পারমিশন দেয় তাহলে আমার কোন আপত্তি নেই।”
“তার মানে তুমি গ্ৰীন কার্ড দিচ্ছো?”
“আজ আমি ফুলের সাথে থাকবো।”
“এটা কেমন কথা আপত্তি ও করছো না আবার বুঝিয়েও দিচ্ছো থাকা যাবে না।”
মেহবিন মুচকি হাসলো আর বলল,,
“বুদ্ধিমানদের ইশারাই যথেষ্ট।”
মুখর বেচারা একটু ইনোসেন্ট ফেস করে বলল,,
“আমি বুদ্ধিমান না আমি ওতশত বুঝি না আমার বউ থাকতে বলেছে মানে সেটাই অন্য কথা দ্বারা কি বুঝিয়েছে আমি বুঝি নি।”
“তারমানে আপনি বোকা।”
মেহবিনের কথা শুনে মুখর ওর দিকে হা করে তাকিয়ে রইল। তারপর হেঁসে বলল,,
“আমি যদি বোকা হই তাহলে তুমি আমার বউ বোকী।”
বোকী শুনে মেহবিন হাঁসি থামিয়ে তা দিল তা দেখে মুখর আরো জোরে হেঁসে উঠলো। মেহবিন বলল,,
“বোকী এলো কোথা থেকে?আজ আপনার থেকেই প্রথম শুনলাম আর এটার মানেই বা কি?
“বোকার ফিমেল বোকী রাখলাম আমি। এবার কোথায় যাবে শুনি? সবসময় আমাকে কথার জালে ফাসাও আজ আমি ফাসালাম।”
“ফাসালেন কোথায় শুনি উল্টো নিজে নিজের বোকামি প্রকাশ করলেন। অন্যকে ফাঁসাতে হলেও বুদ্ধি দিয়ে ফাঁসাতে হয়। নিজের মন মতো অযৌক্তিক কিছু বললেই হলো নাকি।”
“এবার কিন্তু আমি দাদির কাছে বিচার দেব বলে দিলাম।”
“দেন না তাতে আমার কি? আপনার দাদিকে দেখে আমি ভয় পাই নাকি।”
মুখর কিছু বললো না। হুট করেই মুখর মেহবিনের দিকে তাকিয়ে হেঁসে উঠলো তা দেখে মেহবিন ও হাসলো। মুখর বলল,,
“তোমার সাথে ঝগড়া করেও আলাদা শান্তি আছে। সময়ের ব্যবধানে সবসময় একজন ব্যক্তিত্বসম্পূর্ন মানুষ হতে গিয়ে নিজের বাচ্চামো কে হাড়িয়ে ফেলেছিলাম। তোমার আগমনের মাধ্যমে আবার পূর্নজ্জিবীত করেছি।আর সেটা শুধুমাত্র তোমার কাছেই প্রকাশ পায়। আর তুমিও সেই মানুষ টাকে খুব যত্ন করে সামলে নাও। সবকিছুর জন্য শুকরিয়া তোমাকে আমার বাচ্চামোর সঙ্গী সবথেকে আমার উত্তম জীবনসঙ্গী আমার বিহঙ্গিনী।”
মেহবিন কিছু বললো না মুচকি হাসলো। সবাই তৈরি বাড়ি যাওয়ার জন্য মুখরের পরিবার সবার থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেল। তখন মিহির ও নিচে এসেছিল আদরের রুমে মিশু আর আদরকে রেখে এসেছে। সবাইকে ফ্রেশ হতে বলে আদরের রুমে যায় ওখানে গিয়ে দেখতে পায় দুজন বালিশ নিয়ে মারামারি করছে। মেহবিন হেঁসে বলল,,
“এখানে কিসের যুদ্ধ চলছে শুনি ?”
মেহবিনের আওয়াজ পেয়ে দু’জনেই থেমে যায়। আদর বলল,,
“আমরা তো যুদ্ধ করছি না। আমরা এমনিই মজা করছি।”
“ওহ আচ্ছা ফুল চলো ফ্রেশ হয়ে নাও।”
মেহবিনের কথা শুনে মিশু মাথায় হাত দিয়ে বলল,,
“আমার তো কোন ড্রেসই আনিনি ফুল। এখন কি পরবো আমি।”
তখন মাইশা একটা জামার সেট এনে বলল,,
“টেনশন করো না মিশু আমার একটা পরে নাও।”
মিশু আর মাইশা সমবয়সী বডিও সেম। তাই সমস্যা হবে না। মেহবিন বলল,,
“প্রবলেম সল্ভ এখন চলো। আর আদর তুমিও ফ্রেশ হয়ে নাও।”
মেহবিন মিশুকে নিয়ে চলে গেল। ফ্রেশ হতে সাহায্য করলো। ও বেরিয়ে দেখল আদর চকলেট কেক নিয়ে বসে আছে। মিশু যেতেই মেহবিন ওটা কেটে সার্ভ মিশুকে আর আদরকে দিল নিজেও নিল। এরপর হাওয়ার মিঠাই আর আইসক্রিম নিয়ে এলো । আর ফুচকা বলল কাল বাড়ি যাওয়ার সময় খাওয়াবে মিশু কিছুই বললো না সব খেয়ে দেয়ে মেহবিনের কোলে শুয়ে পড়লো। মেহবিন মিশুর মাথায় হাত বুলিয়ে দিল ও কিছুক্ষণের মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়লো। মেহবিন ওকে ভালো করে শুয়িয়ে দিল। ওর ঘুম আসছে না তাই ও ছাদে গেল। ওখানে গিয়ে ওর মামাকে দেখতে পেল দোলনায় বসে আছে। হয়তো তার ও ঘুম আসছে না। ও হেঁটে এগিয়ে গেল আর পাশে দাঁড়িয়ে বলল,,
“এখনো ঘুমাওনি কেন মামা?”
পাশে তাকাতেই মেহবিন কে দেখে বলল,,
“তুই ও তো ঘুমাস নি। আয় বোস।
মেহবিন মেহরব চৌধুরীর পাশে বসলো। মেহবিন বলল,,
“কি এতো ভাবছো? যা তোমায় ঘুমাতে দিচ্ছে না।”
মেহরব চৌধুরী বললেন,,
“আজ মেহের থাকলে তোর জীবনটা এমন হতো না।”
মেহবিন একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,,
“হয়তো বা!”
‘মিস করিস?”
“কাকে? মাকে না বাবাকে নাকি ভাইবোন কে নাকি এতো সুন্দর পরিবার কে?”
এটুকু বলে মেহবিন থামলো মেহরব চৌধুরী মেহবিনের দিকে তাকালেন। তখন মেহবিন আবার বলল,,
“মা তো নেই দুনিয়াতে তাই তাকে মিস করাই যেতে পারে। কিন্তু আর বাকি মানুষজন তাদের কি আমার মিস করা উচিৎ মামা?
মেহরব চৌধুরী এবার অসহায় চোখে মেহবিনের তাকালেন আর বললেন,,
‘মেহু!”
‘মাঝে মাঝে মায়ের প্রতি ভিশন অভিমান হয় আমার। সে নিজে তো আমায় ছেড়ে গেলোই সেই সাথে সবাইকেই আমার আড়াল করে দিয়ে গেল।”
‘আর তোর বাবা! তার প্রতি কখনো কি অভিমান হয় না।”
মেহবিন মুচকি হেঁসে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলল,,
‘না তার ওপর অভিমান নেই আমার। আছে এক আকাশ অভিযোগ। সদ্য মা হারা মেয়েটাকে কি সে নিজের কাছে আগলে রাখতে পারতো না।”
~চলবে,,