#মায়াবিনী_(২)
#Ayrah_Rahman
#পর্ব_৪৮
___________________
” আচ্ছা ভাইয়া যদি কখনো এমন কোন পরিস্থিতি আসে যে একপাশে তোমার দায়িত্ব আরেক পাশে তোমার প্রিয়জন, আপনজন! তোমাকে যেকোন একটা বাছায় করতে বলে তাহলে তুমি কি করবে? কাকে বাছাই করবে তুমি? ”
ভাইয়ের বুকে মাথা রেখেই কথা টা বলল আরুহী। মিরাজ খানিক্ষন চুপ করে থেকে মুচকি হাসলো। গলা ঝেড়ে পরিষ্কার করে বলল,
” বুঝলি আরু জীবনে মাঝে মাঝে এমন অনেক পরিস্থিতি আসে যা আমাদের কল্পনার উর্ধ্বে। জীবনের প্রতিটি সেক্টর ই আমাদের জন্য সমান গুরুত্বপূর্ণ। মাঝে মাঝে আমাদের আপনজন থেকে দায়িত্ব টাই বড় হয়ে যায়। কখনো আমাদের দায়িত্বের মধ্যে থাকে দেশের মানুষের প্রান। আমাদের একটু ভুলের জন্য, একটু বেখেয়ালির জন্য প্রান যায় হাজার হাজার মানুষের। আর তুই যেভাবে বললি এক পাশে দায়িত্ব আরেক পাশে আপনজন! আমার মতে আমাদের সব ক্ষেত্রে আবেগকে প্রশ্রয় দিলে হবে না। যদি দায়িত্বের খেলাপ করে আপনজন কে মেনে নেই তবে সমাজ, রাষ্ট্রের ক্ষতি হতে পারে। তাই আমি বলব দায়িত্বের ক্ষেত্রে আপনজনকে আঘাত ও ছাড় দিতে নেই ”
আরুহী শুনলো দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলল,
” ভাইয়া, জীবনের সকল জটিলতায় তুমি আমার সমাধান। কিন্তু এমন পরিস্থিতি তে নিজেকে কি করে শক্ত রাখবো! যেখানে নিজেই নিজেকে হারিয়ে ফেলি। মাঝে মাঝে এমন পরিস্থিতি হয় যা বিশ্বাস করাও অকল্পনীয় হয়ে পরে! কি করব আমি? ‘”
মিরাজ হাসলো, বোনের মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে আনমনেই বলল,
” জানিস আরু, পৃথিবীতে কোন মানুষ খারাপ হয়ে জন্মায় না, মাঝে মাঝে পরিস্থিতির চাপে ও মানুষ খারাপ পথ বেছে নেয় আবার কখনো কখনো বাধ্য হয়ে যখন কিছু করার থাকে না! কখনো একক ভাবে জাজ করতে যাবি না! ভুল হবার সম্ভাবনা বেশি! দুই পাক্ষিক চিন্তা করবি বুঝলি! ”
আরুহী উঠে বসলো, মিরাজের দিকে তাকিয়ে হেঁসে বলল,
” হুমম বুঝেছি! নাস্তা তো মনে হয় করা হয় নি। চলো নাস্তা করবে, আমি আবার আম্মুর কাছে যাবো ”
মিরাজ বিছানা ছেড়ে উঠতে উঠতে বলল,
” তা ঠিক আছে কিন্তু তোর সেই আশ্বিক কোথায়?
”
” আমার আশ্বিক? ”
” আরে তোর জামাই কোথায়? আজকাল তো তার দেখাই পাওয়া যায় না, কখন আসে কখন যায় কিছু ই বোঝা যায় না ”
আরুহী মিটমিটিয়ে হেঁসে বলল,
” বাথরুম সিঙ্গার তো বাথরুমেই থাকবে ”
মিরাজ হু হা করে হেসে বলল,
” তা যা বলেছিস! ”
” এই কে বাথরুম সিঙ্গার শুনি?”
দরজায় দাঁড়িয়ে আরুশ কথা টা বলেই ভ্রু কুঁচকে আরুহী আর মিরাজের দিকে তাকালো,
আরুহী তখন ও মিটমিট করে হাসছে, মিরাজ হাসি থামিয়ে ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
” আর কে? তুই! কেন মনে নাই তুই যে বাথরুমে গলা ফাটিয়ে গান গাইতিস! কি গান যেন বেশি গাইতি!
কিছু একটা মনে করার চেষ্টা করে বলল,
ওহ হ্যা মনে পড়েছে,
মিরাজ গলা টা পরিষ্কার করে বলল,
” এই ফাগুনে পূর্নিমা রাতে
চল পালাইয়া যায় ”
এটা না? ”
আরুহী খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো।
আরুশ চোখ গরম করে মিরাজের দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলল,
” বেশি বেশি হয়ে যাচ্ছে না মিরাজ! আর এটা ছোট বেলার কাহিনি এখন টেনে আনছিস কেন? ”
মিরাজ হেঁসে বলল,
” ছোট হোক কিংবা বড় স্মৃতি তো স্মৃতি ই আর তুই তো আমাদের বাথরুম সিঙ্গার এটা কি মিথ্যা না কি? ”
” স্যাট আপ! আয় খেতে আয়! আরু তুই ও আয়, হাসি পাচ্ছে তাই না! আয় তুই খালি তোর একদিন কি আমার যতদিন লাগে বেদ্দপ মহিলা ”
বলেই আরুশ রাগে ফুস ফুস করতে করতে বেরিয়ে গেলো।
আরুহী আবারো হেসে উঠলো। মিরাজ কে ইশারা করে সেও বেরিয়ে গেলো। আরুহী কে বেরিয়ে যেতে দেখে মিরাজের ভিতর থেকে দীর্ঘ শ্বাস বেরিয়ে এলো, সে বুঝতে পেরেছে আরুহীর মনে কি চলছে, কেন সে এমন উদ্ভট কথা বলছে! কিন্তু কি করবে সে? কি করার আছে তার? কি আছে সামনে? কিছু ই যেন বুঝতে পারছে না!
মিরাজ আবারো দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বাহিরে চলে এলো,
নিচে নেমে ডাইনিং টেবিলে বসতে বসতেই আশেপাশে তাকালো মিরাজ। তার এক পাশে আরুশ আরেক পাশে তার মা, আরুশের পাশের চেয়ারটায় আরুহী আর মায়ের পাশের টায় বাবা। তার পাশে মাহির আর সাথে রাইসা। সবাই একসাথে ই খাবার খাচ্ছে। এখানে কারো সার্ভ এর দরকার পরে না, সব টেবিলে ই রাখা যার যা লাগবে সে তা নিয়েই খায়। সার্ভ করা আরুহীর পছন্দ না, একজন খাবে আরেকজন তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবে এটা নিশ্চয়ই ভালো ম্যানারে পড়ে না! তার উপর সবাই এই পরিবারের সদস্য এখানে সার্ভ করার দরকার টা কি!
” গুড মর্নিং এভরিবডি ”
মিরাজের কথায় কেউ পাত্তা দিলো না সবাই যে যার মতো খাবার খেতে ব্যস্ত।
মিরাজ ভ্রু জোড়া কুঁচকে বলল,
” হুয়াট্স হ্যাপেন? ”
আরুহী খেতে খেতে বলল,
” কথা না বলে খাও ভাইয়া, খাবার সময় কথা বলতে নেই ”
হুট করে আরুশ আরুহীর দিকে তাকালো,
চোখ ছোট ছোট করে বলল,
” কি রে আরু, তুই তো আমাকে রিপোর্ট দেখালি না! রিপোর্ট কই?”
আরুহী চমকে আরুশের দিকে তাকালো, যেন আরুশ কোথাও বোমা মেরেছে। আরুহীর দৃষ্টি লক্ষ্য করে আরুশ ভ্রু কুঁচকালো, সে কি ভুল কিছু বলেছে নাকি? এভাবে তাকানোর কি আছে?
” কি হয়েছে তোর? রিপোর্ট দেখালি না কেন? খেয়ে তার পর রিপোর্ট নিয়ে আসবি, আমি দেখবো ”
আরুহী শুকনো ঢুক গিলে খাবার চিবাতে চিবাতে বলল,
” আমি এখন ডিরেক্ট চৌধুরী ভিলায় যাবো আম্মুর কাছে আম্মু ওখানে না থাকলে অফিসে যাবো তোমাকে পরে এসে দেখাবো নে! তোমার ও তো ডিউটি আছে তাই না! আর জটিল কিছু না এমনি শরীর দুর্বল তাই ভিটামিনের কিছু বড়ি দিয়েছে ডক্টর আর বলেছে রেস্ট করতে ”
” তা বুঝলাম তাহলে রিপোর্ট দেখলে সমস্যা কোথায়? ”
আরুহী মুচকি হেসে বলল,
” সমস্যা নেই বাট আমি তো না করি নি, এখন হাতে একদম সময় নেই ”
আরুহীর কথার মাঝ দিয়ে ই মিরা বলে উঠলো,
” কার কি হয়েছে? কিসের রিপোর্ট? ”
আরুশ এক পলক মিরার দিকে তাকিয়ে বলল,
” তোমার আদরের মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছিলো! নিজের প্রতি তো কোন যত্ন নেয় না তাই এই অবস্থা, এখন থেকে নো কাজ, শুধু রেস্ট নিবি, যতদিন না পুরোপুরি সুস্থ হস ”
আরুহী ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল,
” আহহ মগের মুল্লুক নাকি! এটা সরকারি চাকরি আমার ব্যক্তিগত না! যে মন চাইলো করলাম আর মনে না চাইলো ছেড়ে দিলাম! আর একটা মিশনে আছি ওটা কমপ্লিট করলে মাস দেড়েক এর একটা ছুটি পাবো আশা করি! ”
আরাফ বলে উঠলো,
” তাই বরং ভালো হয়, মিশন টা দ্রুত কমপ্লিট করে তারপর একদম বেড রেস্ট ”
আরুহী মাথা দুলিয়ে হাসলো।
মাঝ খান দিয়ে মাহির বলে উঠলো,
” এই আরুশ! ”
আরুশ ভ্রু কুঁচকে চাচার দিকে তাকালো,
” হুম ছোট বাবা বলো ”
” তোরা তো বিয়ের পর কোথাও যাস নি, আরুহীর কাজ শেষ হলে তুই ও কিছু দিনের ছুটি নিয়ে কোথাও ঘুরে আসিস কেমন? ”
” আচ্ছা! ”
” আমাকেও সাথে নিতে ভুলিস না! ”
মিরাজের কথা শুনে আরুশ চোখ মুখ কুঁচকে বলল,
” আমার হানিমুন প্যাকেজে তুই লেজ বাঁধবি কেন? কাজ নেই তোর? ”
মিরাজ মুখ কুচকে বলল,
” এভাবে বলতে পারলি? আজ একটা বউ নেই বলে এভাবে অপমান করতে পারলি! তুই না আমার জমজ ভাই! একা একা হানিমুনে যাবি কষ্ট হবে না আমার জন্য? ”
আরুশ মাথা দুই দিকে নাড়িয়ে বলল,
” একটুও না! তুই না গেলে আমি বেঁচে যায়, আর তোকে নেওয়ার প্রশ্নই আসে না, যা ভাগ ”
আরুহী গালে হাত দিয়ে দুই ভাইয়ের খুনসুটি দেখছে, তার ভেতর থেকে বেরিয়ে এলো দীর্ঘ শ্বাস।
জীবনটা এতো জটিল না হলেও পারতো!
চলবে..
[ আজকের পর্ব টা কেমন হয়েছে জানাবেন কিন্তু ]