#ডুবেছি_আমি_তোমাতে
#Aiza_islam_Hayati
#পর্ব_২১
আহনাভ শুর টেনে বলে,”বাবাহ হায়া পাখির এত অভিমান তুমি থেকে আপনি তে চলে গিয়েছে।আচ্ছা কীভাবে এই অভিমানী মন গলাই বলো তো হায়া পাখি?”
লায়ানা অন্য দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে থাকে। আহনাভ নিঃশব্দে হেসে এগিয়ে যায়।লায়ানার ঠিক পিছনে দাড়িয়ে আহনাভ হুট করে লায়ানার বেঁধে রাখা চুল উন্মুক্ত করে দেয়।লায়ানা আহনাভের দিকে ফিরে গাল ফুলিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”আহনাভ তুমি এমন কেনো?আমার বাঁধা চুল কেনো খুলে দিলে বলো তো?ব’জ্জা’ত লোক একটা।”
আহনাভ হো হো করে হেঁসে উঠে।লায়ানা আহনাভের প্রাণ খোলা হাঁসির দিকে তাকিয়ে থাকে,তার ঠোঁটের কোণেও অজান্তে হাঁসির রেখা ফুটে উঠে।
আহনাভ হাঁসি থামিয়ে বলে,”হায়া পাখি তোমাকে গাল ফুলিয়ে রাখলে দেখতে এমন লাগে যে,আমার তো মন চায় ধরে খেয়ে ফেলি।”
লায়ানার ঠোঁটের কোণের হাঁসি উড়ে যায়।লায়ানা চরম বিরক্তি নিয়ে বলে,”তোমার মুখে এত লাগাম ছাড়া কথা কোন জায়গা থেকে টপকে পড়ে বলো তো?আমি আগে কিছু বললে তো একেবারে নিষ্পাপ সেজে থাকতে।”
আহনাভ দুষ্টু হেঁসে বলে,”আমি তো আগে নিশ্পাপ ছিলাম তারপর আমার জীবনে হায়া পাখি এসে আমাকে লাগামহীন পুরুষ বানিয়ে ফেললো।দেখো আমার কিন্তু কোন দোষ নেই।”
লায়ানা চরম বিস্ময় নিয়ে বলে,”আজব তোমার লাগামহীন হওয়ায় আমার সব দোষ?ঐযে বলে না সব দোষ নন্দঘোষ।”
“অবশ্যই সব দোষ হায়া ঘোষের।”
“সবাই ঠিকই বলে নায়করা ক্যারেক্টার ঢিলা হয়। আহ আল্লাহ সব রেখে একটা ক্যারেক্টার ঢিলাকে ভালোবাসলাম কেউ কচু গাছের সাথে ঝুলে যা আমি মরে যাই।”বলেই লায়ানা মিথ্যে কান্না জুড়ে দেয়।
আহনাভ অবাক হয়ে বলে,” হায়া পাখি তুমি তো আমার থেকেও শত গুন ভালো অ্যাক্টিং জানো!যাইহোক তুমি এই গাঁজাখুরি কথা অফ দাও।”আহনাভ থেমে গিয়ে আবার বলে,”আর এইভাবে আমার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিলে বা আমাকে দেখেও না দেখার ভান করলে দেখে নিও কী করি তোমাকে,আজ তো তেমন কিছুই করলাম না।”
“কী করবে শুনি কিছুই করতে পারবে না আমার।”
“আচ্ছা দাড়াও দেখাচ্ছি।” বলতে দেরি লায়ানার এক ভো দৌড়ে পালিয়ে যেতে দেরি নেই।
আহনাভ লায়ানার যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে হেঁসে বলে,”পা’গ’লী একটা।”
.
লায়ানা বাড়ির ফিতরে গিয়ে দেখে সকলে এক সাথে খেতে বসেছে। ইয়াশা লায়ানাকে দেখে বলে,”কীরে কোথায় ছিলি তুই?তাড়াতাড়ি বস খেতে।”
লায়ানা চুপচাপ গিয়ে মুগ্ধতার আরেক পাশে খালি চেয়ারটিতে বসে যায়।লায়ানা, আহির ও মুগ্ধতাকে একবার দেখে নিয়ে মুগ্ধতাকে ফিসফিস করে বলে,”বনু ফাটাফাটি লাগছে তোদের একসাথে।”
মুগ্ধতার গলায় খাবার আটকে যাওয়ার মতো মুহূর্ত তৈরী হয়ে গেলো।লায়ানা পানি নিবে তার আগেই আহির পাশ থেকে পানির গ্লাস নিয়ে মুগ্ধতাকে পানি খাইয়ে দেয়।লায়ানা হেঁসে বলে উঠে,”আয়হায়।”
আহির সকলের দিকে একবার তাকিয়ে লায়ানার দিকে তাকায়।লায়ানা ঠোঁটের কোণে দুষ্টু হাঁসি,লায়ানা ভ্রু নাচায় তা দেখে আহিরের কাশি উঠে যায়।
আহনাভ চেয়ার টেনে বসে বলে,”আরেহ ভাই পানি খা।এমন যক্ষা কবে হলোরে তোর?”আহনাভ পানি এগিয়ে দিলে আহির ঢক ঢক করে পানি শেষ করে ফেলে।টেবিলে বসে থাকা সবাই নিজেদের মত খাচ্ছে।খাচ্ছে কম সকলে ঠোঁট টিপে হাসছে।
লায়ানার তো মন চাইছে এখন ভুবন কাঁপিয়ে হাসতে।কিন্তু নাহ বড়রা বসে আছে এইভাবে হাসা যাবে না দরকার পড়লে খেয়ে দেয়ে নিজের ঘরে গিয়ে দরজা আটকিয়ে ভুবন কাঁপানো হাসিতে মত্ত হয়ে যাওয়া যাবে।
.
খাবার খাওয়া শেষে বড়রা আড্ডা জমালো। আহনাভের মা জেরিন ইয়াশাকে বলে উঠলো,”ওদের আকদ তো আজ আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাবেই শেষ হলো আপা।এখন আমরা ভাবছি পরশু এক সপ্তাহর রাঙামাটি ট্যুরে যাবো তো আপনারা যদি অনুমতি দিতেন আমাদের সাথে মুগ্ধতা আর লায়ানাকে নিয়ে যেতাম।”
ইয়াশা সম্মতি জানায়।
.
লায়ানা তো মুগ্ধতা,আহির ও আহনাভ সহ সবাইকে নিয়ে নিজের ঘরে গল্পের আসর বসিয়েছে।মাঝ থেকে আলিযা বলে উঠে,”চলো আমরা সবাই মিলে পিলো গেম খেলি।”
ইজাজ বলে উঠে,”তাহলে গান বাজানোর দায়িত্ব কে নিবে?”
সাহিরাহ নিজের ফোন বের করে বলে,”আমি আমি।”
লায়ানা বিছানা থেকে নেমে সোফার থেকে ছোট বালিশ নিয়ে এসে মুগ্ধতার পাশে বসে পড়ে।সাহিরাহ গান চালু করে বলে,”এইযে আমি চোখ বন্ধ করছি তোমরা শুরু করো।”
ছোট বালিশটা একজন থেকে আরেকজনের হাতে বারবার আদান প্রদান হতে লাগলো।হুট করে গান বন্ধ করে দিল সাহিরাহ আর সকলে লায়ানার দিকে তাকিয়ে ‘ ওহ ‘ বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
আফ্রা এক লাফ দিয়ে বলে উঠে,”আপু প্লিজ একটা ড্যান্স করো।”
লায়ানার চোখ রসগোল্লার আকার ধারণ করে, সবসময় কী বেশরম হওয়া যায়?মাঝে মাঝে আমাকেও যে শরম চেপে ধরে কেউ বুঝে না কেনো ?কিভাবে নাচি আমি এত গুলো মানুষের সামনে?লায়ানা তার ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে মুগ্ধতার কণ্ঠে।মুগ্ধতা বলে,”নাচ লাগবে না আফ্রা।লায়ানা বরং একটা গান ধরুক।আমার বোনটা ভালই গাইতে পারে।”
লায়ানা মুচকি হাসলো।সোয়াদ বলে উঠলো,”ঠিক বলেছে আমাদের হায়াতি খুব ভালো গায়।মাঝে মাঝে আমি হসপিটালে বোরিং হলে হায়াতি কে বলতে দেরি সে তার গিটার নিয়ে হাজির।আর আমার এই ছোট বোনের গান শুনে মন টাও ভালো হয়ে যেত আমার।”
.
গল্পের মাঝেই মুগ্ধতা সোয়াদের সাথে সকলের পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল।
.
আফ্রা ঘাড় ঘুরিয়ে ঘরের এক কোণায় একটি কালো রঙের গিটার দেখতে পেলো। ছুটে গিয়ে গিটারটি নিয়ে আসলো।গিটারটি লায়ানার হাতে দিয়ে বলে,” আপু তাহলে তুমি গানটাই ধরো।”
লায়ানা হাসলো অতঃপর গিটারে টুং টাং সুর তুলে গান ধরলো,
~ভুলভাল ভালোবাসি
কান্নায় কাছে আসি
ঘৃণা হয়ে চলে যাই, থাকি না
কথা বলি একা একা
সেধে এসে খেয়ে ছ্যাঁকা
কেনো গাল দাও আবার, বুঝি না
খুব কালো কোনো কোণে
গান শোনাবো গোপনে
দেখো যেন আর কেউ শোনে না
গান গেয়ে চলে যাবো
বদনাম হয়ে যাবো
সুনাম তোমার হবে, হোক না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবে না~
লায়ানা শেষ শুর তুলে থেমে যাবে সেই মুহূর্তে আহনাভ শুর তুলে গাওয়া শুরু করে,
~যদি তুমি ভালোবাসো
ভালো করে ভেবে এসো
খেলে ধরা কোনোখানে রবে না
আমি ছুঁয়ে দিলে পরে
অকালেই যাবে ঝরে
গলে যাবে যে বরফ গলে না
আমি গলা বেচে খাবো
কানের আশেপাশে রবো
ঠোঁটে ঠোঁটে রেখে কথা হবে না
কারো একদিন হবো
কারো এক রাত হব
এর বেশি কারো রুচি হবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবে না
আমার এই বাজে স্বভাব
কোনোদিন যাবে না~
আহনাভ শেষ লাইন গেয়ে থেমে গেলে লায়ানা ঠোঁট টিপে হেঁসে গিটারের শেষ সুর তুলে।আফ্রা আর আলিযা একসাথে বলে উঠে,”ওয় হয় কী ব্রাদার বেয়াইন হতে না হতেই লাইন মারা স্টার্ট করেছো?”
আহনাভ বলে উঠে,”তো বেয়াইন কেই তো লাইন মারবো।একটা মাত্র বেয়াইন আমার।”
আফ্রা দুষ্টু হেঁসে বলে,”ভাই তুমি তো দেখি আসল রূপে ব্যাক করলে।”
“কী করবো বল একজন আমাকে এই রূপে নিজে থেকেই টেনে নিয়ে এসেছে।তাই এই রূপে তো আসতেই হতো।”
সোয়াদ বলে উঠে,”বেয়াই এইভাবে লাইন মেরে লাভ নেই আপনার বেয়াইন এর ভাইরা বসে আছে এইখানে।”
আহনাভ বুক ফুলিয়ে বলে,”এই আহনাভ কাউকে ভয় পায় না বেয়াই।”
লায়ানা মুখ ভেংচে বলে,”ওরে আমার সাহসী বলবীর রে।”
“বেয়াইন আমি তো আপনারই একমাত্র সাহসী বেয়াই।”
.
ঘড়িতে রাত এখন দশ টা দশ মিনিট।আহিরের পুরো পরিবার আরো এক ঘন্টা আগে মুগ্ধতার পরিবারকে বিদায় জানিয়ে নিজেদের বাড়ির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়েছে।
মুগ্ধতা ও লায়ানা আহানের ঘর থেকে বেরিয়ে এলো মাত্র।তিনজন মিলে এতক্ষণ যাবত রাঙামাটির মিশন এর পুরো ফাইনাল প্ল্যান রেডি করে ফেললো।
মুগ্ধতা নিজের ঘরে চলে গিয়েছে।লায়ানা নিজের ঘরের ভিতর ঢুকে দরজার নব ঘুড়িয়ে ভিতর থেকে দরজা লাগিয়ে দিল।ধীর পায়ে হেঁটে বিছনায় গা এলিয়ে দিল।ক্লান্ত চোখ দুটো বন্ধ করতেই আচমকা ফোন বেজে উঠলো।
লায়ানা চোখ মুখ কুচকে চেঁচিয়ে বলে উঠে,”কোন হা’রা’ম’জা’দা রে এই অসময়ে কল দিলো।”
লায়ানা চোখ দুটো টেনে খুলে তাকালো।ক্লান্তিতে ভরা চোখ দুটো একবার বন্ধ করায় এখন যেনো তাকাতেই ইচ্ছে করছে না।লায়ানা ফোন পাশ টেবিল থেকে নিয়ে রিসিভ করে কানের কাছে নিয়ে বিরক্তি মাখা কন্ঠে বলল,”কে বলছেন?”
“মিস কুইন তুমি বেশি দূর যেও না।অনেক মারলে আমার লোকেদের এইবার নাহয় একটু বিশ্রাম করো।বেশি বেড়ে গেলে আমি তোমাকে কী করবো তোমার ভাবনার বাহিরে।”
লায়ানা জীবনে এমন শত শত হুমকি পেয়েছে তা হোক নিজের নেক্সট ইন ইন্ডাস্ট্রি বানাতে গিয়ে আবার হোক আন্ডার গ্রাউন্ড মা’ফি’য়া হয়ে।তাই গুরুত্ব না দিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলে উঠলো,” তুমি আমার কোন শুভাকাঙ্ক্ষী বলো তো ভাই।আমি তোমার খোমা টা দেখতে চাই।আমার ঘুম হারাম করে এখন এই সো কল্ড হুমকি দিচ্ছ আমায়!আমি তো এই জীবনে কোনো নির্দোষকে মারিনি যাদের মেরেছি তারা জঘন্য পাপ করে মাথা উচু করে ঘুরে বেড়ানো একেকটা জা’নো’য়া’র বুঝলে শুভাকাঙ্ক্ষী।”
ওইপাশের মানুষটি হেঁসে বলল,”কুইন তো তোমাকে সাধেই বলি না।জীবনে এত হুমকি পেয়েও যে পিছাও নি কিন্তু এইবার তোমাকে পিছাতে হবে কুইন।আবার বলছি পিছিয়ে আসো নাহলে আমি তোমাকে ধরে ফেললে পালাতে পারবে না আমার থেকে।”
লায়ানা তার শান্ত কণ্ঠেই বলে,”দেখা যাবে।আমি কখনো পিছিয়ে আসিনি।আর রইলো নিজের দিকটা ভাবা,আরেহ শুন এই আমি কখনো নিজের প্রাণের নিশ্চয়তা নিয়ে মাঠে নামিনি,নেমেছি তোদের হারিয়ে আসার এক মনোবল নিয়ে।আমি জানি তোদের মত হিং’স্র জা’নো’য়া’র’দে’র সাথে লড়তে হলে প্রা’ণে’র ঝুঁ’কি থাকবেই।কিন্তু ভেবে রাখিস না যে হেরে যাবো। আমি কখনো তোদের মত হিং’স্র জা’নো’য়া’র’দে’র কাছে হেরে যাই নি না কখনো হারবো।তাই আমাকে হুমকি দিয়ে কোনো লাভ নেই।”
লায়ানা ফোন কানে ধরেই পাশ থেকে ট্যাব নিয়ে সাথে সাথে নাম্বারটি আহানকে পাঠিয়ে দিয়ে মেসেজে বলে দিল,” আহান এই নাম্বার টা ইমিডিয়েট ট্রেক কর।”
ফোনের ওই পাশ থেকে আবার মানুষটি বলে উঠে,”উফ কুইন তুমি এত জেদী কেনো বলতো। জেদ করোনা।নিজের সর্বনাশ নিজে ডেকে এনে ফেলছো।আর আমি চলে আসলে তোমার জীবন অ’ন্ধ’কা’রে ঢে’কে দি’বো।”
“তুই পারলে আয় আমার সামনে তারপর তোর সাথে বোঝা পড়া করবো।তোর কথা শুনে মনে হচ্ছে তুই আমাকে অনেক চিনিস ভালো করে।তো জানিস-ই তাহলে আমার সামনে আসলে তোর ওই অন্ধকার ছায়া আমাকে ঢাকার আগে আমি তোর শে’ষ দে’খে ছাড়বো।”
“ঠিক আছে তুমি যখন মানবে না তাহলে খুব শীগ্রই দেখা হবে আমাদের।” বলেই ঐপাশ থেকে ফোন কেটে দিল।
লায়ানা বিরক্তিতে ‘ চ ‘ শব্দটি করে উঠলো।
.
লায়ানা চোখের পাতা বন্ধ করলো না ছাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।হঠাৎ টুং করে শব্দ হলো।লায়ানা ফোন হাতে নিয়ে দেখে আহানের ম্যাসেজ।আহান ম্যাসেজে বলেছে,”নাম্বার টা একটা কানাডিয়ান নাম্বার।আর কিছু ট্রেক করতে পারিনি ওরা সব প্রস্তুতি নিয়েই তোকে ফোন করেছে।”
লায়ানা হিসাব মিলাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল।হুট করে বলে উঠলো,”এই সেই মেইন লিডার নয়তো?”
#copyrightalert
#চলবে।