#ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
#পর্ব :22
#লেখিকা : Aye Sha
🌸
__সময় হয়ে গেছে মীরা কে নিজের কাছে নিয়ে আসার। খুব শীঘ্রই এবার মীরা কে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। মীরা আমার কাছে না আসলে যে আমার প্লান সাকসেসফুল হবে না। অনেকদিন তো আমানের সাথে থাকলে মীরা, এবার না হয়….হাহ! তুমি যে আমার তুরুপের তাস। এতদিন তোমাকে আমানের কাছে রেখেছি শুধু নিজের স্বার্থের জন্য, এবার সেই স্বার্থসিদ্ধির পালা।
অন্ধকার ঘরে বসে হাতে মীরার ছবি নিয়ে ব্যক্তিটি কথা গুলো বলছে। তখনই একজন দরজায় ঠকঠক করলো।
__হু’স দেয়ার??
—— আমি শবনম! আ..
—— নীলাদ্রি! আমার নাম নীলাদ্রি শবনম।
শবনম– আমাকে কেনো ডেকেছো নীলাদ্রি??
নীলাদ্রি– তোমার পুরোনো অসম্পূর্ণ কাজের জন্য।
শবনম– অসম্পূর্ণ কাজ??
প্রতি উত্তরে নীলাদ্রি শুধুই বাঁকা হাসলো।
আমান বেডে হেলান দিয়ে বসে আছে আর আমানের বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছি আমি, জানলা দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বইছে, মাঝে মাঝে বাজ ও পরছে তাই আমান কে জড়িয়ে ধরে ওনার বুকে মুখ গুঁজে রইছি। এটা জানো একটা আলাদা ভালোলাগা, আলাদা অনুভূতি।
মীরা– আমান!
আমান– হমম বলো মীরু।
মীরা– আমরা আজকে বাসায় ফিরবো না??
আমান– নাহ!
মীরা– আম্মু তো টেনশন করবে??
আমান– নাহ করবে না। আমি জানিয়ে এসেছি। আসলে আমাদের এই বাগান বাড়ি অনেক টা দুর তাই আম্মুই বলেছে থেকে যেতে রাতে।
মীরা– ওহ আচ্ছা।
আমান– মীরু চলো খেয়ে নেবে।
মীরা– এখনই?? (ওনার বুক থেকে মাথা তুলে ওনার দিকে তাকিয়ে)
আমান– তো কখন??
মীরা– আরেকটু পরে। এখন এভাবেই থাকবো। (ওনার বুকে আবারও মুখ গুঁজে)
অর্নিল– নির্বোধের মতো হেঁটে চলেছো তো হেঁটেই চলেছো। সামনে কি আছে সেটা দেখে হাঁটবে তো নাকি, আরেকটু হলেই তো পরে যেতে পা হড়কে। তুমি জানো না এটা পুরোনো বাসা আর এখানের সিঁড়ি গুলো মোটেও ভালো না। একবার পরলে আর রক্ষে নেই।
ইসমি মাথা নীচু করে সোফায় বসে দুঃখী দুঃখী মুখ করে অর্নিলের বকা খাচ্ছে। আজ অর্নিল না থাকলে সত্যি একটা বড়ো অঘটন ঘটে যেতো। ইসমি যখন মাথা তুলে দেখলো অর্নিল তখন সঙ্গে সঙ্গে সামনে তাকাতেই দেখলো ওরা দুজন একদম সিঁড়ির ধারে, ইসমি আর এক পা এগালেই ভারসাম্য হারিয়ে নীচে পরে যেতো। এটা দেখেই ইসমি বড়ো একটা ঢোঁক গিলে অর্নিল কে জড়িয়ে ধরলো। অর্নিল কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক হয়ে ইসমি কে রুমে এনে বকা দিয়েই চলেছে।
অর্নিল– কথা বলছো না কেনো??
ইসমি– ক..কি বলবো?? সুযোগ পাচ্ছি কই??
অর্নিল– কি বলবে তুমি হ্যাঁ?? তোমার বলার কি আছে?? ভুল করে এখন সাফাই গাইবে??
ইসমি– তুমিই তো বললে কথা বলতে, আমি তো চুপ করে তোমার বকা শুনছিলাম। (বাচ্চাদের মতো করে)
ইসমির কথা শুনে অর্নিল হেসে ফেললো, সরি দেখে ইসমি ও সামান্য হাসলো। অর্নিল ইসমির পাশে বসে বললো।
অর্নিল– কোথাও লাগেনি তো??
ইসমি– নাহ লাগেনি। ঠিক আছি।
অর্নিল– কি ভাবছিলে এতো অন্যমনস্ক হয়ে??
ইসমি– (মনে মনে– তোমাকে বলতে পারলে তো ভালোই হতো অর্নিল। কিন্তু আমি মীরা কে কথা দিয়েছি এই ব্যাপারে কাওকে কিছু বলবো না। দিব্যি দিয়ে রেখেছে মীরা আমাকে।)
অর্নিল– কি হলো??
ইসমি– কিছু না। আসলে বাসাটাই দেখছিলাম ঘুরে ঘুরে। খেয়াল করিনি সিঁড়ি টা অন্ধকারের মধ্যে।
অর্নিল– এখন আর ঘরের বাইরে বের হতে হবে না। আমি রুমে খাবার পাঠিয়ে দেবো। তুমি রেস্ট নাও আমি আসছি।
অর্নিল উঠে যেতে নিলেই ইসমি অর্নিলের হাত ধরে ফেলে, অর্নিল কিছুটা অবাক হয়ে বলে।
অর্নিল– কিছু বলবে??
ইসমি– যেতেই হবে?? না গেলে হয় না??
অর্নিল ইসমির কথা শুনে আবার ও অবাক হলো, তাই ইসমির পাশেই বসে পরলো সোফায়। সোফায় বসতেই অর্নিলকে আরেক দফা অবাক করে অর্নিলের কাঁধে মাথা রাখলো। অর্নিল সামান্য হেসে এক হাত দিয়ে ইসমি কে নিজের বুকে টেনে নিলো। ইসমিও চুপচাপ অর্নিলের বুকে মাথা রেখে শুয়ে থাকলো।
এভাবেই ওদের সময় কাটছে একে অপরের সাথে। দুরত্ব আস্তে আস্তে কমে আসছে তাদের সম্পর্কের একদিকে আমান মীরার, আরেকদিকে অর্নিল ইসমির। আমানের সাথে সময় কাটাতে পেয়ে মীরা তো প্রায় ভুলেই গেছে নীলাদ্রির কথা। এই ভুলে যাওয়া টা মীরার জন্য কাল হয়ে দাঁড়াবে না তো?? দেখা যাক কি হয়।
এভাবেই রাত টা কেটে গেলো ওদের আর সকালে আমরা বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিয়ে দিলাম।
বাসায় এসে আম্মুর সাথে কথা বলে নিজের রুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে এসে রুমে বসলাম দেখি আমান রেডি হচ্ছেন। আমি জিজ্ঞেস করলাম।
মীরা– আপনি কি অফিস যাবেন নাকি??
আমান– হ্যাঁ মীরু! আজকে যেতে হবে কালকে যাইনি, অনেক কাজ পেন্ডিং পরে আছে।
মীরা– আজকের দিন টা রেস্ট নিলে হয় না??
আমান– নাহ মীরু বেবস! হয় না। আমি আসছি।
আমার কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে চলে গেলেন। আর আমি বসে থাকলাম, ভালো লাগছে না কিছু। কাল পুরো সময় টা ওনার সাথে কাটানোর পর আর একা ভালো লাগছে না। তখনই সুমি আমার রুমে এলো।
মীরা– সুমি! কিছু বলবি??
ইসমি– হ্যাঁ।
মীরা– বল না। আমিও একা বোর হচ্ছিলাম।
ইসমি– জিজু কে নীলাদ্রির ব্যাপারটা বলে দে মীরা। এখনই তো সময়। নীতা ফুপি কে কিছু জানতেও পারবে না।
মীরা– হ্যাঁ।
ইসমি– তুই বলবি??
মীরা– গতকালই বলবো ভেবেছিলাম কিন্তু…(রাতের কথা মনে পরতেই লজ্জায় লাল হিয়ে যাচ্ছি সুমির সামনে)
ইসমি– উহুঁ উহুঁ বুঝেছি। আচ্ছা শোন তারাতাড়ি বলেদে যদিও অনেক টাইম হাতে কারণ ঐ নীতা তো জেলে।
মীরা– হম সময় নিয়ে বুঝিয়ে বলবো।
ইসমি– আচ্ছা চল এবার নীচে।
মীরা– সুমি!!
ইসমি– কিছু বলবি??
মীরা– ক্ষমা করেদে অর্নিল কে। বেচারা সত্যি তোকে ভালোবাসে। আর কষ্ট দিস না।
ইসমি– তুই কি করে??
মীরা– জানি, জানি সব জানি। বোন হই তোর।
ইসমি– হুহ!
মীরা– যাহ চলে গেলো?? ধুর।
সুমির পিছন পিছনে আমিও চলে এলাম নীচে। এসে দেখলাম আমান আর অর্নিল আম্মুর সাথে বসে আছে, কথা বলছে। আমি নীচে এসে দাঁড়াতেই কেউ কলিং বেল বাজালো। আমি সবাই কে বলে দরজা খুলতে গেলাম। দর্জা খুলে দেখলাম একটা আপু। হ্যাঁ আপু! আমার থেকে বয়সে বড়োই মনে হয়।
মীরা– কাকে চাই??
মেয়েটি– আমান কে।
হঠাৎ একটা মেয়ে এসে আমান কে কেনো খুঁজছে?? ব্যাপার টা ভালো লাগলো না, আমি কোনো সাড়া শব্দ না দেওয়ায় আমান আমাকে জিজ্ঞেস করতে এলো।
আমান– মীরা কে এসে…
উনি এটুকু বলে থেমে যাওয়ায় আমি ওনার দিকে তাকালাম, দেখলাম উনি কেমন বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে। চোখ টা ছলছল করছে, আমাকে পাশ কাটিয়ে মেয়েটি প্রবেশ করতেই অর্নিল আর আম্মু উঠে দাঁড়াল। অর্নিল কাঁপা কাঁপা গলায় বললো।
অর্নিল– আ..আকাশি আপু??
আপুটার নাম আকাশি?? আর আমান কেনো এভাবে রিয়াক্ট করছে ওনাকে দেখে?? আমান এক পা দু-পা করে পিছিয়ে যাচ্ছে। আর আকাশি আপু চুপচাপ স্থির চোখে তাকিয়ে আছে আমানের দিকে আর আমান ছলছল চোখে।
মীরা– আমান??
আমি আমানের দিকে এগোতে গেলেই আমান আমাকে হাত দিয়ে থামিয়ে দেয় আর পিছোতে পিছোতে সিঁড়ি দিয়ে উঠে নিজের ঘরে চলে গেলেন। সবার দিকে তাকাতেই দেখলাম সবাই থম মেরে রয়েছে, আমি ওনাকে সামলানোর জন্য আমাদের রুমে গেলাম, গিয়ে দেখলাম দরজা বন্ধ। আমি ধাক্কাতে লাগলাম।
মীরা– আমান! আমান প্লিজ দরজাটা খুলুন। আপনি ওভাবে চলে আসলেন কেনো ওখান থেকে?? আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে??
আমান– আমাকে একা ছেড়ে দাও মীরা!
মীরা– নাহ এভাবে কি করে একা ছাড়ব?? আপনি বলুন কি হয়েছে?? খুলুন দরজাটা।
আমান দরজা খুলতেই আমার শান্তি হলো কিন্তু ওনাকে এমন বিদ্ধস্ত দেখে আমি আবারও ঘাবড়ে গেলাম, শার্ট টা ইতিমধ্যে ছেড়ে দিয়েছেন আর চোখ মুখ ও কেমন হয়ে গেছে। ওনার ধমকে আমার ঘোর ভাঙলো।
আমান– কেনো এতো বিরক্ত করছো আমাকে?? কে এতো ভালোবাসা দেখাতে বলেছে আমার প্রতি?? এতদিন তো দেখাওনি?? এখন কেনো এসব ঢঙ করছো?? কানে যায়নি আমার একা থাকার কথা?? ছেড়ে দাও আমাকে একা, নিজের মতো করে। জাস্ট লিভ ড্যাম ইট!!
চিৎকার করে বললেন আমান কথা গুলো, আমি আর কিছু বলতে গেলেই আমান আমার হাত ধরে টেনে দরজার সামনে থেকে সরিয়ে দেয় আর দরজার সামনে গিয়ে বলেন।
আমান– একা ছেড়ে দাও আমাকে। এসব ন্যাকামির কোনো দরকার নেই আমাররররর!!
কথাটা চিৎকার করে বলে দরজা টা ধরাম! করে বন্ধ করে দিলেন। আমি কেঁপে উঠলাম এমন পরিস্থিতি তে। নিজের চোখের পানি মুছে আস্তে আস্তে হেঁটে ড্রয়িং রুমে আসছি। আজকের আগে কোনদিন এমন ব্যবহার করেননি আমান আমার সাথে। এই প্রথম এমন করলেন, ওনার ব্যবহারে মনে হলো জানো উনি আমাকে আর ভালোবাসেন না।
আমি নীচে নেমে আসতেই যা শুনলাম তা শুনে আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি টাই সরে গেলো।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]
23
https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=122121841310106573&id=61553197202722&mibextid=Nif5oz