কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_২৯ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
608

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_২৯
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

“অনেক রাত হয়েছে মামা ঘুমিয়ে পড়ো এখন।”

মেহবিনের কথায় মেহরব চৌধুরী মেহবিনের দিকে তাকিয়ে বললেন,,

“আজ বোধহয় ঘুমটা হবে না আমার।”

“আজাইরা কথা রাখো তো। যাও ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। ঘরে গিয়ে দেখবে তোমার জন্য মামীও না ঘুমিয়ে আছে।”

“হ্যা তা তো থাকবেই। তবুও উঠে এসে বলবে না চলো ঘুম আসছে না যখন তাহলে চন্দ্রবিলাশ করি।”

মেহরব চৌধুরীর কথায় মেহবিন হাসলো। ও বুঝতে পারল ওর মামা ওর মুড ঠিক করতে এগুলো বলছে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“তাহলে মামীকে ডেকে নিয়ে আসি?”

“তোর মামী যে নিরামিষ মহিলা। তোর মামী আবার চন্দ্রবিলাশ করবে।”

“কেন তোমার মতো বুড়ো বয়সে এসে নির্লজ্জ হতে বলছো নাকি?”

পেছনে কারো কথায় দুজনেই পেছনে তাকায়। মেহরব চৌধুরী নিজের স্ত্রীকে দেখে বললেন,,

“এই মেহু এটা সত্যি তোর মামী তো নাকি কোন জ্বীন তাড়াতাড়ি আয়াতুল কুরসি পাঠ কর।”

মেহরব চৌধুরী সত্যি সত্যি আয়াতুল কুরসি পাঠ করলেন আর বললেন,,

“আরে তুমি তো দেখি আমার বউ কোন জ্বীন না। আয়াতুল কুরসি পাঠ করছি যেহেতু গায়েব হও নাই তার মানে এইটা সত্যি সত্যি তুমি।”

“এখন আর একটা কথা বললে ছাদ থেকে ফেলে দেব বলে দিলাম। রাত বেরাতে আমাকে জ্বীন বলা হচ্ছে।”

মেহরব চৌধুরী তার মিসেস এর কাছে গিয়ে বললেন,,

“আরে রাগ করো কেনো? এটা তো সত্যি বেশি রাত করে ঘরের বাইরে বা ছাদে থাকতে নেই। রাতের অন্ধকারে জ্বীনদের আনাগোনা শুরু হয়। তাই ছাদে এসেছো একবার পরখ করে নিলাম। যদিও তিন কুল পরেই এসেছিলাম তবুও সাবধানের মার নেই।”

“হয়েছে এখন ঘরে যাবে নাকি জ্বীনদের সাথে চন্দ্রবিলাশ করবে?”

“বউ থাকতে আবার জ্বীনদের লাগে নাকি। তাছাড়া বউয়ের সাথে সময় কাটানো ভালো কথা।”

মেহবিন এতক্ষন তার মামামামির কথোপকথন শুনে হাসছিল এখন একটু কাশি দিয়ে বলল,,

“এই যে লাভ বার্ডস এখানে কিন্তু বাচ্চা পুলাপাইন আছে।”

তখন মেহবিনের মামি বললেন,,

“এই যে মেহু তুই যদি বাচ্চা পুলাপাইন হস। তাহলে আদর এখনো মায়ের পেটে আছে।”

মেহবিন হেঁসে বলল,,

“তা ঠিক যাই হোক তোমরা চন্দ্রবিলাশ করো আমি আসছি।”

“আরে তুই ও বোস না আমরা আড্ডা দিই।”

“বিরিয়ানি তে এলাচি হয়ে লাভ নেই।”

“তুই কি কালকেই চলে যাবি?’

“হ্যা সকালের খাবারের পর!”

“আরে কাল না তোর বন্ধ সকালে গিয়ে কি করবি একেবারে রাতে যাস মিহির পৌঁছে দিয়ে আসবে।”

মিহিরের কথা শুনে মেহবিনের মিশুর কথা মনে পড়লো। তাই ও বলল,

“তোমরা কোন অনুকে চেনো? আই মিন অনুভব।”

দুজন একসাথেই বলল,,

“অনুভব কে?কই না তো কেন?”

মেহবিন বলল,,

” না তেমন কিছু না এমনিই। আচ্ছা তোমরা থাকো আমি গেলাম।”

বলেই মেহবিন নিচে এলো। নিজের রুমে ঢুকতেই দেখল মিশু মাথার বালিশ মাথায় না দিয়ে তা জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। মেহবিন গিয়ে বালিশ ঠিক করে মিশুর মাথার নিচে দিয়ে দিল। আর পাশেই শুয়ে পড়লো তখন ও মিশুর থেকে শুনতে পেল,,

“অনু! অনু! আমি তোমায় খুব ভালোবাসি।”

এটুকু শুনেই মেহবিন মিশুর দিকে তাকালো নিঃসন্দেহে মিশু তার অনুকে অনেক ভালোবাসে। নাহলে কেউ অন্যকারো চোখের মাঝে নিজের অনুকে খুঁজে। নাকি সবাইকে ভুলে গিয়ে শুধু তার অনুকেই মনে রাখে। ও আর না ভেবে শুয়ে পড়লো। তার কিছুক্ষণ পরেই মিশু মেহবিন কে কোলবালিশ বানিয়ে জড়িয়ে ধরলো মেহবিন চেয়েও কিছু করতে পারলো না। একটা সময় পর সেও ঘুমিয়ে পড়লো।

________________

“এই ফুলের মামা তো ভাই তুমি এখানে কি করো?”

মিহির সকাল বেলা ছাদের ফুল গাছ গুলো তে পানি দিচ্ছিল। ঘুম থেকে উঠে মেহবিন কে না পেয়ে সোজা ছাদে চলে আসে । কাল আদর ওকে দেখিয়ে গিয়েছিল তাই অসুবিধা হয় নি। মিহির মিশুর দিকে তাকিয়ে দেখলো বিছানা থেকে নেমে সোজা এখানে এসেছে ও বুঝতে পারল। চোখ দু’টো ফোলা চুলগুলো এলোমেলো। ওরনাটা ঠিকঠাক আছে তবুও এভাবে আসাটা উচিত নয়। মিহির অন্য দিকে তাকিয়ে বলল,,

“দেখতেই তো পাচ্ছেন ফুলগাছে পানি দিচ্ছি। তা সকাল সকাল আপনি এখানে কেন? এভাবে ফ্রেশ না হয়ে ছাদে আসা ঠিক হয় নি আপনার। আর যেখানে একজন ছেলে আছে সেখানে একা আসা আরো উচিত হয় নি আপনার।”

“কেন একা আসলে কি তুমি খেয়ে ফেলবে নাকি। তাছাড়া আমি তো ফুলকে খুঁজতে এসেছি। আমি একা একা ফ্রেশ হতে পারি নাকি মাইশার জামা নষ্ট হয়ে যাবে না।”

মিহির মিশুর কথার মানে বুঝতে পারলো কিন্তু মিশু যে ওর কথার মানে বুঝেনি এটাও বুঝতে পারলো। তাই ও বলল,,

“ঠিক আছে আপনি নিচে যান আপনার ফুলকে পেয়ে যাবেন?”

“আচ্ছা। তবে একটা কথা?”

“কি?”

“তুমি আমার থেকে বড় হয়েও আপনি বলছো কেন? আমার কেমন যেন লাগে তুমি করে বলতে পারো না।”

“আপনার অসুবিধা না হলে তুমি করেই বলবো।”

“তুমি করেই বলবে । তুমি করে বলো এখন?”

“তুমি।”

“হুম ঠিক আছে। তবে আরেকটা কথা?”

“তুমি তো বলেছিলে একটা কথা।”

“আছে আরেকটা শুনোই না।”

“কি?”

“সবাইকেই দেখলাম কিন্তু আদরের মা মানে তোমার বউকে তো দেখলাম না।”

“আদরের মা আদরের তিন বছর থাকতে মারা গেছে।”

এ কথা শুনে মিশু একটু নরম স্বরে বলল,,

“ওহ আচ্ছা।”

তখনি মেহবিন এলো দৌড়ে বোঝায় যাচ্ছে মিশুকে না পেয়ে একটু চিন্তিত হয়ে পরেছিল মিশুকে পেতেই ও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। তারপর মিশুর হাত ধরে নিচে নিয়ে গেল। ফ্রেশ করিয়ে দিল তারপর নিচে গেল সবাই ব্রেকফাস্ট করবে। মিশু বসতেই দেখতে পেল সব তার ফ্রেবারিট খাবার। সে খুশি হয়ে গেল তখন আদর বলল,,

“এই যে তোমাকে আমি কি বলে ডাকবো।’

আদরের কথায় মিশু আদরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“আমার নাম মিশুমনি। তুমি আমায় মিশুমনি বলেই ডাকবে।”

‘বড়দের নাম ধরে ডাকতে হয় না। দাদু বলেছে আমায়।”

তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

“আদর তুমি মিশুকে মনি বলেই ডেকো।”

‘আচ্ছা।”

সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করলো খাওয়ার শেষে মেহবিন মিশুকে একটা ওষুধ দিল। মিশু প্রথমে ওষুধ দেখে অবাক হলেও মেহবিনের দিকে তাকিয়ে খেয়ে নিল। সবাই মিলে একটু গল্প করবে তারপর মেহবিন রা রওনা দেবে। সবাই বসলো সোফায় কিন্তু মিশুর নজর বারবার মিহিরের চোখের দিকেই যাচ্ছে। ও চেয়েও ফেরাতে পারছে না।কাল রাতে মেহবিন একটা গোলজামা পায়জামা ওরনা আর হিজাব অর্ডার করেছিল মিশুর জন্য। সেগুলো আসলেই মেহবিন বলল রেডি হতে নতুন জামা পেয়ে মিশুর খুশি আর দেখে কে। এগারোটার দিকে ওরা রওনা হলো মেহরব চৌধুরী মিহির কে পাঠাতে চাইলেও মেহবিন বলল দরকার নেই। ও নিজেই গাড়ি চালিয়ে যাবে আর মিশুকে ঘুরাবে। বিকেল চারটায় যেন মেহরব চৌধুরী একজন ড্রাইভার পাঠিয়ে দেয় গাড়ি আনানোর জন্য। প্রথমে সম্মতি দিতে না চাইলেও পরে দেয়। আদর মিশুকে এক বক্স চকলেট গিফট করে। মিহির একটা বড় মাঝারি সাইজের টেডিবিয়ার দেয় যা কিনা মিশুর বুক পর্যন্ত। টেডিবিয়ার আর চকলেট পেয়ে মিশু খুশিতে লাফিয়ে উঠে। টেডিবিয়ার টা ওর খুব পছন্দ হয়েছে। মাইশা একটা হিজাব আরোকিছু জামা গিফট করে আর মেহরব চৌধুরী ও তার মিসেস একটা স্বর্নের চেইন গিফট করে। স্বর্নের চেইন গিফট পেয়ে মিশু প্রথমে নিতে চায় না পরে মেহবিনের আর মেহরব চৌধুরীর কথায় নেয়। মেহবিন নিজে হেঁসে চেইন পরিয়ে দেয়। এরপর বেরিয়ে পরে বাড়ির উদ্দেশ্যে। একটু ঘুরাঘুরি করে ফুচকা খায় ওরা এরপর দুপুর আড়াইটার দিকে চেয়ারম্যান বাড়িতে পৌঁছায়। গাড়ি থেকে নামার আগে মেহবিন বলল,,

“ফুল তোমায় কি বলেছি তো মনে থাকবে?”

“হুম মনে থাকবে। এখন তুমি চকলেট আর শপিং ব্যাগগুলো নিয়ে আসো। আমি টেডিকে নিয়ে যাচ্ছি।”

“হুম!”

মেহবিন সব নিয়ে বের হলো ও বাড়িতে ঢুকে দেখলো এখনো আহমেদ পরিবার যায় নি। তবে আজকে চেয়ারম্যান বাড়ির ও সবাই বাড়িতেই। মিশুর হাতে টেডি দেখে সকলেই অবাক হলো। মেহবিন শেখ শাহনাওয়াজ এর দিকে এগিয়ে গিয়ে বলল,,

“এই যে আপনার মেয়েকে সহি সালামতে আপনার কাছে দিয়ে গেলাম। আর এগুলো ওর উপহার! আমায় বাড়ি যেতে হবে আসছি।

বলেই মেহবিন ওগুলো টেবিলে রাখলো। তখন শেখ শাহনাওয়াজ বললেন,,

“এতদূর থেকে জার্নি করে এসেছেন কিছু খেয়ে রেস্ট নিয়ে তারপর যান।”

তখন শেখ শাহেনশাহ বললেন,,

“আমার নাতিনের শ্বশুরবাড়ির সাথে পরিচয় হও।”

মেহবিন বুঝতে পারলো তিনি ওকে নিচু দেখানোর একটা চেষ্টায় আছে। মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

“সেদিন যেহেতু মামনিকে জড়িয়ে ধরেছিলাম তখনই আপনাদের মনে প্রশ্ন তৈরি হয়েছিল। আমার মনে হয় না সেই প্রশ্ন আপনারা আমি আসার অপেক্ষায় আর করেন নি। নিশ্চয়ই আমার ব্যাপারে জেনে গেছেন। তাই পুরোনো কাসুন্দি ঘেটে কি লাভ।”

মেহবিনের মুচকি হেসে কথার জবাবে সবাই এক প্রকার অবাক হলো। তখন শিলা বলল,,

“তা শুনলাম ডাক্তার হয়েছিস এতোদিন ছিলিস কোথায়? তাছাড়া তোর বেশভুষায় বুঝলাম বেশ উন্নতি হয়েছে তোর।

“তোমাদের দেখা পেয়ে বুঝতে পারলাম সত্যিই দুনিয়াটা গোল।”

তখন কুদ্দুস বাড়ি বুকে বলল,,

“বাইরে নতুন গাড়ি কার? আরবাজ ভাইজান আইছে গাড়ি নিয়া ঢুকতে পারতেছে না।”

তখন মেহবিন বলল,,

“চেয়ারম্যান সাহেব আমায় যেতে হবে। আর গাড়িটাও আমারই এখন বাড়ি যাবো বলে ভালোমতো পার্ক করা হয় নি।”

তারপর মেহবিন সাবিনা আহমেদ এর দিকে তাকিয়ে বলল,,

“মামনি যদি তোমরা থাকো তাহলে বিকেলে আমি যেখানে থাকি সেখানে যেও। যে কাউকে বললেই দেখিয়ে দেবে।”

মেহবিন বেরিয়ে এল। গাড়ির সামনে আসতেই দেখলো আরবাজ দাঁড়িয়ে আছে। আরবাজ মেহবিন কে দেখে বলল,,

“কাল কেমন কাটলো?

মেহবিন মুচকি হেসে বলল,,

‘আপনিও না হয় আমার সাথে গিয়ে দেখতেন কেমন কেটেছে?”

‘আমি যেতে পারলে তো যেতামই।”

‘চাইলেই যেতে পারতেন শুধু যাওয়ার মন থাকলেই হতো।”

‘তো মামাবাড়িতে গিয়ে মামার সাথে সময় কাটিয়েছেন নিশ্চয়ই।”

“হুম তা তো কাটিয়েছিই। আমার মামা মন্ত্রী হলেও নিজের পরিবারের ওপর দায়িত্ববোধ ভুলেন না।”

মেহবিনের কথায় আরবাজ আর সে বিষয়ে কিছু বললো না। বলল,,

“গাড়িটা কি আপনার ?”

‘না মামার।”

“একেবারের জন্য এনেছেন?’

“না বিকেলে মামার ড্রাইভার আসবে।”

“ওহ আচ্ছা!”

বলেই মেহবিন গাড়ি তে উঠে বসলো আর বাড়ি চলে গেল। আরবাজ ভেতরে যেতেই মিশু দৌড়ে এসে ওকে সব দেখাতে লাগল। আরবাজ এসেছে শুনে ও আর ওপরে যায় নি। মিশু এটাও বলল ওকে মেহবিন যে বাড়িতে নিয়ে গেছিল সে বাড়ি ওদের বাড়ির থেকেও বড়। সবাই সব শুনে অবাক হলো তারপর মিশু কাউকে কিছু বলতে না দিয়ে ওপরে চলে গেল। একে বলে কিছু না বলেও মুখের ওপর জবাব দেওয়া।

_______________

পাকা রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে মেহবিন নেমে দাড়াতেই একজন লোক এসে বলল,,

“আপনার এতো দেরি হলো কেন ম্যাম? আজ তো দুপুর দুইটায় আপনার কাজ ছিল একটা হাসপাতালে।”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ প্রথমেই ছোট আর দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত। কেউ মনে খারাপ কইরেন না সেই জন্য রাত নয়টার দিকে বোনাস পার্ট আসবে। সেই খুশিতে সবাই বড় করে মন্তব্য করে ফেলুন তো দেখি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here