মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী ১৪ #writer_Neel_Noor

0
481

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
১৪
#writer_Neel_Noor

সকাল সকাল সবার অগোচরে বাড়ির বাইরে বের হলাম। খুব ই অচেনা এই শহর আমার। আজ ই প্রথম বের হলাম এই বাড়ির বাইরে, কেমন যেন অদ্ভুত এই বাড়ি, শহরের শেষ প্রান্তে, জনশূন্য নিস্তেজ, হয়তো গগন শেষে হাওলাদার বাড়ি ই একান্ত এক নীড়।

গেইটের বাইরে দাঁড়িয়ে আছি, অপেক্ষা করছি। ঠিক তখনই একটা মটর বাইক আমার সামনে এসে থামে। দমকা হাওয়ায় ভয় পেয়ে কয়েক কদম পিছিয়ে গেলাম। হেলমেট উন্মুক্ত করতেই মুখে মুচকি হাঁসি ফুটে উঠল। সামনে দাঁড়িয়ে আছে শায়ন ভাই(আমার বান্ধবীর বড় ভাই)।

শায়ন – কেমন আছো মায়া। কেমন আছো শশুর বাড়ি তে?

আমি ও মনের কষ্ট মনে লুকিয়ে হাসি মাখা চেহারায় উত্তর দিলাম, আলহামদুলিল্লাহ। ভালো আছি। আপনি কেমন আছেন, শায়নিকা (বান্ধবী) কেমন আছেন? আঙ্কেল আন্টি?

খোশ বিনিময়ের পর আমি তাকে সেই সিরিজ আর কাঁচের শিশি টা দিয়ে দিলাম। সব কিছু খুলে বললাম রাজের সম্পর্কে। ওনি আমাকে একটা ঠিকানা দিল, হাসপাতাল আর ডাক্তার এর। রাজ কে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যেতে বলল….

____

সবার অগোচরে বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করলাম। চুপচাপ রান্নাঘরে যেয়ে কাজে লেগে পড়লাম। যেন কেউ না বুঝে।

——

কেটে গেল আরো এক দিন। আজ শায়ন ভাইয়া আবার ও আসবেন, নিউজ দিতে। তাই আমি আগে থেকেই বাড়ির সবাইকে বললাম একটু সময় করে বাড়িতে থাকতে। বিকেলে সবাই ড্রইং রুমে বসে আছি। ঠিক তখনই দরজায় কলিং বেল এর আওয়াজ… আমি বুঝতে পারলাম নিশ্চয়ই শায়ন ভাই এসেছে….

দরজা খুলতেই, শায়ন ভাই কে দেখলাম দাঁড়িয়ে আছে। তাকে ভেতরে আসার জন্য বললাম। বাড়ির সবাই আমার দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
মনে মনে সবার কত কিন্তু কিন্তু ভাব, আমি ওগুলো কে পাত্তা না দিয়ে বাবা কে উদ্দেশ্য করে বললাম – বাবা, ইনি (শায়ন ভাই কে উদ্দেশ্য করে) একজন ডাক্তার। আমার বান্ধবীর বড় ভাই, তার তত্ত্বাবধানে আমি রাজ কে চিকিৎসা করাতে চাই!!

বাবার মুখে খুশি খুশি ভাব থাকলে ও শাশুড়ি মায়ের মুখে গম্ভীর ঘুমোরমুখী ভাব। ঠিক তখনই রাজের বড় ভাই (মহন) বলল- তুমি দুইদিন এ বাড়িতে আসো নাই, এত বড় সিদ্ধান্ত একা কি করে নিলে। তাছাড়া আমার শশুর মশাই তো রাজের ট্রিটমেন্ট তো করছেই না!! এতো বড় অপবাদ, অপমান…. আপনি কি কিছু বলবেন না…মা?

আমি শাশুড়ি মা কে বলার আগেই, দুদিনের ঘটনা সব খুলে বললাম। শায়ন ভাইয়ার হাত থেকে ডকুমেন্ট গুলো দেখালাম সবাইকে, রাজকে তার অগোচরে বিষাক্ত ঔষধ পুশ করা হচ্ছে। তাই রাজের অবস্থা দিন দিন অবনতি তে যাচ্ছে।

রেহানা ভাবী আমার দিকে এগিয়ে এলো, ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে বলল – তোমাকে আমি বোনের নজর এ দেখতাম, তাই বলে, তুমি আমার বাবার চিকিৎসার উপর প্রশ্ন তুলছো।(চোখে জল এসে গেল… কীভাবে বুঝাব সবাইকে)

এর মধ্যে ই শায়ন ভাই বলল- আপনারা সবাই থামুন। আমি একজন ডাক্তার। আমি রাজের সমস্ত পিসক্রিপ্ট, ডিএনএ এবং সিরিজ ও ঔষধি চ্যাক করেছি, এগুলো সত্যি ই রাজের জন্য ক্ষতিকারক। আমি জানি না, আপনারা কাদের দিয়ে চিকিৎসা করিয়েছেন রাজের, যদিও সে সঠিক চিকিৎসা করে থাকে, তবে এটা সিউর রাজের অগোচরে কেউ রাজের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে, তাই রাজের এই বেহাল দশা, (বাবা আর চাচার দিকে এগিয়ে গেল, হাতে ফাইল গুলো দিয়ে) এগুলো দেখতে পারেন, অন্য ডাক্তারদের ও দেখাতে পারেন….

শাশুড়ি মা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। ক্ষিপ্ত হয়ে উঠলো। আমাকে বলল – দেখো বউ মা। তোমাকে বাড়ির সবার অপছন্দে ও আমি রাজের জন্য বউ করে নিয়ে এসেছি। তাই বলে রাজের সব সিদ্ধান্ত তুমি এভাবে নিতে পারো না। তাছাড়া, তোমার সাহস কি করে হয়, অপরিচিত এক পুরুষ কে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসার, তার উপর আমাদের উপরে ই প্রশ্ন তুলছো? ঠিক ই প্রমান হয়, কেনা বস্তুকে মাথায় তুলতে নেই, বিক্রিতা হয়ে এসেছো, তুমি এই বাড়ির কেউ নও, সেই অধিকার…

আর কিছু বলার আগেই বাবা মাকে ধমক দিয়ে থামিয়ে দিল। বলল- তুমি চুপ করো। তোমাকে কে বলেছে আমার ঘরের ছেলের বউকে আমি কিনে এনেছি। ঘরের সবাইকে প্রশ্ন করি, তোমাদের এই অধিকার কে দিল(খুব ই রাগ আর উত্তেজিত হয়ে)

চাচা শশুর বাবাকে থামাচ্ছে। বাবা হাইপার হয়ে উঠেছে, চাচা শশুর কে ইশারায় কিছু বলতেই, চাচা শশুর বলল- মা (দাদি শাশুড়ি কে উদ্দেশ্য করে) সেদিন তুমি ও ওকে আমার বউয়ের সাথে মিলে কত কি বলেছো। এগুলো সব ই আমি আর বড় ভাই দেখেছি, শুনেছি। একবার ও ভেবেছো, তোমরা একটা মেয়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলছো, সেটা কতটা জঘন্য। মা (দাদী শাশুড়ি) তুমি জানো ও কে (আমার দিকে ইঙ্গিত দিয়ে) ও তোমার মেয়ে মায়েদার মেয়ে।

মায়েদা নাম টা শুনতেই চমকে উঠলাম। আমার মায়ের নাম? ছল ছল চোখে বাড়ির সবার দিকে তাকালাম।দাদি শাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে আছে, কি যেন দেখছে?

এতো রহস্য কেন এই হাওলাদার বাড়িতে। এখন তো আমার ই নিজেকে নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে? আমার মাকে নিয়ে? আমার মা কি এই বাড়ির কেউ? এগুলো ভাবতেছিলাম, ঠিক তখন ই দাদি শাশুড়ি আমাকে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

_____

শায়ন ভাই চলে গেছে। পরিস্থিতি এখন ও উত্তেজিত অবস্থায় আছে। রাজের রুমে বসে আছি। রাজ যখন ই উঠছে আরও বেশি ক্ষিপ্ত হচ্ছে। ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে ‌। বাবা আর চাচা সবকিছু আর্জেন্ট ব্যবস্থা করছে, রাজ কে সুইজারল্যান্ড পাঠানোর জন্য।

আজ জানতে পারলাম, আমার মা কে। সেদিন কেন বাবা মা কে বলেছিল, তুই তোর মেয়ের পরিচয় দিতে পারবি না। আমার মা এই বাড়ির মেয়ে। মায়েদা হাওলাদার। মা প্রেম করে আমার বাবার সাথে চলে যাওয়ার পর কেউ মেনে নেয় নি, কারন আমার বাবা এতিম ছিল। তাই এতোদিন বাড়ির সবার সাথে যোগাযোগ রাখে নাই। কি অদ্ভুত দুনিয়ার খেলা।

হঠাৎ ঐ রকেট টার কথা মনে পড়লো। রাজ তো ঘুমিয়ে ই আছে , তাই রাজকে একা রেখেই, আমি আমার রুমে গেলাম!! আলমারি টা খুলে রকেট টা হাতে নিলাম। তারপর রাজের রুমের দিকে ফিরতেই….

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here