#উধয়রনী
#লেখিকা_সামিয়া_বিনতে_হামিদ
||পর্ব-৪৩||
৮৭।
চারপাশে ঘুটঘুটে অন্ধকার। প্রকৃতি নিস্তব্ধতায় মোড়া। নিরবতা ভেঙে মাঝে মাঝে মশকীদের গান ভেসে আসছে আহির কানে। মশারী টাঙানো ছোট্ট বিছানায় গুটিসুটি মেরে শুয়ে আছে সে। পরিষ্কার কম্বল টেনে নিজেকে আরেকটু গুটিয়ে নিলো আহি। সে বন্ধ দরজার দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে। অসহ্য লাগছে তার। এবার উঠে বসলো সে। দেয়াল হাতিয়ে বাতি জ্বালালো। রুমে ছোট একটা আয়না আছে। নিজেকে সেই আয়নার সামনে দাঁড় করলো আহি। তার ঠোঁটে রক্ত জমাট বাঁধা। নিজের মুখটা দেখেই চোখে অশ্রু ভীড় করলো তার। গায়ের জামাটা পদ্মের। ঢিলেঢালা পোশাক। কিন্তু সেলোয়ার-কামিজ পরে ঘুমানোর অভ্যাস নেই তার। সে এবার মেঝেতে পা গুটিয়ে বসে পড়লো। কিছুক্ষণ পর পর চোখ ভিজে উঠছে তার। কামিজের হাতায় চোখ মুছছে। আর দরজার দিকে তার দৃষ্টি স্থির। হঠাৎ তার চোখ আটকালো খাটের পেছনে দাঁড় করানো ক্যানভাসের দিকে। আহি ক্যানভাসটি বের করে তার সামনে রাখলো। কাগজ দিয়ে মোড়ানো ক্যানভাস। আহি কাগজ সরিয়েই চমকে উঠলো। এটা তো সেই ছবি, যেই ছবি সে নদীর পাড়ে এঁকেছিল। সেই মধ্যাহ্ন বেলার আকাশ। সেই হেমন্তের রং। সে পাহাড়ের গায়ে জন্মানো ছোট ছোট ধূসর-লাল ফুল। আহি মনে মনে ভাবতে লাগলো,
“আফিফের বাসায় আমার আঁকা ছবি?”
কিছুক্ষণ ভাবার পর আহির মনে পড়লো, সেদিন এই ছবিটা আঁকার পর সে সাথে করে নিয়ে আসে নি। নদীর পাড়েই ফেলে এসেছিল। কারণ ড্রাইভার এসে জানিয়েছিল তার মা সালমা ফাওজিয়াকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেদিনই আহি তার ভাইকে হারিয়েছিল। অতীত মনে পড়তেই গাল বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো তার। ছবিটি বুকে জড়িয়ে নিয়ে বলল,
“আফিফ হয়তো জানতোই না, এটা আমার আঁকা ছবি। কিন্তু এতো বছর ধরে ও কতো যত্ন করে রেখেছে এই ছবিটা! পদ্ম খুব ভাগ্যবতী। এমন যত্নবান পুরুষ শুধু ভাগ্যবতীদের কপালেই থাকে। আমি তো অশুভ ছিলাম। তাই আমার ভাগ্যে আফিফ ছিল না।”
দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ হতেই আহি ক্যানভাসটি একপাশে রেখে উঠে দাঁড়ালো। দরজা খুলতেই পদ্ম রুমে ঢুকলো। আহি পদ্মকে দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“ঘুমাস নি এখনো?”
আহি মলিন মুখে বললো, “ঘুম আসছে না।”
“আমি জানি তুই এমন পরিবেশে অভ্যস্ত না।”
“মোটেও না। আমি ঠিকই অভ্যস্ত। আমার অনেক ভালো লাগছে এখানে। আসলে আমি কামিজ পরে ঘুমাই না। তাই ঘুম আসছে না। অস্বস্তি লাগছে।”
“আগেই বলতে পারতি। গেঞ্জি পরে ঘুমাস?”
“হ্যাঁ। একটু ঢিলেঢালা হলেই হবে। আছে?”
“থাকবে না কেন? দাঁড়া আমি নিয়ে আসছি।”
পদ্ম কিছুক্ষণ পর ধূসর রঙের একটা টি-শার্ট আহিকে দিয়ে বলল,
“এখন ঘুমিয়ে পড়। রুমে বাতি জ্বলছে দেখেই তোকে দেখতে এলাম। চিন্তা করিস না। আরাম করে ঘুমা। তোর কিচ্ছু হবে না। আর ওই তাজওয়ার খানকে তোর বিয়েই করতে হবে না। আমরা সবাই তোর পাশে আছি।”
আহি পদ্মকে জড়িয়ে ধরলো। আর পদ্ম আহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলো।
(***)
সকালে আহি রুম থেকে বের হয়েই আফিফের মুখোমুখি হলো। আফিফ আহিকে দেখে ভ্রূ কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। আফিফের চাহনি দেখে আহিও ভ্রূ কুঁচকালো। তখনই পদ্ম এসে বলল,
“চল, নাস্তা খেয়ে নিবি।”
আফিফ এবার পদ্মের দিকে জিজ্ঞাসুক চোখে তাকালো। পদ্ম হালকা হেসে আহিকে টেনে এনে চেয়ারে বসিয়ে দিলো। আফিফ পদ্মের কাছে এসে বলল,
“কি করলে এটা?”
পদ্ম চোখের ইশারায় আফিফকে থামিয়ে দিলো। আহি তাদের এমন ইশারায় কথা বলা দেখে বলল,
“কিছু হয়েছে?”
পদ্ম ব্যস্ত কন্ঠে বললো,
“আরেহ না, তুই নাস্তা কর।”
আফিফ নিজেও আহির মুখোমুখি চেয়ারে বসলো। আহি পদ্মকে জিজ্ঞেস করলো,
“আন্টি নাস্তা করবেন না?”
“মা নাস্তা করে ফেলেছেন। উনি তাড়াতাড়ি নাস্তা করেন। আফিফই শুধু দেরীতে করেন।”
“তুই করবি না?”
“তোরা খা।”
“তুইও বয়।”
“আমি আফিফ যাওয়ার পর নাস্তা করবো।”
আহি ভ্রূ কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো, “কেন?”
আফিফ পদ্মের হাত ধরে তাকে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে বলল,
“খেয়ে নাও।”
তখনই আফিফা বেগম ডাইনিংয়ে এলেন। পদ্ম আফিফা বেগমকে দেখেই চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালো। আহি অবাক দৃষ্টিতে পদ্মের দিকে তাকালো। আফিফা বেগম এবার চেয়ার টেনে বসলেন। আহির দিকে তাকিয়ে বললেন,
“এমা তুমি এটা কি পরেছো?”
আহি ইতস্ততভাব নিয়ে পদ্মের দিকে তাকালো। পদ্ম বলল,
“আহি কামিজ পরে ঘুমাতে পারে না, তাই দিয়েছি।”
“তাই বলে স্বামীর জামা দিয়ে দেবে?”
আহি অবাক দৃষ্টিতে পদ্মের দিকে তাকিয়ে বলল,
“এটা তোর না?”
পদ্ম কিছু বলবে তার আগেই আফিফা বেগম বললেন,
“পদ্মের কেন হবে? বউ মানুষরা কি এমন পোশাক-আশাক পরে?”
আহি এবার আফিফের দিকে তাকালো। আফিফ আপন মনে নাস্তা করছে। আশেপাশে কে কি বলছে কিছুই শুনছে না, এমন একটা ভাব নিয়েছে সে।
(***)
আহি মাথা নিচু করে নীরবে খাচ্ছে। আফিফা বেগম আহিকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
“পদ্ম হচ্ছে এখন বউ। বউদের অন্যভাবে চলতে হয়। তোমার যখন বিয়ে হবে, তুমিও বুঝবে।”
আহি একনজর পদ্মের দিকে তাকালো। আফিফা বেগম আবার বললেন,
“বউদের সকালে তাড়াতাড়ি উঠতে হয়। স্বামীর সাথে সকালে নাস্তা করা ভালো না। স্বামীকে খাইয়ে দিয়েই খাওয়া উচিত। আগে স্বামীর পেট ভরবে, তারপর বউয়ের। আর তোমরা যে জামা-কাপড় পরো, ওসব তো পরলে লোকে মন্দ কথা বলবে। বউদের বাইরের মানুষের সামনে মাথায় কাপড় দিতে হয়। আর স্বামী ছাড়া বাসা থেকে একা বের হওয়া উচিত না।”
আহি অবাক দৃষ্টিতে আফিফের দিকে তাকালো। আফিফ চুপচাপ খাচ্ছে। আহি এবার নিজেই উঠে পদ্মের হাত ধরে তাকে বসালো। তারপর পদ্মের প্লেটে একটা রুটি উঠিয়ে দিয়ে বলল,
“যেই মেয়ে সবার পরে ঘুমিয়ে সবার আগে উঠতে পারে, যেই মেয়ে স্বামীকে খাইয়ে নিজের ক্ষিধে ভুলে থাকতে পারে, যে নিজের পছন্দ-অপছন্দ, নিজের স্বাধীনতা ভুলে এতোটা বাধ্য জীবন যাপন করতে পারে, তাকে রানীর মতো করে রাখতে জানতে হয়। যারা জানে না তাদের অন্তত পুরুষ বলা যায় না।”
শেষ কথাটি আহি আফিফের দিকে তাকিয়ে বলল। আফিফ আহির দিকে নির্বিণ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো। আহি এবার আফিফা বেগমের দিকে তাকিয়ে বলল,
“সমাজ কি বলে, সংস্কার কি বলে জানি না। এতোটুকু জানি আইন বলে, ধর্ম বলে, অনুশাসন বলে নারীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হবে। এটা তার অধিকার। সকালে উঠুক তাড়াতাড়ি, সংসার করুক, এটা ওর দায়িত্ব। কিন্তু এভাবে অবহেলা করা উচিত না। ওর অধিকার আছে ওর স্বামীর সাথে এক প্লেটে খাওয়ার। আপনার ছেলে তাই এভাবে বলছেন। আপনার মেয়ের শ্বশুড়বাড়িতে একই কথা, আপনার সামনে আপনার মেয়েকে বললে বুঝতে পারতেন।”
আফিফা বেগম চুপ করে রইলেন। পদ্মও চুপচাপ বসে আছে। আফিফ পদ্মের হাত ধরে রেখেছে। সে পদ্মকে চেয়ার ছেড়ে উঠতে দেবে না। এটাই ভালো সুযোগ, পদ্মের জীবনের কিছু নিষেধাজ্ঞা তুলে দেওয়ার।
আফিফ তার মাকে প্রচন্ড শ্রদ্ধা করে। মায়ের কথা অমান্য করে না। আফিফা বেগম পদ্মকে পছন্দ করেন না। তাই তিনি নিজেই হয়তো পদ্মের জন্য বাড়তি নিয়ম যোগ করেছেন। আফিফ অনেক বার প্রতিবাদ করেছিল। ফলাফলস্বরূপ আফিফা বেগম কান্না জুড়ে দিতেন, কখনো বা দেয়ালে মাথা টুকতেন, কখনো কখনো না খেয়ে থাকতেন। ছেলের উপর অভিমান করে অনেক বার অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। তাই আফিফ মায়ের কথা ভেবেই আর প্রতিবাদ করে নি। কিন্তু আজ আহির জন্য সে সুযোগ পেয়ে গেছে। এখন মা অন্তত অভিমান করে থাকতে পারবেন না। ছেলের সাথে অভিমান করে থাকা যায়, বাইরের কারো সাথে অভিমান করে কি লাভ?
আফিফা বেগম উঠে দাঁড়িয়ে বললেন,
“আচ্ছা, খাবে আর কি। এখন থেকে স্বামীর সাথেই খাবে।”
এরপর তিনি পদ্মের দিকে তাকিয়ে বললেন,
“পদ্ম, তাড়াতাড়ি খেয়ে নাও। এরপর সবজিগুলো রান্না করে ফেলো। দেরী হয়ে যাচ্ছে।”
আফিফা বেগম চলে যেতেই আহি পদ্মকে বলল,
“চুপ থাকিস কেন? কিছু বলতে পারিস না?”
আফিফ গম্ভীর সুরে বলল,
“আমার মায়ের মুখের উপর আমি নিজেই কথা বলি না। পদ্ম কেন বলবে?”
পদ্ম আফিফের হাত ধরে বলল, “আহি বুঝে নি।”
আফিফ আহিকে বলল,
“থ্যাংক্স, পদ্মের পক্ষ নেওয়ার জন্য। তবে আমি আমার মাকে খুব ভালোবাসি। আমি পদ্মকেও খুব ভালোবাসি। পদ্ম আমাকে বুঝে, তাই ও কোনো অভিযোগ করে না। মাঝে মাঝে শান্তির জন্য কিছু কথা মেনে নিতে হয়। এতে কোনো ভুল নেই। বরং বড়দের কথা মেনে নিলে, তাদের দোয়া পাওয়া যায়।”
আফিফ কথাটা বলেই চেয়ার ছেড়ে উঠে গেলো। এরপর পদ্মের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আফিফ চলে যেতেই আহি বলল,
“আমার বাসায় ব্রিটিশ শাসন, আর তোর শ্বশুড়বাড়িতে পাকিস্তানি শাসন চলছে। আর তুই আমাকে আফিফের টি-শার্ট দিলি কেন?”
পদ্ম বলল, “তো কি হয়েছে?”
“যাহ, পাগল তুই? বরের জামা কি কেউ বাইরের মেয়েকে পরতে দেয়?”
“তুই আমার বান্ধবী।”
“আরেহ, বান্ধবী, বোন কাউকে দেয় না, পদ্ম। আমার বরের জামা তো আমি কোনো মেয়েকে ধরতেই দিতাম না।”
“আচ্ছা?”
“জ্বি।”
“এসবে কিছুই হয় না। আফিফ তো আমারই। উনার জামা কেউ পরুক না পরুক, উনার মনে তো আমিই আছি।”
আহি নিষ্কম্প চোখে সেকেন্ড খানিক পদ্মের দিকে তাকিয়ে রইলো। কথাটা সত্য হলেও বেশ আঘাত করলো আহিকে। নিজেকে স্বাভাবিক করে বলল,
“তা ঠিক। তাও একটু আগলে রাখিস। বরটা তো তোরই। জিনিসপত্রগুলোতেও যেন তোর স্পর্শ থাকে।”
পদ্ম হেসে বলল,
“এসব তো জড়। আমি যতোদিন বেঁচে আছি, জীবন্ত মানুষটা তো আমারই অধিকারে। যদি আমার কিছু হয়ে যায়, তখন হয়তো সেই অধিকারটা হারিয়ে ফেলবো।”
“তোর কিছু কেন হবে? পাগল না-কি তুই?”
“না রে, মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে মরে গিয়ে আফিফকে মুক্তি দিতে। উনাকে একটা সন্তান দিতে পারছি না। আমাদের বিয়ের পাঁচ বছর হবে। ডাক্তার জানিয়ে দিয়েছে, আমি কখনোই মা হতে পারবো না। কোনো চিকিৎসা আমার ভাগ্যে মা হওয়ার সৌভাগ্য এনে দিতে পারবে না।”
“সন্তান নেওয়া কোনো লক্ষ্য না। একসাথে সুখে থাকা জীবনের লক্ষ্য। আফিফ তোকে ভালোবাসে, তুই আফিফকে ভালোবাসিস। আর দু’জন ভালোবাসার মানুষের জীবনে কোনো প্রতিকূলতা বাঁধা হয়ে আসে না। সন্তান দত্তক নিতে পারিস। কতো সন্তান বাবা-মার ভালোবাসা পাচ্ছে না। তাদের একটা নতুন জীবন দে। সেই সন্তান অনেক ভাগ্যবান বা ভাগ্যবতী হবে যার মা তুই হবি, যার বাবা আফিফ হবে।”
পদ্ম বলল,
“কিন্তু সে তো আফিফের রক্ত হবে না। ও তো চাইলে বিয়ে করে বাবা হতে পারবে।”
“কখনো না। বিয়ে করলে তোর আফিফ পাগল হয়ে যাবে। এক বউয়ের জন্য মায়ের বিরুদ্ধে যেতে পারছে না, আরেক বউয়ের জন্য যাবে? দুই বউয়ের অভিমান সহ্য করার ক্ষমতা সব পুরুষের থাকে না। তাই এক নারীতেই আসক্ত হওয়া ভালো।”
পদ্ম মুচকি হাসলো। আহি পদ্মের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল,
“আমি আফিফ নামক মানুষটাকে পাই নি। কিন্তু তার প্রতি অদ্ভুত একটা শ্রদ্ধা আছে। তোর জায়গাটা একটা সন্তানের জন্য সে যদি অন্য কাউকে দিয়ে দেয়, সেই শ্রদ্ধাটা আর থাকবে না। আমার ভালোবাসাটা মরে যাবে। কিছু ভালোবাসা শ্রদ্ধা হয়ে অন্তত বেঁচে থাকুক।”
(***)
বিকেলে আহি তৈরী হয়ে পদ্মের রুমে এসে দেখলো আফিফ ও পদ্ম ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত পার করছে। আহি তা দেখে তাড়াতাড়ি সরে গেলো। পুরো শরীর শিউরে উঠল তার। ডায়নিংয়ের চেয়ার টেনে বসে জগ থেকে পানি ঢেলে ঢকঢক করে খেয়ে নিলো। জোরে জোরে শ্বাস ছাড়লো। মনে মনে বলতে লাগলো,
“ওরা স্বামী-স্ত্রী। এটা একদম স্বাভাবিক। রিল্যাক্স আহি।”
অভিমানী সুরে আহি বিড়বিড় করে বলল,
“দরজাটা বন্ধ করতে পারলো না? আর আমি কি জানি বিকেলেই আফিফ বাসায় চলে আসবে? আমি ভেবেছি সন্ধ্যায় আসবে।”
আহি আবার রুমে চলে গেলো। অনেকক্ষণ পর পদ্ম আহির রুমে এলো। আহি পদ্মকে দেখে বলল,
“আমি চলে যাবো এখন।”
“তোকে না বলেছি কয়েকদিন থাকতে?”
“না, না। কি যে বলিস। বাসায় যাবো। বাবা হয়তো অনেক রেগে আছে।”
আহি টি-শার্টটা বিছানা থেকে নিয়ে পদ্মের হাতে দিয়ে বলল,
“আমি ধুয়ে দিয়েছি।”
আফিফ তখনই পদ্মকে ডাকার জন্য এলো। আর পদ্মের হাতে সেই শার্টটা দেখে বলল,
“এটা লাগবে না। তোমার কাছেই রেখে দাও।”
পদ্ম ভ্রূ কুঁচকে আফিফের দিকে তাকালো। আহি অবাক হয়ে বলল,
“না না। আমি কেন নেবো?”
“আমার বউ না বুঝে এমন বোকামি করে ফেলেছে। বরের শার্ট অন্য মেয়েকে দেয় না, এটা ওর বোঝা উচিত ছিল। এটা আমি আর পরবো না।”
আহি মলিন মুখে আফিফের দিকে তাকিয়ে আছে। আফিফ বলল,
“পদ্ম এক কাপ চা বানিয়ে দিও। আমার মাথা ব্যথা করছে।”
কথাটি বলেই আফিফ চলে গেলো। আফিফ চলে যেতেই পদ্ম আহির হাত ধরে বলল,
“উনার কথায় মন খারাপ করিস না।”
আহি হাসার চেষ্টা করে বলল,
“কেন মন খারাপ করবো? উনি আমার কোনো আত্মীয় নন। তোর বর। আমার সাথে উনার কোনো সম্পর্ক নেই, তাই হয়তো উনার বিষয়টা ভালো লাগে নি। আর আমি যদি জানতাম এটা তোর না, আমি পরতামও না। কি বিশ্রী একটা কাজ করেছিস!”
পদ্ম মলিন মুখে বলল, “সরি রে।”
“বাদ দে। আমি রেখে যাচ্ছি। ইচ্ছে করলে ফেলে দিস। কতো কাজে লাগে এসব কাপড়। আমি কিন্তু ভালোভাবেই ধুয়ে দিয়েছি।”
আহি বেরিয়ে পড়লো। যাওয়ার আগে সে একবারও আফিফের দিকে তাকালো না। পদ্ম আফিফকে বলল,
“আহিকে গাড়িতে তুলে দিয়ে আসুন না।”
আফিফ বের হতে যাবে তখনই আহি বলল,
“আমি একাই যেতে পারবো।”
আহি পদ্মের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো। আর আফিফ শান্ত দৃষ্টিতে আহির যাওয়ার পথের দিকে তাকিয়ে আছে।
চলবে-