#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
১৮
#writer_Neel_Noor
আজ এতো শক্ত মানুষ হয়েও আমি নিজেকে শক্ত করতে পারছি না!! পরিশেষে দোষ কার, ভবিষ্যৎ কি? কেমন গোলক ধাঁধা এটা….
ঘুম আর আসলো কোথায়, বারান্দায় দোলনায় বসে আছি, কালো মেঘময় আকাশের দিকে তাকিয়ে আছি, ভাবছি….
তুমি ভালোবেসে পাগল!! আমি ভালোবাসা না পেতে পেতে কাঙাল!!
বিধাতার মিলন মেলা ঝুড়িতে, এ কেমন মিলন তোমার আমার!!
_______
রাজ যদিও মাতাল অবস্থায়, তবে হুঁশে ঠিক!! ঐ যে বলে না, জাতে মাতাল তালে ঠিক। সে যাচ্ছে, অন্ধকার কুঠুরিতে, একটু ঢুলে ঢুলে, যখন ই রুদ্রের রুম পাড়ি দিয়ে সেই অন্ধকার কুঠুরিতে যাবে, তার আগেই রুদ্রের রুম থেকে আওয়াজ আসছে। প্রথমে সে উঁকি দিতে না চেয়েও, বিহারিনী কে এক নজর দেখার ইচ্ছা জাগতেই দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়াল, দরজা টা ও আবজানো ছিল, তাই সহজেই রাজ রুমের ভেতরে উঁকি দিলো….
ভেতরে রুদ্র, তার বাবা চাচা আর দাদী বসে আছে। বিহারিনী নেই। বিহারিনী নেই, তাই আগ্রহ হারিয়ে সরে যাওয়ার উদ্দেশ্যে পা বাড়াতেই একটা বাক্য তাকে বাধ্য করল, এখানে দাঁড়িয়ে ভেতরের আলাপচারিতা শুনার জন্য। রাইটার -নীলনূর।
রুদ্র- আজ সপ্তাহ খানেক হবে বিহারিনী কোমা থেকে বেরিয়েছে। (রাজ যেন চমকে উঠল)
দাদী – কি বলিস!! এতো দিন আমার নাতনি…
রুদ্র – হুম। সেদিন এক্সিডেন্ট এ আমি আর আমার টিম তন্ন তন্ন করে খুঁজেছি। পুরো শহরের নদীর শাখাতে শাখাতে ও….এতপর আল্লাহর অসীম রহমতে আমরা বিহারিনী কে খুঁজে পাই , সেখানে তার শরীর ক্ষতবিক্ষত ছিল, অবস্থা ছিল জটিল!! কোনমতে সে শুধু শ্বাস নিচ্ছিলো। তারপর আমি তাকে আমার বন্ধুর হাসপাতালে আইসিইউ তে এডমিট করাই। আমরা পুরো টিম ছয় মাস বিহারিনীর চিকিৎসা দেশেই করাই…..যদিও ভেতর থেকে বিহারিনী কোন রিসপন্স করছিলো না , তবে আস্তে আস্তে সে বাহ্যিক দিক থেকে সুস্থ হচ্ছিল।
তারপর আমি আর আমাদের টিম মিলে, পরামর্শ করে বিহারিনী কে দেশের বাইরে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাই। দীর্ঘ দুই বছর একমাস পর তার জ্ঞান ফিরে। যদিও বিহারিনী এখন সুস্থ, তবে তার পুরোপুরি সুস্থ হতে আরো কিছু দিন সময় লাগবে, আর সে দেশে ফেরার জন্য পাগলামি করছিলো, রাজকে দেখার জন্য, তোমরা তো জানো, রাজ কে বিহারিনী আগে থেকেই পছন্দ করতো, রাজ ও….
কিন্তু রাজ তো মায়ার সাথে সংসার করছে, কয়েকদিন পর বাচ্চা হবে, সুন্দর একটা সংসার, বিহারিনী এমনিতেই আবেগী মেয়ে, আমি চাই না রাজ মায়ার সংসার ভাঙ্গার দোষ ওর উপর এসে পরুক, তাই জ্ঞান ফিরার দুইদিন পর একপ্রকার বাধ্য করেই বিহারিনী কে আমি বিয়ে করি। তারপর সপ্তাহ পর দেশে ফিরি…..
রাজ যেন আকাশ থেকে পড়ল। সে এখন হারে হারে বুঝতে পারছে, কি ভুল টা ই না সেদিন করেছে সে। রুদ্র বুঝতে পেরেছে, বিহারিনী তাকে পছন্দ করে, ভালোবাসার চোখে দেখতো, বিহারিনীর ছোট ছোট আবদার গুলো, কেন যে সে বুঝতে পারে নাই….আজ তার ভুলের জন্য ই সে বিহারিনী কে হারিয়ে ফেলছে…..
বিহারিনী কোথায় আছে রাজ জানে, আগে প্রায় প্রায়ই বিহারিনী তার দাদীর রুমে ঘুমাতো, আজ ও তার ব্যাতিক্রম নয়…. রাজের ভুলো মন, মস্তিষ্ক কে প্রাধান্য না দিয়ে, দাদির রুমের দিকে ছুটলো… সবার অগোচরে….
এইদিকে সবাই চিন্তিত!! রাজ মায়া বিহারিনী রুদ্র সবার জীবন নিয়ে,….আরো কথা হচ্ছে, যেগুলো দেওয়ালের আড়ালে ই থেকে গেল…
_____
বিহারিনী ওষুধ এর প্রভাব এ ঘুমিয়ে আছে। অদ্ভুত এই বিহারিনী ঘুমিয়ে থাকলে যেন আরো সুন্দরী, রাজকন্যা হয়ে উঠে। রাজ দাদির রুমে ঢুকতেই, বিছানায় এলোমেলো অবস্থায় বিহারিনীকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে, এক অদ্ভুত নেশায় আসক্ত হয়ে পড়ে…
ধীর পায়ে বিহারিনীর দিকে এগিয়ে গেল। খাটে বসে বিহারিনীর চুল গুলো কানে গুছে দিল, মিষ্টি বিহারিনী ঘুমন্ত অবস্থায় ই কেঁপে উঠলো, ওদিকে রাজ বিহারিনী তে আরো বেশি মাতাল হচ্ছে, লাল টকটকে ঠোঁট, টমেটোর মতো ফুলো ফুলো গাল, মিষ্টি সুগন্ধ… সবমিলিয়ে রাজের অজান্তেই বিহারিনীর মাদকতা রাজকে আকৃষ্ট করছে….
হঠাৎ করেই রাজ বিহারিনীর দিকে ঝুঁকে পড়ল, খুব বেশি ই ফাঁকা নেই, মাত্র কয়েক ইঞ্চি, তবে দরজার দিকে থেকে যদি কেউ দেখে, সবাই বলবে, এক অবৈধ সম্পর্ক গাঢ় হচ্ছে….
(দরজার আড়াল থেকে কেউ ছবি ঠিক ই তুলে নিয়ে, অদ্ভুত বিশ্রী হাঁসি দিল)
রাজ এখন ও বিহারিনী কে স্পর্শ করে নাই। তার আগেই রুদ্রের কথা গুলো ভেসে উঠলো মনে, এই বিহারিনী তো এখন অন্যের বউ, অন্যের আমানত!!
মুহুর্তে ই সে একটু দূরে সরে গেল, ফিসফিসিয়ে বললো –
তোমাকে ভালোবাসার পর এ জীবনে দ্বিতীয়বার কাউকে ভাবিনি, বিধাতার এমন গোলক ধাঁধা খেলায় আমি অন্যজনের_তুমি অন্যজনের হতে পিছপা কেউ ই হটেনি!!
তুমি আমার সেই জন যাকে বুকের বা পাশে যত্ন করে আমি কী জীবন্ত দাফন করিনি? 🙂🧡
আমি ভালো আছি, দিব্বি ই আছি, হয়তো এক যন্ত্রের মতো বেঁচে আছি!! যন্ত্র ও একদিন নষ্ট হয়ে যায়, আমি ও ফুরিয়ে যাব!!
এই সময়ের আমার হাহাকার থেকে কীভাবে মুক্তি পাব বলো তো?
কৈফিয়ত দিতে পারবা !!একটু দাও না!!
সেদিন মুখ ফুটে কেন বল্লেনা, আমাকে জুড়েই তোমার প্রথম বসন্ত ফুটেছিল মনে!!
রাজ চুপিসারে ই রুম থেকে বেরিয়ে গেল। সে চায় না, কেউ তাদের দেখুক!! তার ভালোবাসার উপর কলঙ্কের তিলক আঁকা হোক!!
________
বিহারিনী ঘুম থেকে উঠতে উঠতে দশ টা বেজে গেল। সবাই যার যার মতো, নিচে কাজ করছে!! বিহারিনী ফ্রেশ হইতে ই নিচে দৌড় , তার সেই ষোড়শী বয়সের স্বভাব এখন ও সে ভুলতে পারে নাই…..
বিহারিনী- চাচি ও চাচি…ইকটু খেতে দেও!! (রান্না ঘরে ঢুকে ই নতুন এক মুখের দিকে তাকিয়ে আছে)
মোহিনী একা রান্নাঘরে। বাড়ির সবাই বাগানে বসে আছে। বসন্তের হালকা আমেজ, সবাই হালকা সাদামাটা রোধ, ঠান্ডা গরম অনুভব করছে….
মোহিনী ভ্রু কুঁচকে তাকালো, বিহারিনী কে সে মোটেও পছন্দ করে না, বিহারিনীর সম্পর্কে সে সব জানে, মহনের দূর্বল আকাঙ্ক্ষা ও। তাছাড়া সে বিহারিনী কে সৌন্দর্যের দিক থেকে ও হিঃসা করে।
মোহিনী – তুমি কি জানো না এই বাড়ির নিয়ম!! নয়টার আগেই সকালের খাবার খেতে হয়!!
বিহারিনীর এমন ঠোঁট কাটা কথা মোটেও পছন্দ নয়। বিহারিনীর বাজে বাজে অভ্যাস গুলো পরিবর্তন না হলেও, মেজাজ আগে থেকে অনেক খিটখিটে হয়ে গেছে!! হুটহাট কথা এখন সে হজম করতে পারে না, চিল্লিয়ে উঠল, বলল- তুমি কে!! এই কথা বলার?
মোহিনী – এই বাড়ির বউ আমি। মহনের বউ। সবার জন্য যেই নিয়ম তোমার জন্য ও একই নিয়ম। নিয়ম বল্লে কি পরিচয় দিতে হবে নাকি, তুমি কে? তোমাকে পরিচয় দিব….
বিহারিনীর যেন হঠাৎ করেই রাগটা মাথায় উঠে গেল, শান্ত বিহারিনী একটা অশান্ত কাজ করে বসল, হাতের পাশে থেকে চাকু টা হুট করে হাতে নিয়ে, মোহিনী কে দেওয়ালের সাথে চেপে ধরল, গলায় ছুড়ি ঠেকিয়ে বলল- আমি বিহারিনী। বিহার হাওলাদার আর রিনা হাওলাদার এর মেয়ে। এই বাড়ির মেয়ে। তার উপর রুদ্র হাওলাদার এর বউ। কথা টা কি দাঁড়ালো!! একসাথে এই বাড়ির ই মেয়ে আর বউ!! তুই কি জানিস, তোর জামাই এই বাড়ির কেউ না, ফালতু কুত্তা!! বেপারি বাড়ির বউ, এই বাড়ির বউ হিসাবে পরিচয় দেস, সরম লজ্জা তো রাখ!!
বিহারিনী হাত টা ঝাড়ি দিয়ে সরিয়ে, চোখ উল্টিয়ে, মুখ ভেংচে বলল- আমি এই বাড়ির বউ!! আসছে বউ হইতে, অধিকার দেখাতে…
বিহারিনী তার প্রিয় রুটি ভাজি নিয়ে ধাপাধপ রান্না ঘর থেকে বের হয়ে গেল…..
এদিকে মোহিনী রাগে ক্ষোভে ফুঁসছে….
চলবে….