#ভালোবাসার_অন্যরুপ 🌸❤
#পর্ব :17
#লেখিকা : Aye Sha
🌸
আমান– সাহস হলো কি করে তোর?? কি করে করতে পারলি তুই এটা?? অ্যান্সার মি ড্যাম ইট!! (চিৎকার করে)
অর্নিল– ভ..ভা..ভাই আ..আমি আ..আসলে (আমতা আমতা করে)
আমান– আসলে কি?? তুই জানিস না মীরা আমার কাছে কতটা ইম্পরট্যান্ট?? বল জানিস না??
অর্নিল– আমি জানি ভাই, এটাও জানি যে তুই ভাবি কে ছাড়া বাঁচবি না। তুই ওকে পাগলের মতো ভালোবাসিস ভাবি কে আর ভাবি তোকে অলয়েস অপমান আর কষ্টই দেয় তাই…
আমান– তাই তুই ঠিক করলি যে মীরা কে কষ্ট দেওয়ার জন্য ইসমি কে ইউস করবি, ওকে কষ্ট দিবি রাইট??
অর্নিল– (নিশ্চুপ)
__ঠাসসসস!!
অর্নিলের নিশ্চুপ থাকায় আমানের জানো মাথায় রক্ত উঠে গেলো, কোনো কিছুর পরোয়া না করে ঠাস! করে চড় মেরে দিলো অর্নিলের গালে, অর্নিল কোনো রিয়াক্ট করলো না, চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে। আজ পর্যন্ত আমান কোনদিন অর্নিলের গায়ে হাত তোলেনি, হাত তো দুরের কথা উঁচু গলায় কথা বলেনি। অর্নিল কোনদিন আমানের অমতে, অপছন্দের কোনো কাজ করেনি। কিন্তু আজ দোষ টা অর্নিলের তাই সে মাথা নত করে রয়েছে।
অর্নিল– ভাই আমার ভুল হয়ে গেছে, আসলে তোর কষ্ট টা আমি মেনে নিতে পারিনি, আমি চাইনি তোর অতীত আবার ফিরে আসুক, ভাবি তোকে যেভাবে অবহেলা করে, তোর ভালোবাসা কে যেভাবে অবহেলা করে তাতে আমার মনে হয়েছিল ভাবি তোকে ছেড়ে চলে যাবে, তাই ইসমি কে দিয়ে ভাবি কে বোঝাতাম যাতে তোকে ছেড়ে না যায়। তুই তো জানিস আমি কোনদিন মেয়েদের সাথে রিলেশন করিনি জাস্ট মাঝে মাঝে মজার জন্য র্যাগিং করতাম দেট সেট। ইসমি যদি ভাবি কে বোঝায় তাহলে মে বি ভাবি তোকে ছেড়ে যাবে না এই ভেবেই আমি অভিনয় করেছিলাম বাট সেটা সত্যি হয়ে যাবে ভাবিনি। আই অ্যাম স্যরি ভাই, আমি লন্ডন চলে যাবো, তোদের আর ডিস্টার্ব করবো না।
অর্নিল ঘুরে চলে যেতে নিলেই আমান অর্নিলের হাত ধরে ওকে ঝাপটে জড়িয়ে ধরে, অর্নিল কে চড় মারার পর আমানের নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছিল, একটা বার অর্নিলের কথাটা শোনা উচিত ছিলো ওর, যতই হোক ভাই তো, ছোট থেকে ভাই কে আগলে রেখেছে, আর অর্নিল ও আমানের বাধ্য, কোনদিন ওর মুখের উপর কথা বলেনি, সে ঠিক হোক বা ভুল সব সময় মেনে নিতো।
আমান– নিজের ভাইয়ের উপর রাগ করে থাকবি??
আমান অর্নিল কে জড়িয়ে ধরলেও অর্নিল ধরেনি, হয়তো অভিমান হয়েছে নিজের ভাইয়ের উপর, কিন্তু আমানের কথা শুনে নিজেকে সামলাতে পারলো না, আমান কে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো, আমান তো রীতিমতো শকড অর্নিলের কান্না দেখে।
আমান– (মনে মনে– আমি কি তাহলে একটু বেশি বাড়াবাড়ি করে ফেললাম। সত্যি তো আজ অবধি কোনদিন ওর গায়ে হাত তুলিনি আমি। তাতেই হয়তো কষ্ট পেয়েছে।)
আমার অর্নিল কে সোজা করে দাঁড় করালো আর ওর চোখের পানি মুছে বললো।
আমান– ভাই রাগ করিস না, আসলে আমি বুঝতে পারিনি মাথাটা ভীষণ গরম হয়ে গেছিলো। তুই তো জানিস মীরার কষ্ট আমার সহ্য হয় না আর তুই তো দেখলি ইসমির খবরটা পেয়ে মীরা কতটা টেনসড হয়ে পড়েছিল তাই জন্যই আমি এমন রিয়্যাক্ট করে ফেলেছি।
অর্নিল– ভ..ভাই আ..আমি (কান্না করায়ে কথা জড়িয়ে যাচ্ছে)
আমান– আরে একটা থাপ্পরের জন্য তুই এভাবে কাঁদছিস?? বাচ্চা হয়ে গেলি নাকি তুই??
অর্নিল– ভাই আই রিয়েলি লাভ ইসমি, বাট শি ডাসন’ট বিলিভ মি।
আমান– ও তো আমার ভাই প্রেমে পড়েছে।
অর্নিল– ভাই কি করবো এখন?? আই নৌ ও আমাকে বিশ্বাস বা আমার কথা কে বিশ্বাস করবে না।
আমান– বিশ্বাস ভেঙে বিশ্বাস করার কথা বললে কে বিশ্বাস করবে ভাই আমার??
অর্নিল– আই ক্যান্ট লিভ উইদাউট হার। আই উইল ডাই ভাই।
আমান– ওয়াহ!! শোন আমার মনে হয় না এত তাড়াতাড়ি ইসমি তোর কথা বিশ্বাস করবে কারণ ইসমি নিজের কানে শুনেছে, তুই ওর সাথে অভিনয় করেছিস। এখন তোকে ওকে বিশ্বাস করাতে হবে যে তুই ওকে ভালোবাসিস সত্যিকারের ভালোবাসিস। যেটা অতটা সহজ হবে না।
অর্নিল– এট এনি কস্ট আমি ওর রাগ ভাঙাবো ভাই। আমাকে এর জন্য যা করতে হয় আমি করবো।
আমান– তাছাড়া একটা উপায় আছে।
অর্নিল– কি??
আমান– মীরা!! তুই যেমন ভেবেছিস যে ইসমিকে দিয়ে বোঝাতে বলবি যাতে মীরা আমার সাথে থাকে তেমন আমি মীরাকে বলব যাতে ইসমি কে বোঝায়। কিন্তু আমার মনে হয় না মীরা আমার কথা শুনবে কারণ মীরা ইসমিকে ভীষণ ভালোবাসে। মীরার নিজের বলতে একমাত্র ইসমিই আছে, ইসমি কে যে কষ্ট দিয়েছে তাকে ও অন্তত মেনে নেবে না। তুই বরং মীরাকে কনভেন্স কর তাহলে মেবি তোর কাজটা সুবিধা হবে আর এখন যা ইসমি তোর ঘরে রয়েছে ওকে ওর ঘরে রেখে আয় ও এখানেই থাকবে।
অর্নিল– ওকে ভাই।
এই বলে অর্নিল আমানকে জড়িয়ে ধরল আর নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো।
ইসমি চোখ খুলতেই দেখলো আমি ওর পাশে বসে আছি। ও আস্তে আস্তে ওঠার চেষ্টা করলেই আমি ওকে সাহায্য করি উঠে বসার জন্য, বালিশ টা ঠিক করে দিয়ে ওকে হেলান দিয়ে বসাই। আর জিজ্ঞেস করি।
মীরা– কি হয়েছিল তোর??
ইসমি– মাথাটা কেন যেন ঘুরে গেছিল রে বুঝতে পারিনি (মনে মনে– অর্নিল কি সত্যিই আমাকে ভালোবাসে?? আমি অজ্ঞান হওয়ার আগে যেভাবে কথাগুলো বলল কেন জানিনা মনে হল ও সত্যি বলছে, ওর চোখ বলে দিচ্ছিল ও মিথ্যে বলছে না কিন্তু আজ যেগুলো শুনলাম সেগুলো কি করে এড়িয়ে যাই?? ও যখন আমাকে প্রথমবার নিজের ভালোবাসার কথা বলেছিল তখনও আমার মনে হয়েছিল যে ও আমাকে ঠকাতে পারে না কিন্তু সেই তো আমাকে ঠকালো। একবার কি আবার সুযোগ দিয়ে দেখবো আমিও তো ওকে ভালবাসি। না না না না না এটা ঠিক হবে না আমি আর ঠকতে পারবো না। ভুলে যা ইসমি অর্নিল কে ভুলে যা।)
মীরা– কি রে কোথায় হারিয়ে গেলি??
ইসমি– হ..হ..হমম নাহ ক..কিছু না।
মীরা– সুমি আমাকে লুকাস না। আমার কেন জানিনা মনে হচ্ছে ফুপি আবার তোর সাথে খারাপ ব্যবহার করছে। আমি খুব ভালোভাবেই জানি তুই ঠিকমতো খাওয়া-দাওয়া না করলে তোর এরকম অবস্থা হয়, শরীর খারাপ করে সেন্সলেস হয়ে যাস তুই। সত্যিটা বল সুমি??
সুমি আমাকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে দিলো, আমি সুমির মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে জিজ্ঞেস করলাম।
মীরা– বল এবার কি হয়েছে??
ইসমি– (মনে মনে– আমি যদি এখন মীরাকে বলে দিই যেদিন থেকে মীরা এ বাসায় এসেছে সেদিন থেকেই ফুপি আমার সাথে খুব খারাপ ব্যবহার করে, আমাকে ঠিকমতো খেতে দেয় না, গায়ে হাত তোলে, তাহলে মীরা আবার টেনশন করবে। এমনিতেই ওর টেনশনের শেষ নেই তার মধ্যে যদি আবার আমাকে নিয়ে টেনশন করে তাহলে তো আরেক ব্যাপার। থাক এড়িয়ে যাই ব্যাপারটা।)
মীরা– ফুপি কি তোর গায়ে হাত তুলেছে?? আমি সিওর এটায়।
ইসমি– আ..আসলে..
মীরা– এড়িয়ে যাস না আমায়। আমি খুব ভালো করেই জানি এগুলো।
ইসমি– কি বলবো বল?? আমার তো কিছু করার ও নেই। আমাকে ওখানেই থাকতে হবে।
মীরা– কিন্তু..!!
ইসমি– আমাকে যেতে হবে মীরা, সেই বিকেলে এসেছি। আমি আসছি, আমাকে যেতে হবে।
সুমি উঠে চলে যেতে নিলেই ওর মাথাটা আবার ঘুরে গেলো আর পরে যেতে নিলেই অর্নিল কোমর জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিলো। আমি রেগে গেলাম অর্নিল কে দেখে, এদিকে সুমি অর্নিলের থেকে ছাড়া পাওয়ার চেষ্টা করে চলেছে বাট পারছে না। অর্নিল সুমি আর আমাকে অবাক করে দিয়ে সুমি কে কোলে তুলে নিলো, আর হাঁটা ধরলো রূমের বাইরে।
আমি কিছু বলতে নিলেই আমান রুমে ঢুকলো আর আমাকে চুপ করে যেতে বললো, আমি ওনাকে দেখে চুপ করে গেলাম আর অর্নিল সুমি কে নিয়ে বেরিয়ে গেলো।
মীরা– আমান আপনি জানেন অর্নিল কি করেছে সুমির সাথে?? ও সুমির সাথে ভালোবাসার অভি..
আমান– অভিনয় করেছে তাই তো??
মীরা– আপনি জানেন??
আমান– হমম জানি!
মীরা– ওহ তো আপনি এটাকে সাপোর্ট করছেন??
আমান– পরে কথা বলি এটা নিয়ে?? এখন আমার রুমে চলো এটা অর্নিলের রুম।
কথা শেষ হতে না হতেই আমান আমায় কোলে তুলে ঘরের দিকে হাঁটা শুরু করলো, অগত্যা ওনার গলা জড়িয়ে ধরলাম, আর উনি ঘরের দিকে হাঁটা ধরলো, রুমে এসে আমাকে বেডে বসিয়ে উনি ফ্রেশ হতে গেলেন আর আমি ওনার জন্য কফি বানাতে গেলাম। কফি বানিয়ে নিয়ে এসে হাতে ব্যান্ডেজ করতে লাগলাম কিন্তু এক হাতে ব্যান্ডেজ টা করতে পারছিলাম না। হঠাৎ করেই উনি আমার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে হাত টা ওনার হাঁটুর উপর রেখে ব্যান্ডেজ করে দিলেন। তারপর ব্যান্ডেজের উপরে আলতো করে চুমু দিলো তারপর আমার কপালে চুমু দিয়ে সোফায় এসে বসলো।
আমি নিজের হাতের সে অংশে হাত দিলাম যেখানে ঠোঁট ছুঁইয়েছেন সেখানে হাত বোলাতে বোলাতে ওনার দিকে চোখ যেতেই আমি আতকে উঠলাম।
[#ফিরে_আসবো_আগামী_পর্বে 🥀]