#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||বোনাস পর্ব||
৮২।
গোলাপী বর্ণের লেহেঙ্গা পরে স্টেজে উঠে বসলো লিনাশা। লজ্জা মাখা দৃষ্টিতে সে একটু পর পর তার পাশে বসা নায়ীবকে দেখছে। সাদা শার্টের উপর গোলাপী কোট পরেছে নায়ীব। দু’জনের চোখে-মুখে লাজুকতা। পুষ্প স্টেজের সামনে দাঁড়িয়ে চেঁচিয়ে বলল,
“ডাক্তার সাহেবের মনের অবস্থা তো চরম! মনে হচ্ছে তিনি হবু বউকে দেখে অসুস্থ হয়ে গেছেন।”
পদ্ম পুষ্পের হাত ধরে তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,
“বেশি কথা বলিস তুই। চুপ কর।”
এদিকে আহি আজ গাউন পরেছে। সাদা রঙের নেট স্লিভের গাউন। চুলগুলো খোঁপা করেছে সে। আহিকে দেখে লাবীব ভ্রূ কুঁচকে বলল,
“আহিকে দেখে তো রানী এলিজাবেথের নাতনি মনে হচ্ছে।”
পুষ্প লাবীবের কথা শুনে চোখ ছোট করে বলল,
“আর আমাকে?”
“মিকি মাউস।”
“কি!”
“তুমি তো ডল, তাই ডলের সাথে তুলনা করলাম।”
“ওটা একটা কার্টুন!”
“তুমি কার্টুনই তো!”
পুষ্প নাক ফুলিয়ে হনহন করে অন্যপাশে চলে গেলো। এদিকে পদ্ম চুপচাপ একপাশে বসে আছে। আফিফের পছন্দমতো সাদা শাড়ি পরে এসেছে সে। কিন্তু আফিফকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। পদ্ম এদিক-ওদিক আফিফকে খুঁজতে লাগলো।
(***)
আহি সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠতেই, কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে তার হাতে থাকা আংটির বক্সটা হাত ফসকে পড়ে গেলো। আহি মুখে হাত দিয়ে সিঁড়ি থেকে বক্সটা হাতে নিয়ে দেখলো ভেতরে কোনো আংটি নেই। আহি করুণ দৃষ্টিতে তার সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকালো। আফিফ ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“সরি। আমি তোমাকে খেয়াল করি নি।”
আহি আর কিছু না বলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে সিঁড়িতেই বসে পড়লো। আফিফ আহিকে বসতে দেখে নিজেও বসে পড়লো আর জিজ্ঞেস করলো,
“কি করছো?”
আহি ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল,
“পাগল আপনি? নায়ীব ভাইয়ার আংটিটা হারিয়ে ফেলেছি আমি। আপনার সাথে ধাক্কা খেয়ে বক্স থেকে পড়ে গেছে আংটিটা। এই আংটির দায়িত্ব লিনাশা আমাকে দিয়েছে। যদি আংটি হারিয়ে যায়, কি হবে জানেন?”
আফিফ ব্যস্ত হয়ে আংটিটা খুঁজতে লাগল। আহিকেও বেশ অস্থির দেখাচ্ছে। হঠাৎ পেছন থেকে দ্রুত পায়ে এগিয়ে এলেন লিনাশার মা, রুনা খানম। তিনি আহিকে বললেন,
“নায়ীবের রিংটা দাও তো!”
আহি ভীত চোখে রুনা খানমের দিকে তাকালো। তিনি আহির হাতে বক্সটা দেখে সেটা হাতে নিয়ে নিলেন। আফিফ তাকে দেখে উঠে দাঁড়ালো। তিনি আফিফের দিকে একনজর তাকিয়ে বক্সটি খুলে দেখলেন, সেখানে কোনো আংটি নেই। তিনি এবার রাগী দৃষ্টিতে আহির দিকে তাকালেন। এমনিতেই তিনি আহির উপর ক্ষ্যাপা। লাবণি রিজওয়ান কবিরের সাথে পালিয়ে যাওয়ার পর থেকেই তিনি আহিকে অপছন্দ করেন। কারণ আহির বাবার জন্যই তার সংসারটা এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু লিনাশা অনেক কষ্টে মাকে রাজি করিয়েছে, আর আহির উপর রাগ না দেখাতে বলেছে। রুনা খানম মেয়ের জোরাজুরিতেই আহিকে সহ্য করছেন। কিন্তু আংটির দায়িত্ব আহিকে দেওয়াটা তার পছন্দ হয় নি। এই মুহূর্তে বক্সে আংটি না দেখে তিনি আর রাগ ধরে রাখতে পারলেন না। রাগী স্বরে বললেন,
“আংটি কোথায়?”
আহি মাথা নিচু করে বলল,
“এখানেই কোথাও পরেছে। হাত ফস্কে বক্সটা নিচে পড়ে গিয়েছিল। আমি এক্ষুণি খুঁজে দিচ্ছি।”
“তুমি এতোটা কেয়ারলেস হবে, তা আমি ভাবি নি। আর তোমার কাছে এর চেয়ে বেশি কিছু আশাও করা যায় না। আমার মেয়ের জীবনে আবার কেন এসেছো? ওর নতুন জীবন এলোমেলো করতে? আমার একটা মেয়েকে তো তোমার বাবা উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আর একটাই মেয়ে আছে, তাকে তো অন্তত শান্তিতে বাঁচতে দাও।”
আহি কাঁপা কন্ঠে বলল, “সরি, আন্টি।”
রুনা খানম ধমকের সুরে বললেন,
“সবার জীবনের একমাত্র কাঁটা তুমি। তুমি যেখানে থাকবে, সেখানে শুভ কিছু হবেই না। আমি তো চাই নি তুমি বিয়েতে আসো। কিন্তু লিনাশা আমাকে জোর করেছিল, তাই বাধ্য হয়ে তোমাকে সহ্য করতে হচ্ছে।”
আহি ঠোঁট চেপে নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। আফিফের সামনে আন্টি তাকে অপমান করেছে এটা আরো বেশি কষ্ট দিচ্ছে আহিকে। সে কিছু বলবে, তার আগেই আফিফ বলল,
“সরি আন্টি, আমার কারণেই বক্সটা ওর হাত থেকে পড়ে গেছে।”
“তুমি ওর সাফাই দিও না তো। সবার সিম্প্যাথি নিয়েই তো এখনো বেঁচে আছে।”
আফিফ আর কিছু বলতে পারলো না। লিনাশার মায়ের সাথে আজ তার প্রথম পরিচয়। এভাবে তাকে কিছু বলে দেওয়াটা অভদ্রতা। তাই সে বাধ্য হয়ে চুপ করে রইলো। রুনা খানম বক্সটা আহির হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,
“আংটি খুঁজে এনে দাও। নয়তো এক্ষুণি এখান থেকে বেরিয়ে যাও।”
আহি মাথা নেড়ে আংটি খোঁজায় ব্যস্ত হয়ে পড়লো। রুনা খানম চলে যেতেই আফিফ আহির সামনে বসে বলল,
“সরি, আহি।”
আহির চোখ ভিজে গেছে। আফিফ কি বলবে বুঝতে পারছে না। সে আহির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে উঠে পদ্মের কাছে চলে গেলো। পদ্ম আফিফকে দেখে বলল,
“কোথায় ছিলেন আপনি?”
আফিফ উদ্বিগ্ন কন্ঠে বলল,
“একটা বড়সড় ঝামেলা হয়ে গেছে।”
আফিফ পদ্মকে সবটা জানাতেই পদ্ম আহির কাছে এলো। পদ্ম এসে দেখলো আহি একপাশে বসে নিরবে চোখের জল মুছছে। তা দেখে পদ্মের ভীষণ খারাপ লাগলো। সে আহির পাশে বসে বলল,
“চল, চলে যাই আমরা।”
আহি চোখ মুছে বলল, “কোথায়?”
“তোকে অপমান করা মানে, আমাদের অপমান করা। আমরা ভালো বন্ধু, আহি। আফিফ আংটি খুঁজে এনে দেবে। এরপর আমরা এখানে আর থাকবো না।”
“যাহ কি বলছিস! লিনু, কষ্ট পাবে।”
“পাক কষ্ট। ওর কষ্ট তোর চেয়ে বেশি হবে না। ওর জানা উচিত ওর মা ওর বেস্ট ফ্রেন্ডকে কিভাবে অপমান করেছে।”
আহি পদ্মকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“আমি সত্যিই অশুভ। আমার এখানে আসা উচিত ছিল না।”
তখনই আফিফ আংটিটা খুঁজে এনে আহির সামনে ধরলো। পদ্ম আংটিটা নিয়ে বলল,
“আমি পুষ্পকে দিয়ে আসছি।”
পদ্ম উঠে চলে যেতেই আফিফ আহির পাশে বসলো। আহি রাগী স্বরে বলল,
“যাও এখান থেকে। তোমার জন্য আমাকে কথা শুনতে হয়েছে। এখন আমাকে মিথ্যে সান্ত্বনা দিতে হবে না।”
আফিফ কিছু না বলে উঠে চলে গেলো। আফিফ চলে যেতেই আহি নিজেই উঠে রেস্টুরেন্টের বাইরে চলে এলো। এদিকে পুষ্প আর লাবীব আহির সাথে কি হয়েছে তা জানার পর আহিকে খুঁজতে লাগলো। রাদ লিনাশার কাজিনদের সাথে খাবারের আয়োজন দেখাশুনায় ব্যস্ত ছিল। উপরে উঠে সব শুনে সেও আহিকে খুঁজতে লাগলো। পদ্ম আফিফকে এসে জিজ্ঞেস করলো,
“আহি তো আপনার পাশেই ছিল।”
আফিফ ক্ষীণ কন্ঠে বললো,
“আমার কারণে আংটিটা নিচে পড়ে গিয়েছিল, তাই আহি আমার উপর রেগে ছিল। আমিও তাই আর ওকে বিরক্ত করি নি।”
পদ্ম কোমড়ে হাত রেখে বলল,
“ওকে শান্ত করার জন্য, ওর পাশে বসতে বলেছি, আর আপনি ওকে একা ছেড়ে এসেছেন? কোথায় গেছে এখন ও?”
“ফোন করে দেখো।”
পদ্ম ফোন করতেই দেখলো নম্বর ব্যস্ত। কারণ রাদও সেই মুহূর্তে আহিকে ফোন করছিল। এদিকে লিনাশা আর নায়ীবের আংটি বদল শুরু হবে। লিনাশা এদিক-ওদিক আহিকে খুঁজছে। আহি তো বহুদূর, তার কোনো বন্ধুদেরও সে আশেপাশে দেখতে পাচ্ছে না।
(***)
অনেকক্ষণ পর আহির ফোনে রাদের কল ঢুকলো। আহি জানালো, সে বাসায় চলে এসেছে। আহি চলে গেছে শুনে লাবীব আর পুষ্প বাসায়ও চলে গেলো। রাদ, আফিফ আর পদ্মও বের হয়ে গেছে। এদিকে লিনাশা কাউকে না দেখে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। রুনা খানম মেয়ের কাছে এসে বললেন,
“এভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
“আহি, পুষ্প, পদ্ম কাউকে দেখছি না যে।”
রুনা খানম ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,
“চলে গেছে হয়তো।”
“মানে? চলে কেন যাবে?”
“তুই নায়ীবকে আংটি পরিয়ে দে৷ দেখ, কতো গেস্ট! এসব কথা পড়ে হবে।”
“একদমই না।”
লিনাশা ফোন বের করে আহিকে ফোন করলো। কিন্তু আহি ফোন ধরছে না। এবার সে পুষ্পকে কল দিলো। পুষ্প ফটফট করে সব লিনাশাকে জানিয়ে দিলো। সব শুনে লিনাশা স্টেজ থেকে নেমে নিচে চলে এলো। নায়ীব অবাক কন্ঠে বলল,
“কি হয়েছে? আমাকে ফেলে কোথায় যাচ্ছো?”
“যারা আমার অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে। আমার মা যদি তাদেরই অপমান করে তাড়িয়ে দেয়, তাহলে আমারও কোনো অধিকার নেই তাদের আয়োজনে আনন্দ করার।”
নায়ীব লিনাশার হাত ধরে বলল,
“দেখো, আমার ফ্যামিলিও আছে এখানে।”
রুনা খানম লিনাশার হাত ধরে বলল,
“আমাকে ক্ষমা করে দে, মা। প্লিজ এমন জেদ করিস না। আমি আহির কাছে ক্ষমা চাইবো।”
“আহি তোমার সাথে রাগ করে নি, মা। কিন্তু ওর মনে যেই ক্ষতটা সৃষ্টি হয়েছে, তুমি ক্ষমা চাইলেও সেটা মুছে যাবে না।”
(***)
নায়ীবের জোরাজুরিতে অশান্ত মনে এনগেজমেন্ট অনুষ্ঠান শেষ করলো লিনাশা। এরপর সে বাসায় এসে খুব কাঁদলো। আহি কষ্ট পেয়েছে, ভাবতেই তার কান্না পাচ্ছে। সারারাত ঘুমাতে পারে নি সে। কারণ আহির মনের অবস্থা এমনিতেই ভালো না। তার উপর মা আফিফের সামনেই তাকে অপমান করেছে। রাগ হচ্ছে মায়ের উপর। শুধু একটা আংটি হারানোর জন্য এতো কথা বলার কি খুব প্রয়োজন ছিল?
(***)
আজ লিনাশার হলুদ অনুষ্ঠান৷ লিনাশা মলিন মুখে ছাদে বসে আছে। কাউকে দাওয়াত করে নি সে। সে একা একাই না-কি গায়ে হলুদ করবে। রুনা খানম মেয়ের এমন জেদ দেখে আহিকে ফোন করলেন, আহির কাছে ক্ষমা চায়লেন, বাসায় আসতে বললেন। আহি আসলো না। রাদ কোনোভাবেই আহিকে যেতে দেবে না। সে আহির মন ভোলানোর জন্য তাকে নিয়ে চলে গেলো ফুচকার দোকানে। সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্ত বাইরে ঘুরে বাসায় ফিরলো আহি। বাসায় ঢুকেই ড্রয়িংরুমে লাবণির সামনে রুনা খানমকে দেখে বেশ অবাক হলো সে। রুনা খানম আহিকে দেখে তার কাছে এসে বললেন,
“দম বন্ধ হয়ে আসছিল আমার। কোথায় ছিলে তুমি?”
“আন্টি, আপনি এখানে?”
“তোমাকে আসতে বলেছি, তারপরও কেন আসো নি?”
“আমি লিনাশার জীবনে কোনো ঝামেলা করতে চাই না।”
“দেখো আহি আমি যা বলেছি তা রাগ থেকে বলেছি। তুমি জানো, আমি স্বামী হারিয়েছি তোমার বাবার জন্য। তোমার উপর রাগ করে থাকাটা একদম স্বাভাবিক, তাই না? কিন্তু তোমাকে এমন করে বলাটা আমার ভুল হয়েছে। এখানে তোমার কোন দোষ নেই। কিন্তু আমি অতীতের সেই দিনগুলো এখনো ভুলতে পারি নি। যা আমি চাই নি, তা আজ আমাকে করতেই হলো। আমি অন্তত এই নির্লজ্জ মেয়ের মুখোমুখি হতে চাই না।”
রুনা খানম মিসেস লাবণির দিকে আঙ্গুল তাক করে কথাটি বললেন। মিসেস লাবনি হনহনিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে গেলেন। রুনা খানম কাতর স্বরে বললেন,
“তোমাকে আমি খুব ভালবাসতাম, আহি। হয়তো তোমার বাবার জন্য তোমার প্রতি আমার একটা বিরক্ত চলে এসেছিল। আমাকে ক্ষমা করে দাও, মা। তুমিও যে ঠিক ততোটাই কষ্ট পাচ্ছো, যেমন কষ্ট আমরা পাচ্ছি, তা আমি বুঝতে পারি নি। আমার মেয়ের জন্যই তো তোমার বাবা তোমার মাকে ছেড়ে দিয়েছিল। আমার একবারও মাথায় আসে নি, আমার সেই নির্লজ্জ মেয়ের জন্য তুমি কি হারিয়েছিলে। নিজের কষ্টটা এত বেশি বড় করে দেখে ফেলেছি যে অন্যের কষ্ট চোখেই পড়ে নি। খুব স্বার্থপর হয়ে গেছি, তাই না?”
আহি রুনা খানমের হাত ধরে বলল,
“এভাবে বলবেন না, আন্টি। আমি সত্যিই সব ভুলে গেছি।”
“তাহলে কাল সকালে লিনাশার হলুদে এসো। এখন থেকে অতীতের সব তিক্ততা আমি ভুলে যেতে চাই।”
(***)
পরদিন সকালে আহি লিনাশার বাসায় গেলো। নিজ হাতে লিনাশার বাড়ির ছাদ ফুল দিয়ে সাজালো। আহিকে সাহায্য করেছিল পুষ্প আর পদ্ম। সাজানো শেষে তিন বান্ধবী আকাশি রঙের জামদানি শাড়ি পরলো। আর লিনাশাকে হলুদ শাড়ি আর ফুলের গহনা পরিয়ে ছাদে আনা হলো। লিনাশা আর নায়ীবের কাজিনরাও হলুদে ছিল। সবাই ছবি তুলছে আর লিনাশার গায়ে হলুদ লাগিয়ে দিচ্ছে। হঠাৎ গান বেজে উঠলো। আর পুষ্প ও লিনাশার দু’জন কাজিন মিলে সেই গানের তালে তালে নাচ শুরু করলো।
“নাচেন ভাল সুন্দরী এই
বাঁধেন ভাল চুল…
.
হেলিয়া দুলিয়া পরে
নাগ কেশরের ফুল
.
সোহাগ চাঁদ বদনী ধ্বনি
নাচো তো দেখি
বালা নাচো তো দেখি
বালা নাচো তো দেখি।”
গান থেমে যেতেই আবার নতুন গান চালু হয়ে গেলো। এবার আহি আর লিনাশার আরো দু’জন কাজিন এসে নাচ শুরু করলো।
“আশ্বিন ও ফাগুন মাসে
পরান ঘাসে নতুন বিয়ের ফুল ফুটিছে,
উথালি পাথালি মনে
আলতা কোণে নতুন বিয়ের ফুল ফুটিছে।
হেই হো পিয়ালী রে
হেই হো দুলালী রে,
আশ্বিন ও ফাগুন মাসে
পরান ঘাসে নতুন বিয়ের ফুল ফুটিছে।”
এবার গান থামতে নতুন গান শুরু এলো। আহি আর পুষ্প একাই নাচ শুরু করলো। গানটা লিনাশার বেশ পছন্দ। তাই সেও উঠে এলো নাচার জন্য।
“লীলাবালি লীলাবালি
বর অযুবতি সইগো
বর অযুবতি সইগো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে?
.
মাথা চাইয়া টিকা দিমু
জড়োয়া লাগাইয়া সইগো
জড়োয়া লাগাইয়া সইগো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে?
.
পিন্দন চাইয়া শাড়ি দিমু
ওড়না লাগাইয়া সইগো
ওড়না লাগাইয়া সইগো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে?
.
কানো চাইয়া কানফুল দিমু
পান্না লাগাইয়া সইগো
পান্না লাগাইয়া সইগো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে
কানো চাইয়া কানফুল দিমু,
পান্না লাগাইয়া সইগো
পান্না লাগাইয়া সইগো
কি দিয়া সাজাইমু তোরে।”
৮৩।
বিছানা ভর্তি ডালা সাজিয়ে রেখেছে পদ্ম, পুষ্প আর আহি। একপাশে নায়ীবের মেহেদির জন্য ডালা, অন্যপাশে বিয়ের ডালা। মাঝখানে নায়ীবের পছন্দের কেক নিজ হাতে বানিয়েছে লিনাশা। গামছা, লুঙ্গি, জুতো, ব্যবহারের জন্য যা যা প্রয়োজন সব সাজিয়ে রাখা হয়েছে। অন্যপাশে ফল-ফলান্তি, মিষ্টিজাতীয় খাবার, হাতের পিঠা সাজিয়ে রাখা। একটু পর সব ছেলে পক্ষের বাড়িতে পৌঁছে যাবে।
আজ রাতে মেহেদি অনুষ্ঠান। পুরো বাড়ি রঙ-বেরঙের বাতি দিয়ে সাজানো হয়েছে। লিনাশার বাসার একদম সামনেই কমিউনিটি সেন্টার। সেখানেই মেহেদি অনুষ্ঠান হবে। আহি হুড়োহুড়ি করে ক্লাবে ঢুকতেই কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নেবে, তখনই কেউ একজন আহির কোমড় আঁকড়ে ধরলো। আহি চোখ বন্ধ করে বলল,
“সবাই শুধু আমার সাথে কেন ধাক্কা খেতে আসে?”
“বেশি সুন্দরী যে তাই!”
আহি উজ্জ্বলের কন্ঠ শুনে চোখ খুলে সোজা হয়ে দাঁড়ালো। ভ্রূ কুঁচকে বললো,
“আপনি এখানে?”
“কেন আসতে পারি না?”
“না মানে, এমনিই।”
উজ্জ্বল হাসলো। আহি সামনে এগুতেই পুষ্প উজ্জ্বলের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“ভাই, তুই এখানে?”
“তোর বান্ধবী বাসায় এসে তার ম্যাডামকে বিয়ের দাওয়াত দিয়ে গেছে। আমিও তাই বিয়ে খেতে চলে এসেছি।”
“বাহ, চেনো না জানো না, খাওয়ার জন্য চলে এসেছো?”
উজ্জ্বল পুষ্পের মাথায় গাট্টা মেরে বলল,
“আহিকে তো চিনি।”
“আচ্ছা, আহিকে চেনো? আর আমি?”
“তুই কে?”
“আমি তোমার বোন।”
“চিনি না আমি।”
“চিন্তা করো না, আমি তোমাকে ছবি তুলতে বলবো না।”
এদিকে উজ্জ্বল পুরো ক্লাব ঘুরে আবার আহির পাশে এসে দাঁড়ালো। আহি উজ্জ্বলকে দেখে বলল,
“খেয়েছেন?”
“হুম। তুমি?”
“পরে খাবো।”
উজ্জ্বল আহির দিকে মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। অন্যদিকে রাদ ভ্রূ কুঁচকে উজ্জ্বলের দিকে তাকিয়ে আছে। লাবীব রাদের কাঁধে হাত রেখে বলল,
“তোর মতো বোকা আমি একটাও দেখি নি। এভাবে গবলেটের মতো দাঁড়িয়ে থাকলে, কখনো তাজওয়ার খান, কখনো কিং খান এসে তোর রানীকে নিয়ে যাবে। আর তুই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুধু পপকর্ণ খাবি।”
রাদ চোখ ছোট করে লাবীবের দিকে তাকালো। লাবীব বলল,
“আমার দিকে এভাবে না তাকিয়ে কাজের কাজ কর।”
রাদ মনে মনে বলল,
“কখনো জোঁক, কখনো তেলাপোকা, কখনো মাছি। এতো কীটপতঙ্গ সামনে কিলবিল করছে, আর আমি মানুষটা সামনে আগাতেই পারছি না।”
চলবে-