মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী (রাজ_বিহারিনী_রুদ্র পর্ব) ৮ #writer_Neel_Noor

0
504

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
(রাজ_বিহারিনী_রুদ্র পর্ব)

#writer_Neel_Noor

এগারো বছর পর, আজ হাওলাদার বাড়ির রাজলক্ষী ফিরবে, সবাই অপেক্ষামান, শুধু এক জন বাদে। সেই ঘটনার পর , পাঁচ বছর থাকতেই সে থাকতে শুরু করে গ্রামে, এবং সেখানে ই থেকে বড় হয়। ঘটনাটা ঘটেছিল, তার পাঁচ বছর বয়সে, এক এক্সিডেন্ট এ সে তার মা বাবা হারায়। তারপর থেকেই সে তার মামা মামীর কাছে বড় হয়। বিহারিনী, নামটার মতোই সে যেন অদ্ভুত এক রহস্যময়ী মানবী। কখনো সে চুপচাপ, ঘুমোরমুখী, গম্ভীর অতিরিক্ত রাগী আবার কখনো সে খুবই চতুর, হাশিখুশি, চঞ্চল একটা মেয়ে।

মজিবর হাওলাদার এর তিন ছেলে এক মেয়ে। বড় ছেলে তারেক হাওলাদার, মেজ ছেলে মারুফ হাওলাদার, ছোট ছেলে বিহার হাওলাদার। মারুফ হাওলাদার এর এক ছেলেই। আবরার হাওলাদার রাজ। তারেক হাওলাদার এর এক ছেলে দুই মেয়ে, আদরিশ হাওলাদার রুদ্র, মারিয়া আর মাহিয়া। বিহার হাওলাদার এর এক মেয়ে বিহারিনী হাওলাদার। মজিবর হাওলাদার এর যে আরো এক সন্তান রয়েছে, মানে মেয়ে, তার কথা সবার অগোচরে আজনা করে রাখেন এই বংশের মানুষরা। কেন এরকম হয়েছে, ওটা আজ ও আমাদের ওজানা। হঠাৎ করেই একদিন ফুফি হারিয়ে যায়, তার পর থেকে আর কখনও দেখিনি তাকে। যেন তাদের মেয়ে ই নেই।

আমি ডাক্তারি পড়তে লন্ডনে থাকি। ইন্টার্নশিপ শেষ বিদেশের মাটিতে ই আছি, চিন্তা করতেছি দেশে ফিরব কয়েক মাস এর জন্য, বাসা থেকে প্রতিনিয়ত প্রায় কল আসতেছেই। কিছু বই ঘাটছিলাম, ইদানিং পড়াশোনার চাপ নেই বললেই চলে, রেজাল্ট টা শুনার আশায় ই এখন এ এই বিদেশি মাটিতে….। হঠাৎ বাড়ি থেকে ভিডিও কল এলো, বলেন তো এই সাজ সকাল বেলা কে কল দেয়, মেজাজ টা একটু খিচখিচে হয়ে উঠল। কল রিসিভ করতেই, মারিয়া আর মাহিয়া একসাথে বলে উঠল – ভাইয়া তোকে আজ রূপকথার পরী দেখাব। এতো দিন শুধু শুনেছি তার কথা , আজ দেখাবো।

আমি উত্তর এ কিছু বলব, তার আগেই মোবাইল এর স্ক্রিনে ভেসে উঠলো এক সুদর্শনী পঞ্চদশী মেয়ে। তার মুখে জোর পূর্বক হাসি, কৌতুহল হরিনী চোখ, গোলাপি ঠোঁট গাল, আমি শুধু তাকিয়ে আছি…

ছাব্বিশ বছর বয়সে দেশ বিদেশের শত রঙ্গীন সুন্দর রমনী আমি কম দেখিনি, কখনো নজর কারতে পারে নাই, সবসময় পড়াশোনা আর সমাজসেবা করার নেশা ই আমাকে কুড়ে খেত, কিন্তু কোন ভাবেই এই রমনী থেকে চোখ ফেরা দায়!! বুকে হাত দিয়ে, মুখ ফসকে বলেই ফেললাম – ” তার শহরে বড্ড অবহেলা _তাহার চোখেই আমার সর্বনাশ”

হঠাৎ করেই রাজ এসে মেয়েটার সামনে এসে দাঁড়ায়। ওটা দেখেই, বিদেশের মাটিতে আমার মনের গহীনে প্রতিধ্বনিত হয়ে বেরিয়ে আসছে, চলে যা নিজ শহরে, সজনী পাখির কাছে। নাম না জানা মেয়েটার নাম দেওয়া ই যেতেই পারে সজনী পাখি!!
মারিয়া ক্যামরা নিজের দিকে নিয়ে নিল, তারপর বলল- জানিস ভাই !! মেয়েটি কে? এটা আমাদের ছোট চাচুর মেয়ে বিহারিনী।

বিহারিনী কে আমি দেখি নাই কখনো। শুধু শুনেছি, মেয়েটা একটু ভিন্ন। তবে এই রকম ভিন্ন, তা জানা ছিল না। রাজ প্রতিবার ই নানা অজুহাতে এ বিহারিনীর কথা বলতো আমাকে। আমি বেশি একটা পাত্তা দেই নি… কিন্তু আজ?

আমি কথা বাড়ালাম না, টুপ করে কল টা কেটে দিলাম। কারন, আমি আজ অগোছালো, ছাব্বিশ বছরের যুবকের মনে প্রেমের ছোঁয়া লাগতে সেকেন্ড এর বেশি লাগলো না।

_____
হাওলাদার বাড়িতে, আজ যেন আমেজ লেগে আছে। বাড়ির এক মেয়ে আজ বহুবছর পর বাড়ি ফিরল। যদি ও বিহারিনীর খুব ই অপছন্দ এই বাড়িটা। এখন ও মনে পড়ে তার সেই দিনগুলোর কথা, বাবা মায়ের সাথে কাটানো দিন রাতের কথা, যদি ও ছোট ছিল, আবছা আবছা স্মৃতি….

বিহারিনীর এই বাড়িতে পুনরায় ফিরে আসার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, রাজ। বিহারিনী রাজ কে আগে থেকেই চিনে। যদিও তাদের মধ্যে সম্পর্ক হয় নাই, কিন্তু বিহারিনী রাজকে মনের অজান্তেই পছন্দ করে। রাইটার -নীলনূর

রুদ্র ছোট থেকে ই তার মামা মামীদের সাথে লন্ডনে থাকে। তাই, বাড়ি আসার প্রতি তার অনিহা। কিন্তু, রাজ তার উল্টো বিপরীত। সব কিছু তে ই তার অস্তিত্ব, রাজত্ব। সেই সুবাদে ই বিহারিনী কে সে চিনে। কিন্তু, বিহারিনী যৌবনে পা দিতেই, সে সবচেয়ে প্রথমেই রাজের চক্ষু সমাবেশ এ আবদ্ধ হয়, তারপর থেকেই রাজ বিহারিনী যেখানে থাকে, সেখানে আনাগোনা বেড়ে যায়।

চলে যায় দুদিন। বিহারিনীর আগমন এ চারদিকে ই সুঘ্রাণ। বিহারিনী সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বাগানে বসে চা খাচ্ছে।ইদানিং খুব চা আর সাহিত্যিক গল্পের নেশায় আসক্ত হয়ে গেছে। এইতো রোজকার এর মতো আজ ও গার্ডেন এ বসে আছে চা উপভোগ করছে বিহারিনী। আর তার হাতে গল্পের বই!! চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বইটা উল্টো তেই সুন্দর একটা লেখা, যা বিহারিনীর মনটাকে থমকে দিল….

….এসেছিলাম কিছু কথা বলার জন্য এখানে এসে দেখি হাজারো জীবিত মানুষের আত্মা 💔🥀🥹

…..আমি জানি আমাকে সারাজীবন কাঁদতে হবে🖤
…..কারন আমি তোমাকে ভালোবাসার দুঃসাহস করেছি 🥺!!
#Neel_Noor

খেয়ালের আঁধার এ আমি রোজকার মতন হারিয়ে গেছি। আচমকা কারো জড়িয়ে ধরার পরশে কেঁপে উঠলাম। কেউ আমাকে এমনভাবে চেপে ধরেছে যেন তার বুকের ভেতরে আমাকে ঢুকিয়ে ফেলবে। নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করতেই, রুক্ষ একটা পুরুষালী কন্ঠ ভেসে এলো – “সারপ্রাইজ, …”

শব্দ টা শুনতেই চমকে উঠে বিহারিনী, মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা যেন অচল হয়ে পড়েছে, এই রুক্ষ সুন্দর পুরুষালী কন্ঠ টা, শরীরের ঘ্রাণ তাকে জড়িয়ে ধরা , কে সে?

হাতের বাঁধনটা হালকা হয়ে আসতেই আমি লোকটাকে সজোরে ধাক্কা মারলাম। সে তাল সামলাতে না পেরে একটু পিছিয়ে গেল। হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ালাম, খুব ই রাগী দৃষ্টি দিয়ে লোকটার দিকে তাকালাম, কিন্তু রাগ হচ্ছে না, বরং আমি হারিয়ে যাচ্ছি তার সুক্ষ চোখের মায়ায়। আমার দিকে এমন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে যেন কত আকুল আকাঙ্ক্ষা আমাকে দেখার।

মাথাটা প্রচুর পরিমাণে ব্যাথা করছে বিহারিনীর। যেন ফেটে যাচ্ছে। মনটা ও খুব বিষন্ন হয়ে গেছে। তবুও নিজেকে সামলানোর এক অদম্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সে, উজ্জ্বল গায়ের ছেলেটি মুচকি হেসে তার দিকে এগিয়ে এসে, তার গালে আলতো করে দুই হাত রেখে, কানে কানে ফিসফিস করে বলল – তুমি খুব সুন্দর বিহারিনী!! যার মাদকতায় আমি ছুটে এসেছি, এসেছি পাড়ি দিয়ে সাত সাগর তেরো নদী!!

বিহারিনী মুখ থেকে হাত সরিয়ে নিয়ে , ছিটকে দূরে সরে দাঁড়ায়। মূহুর্তে ই বাড়ি থেকে সবাই শব্দ শোনে বাহিরে এলো। বিহারিনী কিছু বলবে তার আগেই…মারিয়া আর মাহিয়া ভাইয়া বলে দৌড়ে এসে আদ্রের উপর ঝাপিয়ে পড়ে। রুদ্রের মা নিজের ছেলেকে এতো বছর পর দেখে তাল সামলাতে না পেরে, দৌড়ে এসে ছেলের বুকে হাউমাউ করে কাঁদতে থাকল। বিহারিনী এখনো বুঝে উঠতে পারছে না, লোকটি কে? রুদ্রের মা এসেই ছেলের দিকে তাকিয়ে থমকে গেল, কাঁপা কাঁপা গলায় বলল – রুদ্র, বাবা….

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here