মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী ২৩( ১ম পরিচ্ছেদ এর পরিসমাপ্তি) #writer_Neel_Noor

0
771

#মায়াবন_বিহারিনী_হরিণী
২৩( ১ম পরিচ্ছেদ এর পরিসমাপ্তি)
#writer_Neel_Noor

ফ্লোরে রক্তের চকচকা দাগ, কেটে যাওয়া মাথাগুলো বডি থেকে দূরে পরে আছে, আরেকজন শরীরে আঁচর আর আঁচর!! ফিকনি দিয়ে রক্ত পড়ছে, সেই রক্তে একজন যুবক নিজেকে মাতাচ্ছে, আরেকজন, খুব সযত্নে অন্যদের দেখাচ্ছে, কীভাবে মানবদেহের চোখ, কিডনি, হৃদপিন্ড সুন্দর করে কাটতে হয়, তা আবার বিনামূল্যে ডোনেটগারে পাঠানো হবে…. সামনে থাকা দুজন পুরুষ ই তা দেখে চিৎকার করছে, আর বার বার রক্ত, মানবদেহের বিশ্রী রক্তের গন্ধে বমি করছে…..জ্ঞান হারাচ্ছে…. নিজেদের জীবন ভিক্ষা চাচ্ছে…..

নিউজফিড জুড়ে নিউজ একটাই, হাওলাদার বাড়ির বড় ছেলের হাতে তিনটি খুন হয়েছে…. ভুক্তভোগীর পরিবারে কয়েকজন কোনমতে বেঁচে থাকলেও তার অবস্থা ও যেনোতেনো!! এ খবর যেন মূহুর্তে ই ছড়িয়ে পড়লো নেট দুনিয়ায়, যদি ও এখনো একজন এর কর্মকান্ড আর কালো অন্ধকার অধ্যায় আড়ালেই রয়ে গেল। সমস্ত দোষবার একজন মাথা পেতে শিকার করে নিল….

_____

ঘটনার শুরু…

রাজের কথা আর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে রাজের সৎমা আর মোহিনী দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নাই। রাজ বিহারিনী সহ নিজের বাচ্চা কে এবং রুমে উপস্থিত সবাইকে ঠেলে রুম থেকে বের করে দিল। বের হতেই রাজের মা আর মোহিনী যেন নিজের রুহ আর শান্তি নিজেদের অন্তরে খুঁজে পেল। তবে এটা কিন্তু চরম ঝড় আসার আগের মূহূর্ত!! যা সকলের ই অজানা….

রাজ মূহুর্তে ই রুদ্র কে কল দিলো। রুদ্র আর রাজ ভাই হওয়ার চেয়ে ও বন্ধু বেশি। কথায় আছে, বন্ধুত্ব বন্ধুত্ব ভাঙ্গে _গড়ে উঠে শত্রু!! সেই শত্রুই আপন হয়…ক্ষন রন সময় গুলোতে…..তাই , রাজ এই সময়টাতে আর নিজেকে সামলাতে না পেরে বন্ধুময় শত্রুকে….যার কালো অধ্যায় নরপশুদের চেয়ে ও ভয়ংকর!! তাকে ই স্মরন করলো…

____

রুদ্র বাড়ি ফিরছে, ঠিক তখন ই পুরোনো নম্বরটা তে কল বেজে উঠলো। প্রথমেই নম্বরটা দেখে রুদ্র চোখ ছোট ছোট করে ভ্রু কুঁচকে ফেলে। মূল উদ্দেশ্য একটাই, দীর্ঘ দুই বছর পর তার নম্বরে পুরোনো রাজ্যের রাজার কল এসেছে!! নিশ্চয়ই ঘটনা গম্ভীর!! ভয়ঙ্কর!!
হাতের বুড়ো আঙুল টা কপালের এক সাইডে স্লাইট করে বির বির করে বলল- সময়টা আবার এসেছে, একটু দূরে সরে যেতে চাচ্ছিলাম, নিজেকে পরিশুদ্ধ করার সময় পেলাম কোথায়!! আবার ডাক এসেছে, ইশ্ রক্তের এক ভয়ংকর নেশায় আসক্ত হতে ই হবে!! কি দুর্বিষহ….

কলটা কেটে গেল। পুনঃ রায় আসবে না। জানে রুদ্র। তাই বাড়ি থেকে মাত্র শ মিটার দূরে থেমে গেল গাড়িটি। যার অন্তরায় থেকে বেরিয়ে এলো, দুনিয়ার কালো অন্ধকার অধ্যায় এর এক ভয়ংকর চিরচেনা মুখ!!

______

হাওলাদার বাড়ির পেছনে একটা বিশাল বাগান আছে, যার একটু গভীরে ই একটা ঘর আছে, খুব বড়ো ও না, আবার খুব ছোটও না!! মাঝারি সাইজের খাড়া এই একতালা ঘরটা সবার চোখের আড়ালে ই থেকে যায়। তাছাড়া এদিকটা সচরাচর কেউ আসে না। তাই কালো কাজ করতে ও এই ঘরের মানুষ গুলো দুই পা ও পিছিয়ে যায় না….

ঘরটায় ঢোকা যে কারোর পক্ষে সম্ভব নয়। হাই সিকিউরিটি আছে এই ঘরটায়, ঘটি করে কয়েকজন লোক ই এই ঘরটাতে ঢুকতে পারে। মিনিট পনের এই ঘরে রাজ_রুদ্রের কথা, চলল। তারপর, মিনিট দুয়েক রুদ্র কতগুলো লোককে আদেশ দিল… ঘন্টা খানেক পর ঘরটা তে, চারজন মানুষ বন্ধি, যারা শুধু অপেক্ষার প্রহর গুনছে…এই বুঝি চিরবিদায় নিলো, তারা পৃথিবী থেকে!!

হাওলাদার বাড়িতে দুজন মানুষ ছাড়া সবাই এই কুঠুরিতে বসে আছে, তার মধ্যে প্রিয় কয়েকজনের ই হাত মুখ বাঁধা। বিহারিনী আর রুদ্রের মা ঘুমিয়ে আছে। মারিয়া আর মাহিয়া তো আগেই লন্ডন মামা মামীর কাছে থেকে পড়াশোনা চালিয়ে যাচ্ছে….বাকি থাকে বাড়ির বড়ো রা, বসে আছে রুদ্রের অন্ধকার কুঠুরিতে….

হাত মুখ বাঁধা অবস্থায় মাটিতে পড়ে আছে, রাজের সৎ মা, মোহিনী, আর মোহিনীর বাবা আর মোহন!!

হাওলাদার বাড়ির কর্ত্রী (রাজ_রুদ্রের দাদী) রাজ কে আদেশ সুরে বলল- আমাদের কোন আক্ষেপ নেই, সবই তো শুনলাম, পমান দেখলুম, তোমাদের কাজ তোমরা করো…..(এটা বলেই দাদী, রুদ্রের চাচা ও বাবা চলে গেল..)

এই বিরল ঘটনার সাক্ষী শুধু একটা কালো রাত, যেখানে পরিবারের সদস্যরা নিজেদের সন্তানদের নরপশু হওয়ার জন্য ও উষ্কানি দিয়ে যাচ্ছে, কি ভয়ংকর এই বাড়ি আর বাড়ির রূপ!! রাইটার -নীলনূর।
_______

শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সবকিছুই জানে রুদ্র আর রাজ। এতো কিছু তাদের অগোচরে হয়ে যাবে তা বুঝে উঠতে পারে নাই, আসলেই ঘরের শত্রু বিভীষণ। তাছাড়া তারা ও নিজ খেয়ালিতে বন্ধি ছিল, একটু পথভ্রষ্ট হয়েছিল, কিন্তু এতে ই যে তাদের শত্রুরা তাদের উপর প্রভাব বিস্তার করবে, আপন কেড়ে নিবে, এটা ই মেনে নেওয়া যাচ্ছে না!!
না সত্যি ই যাচ্ছে না…

তারপরই যা নৃশংস হত্যাকাণ্ডের খেলা সজ্জিত হলো এই ঘরে, যা এই ঘরের ই এক অতৃপ্ত চাহিদা মাত্র!! যা ত্রমধারায় চলছে, এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্ম….

পরিশেষে, রাজের সৎমা, মোহিনী এবং মোহিনীর বাবার মৃত্যুর খেলা এমনভাবে ই সজ্জিত করা হলো, যা মহনের উপর দায়ভার এসে পড়লো। সমস্ত দোষবার মহন মেনে ও নিল, তাছাড়া যে তার কোনো উপায় নেই, কিন্তু তার মধ্যে ও রুদ্র এই প্রথম আফসোস করল, যেখানে সবার দেখা মৃত্যু তিনটি হলেও, অগোচরে চারজনের হয়ে গেছে!! প্রতিশোধের এই নেশায় নিষ্পাপ একজন ও হারিয়ে গেল….

______

কেটে যায় এক সপ্তাহ!! হাওলাদার বাড়ি যদিও শান্ত, ঠিক ততটাই অশান্ত!! রুদ্র ইদানিং একটু অন্যরকম ভাবে চলে, কিছু একটা তাকে কেমন এলোমেলো করে দিয়েছে। এদিকে বাড়িটাও জনশূন্য নিস্তেজ হয়ে গেছে…..

বেপারি বাড়ির লোকজন মহনের কেইসটা লড়ছে।
মহনের অবস্থা খুব ই ভয়াবহ। সে সব জেনে ও কিছু ই করতে পারবে না এমন এক অবস্থা।তাই সবকিছু মেনে নিয়েছে। প্রকৃতি ছাড় দেয় তবে ছেড়ে দেয় না!! তার পাপের শাস্তি সে তো পাচ্ছে, কিন্তু? যে পাপ করেনি তার কি দোষ ছিল, মোহিনীর আর তার অংশের? হয়তো এটাই, বিধাতার নিষ্ঠুর এক খেলা…. নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছে না, তাকে এই যন্তনা আরো ভয়ংকর নেশায় পরিনত করছে, প্রতিশোধ এর পরিবর্তে প্রতিশোধ ই চাই!!
মহন যে খুন করেছে তার খুব একটা প্রমান নেই, তবে মহনের মানুষিক ভারসাম্য হারিয়ে যায় বারবার, তাই আপাতত তাকে কারাগার পরিবর্তে মানুষিক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে!!

_____

বিহারিনী ব্যস্ত সময় পার করছে। করবে না কেন? বিহারিনী মায়ার মেয়েকে নিয়ে ই মেতে উঠেছে। কে বলবে এই ছোট্ট বিহারিনী আরেক ছোট্ট বাবু কে সামলাচ্ছে। অবশেষে মায়ার মেয়ের নামটা “মায়রা” (মায়ার মায় আর রাজ এর রা, তে রাখা হল) রাখা হলো। পরিবারের সবাই বাচ্চাটাকে মানজিয়া হাওলাদার মায়রা বলেই ডাকে!!

ইদানিং বিহারিনীর মাথাটা চিন চিন ব্যাথায় ভরে উঠে। ঝাপসা ঝাপসা অনেক কিছু ই সে দেখে। কিন্তু কিছু ই মনে করতে পারছে না। তার মনে হয়, এই বর্তমান ছাড়া ও অতীত অনেক কিছু ই আছে, কিন্তু সে মনে করতে পারে না!! কে সে?

রুদ্রের সামনে বসে আছে বিহারিনী, এগুলো রুদ্র কে বলছে, সে আবছা আবছা স্মৃতি অনুচরন করে, মনে হয়, হাজারো অতীত তার মধ্যে বিস্তার করছে, যেন, সে এখন যেই বর্তমান বিস্তার করছে, এটা সে নয়!! সে অন্যকেউ!!

রুদ্রের চোখ ঝাপসা হয়ে এলো। ভয়ঙ্কর ভাবে তার দুনিয়া কালো হয়ে এলো। যদিও সে ছাড়া কেউ জানে না, চোখের সামনে থাকা বিহারিনীর সত্যটা!! তবে কি আবার সে হারাবে তাকে_নাকি আগে থেকেই তার রঙে রাঙিয়ে নিবে এই মানুষটি কে, যদি ও রুদ্রের তার অতীত অজানা!!

রুদ্র কি করবে বুঝতে পারছে না। তাই তড়িঘড়ি তে মনের অজান্তেই এই বিহারিনী কে জড়িয়ে ধরল। আলিঙ্গন করে নিজের মনে অদ্ভুত শান্তি খুঁজে বেরালো। কপালে পরশ আঁকিলো। ইশ্, সত্যি ই সে যেন শান্তির সর্গ খুঁজে পেল!! হয়তো পবিত্র বন্ধন এটাকে ই বলে।
বিহারিনীর চিন চিন ব্যাথা রুদ্রের আলিঙ্গন এ হারিয়ে গেল…সে রুদ্রের বুকে মাথা রেখে শান্তি অনুভব করলো….

আকাশের জোৎস্নার আলোতে দুজন মানুষ পূর্ণ তো হলো, তবে কালো আঁধার এ সম্পূর্ণ আকাশ ঢেকে গেল, ভয়াবহ বার্তা প্রেরন করলো, সামনে ভয়াবহ দুর্বিষহ কালো দিন, অন্ধকার রাত আসিতেছে…মুখসের সমস্ত পর্দা উন্মোচন করার জন্য!!

(প্রথম পরিচ্ছেদ এর পরিসমাপ্তি!!)

(যদি ও আমি খুব ভালো গল্প লিখি না, তবে খুব খারাপ ও না… গল্প টা ভালো লাগলে অবশ্যই শেয়ার করবেন, রিভিউ দিবেন!! আপনাদের করা লাইক, শেয়ার, রিভিউ, কমেন্ট আমাকে সত্যি ই উৎসাহ করে 🙂😊)

অপেক্ষা করুন আগামী পর্বের জন্য, আর পেজে লাইক ফলো দিয়ে কমেন্ট করে রাখেন বাকি পর্ব পোস্ট করেই মেনশন দিয়ে দেবো সবাইকেই,পেইজে লাইক ফলো না দিয়ে রাখলে মেনশন দিলে নোটিফিকেশন পাবেন না।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here