কাব্যের_বিহঙ্গিনী #পর্ব_৩২ #লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

0
587

#কাব্যের_বিহঙ্গিনী
#পর্ব_৩২
#লেখিকা_আজরিনা_জ্যামি

আরবাজের চোখ দিয়েও দুই ফোঁটা পানি গড়িয়ে পরলো। মুখরের কান্নার জন্য আরবাজের আরো বেশি খারাপ লাগছে। আরবাজ মুখরের পিঠে হাত রেখে বলল,,

“শান্ত হ মুখর এতোটা ভেঙে পরলে চলবে?”

মুখর কাঁদতে কাঁদতেই বলল,,

“কি করে শান্ত হবো আরবাজ? যে মানুষটাকে আমি সবসময় আগলে রাখতে চাই। একটা কাঁটাও ফুটতে দিতে রাজি নই। সেই মানুষটা এখন নির্জীব হয়ে শুয়ে আছে। এটা কি করে আমি সহ্য করবো আরবাজ?”

“প্লিজ মুখর এভাবে ভেঙ্গে পরিস না। ডাক্তার তো বলেছে আশা আছে ইনশাআল্লাহ মেহবিন খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠবে।

মুখর আর কিছু বললো না। কিছুক্ষণ পর ও নিজেকে সামলিয়ে উঠলো। ও সোজা হয়ে বসলো। তখন আরবাজ বলল,,

“এখন কেবিনে চল মাস্ক আর ক্যাপ খুলে রাখ। আমি খাবার নিয়ে আসি নাহলে তুই নিজেই অসুস্থ হয়ে পরবি।”

“না আমি ঠিক আছি আমি ভেতরে যাবো না। বিহঙ্গিনীকে ঐ অবস্থায় দেখতে পারবোনা। আর আমার খিদে পায় নি খাবো না আমি।”

‘একদম পাগলামি করবি না সেই কখন থেকে মাস্ক ক্যাপ জড়িয়ে আছিস। বেশিক্ষণ মাস্ক পরে থাকলে তোর সাফোকেশন হয়। বিহঙ্গিনী কে সুস্থ করতে হলে আগে নিজেকে সুস্থ থাকতে হবে তো। তাছাড়া আমি তোকে মেহবিনের কেবিনে যেতে বলছি না আমি সব ভেবে আলাদা করে কেবিন নিয়েছি তোর থাকার জন্য।এখন সেখানে চল।”

“আমার কিছু ভালো লাগছে না।”

আরবাজ জোর করে মুখরকে কেবিনে নিয়ে গেল। তারপর ওখানে গিয়ে মাস্ক ক্যাপ খুলে ফেললো। সেগুলো খুলতেই আরবাজ দেখলো মুখরের মুখটা লাল হয়ে গেছে। ও ওকে হাত মুখ ধুয়ে আসতে বলল। শেখ শাহনাওয়াজ মেহবিনের খবর শুনে কুদ্দুস কে দিয়ে খাবার আনিয়ে ছিলেন বাড়ি থেকে। মুখর হাত মুখ ধুয়ে এসে দেখল আরবাজ খাবার বেড়ে বসে আছে‌। আরবাজ গিয়ে মুখরের হাত ধরে বসালো নিজের হাতে ভাত মেখে তুলে বলল,,

“আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনি কতই না উত্তম কর্মবিধায়ক।
[সূরা আলি-ইমরান, আয়াত ১৭৩]
“নিশ্চয়ই আল্লাহ ভালোবাসেন তাঁর উপর ভরসাকারীদেরকে।”
[সূরা আল-ইমরান ১৫৯]”

এই আয়াত দ্বারা কি বুঝলি যারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে তাদের আল্লাহ তায়ালা ভালোবাসেন এবং তিনি তার বান্দাদের নিরাশ করেন না। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখ নিশ্চয়ই ভালো কিছু হবে। আল্লাহ তায়ালা মাঝে মাঝে আমাদের পরীক্ষা করেন আমাদের খারাপ অবস্থায় ফেলে। এটাও তেমন একটা পরীক্ষা মনে কর ধৈর্য্য ধরে এই সময়টা পার করতে পারলেই তুই সফল।”

সব শুনে মুখর বলল,,

“এই সবকিছু তুই বলছিস ?”

আরবাজ মুখরের দিকে তাকিয়ে বলল,,

“বছর খানেক আগে কাব্যের বিহঙ্গিনী পেজ থেকে একটা পোস্ট করা হয়েছিল,,

“আল্লাহর ওপর তাওয়াক্কুল করা শিখুন তার ওপর ভরসা রাখুন। ইনশাআল্লাহ জীবন সহজ হয়ে যাবে।”

মুখর আর কিছু বললো না। মুখর হা করছে না দেখে আরবাজ বলল,,

“নে এবার হা কর!”

মুখর হা করলো । আরবাজ খুব একটা ওকে খাওয়াতে পারলো না। হালকা খেয়ে মুখর পানি খেয়ে বলল,

‘আমাকে জ্ঞান ঝাড়লি নিজে খাচ্ছিস না কেন । তাড়াতাড়ি খেয়ে নে আমি কিন্তু তোকে খাওয়ার জন্য তোয়াতে পারবো না।”

মুখরের কথায় আরবাজের একটু ভালো লাগলো ও যে টেনশন কম করতে চাইছে সেটা বুঝতে পারলো। আরবাজ বলল,,

‘আমি তোর মতো নাদান বাচ্চা নই যে এইটুকুতেই কান্নাকাটি করবো।”

‘এতো কিছুকেও তুই এইটুকু বলছিস। তুই কেমন রে তোর একটুও মায়া মোহাব্বত নাই।”

মুখরের কথা শুনে আরবাজ কিছু বললো না ও অন্যদিকে ঘুরে গেল। মুখর সামনে আসলো তখন আরবাজ খেতে শুরু করলো। তা দেখে মুখর একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মাস্ক পরে কেবিন ছেড়ে বেরিয়ে গেল। ডাক্তারের সাথে কথা বলে মেহবিনের কেবিনে গেল । ওখানে গিয়েই ওর চোখটা ছলছল করে উঠলো। মেহবিনের মুখে অক্সিজেন মাস্ক হাতে ক্যানুলা স্যালাইন চলছে। ও আস্তে করে টুলে বসলো আর মেহবিনের হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল। আর একটা চুমু দিয়ে বলল,,

“তুমি তো খুব স্ট্রং তাই না বিহঙ্গিনী। তুমি নিশ্চয়ই ফিরবে তোমার কাব্যের কাছে। তুমি জানো এই কম সময়েই তুমি আরো একজনের খুব কাছের হয়ে গেছো। জানো তোমার নেত্রী আজ তোমার জন্য কতো কেঁদেছে। তোমার জন্য বাড়িই যেতে চাইছিল না। ও কি বলছিল তুমি জানো ও বলছিল আমি যেন তোমায় আটকে রাখি যাতে তুমি ধোঁকা দিতে না পারো। ও বারবার একটাই কথা বলছিল ডাক্তার যেন আমারে ধোঁকা না দেয় পুলিশ পাঞ্জাবিওয়ালা। আমি ওর ধোঁকা কথাটার মানে বুঝিনি বিহঙ্গিনী। তবে ওর কথাটার মাঝে কতটা যন্ত্রনা ছিল তা ঠিকই বুঝেছি। তুমি প্লিজ আমাকে আর তোমার নেত্রী কে ধোঁকা দিও না বিহঙ্গিনী।

বলতে বলতেই মুখরের চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। ও আবার বলতে লাগলো,,

“আমাদের এখনো সংসার করা বাকি বিহঙ্গিনী। আমাদের দুজনের সাজানো স্বপ্নগুলো তো একসাথে পূরন করতে হবে তাই না। এই জন্য তো তোমায় তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠতে হবে। প্লিজ বিহঙ্গিনী খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এসো।

মুখর আর কিছু বললো না হাতটা ধরে মেহবিনের দিকে তাকিয়ে রইল। পেছনে দাঁড়িয়ে আরবাজ সেটা দেখলো ওর চোখ থেকেও পানি গড়িয়ে পরলো ও ওখান থেকে চলে গেল।

_________________

“বাড়িতে কোন শোক লাগছে নাকি যে সবাই না খাইয়া নিজের ঘরে ঘাপটি মাইরা রইছে।”

শেখ শাহেনশাহ এর কথায় আরিফা জামানসহ সবাই তার দিকে তাকালেন। মিসেস আমজাদ বললেন,,

“ভাইজানের শরীরটা বেশি ভালো না তাই উনি খাবে না। আর মিশু তো বাড়ি এসেই থম মেরে আছে। যতো যাই বলি মেয়েটাকে তো মিশু অনেকটাই আপন করে নিয়েছে। আমাদের থেকেও ঐ মেয়েটার কথা বেশি শুনে। আর রাইফা জিনিয়া ওরা তো সবটাই নিজের চোখের সামনে দেখেছে তাই ওদের গলা দিয়ে খাবার নামবে না বলেছে তাই আসেনি।”

“সবটাই সামনে দেখছে তাই গলা দিয়া ভাত নামবো না কেন? ঐ মাইয়া আমাগো কিরা তার জন্য বাড়িতে শোক সভা লাগাই লইছে। শাহের ও বলিহারি তার জন্য নাকি আবার আরবাজ রে রাইখা আইছে।”

তখন আরিফা জামান বললেন,,

“আমারও মনে হয় আরবাজকে রেখে আসা উচিৎ হয় নি।

তখন কেউ সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বলল,,

‘সত্যিই ঠিকই বলেছে ওখানে আরবাজ রেখে আসা উচিত হয় নি। বরং আমারই থেকে আসা উচিত ছিল। কারন যে মেয়েটা আমার মেয়ের জন্য এতো কিছু করে তারজন্য আমার নিজেরই উচিত ছিল ওখানে থাকা।”

শেখ শাহনাওয়াজ কে দেখে আরিফা জামান বললেন,,

“ব্যাপারটা আসলে তেমন নয় আমি এই জন্যই বলছিলাম, মেয়েটারও মনে হয় শত্রুর অভাব নেই সেদিন তুলে নিয়ে যেতে চাইছিল আজ আবার এরকম ঘটনা ঘটলো। মেয়েটার মধ্যেই কোন ঘাপলা আছে যদি তারা কিছু করে এতো ঝামেলার মধ্যে আরবাজ কে ওখানে রেখে আসা উচিত হয় নি তাই বলছিলাম আর কি।”

“মেয়েটার মধ্যে ঘাপলা নয় বরং সততা আছে। মানুষের ভালো করতে গিয়েই তার শত্রু হয়েছে তাই আজ এই অবস্থা ডাক্তারের।

“আপনি কি করে জানলেন। আমার তো মেয়েটাকে দেখেই কেমন লাগে সুবিধার মনে হয় না । তাছাড়া সে কোন কথা ফেলতে দেয় না সবার মুখের ওপর জবাব দেয়।”

“তার স্পষ্টবাদীতায় কি তোমার সমস্যা হয় । সে স্পষ্টভাষী তাই সবকিছু স্পষ্টভাবেই বলে এবং করে। আর কি বললে তাকে সুবিধার মনে হয় না আমি তো তার মধ্যে তেমন কোন গুনই দেখতে পেলাম না যার জন্য মনে হতে পারে তার মধ্যে অন্যকিছু থাকতে পারে। সবথেকে বড় কথা হলো,,
‘না জেনে তোমরা কারো ওপর খারাপ ধারণা রেখো না। এটা সবচেয়ে বড় গুনাহ ।
– সহীহ বুখারী –৫১৪৩

আরেকটা হাদিসে ‘রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেন, তোমরা (মন্দ) ধারণা করা থেকে বিরত থাকো। কারণ, (মন্দ) ধারণাই হচ্ছে সব থেকে বড় মিথ্যা।” (বুখারী ৬০৬৬, মুসলিম ০২৬৩)

সে আসার পর থেকেই দেখছি তুমি তার ব্যাপারে অনেক সমালোচনা করছো কথা বলছো কখনো তোমার জায়ের কাছে কখনো তোমার ভাবির কাছে। শুনে রাখো আরিফা হযরত আলী (রা) বলেছেন,,

“অতিরিক্ত সমালোচনা করবেন না। অতিরিক্ত সমালোচনা ঘৃ*ণা এবং খারাপ চরিত্রের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়।”

যাইহোক আর কিছু ভালো লাগছে না। তাছাড়া ওখানে আরবাজ একা নেই ডাক্তারের হাজবেন্ড ও আছে।”

সবশুনে আরিফা জামান মাথা নিচু করলেন আর বললেন,,

‘আমি সেভাবে বলি নি যে আপনি আমায় এতোকিছু বলবেন।”

“এটা শুধু ডাক্তারের জন্য বলি নি। তোমায় স্ত্রী হিসেবে কিছু নসিহত করলাম এখন। যাই হোক মনে কষ্ট পেলে মাফ করে দিও।”

বলেই শেখ শাহনাওয়াজ এক গ্লাস পানি খেয়ে ওপরে চলে গেলেন। নিজের রুমে যাওয়ার আগে মিশুর রুম চেক করলেন মিশু নামাজ পরছে দেখে উনি একটু অবাক হলেন। তবুও নিজেকে ধাতস্থ করে নিজের রুমে চলে গেলেন।
___________________

“তোমার কেউ মারা গেছে নাকি রাইফা?”

হুট করে সায়িদের কথায় রাইফা চমকে উঠলো। সবেই নফল নামায শেষ করে ঘুরলো। আর এখনি এরকম কথাটা শুনে যে কেউ চমকে উঠবে। রাইফা নিজেকে সামলে বলল,,

“আপনি কখন এলেন?’

‘যখন তুমি মুনাজাতে বসে কাঁদছিলে। বোধহয় কারো ভালোর জন্য কিছু চাইছিলে আল্লাহর কাছে আমি ঠিক শুনতে পাইনি।”

রাইফা অন্যদিকে তাকিয়ে বলল,,

‘তেমন কিছু না।”

তখন সায়িদ হুট করেই এসে রাইফার গাল চেপে ধরে বলল,,

‘আমি কখনো অসুস্থ হলে তো এভাবে জায়নামাজ এ পরে কাঁদতে দেখি না। আজ ঐ দুই টাকার ডাক্তারের জন্য মুনাজাতে নদী বানাচ্ছিস। ও কে হয় তোর শুনি?”

রাইফা নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে কোন রকমে বলল,,

‘সায়িদ আমাকে ছাড়ুন আমার লাগছে।”

‘লাগুক লাগার জন্যই তো ধরেছি। খুব দরদ তোর ডাক্তারের প্রতি।”

রাইফা এ ঝটকায় সায়িদকে সরিয়ে দিল। আর বলল,,

“একজন মানুষ হাসপাতালে ভর্তি তার জ্ঞান নেই আর আপনি তাকে নিয়ে কি সব বলছেন। আমি তো আপনার মতো নই। আর কি বললেন আপনার জন্য কিছু করেছি কিনা তাহলে তো আমিও বলছি আপনি কখনো আপনাকে একটু আপনার ওপর সম্মান ভালোবাসা জাগানোর কারন দিয়েছেন কি না। যে কিনা বিয়ে করেও অন্য নারীতে আসক্ত থাকে তার জন্য জায়নামাজ এ পরে কাঁদবো আমি। যে কিনা আমার ওপর দিনের পর দিন মানসিক শারীরিক টর্চার করে তার জন্য কাঁদবো আমি। বাড়িতে একটা কুকুর থাকলেও নাকি তার ওপর মায়া তৈরি হয়ে যায় আর আমি তো মানুষ একই ছাদের নিচে থাকি। তবুও তো কোনদিন আমার ওপর একটু দয়া মায়া দেখান নি। তাহলে আমার ওপর এইটুকু আশা করাও বোকামি ছাড়া কিছু নয়।”

সব শুনে সায়িদ রেগে বলল,,

‘তোর খুব চাপা হয়েছে তাই না? এই চাপা কি করে ভাঙতে হয় সেটাও আমি জানি। শুধু কাকার জন্য তোকে কিছু করতে পারি না। নাহলে এতোদিনে তোকে জ্যন্ত পুতে দিতাম আমি।”

বলেই সায়িদ ফোন নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আজ কেন যেন এরকম করায় রাইফার চোখ দিয়ে পানি পরলো না।

____________________

মুখর কেবিন থেকে বেরিয়েই দেখলো দুই জন ক্যাপ মাস্ক পরিহিত পুরুষ আর একজন বোরকা হিজাব নিকাব পরিহিতা মহিলা এদিকেই আসছে। মুখরকে দেখেই একজন বলল,,

‘মেহু কেমন আছে এখন?”

মুখর বুঝতে পারলো এটা মেহরব চৌধুরী। বাকি দুজনের দিকে তাকিয়ে দেখলো মিহির আর মাইশা। তখন আরবাজ এলো তাদের দেখে একটু অবাক হলো তবুও এগিয়ে গেল। মুখর ওনাদের সবকিছু জানালো

আর এটাও বলল,,

“আপনাদের খবর কে দিল?”

তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

‘দিয়েছে কেউ সেটা নিয়ে তোমার ভাবতে হবে না।তুমি তো আর দাওনি।”

‘আসলে স্যার মেহু আমাকে দিয়ে একটা ওয়াদা করিয়ে নিয়েছে। ওর মৃত্যু ছাড়া আর যাই হোক না কেন আমি যেন ওর অনুমতি ছাড়া আমার পরিবার আর আপনাদের কে না জানাই। এখানে আমি ওয়াদা বদ্ধ তাই আপনাদের জানাই নি। এমনকি আমার পরিবারও ওর বিষয়ে কিছু জানে না।”

তখন মাইশা বলল,,

‘এই মেয়েটা কি দিয়ে তৈরি আল্লাহ ভালো জানেন। এটা কোন কথা ওর মৃত্যুর খবর ছাড়া আর কোন খবর!”

মাইশা কে না বলতে দিয়ে তখন মিহির বলল,,

‘এসব কথা ছাড় মাইশা আমরা এমনিতেও জানি ও কিরকম। এখন কথা হলো মেহুকে এখানে রাখাটা সেফ নয়। এমনিতেই এটা সরকারি হাসপাতাল সিকিউরিটি তেমন জোরালো নয়। যদি মেহুর ওপর অ্যাটাক হয় তাহলে কিছুই করার থাকবে না। এমনিতেও এই অবস্থায় এখানে রাখা রিস্ক।”

‘আমিও তাই ভাবছি মিহির ভাইয়া। কাল সকালেই শিফট করবো।”

‘না যা করার রাতের অন্ধকারেই করতে হবে সবার আড়ালে।”

তখন মেহরব চৌধুরী বললেন,,

‘মিহির ঠিক বলেছে। যা করার রাতেই অন্ধকারেই করতে হবে। আমি যদি ভুল না হই তাহলে মেহবিনের ওপর আবার অ্যাটাক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দিনের বেলায় কেউ মেহবিনের ওপর নজর রাখতে পারে। তাছাড়া সে তো জানে মেহবিন অনাথ ওর কেউ তাই সে আমাদের বিষয়ে ভাববে না। কেউ যে মেহবিন কে এখান থেকে রাতে সরাতে পারে সেটা তার মাথাতেও আসবে না। মুখর তুমি ডাক্তারের সাথে কথা বলো আমরা সব ব্যাবস্থা করে ওকে নিয়ে যাবো জানি এটা রিস্ক তবুও এই রিস্কটা নিতেই হবে।”

‘ঠিক আছে স্যার আমি কথা বলে দেখছি।”

‘আমরাও যাচ্ছি সাথে চলো।”

সবাই ডাক্তারের কাছে গেল। কিন্তু তিনি জানালেন মেহবিনের জন্য এখন রিস্ক কোথাও শিফট করা। সবাই মিলে তাকে অনেক রিকুয়েস্ট করলো আর এটাও বলল ওর লাইফ রিস্ক আছে এখানে। তাছাড়া তারা সবথেকে ভালো হাসপাতালে ওকে শিফট করবে। সব শুনে তিনি রাজি হলেন। তাকে সবাই বলল তিনি যেন কাউকে কিছু না বলেন। তিনি এতেও রাজি হলেন।তিনি মেহবিন কে অনেক স্নেহ করে তার খারাপ হোক এটা তিনি চান না। মিহির বেরিয়ে অ্যাম্বুলেন্স কল করলো এখানের অ্যাম্বুলেন্স ওরা নেবে না। ওরা কোন কিছুতেই কিছু বিশ্বাস করবে না। অ্যাম্বুলেন্স আসতে আরও ঘণ্টা তিনেক সময় লাগবে। মেহরব চৌধুরী মিহির আর মাইশা মেহবিন কে একবার দেখে এলো। মেহরব চৌধুরীর চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো আজ ভিশন অসহায় লাগছে নিজেকে তার। ওরা বেরিয়ে এলো কেবিন থেকে। ওরা সবাই অন্য কেবিনে গিয়ে বসলো আর অ্যাম্বুলেন্সের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো। তখন সবার অগোচরে একজন মেহবিনের রুমে ঢুকলো। মেহবিন কে দেখেই কে দেখেই তার বুকটা মোচড় দিয়ে উঠলো। সে আস্তে করে মেহবিনের হাত দু’টো নিজের মুঠোয় নিয়ে চোখের পানি ছেড়ে বললেন,,

“আমার আম্মা! আমার আম্মা! আপনি আমায় ক্ষমা করবেন আমি আপনাকে রক্ষা করতে পারি নি। আপনাকে সুরক্ষিত রাখার জন্য আপনাকে নিজের থেকে দূরে রেখেছি। তবুও আজ নিজেকে ভিশন ব্যর্থ মনে হচ্ছে আম্মা। আমি জানি আমার ওপর আপনার অনেক অভিযোগ আর এটা জায়েজ ও। কিন্তু সবটাই আপনার সুরক্ষার জন্য। ওরা যে মেহেরের মতো আপনাকেও বাঁচতে দিতো না আম্মা। আমি যে আপনাকে অনেক ভালোবাসি আম্মা তাই তো আপনাকে একেবারের জন্য হারাতে চাইনি। আমি জানি আপনি কোন একদিন ঠিক ফিরবেন আমার কাছে আমি সেদিনটারই অপেক্ষায় আছি।

লোকটার চোখের পানি মেহবিনের হাতে পরলো। তিনি মেহবিনের হাত ধরে চুমু খেলেন মাথাটা উচু করতেই তখন তিনি শুনতে পেলেন,,

“বাবা!”

~চলবে,,

বিঃদ্রঃ দেরি হওয়ার জন্য দুঃখিত। আজকের পর্বটা কেমন হয়েছে জানাবেন প্লিজ। ভুল ত্রুটি ক্ষমা দৃষ্টিতে দেখবেন ধন্যবাদ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here