#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
১৯
#writer_Neel_Noor
বিহারিনী সোফায় বসে রুটি রোল করতে ব্যাস্ত। অনেক দিন পর সে তার প্রিয় খাবারের স্বাদ নিচ্ছে, তাই, আশেপাশে খেয়াল নেই।
সকালে উঠতে বরাবরের মতো ই আজ ও লেইট। আমি আস্তে আস্তে সিঁড়ি দিয়ে নামতে ই হাঁপিয়ে গেছি। ধীরে ধীরে সোফায় বসলাম। পাশেই বিহারিনী খাচ্ছে, মনের সুখে!! এই মেয়েটা আসলেই একটু অন্যরকম।
এটা ভাবতেই, বিহারিনী হঠাৎ আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি একটা হাসি দিল। তারপর বলল- ওমা, তুমি ও এখন ঘুম থেকে উঠেছ।
আমি মাথা নাড়িয়ে সায় দিলাম, বিহারিনী মুচকি হেসে তার প্লেটে থাকা রুটি রোল গুলো আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো, আবার ও বলল – তাহলে খাও। রান্নাঘরের সব রুটি আমার দখলে, আর নেই, দুপুরের রান্না হচ্ছে এখন!! এখান থেকে অর্ধেক তোমার, খেয়ে নেও।
বিহারিনীর এমন সরল ছোটমানুষী ব্যাবহার আমার হৃদয় কাড়লো। মনেই মনে প্রশ্ন জাগলো, কত সহজেই তার খাবারের অর্ধেক ভাগ আমাকে দিয়ে দিল, ঠিক যতটা সহযে আমাকে সে রাজের বউ হিসাবে মেনে নিল। তার প্রথম ভালোবাসা, প্রথম বসন্তের উৎসবের আমেজ সমস্ত কিছু ই আমি কেড়ে নিয়েছি….অথচ, সদ্য ভূমিষ্ঠ হওয়া শিশুর মতো সবকিছু দেখছে, আসলে ই কি বিহারিনী রাজ কে কখনো গভীর ভাবে ভালোবাসছে? নাকি রাজের প্রথম ভালোবাসা হিসেবে ই সে গেঁথে আছে?
_____
আজ সারাদিন ও রাজের মুখখানি দেখলাম না। আমার থেকে তার যেন হাজার বার লুকিয়ে থাকার ইচ্ছে। কেন? আচ্ছা, আমি কি তার কাছ থেকে কৈফিয়ত চেয়েছি_চাইনি তো? তাহলে?….সব জেনে ই তো আমি তার হয়েছি, সে যদি আমাকে নাই ই মানে_না_মানুক!! আমাদের অস্তিত্ব টা কে না হয় নাম দিক…..
নিজের অদ্ভুত ইচ্ছে টা কি সত্যিই অদ্ভুত!!না তো , মোটেও না, পৃথিবীর সকল মা ই চায় , তার সন্তানের পিতৃপরিচয়! আমি ব্যাতিক্রম হবো কেন?
_______
অন্যদিকে, আগের প্লান ফ্লপ হওয়াতে, আর বর্তমান অবস্থা দেখে, তারা মহা চিন্তায় আছে । এই বাড়ির সম্পত্তি হাতানো মোটেও সহজ নয়। কি করা যায়!! যাদের ইঞ্চি ইঞ্চি রক্তের স্রোতে হাওলাদার বাড়ির বিনাশ লিখা আছে।
মূহুর্তে ই লিডার কিছু একটা নির্দেশ করতেই, প্লানের সূত্রপাত ঘটল, ছড়িয়ে পড়লো চারদিকে, কিন্তু চার_দেওয়ালের মধ্যে ই বিস্তৃত। উচ্চস্বরে একত্রে সবাই হেসে উঠল….
______
কেটে গেল আরো এক সপ্তাহ। সময় যেন ঘনিয়ে আসছে। আমার অস্তিত্ব আমাকে জানান দিচ্ছে, সে আসবে অতি শীঘ্রই। মাঝে মাঝে নিজেকে খুব ই পূর্ণ মনে হয়, অনুভবে!! হয়ত এটাই মাতৃত্বকালীন স্বাদ, যা সকল নারীকে পূর্ণ করে।
এই পুরোটা সপ্তাহ রাজ আমাকে এড়িয়ে গেছে। কোন একদিন এক পলক চোখের দেখা হয়েছে, আবার হয় নাই। খুব ব্যস্ত সময় পার করছেন ব্যাবসার কাজে, মূলত বিহারিনী এই পরিস্থিতি থেকে সে পালাতে চাচ্ছে। কিন্তু রাতে সে ঠিক ই মদ্যপান এ অভ্যস্ত। সবকিছু ভুলতে চাওয়ার নেশায় , সে দিন এ পালায়_রাতে ঠিক ই আলিঙ্গন করে।
আজ আর নয়। আমার সহ্যের সীমা অতিক্রম করে গেছে। আমি কি বলেছি, আমার থেকে পালাতে, কৈফিয়ত দিতে , তাহলে… আমার না হোক আমার বাচ্চার জন্য হলেও তাকে সর্বজ্ঞানে সবকিছু বাস্তব রুপে আলিঙ্গন করতে হবে।
এতোদিন বিহারিনী কে আমি দোষী ভাবতাম। কিন্তু আমি এই সপ্তাহ গুনেও রাজের প্রতি তার একরাশ ও আগ্রতা দেখি নাই। হয়তো বিহারিনী নিজেকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। খুব ই অদ্ভুত সে…. বুঝতে পারছি না, আমার জানা শোনা বিহারিনীর সাথে তার আকাশ পাতাল পার্থক্য!! সে কি সত্যিই বিহারিনী!! নাকি মোখশময় অন্যকেউ!!মাঝে মাঝে বাড়ির লোকজন ও বিহারিনী কে অদ্ভুত চোখে দেখে, চিন্তা করে….
______
রাজের অপেক্ষায় বসে বিহারিনী তে আমি মুগ্ধ, চিন্তিত, বিষ্মিত। হঠাৎ করেই আমার ফোনের নোটিফিকেশন বেজে উঠলো। আননোন নাম্বার থেকে হোয়াটসঅ্যাপ এ একটা ছবি এসেছে। নিচে লেখা আছে,
স্ত্রী স্বামীকে সুখ না দিতে পারলেই, স্বামী অন্যের মধুতে মুখ ভেজায়…..আহ, কি রঙ্গখেলা ….
ছবিটা দেখার আশায় ক্লিক করতেই, রাজ আর বিহারিনীর কিছুটা আপত্তিকর ছবি…. ছবিটা দেখেই খপ করে বসে পড়লাম….পেটটা খুব ই ব্যাথা করছে….
এর মধ্যে ই দরজা খোলার শব্দে চমকে উঠলাম। রাজ এসেছে, দরজার সামনে এসেই দাঁড়ালো। ইশ্, নিজের কি অবস্থা বানিয়েছে, মূহুর্তে ই হৃদয় পাঁজরে কষ্টের বুনিয়াত শুরু। যদি ও অজান্তেই চোখের পানি গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে, ইশ্ কি বেহায়া এই চোখ!! মনে পড়ে গেল মোবাইল এর ছবিটা….
রাজ – তুমি এখন ও ঘুমাও নাই, মায়াবিনী!! কেন জেগে আছো। শরীর খারাপ করবে তো। (আমি তাকিয়ে আছি) এভাবে তাকিও না, তোমার দু’চোখের স্বপ্ন, আবদার, অধিকার, দায়িত্বের বেড়াজালে থেকে ও আমি নেই। আমি পারছি না, বড্ড সময় প্রয়োজন।
মনে আজ খুব ই কষ্ট, রক্ত খরন হচ্ছে। কি করে থামাই নিজেকে। খুব সহজে রাগী না আমি, তবে আমার মেজাজ ও ইদানিং আরো বেশি খিটখিটে হয়ে গেছে, রাজের দিকে ভরা পেটটা নিয়ে, এগিয়ে গেলাম, ঠাস করে একটা চড় বসিয়ে দিলাম, বললাম – আমি কি মানুষ না। আমার কি মন নেই। আমার পেটের অস্তিত্ব কি এইসব ফিল করছে না। (রাজ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে আছে) রাজের একটা হাত ধরে আমার পেটের উপর দিয়ে বললাম – দেখ, এখানে তোমার অস্তিত্ব রাজত্ব করছে, পরিচয় দিতে পারবে তো, আমাকে বিয়ে করে, আমাকে ছুঁয়ে, দায়িত্ব নিয়ে, ও তুমি সেই দাঁয়িত্ব পালন করতে পারো নাই। আমি এক নারী, আমি এমন এক নারী, যে মুখ বুজে সহ্য ই করছে….চেয়ে চেয়ে দেখছে, তার স্বামীর কারবার!! যে অন্য একটি মেয়ের জন্য ছটফট করছে…. আমার মতো নিজের অস্তিত্ব কে অন্য একটা মেয়ের জন্য ফেলে দিবেন…(রাজ ফুঁসে উঠলো)… না না, … ফুঁসে উঠেছেন কেন, (ছবিটা দেখিয়ে) দেখুন কি সুন্দর মূহুর্ত, তাই তো আমাকে ভুলে যাচ্ছেন, আমাদের অস্তিত্ব টা কে ও….. আমি এগুলো মেনে নিয়ে বেঁচে থাকব তা কি করে হয়.. আমি আমার বাবার মতো ই না হয় বাবার কাছে নিজের এই পাপকে (পেটে হাত দিয়ে)চলে যাই….
রাজ আর সহ্য করতে না পেরে,ঠাস করে একটা চড় মারল, ভরা পেটে থাপ্পর টা সহ্য করতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যাই, মাথাটা খাটের পায়ার সঙ্গে বারি খেতে ই….রাজ পাশের টেবিল টা তে একটা ঘুষি মারতে ই ঝন ঝন ঝন করে কাঁচের টেবিল টা ভেঙে গেল…. দরজা খুলে রাজ ধপ ধপ করে চলে গেল…..
হটাৎ থাপ্পড় এ আমি কিছু আঁচ করতে পারলাম না , মাথা কেটে রক্ত পড়ছে, কিন্তু সব কিছু কেমন যেন ঘোলা ঘোলা লাগছে, মোবাইল টা খুঁজছি, আশেপাশে হাতিয়ে মোবাইল টা পেলাম।
পেট অতিরিক্ত ব্যাথা করছে, ফ্লোরে রক্ত আর রক্ত, চোখ ঝাপসা… আমার সবশেষে বাঁচার কোন ইচ্ছে ই মন থেকে পাচ্ছে না… কিন্তু অজান্তেই পেটে হাত যেতে মনে হলো, এর তো দোষ নেই। পুরো অধিকার রয়েছে পৃথিবীর আলো দেখার….
মোবাইল টা ভালো করে দেখছি না, কি থেকে কি চাপছি বুঝে উঠতে পারছি না, তবে এই মুহূর্তে আমার খুবই সাহায্যের প্রয়োজন। মাথা টা চক্কর দিয়ে উঠলো, মোবাইটা হাত থেকে দূরে পড়ে গেল…. কেউ একজন রুমের ভেতরে আসছে…দরজাটা খুলে ভেতরে আসল!! কিন্তু কে সে?
যদিও এক আকাশ আশার আলো, তাকে ঘিরে!! কিন্তু মূহুর্তে ই আশার আলো নিভে গেল। যখন মোহিনী ভাবি আর শাশুড়ি মায়ের কন্ঠ টা শুনলাম – আমাদের প্লান কাজে দিয়েছে। রাজ কে তো ধীরে ধীরে শেষ করতে পারি নি এই অসভ্য মেয়ের জন্য!! পাগলের জন্য ভালোবাসা উতলিয়ে পড়ছিল। কিন্তু, (অট্ট হাসি দিয়ে) আজ সেই পাগল ই নিজের হাতে তোর বিনাশ নিয়ে এসেছে।
অন্যকারো আসার শব্দ শোনতে ই তারা এখান থেকে সরে দাঁড়ালো। আর ভেতরে বিহারিনী প্রবেশ করতে ই মায়া ভাবী ইইইইইইই ……
চলবে….