মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹 #Mishka_Moon ||পর্ব_২ ||

0
607

#মেঘ_কুঁঞ্জের_ইলশেগুঁড়ি❤️‍🩹
#Mishka_Moon
||পর্ব_২ ||

বখাটে বেয়াদব কোথাকার। মেয়েদের সম্মান দিতে জানে না। এমন ছেলেদের পদ্মা নদী ছুড়ে মারা উচিত। কথাগুলো বিড়বিড় করতে করতেই অহি তার হাতে থাকা ব্যাগটা ছুঁড়ে মারলো। রাগে তার শরীর জ্বলছে। এখনই আমি ভাইয়াকে গিয়ে বলবো দাঁড়া তারপর দেখবি তোর কি হাল করে। অহি কয়েক ধাপ এগিয়ে গিয়ে আবার পিছিয়ে আসলো। ভাইয়াকে বললে অনেক বড় ঝামেলা লেগে যাবে। মা’রামা’রি, কাঁ’টাকাঁ’টি বেধে যাবে। পুলিশি ঝামেলা তো আছেই। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বিছানায় গিয়ে বসলো।
এমনিতেই ইচ্ছের চিঠি পেয়ে না জানি কেমন রেগে আছে। থাক বলবো না। কথা গুলো মনে মনে ভেবে আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো। চেঞ্জ করে বেরিয়ে আসতেই কানে ডাক ভেসে আসলো।

“অহি নিচে এসো। তোমার ভাইয়া ডাকছে।”

মায়ের গলার আওয়াজ পেয়ে অহি আর দাঁড়াল না। নিচে চলে গেলো। ড্রয়িং রুমে উপস্থিত সবাইকে একবার দেখে নিলো। অনুভব বোনকে দেখেই শান্ত কন্ঠে বলল,

-“তোর কিছু হয়েছে?
সহসা চমকে উঠলো অহি। তবে কি ভাইয়া জেনে গেছে বিষয়টা? ধীর পায়ে ভাইয়ের কাছে গিয়ে বসলো। বলল,
-“এমন মনে হলো কেনো ভাইয়া?

“রহিমা খালা বলল সদর দরজা খুলতেই তুই কোনো দিক না তাকিয়ে উপরে চলে গেছিস। তার কোনো কথার উত্তর দিস নাই। আর আজকে এতো দেরি কেনো হলো?

অহি হাফ ছেড়ে বাঁচলো। বলল,
“আজকে কোচিং দেরিতে ছুটি দিয়েছিল ভাইয়া। আর তাছাড়া আমার সইয়ের সাথে গল্প গল্প করতে আরেকটু দেরি হয়েছে। সে কথা রাখো তোমাকে নাকি আজকে কেউ চিঠি দিয়েছে?

অনুভব ভ্রু কুঁচকে বলল,
” তুই কি করে জানলি?

অহি একটু হাসার চেষ্টা করে বলল,
“শ্রাবণ ভাইয়া বলেছে। বিকালে দেখা হয়েছিল কোচিং এ যাওয়ার সময় তখন বলেছে।

অনুভব সন্দেহের দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,
– “ওহ, তা তোর ওই সইটার নামটা জানি কি?”
-“আগেও তো বলেছি ভাইয়া।
-“ভুলে গেছি আবার বল?
-“জান্নাতুল তাজরিন ইচ্ছে।
-“ওহ, পরশু দিন তাকে আসতে বলিস।

অহি অবাক হলো। মনে মনে অনেক কিছু ভেবে নিলো। ইচ্ছে কেনো আসতে বলছে। তবে কি চিঠি ও দিয়েছে বুঝে ফেললো। ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলো কেনো!!

অনুভব বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
” ভুলে গেছিস পরশু দিন বাড়িতে অনুষ্ঠান আছে। দাদু বলেছিল আমি এমপি হলে সবাই কে গরু মেরে খাওয়াবেন।”

অহি লাফিয়ে উঠে বলল তাইতো। আমি এখনই ইচ্ছেকে বলে আসছি দাঁড়াও।

!!
ইচ্ছে বাড়ি এসে ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে পড়েছে। তাকে এভাবে শুয়ে পড়তে দেখে চেচিয়ে উঠলেন আনোয়ারা বেগম।

“এই ছেঁমরি উঠ কইতাছি। ভর দুপুর সন্ধ্যা নাই। বাহিরের কাপড়ে শুইয়া পড়িস। তাড়াতাড়ি উঠ কইতাছি। হাত মুখ ধুইয়া আয় খাইতে দিতাছি। তোর দাদাজান না খাইয়া বইসা রইছে।

বিরক্ত নিয়ে উঠে বসলো ইচ্ছে। কিছু না বলে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। শফিক সাহেব খাবার নিয়ে বসে আছেন। ইচ্ছে কাছে আসতেই এক গাল হাসলেন। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বললেন,
“আজকে এতো দেরি হলো কেনো রে! টিফিনটাও নিয়ে যাসনি। তোর দাদিজান আমার মাথাই খেয়ে ফেললো।

ইচ্ছে হেসে ফেললো। হাসতে হাসতেই বলল,
” কই খেয়ে ফেলেছে? দেখছি তো ঠিকই আছে।

শফিক সাহেব নিজেও হাসলেন। ফিসফিস করে বললেন,
” ধীরে ধীরে বল শুনতে পেলে আর রক্ষা নেই। তা এতো দেরি কেনো করলি বললি না তো?

“আর বলো না দাদাজান অহির সাথে গল্প করতে করতে দেরি হয়ে গেছে। আর ও টিফিন নিয়ে গিয়েছিল ওরটাই খেয়েছি।
তাদের কথার মাঝেই আনোয়ারা বেগম ফোন হাতে বেরিয়ে আসলেন। ইচ্ছের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
-” তোর সই কথা ক!

সচারাচর অহি তাকে কল দেয়না। যা কথা তারা কলেজ আর কোচিং এ থাকতেই শেষ করে। আজকে হঠাৎ কল কেনো দিলো। ভাবতে ভাবতেই কানের কাছে নিলো ফোন টা ওপাশে থেকে অহি বলছে,
“সই পরশু দিন তোর দাওয়াত। কালকে ছুটির দিন। কলেজ নেই। তো তাই ফোন দিয়ে জানাচ্ছি। শোন তুই কিন্তু অবশ্যই আসবি।

ইচ্ছে কিছু সময় ভেবে বলল,
-” আচ্ছা ঠিক আছে যাবো।

“আচ্ছা তাহলে রাখি। দাদাজানকে আমার সালাম দিস।”
ইচ্ছে আর কিছু বলার সুযোগই পেলো না। অহি ফোন কেটে দিলো। এটা অহির একটা বদ অভ্যাস কথা শেষ করার আগেই কল কেটে দেয়।

অহি ফোন কেটে দেওয়ার সাথে সাথে আননোন নাম্বারে থেকে কল আসলো। ধরবে কি ধরবে না ভাবতে ভাবতেই কেটে গেলো। পরপর তিনবার কল আসার পর অহি কলটা ধরে কানের কাছে নিলো। তবে কথা না বলে বোঝার চেষ্টা করলো কে। ওপাশ থেকেও কথা বলছে না। এবার বিরক্ত হয়ে নিজেই বলল,

-“হ্যালো ফোন দিয়ে কথা বলছেন না কেনো?
-“ইচ্ছে হচ্ছে না তাই।

অহি নাকের দিকে এগিয়ে আসা চশমাটা ভালো করে পড়ে নিলো। অত:পর বিরক্ত কন্ঠে বলল,
-“ইচ্ছে না হলে ফোন কেনো দিয়েছেন? আর কে আপনি?

-” পরশু দিনের দাওয়াত নিতে।
-“আজব আপনাকে আমি কেনো দাওয়াত দিতে যাবো?
-“আমি বলেছি তাই দিবি।

চমকে উঠে নাম্বার দেখে নিলো অহি। গলাটা কেমন চেনা চেনা লাগছিল। এবার শিওর হয়ে নিলো সকালের সেই বখাটেটা। তখনকার রাগ মেটানোর যেন একটা সুযোগ পেলো।
“তোকে কেনো সুখে দাওয়াত দিবো রে শয়তান? লজ্জা করে না মেয়েদের ফোন দিয়ে বিরক্ত করিস। অবশ্য লজ্জা থাকলে তো।”
সহসা ধমকে উঠলো রঙ্গন। বলল,
“গলা নামিয়ে কথা বল। রঙ্গন পাঠান শুনতে নয় বলতে ৷ পছন্দ করে।
” তুই রঙ্গন পাঠা হোস আর মহিষ হোস আমার জেনে কাজ নেই। আমাকে ফোন দিবি না।
বলেই সাথে সাথে ফোন কেটে ব্লক করে দিলো অহি। এবার বেশ শান্তি শান্তি লাগছে। ইচ্ছে ঠিক বলে যে যেমন তার সাথে তেমন ভাবেই কথা বলতে হয়।

!!
চারদিকে মানুষ জনের ছড়াছড়ি। এমপির বাড়ির অনুষ্ঠান বলে কথা। ইচ্ছের বেশি মানুষ জন পছন্দ নয়। শুধু মাত্র অহির জন্য আসা নইলে আসত না। এক মাস আগে কথা নিয়ে রেখেছিল তার থেকে। ইচ্ছে সদর দরজার কাছে আসতেই কেউ দৌড়ে গিয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলো। কিছুটা ভয় পেলেও বুঝলে এটা কে।

-“আরে ছেঁমরি ছাড় ছাড় জা’ন বেরিয়ে গেলো আমার।”
-“আজকে কোনো ছাড়াছাড়ি নেই। চল ভাইয়ার সাথে দেখা করবি।
ইচ্ছে হাত টেনে ধরে বলল,
-“কোনো দরকার নেই তোর ঘরে চল। আমরা গল্প করি।
-“তা কেনো তুই আয় তো।
টানতে টানতে নিয়ে গেলো ইচ্ছে কে।

-“ভাইয়া দেখো কে এসেছে।
অনুভব ফোনে কথা বলছিল। বোনের ডাক শুনে পরে কথা বলবো বলে ফোন রেখে দিয়ে পেছনে ঘুরলো। জিজ্ঞেস করলো,
-“কে এসেছে?

ইচ্ছে কে টেনে এনে দাঁড় করিয়ে বলল,
-“আমার সই।

ইচ্ছে জোর করে হাসার চেষ্টা করে সালাম জানালো। অনুভব বেশ গম্ভীর কণ্ঠে উত্তর দিয়ে ভেতরে গিয়ে বসতে বলল। অহি হতাশ হলো। ইচ্ছে কে নিয়ে চলে গেলো। রুমে আসতেই ইচ্ছে অহির পিঠের ওপর দুম করে কয়েকটা কি’ল বসালো।
“তোকে কে বলেছিল তোর ওই স্বনামধন্য ভাইয়ের কাছে নিয়ে যেতে। ব্যাডা যে ভাবটাই যে নিলো। এই জন্যই তো দেখতে মন চায় না।

” আরে না ভুল ভাবছিস। ব্যস্ত আছে তো তাই বেশি কথা বলতে পারলো না। পরে ঠিক বলবে দেখিস।

“তুই রাখ তো তোর ভাইয়ের গুনগান। মেজাজ খারাপ হইয়া যাইতাছে।”

অহি মুখটা কাচুমাচু করে বলল,
“যাই বলিস ভাইয়ের সাথে তোকে কিন্তু সেই মানাবে।
” আন্ডা মানাবে। এমন লোক কে আমি জীবনেও বিয়ে করবো না।
-“কেনো করবি না?
-“আমি চাইনা আমার বাচ্চা কাচ্চা বাপ রে ভাই ডাকুক।

অহি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। কথার মানে বুঝতে না পেরে বলল,
-“মানে?
“মানে এই সব রাজনীতিবিদের সবাই ভাই ডাকে। কাকা,নানা,চাচা,বাবা,ছেলে সবাই। ছিহহহহ কি বাজে লাগে আমার। তোর ভাইয়ের সাথে আমার বিয়ে হলো। আমাদের একটা ছেলে হলো। সে বায়না ধরলো। মিছিল করতে যাবে। তাকে নিয়ে গেলো। সে রাস্তা দিয়ে হাঁটছে আর বলছে,

“আমার ভাই,তোমার ভাই, অনুভব ভাই, অনুভব ভাই!!

“অনুভব মির্জার বউ হতে গেলে এসব মেনেই চলতে হবে। রাজনীতিতে বাপ ছেলে নেই সবাই ভাই।”

সহসা চমকে পেছনে তাকালো দুজনেই।

#চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here