#ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
#পর্ব :23
#লেখিকা : Aye Sha
🌸
আমি নীচে নেমে আসতেই যা শুনলাম তা শুনে আমার পায়ের নীচ থেকে মাটি টাই সরে গেলো।
আম্মু– এতো গুলো দিন পর তুমি কেনো ফিরে এসেছো আবার আমানের জীবনে আকাশি?? তুমি তো জানতে আমার আমান তোমাকে কতটা ভালোবাসত??
অর্নিল– তোমার কোনো ধারণাও নেই আপু তুমি যাওয়ার পর ভাইয়ের কি অবস্থা হয়েছিল।
আম্মু– কি জন্য এসেছো আবার আমার আমানের জীবনে?? দেখলে কীভাবে ছেলেটা চলে গেলো?? আমি জানি এখন ওর মনের অবস্থা কি।
অর্নিল– ভাই কে ভাইয়ের বর্তমান নিয়ে থাকতে দিন আপু। আপনি ভাইয়ের অতীত হয়ে গেছেন, এখন ভাবি আর ভাইয়ের জীবনে আপনি কালো অতীত হয়ে আসবেন না, ভাই ভাবি কে ভালোবাসে এখন।
মীরা– (মনে মনে– নাহ! আমান আমাকে নয়, আকাশি আপুকেই ভালোবাসে, আমার জন্য যে ভালোবাসা ছিলো তা ক্ষণিকের আর আকাশি আপুর জন্য যেই ভালোবাসা আছে তা চিরস্থায়ী। তাই জন্যই তো আকাশি আপু আসতেই উনি এমন দো-টানায় পরে গেছেন।)
আম্মু– কি হলো কোনো উত্তর দিচ্ছো না কেনো তুমি?? কি জন্য এসেছো?? (ধমকে)
আম্মুর ধমক শুনে আপু কেঁদে উঠলেন, আর কান্না জড়িত কণ্ঠে বললেন।
আকাশি– আশ্রয়ের জন্য।
অর্নিল– মানে??
ইসমি– এসব কি হচ্ছে অর্নিল, আন্টী। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না।
অর্নিল– আকাশি আপু ভাইয়ের এক্স গার্লেফ্রন্ড ইসমি। একসময় ভাই ভীষণ ভালোবাসত আপু কে। কিন্তু আপু পরিবর্তে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ভাইয়ের সাথে। ভালোবাসার প্রতিদান বিশ্বাসঘাতকতা দিয়ে করেছে।
আকাশি– নাআআ!! আমি বাধ্য ছিলাম নীল।
অর্নিল– এই নামে ডাকার অধিকার আপনার নেই আপু। আপনি সেটা অনেক আগেই হারিয়েছেন। প্লিজ আমাকে নীল বলে ডাকবেন না
আম্মু– এক মিনিট নীল! তুমি বাধ্য ছিলে মানে??
আকাশি– আন্টী তুমি তো জানোই আমি ছোটো থেকেই অনাথ আশ্রমে থেকে বড়ো হয়েছি। আমার বাবা-মা নেই। একদিন হঠাৎই আমার চাচা এসে বলে আমাকে তার সাথে যেতে হবে। আমার বাবা মায়ের রাখা সম্পত্তির জন্য। আমি অবাক হয়ে বলেছিলাম ” আপনি কে? আপনার পরিচয় কি? ” তখন তিনি প্রমান দিয়েছিলেন তিনি আমার চাচা। বলেছিলেন আমাকে অনেকদিন ধরে খুঁজেছেন কিন্তু পায়নি। আমি রাজি হয়ে যাই ওনার সাথে যাওয়ার জন্য কারণ নিজের বাবা-মায়ের শেষ স্মৃতি তো দেখতে পাবো।
অর্নিল– তাহলে আপনি ভাই কে জানিয়ে যাননি কেনো?? আপনি তো হঠাৎ করেই গায়েব হয়ে গেছিলেন।
আকাশি– হঠাৎ করে গায়েব হয়ে যেতে চাইনি আমি। আমাকে চাচা সেদিনই জোর করে নিয়ে যান ওনার সাথে, আমি কাওকে কন্টাক্ট করার সময় পায়নি। ইনফ্যাক্ট উনি করতে দেননি। নানারকম কথায় আমাকে ভুলিয়ে রেখেছিলেন। অনেক পরে একটা বাসায় গিয়ে উঠি আমরা, সেখানে চাচা আমাকে একটা ঘরে ঢুকিয়ে মুহুর্তে নিজের রুপ বদলে ফেলেন। আমার থেকে আমার ফোন কেড়ে নিয়ে সম্পত্তির কাগজে সই করে দিতে বলেন। আমি কিছুতেই রাজি হই না, আমার বাবা–মায়ের শেষ স্মৃতি ছিলো ওটা যা আমি চোখেও দেখিনি।
আম্মু– ছাড়া পেলে কি করে তুমি ওখান থেকে??
আকাশি– প্রায় অনেকদিন পর আমি বাধ্য হয়ে সাইন করেদি ঐ সম্পত্তির কাগজে, কারণ সে সময় উনি জেনে গেছিলেন আমি আমান কে ভালোবাসি, আর সাইন না করলে আমানের ক্ষতি করবেন, সাইন করে দিয়ে ওনাকে বলি আমায় ছেড়ে দিতে। কিন্তু উনি তাও রাজি ছিলেন না, ওনার আরো টাকার দরকার ছিলো। তাই তো মোটা অঙ্কের বিনিময়ে আমাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন একজনের কাছে।
অর্নিল– ওয়াট!! আপু এসব তুমি কি বলছো?? (আপুর কাছে গিয়ে)
আকাশি– হ্যাঁ নীল।
অর্নিল– এখন তুমি এখানে?? আর কার কাছে তোমাকে বিক্রি করেছে?? সে কোথায়??
আকাশি– সে কোথায় তা আমি জানি না। হয়তো আমাকেই খুঁজছেন। আমি ওনার কাছ থেকে পালিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি আজ এতদিন পর। আমাকে পেলে সে আর আস্ত রাখবে না। তাই তো বলছি যদি একটু আশ্রয় দিতেন আমায়। আমি কথা দিচ্ছি খুব শীঘ্রই একটা কাজ খুঁজে, নিজের জন্য সেফ জায়গা খুঁজে আমি চলে যাবো।
আম্মু– কোথাও যাবি না তুই। আমার বুকে আগলে রাখবো তোকে আমি। আজ এতদিন পর ফিরে পেয়েছি আমি তোকে। (আপু কে জড়িয়ে ধরে চোখের পানি ফেলছেন)
আকাশি– সেটা হয় না আন্টী। আমানের এখন সংসার হয়েছে, আমি ওর আর ওর স্ত্রীর জীবনে কালো অতীত হয়ে থাকতে চাই না।
অর্নিল– কিউটিপাই আই অ্যাম স্যরি। ভুল হয়ে গেছে আমার। এই দেখো কান ধরছি আমি (আপুর সামনে কান ধরে) মাফ করে দাও!
আকাশি– পাগল ছেলে। যাক আপু থেকে আবার তোর কিউটিপাই হতে পেরেছি এই অনেক। কান ছাড় এবার।
অর্নিল– আম্মি ঠিকই বলেছে তুমি কোথাও যাবে না।
আকাশি– কিন্তু আমান! আমান সেটা পছন্দ করবে না নীল।
আম্মু– বাজে কথা বলিস না আকাশি। তুই খুব ভালো করেই জানিস আমান তোকে কতটা ভালোবাসে। তার মধ্যে তোর এরম পরিস্থিতির কথা শুনে ও কখনই তোকে বাসা থেকে বের করবে না।
আকাশি– আমান আমাকে ভালোবাসতো আন্টী। এখন ওর স্ত্রী কে ভালোবাসে। ওর স্ত্রীও ব্যাপারটা মেনে নেবে না। কোনো মেয়েকি পারে এই বিষয় টা মেনে নিতে?? যে তার স্বামীর প্রাক্তন তাদের বাসায় উপস্থিত??
মীরা– আমি পারবো আপু।
সবাই আমার কথা শুনে সিঁড়ির দিকে তাকালো, আমি নেমে এসে আকাশি আপুর কাছে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললাম।
মীরা– তুমি এখানেই থাকো আপু। আমার কোনো অসুবিধা নেই, আমার মনে হয় না আমানের কোনো আপত্তি থাকবে এতে বরং খুশিই হবে সে।
আমার কথা শুনে সুমি দৌঁড়ে ঘরে চলে গেলো, হয়তো রেগে আছে তাই। আমিও পিছন ফিরে ওদের সবার কাছ থেকে চোখের পানি আড়াল করে সুমির ঘরে চলে এলাম। জানি হয়তো অনেক বকবে আমাকে, তবুও আমি যাবো কারণ এখন ঐ একজনই আমার আপন।
আম্মু– কোথায় যাচ্ছিস মীরা??
মীরা– সুমির ঘরে আম্মু। এই বাসায় আর তো আমার আপন কেউ রইলো না তাই ওর ঘরেই যাচ্ছি।
আমি আর দাঁড়ালাম না, চলে এলাম। আজ আমানের ব্যবহারটা আমি কিছুতেই মেনে নিতে পারিনি আর না কোনদিন পারবো।
অর্নিল– আম্মু! তুমি একটু কিউটিপাই কে নিজের রুম টা দেখিয়ে দাও।
আম্মু– কিন্তু মীরা??
অর্নিল– ঐ ব্যাপারটা ছেড়ে দাও।
অর্নিল ও চলে গেলো ওখান থেকে আর আম্মু আকাশি কে নিয়ে ওর রুম দেখাতে গেলো।
ইসমি– কেনো এসেছিস তুই আমার কাছে?? তোর দুঃখের কাদুনি গাইতে??
মীরা– তুই ও দুরে ঠেলে দিবি সুমি?? আমার কি আপন বলে কেউ থাকবে না??
ইসমি– জিজু কে নিজে অন্যের কাছে ঠেলে দিয়ে বলছিস আমার আপন কেউ নেই।
মীরা– সে তো নিজেই আমাকে তার কাছে আসতে বারণ করেছে, ন্যাকামি করতে বারণ করেছে। আমি ওর জন্য টেনশন করেছি সেটা কে ন্যাকামির আখ্যা দিয়েছে। তার ঘর থেকেই বার করে দিয়েছে আমাকে।
ইসমি– কিহহ??
আমি আর কিছু বলতে পারলাম না সুমি কে জড়িয়ে কাঁদতে লাগলাম। যখন সবটা ঠিক করবো ভেবেছিলাম তখনই সব ওলট পালট হয়ে গেলো।
মীরা– আমি আমান কে নীলাদ্রির ব্যাপারে আর কিছু জানাবো না সুমি। ওটা জানলে হয়তো ও আকাশি আপু কে আর মেনে নেবে না। এমনিতেই ৬ মাস পর ডিভোর্স হয়ে যাবে আমাদের, আর আমি সেটা আটকাবো না। তখন না হয় আমি আমার মতো আর আমান আমানের মতো।
ইসমি– এসব তুই কি বলছিস?? মাথাটা কি খারাপ হয়ে গেছে তোর?? জিজু তোকেই ভালোবাসে আই অ্যাম সিওর।
মীরা– হমম সেটা ক্ষণিকের ভালোবাসা সুমি। ও আকাশি আপুকেই সত্যি ভালোবাসে…
__নাহ!!
ইসমি– অর্নিল তুমি এখানে??
অর্নিল– তখন যেভাবে ভাবি চলে এলো তাতে বুঝেইছিলাম কান্না-কাটি করে মুখটা কে পেঁচি বানিয়ে ফেলবে। তাই দেখতে এলাম আর কি আমার পেঁচি ভাবি কে।
ইসমি– তুমি মজা করছো এমন একটা সিরিয়াস ব্যাপারে। আমার বোন টা কাঁদছে আর তুমি সেটা নিয়ে মজা করছো??
অর্নিল– দেবর তো ভাবির সাথে মজা করবেই তাই না পেঁচি ভাবি?? (দাঁত কেলিয়ে)
আমার মন ভালো ছিলো না তার মধ্যে অর্নিলের মজা দেখে মাথাটাই গরম হয়ে গেলো, পাশে থাক বালিশ টা ছুড়ে মারলাম অর্নিলের দিকে আর চিৎকার করে বললাম।
মীরা– বেরিয়ে যাও ঘর থেকে নাহলে তোমার ভাই যেমন আমাকে বার করেছে, তেমন আমিও তোমাকে বার করে দেবো ধাক্কা মেরে।
অর্নিল বালিশ টা ক্যাচ করে নিয়ে আবারও দাঁত কেলিয়ে বললো।
অর্নিল– ওয়াও গুড ক্যাচ অর্নিল! এখানে তো তোকে আর কেউ বাহবা! দেবে না তাই তুই নিজের বাহবা! নিজেই দে, আর কি করার।
ইসমি– তুমি সমানে মজা করে যাচ্ছো?? খুব ভালো লাগে না মেয়েদের মন নিয়ে খেলতে?? আমি ভেবেছিলাম জিজু তোমার থেকে ভালো হবে বাট নাহ! তোমরা দুজনেই এক।
অর্নিল– স্টপ ইট ইসমিইইইই!! জাস্ট স্টপ ইটটটট!! আমাকে নিয়ে যা বলার বলো বাট আমার ভাই কে নিয়ে নয়। গট ইট?? (বেশ জোরে)
ইসমি– ওহ আর তোমার ভাই আমার বোনের সাথে যা কর..
মীরা– প্লিজ তোরা ঝগড়া বন্ধ কর আর আমাকে একটু একা থাকতে দে। নিজের মতো করে, ভালোলাগছে না আমার। (কেঁদে)
অর্নিল– হেই সুইটি! লূক এট মি। (আমার সামনে বসে আমার হাত ধরে)
আমি হাত ছাড়াতে নিলেই অর্নিল আরো শক্ত করে ধরে বলে।
অর্নিল– ভাই শুধু তোমাকে ভালোবাসে সুইটি। আর কাওকে না।
মীরা– আজকের ব্যবহারের পর আমি সেটা মানতে পারবো না অর্নিল।
অর্নিল– উহুম। আজকের ঘটনাটার পর মে বি তুমি বুঝবে ভাই কাকে ভালোবাসে। বায় দ্য ওয়ে ভাই তোমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে??
মীরা– হমম।
অর্নিল– ঘরের একটা জিনিস ও আস্ত রইলো না রে।
আমান ঘরের মেঝেতে বসে আছে বেডে হেলান দিয়ে। চোখ রক্ত বর্ন ধারণ করে আছে। কিছুক্ষণ আগে মীরার সাথে অমন ব্যবহার করার পর ঘরের সব জিনিস ভেঙে ফেলেছে। আমান বেডে মাথা পিছন দিকে ঠেকিয়ে চোখ বুজতেই মীরার হাসি শুনতে পেলো। সঙ্গে সঙ্গে আমান চোখ খুলে উঠে বসলো আর বাম পাশে তাকাতেই ড্রেসিং টেবিলের আয়নায় মীরার হাসি মুখটা ভেসে উঠলো, আমান সেটার দিকে তাকিয়ে হাসতেই সেটা উধাও হয়ে গেলো আর মীরার সাথে করা আজকের ব্যবহার মনে পরলো আমানের। আমান উঠে ড্রেসিং টেবিলের আয়না টা ঘুসি মেরে ভেঙে দিলো। কাঁচ টা ভেঙে চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেলো আর আমানের হাত থেকে টুপ টুপ করে রক্ত পরতে লাগলো।
আমান– কেনো আকাশি কেনো?? কেনো আবার এলোমেলো করে দিলে আমার জীবন টা?? চলেই তো গেছিলে আমাকে মাঝ পথে একা ফেলে। তাহলে ফিরে কেনো এলে?? চাই না আমি তোমায়য়য়য়!! (চিৎকার করে) তোমার জন্য আমার মীরা আমার কাছ থেকে দুরে সরে যাবে। যেমন আজ গেলো। তোমার জন্য আজ আমি আমার মীরার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছি, ও আমাকে ভুল বুঝবে এর জন্য আই নৌ। বাট তখন আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছিলো। কি করবো বুঝতে পারছিলাম না। আই অ্যাম জাস্ট ফেড আপ। কেনো সব সময় আমার জীবন থেকে আমার ভালোবাসার মানুষ হারিয়ে যায়?? কেনোওওওও?? (চিৎকার দিয়ে কাঁদছে)
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]