#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪৭
___________________
দিনের প্রথম ভাগের আলো টা চোখে মুখে পড়তেই চোখ মুখ কুঁচকালো আরুহী। কানের কাছে খুব তীক্ষ্ম শব্দে লাব ডাব আওয়াজ পেতেই পিটপিট করে চোখ খুলল সে। আরুশের দিকে নজর যেতেই চোখ মুখে ছেয়ে গেলো এক রাশ মুগ্ধতা, আনমনেই বলে উঠলো,
” মাশা আল্লাহ ”
সূর্যের মিষ্টি আলোর প্রভাবে আরুশের মুখটা বেশ কিউট দেখাচ্ছে, কেমন আরুহীকে বুকে জড়িয়ে শান্তির ঘুম ঘুমাচ্ছে। আরুহীর বুকে প্রশান্তি বয়ে গেলো। এই পাগল লোকটা যখন জানতে পারবে আরুহী হয়তো বেশি দিন তার এই শক্ত বাহুডোরে থাকতে পারবে না তখন কি করবে সে? সামলাতে পারবে তো নিজেকে না কি আর সব প্রমিকের মতো উন্মাদনায় মত্ত হবে! ভাবতে চায় না আরুহী তবুও হাজারো ভাবনার আনাগোনার দেখা হয় মস্তিষ্কে।
সূর্যের তীর্যক রশ্মিটা চোখে মুখে পড়তেই ঘুমের ঘোরে কপাল কুচকালো আরুশ। আরুহী আনমনে ই হাসলো, হাত উচিয়ে আরুশের চোখের সামনে রাখলো যেন আলো টা আসতে বাঁধা পায়, খোঁচা খোচা দাড়িতে আলতো ভাবে হাত বুলিয়ে মুখ উঁচিয়ে গালে চুমু খেলো। এভাবেই আদর করে, ভালোবাসতে ইচ্ছে হয় আরুহীর। কেউ না জানুক, কেউ না বুঝুক, সে তার এক মাত্র জামাইকে, তার ব্যক্তিগত পুরুষ কে ঠিক কতটা ভালোবাসে, সব কিছু সংগোপনে রয়ে যাক। আরুহীর মতে সব কিছু প্রকাশ করা ঠিক না, কিছু গোপনীয়তা ই সুন্দর।
ভালোবাসা বেশি প্রকাশ করতে নেই, হারিয়ে যায়, না চাইলেও হারায়। যতদিন বেঁচে আছে ততদিনে এভাবেই ভালোবাসবে, উহুম কখনোই প্রকাশ করবে না। ঠিক কতটা উন্মাদ সে, বদ্ধ পাগল।
কথা গুলো ভাবতে ভাবতেই চোখ গেলো আরুশের দিকে, ফোলা ফোলা চোখে তাকিয়ে আছে সে আরুহীর দিকে। চোখের সাদা অংশ লালাভে ছেয়ে আছে হয়ত মাত্র ই ঘুম থেকে উঠার জন্য।
” শুভ সকাল মায়াবিনী ”
ঘুমু ঘুমু কন্ঠে কথা টা বলেই কপালে উষ্ণ স্পর্শ দিয়ে আরেকটু শক্ত করে জরিয়ে ধরে বিরবির করে বলল,
” মায়াবিনী! শুধু আমার মায়াবিনী ”
আরুহীর চোখ ছলছল করে উঠলো, লোকটা যে তাকে মাত্রাতিরিক্ত ভালোবাসে সেটা আরুহী বোঝে কিন্তু তার হাতে কিই বা করার আছে! কে বলেছে ভালেবাসার জন্য জনম জনম প্রয়োজন! ভালোবাসার জন্য জনম জনম প্রয়োজন হয় না, কয়েক মূহুর্তই যথেষ্ট ভালেবাসাময় কিছু স্মৃতি অর্জন করার জন্য যা মানুষ কে হাজার বছর বাঁচার মানে বোঝায়, বেচে থাকার শক্তি যোগায়। পৃথিবীতে কত হাজার মানুষ আছে যারা ভালোবাসার মানুষ কে হারিয়ে ও দিব্বি বেঁচে আছে।
কোন কিছু পাওয়ার থেকে পেয়েও হারিয়ে ফেলা বেশি কষ্টের। আর সেটা যদি হয় ভালেবাসার মানুষ তবে তো…
” কি ভাবছেন ম্যাম? ”
আরুহী চোখ তুলে তাকালো, ছোট করে বলল,
” কিছু না ”
আরুশ মাথা খানিকটা ঝুঁকিয়ে আরুহীর ঠোঁটে লম্বা একটা চুমু খেলো। আরুহী খানিক্ষন স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে ঠাস করে উঠে বসলো,
” ইয়াক থুওও, ব্রাস না করে চুমু খেলে কেন? ইসস গন্ধ, ইয়াক!”
আরুশ চোখ বড়ো বড়ো করে উঠে বসে আরুহীর দিকে তাকালো, সে ভালোই বুঝতে পারছে আরুহী তার থেকে মজা নেওয়ার জন্য এমন করছে, তবুও এটা কোন কথা!
” ঠাডায় এক থাপ্পড় দিবো না! তোর ইয়াক ইয়াক বের হবে! বেয়াদব মহিলা! জামাই আদর করতেছে উনার সহ্য হয় না! নিজে তো আদর করতে দেয় ই না পরে বাইরে পরকীয়া করলে জামাইর দোষ হয়ে যায় , রোমান্টিক মুডের চব্বিশ টা বাজিয়ে দিসে, যা সরর ওয়াস রুমে যামু ”
বলেই বিছানা ছেড়ে নামতে গেলে আরুহী উঠে এক দৌড়ে ওয়াসরুমের ভেতরে গিয়ে স্ব জোরে দরজা লাগিয়ে ভেতর থেকে চিল্লিয়ে বলতে লাগলো,
” পরকীয়া খালি করে দেখো না! তোমার আর তোমার ওই আশ্বিকির কপালে শনি থেকে শুক্র সব ভর করবে! তোমাকে তো আমি মরেও শান্তি দেবো না, ভুত হয়ে তোমার ঘাড়ে চেপে বসবো, দেখি পরকীয়া কেমনে করো তুমি! ”
আরুশ খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে পরবর্তীতে আরুহীর বোকা বোকা কথা শুনে ঠোঁট চেপে হাসলো, মেয়েটা যে অতিরিক্ত পরিমান জেলাস সেটা আরুশ বোঝে এমন কি হসপিটালে গেলেও আরুশের অজান্তে সিসি ক্যামেরা লাগালো থাকে তার পিছনে! কখন কোথায় যায়, কি করে! কার সাথে কথা বলে সব খবর পাই টু পাই আরুহীর কাছে থাকে। আরুশ এটা জানলেও কিচ্ছু বলে না। ভালোই লাগে তার। ওভার পসেসিভ!
” হ্যা হ্যা তোর মতো সাইকো যার কপালে আছে তার কি আর শান্তি আছে নাকি! আনরোমান্টিকের বস্তা! নিজেও রোমান্স করবে না, অন্য জনের সাথে ও করতে দিবে না। কলিগরা জিজ্ঞেস করে বাচ্চা কবে নিবেন, বাচ্চা কবে নেবেন, তাদের তো আর বলতে পারি না আমার করুন জীবন কাহিনি যে বউ আমার ধারে কাছেও আসে না, বাসর টাও করে না, বাচ্চা কি আকাশ থেকে টপকাবে নাকি ইন্টারনেট থেকে রেডিমেড ডাওনলোড হবে! আমার পোড়া কপাল! কে বুঝবে আমার কষ্ট! ”
ওয়াসরুমের ভেতরে আরুহী নিঃশব্দে পেট চেপে হেসেই চলেছে। হাসতে হাসতে চোখ দিয়ে পানি চলে এসেছে, আহারে বেচারা! কত কষ্ট!
বেশ অনেক ক্ষন পর আরুহী মাথার চুল মুছতে মুছতে বাহির হলো, আশেপাশে তাকিয়ে দেখে আরুশ আছে কি না! বারান্দায় উঁকি ঝুকি মেরে দেখার চেষ্টা করলো বারান্দায় আরুশের অবস্থান আছে কি না!
আরুশ বারান্দায় দাঁড়িয়ে এক হাত পকেটে গুঁজে অপর হাত কানে ফোন ঠেকিয়ে কথা বলতে ব্যস্ত। আরুহী আর এগুলো না, সোজা রুম থেকে বের হয়ে গেলো, নিজের রুম থেকে বের হয়ে নিচে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই নজরে এলো মিরাজের রুম। দরজাটা খানিকটা চাপানো। আরুহী দীর্ঘ শ্বাস ফেলে দরজায় টোকা দিতেই ভেতর থেকে কেউ বলে উঠলো,
” ভেতরে আসো ”
আরুহী ভেতরে ঢুকলো। আরুহীকে দেখে মিরাজ এক গাল হাসলো, কোলের উপরে রাখা ল্যাপটপ টা সাইডে রেখে আসন পেতে বসে হাসি হাসি মুখ করে বলল,
” সূর্য কি আজ উত্তর দিয়ে উঠলো নাকি! আরু রানী আজ আমার রুমে তাও এতো সকালে! ”
আরুহী হাসি দিয়ে মিরাজের গা ঘেঁষে বসলো,
” কেন আমি আসতে পারি না! বারণ নাকি? ”
মিরাজ জিভে কামড় দিয়ে নাটকীয় ভঙ্গিতে বলল,
” তওবা তওবা কি বলেন রানী। আমি কি এটা করতে পারি। জানের ভয় মোর মনে ও আছে। রানীর সাথে এমন করার আস্পর্ধা আমার হবে না ”
আরুহী খিলখিল করে হাসতে লাগলো, মিরাজ মানুষ টায় এমন আরুহীর কাছে। শত মন খারাপের আনাগোনা এক নিমিষেই উধাও করে দিতে পারে মিরাজ। ঠিক সুপার ম্যানের মতো।
হঠাৎ আরুহী হাসি থামিয়ে মিরাজকে দেখতে লাগলো এক মনে, আরুহীর দৃষ্টি লক্ষ্য করে মিরাজ ভ্রু কুঁচকে বলল,
” কি রে কি দেখিস ওভাবে? ‘
” তোমাকে ”
আরুহীর সহজ স্বীকার উক্তি।
” আমাকে দেখার কি আছে?”
আরুহী উত্তর দিলো না। খানিকক্ষণ তাকিয়ে থেকে বলল,
” ভাইয়া! আমি কি একবার তোমায় জরিয়ে ধরতে পারি? নিজের ভাই তো নেই, ছোট থেকে তোমাকেই আপন বড় ভাই ভেবে এসেছি, তুমিও মাথায় তুলে রাখতে, শত আবদারের ঝুলি তোমার সামনে রাখলেও কখনো তা অপূর্ণ রাখতে না, সব ইচ্ছে সব অন্যায় আবদার ও বিনা বাক্যে মেনে নিতে, কখনো ভাইয়ের অভাব বুঝতে দাও নি, একবার আমার ভাইকে জরিয়ে ধরতে পারি? ”
মিরাজ ধমকে গেলো। বুকের মাঝে চিনচিন ব্যথার উদয় হলো। মেয়েটার কি হলো? হঠাৎ এভাবে কথা বলছে কেন? সে কি কোন ভাবে মেয়েটাকে কষ্ট দিয়েছে?
আরুহী মিরাজের উত্তরের অপেক্ষা করলো না, দু হাতে জরিয়ে ধরলো ভাইকে। নিঃ শব্দে কাঁদতে লাগলো সে। এই ভাইকে কিভাবে আঘাত করবে সে? ভাইকে আঘাত করার আগেই তো নিজের দম আটকে যাবে।
আরুহী বিরবির করে বলল,
” লাভ ইউ ভাই! আই অলওয়েজ লাভ ইউ, মিস ইউ সোও মাচ”
চলবে.
[ আজকের পর্বটা কেমন হ’য়েছে জানাবেন কিন্তু ]